মন শুধু মন ছুঁয়েছে,সূচনা পার্ট-১
জান্নাতুল নাঈমা
“কালো মেয়েদের ঠোঁট গোলাপি হওয়াটা কি আশ্চর্যের বিষয় নয়??
“আঁকানো ঠোঁট জোরা গোলাপি আভায় কি মারাত্মকই না লাগে ”
“আঁকানো ভ্রু, আঁকানো চোখ, আঁকানো নাক,আঁকানো ঠোঁট জোরা উফস আরেকটা জিনিস মিস করে গেছি ঠিক মায়ের মতো ইয়া লম্বা লম্বা চুল
” মায়াবতী, রূপবতী,কেশবতী সব উপমাই দেওয়া যায় ওকে আই এম সিওর গুনবতী তো অবিয়েসলি হবে”
“একটা কালো মেয়ের মাঝে যদি এতো এতো আকর্ষণীয় জিনিস থাকে যা আমাকে ক্ষনে ক্ষনে
মৃত্যুর আহ্বান জানায়,এই মৃত্যু দেহের মৃত্যু নয় এই মৃত্যু হচ্ছে মনের, যেই মরণ স্বাদ কোন পুরুষ একবার গ্রহণ করলে সেই স্বাদের নেশায় নিজের সর্বস্ব হারাতেও সে প্রস্তুত থাকে ”
“গোলাপি ঠোঁট, যুগল কালো ভ্রু,সেই মায়াবী চোখ জোরায় যেনো আমি ক্ষনে ক্ষনে ডুবে মরি ”
ওকে যেনো উপরওয়ালা নিজ হাতে খুব যত্ন সহকারে
মায়া মাখানো হাতে তৈরী করেছেন।
ওর মাঝে এতো এতো সৌন্দর্য ভরে দিয়েছেন যে গায়ের ঐ সাদা রং টা দিলে হয়তো ওর সৌন্দর্যের
আগুনে ঝলসে যেতো আমার এই চোখ দুটো।
ও যখন ওর কাজল কালো চোখ দুটো দিয়ে রাগি চোখে আমার দিকে তাকায় আমার বুকে উথাল-পাতাল ঢেউ খেলে যায়, অসম্ভব পরিমানে ঝড় বয়ে চলে এই বুকটায়।
কোমড় ছাড়া চুলগুলো আমায় বড্ড টানে, ইচ্ছে করে “ঐ চুলে নাক ডুবিয়ে মাতোয়ারা ঘ্রানে মেতে থাকি আজীবন ”
কি নেই ওর মাঝে? কি নেই সব আছে সব,,,
এতো সৌন্দর্যের ভীড়ে গায়ের রং টা তো ফ্যাক্ট হতে পারে না।
আই ওয়ান্ট হার,,,আই জাষ্ট নিড হার,,,
“আপ্পি তুই তো জানিস আমি কতোটা পাগল ”
“যে জিনিসে একবার আমার চোখ পড়ে যায় সেই জিনিস যতোক্ষন না আমার হচ্ছে ততোক্ষণ আমি
কোন ভাবেই শান্তি পাই না”
গতো তিনদিন ধরে আমি উন্মাদের মতো ওর পিছু ছুটে চলেছি আমার শুধু ওকে চাই আপ্পি।
” যে কোন কিছুর বিনিময়ে ওকে আমার চাই”
ভাই এর কথায় রিনী ঘোরের মধ্যে থেকেই বললো,,,
— মেয়েটা যদি না চায়??
— এ জীবনে আজ অবদি আমি অন্যের চাওয়াকে গুরুত্ব দেই নি, আজো দিবো না।
আর আমাকে না চাওয়ার মতো কারন আমি দেখছিনা, বরং একটা মেয়ের স্বপ্ন পুরুষ যেমন হওয়া উচিত তাঁর দ্বিগুণ রয়েছে আমার মাঝে।
এরপরও যদি আমাকে ও রিজেক্ট করে এর দাম তো ওকে দিতেই হবে।
ছোট ভাইয়ের জ্বর হয়েছে কিনা তাই কপাল গলা চেক করে দেখলো রিনী। সাত সকালে এসে কিসব উল্টা-পাল্টা কথা বলছে আল্লাহ,,,
যে ছেলে কিনা এগারোটার আগে বিছানাই ছাড়ে না সেই ছেলে সকাল ছয়টায় এভাবে টেনে টুনে ওঠিয়ে কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে ভাবা যায়,,,
রিনী ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের দিকে চেয়ে বললো,,,
— কি রে শরীর খারাপ? তোর দুলাভাইকে ফোন দিবো? কি কি সমস্যা হচ্ছে বলে দে তোর দুলাভাই ওষুধ লিখে দিবেনি। আর শোন বাবাকে আগেই কিছু বলিস না ছোট খাটো হার্ট এট্যাক হয়ে যাবে তাহলে।
বলেই চোখ টিপটিপ করতে লাগলো।
.
“স্নিগ্ধ” বিছানা ছেড়ে ওঠে পিছন ঘুরে রাগে ফুঁসতে শুরু করলো। সিরিয়াস মুডটা তাঁর বোন এভাবে নষ্ট করায় চটে গেছে সে। রিনী বেশ বুঝলো তাঁর ভাই চটে গেছে এবার শান্ত করতে হবে।
.
রিনীও বিছানা ছেড়ে ওঠে পিছন থেকে স্নিগ্ধর হাত চেপে ধরে সামনে ঘোরালো। ধবধবে ফর্সা মুখটা রাগের চটে লাল বর্ন ধারন করেছে।
চোখ দুটো বেশ অশান্ত লাগছে নাকের ডগায় লাল আভা।
তাঁর বদমেজাজি, অহংকারী, বেপরোয়া ভাইটা কার জন্য এমন অশান্ত হয়ে পড়লো??
যার জন্য গোটা শহড়ের মেয়েরা অশান্ত হয়ে থাকে সেই আজ কারো জন্য তীব্র অশান্তি তে ভুগছে ভাবা যায়??
.
— তো মি.আভিয়ান খান স্নিগ্ধ,, যার জন্য আপনার এই অবস্থা সেই মহীয়সী নারীর নাম এন্ড তাঁর পুরো ডিটেইলস কি আমি জানতে পারি??
স্নিগ্ধ এক স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— আপাতত শুধু নামটাই জানি,, ফার্স্ট ইয়ারে নাম “আরোহী”। বাকিটা কাল পেয়ে যাবো।
রিনী মুচকি হেসে বললো “কিভাবে চোখ পড়লো তাঁর দিকে??এতো এতো মেয়ে থাকতে তাঁর দিকেই চোখ আটকে যাওয়ার কারনটা কি আমি জানতে পারি??
স্নিগ্ধ এক ঢোক গিলে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,,,
ভার্সিটির টপার স্টুডেন্ট,,ক্রাশ বয়,,পলিটিক্যাল লিডার,, সিনিয়র বড় ভাইয়ের বিষয়ে সম্পূর্ণ ভুলের বশীভূত হয়ে পরপর তিনটা থাপ্পড় লাগানোর পর কার চোখ তাঁর ওপর পড়বে না বলতে পারো??
রিনী আঁতকে ওঠলো,,,
— হোয়াট! কি বলছিস ভাই আল্লাহ মেয়েটা ঠিক আছে তো?? তোর গ্যাং ওর কোন ক্ষতি করেনি তো??প্লিজ ভাই ছেড়ে দে মেয়েটাকে আমি গিয়ে বলবো যেনো ও তোর থেকে মাফ চেয়ে নেয় প্লিজ ভাই।
স্নিগ্ধ রহস্যময় এক হাসি হেসে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
.
রিনীর হাজার ডাকেও স্নিগ্ধ আর থেমে দাঁড়ালো না।
সোজা বাড়ির সামনে গিয়ে বাইক স্ট্রাট দিলো।
রিনী টেনশনে যেনো এবার হার্টফেল করবে।
প্রথমে কি ভাবলো আর পরে কি শুনলো ভয়ে ভয়ে ফোন করলো স্নিগ্ধর বান্ধবি জারা কে।
.
— দোস্ত তুই কি অশরীরীতে বিশ্বাসী??
আমাদের আশে পাশে আত্মা ঘুরে বেড়ায় এটা কি তুই বিশ্বাস করিস??
আরোহীর এমন উদ্ভট কথা শুনে তুরিন বললো,,,
— কি যে বলিস কিসের অশরীরী?? গান্জা টান্জা খাইলি নাকি??
আরোহী এক ঢোক গিলে ভয় ভয় চোখ মুখে বললো,,,
— আমার মনে হয় এই ভার্সিটিতে অশরীরী ছায়া আছে। এই দেখ কাল রাতে লোডশেডিং হওয়ার পর
কেউ আমার মুখটা চেপে ধরে দেয়ালে চেপে আমার গলায় কামড়ে দিয়েছে,,দেখ কেমন দাগ হয়ে আছে এটাতো লেডিস সাইট পুরুষ মানুষ আসার প্রশ্নই ওঠেনা তাহলে নির্ঘাত কোন অশরীরী হবে।
বলেই মনটা ভীষণ খারাপ করলো।
কামড়ের জায়গাটা তুরিন দেখে চমকে গেলো।
— আল্লাহ আরোহী এসব কি?? সত্যি তো এমন ঘটনা কে করবে তোর সাথে?? সত্যি অশরীরী নাকি সশরীরের কেউ??
এই ভার্সিটিতে অশরীরী আছে কিনা জানিনা সশরীরের গ্যাং আছে বইন। ঝোপ বুঝে কূপ ফেলে কেমনে যে ধরে মাম্মা সুন্দরী মাইয়া পাইলেও হইলো।
তুই চিন্তা করিস না তুই তো বাঁইচা গেছোস ভাগ্যিস তোর গায়ের রং টা চাপা তাই ঐ সশরীরীদের হাত থেকে রক্ষা পাইলি। নয়তো যে থাপ্পড় লাগাইছো খালা এই গায়ের রং দেইখাই ভাইগা গেছে।
নয়তো তোর যে কি হাল হতো। আর আমি জারা আপুর জন্য বাঁইচা গেছি তাঁর দূরসম্পর্কের মামাতো বোন কিনা আমি বলেই ভাব নিলো তুরিন।
.
আরোহী মুখটা মলিন করেই সরে গেলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার কামড়ের চিন্হ টা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
সত্যি অশরীরী নাকি সশরীরের কারোর কাজ??
কে করবে এমন টা তাঁর সাথে??
“ঐ আভিয়ান খান স্নিগ্ধ?? বড়লোক বাবার বেপোরোয়া ছেলে??” কিন্তু কেনো তাঁর মতো এমন মেয়ের দিকে তাঁর নজর কেনো পড়বে??
“ছিঃ আরোহী কি ভাবছিস নজর কেনো পড়বে”
“তোর মতো রূপহীন মেয়ের দিকে নজর দিবে কিনা অমন রূপবান পুরুষ” ভার্সিটির শতশত সুন্দরী মেয়ের ক্রাশ কিনা আমার মতো রূপহীন মেয়ের দিকে নজর দিবে কি যে ভাবি না আমি ধূর।
পরোক্ষনেই চমকে গেলো আরোহী,,
“আল্লাহ আমি কি ভাবছি তুরিনকে বাজে কমেন্ট করার জন্য নাবিলকে থাপ্পড় দিতে গিয়ে ওনাকে নাবিল ভেবে পরপর তিনটা থাপ্পড় দিয়েছি ” ওনি বা ওনারা কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবে আমায় সামান্য শুকনো দুইটা সরির জন্য”কখনোই না নিশ্চয়ই রিভেঞ্জ নিবে??
কিন্তু রাত বিরাতে মেয়েদের হোস্টেলে এসে এমন করবে?? ওনার যা পাওয়ার যা করার সামনা সামনিই তো করতে পারবে ধূর মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। কি যে হচ্ছে এসব ইশ মা থাকলে এখন মায়ের কোলে মাথা রেখে নিজেকে একটু রিল্যাক্স করতে পারতাম।
.
— “স্নিগ্ধ এই স্নিগ্ধ দেখ দেখ গেটের দিকে দেখ
ঐ মেয়েটা আসছে চল গিয়ে একটু ঝাড়ি দিয়ে আসি। কয়টা কড়া কথাও শুনিয়ে আসি তোর জন্য তো ঐদিন মেয়েটাকে টাইট দিতেই পারলাম না। আরে ব্রো মেয়েদের রেসপেক্ট করা ঠিক আছে কিন্তু এর মতো রূপহীন হাটুর বয়সি মেয়ে এসে তোকে পরপর তিনটা চড় লাগাবো আর আমরা তা দেখে একে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?
গত দুদিন ছিলাম না তাই তোরা কি করেছিস জানিনা। কিন্তু আমি তো আজ এর সাথে একটু মামনি মামনি খেলেই ছাড়বো বলেই এক পা বাড়ালো শান।
চলবে…..