মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৫

0
2999

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৫
জান্নাতুল নাঈমা

ও ভাই ভাই গো ভাবি আপনারে ভালোবাসে না।
.
ভার্সিটিতে প্রতিবছর নবীন বরন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পড়ে স্নিগ্ধদের টিম এর। ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্টস,পলিটিক্যাল লিডার,এছাড়াও খুব ভালো গায়কও আভিয়ান খান স্নিগ্ধ। তাঁর কর্মের জন্যই সবেতেই সে সেরা। টিচার্সরা সহ স্টুডেন্টসরাও তাঁকে খুব সম্মান করে। মানুষ হিসেবেও সে মন্দ নয়।
একজন ছারা আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাতে অবদি দেখেনি কেউ তাকে।
অনুষ্ঠান বিষয়েই সকলের সাথে টুকটাক কথা বলছিলো এবং এ বছরে অনুষ্ঠানের অর্ধেক খরচ তাঁর বাবা দেবে এটাই সবাইকে জানাচ্ছিলো।
এমন সময় কথার মাঝে হুট করে ছেলেটার এই অশুভ কথা কানে বাজতেই চোখ গরম করে তাকালো।
ছেলেটা চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
স্নিগ্ধ বাইক থেকে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে এক হাত গুজে দিয়ে আরেক হাতে সানগ্লাস খুলে পাশে ঢিল দিলো শুভ ক্যাচ ধরে হালকা ফুঁ দিয়ে একটা ভাব নিয়ে নিজে পড়ে নিলো।
স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো,,,

— এমন অশুভ কলঙ্ক মাখা নিউজ নিয়ে আসার জন্য তোদের পুষে রাখছি আমি। আমি আপডেট চাই সো আপডেট নিউজ দে।

ছেলেটা এবার স্বস্তি নিয়ে সব ঘটনা খুলে বললো।
স্নিগ্ধ রগস্যময় এক হাসি হেসে ছেলেটার মাথায় টোকা দিয়ে বললো — যা নিজের কোন কাজ থাকলে সেটা সেরে ফেল।
.
তুরিনকে নিয়ে মাঠের এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আরোহী।
পুরো মাঠে চোখ বুলালে আরোহী নামক মানুষ টা কে চিনতে কারো অসুবিধা হবে না। ভার্সিটির সকল মেয়েই প্রচন্ড স্মার্টলি আসে তুরিন সহ প্রায় সকলের ঠোঁটেই একগাদা লিপস্টিক মুখে আধা কেজি আটা ময়দা মেশানো থাকে। সকলের হেয়ার স্টাইল দেখে তো মনে হয় ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ফুলটুসি মাইয়া।
কেউ কেউ আবার ওড়নাটাও ঠিকঠাক পড়েনা, কেউ আবার জিন্স,টপ পড়েই ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়ায়।
অথচ আরোহী মেয়েটা একদম আলাদা, শুধু মানুষ টা নয় তাঁর সবকিছুতেই রয়েছে ভিন্নতার পরশ।
ইয়া লম্বা সুতি গোল জামা পড়বে কুঁচিওয়ালা পাজামার একটু কুঁচি পায়ের পাতার উপর দিয়ে ওকি দেবে মাথায় থাকবে বউদের মতো করে ঘোমটা দেওয়া। তবুও কোমড় ছাড়া চুলগুলো কারো চোখে এড়াবে না বেনুনি করা লম্বা চুলের শেষ প্রান্তে ঘোড়ার লেজের মতো কিছু অংশ দেখলেই মনপ্রান জুরিয়ে যাবে। কারো চুলও এতো সফট দেখতে হয়??
ভাবতে ভাবতেই আরোহীর সামনে গিয়ে দাঁড়লো স্নিগ্ধ। পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলিয়ে নিলো একবার।
সাদা লাল কম্বিনেশন ড্রেসে মন্দ লাগছে না।
গায়ের চাপা রঙে সাদা লাল এতো মারাত্মক মানায় তা যেনো জানাই ছিলোনা স্নিগ্ধর। কিভাবে থাকবে কখনো মেয়েদের সাথে সেভাবে মেশা হয়েছে নাকি?? জারা আর শ্রেয়া দুজনই বেশ সুন্দরী বলতে গেলে সাদা চামরা ফ্রেন্ড হয় তবুও কোনদিন খেয়াল করেনি কোন দিন কোন রং পরে তাঁরা।
অথচ এই মেয়েটার টুকিটাকি সব সে খেয়াল করছে।
যে খেয়াল গুলো তাঁর মনের গহীন থেকে আসছে,,,
.
স্নিগ্ধর এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকানো দেখে বিরক্ত মুখে পাশ কাটাতে নিতেই স্নিগ্ধ চেপে ধরলো আরোহীর হাত। তুরিন এক ঢোক গিললো।
আরোহীর এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর নিতে পারছে না সে অলওয়েজ এইসব বিহেভিয়ার তাঁর বিরক্ত লাগছে। রাগের মাথায় ফিরে দাঁড়িয়ে ঠাশশ করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।
সাথে সাথে এমন এক ঘটনা ঘটে গেলো যা সকলের ভাবার বাইরে ছিলো।
স্নিগ্ধ হুট করেই এক হেচকা টান দিয়ে পুরো মাঠের মাঝখানে আরোহীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
.
প্রথমত সকলের সামনে আবারো স্নিগ্ধর গায়ে হাত তোলায় সকলে প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো।
এবং বেশ বিরক্ত হয়েছিলো সকলের মনেই একটা কথা বাজছিলো ” এই মেয়ের কিসের এতো দেমাগ, কিসের এতো অহংকার, স্নিগ্ধর মতো ছেলেকে এভাবে ঘোরাচ্ছে আবার সিমপল কারনে গায়েও হাত তুলছে”এর জায়গায় অন্য মেয়ে হলে স্নিগ্ধর পায়ে ধরে থাকতো আজীবন।
তারপরের ঘটনায় সকলেই স্তব্ধ সকল ছেলেরাই মাথা নিচু করে আছে। মেয়েরা অবাক হয়ে নিজেদের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরেছে।
তুরিনের ভয়ে কাঁপাকাঁপি অবস্থা।
আরোহীর দম বন্ধ লাগছে ছটফট করছে সে স্নিগ্ধর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু স্নিগ্ধ নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে তাঁকে চেপে ধরে ঠোঁট জোরা খুব শক্ত করেই চেপে ধরে কিস করছে।
.
স্নিগ্ধর বন্ধু রাও এসে এই অবস্থার শাক্ষি হলো।
সকলের চোখে মুখে বিস্ময়, ভার্সিটির টিচার্সদের কানে গেলেও তাঁরা চুপচাপ রইলো।
প্রিন্সিপাল ফোন লাগালো স্নিগ্ধর বাবা শ্রেয়ান খানকে।
.
প্রায় পাঁচ মিনিট পর স্নিগ্ধ আরোহীকে ছেড়ে নিজের ডানহাতের পিঠে মুখ মুছে আশে পাশে তাকালো।
সকলকে এভাবে দেখে ধমকে ওঠলো,,,

— কি হয়েছে এভাবে এদিকে চেয়ে আছো কেনো তোমরা যাও সবাই সবার কাজে যাও।
ধমক শুনে সকলে সুড়সুড় করে চলে যেতে লাগলো।

আরোহীর পা থেকে মাথা অবদি কাঁপছে।
নিঃশ্বাস চলছে ঝড়ের বেগে,চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে,লজ্জায় ঘৃনায় নিজের দুহাতে মুখ ঢেকে হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে দৌড় লাগালো।
স্নিগ্ধ রাগে চিৎকার করে বললো,,,

— জারা, তুরিন তোমরা যাও ওর সাথে ফার্স্ট।

জারা আর তুরিন এক মূহুর্ত দেরী না করে ছুটে গেলো আরোহীর পিছন।
আকাশ এসে স্নিগ্ধর কাঁধে হাত দিতেই স্নিগ্ধ হাত সরিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পা বাড়ালো গেটের দিকে। আকাশও পায়ে পা বাড়ালো।
.
স্নিগ্ধ বাইক স্টার্ট দিতে নিতেই আকাশ বললো,,,

— স্নিগ্ধ দাঁড়া আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর চাই।

স্নিগ্ধ চুপ রয়ে আকাশের দিকে তাকালো।
আকাশ ঝটপট প্রশ্ন করলো,,,

— এইসব কি হচ্ছে আকাশ তুই আসলে চাইছিস টা কি??

— এখনো বুঝতে পারছিস না আমি কি চাইছি??
আমি ওকে চাচ্ছি একদম নিজের করে।
আর ও সেটা বুঝতেই পারছেনা প্রথম দিন থেকে অযথা আমার সাথে মিস বিহেভ করে যাচ্ছে।

— তাহলে এসব কি এইভাবে সকলের সামনে মেয়েটাকে অসম্মান কেনো করলি??

— হোয়াট! অসম্মান মানে?? হবু বউ হবু বরের গায়ে ক্ষনে ক্ষনে থাপ্পড় লাগাচ্ছে ব্যাপারটা কি অশোভনীয় নয়?? তাই আর কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি বউ এর মাথার ব্যামো ঠিক করার মেডিসিন দিলাম আর কি।

আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্নিগ্ধ বললো “যেতে চাইলে বসতে পারিস”।
.
আরোহী জামাকাপড় গোছাতে শুরু করেছে।
চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। তুরিন, জারা,শ্রেয়া সকলে অনেক বোঝাচ্ছে তবুও আরোহী থামছে না।

— দরকার নেই আমার শহড়ের নাম করা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার। এ শহড়ে মেধা শক্তির কোন মূল্য নেই এ শহড়ে শুধু পয়সা আর ক্ষমতার লড়াই চলে।
আজ আমি যদি কোন ক্ষমতাবান সম্পদশালী ঘরের মেয়ে হতাম তাহলে আমার সাথে এমনটা কখনোই ঘটতো না। যেখানে মেয়েদের কোন রেসপেক্ট নেই সেখানে থাকতে চাইনা। দরকার নেই পড়াশোনা করার। নিজের গ্রামে নিজের মায়ের কাছে ফিরে যাওয়াটাই আমার একমাএ লক্ষ।

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আরোহী।
জারা দ্রুত মেসেজ করে স্নিগ্ধ কে সবটা জানালো।
.
প্রায় দুঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে এখনো একটা বাস খালি পায়নি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো সিএনজি করে যাবে যদিও ভাড়া বেশী লাগবে নারায়নগঞ্জ যেতে তবুও সে সিএনজি তেই যাবে। নারায়নগঞ্জের একদম গ্রামের দিকে বাড়ি আরোহীর।
.
হঠাৎই শুরু হয়ে গেলো ঝুম বৃষ্টি। অসময়ে বৃষ্টিপাত বেশ বিরক্ত লাগে গা ভিজে একদম একাকার অবস্থা।
পড়নের পোশাকটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে একদম। আশেপাশের দোকানে মানুষের প্রচুর ভীর।
মহিলা দু একজন বাদে সকলেই পুরুষ। ঐ দু একজন মহিলা দেখেই সাহস করে দোকানের সামনে দাঁড়ালো। ওড়না দিয়ে গা ঢাকার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো ব্যাগটা পাশে রেখে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ ঠান্ডা লাগছে বেশ,,,
কয়েকমিনিট বাদেই বুঝলে তাঁর আশেপাশে শুধু পুরুষ মানুষের ভীর যে কটা মহিলা ছিলো তাঁরাও নেই। ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠলো মনের মধ্যে সাহস জুগিয়ে বেরিয়ে যাবে এই চিন্তা মাথায় নিয়ে ব্যাগ তুলতে নিচু হতেই কোমড়ে কারো হাতের মৃদু চাপ অনুভব করলো। সাথে সাথেই যেনো হাতটা ঝড়ের বেগে সরে গেলো আরোহী পিছন ঘুরতেই চমকে গেলো।

স্নিগ্ধ এক মধ্য বয়স্ক লোকের হাতটা মুচড়ে ধরে আছে।তাঁর চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে।
স্নিগ্ধর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটার কপালে আজ কি আছে।
স্নিগ্ধর পাশ থেকে আকাশ বাজে ভাষায় গালি দিয়ে বললো,,,
— মেয়ের বয়সি একটা মেয়ের সাথে ভন্ডামি করতে বিবেকে বাঁধে না তোর?? রাস্তায় মেয়ে দেখে লোভাতুর দৃষ্টি না দিয়ে ঐ দৃষ্টি নিজের ঘরের মেয়েদের দিকে দিস। কেমন পুরুষ রে তুই যে মেয়ের বয়সি মেয়ে দেখে তোদের পুরুষত্ব জাগ্রত হয়।
পতিতা পল্লী তেও তো যেতে পারোস। নিজেদের কামুকতা মেটাতে।

সাথে সাথে স্নিগ্ধ এক ঘুষি দিলো নাক বরাবর।
লোকটা ছিটকে গিয়ে পড়লো মাটিতে।
স্নিগ্ধও বাজে গালি দিয়ে লোকটার বুকের ওপর পা রেখে পিষতে পিষতে বললো,,,

— এই তুই কার গায়ে হাত দিয়েছিস। তোর সাহস কি করে হলো ওকে স্পর্শ করার,,, তুই আমার জানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কোথায় পেলি বল।

স্নিগ্ধর চিৎকারে সকলেই কেঁপে ওঠলো।
আরোহী ভয় সহ অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে গেলো। তাঁর সাথে কি ঘটতে চলেছিলো এবং স্নিগ্ধ তাঁর জন্য কতোটা রেগে ফাইট করছে তা নিজ চোখে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না।

লোকটা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইলো।
তবুও স্নিগ্ধ থামলো না আশে পাশে হট্রগোল শুরু হয়ে গেলো। স্নিগ্ধ মারতেই থাকলো অবশেষে লোকটা আরোহীর দিকে চেয়ে বললো,,,

— আম্মা আমারে মাফ কইরা দেন। আম্মা আমারে বাঁচান আর জীবনে এমন পাপ করমু না। ভালা হইয়া যামু।

আরোহীর ঘৃনা হচ্ছিল ভীষণ তবুও স্নিগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো,,,

— ব্যাস অনেক হয়েছে। ওনার কর্মফল ওনি পেয়েছেন। যেহেতু ওনি ক্ষমা চাইছে সেহেতু ওনাকে ক্ষমা করে দেওয়াই শ্রেয় হয়তো আজকের পর তাঁর ভীতরের শয়তানটা বেরিয়ে যাবে ভালো মানুষ হয়ে যাবে তিনি।
.
আরোহীর কথা শুনা মাএই স্নিগ্ধ ছেড়ে দিলো লোকটাকে। চোখ মুখ ফুলে রক্ত ঝড়ছে,,,
আশে পাশের মানুষ তামাশা দেখায় মগ্ন ছিলো।
এবার ধীরে ধীরে সব যার যার কাজে যেতে লাগলো।
বৃষ্টি কমে এখন গুড়িগুড়ি পড়ছে।
আরোহী ব্যাগ হাতে নিতে যেতেই আকাশ ব্যাগটা নিয়ে বললো,,,

— বোন আমি নিচ্ছি।

আরোহী ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,,

— থ্যাংকস তাঁর প্রয়োজন নেই।

স্নিগ্ধ পানির বোতল কিনে ঢকঢক করে পানি পান করলো। বোতলটা বাইড়ে ছুঁড়ে ফেলে চুলের পানি ঝাড়তে লাগলো।

আকাশ বললো,,,

— আমার নিজের কোন বোন নেই। তোমায় প্রথম বোন বলে ডাকলাম এই বড় ভাইয়ের আবদার টা রাখো বোন। দেখলেই তো আজকাল রাস্তা ঘাটে কি অবস্থা এই আবহাওয়ায় আজ কোথাও যেও না।
এছাড়াও সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়,,,

আরোহী কিছু বললো না। তাঁর ও নিজের কোন বড়, ভাই, বোন নেই, ছোটও নেই মা সে আর এক পালিত বোন নিয়েই তাদের ছোট্ট সংসার। আকাশের এভাবে বলা কথা শুনে তার মনটা গলে গেলো।
.
নিজের জ্যাকেট টা খুলে আরোহীকে পিছন থেকে পড়াতে নিতেই আরোহী চমকে ওঠে ঘুরে তাকালো।
স্নিগ্ধর গম্ভীর মুখটা দেখে রেগে কিছু বলতে নিবে তখনি স্নিগ্ধ আরোহীর ভেজা নরম ঠোঁট জোরা আঙুলে চেপে বললো,,,

— সশশ,,, ভেজা কাপড়ে খুব বাজে লাগছে। আমি চাইনা এভাবে আর কেউ দেখুক আশা করি বুঝতে পেরেছো।

আরোহী লজ্জা পেয়ে আশে পাশে তাকালো।
নাহ কেউ শুনেনি আকাশও তাঁর ব্যাগটা হাতে নিয়ে ফোনে কথা বলছে।
স্নিগ্ধ আরোহী কে এমন লজ্জা, অস্বস্তি তে ভুগতে দেখে বাঁকা হেসে জ্যাকেটটা গায়ে জরিয়ে দিলো ভালোভাবে।
স্নিগ্ধ আবারো হাত চেপে ধরলো আরোহীর।
আরোহী চমকে গিয়ে দুপুরের কথা মনে করে হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো।
স্নিগ্ধর মেজাজ চরম বিগরে গেলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আরোহীকে হেচকা টান দিয়ে কাছে এনে পাজাকোল করে নিয়ে সোজা নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
আরোহী এবার ভয়ে চিৎকার শুরু করে দিলো।
স্নিগ্ধ গাড়ি লক করে সামনে বসে আকাশকে ডাক দিলো।
আরোহী গাড়িতে সমানে ছটফট করতে লাগলো।
কি হচ্ছে তার সাথে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা।
আকাশ গিয়ে স্নিগ্ধর পাশে বসলো।
আরোহীর ছটফট দেখে পিছন তাকিয়ে বললো,,,

— বোন ভয়ের কিছু নেই তোমাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে আসবো নো টেনশন।

আকাশের কথা শুনে এবং গাড়ি হোস্টেলের পথে ঘুরাতে দেখেই চুপ রইলো আরোহী আর ভাবতে লাগলো। “এই স্নিগ্ধ ঠিক কি চাইছে,,,আমাকে অসম্মান করাতে লোকটাকে কি মারটাই না মারলো।
আবার নিজেই আমাকে অসম্মান করছে বারে বারে গায়ে হাত দিচ্ছে এর আসল সমস্যা টা কি, কি চাই ওনার”
.
হোস্টেলের সামনে গাড়ি থামাতেই স্নিগ্ধ নেমে গাড়ির পিছন ডোর খুলে আরোহীর দিকে গম্ভীর চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো,,,

— বের হও।

আরোহী এক পলক চেয়ে দেখে ঝটপট নেমে পড়লো। আকাশের থেকে ব্যাগ নিয়ে গেটের দিকে পা বাড়িও থেমে গেলো।
স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে অজান্তেই প্রশ্ন করে বসলো।

— কি চাই আপনার,,, কেনো এভাবে পিছু নিচ্ছেন??

স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কয়েক কদম এগিয়ে এলো। আরোহীর চোখের গভীরতায় ডুব দিলো সে।
ধীর গলায় বলে ওঠলো,,,

— শুধু তোমাকে চাই,,, আই নো তুমি এটা বিশ্বাস করবে না বাট এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর যে কোন মূল্যে তোমাকে আমার চাই চাই চাই ব্যাস।

আরোহী চমকে গেলো ভ্রু কুঁচকে জিগ্যাস করলো।

— কিন্তু কেনো?? কেনো ভালোবাসেন আপনি আমায়। কি দেখে আপনার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হলো??

— আরোহী,,,ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়ার জন্য কোন কারন লাগে না এটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়।

আরোহী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,,,

— হাসালেন আপনি আমায়। যেখানে আজকাল ছেলে রা সুন্দরী মেয়েদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জরিয়ে ধোঁকা দিচ্ছে সেখানে আপনি আমার মতো রূপহীন মেয়েকে ভালোবেসে ফেললেন। নাইস জোক,,,

স্নিগ্ধর মেজাজ বিগরে গেলো আরোহীর দুকাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,,

— জাষ্ট স্যাট আপ,,, আর একটা কথা বললে এই জিহ্ব আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো এতে আমার কিচ্ছু জায় আসেনা।
তুমি আমাকে ভালোবাসো আর নাই বাসো আই ডোন্ট কেয়ার। আমি শুধু তোমাকে চাই ব্যাস।

আরোহী রেগে বললো,,,

— কেনো,,, আমাকে চাওয়ার মতো কোন কারনতো দেখছিনা। ওওও আই সি,,,এই শরীরটা চাই??
নারীর শরীর পাওয়ার জন্য তো প্রত্যেকটা পুরুষই কাঙাল হয়ে থাকে আপনিও এর ঊর্ধ্বে নয়।
শরীর ছুঁতে পারলেই আপনারা পুরুষেরা নিজেদের সার্থকতা পেয়ে যান। কিন্তু আপনারা জানেন না “নারীর শরীর ছুঁয়ে দেখাকে পুরুষত্ব বলে না
সেই আসল পুরুষ যে নারীর মন ছুঁতে পারে ”

স্নিগ্ধ আরোহীকে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,,

— ইয়েস আই নো,,,আমিও সেটাই চাই তোমার শরীর নয় মন ছুঁয়ে দেখতে চাই আমি। তোমায় পুরোটাই নিজের করে পেতে চাই।
আর ফার্স্টলি এটাই ট্রু আমার মন শুধু তোমার মন ছুঁতে চায় ইয়েস,,, বিকজ,,,তুমি আমার মন ছুঁয়ে দিয়েছো তাই আমিও চাই তোমার মন ছুঁতে।

আরোহীর অবিশ্বাসের চাহনী দেখে স্নিগ্ধ ছেড়ে দিলো আরোহীর কাঁধ। পিছন ঘুরে আকাশকে গাড়ি তে ওঠতে বলে নিজেও ওঠে পড়লো গাড়িতে।
আরোহীর মাথাটা কেমন করছে,,,
যা দেখছে তা সে বিশ্বাস করতে চাইছে না। তবুও মন টা বড্ড ছটফট করছে। পরোক্ষনেই ভাবলো,,,
“না আরোহী না এই ভুল করিস না” বহু বছর আগে যে ভুলটা তোর মা করেছে সেই একি ভুল তুই করতে পারিস না। এইসবটাই ছলনা,,, বড় লোকের ছেলেরা অসহায় মেয়েদের জন্য এভাবেই ফাঁদ পেতে রাখে।
.
তুরিনের অনেক রিকোয়েস্টে আরোহী থেকে গেছে।
এছাড়া জারাকে দিয়ে আকাশকে দিয়ে স্নিগ্ধ বার বার জানিয়েছে ঐ দিনের জন্য দুঃখীত।
আর ভার্সিটিতে স্নিগ্ধ তাঁর সাথে কোন প্রকার ঝামেলা করবেনা। কিন্তু সে তাকে ভালোবাসে সেই অধিকারে তাঁর ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব থেকেও সরে যাবে না।
.
অনুষ্ঠানের শেষে সকলের অনুরোধে গান গাইতে স্টেজে গেলো স্নিগ্ধ। গান শুরু করার আগে সে বলে নিলো গানটা তাঁর ভালোবাসার মানুষ কে উদ্দেশ্য করে গাইবে সে।
যদিও অনেকে সবটাই জানে আর যারা জানতো না তাঁরাও এবার জেনে গেলো। স্নিগ্ধর বন্ধু রা সিটি বাজাতে শুরু করলো। প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছে স্নিগ্ধর বাবা শ্রেয়ান খান। বাবার সামনে ছেলে কি অসভ্যের মতো কথা বলছে ভেবেই আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে রইলো।
এদিকে গিটারের সুর ভেসে এলো সকলের তালির আওয়াজ তীব্র হতে শুরু করলো।
স্নিগ্ধ স্টেজ থেকে আরোহী কে দেখতে দেখতে গান ধরলো।
.
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ
মন শুধু মন ছুঁয়েছে (মন শুধু মন) ও সেতো মুখ খুলেনি (ওহঃ হঃ হঃ)
সুর শুধু সুর তুলেছে (ওঃ) ভাষা তো দেয় নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে (মন শুধু মন) ও সেতো মুখ খুলেনি (ওহঃ হঃ হঃ)
সুর শুধু সুর তুলেছে (ওঃ) ভাষা তো দেয় নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ
চোখের দৃষ্টি যেন – মনের গীতি কবিতা
বুকের ভালোবাসা যেথায় রয়েছে গাঁথা
চোখের দৃষ্টি যেন – মনের গীতি কবিতা
বুকের ভালোবাসা যেথায় রয়েছে গাঁথা
আমি তো সেই কবিতা পড়েছি (ওহঃ হঃ হঃ)
মনে মনে সুর দিয়েছি (ওঃ)
কেউ জানে নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে (মন শুধু মন) ও সেতো মুখ খুলেনি (ওহঃ হঃ হঃ)
সুর শুধু সুর তুলেছে (ওঃ) ভাষা তো দেয় নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ
যখনি তোমার চোখে আমার মুখ খানি দেখি
স্বপন কুসুম থেকে হৃদয়ে সুরভি মাখি
যখনি তোমার চোখে আমার মুখ খানি দেখি
স্বপন কুসুম থেকে হৃদয়ে সুরভি মাখি
তুমি কি সেই সুরভি পেয়েছো? (ওহঃ হঃ হঃ)
স্বপনের দ্বার খুলেছো (ওঃ)
কিছু জানিনি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে (মন শুধু মন) ও সেতো মুখ খুলেনি (ওহঃ হঃ হঃ)
সুর শুধু সুর তুলেছে (ওঃ) ভাষা তো দেয় নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে ও সেতো মুখ খুলেনি (ওহঃ হঃ হঃ)
সুর শুধু সুর তুলেছে (ওঃ) ভাষা তো দেয় নি
মন শুধু মন ছুঁয়েছে
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ
ওঃ হো হঃ ওঃ হঃ হঃ

গান শেষে পুরো ভার্সিটি কাঁপিয়ে তালি বাজাতে লাগলো সকলে। জয়ধ্বনি শুরু হয়ে গেলো স্নিগ্ধ ইজ ইজ স্টার,,,স্নিগ্ধ ইজ রক স্টার।
.
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আরোহীর ফোন বেজে ওঠলো। পড়ার মাঝে ফোন বাজার শব্দ পেয়ে একটু বিরক্ত হলেও নাম্বারটা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে এলো। তাঁর মা ফোন দিয়েছে,,,

মায়ের সাথে ভালো মন্দ কথা শেষ হতেই মা বললো,,,

— আরোহী,,,আশিক বিদেশ থেকে ফিরেছে সাতদিন হলো। তোদের বিয়েটাও ঠিক করা হয়ে গেছে সামনে মাসে এনগেজমেন্ট টা সেরে ফেলতে চাইছে আশিক।
তুই কি আসতে পারবি,,,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here