মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৯

0
2357

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৯
জান্নাতুল নাঈমা

বন্ধুরা, ছোট ভাইরা, বড় ভাই সবাই সমানে ফোন করে যাচ্ছে। একদিকে পলিটিক্যাল মিটিং অন্যদিকে বিয়ে উপলক্ষে ক্লাবে ছোটখাটো আয়জন করেছে স্নিগ্ধর চ্যালারা। কিন্তু স্নিগ্ধ বের হওয়া নিয়ে বেশ চিন্তিত। সবাইকে বলেছে এক ঘন্টা পর বের হওয়ার ট্রাই করবে।

.
সোফায় বসে ফোনে গেমস খেলছে স্নিগ্ধ। সিমরান একদম রেডি হয়ে নিচে নেমে এসেছে হসপিটাল যাবে সে। ইমরান, রিনি এসে ডায়নিং টেবিলে বসলো। রিনি স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে জিগ্যেস করলো –

— কিরে ভাই খাবি না??আরোহী কোথায়??

স্নিগ্ধ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এক গাল হাসি একে বোনের পাশে বসলো।

— আরোহী রান্না ঘরে।

রিনি চোখ বড় বড় করে বললো –

— হোয়াট কি বলছিস কিভাবে কি??

সিমরান বললো-

— বাহ শালাবাবুর বউয়ের হাতে রান্না খেয়ে আজ অফিস যাবো ভেরী গুড।

স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে টেবিলে হাত টুকা দিতে লাগলো।
সোনালি, রূপালি সাদা ভাত, তরকারি নিয়ে এলো।
তা দেখে রিনির চোখ কপালে এক ঢোক গিলে বললো-

— সকাল সকাল ভাত ওহ মাই গড।

রূপালি বললো-

— আপা আপনাগোর জন্য অন্য খাবাড় এইগুলা ছোট সাহেব এর জন্য।

সোনালি ইমরান,রিনি যা খায় তাই নিয়ে এলো।
রিনি ভ্রু কুঁচকে বললো –

— ভাই তো এসব খায় না সকাল বেলা। তা ছাড়া তরকারি টা দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক ঝাল ভাই এসব খাবে না। ও যা খায় তাঁর ব্যবস্থা করো।

স্নিগ্ধ হাসি হাসি মুখে বললো-

— নো প্রবলেম আপ্পি আজ আমি এটাই খাবো।
এতো কষ্ট করে সকাল সকাল রেঁধেছে না খেলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়। তা বউ কি পরিবেশন করবে না সোনালি??

সোনালি এক ঢোক গিলে নিয়ে ডাকতে লাগলো।

— ও ভাবি আহেন ছোট সাহেব ডাকতাছে।

রিনি বললো-

— ভাই তুই এতো ঝাল খেতে পারিস না প্রবলেম হয়ে যাবে তুই এটা খাবিনা।

স্নিগ্ধ শুধু হাসলো বোনের দিকে চেয়ে।
.
আরোহী রান্নাঘর থেকে বের হতেই রিনি মিষ্টি হেসে বসতে বললো। আরোহী চুপচাপ গিয়ে বসলো।
ইমরান মিটিমিটি হাসতে লাগলো স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে। স্নিগ্ধর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে বেহায়ার মতো আরোহীর দিকেই চেয়ে রইলো।
রিনি বললো-

— আরোহী এতো ঝাল স্নিগ্ধ খেতে পারে না নিষেধ আছে। এরপর ঝাল কমিয়ে দেবে আর এসব কাজ তোমার না করলেও চলবে এগুলো করার জন্য লোক আছে বলেই জুসের গ্লাস এগিয়ে দিলো সিমরানের দিকে।

আরোহী মনে মনে বেশ খুশি হলো কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে নরম গলায় বললো- আমি জানতাম না।

স্নিগ্ধ একধ্যানে চেয়েই বললো-

— কোন ব্যাপার না একদিন খেলে কিছু হবে না।
এবার দাও বলেই প্লেট ইশারা করলো।
আরোহী জোর পূর্বক হেসে খাবাড় বেড়ে দিলো।
.
ইমরান ওঠে পড়লো তাঁর অফিস যাওয়া লাগবে।
রিনি তাঁকে দরজা অবদি এগিয়ে দিয়ে সোনালি কে বললো মিষ্টি বের করে রাখতে স্নিগ্ধর খাওয়া শেষে মিষ্টি দিতে।
আরোহীকে বললো-

— ব্রেকফাস্ট হওয়ার পর ভাই বেরিয়ে গেলে তুমি আমার রুমে এসো কেমন।

আরোহী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

স্নিগ্ধ দু চামচ ভাত মুখে দিতেই তাঁর কপাল ঘামতে শুরু করলো। চোখ মুখ লাল বর্ন ধারন করতে লাগলো। আরোহী একবার স্নিগ্ধ কে দেখছে তো আরেকবার অন্যদিক তাকাচ্ছে বার বার চুল ঠিক করছে। খুশিতে তাঁর নাচতে মন চাচ্ছে।
“বেশ হয়েছে বেশ সবে তো শুরু তোর জীবনকে নরকে পরিণত যদি না করেছি আমার নাম আরোহী না। কি ভেবেছিস আমি অবলা নারী হয়ে তোর বাড়ি বসে থাকবো। আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে রয়ে গেছি শুধু মাএ তোকে জ্বালানোর জন্য আর প্রমান বের করার জন্য। দেখ এবার তোর সাথে ঠিক কি কি করি আমি” মনে মনে হাসতে লাগলো আরোহী।
এদিকে চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে স্নিগ্ধর।
গা ঘেমে একাকার অবস্থা পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।
গোলাপি ঠোঁট টা লাল টকটক করছে।

পুরো খাবাড়টা শেষ করতেই সোনালি ভয়ে কাঁপা হাতে কাঁপা গলায় বললো-

— সাহেব এটা খেয়ে নিন ঠিক হয়ে যাবে।

মুখ দিয়ে কথা বলার অবস্থায় নেই স্নিগ্ধ হাতে ইশারা করতেই সোনালি সরে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধ সোজা উপরে চলে গেলো।

সোনালি, রূপালিকে আরোহী অন্য তরকারি খেতে বললো সেও অন্যটা দিয়ে খেয়ে নিলো।
স্নিগ্ধর জন্য আলাদা লিমিট ক্রস করা ঝাল দিয়েছিলো আরোহী। ভেবেছিলো এক,দুই লোকমা মুখে দিয়ে ঝালে লাফাতে লাফাতে আর খাবে না।
কিন্তু ব্যাটা খাটাশ, রাক্ষস ঝালটাই গপাগপ খেয়ে নিয়েছে। ভেবেই মুখ বাঁকা করলো আরোহী।
সোনালি রূপালি ভুুত দেখার মতো আরোহীকে দেখছে। তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছে না স্নিগ্ধ এতটা কুল থাকবে এই মেয়েটার জন্য। এমন পরিমান ঝাল খাবাড়ও নিঃশব্দে খেয়ে নিবে। নতুন রূপে স্নিগ্ধ কে দেখে তাঁরা সত্যি অবাক।
.
দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে মেঝেতে চোখ স্থির রেখেছে স্নিগ্ধ। ফোন বেজে চলেছে সমানে তবুও তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
ঝঁড় হওয়ার পূর্বে যেমন পরিবেশ নিরবতা পালন করে স্নিগ্ধও তেমন নিরবতা পালন করছে।
আরোহী রুমে ঢুকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাথরুমের সামনে পা রাখতে না রাখতেই স্নিগ্ধ তাঁকে হেচকা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।
কোমড়ে বেশ লাগায় আহ করতে নিতেই স্নিগ্ধ তাঁর পুরো শরীর আবদ্ধ করে ফেললো নিজের শরীর দিয়ে। আরোহীর মনে হলো ১০০কেজির বস্তা তাঁর ওপর পড়েছে চিল্লানি দিতে যেতেই স্নিগ্ধ উন্মাদের মতো তাঁর ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। আরোহী দু’হাতে তাঁকে সরানোর জন্য ছটফট করতেই স্নিগ্ধ দুহাত শক্ত করে তাঁর দুহাত চেপে ধরলো বিছানার সাথে। নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিয়ে পরম আবেশে ডুবে রইলো আরোহীর ঠোঁট জোরায়।
আরোহীর কোন ভাবেই ছাড়াতে পারলো না স্নিগ্ধ কে। একটু পর পর ঠোঁট ছেড়ে আরোহীর প্রতিক্রিয়া দেখে আবারো ঠোঁট ডুবিয়ে দিচ্ছে। প্রায় দশমিনিট পর ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবালো। এবার আরোহী হুহু করে কেঁদে ওঠলো। ঝালে তাঁর ঠোঁট জোরাও লাল হয়ে গেছে সমানে হা হুতাশ করতে লাগলো।
পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেছে তাঁর কোন রকমে কাঁপা আওয়াজে বললো-

— প্লিজ ছাড়ুন আমায় প্লিজ আমার ওপর থেকে ওঠুন,,,

স্নিগ্ধ মাথা তুলে তাকালো তাঁর ঝালটাও অল্প কমেছে দু ঠোঁট জোরা হালকা ফাঁকা রেখে শ্বাস নিচ্ছে,,, চোখ জুরে নেশা নেশা ভাব। মনে হচ্ছে তাঁর বউ তাঁকে নেশা করিয়েছে। ঘোর লাগা গলায় বললো-

ঝাল লাগছে খুব,,,আমারো লাগছিলো এখন একটু কমে গেছে দেখো বলেই নিচের ঠোঁট ফুলিয়ে দেখালো।
তুমি বেশ চালাক যতোটা বোকা, আর বোরিং ভাবতাম ততোটাও তুমি নও। কিভাবে হাজব্যান্ডকে ঝাল খাওয়িয়ে কাছে টেনে মিষ্টি মুখ করাতে হয় তা তুমি বেশ ভালোই জানো। বড্ড চালাক মেয়ে নিজের মুখে তো বলতে পারোনা তাই ঝাল খাওয়িয়ে কাছে টেনে নাও এতে বেশীক্ষণ চুমুও পাওয়া যায় কি বলো জানু বলেই চোখ মারলো।

আরোহী ঘন শ্বাস নিতে নিতে বিরক্ত মুখে অন্যদিক তাকালো।স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে বললো- “আমার মতো করে তুমিও একবার ট্রাই করতে পারো কমে যাবে” বলেই আবারো ডান চোখ টিপ দিলো।

আরোহীর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সে দুফোঁটা পানি দেখে স্নিগ্ধর হাসিটাও মিলিয়ে গেলো। সিরিয়াস মুখে, চোখে আরোহীর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো- “ভীষণ ঝাল ছিলো এতো ঝাল কেউ দেয় এরপর যেনো এমন না হয় আরোহী” বলেই দুহাতে আলতো করে মুখটা ধরে আবারো ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো।
আরোহীর পুরো শরীরটা আবারো কেঁপে ওঠলো।
দুহাতে স্নিগ্ধর কাঁধে শক্ত করে ধরে সরাতে চেষ্টা করেও এক ইঞ্চি সরাতে পারলো না।
যেনো চুম্বকের মতো স্নিগ্ধর শরীরটা তার শরীরের সাথে আটকে আছে, স্নিগ্ধ খুব সফটলি কিস করতে থাকলো।
.
স্নিগ্ধ বাড়ি থেকে বের হতেই স্বস্তির শ্বাস ফেললো আরোহী। রিনি তাঁকে ডেকেছিলো মনে হতেই ধীর পায়ে রিনির রুমের দিকে পা বাড়ালো ।
মাথায় তাঁর হাজারো চিন্তা বাড়ি থেকে বেরুনোর উপায় খুঁজছে সে। তারপর মনে পড়লো ভার্সিটির কথা। পড়াশোনার আগ্রহ চলে গেলেও তাঁকে পড়াশোনা করতে হবে। এ দুনিয়ায় তাঁর যে আপন বলতে আর কেউ নেই।
সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে তাঁর আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে এক হৃদয়হীন মানুষ। এখন তাঁর আপন বলতে কেউ নেই । টাকা-পয়সা, বাড়ি, গাড়ি কিচ্ছু নেই আছে শুধু শিক্ষা যা কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারবেনা। দুনিয়া তে টিকে থাকতে হলে এটাকেই আঁকড়ে ধরতে হবে তাকে।
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজায় নক করলো আরোহী।
রিনি বললো- “ভিতরে এসো খোলাই আছে”
.
রিনি আরোহীকে সামনে বসিয়ে পুরোনো ফটো এলবাম বের করে সকলের ছবি দেখিয়ে চেনাচ্ছে। রিনির কথার ধরন, এতো প্রানোজ্জ্বল ভাবে মেশা দেখে খানিকটা ভালো লাগলো আরোহীর।
কথায় কথায় বার বার আরোহীকে এ বাড়ির বউ বলাটায় যদিও অস্বস্তি লাগছে তবুও রিনিকে বেশ ভালো লাগলো।এক পর্যায় স্নিগ্ধর স্কুলের ছবি দেখালো আরোহী ছবিটা দেখে না চাইতেও হেসে ফেললো চুল গুলো একদম দাঁড়ানো, কপাল কুঁচকানো, দাঁড়ি ছাড়া একদম বিদেশীদের মতো সাদা লাগছে স্নিগ্ধ কে। মনে মনে বললো-“বিদেশী পল্ট্রি একটা” রিনি সবার ব্যাপারে বললো তাঁর বিবিন, দাদানকেও দেখালো হঠাৎ তাঁর মায়ের ছবি বের হতেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো রিনির।
আরোহী একবার রিনির দিকে আবার ছবির দিকে তাকালো। রিনি স্মিথ হেসে বললো -“আমার আর স্নিগ্ধর মা”। আরোহী মলিন হেসে ছবিটার দিকে তাকালো। রিনি বললো-

— জানো আরোহী আমি মা কে মাএ আটবছর পেয়েছি। কিন্তু ভাই,,, ভাই মা কে একদিনও পায় নি। ভাইয়ের জন্মের তিনমিনিট পরই মায়ের মৃত্যু হয়।
আমিই ভাইকে মায়ের আদর দিয়ে বড় করে তুলেছি।

আরোহীর চোখ, মুখ শক্ত হয়ে এলো। “এ জন্যই বোধ হয় মায়ের মূল্যটা বুঝে না স্নিগ্ধ তাই তো আমার মা কে খুন করতেও তাঁর হাত কাঁপেনি। মা জিনিসটার মর্মই তো বুঝেনা। ভাবনার মাঝেই রিনির কথাগুলো কানে ভেসে এলো।

— আমার ভাই বাইরে থেকে যেমনই হোক মনের দিক থেকে ভীষণ ভালো। ও একটু রাগী,দুষ্ট, বদমেজাজিও অল্পতেই রেগে যায় সহজে ওকে দূর্বল করা যায় না। জীবনে কখনো কোন পর্যায়ে ও হারতে শিখেনি, কোন কিছুতেই পরাজয় শিকার করে না।
কখনো কাউকে অসম্মান করে না কোন অন্যায় কাজে কখনো লিপ্ত হয় নি। ওর কর্মের জন্যই সবাই ওকে এতো সম্মান করে মেনে চলে। পড়াশোনা, গান,পলিটিকস ছাড়া আর কোন নেশা নেই ওর।
তবে হ্যা আরেক নেশা যোগ হয়েছে তা হলো আরোহী নেশা। ভাই টা আমার বড্ড পাগল, বড্ড অশান্ত ভালবেসে ফেলেছে খুব তোমায়। তুমি আমার ভাইটাকে ভুল বুঝনা আরোহী আমার ভাই তোমার মা কে খুন করতেই পারেনা। যাকে ভালোবাসে তাঁর প্রিয়জনকে কেউ আঘাত করতে পারে না আরোহী।
তুমি স্নিগ্ধ কে ভুল বুঝছো।
আরোহী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।
” নিজের লোক কে ছেড়ে ওনি আমায় বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ওনারই বা কি দোষ ওনি নিজেও হয়তো নিজ ভাইয়ের আসল রূপটা জানে না।তাঁর ভাই যে কেমন জঘন্য প্রকারের লুইচ্চা তা কি সে জানে?? জানে না তো তেমনি তাঁর ভাই যে হিংস্র পশু সেটাও জানে না। কিন্তু একদিন আমি প্রমানস্বরূপ সব ওনার সামনে তুলে ধরবো ভুল ভাঙিয়ে দিবো সবার”

রিনি বললো- “আরোহী কি ভাবছো”??
আরোহী চমকে গেলো রিনির দিকে অবাক চোখে চেয়ে বললো –

— না মানে আসলে,,,

রিনি মুচকি হেসে বললো –

— আমাকে নিজের বড় বোন মনে করে সব বলতে পারো। কখনো সংকোচ বোধ করবে না। স্নিগ্ধ আমার কলিজার টুকরা ভাই আর তাঁর বউ তুমি, তুমিও আমার ভীষণ প্রিয়।

আরোহী জোর পূর্বক হাসলো।
ইতস্ততভাবে বললো-

— আপু আমার একটু ভার্সিটি যাওয়ার ছিলো।
আসলে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে তাছাড়া হোস্টেলে আমার কিছু জিনিসও আছে।

রিনি হেসে বললো-

— ওও এই ব্যাপার আমি স্নিগ্ধ কে ফোন করছি।

— না আপু প্লিজ আমি একা যেতে পারবো।

— উহুম আরোহী। তুমি এ বাড়ির বউ একা চলাফেরা করা যাবে না আর স্নিগ্ধ শুনলেও মারাত্মক রেগে যাবে। এছাড়া তোমার শরীরটাও সুস্থ নয় ডক্টর তো রেষ্টে থাকতে বলেছে।

আরোহী ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললো-

— প্লিজ আমি জাষ্ট এক ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবো। স্নিগ্ধ আসার আগেই আমি চলে আসবো।

রিনি কিছু একটা ভেবে বললো-

— আচ্ছা বাট একঘন্টা এর বেশী লেট করা যাবে না।

আরোহী মনে মনে প্রচুর বিরক্ত হয়ে মুখে জোর পূর্বক হেসে মাথা নাড়ালো।
.
বাড়ি থেকে বের হতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো আরোহী।
অটো নিয়ে চলে গেলো হোস্টেলে।
দাঁড়োয়ান সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানিয়ে দিলো স্নিগ্ধ কে।
মিটিং শেষে ক্লাবের উদ্দেশ্যে বাইক ঘুরালো স্নিগ্ধ।
পিছনে প্রায় দশ বারোটা বাইক সামনে তাঁর বাইক।
পিছন সিটে শান বসা, সকলেই জানে আরোহীকে স্নিগ্ধ বিয়ে করে নিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক যেহেতু স্নিগ্ধ একবার মুখ দিয়ে বের করেছে এই মেয়েটাকে আমার চাই সেহেতু সেই মেয়ে তাঁর হওয়া থেকে দুনিয়াতে বসবাস করা কেউ আটকাতে পারবে না।
এ নিয়ে কেউ টু শব্দও করেনি শুধু সকলে মিলে ইনজয় করার ব্যবস্থা করেছে।
.
তুরিনকে জরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে আরোহী।
একদিকে মা কে হারানোর যন্ত্রণা অন্যদিকে মায়ের খুনির বউ এর পরিচয় পাওয়ার যন্ত্রণা একদম ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে তাঁকে।
তুরিন স্তব্ধ হয়ে আছে কি বলবে সে তাঁর নিজেরই বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে ।

“ভালোবাসা কি একজন মানুষ কে এতোটাই হিংস্র করে তোলে ??
ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার জন্য খুনের মতো জঘন্য অপরাধ কোন মানুষ করতে পারে??
একটা মেয়ে কি করে পারবে নিজের মায়ের হত্যাকারীকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে??
কি করে পারবে দিনের পর দিন নিজ মায়ের হত্যাকারীর সাথে একি বিছানায় রাত কাটাতে”??

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here