মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৫

0
2418

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৫
জান্নাতুল নাঈমা

আরোহীর এমন অদ্ভুত আবদারে বিস্মিত না হয়ে পারলো না তুরিন৷ তবুও খুব ভালো বন্ধু কিনা,,,তাই আর না করতে পারলো না হাতে হাত চেপে বললো-

— ওকে দোস্ত হেল্প করবো কিন্তু সাবধান স্নিগ্ধ ভাইয়া যেনো জানতে না পারে যে তোকে আমি হেল্প করেছি। নয়তো ভাইয়ের চ্যালারা আমাকে তুলে নিয়ে কোন আসমানে চালান করে দিব কে জানে।
আমি এতো তারাতারি মরতে চাই না বইন, বিয়ে সাদি করমু দশ,বারোটা বাচ্চা তুলামু তারপর মরার চিন্তা।

আরোহী মৃদু হাসলো তুরিনের কথা শুনে। আর বললো-

— ওকে বেবি তোমার সব আশা পূরন হবে যদি তুমি আমাকে এই মহান কাজটা করে দাও।

তুরিন আড় চোখে চেয়ে বললো –

— মহান না ছাই অমন হিরোর মতো বরের সাথে এমন টা তুই করতে পারবি,,, দেখিস আবার ওল্টো রিয়েকশন না হয়। শুনেছি এসব ছাইপাস পান করলে নাকি পুরুষ দের মাঝে একটা হট হট ফিলিংস আসে। স্নিগ্ধ ভাইয়া এমনিতেই ভীষণ হট,,,

— ধূর ফালতু বকবক না করে যা বলেছি সেটার ব্যবস্থা কর। স্নিগ্ধ হট তুই জানিস কেমনে আর তুই তো কম লুচু না দেখা যায়,,,

— ওমা তুই কি জেলাস ফিল করছিস নাকি হায় এ আমি কি দেখছি।

আরোহী চোখ গরম করে তাকাতেই তুরিন হিহি করে হেসে বললো-

— আচ্ছা তুই তাহলে শ্রেয়া আপুর পাশে গিয়ে বস। আমি শ্রেয়া আপুর ভাই শ্রাবণ ভাইয়াকে পটিয়ে ম্যানেজ করছি। বিয়ে বাড়িতে ও ছাড়া আর কাউকে মুরগি বানানোর মতো পাচ্ছি না।

তুরিন দু পা এগিয়ে আবার পিছু পা হলো।আরোহীর কাছে এসে দুহাতে হাত চেপে ধরে বললো –

— আরোহী মন যেনো কেমন কু ডাকছেরে। সাহস হচ্ছে না স্নিগ্ধ ভাইয়ার সাথে তুই এমন কাজ করিস না। ভাই যা রাগি বুঝতে পারলে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে দুজনকেই।

আরোহী বিরক্ত হয়ে বললো-

— না করতে পারলে না করে দে তো এতো ঢং ভাল্লাগে না। কাজটায় সফল হতে পারলে তক্তা বানানোর সুযোগ পাবে না। তাই করতে পারলে কর নয়তো আমার চোখের সামনে থেকে যা।

— আরোহী স্নিগ্ধ ভাইয়া দোষী হতেই পারে না। একজন দোষীর চোখে মুখে তাও সে যদি হয় খুন করার মতো দোষী তার চোখের মুখে কারো প্রতি এতো ভালোবাসা এতো মায়ার রেশ থাকতে পারেনা। স্নিগ্ধ ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসেরে। তুই মাথার জিনিস পায়ে ঠেলে খুব বড় ভুল করছিস। একদিন না পস্তাতে হয়,,,

আরোহী বড় বড় করে তাকাতেই তুরিন এক ঢোক গিলে বললো-

— যাচ্ছি যাচ্ছি অমন করে তাকানোর কি আছে। এমনি মনে হলো তাই বললাম,,, তুই তো আমার প্রানের দোস্ত তাই তো মনের কথা উগ্রে দেই।

তুরিন যেনো ছুটে পালালো এবার। আরোহী চিন্তিত মুখেই শ্রেয়ার পাশে গিয়ে বসলো।
.
পুরো বাড়িতে রমরমা মানুষ। সকলেই বিয়ে বাড়িতে হৈ হুল্লোড়ে নিয়ে ব্যাস্ত। স্নিগ্ধ সহ সব বন্ধু রা মিলে শ্রেয়াদের বাড়ির সামনে পুকুর ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছে,,, মেয়েরা ওকি ঝুঁকি মেরে ওদের দেখছে।
শ্রেয়ার কাজিনরা আগে থেকেই স্নিগ্ধর প্রতি ক্রাশিত। তারওপর আজকে তো দেখে পুরোই ফিদা তাঁরা। গাঢ় খয়েরি রঙের পান্জাবি তে স্নিগ্ধকে জাষ্ট অস্থির লাগছে তাঁদের কাছে আকাশকে নীল পান্জাবিতে কম সুপুরুষ লাগছে না। স্নিগ্ধদের গ্যাং এর প্রত্যেকেই ভীষণ সুন্দর দেখতে তবে তাদের কিং হলো স্নিগ্ধ। মেয়েরাও কম সুন্দরী নয় তাঁদের গ্যাং এর তাঁর মধ্যে একজন সুন্দরী শ্রেয়া তাঁর বিয়ে আজ।
মেয়েগুলোর মধ্যে একজন আরোহীর ক্লাসমেট শায়লা ছিলো তাই সে বলেই ফেললো-

— এমন সুপুরুষের বউ কিনা আরোহীর মতো কাইলা একটা মেয়ে এটা মানা যায় না। তবুও মানতে হয়। কয়েকজন জানে তাই তাঁরা কোন রিয়েকশন করলো না। যারা জানে না তাঁরা ব্যাথিত গলায় বললো-

— মানে স্নিগ্ধ ভাইয়া ম্যারিড???

শায়লা বললো-

— জ্বি তাও আবার জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করছে। ভাবা যায়,,,

সবাই এক সুরে বলে ওঠলো,,,

— কিহ,,,

শ্রেয়ার মামাতো বোন রুনা বললো-

— কে সেই ভাগ্যবতী নারী। ইশ স্নিগ্ধ তুমি কি আমায় চোখে দেখলে না। তুলে আনতে হতো না আমি তো তোমার এক ইশারায় এমনিই দৌড়ে চলে যেতাম।

শায়লা বললো,

— এই জন্যেই তো তোকে ইশারা করে নাই।
কয়েকজন হোহো করে হেসে ওঠলো।

রুনা বললো-

— শায়লা চল আরোহী মানে তোর ক্লাসমেট বিয়েতে আসছে তো নাকি???

— হুম।

— চল দেখে আসি।
সকলেই এক তালে বললো-

— চল চল ভার্সিটির ক্রাশ বয়ের ক্রাশকে দেখে আসি।
.
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দশ বারোটা মেয়ে আরোহীকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে দেখছে। আরোহী বেশ লক্ষ করলো বিষয়টা বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে তাঁর। দশ জোরা চোখ মানে বিশ টা চোখ তাকে এমন ভাবে দেখছে যেনো গিলে খাবে। আরোহী এবার সেদিকে মন না দিয়ে স্নিগ্ধ তাঁকে যে ফোনটা দিয়েছে সেটা বের করে ঘাটাঘাটি করতে লাগলো।
.
এদিকে রুনা শায়লার হাত চেপে ধরে বললো –

— এতোক্ষণ ধরে এই মেয়েকে চেয়ে দেখে আমি এটাই বুঝার চেষ্টা করলাম এই মেয়ের মাঝে এমন কি আছে যে অমন রাজপুএের মতো ছেলে শেষে কিনা এই মেয়ে কে তুলে নিয়ে বিয়ে করলো।

শায়লা বললো-
— তো কি বুঝলি???

রুনা ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁধ উঁচিয়ে বললো-

— কিচ্ছু বুঝলাম না রে বইন। এই তোরা কিছু বুঝসস??

বাকিদের মধ্যে একজন বেশ চিন্তিত হয়ে বললো-

— আই থিংক স্নিগ্ধ ভাই ওর চুল দেখে প্রেমে পড়েছে। ইশ আমার চুল কেন যে কোঁকড়ানো হলো আগে জানলে পার্লার থেকে স্ট্রেট করে আনতাম।

আরেক জন বললো-

— ধূর বাল আমার তো সোজা প্লেইন চুলই তাও তো কাজ হইলো না।

রুনা হতাশ গলায় বললো,,
— আমাকে অনুসরন কর। আমি ওর কাছে যাবো ওর সাথে কথা বলবো সামনে থেকে অনুবিক্ষন যন্ত্রের মতো খুঁজার চেষ্টা করবো কি আছে এই নারীর মাঝে??

সকলে মিলে এবার শ্রেয়াকে ঘেরাও করে বসলো।
আরোহী চোখ উঁচিয়ে একবার দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
রুনা বললো-

— শ্রেয়াপ্পি এটা নাকি স্নিগ্ধ ভাইয়ার বউ??

আরোহী হকচকিয়ে গেলো।”ওও তাঁর মানে এই ব্যাপার বাপরে বাপ স্নিগ্ধ কি রে যে ওর বউ কে এমন করে দেখতে হবে?? তোরা পারিসও বটে ডিজগাস্টিং,,, মেয়ে তো নয় যেনো লুচ্চাগিরির মাসি। ছেলে দেখে হয় না ছেলের বউকেও এখন চোখ দিয়ে গিলে খাবে”

শ্রেয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়াতেই রুনা আরোহীর হাতটা চেপে ধরে বললো-

— হাই আমি রুনা শ্রেয়া আপুর কাজিন। তোমার দুই ইয়ারের সিনিয়র।

আরোহী প্রথমে চমকে ওঠে পরে চোখের কয়েক পলক ফেলে মৃদু হেসে বলে-

— হেলো আমি আরোহী।

রুনা এবার আরোহীর সাথে কথা বলায় মশগুল হয়ে পড়লো। কথার ফাঁকে তাকে বেশ চোখ ডাবিয়েই দেখতে লাগলো। কথার এক ফাঁকে হুট করে আরোহীর চোখে ইশারা করে বললো-

— তুমি কি আইল্যাশ লাগিয়েছো??

আরোহী আবারো স্মিথ হেসে না সূচক সম্মতি দিলো। সবাই হা করে চেয়ে দেখছে সত্যি মেয়েটার মধ্যে আলাদা কিছু আছে। গায়ের রং চাপা হলেও ওর মুখে সৌন্দর্যে ভরা অনেক কিছুই আছে।
রুনা বেশকিছুক্ষন আরোহীর সাথে গল্প করে ওঠে গেলো।

শায়লা সহ সকলেই চলে গেলো। একজন তো বলেই ফেললো এই রূপ দিয়ে কি লাভ বইনেরা যদি ভার্সিটির ক্রাশ বয়ের নজরে ঐরম মাইয়া থাকে।
আরেকজন বললো-“আজ থেকে আর রূপ চর্চা করতাম না বইন এতো বড় শখড পাওয়ার পর কিসের আবার রূপচর্চা”

রুনা বললো- ” তোরা চুপ করতো। স্নিগ্ধ ভাইয়া ভীষণ ব্রিলিয়ান্ট একজন মানুষ আজকে বুঝলাম তাঁর বুদ্ধিমত্তা শুধু পড়াশোনা,রাজনৈতিক ক্ষেএেই সীমাবদ্ধ নয় ব্যাক্তিগত জীবনে লাইফ পার্টনার নির্বাচনেও তাঁর বুদ্ধি ভীষণ প্রখর। একটা জিনিস খেয়াল করেছিস এমন একটা ছেলের বউ হয়ে এতো বড় বাড়ির বউ হয়েও বিন্দু মাএ ভাব নেই। বেশ নম্র,ভদ্র আমাদের মতো না ভাব দেখায়,,, না আমাদের মতো এতো আধুনিকতা দেখায় তবুও কপাল টা দেখ”

শায়লা বললো-

— আরোহী আসলেই অন্যরকম একটা মেয়ে সাধারণ পরিবারের মেয়ে, স্নিগ্ধ ভাইয়া সেই প্রথম দিন থেকেই ওর প্রতি আসক্ত।

রুনা বললো-

— হুম সত্যি স্নিগ্ধ ভাইয়ার মতো মানুষ আমি এ জীবনে দুটো দেখিনি আজকের পর থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আমার দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
.
বিয়ে পড়ানো শেষ আটটার দিকেই এবার কনে বিদায়ের পালাও শেষ হলো। তুরিন বেশ লুকিয়ে স্নিগ্ধসহ স্নিগ্ধর সব বন্ধু দের আড়ালে নিয়ে আরোহীকে একটা প্যাকেট দিলো। আরোহী প্যাকেট টা তাঁর পার্সে তুলে রাখলো। তুরিন বললো-

— আরোহী সাবধানে কিন্তু শ্রাবন ভাই কে আমি বলিনি কি করবো এটা দিয়ে শ্রাবন ভাইয়ের বন্ধু রা মিলে পার্টির আয়োজন করেছে সেখান থেকেই আমাকে এক বোতল এনে দিলো। তবে আমি প্রমিস করিয়েছি কাউকে যেনো না বলে।

আরোহী তুরিনকে জরিয়ে ধরলো।

— থ্যাংকস তুরিন তোর এই ঋন আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না।

তুরিন এক ঝ্যাংটা দিয়ে ছাড়িয়ে বললো-

— আহারে আমার ঋণরে,,, ভালো কিছু হইলোই হইতো এইটা ঋনের কাতারে পড়ে না।

আরোহী হালকা হেসে বললো-

— আমার জায়গায়, আমার পরিস্থিতি তে থাকলে ঠিক বুঝতিরে,,,

কথার মাঝেই স্নিগ্ধ হুট করে এসে আরোহীর হাত চেপে ধরে তুরিনকে বললো-

— এই যে শালিকা এবার বান্ধবী কে ছাড়তে হবে।

তুরিন ভূত দেখার মতো স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে রইলো।
স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে বললো-

— জারা আছে ঐ দিক যাও আমরা এখন বাসায় ফিরবো।

আরোহী হাতটা এক ঝ্যাংটা দিয়ে ছাড়িয়ে বললো-

— আমি বাচ্চা না একা হাঁটতে পারি এভাবে হাত ধরে চলার মানে হয় না।

স্নিগ্ধ যেনো কিছুই শুনেনি এমন ভাব নিয়ে আবারো হাতটা টেনে শক্ত করে চেপে হাঁটা ধরলো।
.
দুটো মিনারেল ওয়াটারের বোতল আরোহীর হাতে দিয়ে স্নিগ্ধ বললো-

— ওয়েট পাঁচ মিনিট গাড়ি থেকে কোথাও যাবে না । অচেনা জায়গা রাত তাই কথা শুনবে আশা করি।

স্নিগ্ধ সরতেই আরোহী সুযোগ টা হাত ছাড়া করলো না। চট করে একটা বোতলে খুলে পানি টা সম্পূর্ণ বাইরে ফেলে দিয়ে ড্রিংকসের বোতলটা বের করে ঢেলে দিলো ওয়াটার বোতলে। কাজটা করতে গিয়ে কপাল ঘেমে গাল বেয়ে ঘাম চুইয়ে পড়তে লাগলো।
স্নিগ্ধ দ্রুত ওপাশের ডোর খুলে গাড়িতে ওঠেই স্টার্ট দিলো।
আরোহীর দিকে চেয়ে হাত বাড়াতেই আরোহী বোতল এগিয়ে দিলো একটা নিজের কাছে রাখলো।
স্নিগ্ধ ড্রাইভ করতে করতে বেতলের মোখা খুলে সম্পূর্ন তরল পদার্থ পান করে নিলো।আরোহীর দিকে একবার আড় চোখে চেয়ে সামনে তাকালো আর বললো-

— দোকানদার রা কি আজ কাল পানির পরিবর্তে নেশাভান বিক্রি করছে নাকি।

আরোহী চমকে ওঠলো ভয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে গেছে প্রায় কপাল ঘামছে অবিরত। স্নিগ্ধ আরোহীর অবস্থা দেখে মৃদু স্বরে বললো-

— রিল্যাক্স আরোহী,,, এতো চাপ নিচ্ছো কেনো??
আমি প্রথম মুখে দিয়েই বুঝেছি এটাতে পানি নেই।
বোকা মেয়ে পুরুষ মানুষ পানি আর নেশাভানের পার্থক্য বুঝবে না। তারওপর প্রত্যেক সপ্তাহে যেটা দিয়ে আমার সাঙ্গোপাঙ্গরা পার্টি করে,,,

আরোহীর এবার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।
“তারমানে ওনি বুঝে গেছে তাহলে কেনো খেলো আর নেশাই বা কেনো হলো না”??

— কি ভাবছো আমি বুঝেও কেনো খেলাম??

আরোহী চমকে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ সামনে তাকিয়েই ড্রাইভ করছে মুখে তাঁর বাঁকা হাসি।

— তুমি আমাকে বিষ এর পরিবর্তে যা এনে দিবে তা খেতেই আমি প্রস্তুত। নেশাটা আমি করিনা দুই একবার টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু নিজের বউ যখন লুকিয়ে নেশা করাতে চাইলো তখন না করে থাকতে পারলাম না। এবার আমায় সামলানোর দায়িত্ব তোমার বলেই আড় চোখে তাকালো।

আরোহী এক ঢোক গিললো।
স্নিগ্ধ ধরা গলায় বললো-

— জিগ্যেস করলে না তো কেনো বিষ খেতে চাইলাম না।

আরোহী তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ বেশ জোরে ড্রাইভ করতে করতে বললো –

— কারন ওটাতে আমার মৃত্যু হতে পারে। আমি মরে গেলে তুমি যে একা হয়ে পড়বে। তোমার দায়িত্ব নেওয়ার কেউ থাকবে না। তাই আমাকে তোমার জন্য বাঁচতে হবে আমাকে তোমার খুব প্রয়োজন।

এতো জোরে ড্রাইভ করায় আরোহী ঘাবড়ে গেলো।
স্নিগ্ধ বললো-

— ভয় পেওনা দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে।
নেশা হয়ে গেছে আমার নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।

আরোহীর বুকের ভিতর টা কেঁপে ওঠলো। কিন্তু এর যৌক্তিক কারন সে মেলাতো পারলো না।
বুকের ভিতর এমন অদ্ভুত অনুভূতির রহস্য টা কি বুঝলো না সে।
.
রুমে ঢুকেই স্নিগ্ধ গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো। পোশাক পাল্টানোর মতো অবস্থাও তাঁর নেই।
আরোহী রুমে এসে স্নিগ্ধ কে অমন অবস্থায় দেখে চট করে ফোন বের করে রেকর্ড সিস্টেম চালু করে ফোনটা বিছানার একপাশে রাখলো।
তাঁর যেনো দুনিয়ার আর কোন দিকে হুশ নেই। সব সময় মাথায় একটা কথাই চলতে থাকে স্নিগ্ধর মুখ থেকে সত্যিটা বের করতেই হবে। নিজেও পোশাল পাল্টালো না সোজা বিছানায় গিয়ে স্নিগ্ধর পাশে বসলো।চোখ, মুখ শক্ত করে বললো-

— সত্যি করে বলুন আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন??

…………………..

— কি হলো বলুন।

………………….

স্নিগ্ধর থেকে কোন সাড়া পেলো না আরোহী। শুধু তাঁর ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেলো।
রাগে তাঁর মেজাজ গরম হয়ে গেলো স্নিগ্ধর প্রত্যেকটা শ্বাস বিষের মতো বাড়ি খেতে লাগলো তাঁর কানে।
“না স্নিগ্ধ না এটা আমি কিছুতেই হতে দিবো না। তোমাকে আজ আমার সাথে কথা বলতেই হবে” ভেবেই সোজা স্নিগ্ধর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো।
চিৎকার করে বললো-

— সত্যি করে বলুন কেনো কেনো বিয়ে করেছেন আমায়।

তীব্র ঝাঁকুনি তে স্নিগ্ধ চোখ টেনে তুলে ঢুলো ঢুলো চোখে তাকালো আরোহীর দিকে। যেনো একশটা আরোহী তাঁর বুকের ওপর চড়ে চিৎকার করে জিগ্যেস করছে “সত্যি করে বল কেনো বিয়ে করেছিস আমায়”

স্নিগ্ধ নেশাগ্রস্ত গলায় বললো –

— ভালোবাসি,,,

আরোহী থমকে গেলো বিস্ময় চোখে তাকিয়ে বললো-

— এ অবস্থায়ও মিথ্যা বলবেন আপনি??

স্নিগ্ধ ডান হাতের শাহাদাৎ আঙুলে আরোহীর ঠোঁট জোরা চেপে ধরলো। মুখ দিয়ে ভারী শ্বাস নিতে নিতে বললো-

— সশশ,,, ভালোবাসি কথাটা কখনো মিথ্যে নয় মাই ব্ল্যাক কুইন।জানো আজ তোমায় খুব মিষ্টি বউ বউ লাগছে। এ শাড়ি এ গয়না কি অসম্ভব সুন্দর মানিয়েছে তোমায়।

স্নিগ্ধর মাতলামো স্বরে আরোহীর কি যেনো হলো।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো সে। স্নিগ্ধ দুহাতে আরোহীর দুগালে স্পর্শ করে বললো-

— কাঁদো কেনো আরোহী?? ভালোবাসিতো,,,বুকে ব্যাথা লাগে তো।

আরোহী স্নিগ্ধর দুহাত ছাড়িয়ে তাঁর ওপর থেকে সরে গেলো। স্নিগ্ধ অসহায়ের মতো মুখ করে চেয়ে রইলো আরোহীর পানে। অবুঝ শিশুর ন্যায় চেয়ে আছে আরোহীর দিকে। গোলাপী ঠোঁট জোরা জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে দূর্বল চোখে চেয়ে দূর্বল গলায় বললো-

— আরোহী,,,

আরোহী চোখের পানি মুছে অন্যদিক চেয়ে বললো –

— কেনো মারলেন আমার মা কে কি ক্ষতি করেছিলো ওনি আপনার বলুন স্নিগ্ধ। এই উত্তর আমার চাই।

স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে আবারো শুয়ে পড়লো।
আরোহী স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে বললো-

— বলুন কেনো মারলেন কি হয়েছিলো সেদিন কি কথা হয়েছিলো আপনাদের??

স্নিগ্ধ বললো-

— আমি মারিনি,,, আরোহী। কেনো মারবো কি কারনে মারবো?? ওনার কাছে যে আমি অনেক ঋনি। যে ঋন আমি এ জীবনে কোনদিন শোধ করতে পারবো না।

আরোহী থমকে গেলো। স্নিগ্ধর অনেকটা কাছে এসে কাঁপা গলায় বললো-

— মানে কি বলছেন কিসের ঋন??

স্নিগ্ধ দূর্বল গলায় বললো “মামাহ,,,

আরোহী আরেকটু ঝুঁকে গিয়ে বললো “মামাহ মানে কি বলছেন স্নিগ্ধ বলুন তাকান আমার দিকে সত্যিটা বলুন আমায়”???

— তুমি আমার ভালোবাসা তাঁর থেকেও বড় সত্যি তুমি আমার দায়িত্ব আরোহী। বলেই চোখ বুজে চুপ রইলো স্নিগ্ধ।

আরোহী আবারো ঝাকাতে লাগলো। এবার যেনো দ্বিগুন কৌতুহলি হয়ে পড়লো সে। উত্তেজনা বেড়ে গেলো চারগুন। আরোহীর তীব্র ঝাঁকুনি তে স্নিগ্ধ চোখ খুললো। আরোহীর নিঃশ্বাস তাঁর মুখের ওপর পড়ছে ক্রমাগত। নেশাময় চাহনীতে চেয়ে বাঁকা হাসলো স্নিগ্ধ। দুগালে চেপে ধরে ঠোঁট আগাতেই আরোহী স্নিগ্ধর মুখে হাত চেপে বললো-

— কি বলছিলেন সেটা বলুন কথা ঘোরাবেন না।

— হুমহ,,, কি বলছিলাম আমি?? আমি বলছিলাম তোমাকে বউ বউ লাগছে বলেই আবারো ঠোঁট আগাতে নিলো।

আরোহী এক ঝটকায় স্নিগ্ধর থেকে সরে গেলো।
কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে ওঠে পড়লো। পিছন ঘুরে একবার স্নিগ্ধ কে দেখলো স্নিগ্ধ বিরবির করছে আর হাসছে। আরোহী এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাবার্ড খুলে কাপড় খুঁজতে লাগলো তাঁর। বেশ কিছুক্ষণ এলো মেলো করার পর খেয়াল হলো এখানে শুধু স্নিগ্ধরই কাপড় তারগুলো পাশের কাবার্ডে ভেবেই কাপড়গুলো কোনরকমে গুছিয়ে রাখতেই ব্ল্যাক কালারের শার্টটা নিচে পড়ে গেলো।
সাথে সাথেই আরোহী শার্টটা তুলে ফেললো কিন্তু নিচে রয়ে গেলো স্নিগ্ধর ওয়ালেট। পাশের কাবার্ড খুলতে যেতেই পায়ে ওয়ালেট টা বাজলো।
নিচু হয়ে ওয়ালেট টা ওঠিয়ে এপাশ ওপাশ করে দেখলো।বুঝলো এটা স্নিগ্ধ ইউস করে না তাই রেখে দিতে যাবে অমনি কি মনে করে কৌতুহলি হয়ে ওয়ালেট টা ঘেটে দেখতে লাগলো।
হঠাৎই চমকে গেলো আরোহী।
এ সে কি দেখছে সে সত্যি দেখছে নাকি এটা তাঁর কল্পনা আর যদি সত্যি হয় তাহলে কিভাবে সত্যি এটা???
চোখ বেয়ে সমানে পানি ঝড়ছে স্নিগ্ধর ওয়ালেটের ভিতর তাঁর মায়ের কলেজ জীবনের ফটো। মায়ের দুপাশে বেনুনী করা নব্বই দশকের মেয়েরা যেভাবে বেনুনি গাথঁতো দুপাশে তাঁর মাও গেঁথেছে ছবিটা সাদা কালো বেশ পুরোনো যা দেখে তাঁর আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা তাঁর মায়েরই ছবি।

চলবে………

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here