মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২৪ শেষ

0
6424

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২৪ শেষ
জান্নাতুল নাঈমা

সেদিন যখন স্নিগ্ধ ভাইয়া মায়ের সাথে কথা বলে।
এক পর্যায়ে সবটা মেনে নেয় তখন স্নিগ্ধ ভাইয়া বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আমি তখন বাড়ির পাশে বসে আছি। মনটা খুব খুশি লাগছিলো আমার আরোহী আপুর বিয়ে। কতো সুন্দর সিনেমার হিরোদের মতো দেখতে ছেলের সাথে বিয়ে হবে আরোহী আপুর। তাই ভেবে আনন্দের সীমা নেই।
তখনি তোমার মামা আর আশিক ভাইয়া বাড়িতে এলো। আমি তখন খানিকটা ভয় পেলাম। বিয়ে ভাঙার জন্য তারা আবার রাগ করবে না তো। আমিও ভিতরে চলে গেলাম দরজার বাইরে থেকে শুনতে পেলাম কথোপকথন। আমি যে ও বাড়ি উপস্থিত আছি তা তাঁদের বাবা ছেলের কারো মাথায় ছিলো না। দরজার পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।
মা বললো,

— ভাই আমার স্বামীর সাথে ছেলেটার গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ সে তাঁর দায়িত্বে আমাদের রেখে গেছে। এতোদিন জানতো না ছোট ছিলো তাই খোঁজ করতে পারেনি এবার করেছে। ছেলেটা আরোহীকে খুব ভালোবাসে। আর সব থেকে বড় কথা আমার স্বামীর আপনজন সে। তাঁর জন্যই নিজপ্রান দিয়েছে। শেষ কথায় তিনি আমার দায়িত্ব ওর কাছে দিয়ে গেছে। আমার তো জীবন এককালে গিয়ে ঠেকেছে। আমার মেয়েটার জীবন ওর হাতে তুলে দিতে চাই।
মামা তখন বললো,

— বাহ বড়লোকের ছেলে দেখে দেখি তোর হুশ নাই।

আশিক বললো,

— ফুপু এতো কথা বুঝিনা হয় আরোহীকে আমার সাথে বিয়ে দাও নয় তো দাদাজানের পাঁচ বিঘা জমি আমার নামে করে দাও।
তারপর তোমরা জাহান্নামে চলে যাও এতে আমাদের কোন জায় আসেনা।

মা তখন চমকিত হয়ে বললো,

— এগুলো কি বলছো আশিক। বাবামশাই আমাকে ভালোবেসে শেষ কিছু দিয়ে গেছেন। আমারওতো টিকে থাকতে হবে৷ আর তা আমি দিয়ে দিবো।

— কেনো ফুপু এখন সমস্যা কোথায় এখন তো বড় লোক মেয়ের জামাই পাবা। এই সম্পদ দিয়ে কি করবা।আমরা বাপ ছেলে বেঁচে থাকতে দাদাজানের জমিতে আরোহী বা আরোহীর বড়লোক জামাই হাত দিবে তা সহ্য করতে পারবো না। তুমি অনেক ভোগ করছো এইবার ওগুলো ফেরত দাও।

— আমি দিবো না। তোদের মনে এতো বিষ। এতোদিন জানতাম ভাবীর মনে শুধু আমরা মা মেয়ে বিষের মতো। কিন্তু তোরা তোরাও সেই একি ধাচের ছিঃ।

সাথে সাথে মামা মায়ের চুল টেনে ধরলো মা চিৎকার করে উঠতেই আমি আওয়াজ করে রুমে যেতে নিতেই আশিক ভাই দরজা বন্ধ করে দেয় আমাকে ধাক্কা দিয়ে। আমি দৌঁড়ে জানালার কাছে যাই আশিক মায়ের মুখ চেপে ধরে রাখে আর মামা দলিল পএ তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। দলিল পেয়েও যায় আর মা সেগুলো নিতে বাধা দিতে যায় কিন্তু পারেনা।
আশিকের হাত কোন রকমে ছাড়িয়ে চিৎকার করে বলে,

— তোদের জেলের ভাত খাওয়িয়ে ছাড়বো। মনে রাখিস আমি এখন একা না। আমার সন্তান রয়েছে। আমার মৃত স্বামীর আশীর্বাদ রয়েছে। স্নিগ্ধ নামক ফেরেশতা রয়েছো আমাদের পাশে।

সাথে সাথে মামা মা কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। বালিশ চাপা দিয়ে ধরে থাকে। আমি জানালায় সমানে ধাক্কাতে থাকি। কোন উপায় না পেয়ে জোরে শব্দ করতে থাকি। বাড়িটা ফাইটা বাড়ি জানোই তো।
আশে পাশে বাড়ি ছিলো না। কাঁচা রাস্তায় ও জন মানব শূন্য উপায় না পেয়ে মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে থাকি। আশিক আমার দিকে চেয়ে বলে,

— এই পেবী চুপচাপ থাক নয়তো জানে মেরে দিব।
নিজের প্রাণ বাঁচাতে চাইলে চুপ থাক। অবশ্য তুই সারাদিন আ ও করেও লাভ নাই। না বলতে পারিস কথা আর না জানিস লেখা পড়া। দেখেই যা তুই বলেই বিশ্রি ভাবে হাসলো। আর আমি অঝড়ে কাঁদতে লাগলাম। একসময় মায়ের নড়নচড়ন কমে গেলো। মামা মা কে ছেড়ে দিলো মা চিৎ হয়ে শোয়া।
আশিক একটু ঝুকে বললো,

— শেষ এবার খেলাটা বদলে দাও। দলিল আমাদের কাছে আরোহীকে বিয়ে করে নিলে এমনিই পেয়ে যাবো। আর না করতে পারলেও সমস্যা নাই যেভাবেই হোক নতুন দলিলেবস্বাক্ষর করে নিবো।

মামার শরীর ঘেমে গেছে হাত, পা কাঁপছে কাঁপা গলায় বললো,

— যদি ধরা পড়ে যাই। আশিক বললো,

— কিচ্ছু হবে না শুধু এখান থেকে কেটে পড়ো।
সঠিক সময় হাজির হবে যাও আমিও আসছি।

আরোহী আপু আমি ইশারায় অনেক বোঝাতে চাইছি। কিন্তু আশিক আমার ইশারার মানে স্নিগ্ধ ভাইয়ার দিকে ঠেলে দিছে। কোনভাবেই সম্ভব হয় নি। আর তুমি স্নিগ্ধ ভাইয়াকে ভুল বুঝেছো।
তুমি মানুষ চিনতে পারোনি। “মানুষ আসলে যা দেখায় তা তাঁরা নয়, তাঁরা যা দেখায় না সেটাই তাঁরা”
আশিক তোমার সামনে মুখোশ পড়ে আছে। অথচ তুমি মুখোশধারী বলেছো স্নিগ্ধ কে।
“মুখোশ সত্যি মারাত্মক একটা জিনিস যা সত্যি কে মিথ্যা মিথ্যাকে সত্যি করার ক্ষমতা রাখে”
.
আরোহী সাদা কাগজ মুড়িয়ে মালাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। হেচকি তুলতে তুলতে বললো,

— বেঈমান,বিশ্বাস ঘাতক । সম্পদের জন্য নিজের বোনকে হত্যা করতে একবারো তোর বুক কাঁপলো না। ছাড়বোনা তোদের আমি এই নিজের হাতে তোদের আমি শেষ করবো।

মালাকে সমানে মাথা দিয়ে না করলো। বুঝালো ওরা খুব ভয়ংকর লোক। ওরা খুনি তোমাকেও খুন করে দিবে। স্নিগ্ধর ছবি দেখিয়ে ইশারা করলো আর বললো,স্নিগ্ধ ভাইয়া ওদের শাস্তি দিবে।
কিন্তু আরোহীর মাথায় এখন সেসব ঢুকছে না।
বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম সীমানায় সে। যাদের এতোবছর আপনজন ভেবে এসেছে তাঁরাই কিনা এতোবড় জঘন্য কাজ টা করলো। মা হারা করে দিলো তাকে। নিজের চুল খামচে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো আরোহী।
.
স্নিগ্ধ ভার্সিটিতে রয়েছে সামনে তাঁর ফাইনাল এক্সাম। তাই স্যারদের সাথে কথা বলছে।
এদিকে আরোহী দুবার কল করে স্নিগ্ধ কে না পেয়ে মালা কে বললো,

— তুই এ বাড়ি থেকে একদম বের হবি না। কোন সমস্যা হলে রিনি আপুকে বলবি। বিবিন আছে তাঁর কাছে যাবি ইশার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবি।
আরোহী বের হতে নিতেই মালা হাত আটকে ইশারা করলো কোথায় যাও??

আরোহী চোখ, মুখ শক্ত করে বললো,

— যাচ্ছি যেখানে এখন আমার যাওয়া উচিত।
.
নিজ বাড়িতে পা রাখতেই বুকটা কেঁপে ওঠলো আরোহীর। মায়ের স্মৃতিগুলো খুব করে কড়া নাড়লো বুকের ভিতর।
“নিজের রক্ত কখনো বেঈমানী করে না। কথাটা ভুল আসলে বেঈমানী নিজের খুব কাছের জনরাই করে।
নিজের রক্তই বেঈমানী করতে পিছুপা হয় না”
চোখের পানি মুছে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আরোহী। ঘরের দরজা খোলাই কারন সে আশিক সহ তাঁর মামা-মামী কে জানিয়েই এসেছে।
তাঁদের বলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দরকার আছে কিন্তু কি দরকার সেটা জিগ্যেস করাতেও বলে নি।
আশিক সহ আশিকের বাবা,মা ভীষণ খুশি এই সুযোগে আরোহীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দলিলে সই করিয়ে নিবে। কোনভাবে না করলে জোর জবরদস্তি করেই সই করাবে। প্রথমে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করবে। সব প্ল্যান করেই এসেছে তাঁরা।
.
রাগের বশে, কষ্টে যন্ত্রণায় আরোহীর জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পেয়ে গেছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই শত্রুর পক্ষের সামনে হাজির হয়েছে। তাঁর জবাব চাই কেনো নিজের আপনজন হয়েও এমন কাজ করলো।
অথচ সে বুঝতেও পারছে না নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে আজ।
.
ওঠানে আরোহীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখেই তাঁর মামি ছুটে এসে জরিয়ে ধরলো।

— কেমন আছিস মা । কতোদিন দেখিনা রে মা। আমাদের তো ভুলেই গেছিস। তোর মামাকে কতো বলি মেয়েটাকে দেখে আসি, আশিক কে বলি মেয়েটাকে নিয়ে আয় ওরা কেউ আমার কথাই শোনেনা।

জীবনে প্রথম মামির এতো আদর, ভালোবাসা দেখলো আরোহী। যার ফলে তাঁর শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো। কোন রকমে ছাড়িয়ে কান্নামিশ্রিত গলায় বললো,

— এতোখানি সৌভাগ্য আমার তাহলে হলো মামি??

মামি আরোহীর কথা শুনেই বললো,

— জানিরে মা তোর অনেক অভিমান আমার ওপর।
কিন্তু তোর তো এখন আমরা ছাড়া কেউ নেই। তোর মায়ের মৃত্যুর পর থেকে আমার মনও ঘুরে গেছে রে।

আরোহী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,

— কে বলেছে আমার কেউ নেই আমার স্বামী রয়েছে।
আমার বাবা,বড় বোন৷ দাদা,দাদি সব রয়েছে। অনেক ভালো একটা পরিবার রয়েছে আমার।

মামির মুখটা চুপসে গেলো৷ জোর পূর্বক হেসে আরোহীকে ধরে আশিককে ডাকাডাকি শুরু করলো।

— আশিক কই বের হো দেখ কে এসেছে৷ জানিস আরোহী মা ছেলে আমার তোর চিন্তায় নাওয়া, খাওয়াই বাদ দিয়ে দিছে।

মামির সাথে পা চালিয়ে ঘরে গেলো আরোহী। মামা,আর আশিককে কথা বলতে দেখলো। আশিক, মামা দুজনই চুপ হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে আরোহীকে সমাদর করতে লাগলো।
.
মামাকে দেখে আরোহীর ভিতর জ্বলে ওঠলো।
নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না।
কিছু বলতে যাবে তখনি মামা আরোহীর হাত ধরে বলে ওঠলো,

— আয় মা বোস বিছানায় বোস ইশ কি করেছিস চেহেরার।কি আর বলি বল ঐ ছেলেটা এসে ক্ষমতা খাটিয়ে তোকে তুলে নিয়ে গেলো। আমাদের তো তেমন ক্ষমতা নেই বল। তোর মায়ের এভাবে মৃত্যু হলো। শত্রু বেড়েই চলেছেরে মা এদিকে আবার তোর নতুন শত্রু জন্মিয়েছে তা মা স্নিগ্ধ তোর ওপর কোন টর্চার করে না তো?? ওর মামার সাথে তোর মা কে বিয়ে দেওয়াই ভুল হয়েছেরে মা তাই তো সেই শত্রুতা ধরে কতো সব ঘটনা ঘটিয়ে গেলো। আফসোস করতে করতে আরোহীকে বিছানায় নিয়ে বসালো।
আরোহী বললো,

— আমরা আমাদের শত্রুদের বিষয়ে খুব সজাগ তাইনা।আমরা মানুষ কে চিন্হিত করে বলি এই আমাদের শত্রু। অথচ “কে প্রকৃত শত্রু কে যে মিএ তা আমাদের অজ্ঞাতই থাকে”

আশিকের মুখটা চুপসে গেলো৷ মামা খানিকটা কেঁপে ওঠলো এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো,

— কি বলছিস??

আরোহীর চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে লাগলো।
মামি বেশ ধরিবাজ মহিলা তাই সে আশিক কে চোখের ইশারা করলো। আশিক চোখ বুজে মা কে আশ্বাস দিলো।

আরোহী বললো,

— কথায় আছে ঘরে শত্রু বিভীষণ। কথাটা এতদিন শুনেছি কিন্তু আজ নিজ চোখে প্রমান পেলাম।
দূরের শত্রু কখনো মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করতে পারেনা। কিন্তু কাছের শত্রুরা একদম নিঃশ্ব করে দিতে পারে। আর তাঁরা যদি হয় নিজের রক্তের সম্পর্কের কেউ তাহলে কথাই নেই। যেমনটা আমার পুরো পৃথিবী টাই শেষ করে দিয়েছো তোমরা।
.
মামা বিছানায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো।আশিক এক ঢোক গিললো। মামি কান্না করে দিয়ে বললো,

— হায় হায় হায় কি বলছিস তুই। এতো অধঃপতন বড়লোক বাড়ির বউ হয়ে নিজের লোকদের এইভাবে আঙুল তুলছিস ছিঃ।তুই আমাদের সন্দেহ করছিস।

আরোহী বিছানার চাদর খামচে ধরে নিচের দিকে মাথা রেখে চিৎকার করে বললো,

— কেনো করলে কেনো?? কেনো আমাকে তোমরা মা হারা করে দিলে?? ঐ সম্পত্তির জন্য৷ এতো লোভ তোমাদের। ভুলে যেও না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
তোমরা পাপ করেছো জঘন্য অপরাধ করেছো। তোমাদের ক্ষমা নেই কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে তোমাদের।

আশিক নিজের ঘেমে যাওয়া মুখ মুছলো। সে বুঝে গেছে মালা আরোহীকে সবটা জানিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু তা হলে তো আরোহী পুলিশ নিয়ে আসতো তা তো আসেনি৷ তাহলে কি পুরোটাই সন্দেহ করছে।
যাচাই করার জন্য বললো,

— আরোহী তুমি ভুল করছো আর ভুল বুঝছো আমাদের।

মামা, মামি মিলে আরোহীকে বোঝাতে লাগলো।
আরোহী কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। ছাড়বোনা আমি তোমাদের। তোমাদের নিজের মামা, মামি ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে। নিজের বোন কে খুন করতে যার বুক কাপে না সে মানুষ না অমানুষ। বলেই মামার কলার চেপে বললো,

— কেনো কেনো আমার মা কে খুন করেছো। কেনো আমাকে মাহারা করেছো বলো। এখন যদি একিভাবে আমি তোমাকে খুন করে তোমার সন্তান দের পিতাহারা করে দেই।

মামির সাথে ধস্তাধস্তি হতে শুরু করলো। আরোহী তাঁর মামাকে মারবেই নিজ হাতে৷ এদিকে আশিক দিলো শয়তানি হাসি৷ সে বেশ বুঝতে পারছে বিশ্বাস ঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে আরোহী মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নয়তো এভাবে একা একা এখানে এসে এমন নির্ভয়ে এসব করতে পারতো না।
আরোহী এক ধাক্কা দিয়ে তাঁর মামাকে দেয়ালে ঠেকালো। আবারো কলার ধরতে যেতেই আশিক তাঁর হাত মুচড়ে ধরলো।
মামি চুলের মুঠি ধরে বললো,

— মুখপুরি আমার চোখের সামনে আমার স্বামীকে তুই মারবি। আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো।
আশিক হাত পা বাঁধ। সাথে সাথে রশী দিয়ে মামা আর আশিক মিলে হাত পা বেঁধে ফেললো।
এদিকে আরোহী চিৎকার করে বলতে লাগলো,

— বেঈমান, বিশ্বাস ঘাতক,ছাড়বোনা কাউকে।
আমার মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।

মামা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

— এবার কি হবে?? এই মেয়ে তো সব জেনে গেছে।
মেরে দিবো??

আশিক বললো,

— উফফ বাবা দেখো ও স্বাভাবিক নাই। ও যদি স্বাভাবিক আর হুশে থাকতো এখানে একা আসতো না। আর যাই হোক একজন খুনির সামনে এভাবে আসা স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
তোমরা এক কাজ করো বাড়ি চলে যাও। দলিলটা রেখে যাও। বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।

মামি বললো,

— কি করবি বাবা এই মেয়ের থেকে সাবধান ওকে কি করবি ওকে ছাড়লে কিন্তু আমরা শেষ। আমাদের ওকে ছাড়া যাবে না।

— আরে মা চিন্তা করো না যেতে বলছি যাও। আমি সবটা সামলে নিবো। বলেই আরোহীর দিকে চেয়ে বিশ্রি এক হাসি দিলো।

বাবা,মা কে বিদায় করে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো আশিক। আরোহী বির বির করে বলতে থাকলো-
— ছাড়বো না আমি কাউকে৷ তোরা খুনি,তোরা বিশ্বাসঘাতক ছাড়বো না আমি কাউকে। কাউকে ছাড়বো না। বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক।

আশিক নিজের গা থেকে শার্ট খুলে ফেললো।
আরোহীর দিকে এগিয়ে গিয়ে চুলের মুঠী ধরে বললো,

— ছাড়বিনা বেঁচে ফিরলে তো তুই কিছু করবি৷
একা এসেছিস না অনেক বড় ভুল করেছিস।
পকেট থেকে দলিল বের করে বললো,

— এটায় সাইন কর বলেই একহাতের বাঁধন খুলে দিলো। সাথে সাথে আরোহী এক হাতে ঠাশ করে থাপ্পড় দিলো আশিকের গালে। আশিকও সাথে সাথেই আরোহীর দু গালে দু থাপ্পড় দিলো।
আরোহী চিৎকার করে বললো,

— করবো না সাইন৷ আমার মায়ের সম্পত্তি তোদের মতো খুনিদের ভোগ করতে দিবো না।

আশিক আরোহীর ঘাড় চেপে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

— তুই জানিস না আমি ঠিক কতোটা জঘন্য। দলিলে সাইন করবি না ফাইন। তোর দেহটা ভোগ করতে দে।
তারপর নিজের হাতে তোকে খুন করে মাটিতে পুতে দিবো। এই সম্পত্তি এমনিতেও তখন আমাদের হয়ে যাবে। যা তুই বেঁচে থাকলে হবে না৷ এই সম্পত্তি খুবই মূল্যবান এতোটাই যে মা প্রান দিয়েছে,মেয়ে আগে শরীর দিবে পরে জান দিবে বলেই খুব বিশ্রি ভাবে হোহো করে হেসে ওঠলো।
.
স্নিগ্ধ বাড়ি ফিরে সকলের কাছে শুনেছে আরোহী বেরিয়ে গেছে। কাউকে কিছু না বলেই। মালাকে জিগ্যাস করতে সে কাগজে লিখে বললো,

— সব সত্যি জানানোর পর কোথায় যেনো চলে গেলো।

স্নিগ্ধ তখন চমকে সব সত্যি কি জানতে চাইলে মালা চিঠিটা তাঁকে দিলে সমস্ত কথা জেনে স্নিগ্ধ এক সেকেন্ডও দেরী করলো না। পুলিশকে ইনফর্ম করে তখনি বেরিয়ে পড়লো।
.
চিৎকার করতে করতে গলা ভেঙে গেছে আরোহীর।
মুখ দিয়ে আর আওয়াজ বের হচ্ছে না। আশিকের সাথে বেশ ধস্তাধস্তি করছে। আশিক আরোহীর দুপায়ের বাঁধন খুলেছে। আরোহীর গা থেকে ওড়না নিয়ে মুখ বেঁধে রশী দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো।

আরোহী নিজের দুপায়ের সাহায্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচানোর। আশিক আরোহীর গায়ের জামাটা একটানে ছিঁড়ে ফেললো।আরোহী গোঙানি দিতে থাকলো। পা দিয়ে সমানে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ওলটো হয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতেই পিছন থেকে জামার চেইনে টেনে জামা খুলতে থাকলো।

নিজের ভুলের এতো বড় মাশুল দিতে হবে ভাবেনি আরোহী। সম্পূর্ণরূপে হুশ যেনো ফিরেছে তাঁর এ মূহুর্ত স্নিগ্ধ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না। তার এতো বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে আর স্নিগ্ধ সেটা জানতেও পারলো না। বুক ফেটে চিৎকার বেরিয়ে এলো।নিজেকে বাঁচানোর প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। দু কনুই ভর করে একটু দূরে যেতেই আশিক আবার তাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আরোহীকে নিজের দিকে ঘোরালো।তাঁর শক্তির কাছে আরোহীর শক্তি খুবই নগন্য। আরোহী তাঁর বাঁধা হাত দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করতেও পারলো না৷ আশিক তাঁর কার্য হাসিল করায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
.
আরোহীর পুরো বাড়ি পুলিশ ঘেরাও করে ফেললো।
প্রথমে আশিকের বাড়ি ঘেরাও করে তাঁর বাবা,মাকে চাপ দিয়ে আশিক আর আরোহী কোথায় আছে জানতে চাইলে তাঁরা বলে দেয়। পুলিশ তাঁদের হাতকড়া পড়িয়েই আরোহীর বাড়ির দিকে এসেছে।

স্নিগ্ধ দরজা বন্ধ দেখে নিজের গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে দরজায় কয়েক লাথি, কাঁধ দিয়ে কয়েক ধাক্কা দিলো। দরজা খুলতেই এমন দৃশ্য দেখে স্নিগ্ধ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বাজে ভাষায় গালি দিতে দিতে আশিকের ঘাড় বড়াবড় এক লাথি দিয়ে এক হাতে আশিক কে টেনে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললো।
আরোহীকে জাবটে ধরলো স্নিগ্ধ। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে বললো,

— অফিসার এই জানোয়ারটাকে এখুনি শ্যুট করুন।
সাথে সাথে কয়েকজন পুলিশ ভিতরে ঢুকে দেখলো আশিক মেঝেতে শুয়ে কুকঁড়াচ্ছে।তাঁরা আশিককে ধরে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
.
স্নিগ্ধ তখন পাগল প্রায় চিৎকার করতে করতে কাঁদতে লাগলো সে। আরোহীর মুখের বাঁধন খুলে দিলো।সাথে সাথে আরোহী ডুঁকড়ে কেঁদে ওঠলো।
হাতের বাঁধন খুলতেই আরোহী স্নিগ্ধ কে জরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। স্নিগ্ধ আরোহীকে ছাড়িয়ে পাগলের মতো তাঁর পুরো শরীর চেক করতে লাগলো। জামার বিভিন্ন ছেড়া অংশ দেখতে পেলো।
তাহলে কি সব শেষ, কুকুড়ের মতো খুবলে খেয়েছে জানোয়ারটা তাঁর কলিজাকে। স্নিগ্ধ ফুঁপিয়ে ওঠলো।
আরোহীকে জরিয়ে ধরে মুখ চিপে বললো,

— আরোহী,,, এটা কি হয়ে গেলো।

আরোহী তখন কেঁপে ওঠলো। নিজের শরীরের দিকে চেয়ে আবার স্নিগ্ধর দিকে তাকালো। তাঁকে জাবটে ধরলো। ভাঙা আওয়াজে বললো,

— স্নিগ্ধ কিছু হয়নি বিশ্বাস করুন৷ ঠিক সময় আপনি না এলে আমার মরন ছাড়া উপায় ছিলো না।
শয়তানটা আমার কিচ্ছু করতে পারেনি৷

সাথে সাথে স্নিগ্ধ আরোহীকে নিজের সামনে ধরে তাঁর পুরো শরীর চেক করলো। তারপর আবারো বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুজনের চোখের পানিই অঝড়ে ঝড়ছে। বেশ খানিক সময় পর স্নিগ্ধ নিজের গা থেকে শার্ট খুলে আরোহীকে পড়িয়ে দিলো। ওড়নাটা গায়ের ওপর পুরোপুরি ঢেকে জরিয়ে দিলো। কপালে, গালে সমানে চুমু খেতে লাগলো।
.
স্নিগ্ধ বললো,জাষ্ট পাচ মিনিট বসো। আরোহী ভয়ে স্নিগ্ধ কে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

— জাষ্ট পাঁচ মিনিট বসো আমি আছি কিছু হবে না।
ঘর থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধ এক হুংকার দিলো হাতকড়া পড়ানো অবস্থায়ই স্নিগ্ধ আশিক কে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর পা পিষতে শুরু করলো। চিৎকার করে বলতে লাগলো,

— তোর এতো বড় বুকের পাটা তুই আমার আরোহীর গায়ে হাত দিস। তোর জান আমি বের করেই ছাড়বো। যতোক্ষন না শরীরের রাগ কমে ততোক্ষন মারলো স্নিগ্ধ আশিক কে। রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারাতে স্নিগ্ধ সরে গেলো। পুলিশ সহ সকলের হাত, পা থড়থড় করে কাঁপছে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। পুলিশ দেখে এমনিতেই আতঙ্কে ছিলো। সব ঘটনা শুনে স্নিগ্ধর ভয়াবহ রূপ দেখে সকলের হাটু কাঁপতে শুরু করে দিলো।

আশিক সহ, আশিকের বাবা, মা কে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো। আশিকের মায়ের শাস্তি কম হলেও বাবা, ছেলের কঠোর শাস্তি হবে।
.
আরোহী কে নিয়ে পুলিশের গাড়িতেই বাড়ি ফিরলো স্নিগ্ধ। বাড়ির সকলেই ইতোমধ্যে সবটা জেনে গেছে।
রিনি তাঁর বাবা কে বার বার বলছে,

— বাবা স্নিগ্ধ কে আজকে তুমি সামলাবে৷ স্নিগ্ধ কিন্তু আজকে আরোহীর অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে।

বিবিন বললো,

— চিন্তা করিস না কিছু হবে না।

স্নিগ্ধর দাদান বললো,

— মেয়েটা এতোবড় ভুল কিভাবে করতে পারে সেটাই তো ভেবে পাইনা৷ পাঁচ, ছয় বছরের বাচ্চার মতো আচরন করার ফলেই আজ এমন দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো।

ইশা বললো,

— ঠিক বলেছেন এই মেয়ে কি খুকি নাকি কিছু বুঝেনা।নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে আর ভোগান্তি পোহাতে হয় স্নিগ্ধ সহ তাঁর পরিবারের।

মালা এদের কথা শুনে অঝড়ে কেঁদে যাচ্ছে।
.
আরোহীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো স্নিগ্ধ। ভয়ে কেউ টু শব্দ টিও করলো না। স্নিগ্ধ নিজ হাতে আরোহীকে গোসল করিয়ে নিজে গোসল করে নিলো।
রাতের খাবাড় খাওয়িয়ে নিজে খেয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।মালা এলেও কথা বলতে দিলো না আরোহীকে স্নিগ্ধ। এই মূহুর্তে সকলের বিশ্রাম প্রয়োজন ।
.
স্নিগ্ধর ঠান্ডা মেজাজ দেখে বাড়ির একটা মানুষও স্বস্তি পেলো না। সকলের মনে বেশ ভয় জমে রইলো।
.
সারা রাত আরোহী বেঘোরে ঘুমিয়েছে।
কারন স্নিগ্ধ তাঁকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। সারারাত স্নিগ্ধর নির্ঘুম কেটেছে। তাঁর শরীর এখনো রাগে কাঁপছে। যতোক্ষন না রাগ কমবে ততোক্ষন তাঁর ঘুম হবে না। আর একটু পর পর আরোহীর শরীর চেক করেছে। ক্ষতি হয়নি এতে আল্লাহর তায়ালার কাছে শুকরিয়া জানালো সে। কিন্তু ক্ষতি হতে পারতো আরেকটু দেরী হলেই খুব খারাপ কিছু ঘটতো ভাবতেই পায়ের রক্ত মাথায় ওঠে যাচ্ছে। শুধু সকালের অপেক্ষা।
.
ফজরের আজান কানে ভাসতেই আরোহীর ঘুম ভেঙে গেলো।স্নিগ্ধ কে ছাড়াতে চাইলেই গায়ের জোর দিয়ে আটকে রাখলো স্নিগ্ধ। এতে তাঁর ভালোবাসা,আদর ছিলো না ছিলো শুধু রাগ। আরোহী বললো,

— নামাজ পড়বো ছাড়ুন।

স্নিগ্ধ সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো। আরোহী ওঠে ওযু করে নিয়ে নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে স্নিগ্ধর কাছে এসে নিচু স্বরে বললো,

— আমি মালার কাছে যাচ্ছি।

স্নিগ্ধর চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। আরোহী কথাটা বলেই পিছন ঘুরে কয়েক পা এগিয়েছে।
স্নিগ্ধ এক লাফে বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে আরোহীর চুল টেনে ধরলো। আরোহী আহ করে ঘুরতেই স্নিগ্ধ কয়েকটা থাপ্পড় লাগালো গালে। এতোটাই জোর ছিলো যে আরোহী ছিটকে পড়ো মেঝেতে। স্নিগ্ধ হাটু গেড়ে বসে আরোহীর গাল চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,

— তোর সাহস হয় কি করে বল৷ কি করে সাহস হয় ওখানে একা যাওয়ার৷ সবটা জেনে ওখানে কেনো গিয়েছিলি বল। নিজের শরীর কুকুড়কে খাওয়াতে গেছিলি৷ এই কথা বল,,,

আরোহী স্নিগ্ধর এমন রূপ দেখে কাঁপতে থাকলো।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
গলা দিয়ে স্বল্প আওয়াজও বের করতে পারছে না।
আসলে ভুলটা তো তাঁরই। কতোবড় জঘন্য ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো। স্নিগ্ধ তাকে ভালোবাসে বলে তাঁর সব অন্যায় সহ্য করার মতো ছেলে তো সে না।

আরোহীর থেকে কোন উত্তর না পেয়ে স্নিগ্ধ আরো দ্বিগুন রেগে গেলো। গলা চিপে ধরে বললো,

— বল কেনো গেছিলি। আমাকে না জানিয়ে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে একা একা কোনো গিয়েছিলি।
নিজেকে কি মনে করিস তুই।তোকে ভালোবাসি বলে তোর সব অন্যায় আমি স্নিগ্ধ মেনে নিবো না। তোর সাহস হলো কি করে সব সত্যি জেনে একা ওখানে যাওয়ার। তোকে আমি বার বার বলেছিলাম আশিকের সাথে যোগাযোগ না করতে বল বলিনি??
আর তুই কি করলি সমস্ত সত্যিটা জেনে ঢ্যাং ঢ্যাং করতে করতে ওখানে গিয়েছিস। কি হতে যাচ্ছিলো বল কি হতে যাচ্ছিলো। নিজ ইচ্ছায় নিজেকে ভোগের সামগ্রী করে দিয়েছিলি। বলেই গলাটা বেশ জোরে চেপে ধরলো।

সাথে সাথে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করতে লাগলো সকলে মিলে। স্নিগ্ধ ছেড়ে দিলো আরোহীকে। আরোহী ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে লাগলো।
ভয়ে কাঁপছে সে চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে।
স্নিগ্ধ দরজা খুলেই সকলকে ধমক দিয়ে ওঠলো-

— কি হয়েছে এখানে কি কিছু হয়নি যে যার মতো নিজের রুমে যাও বা নিজেদের কাজ করো। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে। রিনি সহ সকলে সুড়সুড় করে চলে গেলো।

রিনির হাজব্যান্ড ইমরান স্নিগ্ধর সামনাসামনি এসে বললো,

— শালা বাবু আরোহীকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখা উচিত। মায়ের জন্য ডিপ্রেশনে আছে তুমি এমন রাগ করলে ও আরো ডিপ্রেশনে চলে যাবে। এতে মানসিক শারীরিক দুভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওর যখন মায়ের কষ্ট দূর হয়ে যাবে তখন রাগ খাটিও কেমন।
ডাক্তার মানুষ আমি যা বুঝি তাই বললাম আর কি।
.
ইমরান কথাগুলো বলেই পিছন ঘুরে মুচকি হাসলো।
কারন স্নিগ্ধ আর একটা টু শব্দও করবে না যা শুনলো এতেই তাঁর চুপ থাকা নিশ্চিত।
.
জোরে শ্বাস নিতে নিতে নিজের দু হাত মুঠ করে ফেললো স্নিগ্ধ। রাগ তাঁর কিছুতেই কমছে না। সে ভাবতে পারছে না কিছু। কালকের ঘটনাটা মাথা থেকে যাচ্ছে না৷ আরোহীর এতো বড় বোকামী সে মেনে নিতে পারছে না। ইচ্ছে করছে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে মেয়েটাকে৷ কিন্তু এতে তাঁকে হারাতে হবে তাই পারছে না। রাগে হনহন করতে করতে স্নিগ্ধ রুমে ঢুকলো। আরোহীর দিকে একবার না চেয়েই বাথরুম চলে গেলো।

এদিকে মালা আরোহীকে আদর করছে, চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর স্নিগ্ধর ছবি দেখিয়ে ইশারা করছে স্নিগ্ধ খুব খারাপ৷ সবাই খারাপ বলেই আরোহীর হাত ধরল ইশারা করছে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে।

আরোহী মালাকে জরিয়ে ধরে ডুঁকড়ে কেঁদে ওঠলো।
ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,

— ছোটবেলায় ভুল করলে মা তো আমাকে খুব মারতো রে মালা। তখন কি মা কে ছেড়ে চলে গেছি আমি। যারা ভালোবাসে তাঁরা শুধুই ভালোবাসেনারে প্রয়োজনে তাঁরা শাসনও করে। তোর স্নিগ্ধ ভাইয়া খুব রেগে গেছেতো তাই এমন করছে। রাগ পড়ে গেলেই আমায় বুকে টেনে নিবে দেখিস।
আমি আর ভুল করবো না মালা। আমি বাইরের রূপটা কে প্রাধান্য দিবো না। আমি ওর ভিতরের মানুষ টাকে প্রাধান্য দিতে চাই। ওর ভিতর যে একটা পবিএ মন আছে সেই মনটাকে ভালোবাসতে চাই।
আমার মন দিয়ে ওর মন ছুঁয়ে দিতে চাই। যেই ছোঁয়া এতটাই গভীর হবে যে এ জনমে স্নিগ্ধ আরোহী আর আরোহী স্নিগ্ধ ছাড়া আর কিছু চাইবে না।

.
সকালের খাবাড় খেতে ডাকতে এলো সোনালি।
আরোহীর শরীরে মারের দাগ পড়ায় এমন অবস্থায় কারো সামনে যেতো চাইলো না। সে বললো, তাঁর খাবাড় রুমে দিতে। আর জিগ্যেস করলো স্নিগ্ধ কোথায়?
সোনালি জানালো স্নিগ্ধ বাড়িতে নেই। কোথাও বেরিয়েছে।
আরোহী আর কিছু বললো না। যা ভুল করেছে চুপ থাকাটাই শ্রেয়।
.
সারাদিনে রিনি,বিবিন এসে আরোহীকে বেশ জ্ঞান দিলো।আরোহীও সকলের কাছে ক্ষমা চাইলো।
রাতে সকলে খেয়ে, দেয়ে শুয়ে পড়েছে। মালাও ঘুমিয়ে গেছে স্নিগ্ধ ফিরতেই মালার রুম থেকে বেরিয়ে আরোহী নিজের রুমে গেলো। সোনালিকে দিয়ে খাবাড় উপরেই নিয়ে এসেছে।
স্নিগ্ধ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো আরোহী খাবার বাড়ছে

গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো স্নিগ্ধ।
গম্ভীর মুখেই খেতে বসলো। আরোহী জিগ্যেস করলো,

— কোথায় ছিলেন?

স্নিগ্ধ গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলো,

— কাজে,,,

আরোহী খেতে খেতে কথার ফাঁকে বললো,

— ক্ষমা করা মহৎ গুন। বউয়ের ওপর বেশী সময় রেগে থাকলে বুকে ব্যাথা হয়।

স্নিগ্ধ চোখ তুলে আরোহীর দিকে তাকালো।
আরোহী লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে বললো,

— আমার না আপনারই বুকে ব্যাথা হবে।

স্নিগ্ধর হাসি পেলেও হাসিটা চেপে রাখলো।
চুপচাপ খেয়ে বিছানায় বসে কিছু সময় ফোন ঘাটাঘাটি করলো৷ তারপর শুয়ে পড়লো। আরোহী বেশ ইতোস্তবোধ করতে করতেই স্নিগ্ধর পাশে শুয়ে পড়লো।ধীরে ধীরে স্নিগ্ধর গা ঘেঁষতে থাকলো।
স্নিগ্ধ আরোহীর হাভভাব বুঝে তাঁর দিকে ঘুরলো।
আরোহী লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কিন্তু চোখ তাঁর ঠিক পিটপিট করছে।
স্নিগ্ধ আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলো না।
বউয়ের এমন ইনোসেন্ট মুখ দেখে কি আর রেগে থাকা যায়। আলতো ভাবে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
মৃদু স্বরে বললো,

— খুব লেগেছে??

— উহম,,

এবার স্নিগ্ধ কড়া গলায় বললো,

— তাহলে কি আবার কয়েকটা দিবো??

আরোহী চমকে চোখ খুলে তাকালো।অভিমানী চোখে চেয়ে বললো,

— সরি,,,

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।ফিসফিস করে বললো,

— বউ তো ভীষন ভয় পেয়েছে। খুব অভিমান করেছে তো আদর করি???

আরোহী লজ্জায় বুকে মুখ গুজে দিলো।
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে বললো,

— দেখো জান,,, আমি বার বার সাবধান করার পর তুমি যা কান্ড ঘটিয়েছো শাস্তি যা দিয়েছি অনেক কম হয়ে গেছে। আমি যেমন ভালোবাসতে পারি ভুল করলে কঠিন শাস্তিও দিতে পারি। এরপর থেকে আমার কথার বাইরে যাওয়ার আগে দুবার ভাববে আশা করি।
আরোহী স্নিগ্ধর বুকে চুপ করে রইলো মনে মনে বিরবির করে বললো,কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। তোমার এখন পৌষ মাস চলছে চিন্তা করো না আমারো দিন আসবে শুধে,আসলে ফেরত দিব সব।

স্নিগ্ধ গলা খাকারি দিয়ে বললো,

— দিন গুনছো কবে আবার ধানিলঙ্কা রূপ ফেরত দিতে পারবে??

আরোহী হকচকিয়ে গেলো। স্নিগ্ধর দিকে চমকিত হয়ে তাকাতেই স্নিগ্ধ এক চোখ টিপ মেরে বললো,

— বউ আমার কি জিনিস তা তো আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু তাঁর জামাই কি জিনিস এইবার হারে হারে টের পাবে।

টুকটাক খুনসুটি কথা বলতে বলতে কখন যে নিজের মাঝে বন্দিনী করে ফেলে টেরই পায়নি আরোহী।যখন পেলো তখন আর কিছু করার থাকলো না তাঁর।
স্নিগ্ধ তাঁকে গভীর ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।ভালোবাসায় আদরে ভরিয়ে দিতে থাকলো।
এ মূহুর্তে স্নিগ্ধর রূপটা আরোহীর ভীষণ ভয়ানক লাগছে। যাকে বলে ভয়ংকর প্রেমিক। যে তাঁর ভয়ংকর প্রেমে আবদ্ধ করে রাখছে তাঁকে। তাঁর সেই প্রেমময় উষ্ণ ছোঁয়ায় ভেসে যেতে লাগলো আরোহী।
শুধু দুটো শরীর একে অপরকে ছুঁয়ে দিচ্ছে না। দুটো মনও খুব গভীরভাবে একে অপরকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।

।।
সমাপ্ত

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। জানিনা কেমন হলো ভালো লাগুক খারাপ লাগুক অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here