গ্রামের মেয়েটি❤️,পর্ব_৭(শেষ)
লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
অবন্তী আর আমি দুজনেই কম্বলের নিচ থেকে মাথা বের করলাম। কম্বলের নিচে মুখ লুকিয়ে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। ধম বন্ধ হয়ে আসে। দুজনেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতেছি। আজকের রাত আমাদের দুজনের জন্য মধুর রাতের মত। এমন রাত হয়তো আর নাও আসতে পারে। এসব যখন ভাবছি তখন অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি ও ঘুমিয়ে পরছে। মহারাণী ঘুমিয়ে পরছে আর মহারাজা জেগে থেকে কি করবে.? তারপর আমিও ঘুমোতে গেলাম। চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের দেশে চলে গেলাম।
.
সকালবেলা। শীতের দিনে সকাল সকাল উঠতেই ইচ্ছে করে না। কিন্তু আজ আমাকে উঠতেই হবে। নাস্তা খেয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো। অবন্তী হয়তো রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত আর আলিশা কি করতেছে কে জানে।
ওর জন্য ঠিকমত ঘুমোতেও পারবো না। আরেকটু পরে উঠবো ভেবেছি কিন্তু ওর জন্য খুব টেনশন হচ্ছে।
ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি শ্বশুর আব্বাজান খেজুরগাছে উঠতেছে। শীতের সময় খেজুরের রস অনেক মজাদার। আলিশা অনেক আগে থেকেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে খেজুরের রস খাবে বলে। আমারো ইচ্ছে খেজুরের রস খাবো।
শ্বশুর আব্বাজান গাছ থেকে খেজুরের কলস ভর্তি রস দড়ি দিয়ে নিচে দিলো। শালি দুটো গ্লাস নিয়ে আসলো। আমি আর আলিশা প্রথমে খেলাম। প্রচুর মিষ্টি এবং ঠান্ডা। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো গলা দিয়ে বরফের পানি গেছে।
.
নাস্তা খেয়ে অবন্তী আর আলিশাকে নিয়ে বের হবো। ঠিক তখন আম্মাজান আর শালি কান্নাকাটি করতে লাগলো। কিছুক্ষণ শান্তনা দিলাম তারপর বের হলাম।
রাস্তায় গিয়ে ভাড়া করা ভ্যানে উঠলাম। একটুদূরে যাওয়ার পর আলিশা ভ্যান থেকে নেমে পরলো।
_ আলিশা নামলি কেন.?
_ গ্রাম ছেড়ে শহরে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি যাবো না তোমরা চলে যাও। বলেই আলিশা শ্বশুরবাড়ির দিকে হাটতে লাগলো। এই মেয়ে দেখি গ্রামের প্রেমে পরে গেছে। একদিনেই গ্রামের প্রতি এত মায়া আর কয়দিন থাকলে শহর কী একদম ভুলেই যাবে। একটু পিছনে গিয়ে আলিশাকে বুঝিয়ে ভ্যানে উঠাইলাম কোনোরকম শ্বশুরবাড়ির এলাকা পেরিয়ে একটা অটোতে উঠলাম। আলিশা, অবন্তী দুজনেরই মন খারাপ।
স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠে পরলে সব আগের মত হয়ে যাবে।
.
তারপর ট্রেনের তিনটে টিকিট কেটে বসে আছি। আধা ঘন্টা পর ট্রেন আসলো। সবাই ট্রেনে উঠে পরলাম। ট্রেন তার নিজস্ব গতিতে চলতে লাগলো। মোটামুটি তিনজনেরই মন খারাপ। ওদের দুজনের মন খারাপ দেখেও আমার মন কী ভালো থাকতে পারে? কখনো না। আসার সময় আলিশা একদম মোবাইল গুতাগুতি করেনি। শহর থেকে গ্রামে যেতেই আলিশা কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে।
যাহোক ঘন্টা দু’ঘন্টা পর বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম।
কাল থেকে আবার আগের মত অফিসে যেতে হবে। ব্যস্ত হয়ে পরবো। আলিশাও তার প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরবে।
.
রাতে বাসায় এসে দেখি অবন্তী আগে থেকেই শুয়ে আছে। কিন্তু টেবিলে খাবার রেডি আছে। আমি আসছি অবন্তী সেটা দেখতে পেয়ে বিছানা থেকে উঠে পরলো।
_ এই তোমার উঠতে হবে না। তুমি খেয়েছো??
_ খেতে ইচ্ছে করতেছে না।
_ খেতে ইচ্ছে করতেছে না মানে.?
_ আমি খাবো না আপনি খান।
_ রাতে না খেয়ে থাকা ভালো না। আসো দুজনে একসাথে খাবো।
অবন্তী বিছানা থেকে উঠে আমার কাছে এসে বাচ্চা পোলাপানের মত দাঁড়িয়ে আছে। একটু নিচু হয়ে হা করলো।আর আমি অবন্তীকে খাইয়ে দিলাম।
.
খাওয়া শেষে অবন্তীর মুখ আমার হাত দিয়ে মুছে দিলাম আর বললামঃ-
_ যাও এবার গিয়ে লক্ষী মেয়ের মত শুয়ে পরো। আমি একটু কাজ সেরে আসছি।
_ না।
_ না মানে..!
_ আমি আপনার কাজ দেখবো। আপনাকে ছাড়া আমার একা একা ঘুম আসবে না।
_ তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ দেখবা।
_ না
_ তাহলে.?
_ আপনার কোলে বসে কাজ দেখবো।
_ উফফ, তুমিও না বাচ্চা পোলাপানই রয়ে গেলা। আসো।
অবন্তী সত্যি সত্যি আমার কোলে এসে বসলো।
সত্যি বলতে কাজ করতে আমার একটুও খারাপ লাগেনি। ভালোই লেগেছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে মাথা খারাপ করে দেয় আরকি। তবুও ভালো লাগে। বউকে কোলে নিয়ে এইভাবে কাজ করলাম কখন যে কাজ শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।
আনুমানিক আধা ঘন্টা পর কাজ সেরে অবন্তীকে কোলে করেই বিছানায় নিয়ে গেলাম। তারপর দুজনে শুয়ে পরলাম। কাল থেকে অফিসে যেতে হবে।
.
পরেরদিন সকালবেলা অফিসের জন্য বের হবো। এদিকে আলিশাও প্রাইভেটে পড়ার জন্য বের হলো। অবন্তীও ঘরের সব দায়িত্ব হাতে নিলো। সবাই যারযার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। খেয়ে বের হবার সময় অবন্তীকে বললাম
_ আমি গেলাম।
_ আচ্ছা যান।
_ যাওয়ার আগে আমাকে একটা উম্মাহ দিবা না.?
_ না।
_ আচ্ছা দিতে হবে না। বলেই আমি সামনে পা বাড়ালাম অমনি অবন্তী দৌড়ে এসে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে দরজা মেরে দিলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে অবন্তী লজ্জা পেয়েছে।
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
সমাপ্ত