আমার_মনপাখি পর্ব – ৬

0
3764

আমার_মনপাখি পর্ব – ৬
#পলি_আনান

সকাল ১১.৫০,নীল,সাদা মেঘের আকাশ,আর চারিদিকে রোদের জ্বলমল আলো।ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে,মিম,রাইফাএবং তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের ফ্রেন্ড কলি,ইমন,আসিফ।তাদের সবার সামনে গরম গরম চমুচা,আর সাথে কথার রাজ্য।
চমুচা চিবুতে চিবুতে কলি বললো

“কিরে তুই নাকি ব্রেকাপ করেছিস”

রাইফা কোন কথা বলার আগেই মিম বললো

“আরে এটা কি নতুন কিছু,ওতো কত জনের সাথে প্রেম করে আর কত জনকে ছাড়ে।বাদদেতো।”

“আহা এমন ভাবে বলছিস কেন,ও তো আমাদেরি উপকার করে, মাসে মাসে কতো ট্রিট পাই বলতো।
(চা হাতে নিয়ে আসিফ)

“একদম ঠিক,কলি ও তো প্রেম করে কিন্তু আমাদের একদিন ও ট্রিট দেয় না।কলি তুই যেমন কিপটা তোর বয়ফেন্ড গুলা ও কিপটা।কিন্তু রাইফা আমাদের সবার কথা ভাবে। (চায়ে চুমুক দিতে দিতে ইমন)

মিম, কলি,ইমন,এবং আসিফের কথায় রাইফা কোন উওর দেয় না,সে শুধু আড় চোখে সবাইকে একবার দেখছে।এমন সময় রাইফার ফোনে একটা মেসেজ আসে।রাইফা মেসেজটি দেখে অচেনা নাম্বার,মেসেজে লেখা ” প্লিজ ছাদে আসো “রাইফা সব ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে বলে
” চল ছাদে যাবো”
“কেন ছাদে কেন,তোর ছাদে কি কাজ” (ভ্রু কুচকে মিম)
“আরে চলনা যাই” (দাড়াতে দাড়াতে কলি)

সবাই একসাথে ছাদে যায়।পুরো ছাদে নিরব, রাইফা এবং তার বন্ধুরা পেছনের দিকটায় যায়।রাইফা এবং রাইফার বন্ধুরা দেখে ছাদের মেঝেতে বড় করে লাভ শেফ করা, তার ভেতর লেখা “”i love U Raifa””। সবাই একবার সবার মুখ দেখা দেখি করছে,হঠাৎ রাইফার সামনে একটি ছেলে এসে প্রোফজ করে।রাইফার বন্ধুরা এতে অবাক হয় না।কিন্তু রাইফা অবাক হয়।কারন সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর এইসব পাগলামি করবেনা।
রাইফার ভাবান্তর মুখ দেখে কলি বলে,
” কিরে এতো সময় নিচ্ছিস কেন,ফুলটা নে,,”
রাইফা চুপচাপ আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে।রাইফার চুপচাপ দেখে সবাই তাকে তাড়া দিতে লাগলো।শেষে রাইফা বাধ্য হয়ে ফুলটা হতে নিল।
“থ্যাংক ইউ রাইফা,,, আমি জানতাম তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে” (রাইফার হাত ধরে অনিক)
রাইফা তার বিপরীতে একটা মুচকি হাসি দেয়।
“তো অনিক আমাদের তো আজ ট্রিট দিতে হবে” (কলি)
“অবশ্যই দেব” (মুচকি হেসে অনিক)

এতোক্ষন ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আড়াল থেকে আহাদ আর শিহাব দেখছিল।রাগে আহাদের চোখ লাল বর্ন ধারন করেছে,চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।

“আহাদ কথায় আছে না সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে
দেখ রাইফার ফ্রেন্ড মিম ছাড়া সবাই তাকে উস্কাচ্ছে।”
“হুম,কতদিন চলবে এমন,ওই ছেলে দুইটা আর মেয়েটাকে ওয়ানিং দিতে হবে”
“হুম ঠিক বলেছিস,মিমের সাথে কথা বলবিনা”
“ওর সাথে রাইসা কথা বলে নেবে।বাড়ি চল আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।
আহাদ যাওয়ার আগে রাইফার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
” আজ থেকে তোমার এই মোহময় দিনগুলো আর ফিরে পাবেনা রাইফা”দেখে নিও,,পাবে তবে আমার সাথে অন্য কোন ছেলের সাথেনা,এই রাইফা শুধু আহাদের”
আহার রাইফার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে হাটতে হাটতে চোখে সান গ্লাস্টা পড়ে নেয়।

????

বাড়িতে এসে আহাদ দেখে আহাদের দাদিমা গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে।আহাদ আর শিহাব কুশল বিনিময় করে।আহাদ তার দাদিমাকে তার রুমে নিয়ে যায়।
আহাদ তার দাদিমার কোলে শুয়ে পড়ে।আর শিহাব সোফায় গিয়ে বসে।
“কিরে দাদুভাই তোর মনের কথা মনের মানুষকে বলবিনা”
কিছুক্ষন চুপ থেকে আহাদ বলে
“সে কি আর আমাকে বুঝে তার তো কত জনের সাথে প্রেম চলে।তুমি আমাকে কথা দিয়ে ছিলে রাইফা আর আমার বিয়ে দিবে কিন্তু রাইফা এখনো আগের মত।”
“তুই কি, সারাদিন মেয়েটারে শাসন করছ,প্রেম আইবো কেমনে,যদি সুন্দর কইরা কথাই না কচ”
দাদিমার কথা শুমি শিহাব হো হো হো করে হেসে উঠে “ঠিক বলেছেন দাদিমা, আমিও আসার পর থেকে খেয়াল করছি”
“তো আমি কি করবো।তার আচরন, চলাফেরা দেখলে আমার সয্য হয় না”(কোল থেকে উঠতে উঠতে আহাদ)
” আচ্ছা আমি তোদের মেলানোর ব্যবস্থা করবো তবে আহাদ দাদুভাই তুই আগে ওর মনে জায়গা করে নে,শিহাব দাদুভাই তুমি ওকে সাহায্য করবে কিন্তু ”
“জি দাদিমা”
“আমি তাহলে এবার যাই, ”
আহাদের দাদিমা চলে যায়। আহাদ আর শিহাব আবার তাদের কথায় লেগে যায়।

???
সন্ধ্যা ৭টা, চৌধুরী পরিবার আর মির্জা পরিবার একসাথে আড্ডা দিচ্ছে আহাদের বাড়িতে।এমন সময় আহাদ আর শিহাব তাদের আনা বেগ গুলো সিড়ি দিয়ে নামায়।
তাদের হাতে ব্যাগ দেখে সবাও দাঁড়িয়ে যায়।

“কিরে কই যাচ্ছিস তোরা(মিসেস হাবিবা)
” না মা কোথাও যাচ্ছি না তোমাদের জন্যে কিছু উপহার এনেছি, বিদেশ থেকে তা দিতে ভুলে গেছি তাই এখন দিতে এসেছি”
আহাদ প্রথমে তার দাদিমা তারপর বাবা, একে একে সবাইকে দেয় শুধু রাইফা ছাড়া।
“ভাইয়া আপুর জন্য কিছু আননি”(রাইসা)
“না তো, ওর কথা আমার মনে ছিলনা” (স্বাভাবিক ভাবে”
“আহাদ এটা কোন ধরনের কথা, তুমি রাইফার জন্য কিচ্ছু আনোনি কেন” (রেগে ওয়াহিদ চৌধুরী)
“আমার মনে ছিলনা বাবা”
“ওর জন্য তুই আনিস নি তাইলে আমরা ও নিব না” (মিসেস হাবিবা)
“মামনি তোমরা এমন করছ কেন, আমি আমার গিপ্ট পরে আদায় করে নেব”(রাইফা)
“আহাদ প্লিজ ঝামেলা বারাইস না,,,আন্টি আহাদ রাইফার জন্য গিপ্ট এনেছে,(শিহাব)
” তাহলে দিচ্ছ না কেন”(ওয়াহিদ চৌধুরী)
“বাবা আমি মজা করছিলাম এই নে রাইফা তোর গিপ্ট”
আহাদ রাইফার হাতে গিপ্ট দেয় আর মনে মনে বলে”আসল গিপ্ট বাকি আছে রাইফা, সময় মত পাবে”

???

রাত ১ টা, রাইফা ঘুমিয়ে আছে।আজো রাইফার বেলকনির দরজা খোলা।আগের দিনের মতাও লোকটি আজো রাইফার রুমে ডুকেছে। লোকটি রাইফার পাশে গিয়ে বসে। তবে আজ লোকটির চোখে রাইফার জন্য কোন ভালোবাসা নেই রয়েছে রাগ,।তার হাতে আছে কাটা যুক্ত ২০ টি গোলাপ ফুল।লোকটি রাইফার কানের কাছে ফিসফিশ করে বলে”আমার ভালোবাসা এই গোলাপ ফুল গুলোর মতো সুন্দর ছিল,কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,,,,,কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসায় কাটা যুক্ত করেছ।
তো কাটাই এবার তুমি সয্য কর #আমার_মনপাখি।””কাটা দিয়েই আমার ভালোবাসার প্রথম প্রকাশ হোক(বাকা হাসি দিয়ে)
রাইফার কানে কারো গরম নিশ্বাস পড়ায় সে চোখ খুলে তাকায়।চোখ খুলে যেই চিৎকার দিতে যাবে তখনি,,,,,

চলবে……….

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here