আমার_মনপাখি পর্ব – ৮
#পলি_আনান
চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে আহাদ, শিহাব,রাইসা আর রাইফা।গাড়ি চলছে হাস্পাতালের উদ্দেশ্য। রাইফা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেও সবাই তাকে বারবার প্রশ্ন করেছে তার হাতে কি হলো। কিন্তু রাইফা বারবার কথাটা আড়াল করেছে।শিহাব আর আহাদ এই বেপারে আর কিছু প্রশ্ন করে নি।তবে রাইসার মুখ জুড়ে দুঃখ বিরাজ করছে।যেন সাদা আকাশটায় একটুকরো কালো মেঘ অবস্থান করেছে।যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে।রাইফার অবস্থা দেখে শিহাবের খারাপ লাগছে,সে মনে মনে বলে
“মেয়েটাকে হাসতে দেখলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।আর ওর এই অবস্থা দেখে আমার কলিজে ছিড়ে যাচ্ছে,ভালোবেসে ফেলেছি আমি তাকে”।রাইসা বারবার রাইফার কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কিভাবে হাতের এতো বাজে অবস্থা হয়েছে।কিন্তু রাইফা কোন উওর দেয়নি।নিরবতা কাটিয়ে শিহাব বললো,
“রাইফা কেউ না বুঝলেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি তোমার ২ হাতেই ফুলের কাটা ফুটেছে। কিন্তু তা বুঝলাম কাটা ঢুকতেই পারে কিন্তু দুই হাতে এতো বাজে ভাবে কেমনে হলো।তুমি আমাদের ব্যাপারটা সেয়ার করতে পারো রাইফা”
শিহাবের কথা শুনে রাইফার ভয়ে দমবন্ধ হয়ে আসছে। তার মনে পড়ে যায় সকালে পাওয়া চিঠিটার কথা,সেখানে লেখা ছিল লোকটাকে নিয়ে যেন কারো সাথে আলোচনা না করে।এই মুহূর্তে রাইফার মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না।সে কি বলে বেচে যাবে।হঠাৎ তার মিমের কথা মনে পড়লো।এবার রাইফা কিছুটা সাহস নিয়ে বললো,
“আসলে সা….সামনে মিমের বিয়ে তাই আমরা সব ফ্রেন্ড্ররা মিলে মজা করার জন্য মিমকে কেমন করে সাজাবো ওর বাসর ঘরের খাটটা কিভাবে সাজাবো তাই ফুল অডার দিয়েছিলাম। আমাদের ফ্রেন্ড ইমন মজা করে ওর জন্য কাটা যুক্ত ফুল আনে, আমি না জেনে ফুলের তোড়া টা চেপে ধরি তারপর আমার হাতে কাটা ফুটে যায়”
রাইফা গড়গড় করে মিথ্যা কথা গুলো বলেই চোখ বন্ধ করে নেয়। আর মনে মনে বলে(কি বললাম নিজেইতো ঠিকমতো বুঝলাম না?।আল্লাহ আমারে বাচিয়ে দাও,প্লিজ আল্লাহ দয়া কর।)
রাইফার চোখ মুখ ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।রাইফার এই অবস্থা দেখে আহাদ একটা বাকা হাসি দেয়।
“আর কতক্ষন বসে থাকবে,নামো এবার আমারা চলে এসেছি”
পাশের থেকে আহাদের কথা শুনে চোখ খুলে রাইফা।সে দেখে হাস্পাতালের পৌছে গেছে। সে গাড়ি থেকে নেমে যায়।আহাদ আর রাইফা একসাথে ডাক্তারের কাছে যায়।রাইসা আর শিহাব বাইরে বসে আছে।শিহাব আড় চোখে বার বার রাইসাকে দেখছে কিন্তু রাইসার কোন খেয়াল নেই।সে তার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকা তার একমাএ কাজ।
“রাইসা তুই এখানে কি করছিস”
রাইসা সামনে থেকে কারো আওয়াজ শুনে সামনে তাকায় আর দেখে তার মামাতো ভাই শাহিন।রাইফা এগিয়ে আসে আর শাহিনকে জড়িয়ে ধরে।
এই দৃশ্য দেখে শিহাবের মুখের রঙ পালটে যায়।তার ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে একটা আছাড় মারতে।শিহাব মনে মনে বলে,
“আহাদ বন্ধু আমার, আমি তোর কষ্টটা এখন ফিল করছি।আসলে নিজের মনের মানুষকে কারো সাথে দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা।
” তুই হাসপাতালে কেন রাইসা(অবাক হয়ে শাহিন)
“ভাইয়া আসলে আপুর হাতে কাটা ফুটেছে তাই ডাক্তার দেখাতে আসলাম,তুমি এখানে কেন”
” আমার একটা ফ্রেন্ড হাসপাতালে ভর্তি তাকে দেখতে আসলাম”
তাদের কথার মাঝেই আহাদ আর রাইফা চলে আসে।রাইফা শাহিনকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। শাহিন ও জড়িয়ে ধরে।তাদের দেখে আহাদের অবস্থা হয়ে যায় শিহাবের মতো।
“কেমন আছ ভাইয়া কতো দিন পর তোমায় দেখলাম”
“ভালো তুই কেমন আছিস,হাতের কি অবস্থা এখন”
“ভালো,ভাবি কেমন আছে ভাইয়া,”
“তোদের ভাবি আছে ভালো দুই দিন আগেও তোদের কথা বলেছে।তোরা কেন আসিস না সে বলেছে একদিন তোদের নিয়ে যেতে।”
শাহিনের বউ আছে শুনে আহাদ আর শিহাবের কলিজায় যেন পানি আসে তারা একে অপরের দিকে তাকায়।
“যাবো একদিন সময় করে ভাইয়া,তোমরাও এসো ” (মুচকি হেসে রাইসা)
“তুমি আহাদ না” (আহাদের দিকে তাকিয়ে শাহিন)
“হুম, আপনি নিশ্চই শাহিন ভাইয়া।আসলে চেহারা ভুলে গেছি।এখন মনে পড়লো।”
“কবে আসলে বিদেশ থেকে”
“এইতো দুই দিন”
“আচ্ছা তোরা বাসায় যাইচ তাহলে,আমার একটু তাড়া আছে আসি আজ”
“যাবো ভাইয়া তুমিও এসো”(রাইফা)
“হুম।আসি তাহলে,সময় করে তোরা আসিস””
“ভালো থেকো ভাইয়া।আল্লাহ হাফেস।(রাইফা ও সাইফা)
রাইফা, আহাদ শিহাব আর রাইসা তাদের বাড়ি চলে যায়।রাইফা রুমে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।এমন সময় তার ফোনে মেসেজ আসে।রাইফা ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজে লেখা,,,,
” তোমার হাতের ঘাঁ, ব্যাথা তো এখন শুকায় নি তার আগে তুমি আমার কথা অমান্য করেছ।তোমাকে আমি বলেছিলাম কোন ছেলের কাছে তুমি গেসবেনা।কিন্তু তুমি তো জড়িয়ে ধরলে।তুমি শাহিন নামের ছেলে টাকে জড়িয়ে ধরেছ।কেন কাল রাতের কথা কি তখন ভুলে গেছিলে।আমি বলেছিলাম তোমার উপর আমার নজর সবসময় আছে।এবার তুমি তোমার শাস্তির জন্য তৈরি হও মনপাখি।হাতের যত্ন নিও। ”
রাইফা মেসেজটি পড়ে তার মাথা ফাকা ফাকা লাগছে। রাইফা ভাবতে থাকে কে এ লোক।তার পিছু নিয়েছে।এমন সময় রাইফাকে মিম ফোন করে,”মিম এ সময়ে ফোন করলো,ধরে দেখি”
“হ্যা মিম বল,কেমন আছিস”
“আমি ভা,,ভালো।রাইফা একটা ঘটনা ঘটেছে তুই কি জানিস”
মিমের কথা শুনে রাইফা মনে মনে বলে,”কালকের পর থেকে সব ঘটনাতো আমার সাথে ঘটে, এদের সাথে আবার কি ঘটলো।
“কি হলো রাইফা কথা বলছিস না কেন”
মিমের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে রাইফার।
“না আমি তো কিচ্ছু জানি না কি হয়েছে বল”
“কিছুক্ষণ আগে ইমন আর আসিফ লেকের পাড়ে আড্ডা দিচ্ছিল।জায়গাটি ছিল নিরব এমন সময় ছিনতাইকারিরা তাদের আক্রমণ করে।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো তারা ছিনতাইকারি সেজে এসেছিলো কিন্তু ইমন আর আসিফের কাছ থেকে কিচ্ছু নেয় নি।উল্টো ইমন আর আসিফের হাত ভেঙ্গে দেয়।
রাইফা এমন কথা শুনে বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ে,
তার সব কিচ্ছু ফাকা ফাকা লাগছে।তার কলিজার ফ্রেন্ডদের এ অবস্থা যে তার জন্য হয়েছে।তা সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।
” ত…..তুই ক…. কি বলছিস। তারা এখন কোথায়।
“হুম আমি ঠিক বলেছি।ওরা এখন ওদের বাড়ি।বিকালে আমি যাবো ওদের দেখতে তুই যাবি”
“হুম যাবো” (আনমনে)
“আচ্ছা রাখি তাহলে ভালো থাকিস”
রাইফা ফোন কেটে দেয়।তার চিৎকার করে কাদঁতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পারছেনা তার জন্য তার
বন্ধুর এই অবস্থা।
অপর দিকে লোকটি লেপটপে রাইফার অবস্থা দেখছে আর হাসছে।লোকটি হাসতে হাসতে বলে,
“রাইফা রানি তুমি চলো ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়।” তোমাকে এখন একটা মেসেজ দি,কেমন সারপ্রাইজ হলো যানতে হবেতো।”
রাইফা বালিশে মুখ গুজে কাদঁছে এমন সময় তার ফোনে আবার মেসেজ আসে।মেসেজে লেখা ছিল,
“কি হলো সারপ্রাইজ টা কেমন ছিল।আমার কথা যদি না শুনো এমন সারপ্রাইজ তোমার জিবনে প্রতিদিন আসবে।”
রাইফা মেসেজটি পড়ে রেগে যায় তার হাতের সামনে থাকা ফুলদানি টি জোরে আছাড় মারে।
কিচেনে দাড়িয়ে কথা বলছিল মিসেস হাবিবা এবং ডালিয়া রাইফার রুম থেকে কিচ্ছু ভাঙ্গার শব্দ শুনে তারা এগিয়ে আসে।তারা রুমে ডুকে দেখে নিচে কাচ ভেঙে ঘরের অবস্থা খারাপ।আর রাইফা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।
“কিরে মা এটা ভাঙ্গল কি করে(মিসেস হাবিবা)
” আসলে মামনি আমি খেয়াল করিনি হাতের ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে।”(আমতা আমতা করে)
“এই মেয়ে কি কিচ্ছু খেয়াল করে নিজের হাতের কেমনে এমন হলো তা পযন্ত নিজে যানেনা।ইচ্ছে করছে তুলে একটা আছাড় মারি(রেগে মিসেস ডালিয়)
” আহ আপা এমন করছেন কেন,রাইফা মামনি তুই আমার সাথে আয় দুপুর শেষ হতে চললো এখনো কিচ্ছু খাসনি।চল আজ তোকে আমি খাইয়ে দিব।
রাইসা কোথায় ওকে ও ডাক।
???
দুপুর সময় চৌধুরী বাড়ির খাওয়ার টেবিলে বসে আছে আহাদ শিহাব।,আর আহাদের পাশে বসে আছে তার দাদিমা। আহাদের মুখোমুখি বসেছে রাইফা, শিহাবের মুখোমুখি বসেছে রাইসা।রাইসার পাশে সামাদ।রাইফা আর রাইসাকে স্বযত্নে খাইয়ে দিচ্ছে মিসেস হাবিবা।আহাদ তার দাদিমার কানে কানে বলে,
“দেখলেতো দাদিমা আমার বউ এর এ অবস্থা আর আমি কি না হাত পা গুটিয়ে বসে আছি।এখন যদি বিয়েটা দিয়ে দিতে তবে আমার বউকে আমি খাইয়ে দিতাম।তোমরা তো বিয়েটা দিচ্ছ না।(ফিসফিস করে দাদিমার কানে)
” হয়েছে হয়েছে তুমি তো পাগল হয়ে গেছো আহাদ দাদুভাই। তোমাকে আমি কি বলেছি আগে রাইফা দাদুমনির মন জয় করো।
দাদিমার কথা শুনে আহাদ চুপসে যায়। তাদের কথার মাঝে মিসেস হাবিবা বললেন,
“রাইফা তোর হাতের এ অবস্থা কেমনে হলো বললি নাতো”
রাইফা কথা বলার আগেই আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মা আমি তোমায় বলছি।আসলে রাইফা আমাদের যেটা বলেছে তা মিথ্যা। সত্যেটা আমি জানি।”
আহাদের কথা শুনে রাইফার পেটে কামড় দেয়।খাবার টেবিলে বসা সবাই তার দিকে অবাক করে তাকিয়ে আছে।
“আসলে মা রাইফা আর রাইফার বন্ধুরা মিলে গোলাপ ফুল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে আর তাদের শাস্তি সরুপ হাতে কাটা ঢুকিয়ে দেয়।কি ঠিক না রাইফা”
আহাদের কথা শুনে সবাই ঘর কাপিয়ে হাসা শুরু করে। রাইফার কলিজায় পানি আসে।
“আপু।শেষে কিনা তুমি ফুল চুরি করলে।আমারে বললেই তো আমি তোমাকে ফুল কিনে দিতাম(হাসতে হাসতে সামাদ)
সামাদের কথা শুনে লজ্জায় রাইফার মুখ লাল হয়ে যায়।সবার মুখ চেপে হাসি দেখে রাইফার প্রচুর রাগ লাগলো।সে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বলে” আপনি মিথ্যা বলছেন আহাদ ভাই,আপনি আমাকে চোর সাজালেন”
“তুই তো চোরি সবচে বড় চোর,তুই মানুষের কি কি জিনিস চুরি করিস তা তুই নিজেই খেয়াল করিস না”
“আসল কথা তুই আমার মনটাই চুরি করেছিস(মনে মনে)
“মামনি তুমি তোমার ছেলেকে কিছু বলবে।”
“এই মা কি বলবে,তুই তো চোরি”
আহাদের কথা শুনে রাইফা রেগে হনহন করে চলে যায়।পেছন থেকে মিসেস হাবিবা ডাকদেয় “রাইফা খাওয়া শেষ করে যা”
“আমি খাবনা তুমি তোমার ভদ্র ছেলেকে খাওয়া ও।”
“আহাদ তুই মেয়েটাকে রাগালি কে, মেয়েটা তো খেতে পারলোনা” (রেগে মিসেস হাবিবা)
“আরে মা খাবে দেখবে,না খেলেতো বাসায় চলে যেত,কিন্তু ও তো দাদিমার ঘরে ডুকলো,এই মেয়ে নিজের ভাগের জিনিস কোন দিন ছাড়েনা”
আহাদের কথায় আবার সবাই হাসা শুরু করে
চলবে……
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)