আমার_মনপাখি পর্ব – ১০

0
3024

আমার_মনপাখি পর্ব – ১০
#পলি_আনান

গাড়িতে বসে আছে রাইফা, আহাদ আর শিহাব।কারো মুখে কোন কথা নেই।আহাদ ড্রাইভিং করছে আর আড় চোখে রাইফাকে দেখছে।তাদের গন্তব্য হলো মিমের বাসা আর উদ্দেশ্য হলো ইমন আর আসিফকে দেখতে যাওয়া।রাইফা যখন আহাদের রুমে তখন তার ফোন আসে।স্কৃিনে তাকিয়ে দেখে মিম ফোন করেছে।মিম ফোন করার কারন হলো রাইফা তখন মিমকে বলেছিল আসিফ আর ইমনকে দেখতে যাবে।তাই মিম আবার রাইফাকে কথাটা মনে করিয়ে দিল।আহাদের শাসন আর খুনশুটিতে রাইফা আসিফ আর ইমনের কথা ভুলে যায়। সাথে ওই অচেনা লোকটির কথাও। রাইফা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তার ফোনে একটা মেসেজ আসে অচেনা নাম্বার থেকে। সেখানে লেখা ছিল,

“আমি যানি তুমি ওই দুই বদমাইশকে দেখতে যাচ্ছ। যাও তবে ওদের সাবধান করে দেবে তোমার মাথায় যেন কোন কুমতলব না ডুকায়।আর বাড়ি থেকে বের হচ্ছ সেই সুযোগ বুঝে ভেবোনা অনিকের সাথে দেখা করবে।খবরদার বলে দিচ্ছি এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও।তোমার জন্য আমাকে আমার খারাপ রুপটা যেন বার বার না দেখাতে হয়।তাহলে কিন্তু তুমি নিজেই বিপদে পড়বে।……আর তোমার সাথে এখনো আমার একটা হিসাব বাকি। তুমি দুপুরে আহাদের রুমে প্রায় ৩০ মিনিট ছিলে। এতক্ষন থাকার কারন কি।সময় বুঝে আমি হিসাব নেব মনপাখি।আচ্ছা পরের টা পরে যেখানে যাচ্ছ যাও সাবধানে যাবে।”

রাইফা মেসেজটা পড়েই নিজেকে অসহায় বোধ করে।তার জিবনে এতো ঝামেলা তো আগে ছিল নি।তবে এখন কেন এইসব ঝামেলা তার পিছু নিচ্ছে।বাড়ি থেকে বের হতেই মিসেস ডালিয়া জোর করে আহাদের সঙ্গে যেতে বলে
রাইফাকে। আহাদ যেখানে শিহাব ও সেখানে তাই তাদের সাথে শিহাবো যাচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা মিমের বাসার সমনে চলে আসে।রাইফা বেগ থেকে ফোন বের করে মিম কে ফোন দেওয়ার জন্য। তখন সে দেখে অচেনা নাম্বারটি থেকে আরেকটি মসেজ।রাইফা মেসেজটি ওপেন করে।সেখানে লেখা ছিল,

“আহাদ ছেলেটার সাথে তুমি বের হচ্ছো আমি কিচ্ছু বললাম না।তবে ওই ছেলের সাথে বেশিক্ষণ থাকবেনা আর কথা বেশি বলবেনা।ভালো থেকো আমার মনপাখি।”

রাইফা মেসেজটি পড়েই চকিতে তাকালো আহাদের দিকে।আহাদ এতোক্ষণ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাইফার দিকে হঠাৎ রাইফা আহাদের দিকে তাকানোয় আহাদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।আহাদ পরিস্থিতি সামাল দিতে ধমক দিয়ে রাইফাকে বলে,

“এই তুমি মিমকে ফোন করবে আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো।
“ক..করছি করছি আমি মিম কে ফোন করছি”
রাইফা মিমের নাম্বার ডায়াল করতেই মিম বাসার গেট থেকে বের হয়।মিমকে দেখেই রাইফা বললো,
“মিম পেছনে গিয়ে বস”

মিম পেছনে শিহাবকে আর সামনে আহাদকে দেখেই রাইফার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। রাইফা মিমের ইশারা বুঝতে পেরে বলে “আগে গাড়িতে উঠ তারপর বলবো ওনারা কারা”
রাইফা পেছনে শিহাবের সাথে বসে আছে।রাইফা পেছনে মাথা ঘুরিছে মিমকে বলে,
“তোকে আহাদ ভাইয়ের কথা বলেছিলাম না ওনি আহাদ ভাই” (আহাদের দিকে ইশারা করে)
মিম আহাদকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
“হ্যালো ভাইয়া”
আহাদ ও মিমের সাথে বেশ হেসে হেসে কথা বলে।একটুপর রাইফা শিহাবের দিকে তাকায়। শিহাব জানালার বাইরে তাকিয়ে কোল্ড ড্রিংকস পান করছে।রাইফা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“উনি শিহাব, আহাদ ভাইয়ের বন্ধু।উনি বিবাহিত ওনার একটা বাচ্ছা আছে।”
হঠাৎ শিহাব বিবাহিত শুনে মুখে থাকা কোল্ড ড্রিংকস টি নাকে উঠে যায়।আর মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে। শিহাবের কান্ড দেখে সবাই চমকে যায়।রাইফা শিহাবকে সন্দেহ চোখে জিজ্ঞেস করে,
“কি হলো শিহাব ভাইয়া, আপনার বিয়ের কথা শুনে আপনার চোখ মুখ উল্টে গেল কেন”
রাইফার হঠাৎ আক্রমণে শিহাব থতমত খেয়ে যায়।আহাদ বুঝতে পাতে রাইফা তাদের সন্দেহ করছে।তাই সে শিহাবকে বাচাতে বলে,
“রাইফা তুমি এমন করছো কেন, দেখছো শিহাবের অবস্থা খারাপ।”
আহাদ এবার শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কিরে শিহাব তুই বিয়ে করেছিস না,তোর তো মেয়ে ও আছে।ওদের বল”
আহাদের কথা শুনে শিহাব কথার তাল মেলায়।
“হ…….. হ্যা আমার বউ বাচ্ছা আছে।”আসলে ওসের খুব মিস করছি তো তাই আর কি।রাইফা তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো”(ভ্রু কুচকে)
“ন্না…না সন্দেহ করবো কেন।

“এই গাড়ি থামান,, গাড়ি থামান,,(চিৎকার দিয়ে মিম)
আহাদ গাড়ি থামিয়ে মিমের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া আমরা চলে এসেছি,রাইফু নাম”
মিম আর রাইফা গাড়ি থেকে নেমে যায়।

“রাইফা তোমার কাজ শেষ হলে আমাকে ফোন দিয়।আমারা দুজন একটু ঘুরে আসি”(রাইফাকে উদ্দেশ্য করে আহাদ)
আহাদ আর শিহাব গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আহাদ শিহাবের দিকে একবার রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” ফাজিল অল্পের জন্য ধরা পড়িনি,মন কই থাকে তোর,মন কই রেখে তুই গাড়িতে উঠছিস”
“তোর শালিকার কাছে আমার মনটা রেখে এসেছি বন্ধু”(আনমনে শিহাব)
শিহাবের কথা শুনে আহাদ গাড়ি জোরে ব্রেক করে।।যার কারনে শিহাব সামনের দিকে হেলে পড়ে।তার ধ্যান ভেঙ্গে যায়।আহাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে।
” তুই কি বললি শিহাব”
শিহাবের মনে পড়ে সে কি বলেছে।সে আমতা আমতা করে বলে,
“তুই যদি বলছ আমি রাইসার থেকে সরে আসব” (মাথা নিচু করে)
আহাদ শিহাবের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে,
“না তুই আগে আমার গাড়ি থেকে” (গম্ভির কন্ঠে)
“কে….কেন।”
“তোকে আমি নামতে বলছি নাম(ধমক দিয়ে)

শিহাব গাড়ি থেকে নেমে যায়।আহাদ ও গাড়ি থেকে নেমে যায়।তারপর শিহাবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আহাদ মুচকি হেসে শিহাব কে বুকে টেনে নেয়।আহাদের আচরণে শিহাব অবাক হয়ে যায়।
” কিরে পাগল অবাক হচ্ছিস কেন, রাইসা খুব ভালো মেয়ে কোন ছেলের সাথে তার রিলেশন নেই।যার কারনে তোর রাস্তা ফাঁকা ।ওর বোনের মতো ও এতো পাগল না।তোর সাথে ওর ভালোই মিলবে।আমার তোর উপর বিশ্বাস আছে তুই ওকে সুখে রাখবি।”
আহাদের কথা শুনে শিহাবের চোখে জল চিকচিক করছে।
“তুইকি রাইসাকে তোর মনের কথা যানাইচিস”
“নারে আমি তোর অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু তোকে বলবো বলবো করে আর বলতে পারিনি।”
“বোকা ছেলে আমাকে বলার কি আছে আজি যানাবি তুই ওকে”
আবার দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।
????

রাত ১২ টা রাইফা শুয়ে আছে তার রুমে। ভয়ে তার ঘুম আসছে না তার। রাইসাকে বলেছে তার সাথে ঘুমাতে কিন্তু রাইসা না করে দিয়েছে।বারান্দার দরজাটা খোলা। কেননা রাতের ৯টায় অচেনা লোকটা মেসেজে যানিয়েছে যদি বারান্দার দরজা না খোলা রাখে তবে কলির ক্ষতি করে দিবে।ইমন আর আসিফের হাত খুব বাজে ভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে লোকটা। খুব সহযে ভালো হবে বলে মনে হয় না।রাইফার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। লোকটি কি চায় তা খোলাখুলি বলছে না। তবে লোকটি তাকে পছন্দ করে তা বেশ বুঝতে পারছে রাইফা।

এভাবে কেটে যায় আরো আধা ঘণ্টা কিন্তু লোকটা আসেনা। এদিকে রাইফার চোখ দুটো ঘুমের সাগরে ভাসছে। আস্তে আস্তে রাইফা ঘুমের রাজ্য পাড়ি জমায়।
এতোক্ষন লেপটপের স্কৃিনের দিকে তাকয়ে ছিল অচেনা লোকটি। লেপটপের দিকে তাকিয়ে লোকটি বলে,”তুমি না ঘুমালে আমি কিভাবে তোমার কাছে যাবো মনপাখি,এবার আমি আসছি তোমার কাছে ওয়েট”

কিছুক্ষণের মধ্যে লোকটি রাইফার রুমে প্রবেশ করে।আস্তে আস্তে গিয়ে রাইফার পাশে বসে তারপর রাইফার দুই হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে অসংখ্য চুমু খেতে থাকে।লোকটির চোখে জল ভেসে যাচ্ছে।যেন এখনি চোখের কার্নিশ বেয়ে নেমে যাবে নোনা জল।লোকটি অশ্রুশিক্ত চোখে বলে
” তোমাকে আমি আঘাত করতে চাইনা মনপাখি।কিন্তু তোমার কাজে তুমি শাস্তি পাও।এতোদিন যেমন তেমন চলেছ কিন্তু এখন আমার মতো করে চলবে।তোমায় আমি আমার মতো করে গোড়ে তুলবো।”
তারপর লোকটি রাইফার পাশে গিয়ে রাইফাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

????

ভোর সাড়ে পাঁচটা উচ্চ শব্দে বেজে উঠে রাইফার ফোন। নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে সে।রাইফার এতো সুন্দর ঘুম ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে মাথা গরম হয়ে যায় তার।তাই ঘুমের ঘোরে বলে,
“এই কেরে তুই, আমি ফায়ার সার্ভিস না যে যখন তখন ফোন দিবি,আর আমি আগুন নেভাতে যাবো”(ঘুমু ঘুমু কন্ঠে)
ওপর পাশ থেকে অচেনা লোকটি মনের মাঝে একটি শিহরন বয়ে যায়।কাছে থেকেও কাছের না পাওয়ার বেদনা অনুভব করতে থাকে।রাইফাকে সে কবে কাছে পাবে তা নিয়ে আকুলতা বেড়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে লোকটি বলে,
“তুমিই তো আমার ফায়ার সার্ভিস। আমার মনের মাঝে যে আগুন প্রতিনিয়ত জ্বলে তা তোমায় দেখলে নিভে যায়। বেশি কথা না বলে ঘুম থেকে উঠে পড়ো।”
লোকটির কথা শুনে রাইফা চমকে যায়।নাম্বার চেক করে দেখে সেই অচেনা সেই লোকটি ফোন দিয়েছে।সে ঢোক গিলে বলে,
“আপনি এতো সকাল সকাল”
“কোথায় সকাল, নামাজ কালাম তো পড়ো না যাও অজু করে নামাজ পড়ো।দেখবে আল্লাহ তায়ালা তোমার মনে রহমত দান করবে ”
লোকটির কথা শুনে রাইফা বেশ অবাক হয় কারন কেউ তাকে এমন করে কখনো বলেনি।রাইফার কোন উওর না পেয়ে লোকটি ধমকে রাইফা কে বলে”কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না তোমার, নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো”
“যাচ্ছি,,,,, যাচ্ছি আমি।
” হুম তাড়াতাড়ি যাও”
রাইফা অজু করে নামাজ পড়তে যায়।আর অচেনা লোকটি লেপটপের স্কৃিনে রাইফাকে নামাজ পড়তে দেখে শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে।

চলবে……..

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here