আমার_মনপাখি।পর্ব – ১৩

0
2563

আমার_মনপাখি।পর্ব – ১৩
#পলি আনান।

এই বাড়ির ডানের গলিটাতে কোন মানুষের আসা যাওয়ার চিহ্ন নেই।সবটা নিরিবিলি। একে একে এই গলিতে ৪ টা রুম।রুম গুলোতে কোন আলো নেই সবকটা রুমে অন্ধকার। বাইরে অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে তাই প্রচন্ড জোরে গান চলছে।এইদিকটায় মিসেস ডালিয়া আছে বলে রাইফার মনে হয় না।তার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে।

_ আম্মু যদি আমাকে ডাকতো।তবে রুমটা এতো অন্ধকার করে রেখেছে কেন(ভাবতে ভাবত)।

রাইফার ভাবনার মাঝে তার মনে পড়ে তার আম্মুর মাইগ্রেনের সমস্যা আছে।যখনি সমস্যাটা শুরু হয় তখন তিনি দরজা জানালা বন্ধকরে, রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।রাইফা আর এক মুহুর্ত নষ্ট না করে ৩ নাম্বার রুমটিতে দরজা ফাক করে ডুকে পড়ে।পুরো রুমটি প্রচন্ড অন্ধকার।কোন মানুষের অবয় দেখতে পাচ্ছেনা রাইফা।তাই সে শব্দ করে ডাকে,
_ আম্মু তুমি কোথায় আমি এসেছি।তোমার কি আবার সমস্যা হচ্ছে।কই আম্মু তুমি সাড়া দাও।

রাইফার কথার মাঝে কেউ একজন দরজাটা বন্ধ করে দেয়।রাইফা পেছনে তাকাতে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা।রাইফা ভয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খোলার চেষ্টা করে কিন্তু সে অন্ধকারে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।হঠাৎ এই নিরিবিলি রুমে কারো গলার আওয়াজ পায় সে।
_ কি হলো দরজাটা খুলছে না মনপাখি।

এই কন্ঠোটার সাথে রাইফা বেশ ভালোই পরিচিত।রাগে মিশ্রিত একটি কন্ঠো।যে কন্ঠ তাকে বার বার হুমকি দেয়,তাকে সকল কাজে বাধ্য করে।এই কন্ঠো ওই অচেনা লোকটির। রাইফা আবার দরজা খোলার চেষ্টা করতে গেলেই লোকটি তাকে হেচকা টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রাইফা ভয়ে কুঁকড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।লোকটি রাইফর আরো কাছে এগিয়ে আসে।তাদের মধ্যে শুধুমাএ একটু ফাক।রাইফার বুকের ভেতর খুব জোরে টিপ টিপ শব্দ হচ্ছে।তার হৎপিন্ডের এই শব্দ খুব মনোজক সহকারে শুনছে অচেনা লোকটি।রাইফা ভয়ে কোন কথা বলছে না। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে তার মুখে আচড়ে পড়া লোকটির নিশ্বাস।

খান বাড়ির ডান দিকটা একটু অন্ধকার তেমন কোন আলো নেই।জামাল খানের বিষয়টি চোখে পড়ে তাই তিনি লাইটিং এর লোকদের ডেকে দেখিয়ে দেয় যেন এই দিকটায় বেশি করে আলো লাগানো হয়।পুরো বাড়ির কানায় কানায় আলো থাকবে।
তার একমাএ মেয়ের বিয়ে কোন খাত যেন না থাকে ।জামাল খানের কথা মত লাইটিং এর ব্যাবস্থা দেওয়া হয় বাড়ির ডান দিকটায়।

বদ্ধ রুমে আছে রাইফা আর অচেনা লোকটি এখোনো আগের মতো দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ কাচের জানালা ভেদ করে কিছু আলো রুমে ডুকে পড়ে।এই হালকা আলোয় রাইফা লোকটিকে দেখার জন্য আকুল হয়ে যায় কিন্তু মুখের অবয়টি কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না।রাইফার ছটফটের কারনে লোকটির রাইফার কোমরের অংশে নজর পড়ে। মুহূর্তেই লোকটির রাগ আকাশ চুম্বুক হয়ে যায়।লোকটি রাইফাকে রেখে জালালর কাছে এগিয়ে যায় আর জানালার পর্দাটা ভালো করে দিয়ে দেয়।যেন কোন আলো রুমে প্রবেশ না করে।রাইফা সুযোগ বুঝে যেই পালাতে যাবে তার আগেই লোকটি তাকে হেচকা টানদিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

_ আমার কাছে আসলেই পালাই পালাই তাই না। তোমাকে আমি বারন করা সত্বেও তুমি ছেলেদের সাথে তো বেশ হেসে হেসে কথা বলেছো।আর বলেছিনা মার্জিত ভাবে আসবে তুমিতো একদম সবকিছু দেখাতে দেখাতে এসেছো।আমার কথা কি তোমার কানে যায় না।(চিৎকার দিয়ে)

রাইফা বুঝতে পারে লোকটি তার উপর অধিকার খাটাতে এসেছে। ছোট থেকে তার এই বিষয় টি ভালো লাগেনা তাই সে প্রচন্ড রেগে যায়।রাগের মাথায় বলে বসে,
_আমার জীবন, আমার ইচ্ছা, আমি যা খুশি তাই করবো আপনার কি।একদম অধিকার দেখাতে আসবেন না।আমি আপনাকে কিন্তু আর ভয় পাইনা।(রেগে)
_তোমাকে আমি কি বলেছিলাম মনে আছে, তোমার জীবন এখন আমার জীবনের সাথে মিলবে।তাহলে কেন তুমি আমার কথা বুঝনা।(রেগে)
_ এই সরুন সামনে থেকে। আপনি বলেছিলেন না অনিকের সাথে আমি যেন কোন সম্পর্ক না রাখি।আমি আপনাকে বলছি আমি অনিককে বিয়ে পর্যন্ত করবো।দেখি আপনি কি করেন।
_আমি তো অনেক কিছুই করবো।কিন্তু তুমি এখন কি করবে।তোমাকে আমি বলেছিলাম না ঠোঁটে এইসব রং কম মাখবে।পরিষ্কার করো তাড়াতাড়ি এই রং।
_করবো না আমি। কি করবেন আপনি।
_ আমি কি করবো তা এখনি দেখতেই পাবে।

লোকটি আর কোন কথা না বলে রাইফার দুই হাত পেছন থেকে মুচড়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে রাইফার চুলগুলো আকড়ে ধরে। রাইফার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।রাইফা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু একচুল ও পারছে না।সে যত নড়াচড়া করছে লোকটি তত তাকে রুডলি কিস করছে।টানা ২০ মিনিট পর লোকটি রাইফার ঠোঁট আর হাত ছেড়ে দেয়।রাইফা রেগে হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে নিলেই আবার লোকটি রাইফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।তবে এইবার লোকটি রাইফার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়।রাইফা ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে।তাই লোকটি রাইফাকে ছেড়ে দিয়ে রাইফার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।রাইফা আবার হাত খোলা পেয়ে ঠোঁট মুছতে নিলেই লোকটি রাইফার হাত ধরে বলে,

_ তখন মুছতে চেয়েছিলে তাই একডোজ বেশি দিয়েছি। আবার মুছ তো আবার দিব। আমার কোন সমস্যা নেই দিতে,তুমি রাজি থাকলে বলো (হেপাতে, হেপাতে চোখ মেরে)
রাইফা আর কিছু বলেনা রেগে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে লোকটির রাগ এখনো কমেনি।রাইফার কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

_শাড়ি পড়েছো ভালো কথা। আমি।কিচ্ছু বলিনি।কিন্তু এই কোমড় পেট দেখালে কেন। খুব শখ তাইনা তবে আজকের থেকে শখটা মরে যাবে।

লোকটি এবার রাইফার কোমড়ে নিজের ধারালো নখ দিয়ে আচড় কাটে। রাইফা ব্যাথায় চিৎকার করতে নিলেই লোকটি।আবার রাইফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর আরেক হাত দিয়ে রাইফার পেটে কোমড়ে আচড় কাটতে থাকে।রাইফার ঠোঁটের অসহ্য ব্যাথা তার উপর কোমরে নখ দিয়ে লোকটি আচড় কেটেই যাচ্ছে।তার চোখ জুড়ে চোখের পানির বন্য বয়ে যাচ্ছে।সে নিশব্দে কাদতে থাকে লোকটি বুঝতে পারে রাইফার অবস্থা খারাপ তাই রাইফাকে ছেড়ে দেয়।ছাড়া পেয়ে রাইফা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। লোকটি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।

আবার লোকটা রাইফার কছে এসে তার ঠোঁটে
পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। রাইফার একটু ও নড়ছে না।তার শরীর জুড়ে ক্ষত গুলো ভিষণ জ্বালা করছে। এবার লোকটা হাটু ভেঙ্গে রাইফার সামনে বসে।তারপর পাগলের মতো রাইফার কোমড়ে পেটে কিস করতে থাকে।রাইফার এবার কিছুটা নড়ে চড়ে উঠে।লোকটির মাথার চুলগুলো খামচে ধরে।নিজেকে সরাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু লোকটির কাছে আবদ্ধ রাইফা কিছুতেই নিযেকে ছাড়াতে পারছে না। আজানা অনুভূতি গুলো বারবার কড়া নারছে লোকটি রাইফার অবস্থা বুঝে তাকে ছেড়ে দেয়।
এবার লোকটি রাইফাকে অবাক করে দিয়ে রাইফার শাড়ির আঁচলের দিকটার কুচি গুলো খুলতে থাকে। তারপর রাইফার হাতের দিকটায় কুচি গুলো ছেড়ে দেয়।এবার রাইফার হাত দুটো পেছনে নিয়ে একটা কাপড় দিয়ে বেধে দেয়।লোকটি মুখে মাক্স পড়ে নেয়।পাশে থাকা টেবিল থেকে কিছু মেকাপ নেয়।রাইফাকে নিয়ে লোকটি জানালার সামনে দাড় করায়।আর জানালার পর্দা সরিয়ে দেয় হালকা আলো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।তারপর নিজ হাতে রাইফাকে সাজাতে থাকে।রাইফা অবাক হয়ে লোকটির কান্ড দেখছে। মুখের মধ্যে হালকা পাউডার, হালকা লিপস্টিক,দিয়ে সাজিয়ে দেয় রাইফাকে।চুল গুলো আবার সুন্দর করে চিরনি দিয়ে আঁচড়ে দেয়।রাইফার দিকে লোকটি মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু তা রাইফা দেখছে না।কেননা লোকটি হুড়ি জ্যাকেট পড়া।তাই তাকে কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না সে।লোকটি রাইফার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে রাইফার দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বলে,

_আমার শত আঘাত, ক্ষত আমি মুছে দেব আমার ভালোবাসা দিয়ে।যদি আমার কথা মত চলো তবে আমার ঘরের রানী করে রাখবো।তোমার এইসব জেদ আমাকে বারবার বাধ্য করে আমার হিংস্র রুপ দেখাতে।তাই ভেবে চিনতে কাজ করো।

লোকটি এবার রাইফার হাতের বাধন খুলে দিয়ে দরজার সামনে নিয়ে দাড় করায় দরজা টা খুলে দিয়ে রাইফার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
_ যাও মনপাখি, অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাচ্ছে।হয়তো তোমাকে সবাই খুজছে।

রাইফা অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।কেন যানি তার প্রতি মায়া লাগছে তার।তবু্ও নিজেকে সামলে দরজা থেকে দৌড় দেয় সে।যেন পালাতে পারলেই বাচে।

আর লোকটি তাকিয়ে আছে রাইফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে।নিজের মনে কেমন যেন শূন্যেতা বিরাজ করছে।
_তোমাকে তো আমি যেতে দিতে চাইনা মনপাখি।আমি চাই তুমি আমার নিড়ে থাকো ।

চলবে…….

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here