আমার_মনপাখি পর্ব – ২০

0
2434

আমার_মনপাখি পর্ব – ২০
#পলি_আনান

রাত ১২ টা বিছানায় সুয়ে চুপচাপ চোখের জল ফেলছে রাইফা।চারিদিকে সবকিছু নিরবতা।আগের দিনের মতো কয়েকটি কুকুর রাস্তায় ডাকছে।রাইফা নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছে।আজ তার বাবার সাথে তার একবারো দেখা হয়নি।মায়ের সাথে সেই দুপুরে দেখা হয়েছে তাও তখনো ঝগড়া ঝামেলা লেগেই ছিলো।শিহাব শুধু একবার এসে দেখা করে গেছে।শিহাবকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে রাইফা।বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতির সাথে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। আর রাইসা কিছু সময় পরপর এসে দেখে যায় তার কিছু প্রয়োজন কিনা।দুপুর থেকে কিছু না খাওয়াতে সে এখন বড্ড ক্ষিদে অনুভব করছে।হঠাৎ বারান্দা থেকে কিছু পড়ার শব্দ পেলো রাইফা।রাইফা ভয়ে গুটিয়ে গেছে তার মনে যানান দিচ্ছে হাজার ভয়।সে বিড়বিড় করে বলে,
_ও…..ওই লোকটা আ.…..বার এসেছে।এবার ক…কি করবে….. আহাদ ভাইয়ের পর কি এবার আমাকে শাস্তি দিবে।

রাইফা ভয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে। কেউ এসে রুমের লাইট জ্বালিয়ে হঠাৎ চোখে আলো পড়ায় রাইফা দু চোখ বন্ধ করে নেয়।
_ কি গো বউ তুমি এখনো কান্না করছো।(মায়াবী কন্ঠে)

বউ শব্দটা শুনেই রাইফা তাড়াতাড়ি চোখ খুললো।চোখ খুলে আহাদকে দেখে মনের মাঝে কিছুটা হলেও সস্তি এলো তার। রাইফা একবার আহাদের হাতের দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করলো।পুরো হাতে ব্যান্ডেজ করা।আহাদ আজ গলায় লাল রং এর হালকা কাজের সাদা পাঞ্জাবি, পড়ে এসেছে।

_ আমার বউ টা চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে।(রাইফার চোখের পানি মুছতে মুছতে আহাদ)
রাইফা নিরবে আহাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে,
_ এই লোকটা তবে সত্যি আহাদ ভাইকে আঘাত করেছে।জখম টা কিন্তু বেশিই লেগেছে মনে হচ্ছে।

আহাদ রাইফার হাতে একটি শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়িটি পড়ো। রাইফা বাজ পাখির মতো আহাদের দিকে একবার তাকায়।আরেক বার ব্যাগের দিকে,
_ মানে কি, আমি শাড়ি কেন পড়বো।
_আমি পড়তে বলেছি তাই পড়বে।
_ আমি পারবো না শাড়ি পরতে।
আহাদ কিছু একটা ভেবে মেকি হাসি দিয়ে বলে _আচ্ছা শাড়ি পড়া লাগবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
রাইফা আহাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বল,
_ আমি এখন ফ্রেশ হবো কেন। আর আপনি আমার রুমে কি করছেন।(ভ্রু কুচকে)
_ এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি। যা বলেছি তাই করো
_ আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই(রেগে)

রাইফা কথাটা বলেই আবার চুপসে যায়। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলেছে সে।আহাদ এখন থেকে তার স্বামী। শতভাগ অধিকার আছে এখন তার।নিজের কথার জালে নিজেই ফেসে যায় রাইফা।

_ কি বললে বউ আবার বলো।(ডেভিল স্মাইল দিয়ে আহাদ)
_ ক…. কিছু না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

রাইফা আর কোন কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এদিকে আহাদ চলে যায় রাইসার কাছে,রাইফার জন্য রাতের খাওয়ার আনতে।

রাইফা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে খেয়াল করে আহাদ রুমে নেই,

_ আহাদ ভাই আবার কই গেল।(বিড়বিড় করে)

রাইফা খেয়াল করে তার ফোনের আলো জ্বলে আছে তাই সে ফোনটি হাতে নেয়।রাইফার ফোনে অচেনা লোকটি আবার মেসেজ করে।রাইফা মেসেজ টি পড়া শুরু করে
_ আহাদ এখন তোমার রুমে তাই না মনপাখি।এখন যদি আমি তোমার রুমে আসি কেমন হবে বলতো।না তোমাকে আমি কিচ্ছু করবো না, যা করার ওই আহাদকে করবো।বি কেয়ারফুল মনপাখি।
_ ন..ন্না….না আহাদ ভাইয়ের কোন ক্ষতি এই লোকটা করতে পারবে না।আমি…. আমি আহাদ ভাইকে আমার কাছে কাছে রাখবো তবেই লোকটি কোন ক্ষতি করতে পারবে না, হ্যা এটাই করবো।(দিশেহারা হয়ে)
রাইফা রুম থেকে বের হতে গেলেই আহাদের সাথে ধাক্কা লাগে,
_ এতো ছোটা ছুটি করছিলে কেন বউ।এমনিতেই হাতে ব্যাথা পেয়েছি তার উপর আবার ধাক্কা দিলে।

রাইফা আহাদ কে দেখে কিছুটা সস্তি পায়।মাথা নিচু করে বলে,
_সরি,
_ কোন ব্যাপার না। দেখি এসো খেয়ে নাও।
রাইফা আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে আহাদ বলে,
_ আমাকে দেখার জন্য আজ সারা রাত আছে এখন এখানে এসে আগে খেয়ে নাও।(চোখ মেরে)
রাইফা গিয়ে সোফায় বসে। আহাদ তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষ হলে আহাদ বলে,
_ যাও শাড়িটা পড়ে এসো।
আহাদের কথা শুনে রাইফা বিরক্ত হয়ে আহাদের দিকে তাকায়।
_ এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই যা বলেছি তাই করো।যাও শাড়িটি পড়ে এসো।
_ কয় বার বলবো আপনাকে আমি, শাড়ি পড়তে পারি না। (বিরক্ত হয়ে)
_ তবে পারো কি।যাও আমি হেল্প করবো
_ কক্ষনো, না প্রয়োজনে শাড়ি পড়বো না তবুও আপনার কাছ থেকে কোন হেল্প নেব না।
_তাই নাকি।তো তুমি শাড়ি পরবেনা
_ না পড়বো না।
_ঠিক আছে আমি শশুর বাবাকে ডাকছি।(সোফার থেকে উঠতে উঠতে)
রাইফা আহাদের কথা শুনে কাদো কাদো মুখ করে বলে,
_ না,, না পড়ছি আব্বুকে কিছু বলিয়েন না
আহাদ রাইফার অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলে,
_ আচ্ছা বলবো না, যাও শাড়িটা পড়ে এসো আর অযু করে এসো।
_ হুম।

আহাদ আপেক্ষার ৩৫ মিনিট হতে চললো কিন্তু রাইফার কোন খবর নেই। আহাদ ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলে
_রাইফা আর তোমায় পাঁচ মিনিট সময় দিলাম যদি তার মধ্যে না বেরোতে পারো আমি কিন্তু দরজা ভাঙ্গবো।সেই কখন থেকে তোমায় ডেকে যাচ্ছি।তুমি কি বের হবে।

রাইফা ভয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে। আহাদ খেয়াল করে রাইফা পুরো শাড়িটা পেচিয়ে ফেলেছে।
_ আমি পারিনা পড়তে আমি আপনাকে আগেই বলেছি।(কাদো কাদো সুরে)
_ আমি আছি না। আমি থাকতে তোমার কিসের চিন্তা।

আহাদ রাইফাকে যত্ন সহকারে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।রাইফা লজ্জায় চোখ মুখ কুচকে রেখেছে।
_ কি ব্যাপার চোখে হাত দিয়ে রেখেছো কেন।
_ আমার খুব লজ্জা করছে।
_ আরে আমার বউয়ের তো দেখি লজ্জাও আছে।তুমি কিন্তু শাড়ি পড়া শিখবে না বউ।
_ কেন কেন,(কপাল কুচকে)
_ কারন এখন থেকে প্রতিদিন আমি তোমায় শাড়ি পড়িয়ে দিবো(রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে)

আহাদের কথায় সে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।মনের মাঝে অন্য রকম একটা ভালোলাগা তৈরি হয়! কিন্তু সে তা বাইরে প্রকাশ করে না।সে আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
_আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানিনা আহাদ ভাই আর কতবার এক কথা বলবো আমি।

আহাদ নিচে ঝুকে রাইফার শাড়ির কুচি ঠিক করছিল।রাইফার কথা শুনে সে রাইফার ফর্সা উন্মুক্ত পেটে একটা কামড় বসায়।রাইফা চিৎকার করতে নিলেই আহাদ তার মুখ চেপে ধরে,
_কতবার বলেছি এক কথা বার বার বলবেনা। তুমি আমায় ছাড়লেও আমি কিন্তু তোমায় ছাড়বোনা।আর একদিন যদি তোমার মুখ থেকে এসব কথা শুনি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা মাইন্ড ইট।(রেগে)

রাইফা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
_দিলো মুড টাই নষ্ট করে(নিজের চুলগুলো টেনে আহাদ)
রাইফা মনে মনে বলে,
_ আহাদ ভাই যদি চলে যায় তবে আহাদ ভাইকে একা পেয়ে, ওই লোকটা আহাদ ভাইয়ের ক্ষতি করে দেবে তার থেকে ভালো আমি আহাদ ভাইকে আমার পাশে পাশে রাখি।

রাইফা আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
_ অযু করতে কেন বলেছেন। আমি অযু করেছি।
_ যাও জায়নামাজ নাও নামাজ পড়বো।
আহাদের কথা শুনে রাইফা কপাল কুচকে বলে,
_ এখন তো রাতের দেড়টা বাজে এখন আবার কিসের নামাজ পড়বো।
_ তুমি কিচ্ছু যান না রাইফা।
_ আমি আবার কি জানবো (কপাল কুচকে)
আহাদ রাইফার সামনে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
_ আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত রাইফা। আর প্রথম রাত মানে কি তুমি তো তা জানই।
আহাদের বলা প্রত্যেক টা কথা রাইফার মনের মাঝে ঝড় বয়ে তুলে।ভয়ে তার কপালে নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করতে থাকে।রাইফার অবস্থা দেখে আহাদ মুচকি মুচকি হাসছে।
_ কি হলো ভয় পেলে নাকি।
_ন্না না ভয় পাবো কেন(তুতলিয়ে)
_ তাহলে ঘামছো কেন।
_ আসলে শাড়ি পড়ে নামাজ কিভাবে পড়বো ত..তাই আর কি।
_ ও এই ব্যাপার সমস্যা নেই। আজ কষ্ট করে পড়ে নাও।

রাইফা আর কোন কথা না বলে আহাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া শুরু করে।চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে কিছু কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।চাঁদের আলো আজ মায়াবি ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।জানালার ফাঁক দিয়ে সেই আলো রাইফার রুমে প্রবেশ করছে।সদ্য বিবাহিত দম্পতির এই একচিলতের হাসির সাক্ষ্যি যেন, ওই মায়াবী চাঁদের আলো।

চলবে……
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here