আমার_মনপাখি পর্ব – ২১

0
2513

আমার_মনপাখি পর্ব – ২১
#পলি_আনান

রাত ২ টা. রাইসা এখনো অনলাইনে।তা দেখে শিহাবের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
_রাইসা এতো রাতে অনলাইনে কি করছে। ও আবার কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় নিতো।নানা এটা হতে পারে না। এমন হলে আমার কি হবে।
শিহাব আর কোন কথা না ভেবেই রাইসাকে কল করে।।

অপর দিকে রাইসা শিহাবের কল দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে,
_ কাহিনী কি শিহাব ভাইয়া এতো রাতে ফোন করেছে কেন। মনে হয় কোন দরকার আছে ধরে দেখি।
_ হ্যালো ভাইয়া কোন সমস্যা। এতো রাতে কেন ফোন করেছেন।
রাইফার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে শিহাবের বুকে ছ্যাত করে উঠে।
_পুরোটাই সমস্যা।তুমি এতো রাতে অনলাইনে কি করছো আগে সেটা বলো।
_এমনি আমার ঘুম আসছে না তাই আর কি করবো।
_ ঘুম আসছে না। নাকি কার সাথে কথা বলছো।
_কার সাথে কথা বলবো আমি( ভ্রু কুচকে)
_না মানে তোমার কোন পছন্দের কেউ নেই।
_ না নেই। আপনাকে কতো বার বলবো শিহাব ভাই।আমি এগুলো পছন্দ করি না।
_ ওও আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা শোন তুমি কি কাল বিকেলে ফ্রি আছ।
_ হুম কেন।
_না মানে আমিতো বিডির কিছুই চিনি না। আহাদ তো ভাবিকে নিয়ে বিজি তাই কাল তোমার সাথে বের হবো।
_আচ্ছা আমি তৈরি থাকবো।
_ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ।

শিহাব মোবাইলটি বুকে ধরে বলে,
কালকেই তোমায় আমার মনের কথা বলবো রাইসা রানী।
???
আহাদ আর রাইফার নামাজ পড়া শেষ হলে রাইফা খাটের উপর বসে চুপচাপ মোবাইল দেখা শুরু করে।রাইফার কান্ড দেখে আহাদ রেগে যায়।
_ বউ খাট থেকে নামো
_ কেন (ভ্রু কুচকে)
_নামতে বলছি নামো।
রাইফা তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে পড়ে।
_ নেমেছি এবার বলুন।
আহাদ মুচকি হেসে বলে,
_ আমার পা ছুয়ে সালাম করো।
আহাদের কথা শুনে রাইফা হাবলার মতো আহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
_আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন।যা বলছি তাই করো।
রাইফা আহাদ কে পা ছুয়ে সালাম করতে নিলে আহাদ রাইফা কে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে।
_ আরে আস্তে ধরুন আমি ধম বন্ধ হয়ে মরে যাব।
আহাদ এবার রাইফা কে আগলে ধরে।
_ তোমার জায়গা আমার পায়ে নয় বউ তোমার জায়গা হলো আমার বুকে।
_ কিহিনীটা কি হলো,, নিজেই তো বললেন সালাম করতে আবার নিজেই বাধা দিলেন।(অবাক হয়ে)
_ সালাম টা তুমি নিজে থেকে দেওয়ার কথা ছিল।আর এখন আমায় শিখিয়ে দিতে হচ্ছে।বুঝতে পেরেছো তুমি।
_ আমার ওতো বুঝে কাজ নেই।আমি এখন ঘুমাবো আমার ঘুম পাচ্ছে।(হাই তুলতে তুলতে)

রাইফা বিছানার উদ্দেশ্য যেতে নিলেই আহাদ তাকে পাজা কোলে তুলে নেয়,তার চোখের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে গান ধরে,

??বলতে যে মনে হয়,বলতে তবু দেয় না রিদয় কতোটা তোমায় ভালোবাসি।??
??চলতে গিয়ে মনে হয় দূরত্ব কিছু নয় তোমারি কাছে ফিরে আসি।??
??তুমি তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে,সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হীনা কখনো বাচে।(২)
??বলতে যে মনে হয় বলতে তবু দেয় না রিদয় কতটা তোমায় ভালোবাসি??

আহাদ রাইফাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।আর রাইফা অবাক হয়ে আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
_ কি দেখছো বউ।
_ আপনি গান গাইতে পারেন। তাও এতো সুন্দর করে (অবাক হয়ে)
_ হুম পারি তো।বউ কে গান শুনাবো তাই শিখেছি।

আহাদ বিছানায় শুয়ে রাইফার মাথার নিচ থেকে বালিশটা একটানে সরিয়ে ফেলে ।
_এটা কি করলেন আমি ঘুমবো কি ভাবে বালিশ না থাকলে(রাগে)
_ কেন ঘুমতে কি বালিশ লাগে।
_ তাহলে কি ভাবে ঘুমবো আপনার মাথায়।
_ মাথায় কেন,আমার বুকে ঘুমাবে(বুক দেখিয়ে)
আহাদের কথা শুনে রাইফা রেগে বোম হয়ে যায়।
_ আপনিকি পাগল।(রেগে)
_ হুম তোমার জন্য। (মুচকি হেসে)
_ উফফ অসহ্য,(বিরক্ত হয়ে)
_ সহ্য
রাইফা রেগে আহাদের দিকে তাকায়।আহাদ তার দাত বের করে হেসে রাইফাকে টেনে বুকে নেয়।
রাইফা নিজেকে ছাড়াতে ছোটাছুটি করলে আহাদ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
_ আরে,এভাবে ছোটা ছুটি করেনা বউ আমি ব্যাথা পাবো।

রাইফা চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে আহাদের দিকে। আর আহার দাত বের করে হেসেই যাচ্ছে।আহাদ পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা আংটি বের করে রাইফার হাতে পড়িয়ে দেয়।আর রাইফা অবাক হয়ে আহাদের দিকে তাকায়।
_ এভাবে তাকানোর কি আছে বউ। তোমার উপহার,।
_ চাইনা আমার আপনার উপহার। (রেগে)
_ বেশি কথা বললে আজ রাতেই কসিয়ে দুটো চড় দেবো। চুপচাপ আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও।(ধমক দিয়ে)
রাইফা ঠোঁট উলটে তাকিয়ে থাকে আহাদের দিকে,
_ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন।আমার মুড টাই নষ্ট করে দিলে তুমি,,কই ভেবেছি দূর ভাল্লাগেনা ।
_ তাই বলে আপনি আমাকে মারবেন।
_মারবো বলেছি, কই মারি নি তো।(ভ্রু কুচকে)
_ ওই একই কথা।

রাইফার কথায় আহাদ রাইফার কপালে একটি চুমু খেয়ে বলে,
_ এবার আদর করে দিলাম।,খুশি তো।
রাইফা আর কোন কথা না বলে আহাদের বুকে মুখগুজে শুয়ে পড়ে।আহাদ ও তাকে জড়িয়ে ধরে।
???
পরের দিন বিকালে,শিহাব বসে আছে একটি লেকের পাড়ে সাথে রাইসা। রাইসা চুপচাপ বাদাম চিবুচ্ছে। শিহাব আড় চোখে তাকে দেখছে।শিহাবের ফোনে আহাদের কল আসে,শিহাব রাইসার থেকে দূরে গিয়ে কল টা রিসিভ করে,
_ হ্যা আহাদ সব রেডি তো।
_হুম রেডি, শালিকা কে নিয়ে চলে আয়।
_ আমার না ভয় করছে।কি করবো রে।
_ চুপ শালা।আসতে বলছি আয়।আমার যা করার আমি করেছি বাকিটা তোর হাতে।
_ আচ্ছা আসছি।

শিহাব রাইসার সামনে দাড়িয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_চলো আমরা একটু সামনে এগোয়।
_ কেন এখানেই তো ভালো লাগছে সামনে গিয়ে কি হবে।(ভ্রু কুচকে)
_ আরে চলোই না।
_ আচ্ছা চলুন।

রাইসা শিহাবের পাশে পাশে হাটছে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রাইসার চোখ বেধে দেয়।রাইসা ছুটাছুটি করলে শিহাব রাইফার দুহাত জড়িয়ে ধরে বলে,
_প্লিজ ছোটাছুটি করিয়না।
_ আমার চোখ বেধেছেন কেন।(অবাক হয়ে)
_ একটু ধৈর্য্য ধরো সববুঝতে পারবে।

শিহাব পেছনে ঘুরে পেছনে আহাদের দিকে তাকায়।আহাদ তাকে ঈশারা করে রাইফাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

শিহাব রাইসাকে নিয়ে লেকের পাড়ে দাড়ায়। শিহাব আর আহাদের সাথে আছে রাইসার ৭ বন্ধু তাদের মধ্যে চারজন মেয়ে তিনজন ছেলে।
সবাই ঘিরে দাঁড়ায় রাইসা আর শিহাবের চারপাশে।আহাদ পেছন থেকে রাইসার চোখের রুমাল খুলে দেয় রাইসা চোখ খুলে দেখে লেকের পুরো একসাইট লাভ সেভের লাল রং এর বেলুন দিয়ে সাজানো আশে পাশে তার সকল বন্ধু বান্ধব।রাইসা অবাক হয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করে,
_ কিরে তোরা এখানে কি করছিস।
_ আমাদের দিকে তাকাতে হবে না পেছনে ঘুর তুই।(বান্ধুদের মধ্যে একজন)
রাইসা পেছনে ঘুরতেই দেখে শিহাব রাইসার সামনে হাটু মুডে বসে আছে তার হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং
শিহাব রাইসার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ রাইসা উইল ইউ মেরি মি,

রাইসা অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কখনো ভাবতেও পারেনি শিহাব এমন একটা প্রস্তাব দিবে।তার মনে পড়তে থাকে শিহাবের সাথে কিছু দিন আগের কথা গুলোকে ,যখন শিহাব তাকে বার বার প্রশ্ন করতো,তোমার জীবনে কি পছন্দের কেউ আছে,কারো সাথে কি রিলেশন আছে তোমার।তুমি কেমন ছেলে পছন্দ করো।এমন শত প্রশ্ন শিহাব তাকে করতো,কিছু প্রশ্নের উওর সে দিলেও আবার কিছু প্রশ্নের উওরে পাশ কাটিয়ে যেত।তবে এই সেই কারন প্রশ্ন গুলো যানতে চাওয়ার।রাইসার বন্ধুদের চিৎকার ভেসে আসছে তার কানে।সবাই তাকে বলছে “ইয়েস বল রাইসা ইয়েস বল” কিন্তু কোথায় যেন রাইসার ভয় কাজ করছে।রাইসার কোন উওর না পেয়ে শিহাব একবার করুন চোখে আহাদের দিকে তাকায়। আহাদ রাইসারর পাশে এসে দাঁড়ায় আর বলে,

_ আমাকে তো তুই বিশ্বাস করিস তাই না।আমি তো তোর ভালো চাই।তাই বলছি,শিহাবকে তুই মেনে নে।হ্যা বল।একটু একটু করে ওকে ভালোবাসিস আগলে রাখিস।আমি যানি তুই নিজেও শিহাব কে ভালোবাসিস।হয়তো কাউকে বুঝতে দিস না।

আহাদকে দেখে প্রথমে রাইফা ঘাবড়ে যায়।কিন্তু আহাদের বলা কথা গুলো রাইফার কেন যেন ভালো লাগে।একবার মন চাইছে তার হ্যা বলতে আবার কোথায় যেন পিছুটান কাজ করে।সবকিছু ভাবতে ভাবতে রাইসা কাপাকাপা গলায় শিহাবকে বলে,
_ ই..য়ে..স।

চলবে..……
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here