আমার_মনপাখি পর্ব – ২২
#পলি_আনান
চুপচাপ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রাইফা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষন হয়েছে।আহাদের সাথে সেই সকালে তার দেখা হয়েছে।তখন ছিল সকাল সাতটা সূর্যের আলো কাচের জানালা ভেদ করে রাইফা আর আহাদের মুখে পড়ছে।চিকচিকে রোদের ঝিলিকে আহাদের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।ঘুম থেকে উঠে নিজের বুকে রাইফাকে দেখতে পায়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সে।আহাদ মুচকি হেসে রাইফার কানে কানে বলে,
_ বউ ও বউ।
_হু(ঘুমের ঘোরে)
_ বউ উঠো সকাল হয়ে গেছে।(কানে ফিসফিস করে)
_ হু।
_কি হু, হু করছো।উঠো আর কতোক্ষন ঘুমাবে।
_ রাইসা জ্বালাবি না একদম। আমাকে ঘুমাতে দে(ঘুমের ঘোরে)
আহাদ বুঝতে পারছে সহযে রাইফার ঘুম ভাঙ্গবে না।তাই সে মুচকি হাসি দিয়ে রাইফার গালে টুপ করে দুটো চুমু খেয়ে নেয়।
গালে কারো ঠোঁটের স্পর্শে জেগে রাইফা। নিজেকে আহাদের বুকে দেখে লাফিয়ে উঠে যায়।
_ আপনি আমার রুমে কি করছেন(চমকে)
আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে।যেন কত বছর তাকে দেখেনি।নিজের প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার বছরের পর বছরের সাধনা আজ পূরণ হয়েছে।ঘুমন্ত প্রেয়সীকে দেখে নিজের মনের মাঝে উথাল পাথাল ঢেউ বার বার বয়ে যাচ্ছে।প্রেয়সীর ঘুমন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে যেন হাজার কবিতা লেখা যাবে।ঠোঁট দুটো বড্ড শুষ্ক হয়ে গেছে। যেন একটু কোমল স্পর্শে আবার তাজা গোলাপের মতো আবার ফুটে উঠবে।চুল গুলো এলোমেলো।নাকটা কিছুটা লাল।এই মুহূর্তে আহাদ যেন তার প্রেয়সীর কাছে নিজেকে হারাতেও প্রস্তুত ।
কিছু মুহূর্তের জন্য রাইফা ভুলে যায় আহাদ কাল রাতে তার রুমে ছিল।আহাদের চাহনি সে বুঝতে পারছে। কি যেন মায়া চোখ দুটোতে এই চোখদুটো হাজার কথা বলতে বলতে চায়।সূর্যের চিক চিক হলুদ আলোয় আহাদের মুখের একপাশ টায়।দাড়ি গুলো চিকচিক করছে।তার একটু ইচ্ছে করছে ছুয়ে দিতে। অধিকার থেকেও কোথায় যেন সংকোচ বোধটা লাগছে।পেরেও ছুতে পারছে না আহাদ কে।নিজের উত্তাপ মনের আবেগ টাকে বিসর্জন দিয়ে সে বলে উঠে,
_আপনি এখনো আপনার রুমে……….……..
আহাদ আর রাইফাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে রাইফার শুষ্ক ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।এই ঠোঁট দুটতে আজ প্রান দিতে না পারলে তার আজ সারাদিনেও অস্থিরতা থামবেনা।তাই অতীতের সব কথা উপেক্ষা করে রাইফার ঠোঁট দুটো দখল করে নেয় সে।রাইফা প্রথমে নিজেকে ছাড়াতে চালেও পরে আহাদের সাথে তাল মেলায়।
বারান্দায় হালকা হাওয়া তার সাথে এইসব কথা মনে করতেই রাইফার মাঝে অন্যরকম শিহরন বয়ে যায়।নিজে না চাইতেও আহাদ কে দূরে সরাতে পারচ্ছে না।আবার কাছে ও রাখতে পারছে না।হাজারো ধিদ্ধা, সংকোচ, তাকে ঘিরে ফেলছে। মুক্ত ঐ তারা ভারা আকাশের দিকে তাকিয়ে রাইফা বলে,
_ চলছে যেমন তেমনি চলুক।সময় ঠিক করে দিবে কোনটা ঠিক।আর কোনটা ভুল।
রাইফা নিজের রুমে এসে ফোনটা হাতে নেয়।সেই অ চেনা লোকটি আবার মেসেজ দেয়।
_ কি মনপাখি খুব খুশি মনে হচ্ছে আজ কাল।আহাদ কে নিজের জীবনে পেয়ে।তবে মনে রাখো আহাদ আর বেশি দিন তোমার জীবনে থাকবেনা। বেশি দিন না।আমি আহাদকে সরিয়ে দেব তোমার কাছে থেকে। আহাদ তো আমার সামনেই আছে। কি করি ওকে বলোতো হাত দুটো ভেঙ্গে দি।নাকি পা।আচ্ছা থাক চোখ দুটো গেলে দি।কি করবো বলো।আমার আর দৈয্য হচ্ছেনা।
রাইফা মেসেজ টা পড়েই দম বন্ধ কর অবস্থা।তার নিজের কারনে আহাদকে বারবার বিপদে পড়তে হচ্ছে।
_ ম,মেসেজ দিয়েছে ১৬ মিনিট আগে তার মানে আহাদ কে,,,,,ন….না কিছু হবে না আহাদ ভাইয়ের।আমার জন্য একজন মানুষ কেন বিপদে পড়বে বার বার।
রাইফা আর কোন কথা না ভেবে ছুটে যায় আহাদদের ঘরে ।মিসেস হাবিবা আর মিসেস জমিলা সোফায় বসে টিভি দেখছিল।রাইফা কে ছুটে আসতে দেখে তারা অবাক হয়ে যায়।রাইফা মিসেস হাবিবার সামনে দড়িয়ে বলে,
_ ম.. মামনি আহাদ ভাই কোথায়।
_ কেন কি হয়েছে,(অবাক হয়ে)
_ বলোনা আহাদ ভাই কোথায়।
_ আরে তুই এতো কাপছিস কেন আগে সেটা বল
_ আমার দাদুভাইরে ছাড়া বুঝি থাকতে পারো না। নাত বউ(মজা করে দাদিমা)
_ তোমরা আমায় বলোনা আহাদ ভাই কোথায়(কাদো কাদো সুরে)
_ আহাদ তার রুমেই আছে উপরে যা(মিসেস হাবিবা)
আহাদ এইমাএ বাড়িতে প্রবেশ করেছে। রাইসাকে সন্ধ্যায় বাড়িতে পৌছে দিয়ে শিহাব আর সে মিলে একটু গুরতে গিয়েছে।রুমে এসে কাভাড থেকে টি র্শাট আর টাউজার বের করে নেয়।ওয়াশরুমে ঢুকার মুহূর্তে রাইফা তার রুমে হুরমুর করে ডুকে পড়ে।রাইফার কান্ড দেখে আহাদ থমকে যায়।রাইফা আহাদের সামনে এসেই আহাদের পুরো শরীর দেখা শুরু করে,
_আপনার কোথায় লেগেছে দেখি। বেশি আঘাত করেছে, কই কোথায় লেগেছে (ব্যাস্ত হয়ে পুরো শরীর দেখতে দেখতে)
_ আরে কি করছো আমার কোথায় লাগবে কোথাও লাগেনি।তো।
_ সত্যি লাগে নি। ( চোখের দিকে তাকিয়ে)
_ না কেন লাগবে।কি হয়েছে তোমার।
রাইফা একপলক আহাদের দিকে তাকিয়ে হু,হু করে কেঁদে উঠে। রাইফা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।ভয়ে তার পুরো শরীরে কাঁপন ধরে গেছে।সারা শরীরে ঘাম ঝরছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।আহাদ রাইফাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়।
_ কি হয়েছে বউ কাদছো কেন। বলো আমায়।
রাইফা কেদেই যাচ্ছে।এভাবে আরো কিছুক্ষন যাওয়ার পর রাইফার হুস আসে সে আহাদের বুকে তাই সে ছিটকে সরে যায়।রাইফা রুম থেকে বের হতে নিলেই আহাদ রাইফার হাত ধরে নেয়।
_ কি হয়েছে বলো। কাদছো কেন।
_ কি…..কিছুনা(নাক টানতে টানতে)
_ কিছু একটা তো হয়েছে বলো আমায়।
_ আমাকে ছাড়ুন আমি বাসায় যাবো (নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
_তুমি তো তোমার নিজের বাসায় আছো(মুচকি হেসে)
_ মানে(অবাক হয়ে)
_ ওল্লে আমার বউ টা কিচ্ছু বুঝে না। এটা তোমার শশুরবাড়ি।আর শশুর বাড়ি মানে তোমার নিজের বাড়ি।
রাইফা আড় চোখে আহাদকে দেখে আবার নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।
আহাদ রাইফাকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরে।
_ আমি সেদিন কি বলেছিলাম মনে আছে তোমার।
_ কি বলেছিলেন?,
_ আমি বলেছি যেদিন তুমি নিযে এসে আমার কাছে ধরা দিবে সেদিন তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।আর কোন ছাড়াছাড়ি নাই।
রাইফা আহাদের কথা শুনে এক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে নিজেকে ছাড়াতে বলে,
_প্লিজ আমায় যেতে দিন।আম্মু, রাইসা কেউ যানেনা আমি এখানে।তারা আমায় খুজবে।
_আচ্ছা আজ ছেড়ে দিলাম।তবে সামনে আর ছাড়বোনা মনে রেখো।
রাইফা ছাড়া পেয়ে দৌড়াতে নিলেই আবার আহাদ রাইফাকে পেছন থেকে হাত ধরে নেয়।রাইফা করুন চোখে একবার আহাদের দিকে তাকায়।
আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলে,
_ খবরদার আজ বারান্দার দরজা লাগাবেনা।আর আমি না আসা পর্যন্ত ঘুমাবেনা। আমি আসবো রাতে।
রাইফা আহাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে আবার চলে যায়।রাইফাকে নিচে নামতে দেখে দাদিমা মুচকি মুচকি হাসছে।রাইফা সবাইকে উপেক্ষা করে নিজের বাড়ি চলে যায়।
????
রাতের কালো ওই খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে আছে শিহাব আর রাইসা।কারো মুখে কোন কথা নেই। শিহাব আড় চোখে রাইসাকে দেখছে।মেয়েটাকে যত দেখে তত ভালোলাগে।নিষ্পাপ চেহারা।ডাগর ডাগর চোখ,গোলাপের মতো ফুটন্ত ঠোঁট দুটো দেখতে মায়াবী লাগছে।শিহাবের ভাবনার মাঝে রাইসা প্রশ্ন করে,
_কি দেখছেন আপনি।
_ তোমাকে( আনমনে)
_ আমাকে দেখার কি আছে আর কখনো দেখেন নি।
_ হুম দেখেছি তবে তখন দেখতাম আড় চোখে। এখন তো সামনে থেকে দেখবো।
শিহাবের কথা শুনে রাইসা মুচকি হেসে প্রশ্ন করে,
_আচ্ছা রাইফা আপুকে কবে বলবো আমাদের এই সর্ম্পকের কথা।
_ না এখন বলোনা।
_ কেন,,,, কেন বলবো না আপুকে।(ভ্রু কুচকে)
_ বেচারি এমনি তেও শকের মধ্যে আছে।প্রথমে শুনেছে আমি বিবাহিত তারপর অনিকের ব্যাপারটা তারপর বিয়ে।সব মিলিয়ে সে কিন্তু মেন্টালি শকে আছে।
_ হুম ঠিক বলেছেন।
_ যানো আহাদ রাইফাকে খুব ভালোবাসে।ওর সাথে যখন ছিলাম সারাদিন শুধু রাইফা রাইফা।কিন্তু রাইফা আহাদকে বুঝলো না।
_হুম আপনি ঠিক বলেছেন।তবে আপু এবার ধীরে ধীরে বুঝবে।
_ বুঝলেই ভালো।
আবার নিরবতা ছেয়ে যায় তাদের মাঝে। আকাশ পানে তাকিয়ে আছে দুজনে।যেন আকাশ টাই তাদের ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।
চলবে…
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)