বৃষ্টি মাখা রোদ্দুর?,part:11

0
4381

বৃষ্টি মাখা রোদ্দুর?,part:11
Writer:TanjiL Mim
.
.
?
“সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙল আমার’!!বিছানা থেকে উঠে রিয়াদ ভাইয়াকে না দেখে বেশ অবাক হলাম আমি’!!পরক্ষণেই ভাবলাম হয়তো চলে গেছে’!!আচমকা কাল রাতে ভাইয়ার কান্ডের কথা মনে পরলো’!!ভাইয়ার এমন পাগলী,,এত কেয়ার,এত শাসন এত হারানোর ভয় সবগুলো কি আমায় ভালোবেসে করছে নাকি’!!কিন্তু ভাইয়া তো বললো না’!! যে সে আমায় ভালোবাসে তাহলে…. আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি’!!হয়তো বাসে হয়তো না যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন আমিও করবো আমি যে ভাইয়াকে কতোটা ভালোবাসি……

“আনমনেই হাসলাম আমি’!!এমন সময় দরজায় নক করলো কেউ’!!বিছানা থেকে সোজা চলে গেলাম দরজার সামনে তারপর দরজা খুলে সামনে আম্মুকে দেখে কিছু বলার আগেই আম্মু বলে উঠলঃ

————–“ঘুম ভাঙছে মহারানি…..

————–“হুম ভাঙছে আম্মাজান……

————–“তুই কালরাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলি কেন??

এই রে……

————–“ইয়ে না কখন দরজা বন্ধ করেছি মনে নেই,আম্মু খুব ক্ষুধা লেগেছে তাড়াতাড়ি নাস্তা তৈরি করে রাখো……

———–“হুম নাস্তা তৈরি আছে ফ্রেশ হয়ে খা গিয়ে আর শোন আমি তোর খালামনির বাসায় যাচ্ছে……

———–“খালামনির বাসায় কেন যাবে…

———–“আরে বুঝছিস না কতোদিন পর তোর নানু বাড়ি যাবো একটু কেনাকাটার ব্যাপার আছে না…….

————“আবার কেনাকাটা?

————-“তুই চুপ থাক!তুই গিয়ে নাস্তা কর আমি যাচ্ছি আর শোন দরজা বন্ধ করে নিস,,দিহান আর তোর বাবাও গেছে কিন্তু…….

————-“ঠিক আছে আম্মাজান…..

“তাঁরপর আম্মুও আর কিছু না বলে চলে তার কাজে……

“আমিও সামনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম…….

||

_________________________________________

____________________

||

“সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা………

“আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!টোটাল কথা হলো সবাই মিলে একসাথে তৈরি হয়ে নানু বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো!

————“তানজু”কই তুই হলো তোর এক প্রকার চেঁচিয়ে ডাকলো দিহান ভাইয়াকে আমাকে…আমিও তার কথা শুনে বলে উঠলামঃ

————–“আসছি ভাইয়া আর দু’মিনিট…….

“আজকে একটা সুন্দর সাদা রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ পড়েছি,সাদা বরাবরই ভালো লাগে আমার’!!,হাতে অল্প কিছু ব্যাচ,আর চুলগুলো উচু করে জুটি করেছি,আর সাথে হালকা মেকাপ আর ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক…….

“আমার ভাবনার মাঝে আবারো ভাইয়া বলে উঠলঃ

————–“তুই আসবি নাকি তোরে রেখেই চলে যাবো…….

—————“উফ ভাইয়া এখনো তো অনেক সময় আছে এত তারাহুরো করছো কেন??

—————“ওরা সবাই চলে গেছে শুধু আমরাই যেতে পারছি না……

“ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বলো উঠলামঃ

—————“সবাই চলে গেছে ওরা আমাদের সাথে যাবে না………

—————“সবাই স্টেশনে যাবি শুধু আমরা আর রিয়াদেরা একসাথে যাবো…….

—————“ওহ,অল্প আওয়াজে বলে উঠলাম আমি………

“তারপর কাঁধে ব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে চললাম আমি নিচে……

||

“বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা’!!এমন সময় খালামনি খালু আর রিয়াদ ভাইয়াও চলে আসলো…..

“আজকে ভাইয়া একটা সুন্দর ব্লাক রঙের শার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে আছে,চুলগুলো বরাবরের মতো সুন্দর করে সাজানো সব মিলিয়ে ভাইয়াকো অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!হুট করেই মাথায় প্রশ্ন আসলোঃ

———–“এতো সাজার কি আছে এত সাজলে অন্য মেয়েরা যদি……হুহ…?

“এমন সময় দিহান ভাইয়া হাত দিয়ে মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলঃ

————-“ওই দাঁড়িয়ে আছিস কেন,গাড়িতে ওঠ…..

————–“ওহ হু বলেই হন হন করে উঠে পরলাম আমি গাড়িতে…….

“ওদিকে রিয়াদ হাসলো……

_____________

“প্রায় ৫০ মিনিট পর আমরা চলে আসলাম স্টেশনে…..

“স্টেশনে আসতেই সবাইকে দেখতে পেলাম আমি’!!সাথে আফরিন আপু আর দুলাভাইও,,বেশি রাগ লাগলো সোহানকে দেখে…..

||

“টোটাল চারটে কেভিন বুক করা হয়েছে আমাদের জন্য’!!একটার ভিতর আম্মু আব্বু খালামনি আর খালুর,আর দুই নাম্বার টায় আফরিন আপু আর দুলা ভাই,,তিন নাম্বার টায় দিহান,রিয়াদ আদিল আর সোহান,আর চার নাম্বারটায় আমরা তিনজন রুহি,আমি আর তিশা……

“সবাই ঘুম আনন্দের সঙ্গে পাড়ি জমাচ্ছি নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য……

“কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ট্রেন চলতে শুরু করলো’!!ট্রেন ছাড়তেই জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে আছি আমি’!!রাতের এই জ্বল জ্বল করা হাসি আর সুন্দর বাতাস বরাবরই পছন্দের আমার’!!

||

“রাত_দুটো বেজে দু মিনিট……

“গভীর ঘুমে মগ্ন রুহি আর তিশা!আমার চোখে ঘুম নেই’!!কেন যে ঘুম আসছে না তা এখনো অজানা আমার কাছে’!!জানালার পাশে হেলান দিয়ে বসে আছি আমি’!!ইচ্ছে করছে ট্রেনের দরজার সামনে গিয়ে এই সুন্দর প্রকৃতির একটু মজা নেই'”!!! কিন্তু একা একা “ইমপসিবল”!!রিয়াদ ভাইয়াকে একটা মেসেজ দিয়ে বলি চলো না আমরা ট্রেনের দরজার সামনে গিয়ে বসি….এসব ফোনটা হাতে নিলাম উদ্দেশ্য ভাইয়াকে মেসেজ করা’!!

———-“চলো না ভাইয়া আমরা ট্রেনের দরজা সামনে বসি এতটুকু লিখেও আবার ডিলেট করে দিলাম’!!—-না থাক এতরাতে কেউ দেখলে কি বলবে…..

“এই ভেবে আবার ফোনটা রেখে দিলাম’!!এমন সময় “টুং” করে মেসেজের শব্দ আসলো ফোনে….

“ফোনটা হাতে নিতেই মেসেজ আসলো রিয়াদ ভাইয়ার….

“এতরাতে ভাইয়ার মেসেজ দেখে আবারো বেশ অবাক হলাম আমি’!!মেসেজ অপশন ঢুকতেই দেখলাম বড় বড় করে লেখা…..

———-“আমি জানি তুইও এখনো আমার মতো ঘুমাস নি তাই বাহিরে আয়…..

~”এমন মেসেজ দেখা আবারো চমকে উঠলাম আমি’!!

————“আশ্চর্য!ভাইয়া বুঝে কিভাবে যে আমি এখনো ঘুমাই নি….

“আনমনে হাসলাম আমি’!!তারপর মাথায় ওড়না মুড়িয়ে আস্তে আস্তে কেভিন থেকে বের হলাম আমি’!!

“কেভিন থেকে বের হতেই ভাইয়াকে দেখতে পেলাম আমি’!!কিছু বলার আগেই ভাইয়া আমার হাত ধরে চুপিচুপি নিয়ে যেতে লাগলো সামনে……

___________________

“হাঁটতে হাঁটতে আমরা একদম ট্রেনের দরজার সামনে চলে এসেছি……
ভাইয়া আমার হাত ধরে বললোঃ

———-“এখানে বসবি…..

“লাইক সিরিয়াসলি আমি তো এটাই চাইছিলাম,, কি করে বুঝলো ভাইয়া আমার মনের কথা……
আমার ভাবনার মাঝে ভাইয়া আবারো বলে উঠলঃ

————-“কি হলো বসবি এখানে…..

“আমি খুশি হয়ে বলে উঠলামঃ

————-“হুম ভাইয়া চল বসি……

………………..

“পুরো আকাশটা জুড়ে রয়েছে জোৎসা ভরা আলো’!!চারিদিকে শীতল মেশানো মিষ্টি বাতাস’!!অন্ধকারে ডুবে আছে পুরো পরিবেশটা,,হালকা আফসা আলোতে দু – একটা গাছ দেখা যাচ্ছে,,তাও চলন্ত ট্রেনের গতিতে খুব ধোঁয়াশা দেখাচ্ছে’!!বাতাসে চুলগুলো উরছে তানজুর’!!মাথায় মুড়ানো ওড়না খুলে ফেলেছে সে অনেক আগেই!তবে নিজে ইচ্ছে খুলেছে বললে ভুল রিয়াদ নিজেই টান মেরে তানজুর চুল খুলে ফেললো’!!তানজুর হাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে রিয়াদ’!!যেখানে নেই কোনো ক্ষোপ আছে শুধু “অপ্রকাশিত ভালোবাসা”!!এমন একটা মোমেন্টের খুব সুন্দর মজা নিচ্ছে তানজু’!!কারন সে তো এটাই চাচ্ছিল’!!সেও রিয়াদের হাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে’!!

——-?”যে অপ্রকাশিত মনের কথা গুলো বুঝে যায় সেই প্রিয় আর ভালোবাসার মানুষ”!!?

“এমনটা ভেবে হাসলো “তানজু’!!হর্ঠাৎই বলে উঠল সেঃ

———–“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া বিশ্বাস কর কতোক্ষন আগে আমি এটাই চাচ্ছিলাম,,তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার অনেক দিনের ইচ্ছেকে পূরণ করার জন্য……

“বিনিময়ে রিয়াদ কিছু বললো না’!!হালকা হাসলো…..

”কয়েক মুহূর্তের জন্য নেমে আসলো তাদের মধ্যে কুটকুটে নীরবতা…..

___________________

“কুটকুটে নীরবতা ভেঙে রিয়াদ বলে উঠলঃ

———–“তোকে অনেক কিছু বলার আছে তানজু,আমার মনের ভিতর জমিয়ে রাখা হাজার হাজার কথা তোকে বলবো আমি…..

“তানজু অতি আগ্রহের সঙ্গে বলে উঠলঃ

———–“হুম বলো না…….

“রিয়াদ হালকা হেঁসে বলে উঠলঃ

———–“এখন নয়!পরে….

“অনিচ্ছা থাকা সত্বেও হতাশ হয়ে বলে উঠল তানজুঃ

————“ঠিক আছে…..
.
.
.
.
?

~ “বেশ কিছুক্ষন পর……

“রিয়াদের কাঁধে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পরলো তানজু”!!তানজু ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে রিয়াদও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তার সাথে’!!তারপর হাত দিয়ে তানজুর কপালে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে গুজিয়ে দিল তানজুর কানের পিছনে……

“তারপর তানজুর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল সেঃ

————-“তোমার মায়াবী ঘুমন্ত ফেস আর তোমার বাতাসে উড়ে যাওয়া উরন্ত চুল বরাবরই খুব পছন্দের আমার “প্রিয়সী”….

“ট্রেন ছুটছে তার আপন গতিতে,,তার সাথে চলছে দুটো মানুষের অপ্রকাশিত হওয়া “না বলা ভালোবাসা”……,, হয়তে খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পাবে তাদের গল্প হয়তো না……??

_________________________________________

____________________

“সকাল_৭ঃ০০টা……

“ট্রেন এসে থামলো রাজশাহী রেলস্টেশনে…..

“তানজু এখনও বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে কেভিনে’!!অনেকক্ষণ আগেই রিয়াদ তানজুকে জাগিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে কেভিনে’!!কেভিনে ঢুকে আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো তানজু…….,,সাথে রুহি তিশাও রাতে যে তাদের পাশ থেকে কেউ সরে গেছেলো হয়তো বুঝতেই পারে নি তারা কেউ……

||

“কেভিনের দরজা নক করতেই ঘুম ভাঙলো রুহির’!!সামনে আদিলকে দেখে বলে উঠল সেঃ

———–“গুড মনিং ভাইয়া…..

“আদিলও হালকা হেঁসে বললোঃ

———-“গুড মনিং,,তাড়াতাড়ি তৈরি হও আমরা চলে এসেছি তো….আর বাকি দুটোর কি অবস্থা…..

“রুহি চোখ ডলতে ডলতে বলে উঠলঃ

————“ঠিক আছে ভাইয়া,,আপনি যান আমরা তৈরি হচ্ছি…..আর ওরাও ঘুমোচ্ছে আমি উঠাচ্ছি…

————-“ঠিক আছে…..তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু…..

“রুহি হালকা হেঁসে বললোঃ

———–ওকে!

“তারপর আদিলও আর কিছু না বলে চলে গেল……..

||

“পুরো রাস্তায় টানা ঘুমিয়ে পার করেছি আমি’!!ঘুমের রেশ এখনো কাটে বাড়ি গিয়েই সোজা একটা লম্বা ঘুম দেবো……

____”পাক্কা দু_ঘন্টা_পর……..

“আমরা এসে পৌছালাম নানু বাড়িতে……

“নানু বাড়িতে শুধু থাকে নানা, নানী,আর আরু নামের একটা মেয়ে,,কোনো এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয় মেয়েটা নানাভাইর,,একটা দূর্ঘটনায় মেয়েটার বাবা মা মারা যায় তারপর থেকেই নানাভাই দায়িত্ব নেয় মেয়েটির’!!এমনি খুব ভালো,,কিন্তু মেয়েটা অতিরিক্ত রিয়াদ ভাইয়ার সাথে মিশে যেটা আমার মটেও পছন্দ হয় না…….

______

“একে একে গাড়ি ঢুকলো নানুদের বাড়ির ভিতরে….

“এঁকে এঁকে সবাই বের হলো গাড়ি থেকে আমরাও,,বের হলাম!এমন সময় হুট করে আরু এসে জড়িয়ে ধরল রিয়াদ ভাইয়াকে আর বলে উঠলঃ

————-“কেমন আছো ভাইয়া…..

“আচমকা এমনটা হওয়াতে ভাইয়া একটু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে আরুকে ছাড়িয়ে বলে উঠল সেঃ

————-“এই তো ভালো তুমি…..

“বিষয়টা সবাই কি ভাবে নিলো জানি না কিন্তু আমার একটুও ভালো লাগে নি……

“আজকে তোরে খাইছি রিয়াদ…..,,আসতে না আসতেই অন্য মেয়েদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলা….??

~~~~”মনে মনে কথাগুলো বলে হন হন করে ভিতরে চলে গেলাম আমি’!!

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here