অবশেষে পরিণয় পর্ব_১

4
13163

“ইউ আর আন্ডার এরেস্ট ” মিস.খুশি তালুকদার।
বলেই হতকড়া পড়ানো হলো।
খুশি বিস্ময়ের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো।
আশে পাশে তাকিয়ে মানুষ তো দূরের কথা একটা পিঁপড়াও দেখতে পেলো না।
কফিশপের ভিতরে কয়েক জোরা কাপল বসে আছে। বাইরের দিকে তাদের কোন এট্যানশন নেই।
খুশি চোখ বুজে স্বস্থির শ্বাস ছাড়লো ভাগ্যিস কেউ দেখেনি। সামনের দিকে আবারো বিস্ময় নিয়ে তাকালো।
প্রায় সন্ধ্যা,,, হবু স্বামীর সাথে এনগেজমেন্ট হওয়ার দুবছর পর এই প্রথম মিট করতে এসেছে।
এনগেজমেন্ট হওয়ার পরেরদিনই বিজনেসের জন্য
দেশের বাইরে চলে যায় মি.সাকিব চৌধুরী।
গতকাল দেশে এসেছে আর আজ মিট করতে আসছে খুশির সাথে।
খুশি বাইরে দাঁড়িয়ে ওয়েট করছিলো ঠিক সে সময়ই
পুলিশের জিপ গাড়ি এসে থামলো তাঁর সামনে।
পুলিশের ফুল ড্রেস আপ পড়া, চোখে কালো চশমা, মুখে মাস্ক যার দরুন মুখের গঠন টা ঠিক ধরতে পারলো না। সামনে এসে কড়া গলায় বললো,,,
ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।

ভাবা যায়,,, আমার তো একটা মান সম্মান আছে নাকি। আর আমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ে কোন অপরাধের ধারে কাছে যেতে পারে??
পুলিশ হয়েছিস বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস নাকি ব্যাটা,,, জানিস আমারো একজন পুলিশ আছে সে যদি জানতে পারে এর জন্য গর্দান নেবে তোর।
নেহাত ঢাকায় নেই চট্টগ্রাম আছে হুমহ,,,
পরোক্ষনেই ভাবলো “ধূর কি ভাবছি সে তো আমার মুখ দর্শন অবদি করতে নারাজ।
এটাই তো স্বাভাবিক আমি তাঁর সাথে যে অন্যায় টা করেছি তাঁর জন্য এর থেকেও বড় শাস্তি প্রাপ্য ছিলো আমার”

ভাবনায় ছেদ পড়লো যখন হাতে টান পড়লো।
চমকে ওঠলো খুশি।

“আল্লাহ আমি কি ভাবছি এদিকে যে আমাকে পুলিশ সত্যি হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে”
” পুলিশের নিশ্চয়ই কোন ভুল হচ্ছে,,,
আমার প্রফেশন সেই সাথে আমার বাবা এবং সাকিবের পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই তাঁর ভুলটা ভেঙে যাবে। ”
এক ঢোক চিপে নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললো,,,

— এক্সকিউজ মি. অফিসার।

পুলিশ অফিসার থেমে গেলো।

— আমার অপরাধ টা কি,,, এভাবে বিনা নোটিশে আপনি হাতকড়া পড়িয়ে আমায় নিয়ে যেতে পারেন না। আমার একটা সম্মান আছে,আমার বাবার একটা পরিচয় আছে ইভেন আমার নিজেরও একটা সম্মানীয় পরিচয় রয়েছে। তাই দয়া করে বলুন কেনো আমায় এভাবে নিয়ে যাচ্ছেন কি করেছি আমি??
আমি মোশতাক তালুকদারের মেয়ে,,,
আমি প্রফেশনালি একজন টিচার এছাড়া আমার হবু হাজব্যান্ড শহড়ের নাম করা বিজনেসম্যান মি.সাকিব চৌধুরী।

অফিসারের চোখ দুটো রক্তবর্ন ধারন করলো।
নিজের বাম হাতের আঙুলে তুড়ি বাজাতেই কালো কাপড় পরিহিত মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা দুজন লোক গাড়ি থেকে এক লাফে নেমে খুশির পিছনে গিয়ে খুশির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেললো।
ঘটনাটা এতোদ্রুত ঘটে গেলো যে খুশি তাঁর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। হাত পা ছুঁড়াছুড়ি করতেই ওড়নাটা নিচে পড়ে গেলো অফিসার ইশারা করে একজনকে ওড়না নিতে বলে খুশি কে পাজাকোল করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে একটা বড় রশি দিয়ে বেঁধে ফেললো।
খুশি এবার তেমন ছটফট ও করতে পারলো না আর।
দুজন লোক নেমে পড়লো,,,
সামনে গিয়ে অফিসারকে ফিসফিস করে বললো,,,

ভাইয়া এটা নাও আপুর যদি শ্বাসকষ্ট হয় এটা রাখো।
অফিসার ধীর গলায় ফিসফিস করে বললো,,,

— তোর আপুর কিছু হবে না ঐসব কিছু নাটক।
আর যদি সত্যি হয় তাহলেও এটা লাগবে না।
এর থেকেও ভালো মেডিসিন আমার কাছে আছে বাড়ি যা তোরা।

— আচ্ছা তাহলে প্রমিস করো বিয়ে করেই দুজন ফিরবে।

— পাগল নাকি এমন বেঈমান বিশ্বাসঘাতককে বিয়ে করবো আমি?? ইম্পসিবল,,, আমি তো আমার হবু বউ কে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়া তোর আপু এখন অন্যকারো বউ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাতদিন পার করছে। দেখছিস না হবু বরের সাথে কেমন ঘটা করে মিট করতে এসেছে।
আমাকে জানিস তো অন্যের সুখ দেখলে আমার বুক জ্বলে তাই সুখের ঘরে আগুন জ্বালাতে আসলাম একটু। এবার তোর হবু দুলাভাই হবু বউ শোকে ম্যাঁ ম্যাঁ করবে হাহাহাহা।

— মানে,,, না ভাইয়া এটা করো না। সব মিটিয়ে নাও এই তো সুযোগ।

— সরি খোকা,,, সুযোগ একবারই আসে বার বার না।
আর তোর বোন বিশ্বাস ঘাতক হলেও আমি নই সো,,, আমার জানেমান এর সাথে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবো না।
,
গাড়ি চলছে সমান গতিতে। খুশি চুপ চাপ বোঝার চেষ্টা করছে তাঁর সাথে ঠিক কি ঘটতে চলেছে।
লোকটা যে পুলিশের বেশে এসে তাকে কিডন্যাপ করলো তা বেশ বুঝতে পারছে।
কিন্তু লোকটা যদি পুলিশ না হয় তাহলে পুলিশের জিপটা কোথায় পেলো??আর তাঁকেই বা এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
কোনভাবেই কিছু মেলাতে পারছে না খুশি।
আশ্চর্যজনকভাবে খুশির ভয় তো একদমই লাগছে না। বরং কেমন একটা চেনা ফিলিংস কাজ করছে মনের ভিতর। খুশি লক্ষ করলো এমন একটা সিরিয়াস মোমেন্টেও তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না।
বড্ড অদ্ভুত লাগলো বিষয়টা।
“কিন্তু লোকটা যাচ্ছে কোথায়??আমাকে মেরে টেরে ফেলবেনা তো?? ”
সে যাই হোক মরার আগে কিছু সময় তো ভারী বুকটা হালকা লাগছে এই বেশ ভেবেই নিজেকে শান্ত রাখলো।

সাকিব আসতেই মিলন বললো,,,

— ভাইয়া কেমন আছেন??

— এই মিলন যে বেশ ভালো তুমি?? খুশি কোথায়??

— ভালো,,, আপু তো নেই।

— নেই মানে,,,

— আপুর বান্ধবী আছে না তাঁরা আপু?? তাঁরা আপুর মায়ের খুব শরীর খারাপ। তাঁরা আপু প্রচন্ড কান্নাকাটি করছিলো আপুকে ফোন করে তাই তো আপু ছুটে গেলো তাঁরা আপুর বাড়ি আজ বাড়ি ফিরবে না।

সাকিব মুখটা ভারী করে ফেললো জোর পূর্বক হেসে বললো,,,

— সো স্যাড! তাহলে আজ আসি চলো তোমায় বাড়ি ছেড়ে দেই গাড়িতো আনোনি বোধহয়।

— ইয়াহ চলুন।
,
শরীরে চুলকানি ধরে গেছে খড়ের ওপর বসে আছে প্রায় এক ঘন্টা,,, হাত,পা বেঁধে এভাবে ফেলে রাখার মানে কি সেটাই বুঝতে পারছে না খুশি।
চোখ দুটোও বাঁধা গলা শুকিয়ে এসেছে বেশ। অবশেষে পানির অভাবে কি তাঁর মরন হবে??
আরো এিশ মিনিট কেটে গেলো এবার তাঁর শ্বাস ঘন হয়ে এলো। তাঁর স্পন্দনের গতি যে থেমে গেছে সেই কতো বছর আগেই।থামা স্পন্দন কে যন্ত্রের সাহায্য চলাচল করালেও এখন যে যন্ত্রও নেই।
শ্বাস-প্রশ্বাস বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে জোর পূর্বক শ্বাস নিতে চাইলেও নিতে পারছে না।
এক জোরা চোখ এতোক্ষন তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো বাইরে থেকে। যখন বুঝলো এবার খুশির শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে তখন বাইরে থেকে ভিতরে চলে এলো। বাঁশ এর বেড়াটা চাপিয়ে দিয়ে হারিক্যানের আলোটা খুশির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো।
খড়ের ওপর নিজেও বসে পড়লো খুশির খুব কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,

— বিশ্বাসঘাতকদের উপরওয়ালাও সহ্য করতে পারেনা। দেখ তোর শ্বাসপ্রশ্বাসও জানে তুই বিশ্বাসঘাতক,বেঈমান তাই তো তাঁরাও তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

খুশি চমকে ওঠলো,,, কেঁপে ওঠলো তাঁর বুকটা।
উত্তেজনায় সে ছটফট করতে শুরু করলো।
এ সে কার আওয়াজ শুনতে পেলো,,,
সত্যি সে নাকি এটা তাঁর ভ্রম??
চোখে বাঁধা কাপড়টা নোনাপানিতে ভিজতে শুরু করলো।বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।
একটু ছুঁয়ে দিতে মন চাইলো তাঁর না পাওয়া সেই মানুষ টাকে। চোখ ভরে একটা বার দেখতে ইচ্ছে হলো তাঁর অতীতের সেই প্রিয় মানুষ টাকে,,,
নাহ অতীত নয় অতীত,বর্তমান, ভবিষ্যত সবটাতেই সে তাঁর খুব প্রিয়। প্রিয়জন কখনো কি অপ্রিয় হয় নাকি?? যে প্রিয় হয় সে তো সবসময় প্রিয়ই থাকে।
চাপা কষ্টগুলো তীব্র হতে লাগলো সেই সাথে দম বন্ধ লাগতে শুরু করলো। প্রচন্ড ছটফট করছে খুশি আরুশ তাঁর মুখের বাঁধন খুলে দিতেই খুশি এক ঢোক গিলে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বলে ওঠলো,,,

— আরুশ,,,আমার আরুশ তুমি সত্যি এসেছো আরুশ???

আরুশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে খানিকটা এগিয়ে মুখোমুখি হয়ে বললো,,,

— হ্যাঁ এসেছি তো তোর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে যে,,, আমার হবু বউকে দেখবি না তুই??

খুশি বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলো শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করলো তাঁর কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলো।
তাঁদের মাঝের বিশাল দেয়ালটা মনে পড়তেই বুকটা ছেদ করে ওঠলো।

আরুশ রক্তবর্ণ চাহনিতে চেয়ে আছে।
খুশি শ্বাস না নিতে পেরে কেমন নেতিয়ে পড়লো।
হাত-পা বাঁধা থাকায় নড়ন চড়ন করলো না।
হা করে শুধু নিঃশ্বাস নেওয়ার তীব্র প্রচেষ্টা করছে।
আরুশ খুশিকে এই অবস্থায় দেখে দম করে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে ঠোঁট টা আঁকড়ে ধরলো। খুব সফটলি নিজের ঠোঁট জোরা খুশির ঠোঁট জোরায় বিচরন করতে লাগলো।
খুশির চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়ছে।
তাঁর একটুও খারাপ লাগছে না, আর না একটু অস্বস্তি হচ্ছে কেনো হবে???
“এই স্পর্শ তো আজ নতুন নয়,,,এই স্পর্শ পাওয়ার অধিকার তো একমাএ তাঁরই ছিলো”
“দুটো হৃদয় যখন এক হয়ে একি স্পন্দনে স্পন্দিত হতে শুরু করেছিলো ঠিক সে সময়ই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদের আলাদা হতে হলো”
“একটা হৃদপিণ্ডকে যখন ভাগ করে দুটো করা হয় তাহলে সেটা কি সচল থাকে না থাকে না অচল হয়ে যায়”
খুশিরও তাই হয়েছে, আরুশের কি হয় নি???
হয়তো হয়েছে বুঝতে দেয় না।
আজ এতোগুলো বছর পর যখন দুজন এক হয়েছে তখন কি তাঁর হৃদস্পন্দন থেমে থাকতে পারে??
নাহ কখনোই না,,,
আরুশের সাথে তাল মিলাতে শুরু করলো খুশি।
হাত-পা বাঁধা থাকায় একটু অসুবিধা হলেও আরুশ
সামলে নিলো। কেউ মনে করছে না কারো অতীত, কেউ মনে করছে না কারো বর্তমান কেউ ভাবছে না তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
খুশি চায় না সেসব কিছু মনে করতে যতোটা সময় সে পাচ্ছে তাঁর মানুষ টাকে ততোটাই সে সম্পূর্ণ রূপে নিতে চায়।
কিন্তু আরুশ???
আরুশ যখন বুঝলো খুশিও তাঁর সাথে তাল মেলাচ্ছে। খুশির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক গতিতে চলছে অমনি ছিটকে সরে গেলো খুশির থেকে।
খুশি কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে কাঁপা আওয়াজে ডেকে ওঠলো,,,

— আরুশ,,,

— ব্যাস, আর একটা কথাও তুই বলবি না।
মরতে বসেছিলি জাষ্ট বাঁচালাম।
নয়তো যাকে ঘৃনা করি তাঁকে এভাবে স্পর্শ করার কোন মানে হয় না।
এই মূহুর্তে ডাক্তার আনা পসিবল নয় তাছারা একজন পুলিশ অফিসারের তত্বাবধানে আছিস মরলে সম্পূর্ণ দায় আমার ওপর পড়বে সো নিজের স্বার্থের জন্য তোকে বাঁচিয়ে রাখছি।

খুশির বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠলো।
কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারলো না আর।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না কেনো তাই ভাবছে আর ভাবছে আমাকে এমন দূর্বল হলে চলবেনা। যা সব হচ্ছে তাঁর জন্য তো আরুশ দায়ী নয়। সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলাম ও নয়।
খুশি নিজেকে শক্ত কর, দূর্বল হয়ে পড়িস না।

— কেনো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো??
কি চাই তোমার?? ভুলে যেও না আমি অন্যকারো বাগদত্তা।

খুশির চিৎকার শুনে আরুশ ওঠে দাঁড়ালো।
হাতে তালি দিয়ে বলতে লাগলো,,,

— ইয়েস এটাই,,, এটাই তোর আসল রূপ।
তুই কি ভাবছিস তোর মতো ছলনাময়ীকে এখানে ভোগ করার জন্য এনেছি। বা প্রেম প্রেম খেলা করার জন্য এনেছি। নো,,,
তোকে এনেছি আমার হবু বউ আমার জানের জান কে দেখানোর জন্য মাইন্ড ইট।

— আমাকে ছাড়ো আরুশ আমাকে যেতে দাও তোমার হবু বউকে দেখার জন্য আমি একটুও ইন্টারেস্টটেড নই প্লিজ লিভ মি।

— ডোন্ট শাউট,,,
দেখতে তো তোকে হবেই। তোর হবু বর কে আমি দেখেছি আর তুই আমার হবু বউ কে দেখবিনা এটাতো হয় না তাইনা,,, হবু বউ কে দেখাবো রেমান্স করবো তুই দুচোখ ভরে আমার সুখ দেখবি তবেই না আমার শান্তি।

খুশি চিৎকার শুরু করলো।

— যেতে দাও আমায় আমি আর এক মূহুর্ত এখানে থাকতে চাই না।

আরুশ রেগে গিয়ে খুশির কাছে গিয়ে গালদুটো চেপে ধরে বললো,,,

— বলছিনা চুপচাপ এখানে থাক।
তোর মতো চরিএহীনা মেয়েকে নিজের কাছে লং টাইম রাখার বিন্দু মাএ শখ আমার নেই।
সময় হলেই তোর জায়গায় তুই ফিরে যাবি,,,

আরুশের মুখে নিজেকে চরিএহীনা বলতে শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো খুশি।
নিচু স্বরে ডাকলো,,,

— আরুশ,,,

আরুশও থমকে গেলো। গাল ছেড়ে ওঠে পিছন ঘুরে বললো,,,

— তুই যা করেছিস এগুলো কারা করে ভেবে দেখ।
একজনের সাথে দিনের পর দিন প্রেম,ভালোবাসার অভিনয় করে, বিয়ে অবদি পৌঁছে তাঁকে ধোঁকা দিয়ে আরেকজনের সাথে বিয়ে করাকে তো চরিএহীনেরই পরিচয়। যে মানুষ টা তোকে মায়ের মতো ভালোবাসা দিয়ে আট টা বছর লালন-পালন করেছে, নিজের মায়ের থেকেও বেশী আগলে রেখেছে সেই মানুষ টা আঘাত করেছিস তুই।
“তুই শুধু আমাকে ঠকাশনি, আমার পুরো পরিবার টাকেই ঠকিয়েছিস”
“বিশ্বাস ঘাতকতা তুই শুধু আমার সাথে করিসনি আমার পুরো পরিবারের সাথে করেছিস”
আমার মা,, আমার মা আঁচল পেতে ভিক্ষা চেয়েছিলো তোর কাছে ভালোবাসার ভিক্ষা তুই দিসনি,, তোর পুরো পরিবার অপমান,অসম্মান করে
আমার মা কে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো।
বিশ্বাস কর তাঁরা প্রত্যেকে যদি আমার মা কে ঘাড় ধরেও বের করে দিতো আমার মা এক ফোঁটা চোখের জল ও ফেলতো না হাসি মুখে মেনে নিতো।
শুধু তুই যদি ঠিক থাকতিস,,

তুই আমাকে নাই মানতে পারোস যে মা তোকে এতো আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করলো সেই মাকে তো তাঁর যোগ্য সম্মান দিতে পারতি।
কোথায় ছিলো তোর বড় লোক মা-বাবা,,,
যে সময়টা,তাদের বেশী প্রয়োজন ছিলো সেই সময়টা তাঁরা তোকে দিতে পারেনি, সেই সময়টা আমার পরিবার তোকে দিয়েছে, আমার মা দিয়েছে।
যা তোর বড় লোক মা-বাবা দিতে পারেনি।
“পর কোনদিন আপন হয় না”
স্বার্থপর, বেঈমানের রক্ত বইছে তোর শরীরে।
তোর প্রতি যতোটা ভালোবাসা ছিলো তাঁর থেকেও হাজারগুন ঘৃণা রয়েছে তোর প্রতি সকলের।
আই হেইট ইউ,,ইয়েস আই জাষ্ট হেইট ইউ।
রাগে,ক্ষোপে আঙুল ওঠিয়ে এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেলো আরুশ।

খুশি স্তব্ধ হয়েই বসে রইলো।
সে চরিএহীনা,,, সত্যি সে চরিএহীনা।
ঘৃনা হ্যাঁ ঘৃনা,, সকলের ঘৃনার পাএী সে।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো খুশি।
তাঁর আরুশ তাকে চরিএহীনা বললো,,,
বলবে নাই বা কেনো,,, যা ঘটেছে এরপর তো এটাই তাঁর প্রাপ্য।

হাঁটুতে মাথা রেখে কেঁদে চলেছে খুশি।

“কেনো হলো এমন?? জীবনটা তো এমন না হলেও পারতো??
” মানুষের জীবন কেনো এতো অদ্ভুত??
“কেনো মানুষের জীবনটা পরিকল্পনা মাফিক এগোয় না??
” কেনো মানুষ ভাবে এক আর হয়ে যায় আরেক??

“সবই কি নিয়তির খেলা”??

“নিয়তির কাছে প্রত্যেকটা মানুষই বড় অসহায়”
“তবে সেই অসহায়তা নির্মমভাবে গ্রাস করতে পারে শুধু মেয়েদের”
” চোখে হাজারো সপ্ন থাকে তবে সেগুলো পূরন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষাও একসময় নিশ্চুপ হয়ে যায়”

“একসাথে যে সব আপনজনকে সুখি করা যায় না”
“একসাথে সকলের মুখে হাসি ফোটানো যায় না”
“জীবনে কিছু পেতে হলে কিছু দিতেও হয়”
“সে দিয়েছে তাঁর ভালোবাসার বিসর্জন দিয়েছে সে”

“কি অদ্ভুত! দুজন পুরুষের মনে তাঁর জায়গা প্রখরভাবে দখল নিয়ে আছে”
“তবে সেই জায়গাগুলো দুজনের মনেই বিপরীত অনুভূতির সৃষ্টি করেছে”
“একজনের চোখে সে পৃথিবীর সব থেকে আদর্শবান নারী তো আরেক জনের চোখে পৃথিবীর সব থেকে
ঘৃণ্য নারী”

বিষময় অতীত গুলো খুব করে কড়া নাড়লো বুকের ভিতর। সত্যি কি বিষময় নাকি ওগুলোই ছিলো তাঁর জীবনের সব থেকে সুখকর স্মৃতি।
“কখনো কখনো সুখ জিনিসটাও বড্ড অসহ্য লাগে”
“অতীতের সেই সুখ গুলো না আসলে হয়তো আজ এই বিষাদময় বর্তমানের সৃষ্টি হতো না”

ফ্ল্যাশ ব্যাক-

একদম ফিল্মি স্টাইলে চুমু খাচ্ছে আরুশ টিয়াকে।

চলবে….

অবশেষে পরিণয় পর্ব_১
#জান্নাতুল_নাঈমা

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কাল পোস্ট করার কথা ছিলো দূর্ভাগ্যবসত আমি পোস্ট করার জন্য সিলেক্ট করতে গিয়ে ডিলেট করে ফেলি।
একটা লিখা প্রথম লিখার পর যেমনটা হয় পরবর্তী তে আবারো সেটাই নতুন করে লিখতে গেলে একরকম হয় না। যেহেতু এটা মুখস্ত করার বিষয় না সেহেতু আগেরবার কি লিখেছি হুবুহু দ্বিতীয় বার লিখতে পারিনি মেইন থিম একি রয়েছে।
গল্পটার শুরুতেই এতো বড় ধাক্কা খাবো বুঝতে পারিনি।
জানিনা কেমন হলো চেষ্টা করেছি যাতে সকলের ভালো লাগে। কারো খারাপ লাগলে দুঃখীত।
কেমন হলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
কমেন্ট দেখে নেক্সট পার্ট লিখবো।

4 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here