অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৭
#জান্নাতুল_নাঈমা
খুশি কেঁপে ওঠলো।
আরুশ যে ভয়ংকর রেগে আছে তা বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু মারের দাগ গুলো দেখলে যে আরুশ আরো চারগুন ক্ষেপে যাবে।
ভয়ে ভয়ে খুশি কাঁপা কাঁপা হাতে আরুশের দুগালে আলতো করে ছুঁয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি আরুশ ভ্রু কুঁচকে বললো,,
— তুই এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো? এই ভয় পাচ্ছিস কেনো তুই?
.
এতো জোরে ধমকে ওঠলো যে খুশি ভয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আরুশকে।
আরুশ রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে দুহাতে পিঠে শক্ত করে চেপে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিতেই খুশি কুঁকড়িয়ে ওঠলো।
যেমন টা খুব ব্যাথা পাওয়ার পর সেখানে আবারো আঘাত পড়ায় কেউ করে ঠিক তেমনি।
আরুশ চমকে গেলো আর এক মূহুর্ত দেরী না করে খুশিকে ছেড়ে ফোন বের করে এক ফ্রেন্ড কে ফোন করে তারা কতো নাম্বার হলে আছে তাই বললো এবং কেউ যাতে এদিকে না আসে তাই দেখতে বলে রেখে দিলো।
.
খুশি ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে খুব ভয় লাগছে তাঁর।
আরুশ তাঁর সাথে যেমনটাই করুক না কেনো কখনোই এমন আঘাত করে না আর না কেউ তাঁকে এমন আঘাত করলে সহ্য করতে পারে।
আরুশ যতো আগাচ্ছে খুশি ততো পিছচ্ছে।
আরুশ চোখ মুখ কঠিন করে এগুতে এগুতে বললো,,
— দেখ ফাজলামো করবি না কানের নিচে তিনটা লাগিয়ে তোর ফাজলামো বের করবো আজ আমি।
চুপ করে দাঁড়া, দাঁড়া বলছি।
খুশি সমানে ঢোক গিলছে এভাবে একদম দেয়ালে গিয়ে ঠেকলো আবারো হুট করে পিঠে চাপ পড়ায় আহ করে ওঠলো।
আরুশ খুশি বলে ধমকে একটানে নিজের বুকে ওর মুখ ফেললো। খুশি ওঠতে নিতেই আরুশ একহাতে কোমড় জরিয়ে আরেকহাতে ঘাড় ছেঁয়ে থাকা চুলগুলো সরালো। খুশি খামচে ধরলো আরুশের শার্ট হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
আরুশের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠছে বার বার।
না জানি তাঁর জন্য খুশির কতোটা আঘাত পেতে হয়েছে। অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাঁকে।
জামার চেইনে হাত দিতেই খুশি আঁতকে ওঠলো।
আরুশ বুঝতে পেরে নিচু গলায় বললো,,,
— জাষ্ট দেখবো চুপ কর না,, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্লিজ একটু শান্ত হয়ে থাক সোনা প্লিজ।
খুশি আবারো জরিয়ে ধরলো কাঁদতে লাগলো খুব।
আরুশ খুশির নরম ফর্সা পিঠের লালকালো ছাপ পড়া দাগ গুলো স্পষ্ট দেখতে পেলো তিনটে রেখা হয়ে গেছে। বোধহয় মারার পর কেউ ওষুধ ও লাগিয়ে দেয়নি। নিজের সন্তান কে এভাবে আঘাত কেউ করতে পারে??মায়া, ভালোবাসা কিচ্ছু নেই এদের??পরোক্ষনেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো,,
মায়া, মমতার কি বোঝে এরা নয়টা বছরতো তাকে ছাড়াই বাইরে ছিলো নিজের সন্তান অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে টাকার পিছনে ছুটেছে। আজ যখন সেই সন্তান তাঁদের থেকে পালিত মা কে বেশী চাইছে, অন্যকারো ভালোবাসা, মায়ার টান অনুভব বেশী করছে তখনি খুব গায়ে লাগছে তাই না মোশতাক তালুকদার??
“রক্তের টানের থেকেও আত্নার টান প্রখর হয়”
আর খুশির আত্মার সাথে মিশে আছি আমি আমার পরিবার। সেটাই হবে যেটা খুশি চাইবে ইয়েসস।
আরুশ চিৎকার করে ওঠলো চেইন লাগিয়ে খুশির কাঁধে ধরে চিৎকার করে বললো,,,
— তুই আর তালুকদার বাড়ি পা রাখবি না খুশি।
তোকে আমি ঐ হৃদয়হীন,নিষ্ঠুরদের কাছে আর রাখতে চাইনা খুশি।
.
খুশি সমানে কেঁদে চলেছে।
আরুশ খুশির দুগালে আলতো করে চেপে ধরে চুলগুলো পিছনে দিতে দিতে চোখের পানিও মুছতে লাগলো।
আরুশ আবারো বুকে চেপে নিলো খুশিকে।
— কি করে পারলো এটা কি ভুল করেছিস তুই।
শাস্তি দেওয়ার হলে আমায় দিতো আমি অপরাধী।
তোর তো কোন দোষ নেই এইটুকুন একটা মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলে?? তুই তো বাচ্চা খুশি তুই ভুল করলেও বাবা-মায়ের সেটা শুধরে দেওয়া উচিত।
আগে শোধরাবার চেষ্টা করতো তারপর শাসন করতো।
ছোট থেকে তুই আমার সাথে ওভাবেই মিশে থাকতিস তখন ওরা কোথায় ছিলো??
আমাদের মাঝে অনুভূতির সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ ওনারাই করে দিয়েছে কেনো রেখে গেলো তোকে এখানে। নিয়ে যেতো নিজেদের সাথে।
তাহলে না তোর সাথে দেখা হতো আর না আমাদের মাঝে কোন অনুভূতির সৃষ্টি হতো।
.
খুশির কাঁদতে কাঁদতে হেচকি ওঠে গেলো।
আধো গলায় বললো,,,
— আমি অবাধ্য হয়েছিলাম আরুশ ভাইয়া।
বার বার বায়না করছিলাম মামনির কাছে যাওয়ার জন্য তাই দাদী বাবাকে লাঠি এনে দিয়েছে শাসন করার জন্য।
আম্মু কতো কাঁদছিলো তবুও আম্মুকে আসতে দেয়নি। জানো,,,আম্মুকেও আমার কাছে আসতে দেয় না। সবসময় দাদী থাকে আমার কাছে।
আরুশ রেগে খুশির মুখোমুখি হয়ে বললো,,,
— ঐ মহিলাকে যদি আমি শায়েস্তা না করেছি তো ওর একদিন কি আমার একদিন।
খুশি,,,তুই ও বাড়ির কথা ভুলে যা আজ থেকে তোর একটাই বাড়ি সেটা হলো সরকার বাড়ি।
আজি বিয়ে করবো তোকে আমি।
তুই শুধু আমায় সাপোর্ট করে যা খুশি তুই তো আমায় চাস খুশি বল??
খুশি চুপসে গেলো অবাক চোখে তাকালো।
সেই চাহনি দেখে আরুশ রেগে বললো,,,
— কি চাস না?? নাকি বলবি আমার প্রতি তোর কোন অনুভূতিই নেই??
খুশি মাথা নিচু করে মুখটা কাচুমাচু করে বললো,,,
— এই কদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছে আরুশ ভাইয়া।
জানো বুকের ভিতর কেমন কেমন করে,,
কষ্ট মাখা ব্যাথা পেয়েছি, মাঝে মাঝে নিঃশ্বাসও নিতে পারিনি, দাদীর জন্য ফোনও করতে পারিনি আর কাঁদতেও পারিনি। আমার শুধু মনে হয়েছে আরুশ ভাইয়া আমার খোঁজ নিচ্ছে না কেনো??
আরুশ ভাইয়া কি আমায় ভুলে যাচ্ছে?? আরুশ ভাইয়াকি তাঁর সাতটা গার্লফ্রেন্ড কে আবার ফিরিয়ে নিয়েছে??
আরুশ খুশির কথা গুলো অপলক ভাবে চেয়ে শুনছিলো। তৃপ্তি সহকারে দেখে নিয়ে মুচকি হেসে আবারো শক্ত করে জরিয়ে ধরে স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।
মাথায় চুমু একে দিয়ে বললো,,,
— চল বিয়ে করে নেই। একবার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তোর ওপর ওদের কারো হক থাকবে না।
উপস,,,
খুশি মিনমিনে স্বরে বললো,,,
— কি হয়েছে,,,
আরুশ রাগি স্বরে সরিয়ে দিয়ে বড় বড় চোখ করে বললো,,,
— কি আর হবে পিচ্চি কে বিয়ে করতে গিয়েও তো বিপদে পড়তে হবে আমার। কেবলে ষোল বিয়ের বয়স হতে আরো দুবছর ও মাই গড।
এখন কি করবো আমি মাথার চুলগুলো খামচে ধরলো। খুশির দিকে মলিন চোখে চেয়ে বললো,,,
— শোন পুলিশ যদি তোকে প্রশ্ন করে তুই বিয়েতে রাজি ছিলি বলবি হ্যাঁ আর বলবি তুই আমাকে ভালোবাসিস।
খুশি অবুঝের মতো চেয়ে রইলো।
আরুশ পরোক্ষনেই বললো,,,
— ওহ নো তাও তো হবে না নাবালিকার কথার কোন মূল্য নাই ধূর বাল কে বলছিলো এতো ছোট হতে আরেকটু বড় হতে পারলিনা বিরক্ত ।
কোথায় পালিয়ে বিয়ে করবো বাচ্চা নিয়ে তালুকদার বাড়ি আক্রমণ করবো তা না বদমাইশ জানি কোথাকার। আমাকে বিপদে ফেলা চাপ দেওয়া এগুলো তো তোর জন্মগত স্বভাব। শয়তান ছেড়ি যাহ,,,
.
খুশির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
আরুশ অন্যদিক মুখ করে চিন্তা করছে এমন সময় আড় চোখে চাইতেই খুশির চোখের পানি দেখলো।
মুচকি হেসে খুশিকে টেনে নিয়ে বুকে জরিয়ে মাথায়,হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,,
— নো টেনশন সোনা সব ম্যানেজ করে নিবো।
ওয়েট আমি সব ব্যবস্থা করছি তুই চুপচাপ দাঁড়া একদম বের হবি না আমি না আসা অবদি।
আঙুল তুলে কথা গুলো বলেই আরুশ বেরিয়ে গেলো।
এদিকে তালুকদারের চ্যালারা খুশিকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। তাঁরাকেও আরুশের ফ্রেন্ড কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছে যাতে কেউ তাঁরাকেও খুঁজে না পায়।
আরুশের কয়েকজন বন্ধু দ্রুত মার্কেটে গিয়ে কালো বোরখা কিনে নিয়ে এলো।
আরুশ মাস্ক পড়া থাকায় কেউ তাঁর দিকে না লক্ষ করলো আর না চিনতে পারলো।
বাইক রেডি বাসা রেডি কাজি রেডি সব ঠিকঠাক এবার কোনে কে জাষ্ট নেওয়ার পালা।
বিয়ে করবে ছোটখাটো হলেও বেশ জমিয়েই বিয়ে করার প্ল্যান আরুশের । সব ব্যাবস্থা এমন ভাবে করে রেখেছে যে একটা কাক,পক্ষিও টের পাবে না।
দুইবছরের জন্য সব ব্যবস্থা কমপ্লিট বিয়ে সেরে ঢাকার বাইরে চলে যাবে দু-তিনবছর প্র্যাগনেন্সি রিপোর্ট সহ ফিরে আসার চিন্তা ভাবনা,,,
খুশিকে বোরখা পড়িয়ে কলেজের পিছন গেট দিয়ে নিয়ে বাইক স্ট্রাট দিলো আরুশ।
খুশির হাত পা কাঁপছে শ্বাস ফেলছে ঘন ঘন।
আরুশ বললো,,,
— এই রাক্ষসী অমন ঢং না করে শক্ত করে জরিয়ে ধর সব ভয় চলে যাবে আর পিছনে তাকিয়ে দেখ।
ভয়ের কোন কারন নেই একদম ফুল প্রিপারেশন নিয়ে আসছি।
খুশি চমকে গেলো পিছন তাকাতেই আরো দ্বিগুন চমকে গেলো।
দশ বারোটা বাইক প্রত্যেকের পিছনেই একজন করে মেয়ে। কয়েকজনকে চিনতে অসুবিধা হলো না।
সকলেই আরুশের বন্ধু,বন্ধুদের জি এফ আর বান্ধবী রা আছে।
.
খুশি পিঠে এক হাত দিয়ে রেখেছে।
গলা শুকিয়ে আসছে বার বার।
আরুশ স্পিড এতো বাড়িয়ে দিলো যে বাতাছে একদম গুটিয়ে গেলো খুশি। মুখটা কাচুমাচু করে ভয়ে ভয়ে পিছন থেকে একহাতে পেটটা জরিয়ে ধরলো।
আরুশ মুচকি হেসে ক্ষনে ক্ষনে ব্রেক কষতে লাগলো। আর খুশির নাক,মুখ পুরো শরীর ক্ষনে ক্ষনে আরুশের পিঠের সাথে লেপ্টে যেতে লাগলো।
আরুশ বাইকের আয়নাতে খুশিকে লজ্জা পেতে দেখে জোর গলায় বললো,,,
— ওয়ে হয়ে মেডাম,,,এখনি এতো লজ্জা তাহলে এরপর কি করবেন আপনি।
খুশি মুখ লুকিয়ে ফেললো পিঠের দিকে।
গাল ঠেকলো পিঠে আরুশ মুচকি হেসে আরো দ্বিগুন স্পিড বাড়িয়ে দিলো।
.
বেশ অনেকটা রাস্তা যাওয়ার পর ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। প্রায় সন্ধ্যা গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে আরো দশমিনিট লাগবে এই দশমিনিট তাঁদের বাইকে জার্নি এবং বাইকে বৃষ্টি বিলাস করতে হবে।
আরুশের বেশ ভালো লাগছে,,, পিছনের সবাই সমানে চিল্লাচ্ছে বেশ ইনজয় করছে সকলে।
আর খুশি বৃষ্টির পানিতে ভিজে একদম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে শীত লাগছে বড্ড শরীরটা ক্ষনে ক্ষনে শীতলতায় শিউরে উঠছে। আরুশের গায়ের শার্ট তাঁর পড়নে বোরখা ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে।
এমন সময় হঠাৎ জোরে ব্রেক কষতেই খুশি ভয়ে দুহাতে আরুশের পিঠে জরিয়ে ধরলো।
দুজনেই ভেজা শরীরের উষ্ণতা অনুভব করতে পারলো। চুপসে গেলো দুজনই,,,
এমন সময় পিছনের বাইক থেকে সমানে সিটি বাজানোর আওয়াজ ভেসে এলো।
চলবে……
আর এক পার্ট আছে অতীতের।
তারপর থেকে বর্তমান পাবেন সবাই?