অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৯

0
3979

অবশেষে_পরিণয় পর্ব_৯
#জান্নাতুল_নাঈমা

চিঠিটা পড়ার পর আরুশ যেনো দ্বিগুণ ঠান্ডা হয়ে গেলো। যেখানে তাঁর মাএাতিরিক্ত হাইপার হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো সেখানে তাঁর এতো শান্ত ভঙ্গিমা দেখে আয়েশা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন।
বন্ধু-বান্ধবরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি োশুরু করে দিলো।
আরুশ মৃদু হেসে চিঠিটা পরম যত্ন সহকারে চারভাজ করে প্যান্টের পকেটে রেখে দিলো।
আজাদ সরকার আরুশের কাঁধে হাত রেখে বললেন,,,

— বাড়ি চল বাদ দে এসব এটাই হওয়ার কথা ছিলো।

আয়েশা বেগমও বললেন,,,

— হ্যাঁ বাবা বাড়ি চল তোর দাদীও খুব চিন্তায় আছে।
যা হয়েছে হয়েছে বাদ দে এসব।

বন্ধুরা কিছু বলতে আসতেই আরুশ বললো,,,

— ব্যাস আর কেউ সান্ত্বনা দিতে এসো না।
আজব লোক তোমরা আরে তোমরা বুঝতে পারছো না পাগলীটা ভয় পেয়েই চলে গেছে এই এখন আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই সব ভয় হাওয়া।
বলেই হু হা করে হেসে ওঠলো আরুশ।
.
আয়েশা বেগম আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। আজাদ সরকার আয়েশা বেগমের কাঁধে ধরে বললেন,,,

— কেঁদো না আয়েশা তুমি কাঁদলে আমাদের ছেলেকে কে সামলাবে।

সতীশ এসে আরুশের কাঁধ চেপে ধরে বললো,,,

— আরুশ বাদ দে এসব খুশির বাবাকে তো জানিস।
এখন তাঁর মেয়ে তাঁর কাছে এখন তোর ক্ষতি করতে দুবারও ভাববে না। তাছাড়া আংকেলের একটা সম্মান আছে খুশির বাবা সেই সম্মানে আঘাত করবে। যদি খুশি তোর কাছে থাকতো তাহলে এতোটা সমস্যা হতো না।

পারভেজ বললো,,,

— কেমন মেয়ে রে বাবা,,, বাবার সাথে চলে গেলো।
আরে যাবিই যখন তো ঢং দেখিয়ে আসলি কেনো?
একটা ছেলেকে এইভাবে ধোঁকা দিতে লজ্জা করলো না। সবার কাছে দোষী কে হলো এখন এই আরুশই তো হলো নিজে তো খুঁকি সেজে বাবার হাত ধরে চলে গেলো যত্তসব বেহায়াপনা দেখিয়ে গেলো।
এক ঘরে একরাত একটা ছেলের সাথে কাটিয়ে নিজের শরীরের আশ মিটিয়ে বেরিয়ে গেলো।
.
আরুশের চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারব করলো রাগে পারভেজের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,,,

— ব্যাস খুশির ব্যাপারে আর একটা কথা বললে ঐ জ্বিব আমি টেনে বের করবো। তোর সাহস কি করে হয় ওর সম্পর্কে এতো বাজে বাজে কথা বলার। কতোটুকু জানিস তুই ওর ব্যাপারে। আমার খুশি নিষ্পাপ, সহজ,সরল একটা মেয়ে আর কতোটুকুই বা বয়স ওর। ওকে যে কেউ যেভাবে হোক ভয় দেখিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করতে পারে ঐ মোশতাক তালুকদারও করেছে। কিন্তু ওর এই ভয় দূর হয়ে যাবে যখন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আমি।
আর কি বললি চাহিদা মিটিয়েছে মানে??
কি বলতে চাস তুই,,,খুশির মনে কখনো এমন জঘন্য চিন্তা আসতেও পারে না আর না ওর সাথে আমার সেরকম কিছু হয়েছে। নিজের সাথে নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার খুশিকে গুলিয়ে ফেলবি না। আর মনে রাখিস এখানে সবাই যথেষ্ট ম্যাচিওর আর খুশি ম্যাচিওর নয়। এখানে আর পাঁচটা মেয়ে যতোটা স্ট্রং যতোটা সাহসী তাঁর থেকে দ্বিগুণ নরম এবং ভীতু খুশি। ষোল তে পা দেওয়া একটা মেয়ে কতোটুকুই আর বোঝে??ও বুঝতে পারেনি না বুঝে এমন একটা কাজ করে ফেলেছে তাই বলে আমিও ওকে এসবের জন্য ভুল বুঝে দায়ী করলে কেমন ভালোবাসলাম আমি?? এতো বছরে কতোটুকু চিনলাম আমি ওকে?? আমি ওকে পূর্ন বিশ্বাস করি নিজে থেকে ও আমায় ছেড়ে যায় নি বাধ্য হয়েছে।
আমি ওকে বিশ্বাস করি।
“একটা সম্পর্কে বিশ্বাস জিনিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটা সম্পর্ক ভাঙতে এবং গড়তে এই বিশ্বাসই সহায়তা করে ”
তোদের মতো আজ যদি খুশিকে আমি ভুল বুঝি অবিশ্বাস করি তাহলে আমাদের সম্পর্কের এখানেই ইতি ঘটবে। আর যদি ওর ওপর বিশ্বাস রেখে বুকে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে, সাহস নিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি তাহলে খুশি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে যাবে।

পারভেজকে ছেড়ে বাবা,মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

— তোমরা বাড়ি যাও বউ নিয়েই বাড়ি ফিরবো আমি।
আর এক মূহুর্তও দেরী না করে ছুটে বেরিয়ে গেলো আরুশ তালুকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে,,,

বন্ধু-বান্ধবরা লজ্জিত হলো সেই সাথে অনেকে প্রচুর টেনশনে পড়ে গেলো যে কি হবে এবার,,,
.
তালুকদার বাড়িতে আসতেই সকলে ঘিরে ধরলো আরুশ কে।খাদিজা বেগমের চোখের পানি এড়ালো না আরুশের চোখে।খুশির দাদি,বড় কাকা, আর বাবা সোফায় বসে আছেন।
আরুশ শান্ত গলায় মোশতাক তালুকদার কে বললেন,

— কাকা আমি খুশিকে পছন্দ করি। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই আপনি ওকে নিয়ে না এলে এতোক্ষণে আমাদের বিয়েটাও হয়ে যেতো। যেহেতু আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি সেহেতু আপনাদের উচিত এই সম্পর্ক টা মেনে নেওয়ার।
.
আরুশের কথা শেষ হতে না হতেই গালে সাজোরে এক থাপ্পড় বসালো সাকিব। আরুশ রক্ত চক্ষু তে সাকিবের দিকে তাকালো এই ছেলেটাকে ছোট থেকেই সহ্য করতে পারে না আরুশ।
সাকিব খুশির বড় ফুপুর ছেলে পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে থাকে। আরুশের মনে আছে সাকিব কয়েকবছর আগে তাঁর মায়ের ফোনে ফোন করে খুশিকে চায় কয়েকমিনিট কথা বলে রেখে দেয়।
তারপর থেকে রেগুলার ফোন করে খুশি কথা বলতে চাইতো না কেমন ভয় পেতো আরুশের তাই খটকা লাগে তাই আবারো যেদিন ফোন দেয় খুশিকে নিয়ে ছাদে গিয়ে লাউড দিয়ে খুশির কানে ফোন ধরে।
কেমন আছো,কি করো কথা শেষে নানারকম কৌশল খাটিয়ে বাজে ইনগিতে কথা বলা শুরু করেছিলো। তাঁর মধ্যে একটা ছিলো যেমন –
খুশি,,,, তুমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছো তাইনা,,,
খুশি নিশ্চুপ ছিলো আরুশ নিজেকে সংযত রেখে কথা গুলো শুনতে থাকলো।
সাকিব আবারো বললো,,,
“আচ্ছা খুশি তুমি কি ওড়না ইউস করা শুরু করেছো”??
খুশি তখন লজ্জায় ভয়ে আরুশের দিকে কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো।
সাকিব আবারো বলতে থাকলো,,,
” সেদিন তোমাকে বললাম তোমার পিরিয়ড হয়েছে কিনা এর উত্তর না দিয়েই কেটে দিলি কেনো”
আরুশ নিজের হাতটা শক্ত মুড করতেই খুশি বললো,,,
“সাকিব ভাইয়া আমি এখন ফোন রাখছি”
সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বললো,,,
“এই দাঁড়াও এখুনি কেটো না আমার উত্তর গুলো চাই আচ্ছা তুমি কি জামার নিচে বিশেষ কিছু ইউস করো”??
সাথে সাথে আরুশ ফোনটা নিজের কানে নিয়ে ইচ্ছেরকম গালি দিতে শুরু করলো।
সাকিব ভড়কে গিয়ে ফোন কেটে দিলো।
আরুশ রাগে খুশির গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে বললো,,,” তোকে এসব বলে আর তুই চুপচাপ শুনিস কাউকে কিছু বলিস না,আজ তোর একদিন কি আমার একদিন বলেই ইচ্ছে রকম লাঠি দিয়ে মারে আরুশ। এরপর আর কোনদিন সাকিবের সাথে কথা বলতে দেয় নি খুশিকে।
সেসব মনে পড়তেই আরুশের মাথা গরম হয়ে গেলো।
কলার টেনে ধরে বললো,,,

— তোর সাহস কি করে হলো আমায় গায়ে হাত দেওয়ার??
সাথে সাথে খুশির কাকাতো ভাইরা আরুশকে চেপে ধরলো।
আরুশ কলার ছেড়ে সকলকে ছাড়িয়ে নিজে সোজা হয়ে দাঁড়ালো এক চিৎকার দিয়ে ডেকে ওঠলো খুশি,,,,

মোশতাক তালুকদার বললো,,,

— এই ছোট লোকের বাচ্চা আমার মেয়ের নাম ধরে একদম ডাকবিনা। তোর সাহস কি করে হয় আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলার?? এই ছোটলোকের বাচ্চা কি আছে তোর আমার মেয়েকে ভালোবাসার মতো?? আমার মেয়েকে তোদের বাড়ি থাকতে দিয়েছিলাম বলে মাথায় চড়ে নাচবি,,, তোরা ভাবলি কি করে তালুকদারের মেয়ে তোর বউ হবে??

আরুশ নিজের হাত দুটো মুঠ করে ফেললো।
নিজের বাবা-মা কে তুলে অপমান সহ্য করতে না পেরে বললো,,,

— ব্যাস তালুকদার সাহেব ব্যাস ।
আপনাদের মতো টাকার বিচার করে আমি আর খুশি দুজন দুজনকে ভালোবাসিনি।ভালোবাসায় ছোটলোক বড় লোক বলে কিছু নেই তাই যদি হতো আপনার মেয়ে আপনার থেকে আমার বাবাকে বেশী শ্রদ্ধা করতো না। নিজের মায়ের থেকে আমার মা কে বেশী ভালোবাসতো না। এই বিলাসবহুল বাড়ি ছেড়ে আজাদ সরকারের ছোট্র কুটিরে সে এতো শান্তি পেতো না।
“আর টাকা-পয়সা, বিলাসবহুল বাড়ি,গাড়ি থাকলেই কেউ বড় লোক হয়ে যায় না। আর এসব যাদের থাকেনা তাঁরা ছোটলোক এটাও কোন আইনে লেখা নেই বা কোন হাদিসে লেখা নেই”
“কোটি টাকার মালিক হলেও অনেকের মন মানসিকতা ছোটলোকই থেকে যায়,আর এক টাকার মালিক হয়েও অনেক বড় মাপের মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়”
“ছোটলোক বড়লোক টাকার পরিমানে নির্ধারণ করে হয় না তালুকদার সাহেব”
আরুশের কথা শুনে খাদিজা বেগম বাদে উপস্থিত সকলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।

আরুশ নিজের রাগটা সংযত রেখে বললো,,,

— কাকা আমি খুশিকে খুব ভালোবাসি। বিশ্বাস করুন আমার কাছে খুশি অনেক হ্যাপি থাকবে,,, আমাদের বাড়িতে খুশি রাজরানী হয়ে থাকবে।

খুশির দাদি খ্যাক খ্যাক করে ওঠলো,,,

— এই ছোটলোকের বাচ্চা কি বললি রাজ্য ছাড়া রাজরানী করবি বড় বড় কথা। তোর ঐ বড় বড় কথা মেলা শুনছি আমি। বড় বড় কথা সবাই বলে কিন্তু কথা কাজে মিল রাখে জমিদারের বাচ্চা রাই।
এই দেখ আমি আমার কথা কাজে কেমন মিল রাখছি।

আরুশ কিছু বললো না চুপ্চাপ শুনতে লাগলো।
খুশির কাকা বললো,,,

— আরুশ ঝামেলা না করে বেরিয়ে যা। তুই যা বলছিস এটা কোনভাবেই সম্ভব না।
তোর একার চাওয়াতে কিছু হবে না খুশিরও যেখানে মত নেই সেখানে আমরা না করলেই কি বা হ্যাঁ করলেই কি।

আরুশ চমকে ওঠলো সারা শরীর ঘামতে শুরু করলো তাঁর। চিৎকার করে বললো,,,

— না এসব মিথ্যা খুশি এমনটা কোনদিন ও করবে না। আপনারা মিথ্যা বলছেন,,, কাকি তুমিও তো জানো খুশি আমাকে কতোটা ভালোবাসে। আর খুশিই বা কোথায় খুশি,,,,,

মোশতাক তালুকদার পান চিবুতে চিবুতে সোফা থেকে ওঠে আরুশের সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল ওঠিয়ে বললো,,,

— এই গলা নামিয়ে একদম গলা উঁচু করে কথা বলবি না। জমিদারের বাড়ি এসে তোদের মতো ঘরের ছেলে-মেয়েরা এমন গলা উঁচু করে কথা বলে না।

আরুশ অস্থিরতায় যেনো পাগল হয়ে গেলো।
ছটফট করতে শুরু করলো আরুশ,,,
সকলে তাকে বের করে দেওয়ার জন্য ওঠে পরে লাগলো। কিন্তু আরুশ বললো,,,
.
” খুশির সাথে কথা না বলে সে কোথাও যাবে না।
খুশি যা চায় তাই হবে। জাষ্ট খুশিকে তাঁর সামনে এনে দিতে হবে”
আরুশের কথা শুনে মোশতাক তালুকদার তাঁর মা কে ইশারা করলো। খুশির দাদি গিয়ে উপরের ঘর থেকে খুশিকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো।
খুশিকে আসতে দেখে আরুশের বুকে যেনো প্রান ফিরে এলো চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি আসতেই ডান হাতের পিঠে পানি মুঁছে অপলকভাবে চেয়ে রইলো সামনে আসা মানুষ টার দিকে।
.
সকলের মাঝে খুশিকে এনে দাঁড় করাতেই আরুশ ছুটে খুশির সামনে গিয়ে খুশির হাত চেপে ধরলো।

— এই খুশি তোর কোন ভয় নেই তুই এদের বল তুই আমাকে ভালোবাসিস তুই আমাকে চাস বল খুশি বল।

সাকিব এসে ছিটকে সরিয়ে দিলো আরুশেরথেকে খুশির হাত। খুশি চমকে গেলো,,,
আরুশ দূর থেকেই বললো,,,

— খুশি তুই ভয় পাস না তুই শুধু একবার সবাইকে বল তুই আমাকে ভালোবাসিস, আর আমাকেই চাস বল খুশি বল।

সকলেই খুশির দিকে চেয়ে আছে আরুশ অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে বুকের ভিতটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে তাঁর।
খুশি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,

— আরুশ ভাইয়া কি বলছো,,,আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমিতো তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করছিলাম তাই তোমাদের সাথে গিয়েছিলাম।
তুমি এসব পাগলামো করো না বাড়ি যাও তুমি।

আরুশ রেগে সামনে এসে ঠাশ করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
সাথে সাথে মোশতাক তালুকদার আরুশের কলার চেপে ধরলো। আরুশ এক ঝটকায় কলার ছাড়িয়ে খুশির কাছে গিয়ে কাঁধে ধরে বললো,,,

— দেখ খুশি ফাজলামো করবি না। ভালোয় ভালোয় বলছি সত্যি টা বল আমি সবটা বুঝতে পারছি।
আর এই চি,,,

আরুশ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খুশি আরুশের দু পা আঁকড়ে ধরলো।

সাথে সাথে খুশির দাদি সহ সকলে ধমকে ওঠলো খুশি বলে,,,

আরুশ রেগে খুশির কাঁধ ধরে ওঠাতে চাইলেও পারলো না। খুশি কাঁদতে কাঁদতে বললো-

— প্লিজ আরুশ ভাইয়া তুমি চলে যাও।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
আর যতোটুকু যা করেছি বলেছি না বুঝে ভুল করেছি। তাঁর জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আরুশ ভাইয়া আই এম সরি। চলে যাও তুমি। তুমি যদি একদিনের জন্য হলেও আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে এখান থেকে এখুনি এই মূহুর্তে চলে যাবে। আর তুমি যদি না যাও তাহলে আমি বিষ খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো।
ভালোবাসি না তোমায় আমি বলেই ওঠে দাঁড়ালো।
আরুশ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পুরো শরীর তাঁর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। অবাক চোখে শুনতে লাগলো তাঁর দিলের রানীর দিল ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার গল্প।

খুশি ওঠে গিয়ে সাকিবের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। আর বললো,,,

— সাকিব ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে,,, ভালোবাসে আমায়। সাকিব ভাইয়া আমার জন্য এই ডায়মন্ডের নেকলেস টা এনেছে দেখো বার্থডে টে গিফ্ট করার জন্য এনেছে কিন্তু আমার এতো ভালো লেগেছে যে আজি পড়ে ফেলেছি। কতো ভালোবাসে আমায় বলেছে বিয়ের পর আরো অনেক অনেক গিফ্ট দেবে আমায় অনেক দামী দামী। আর তুমি এতোগুলো বছর একসাথে থাকা শর্তেও এমন দামী কোন গিফ্টই দিতে পারোনি। শুধু কাঁচের কয়েকজোরা রেশমী চুড়ি ছাড়া। তোমাদের বাড়িতে তো এসি নেই,,,ছাদে সুইমিং পুল ও নেই সাকিব ভাইয়াদের ওসব আছে। আমাদের যা আছে ওদেরও সব আছে অনেক মিলে আমাদের সব কিছুর সাথে তোমাদের সাথে তো কোন কিছুই মেলে না।
আমি তোমার থেকেও সাকিব ভাইয়ার কাছে বেশী সুখে থাকবো। প্লিজ আরুশ ভাইয়া আমার সুখের জীবনে তুমি বাঁধা হয়ে এসো না।
.
আরুশ খুশির বলা কথাটায় কতোটুকু কান দিয়েছে বোঝা গেলো না। কিন্তু নিজে থেকে সাকিবের হাতটা এভাবে চেপে ধরায় আরুশের যেনো মাথা খারাপ হয়ে গেলো।
.
ছেলেকে হসপিটাল বেডে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো আয়েশা বেগম।
খুশিদের বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলো আরুশ মাঝ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে বসে।
জ্ঞান ফিরতেই চিৎকার, চেচামেচি শুরু করে,,, সেলাইন টেনে খুলে ফেলে মাথার ব্যান্ডেজ টেনে খুলতেই তাজা রক্তগুলো ঝড়ঝর করে পড়তে থাকে।
বেড থেকে নামতে গিয়েও পড়ে যায়। সকলে ধরাধরি করে ডক্টর এসে জোর করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়। আরুশ চিৎকার করে শুধু একটা কথাই বলতে থাকে।
“খুশি,,,তুই শুধু আমার। তুই এমনটা করতে পারিস না। ভালোবাসার মানুষ কে এভাবে আঘাত তুই করতে পারিস না খুশি, চলে আয় খুশি আমার কাছে চলে আয় বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেলো আরুশ”

আয়েশা বেগম আর এক মিনিটও চুপ করে বসে থাকতে পারলো না। সে যে মা সে কি করে চুপ করে থাকবে। ছেলের জন্য প্রয়োজন হলে তালুকদার বাড়ির সকলের পায়ে পড়বে সে।
সেই কতো ছোট বয়স থেকে ছেলেটা খুশির জন্য পাগল এতোগুলো বছর যাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচেছে যাকে আঁকড়ে বাঁচার জন্য নিজের স্বপ্ন গুলো ধীরে ধীরে বুকের ভিতর বুনে চলেছে তাকে শেষ মূহুর্তে এসে এভাবে হারিয়ে ফেললে ছেলেটা যে আর বাঁচবে না।
.
খাদিজা বেগম আয়েশা বেগমকে অনুরোধ সুরে বললো,,,

— আশা তুই দয়া করে চলে যা খুশির দাদি দেখলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।

আয়েশা বেগম সেসবের ধার না ধরে গলা ফাটিয়ে খুশিকে ডাকতে লাগলো,,,
খুশি উপর থেকে দৌড়ে নিচে চলে এলো আয়েশা বেগম কে দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরতে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। কারন খুশির দাদি এসেছে,,,

আয়েশা বেগম খুশির দাদির পায়ে পড়ে গেলেন।
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলেন।

— চাচী আমার ছেলেটাকে বাঁচান। আমার ছেলেটা হসপিটালে ভর্তি পাগলের মতো ছটফট করছে ছেলেটা আমার। খুশিকে একটা বার আমার সাথে যেতে দিন।

খুশির দাদি মুখে কুলো পেটে রইলেন একটা কথাও তিনি বললেন না।
আয়েশা বেগম পা ছেড়ে খুশির কাছে ছুটে গিয়ে আঁচল পেতে ভিক্ষা চাইলেন।

— মা রে একদিনের জন্যও যদি তুই আমাকে মা ভেবে থাকিস আমার ছেলের কাছে একটা বার যা।
আমি তোর কাছে ভিক্ষা চাইছি মা তুই আমাকে ভিক্ষা দে।

সাথে সাথে মোশতাক তালুকদার হুংকার ছেড়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলেন।
.
খুশি কাঁপা গলায় মামনি ডাকতেই দাদি এসে খুশিকে টেনে হিঁচড়ে উপরে নিয়ে গেলেন।
.
এদিকে খাদিজা বেগম বাদে মোশতাক তালুকদার সহ সকলেই মিলে অকথ্য ভাষায় অপমান অসম্মান করে বের করে দিলেন আয়েশা বেগম কে।
যাওয়ার আগে আয়েশা বেগম বলে গেলেন,,,
.
মানুষ হয়ে জন্ম নিলেই মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায় না।
আপনাদের মতো বেঈমানদের কাছে কোন মানুষ যেনো ভুলেও নিজেদের অসহায়ত্ব ঘোচাতে না আসে।
খাদিজা কে বলে গেলেন,,,
“তোর মেয়েকে রাজপুএ দেখে বিয়ে দিতে পারবি।
লাখ টাকা দিয়ে কোটি টাকার মানুষ কিনে দিতে পারবি কিন্তু মনুষ্যত্ব কিনে দিতে পারবি না”
.
আয়েশা বেগম তাঁর হওয়া অপমানের কথা ছেলে কে না জানালেও খুশির ভাই মিলন সবটা জানিয়ে দেয় আরুশকে। আর সেদিন থেকেই যেনো নতুন করে জন্ম হয় আরুশের।
সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে নিয়ে যায়।
মেজো ভাইয়ের আদেশে পুলিশের ট্রেনিং এ চলে যায় ছয় মাস পর জয়েন করে অফিসে। ঢাকা শহরে গতো পাঁচ বছরে দুবার এসেছিলো মায়ের অনুরোধে।
পাঁচ বছর পর ঢাকায় আসে আরুশ।
“কথায় বলে কায়া দেখলে মায়া বাড়ে”
এতোদিন দূরে থাকায় সেই মায়াটা,ভিতরের ক্ষতটা নিশ্চুপ হয়ে ছিলো। কিন্তু একি শহড়ে দুজন থাকায় সেটা আর নিশ্চুপ থাকতে পারলো না।
.
খুশি ভার্সিটি এডমিশন নেওয়ার পরই এনগেজমেন্ট হয় সাকিবের সাথে। বিজনেসের জন্য সাকিব এনগেজমেন্টের পরেরদিনই চলে যায় বিদেশ।
এতো বছর পর দেশে এসে খুশির সাথে দেখা করতে আসবে জানায় সব নিউজ খুশির ভাই মিলন আরুশ কে দিতেই আরুশ প্ল্যান করে কোনভাবেই সাকিবের সাথে একা মিট করতে দেবে না।
বিয়ে হয়ে গেলে তখন কোন মাথা ব্যাথা থাকবে না।
যেহেতু বিয়ে হয়নি সেহেতু এদের দুজনকে বিয়ের আগে শান্তি তে আর যাই হোক প্রেম করতে দেবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ সোজা গিয়ে এরেস্ট করে নিয়ে এসে গ্রামের দিকে চলে আসে।

.
খড়ের উপরই শুয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো খুশি।
আরুশ বাইরে বসে সমানে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে।
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো খুশির।
চোখ, হাত,পা বাঁধা থাকায় শুধু মুখ দিয়ে চিৎকার করে ডাকলো,,,

— কেউ আছো,,,

তখনি বাঁশের দরজা খোলার শব্দ কানে এলো।
একটা মেয়ে বলে ওঠলো,,,

— খুশি আর ইউ ওকে,,,ওয়েট এখনি তোমার সব বাঁধন খুলে দিচ্ছি।

চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
অতীত শেষ। কিছু আছে যেগুলো আরুশও জানে না।আরুশের সাথে আপনারাও জানবেন ইনশাআল্লাহ। আবারো চিঠি পাবেন সবাই আরুশও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here