তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৫

0
6233

তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৫
লেখকঃ আবির খান

জান্নাত আবিরের সাথে যেই নিচে আসে দেখে কয়েকজন লোক বসে আছে। তার মাঝে সত্যি সত্যি একজন কাজী বসে আছেন৷ জান্নাত হা করে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি আবির সত্যিই ওকে বিয়ে করতে যাচ্ছে? আবির জান্নাতকে পাশে নিয়ে দাঁড়িয়ে গলা উঁচু করে বলে,

– তোরা সবাই পরিচিত হ। ও হলো জান্নাত। মানে তোদের ভাবী। আর আমার হবু বউ। (খুব খুশি হয়ে)

জান্নাতের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে৷ আর এদিকে জান্নাত ভীষণ বড়ো সকে আছে। ওর কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না৷ সত্যি বলতে বিশ্বাস হওয়ার কথাও না। আবিরের মতো রিচ হ্যান্ডসাম বিজনেসম্যান কিভাবে ওকে বিয়ে করতে পারে! নাহ! জান্নাত কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এদিকে জান্নাত যখন নিজের মাঝে ডুবে ছিল আবিরের বন্ধুরা ওকে সালাম দেয়। আর জিজ্ঞেস করে ভাবী কেমন আছেন৷ কিন্তু জান্নাত যেন তা শুনতেই পায় না৷ তাই আবির ওকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে,

– এই কই হারালে? বন্ধুরা তোমাকে সালাম দিয়েছে উত্তর দেও।

জান্নাত ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে থতমত খেয়ে বলে,

~ এ! হ্যাঁ হ্যাঁ দিচ্ছি। অলাইকুম আসসালাম।
– ভাবী মনে হয় অনেক নার্ভাস। দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
– আসলে ও একটু আগে জেনেছে ওর বিয়ে তাই।
– ব্যাটা তুই ভালো হবি না। হুটহাট কাজ করিস সবসময়। ভাবীকে শান্ত কর আগে।

আবির জান্নাতের দিকে তাকায়। ওকে খুব অস্থির লাগছে। ও জান্নাতের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,

– তুমি বলেছিলে না তোমার কাছে আমি যা চাইবো তাই দিবে৷ আমি চাই এখন আজ এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমার স্ত্রী হয়ে থাকো। বলো রাজি আছো?

জান্নাত হা করে তাকিয়ে আছে। আবিরকে অনেক হাসিখুশি দেখাচ্ছে৷ এটা নিঃসন্দেহে সত্যিকারের খুশি। জান্নাত তা বুঝতে পারছে। আবিরের বন্ধুরা বলে উঠে,

– ভাবী তাড়াতাড়ি হ্যাঁ বলে দিন৷ না হলে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে৷ (রসিকতা করে)

জান্নাত আবিরের বন্ধুদের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আস্তে করে বলে,

~ রাজি।

আবির শুনতে পেয়েও না শোনার ভান করে বলে,

– কি কি শুনি নি। এই তোরা শুনেছিছ?
– না না দোস্ত।
– আবার বলো।
~ রাজিইইইই…(বলেই মুখ ঢেকে ফেলে হাত দিয়ে)

আবিরের বন্ধুরা আর কাজীসহ সবাই একসাথে মাশাল্লাহ বলে উঠে। আবির খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়৷ জান্নাতের কাছে এটা স্বপ্নের চেয়ে আর কিছুই মনে হচ্ছে না। আবির ওকে নিয়ে সবার সামনে বসে। তারপর বলে,

– নে এবার তোরা একে একে নিজেদের পরিচয় দে৷
– ভাবী আমি জামিল। ওর সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু। আমরা একসাথেই বড়ো হয়েছি।
– ভাবী আমি হৃদয়। আমি ওর কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড। আমার একমাত্র জানে জিগার বেস্ট ফ্রেন্ড ও৷
– আর আমি রাব্বি। আমি হলাম ওর ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। আমরা সবাই একসাথে ছিলাম ভার্সিটি থেকে। এখনো আছি একসাথে আমরা। এবং সামনেও থাকবো ইনশাআল্লাহ। আর আজ থেকে আপনিও আমাদের সাথে থাকবেন। কি বলিস তোরা?
– হ্যাঁ। আমাদের একমাত্র ভাবী বলে কথা।

সবাইকে থামিয়ে জামিল বলে উঠে,

– ভাবী আপনার সম্পর্কে আমরা সবই জানি। আবির আমাদের সব বলেছে৷ আপনি হয়তো ভাবছেন আবিরের মতো এত বড়ো একজন মানুষ কেন আপনাকে বিয়ে করছে? এটার উত্তর আমাদের সবার জানা। কিন্তু আপনাকে বলবো না৷ হাহা। আপনাকে নিজেই খুঁজে বের করতে হবে। কি বলিস তোরা?
– হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আমরা বলে দিলে আসল মজাটা থাকবে না।

জান্নাত লজ্জা পায় ভীষণ। জামিল আরও বলে,

– আবির ছোট কাল থেকেই এমন। হুটহাট করে এটা ওটা করে ফেলে। অবশ্য ওর সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হয় নি। বরং লাভই হয়েছে। তাই আপনাকে বলবো, ওর স্ত্রী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগটা হাত ছাড়া করবেন না। আমরা আপনার আপন ভাইয়ের মতো। আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনাকে আজ আবিরের হাতে তুলে দিব৷ ওহ সাথে হাসান আঙ্কেলও আছেন।

আবির খেয়াল করে জান্নাতের চোখ দিয়ে নিঃশব্দে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আবির জান্নাতের হাতে হাত রেখে অস্থির হয়ে বলে,

– একি! কাঁদছো কেন? তুমি বিয়ে করতে চাওনা আমাকে? না চাইলে কেউ জোর করবে না। তাও প্লিজ কান্না করো না।

জান্নাত মাথা নাড়িয়ে না না করে বলে,

~ আমি খুশিতে কাঁদছি। কখনো ভাবি নি এমন কিছু আমার সাথে হবে৷ আমার কাছে এগুলো স্বপ্নের মতো লাগছে। পৃথিবীতে এখনো যে এত ভালো মানুষ বেঁচে আছে আমার জানাই ছিল না। আমার মতো একটা অনাথ মেয়েকে আপনি অনেক কিছু দিয়ে ফেলেছে। সত্যিই আমি অনেক অনেক বেশি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।

আবির জান্নাতের চোখ মুছে দিতে দিতে বলে,

– বোকা একটা মেয়ে। আর কান্না করে না। সবাই দেখছে। এবার আসো দ্রুত শুভ কাজটা সম্পূর্ণ করি। আর যে তর সইছে না৷

জান্নাত লজ্জা পেয়ে হেসে দেয়। সাথে বাকিরাও। এরপর আর কি, আবিরের বন্ধুরা আর হাসান আঙ্কেল মিলে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেয়৷ মোনাজাত শেষে ওরা আজ থেকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়৷ জান্নাতের এখন বিশ্বাস হচ্ছে এটা সত্যি, এটা বাস্তব। কোন কল্পনা কিংবা স্বপ্ন না। ও আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবিরকে এর আগে এত খুশি কখনো দেখেনি জান্নাত। যে মানুষটা একটু আগেও পরপুরুষ ছিল সে এখন ওর স্বামী। ভাবতেই জান্নাতের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠছে। এখন আবির ওকে হাজারবার স্পর্শ করলেও কোন সমস্যা নেই। হবে কোন পাপ। কারণ ওরা এখন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের সমাজে বিয়ের আগেই অনেক ছেলেমেয়ে তাদের সীমালঙ্ঘন করে ফেলে। ফলাফল দাঁড়ায়, হয় মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়, নয়তো সারাজীবন দুজনের মাঝে অশান্তি লেগে থাকে। এই নোংরা সমাজকে তোয়াক্কা না করে আবির দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিয়ের আগে কখনোই সীমালঙ্ঘন করা ঠিক না৷ তাতে পরিবেশ পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন৷ একটা ছেলেকে অবশ্যই নিজের উপর কন্ট্রোল রাখা উচিৎ। আবির সেটাই করেছে। যার জন্য জান্নাতের চোখে আবিরের সম্মান আরও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আবির হাজারটা সুযোগ পেয়েও ওর সাথে সীমালঙ্ঘন করে নি। জান্নাতের মনে আবির বিশাল একটা বড়ো জায়গা করে নিয়েছে। সেই জায়গা পৃথিবীর আর কেউ নিতে পারবে না। জান্নাতের হৃদয়ের এক প্রান্ত জুড়ে ওর ছোট ভাই আর অন্য প্রান্ত জুড়ে শুধু আবির৷ আবিরের কথা ভাবলেই জান্নাতের ভিতরে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে৷ মনের ভিতরটা উত্তেজনায় অস্থির হয়ে যায়। ও মুচকি হাসি দিয়ে লজ্জামাখা মুখে আবিরের প্রাণবন্ত হাসিটা উপভোগ করতে করতে ভাবে, তাহলে এটা কি ভালবাসা? আবিরকে কি ও ভালবেসে ফেললো? উত্তরটা জান্নাতের কাছে এখনো কিছুটা অস্পষ্ট। তবে খুব দ্রুত ও আবিরের মনের রহস্য আর ওর মনের অস্পষ্টতা দূর করতে চায়। এটাই জান্নাতের এখন জীবনের মূল লক্ষ্য৷

আবির আর জান্নাতের বিয়ে উপলক্ষে সবার জন্য ভালো মন্দ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গল্প শেষে ওরা সবাই একসাথে খেতে বসে। আবির নিজ হাতে জান্নাতকে খাইয়ে দেয়৷ বেচারি লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে। অবশ্য আবিরের ভালোই লাগে এই লজ্জাসিক্ত মুখখানা দেখতে। খাওয়ার মাঝে হৃদয় বলে উঠে,

– ভাবীজান, আমাদের আবির কিন্তু খুব রোমান্টিক। একটু দেখেশুনে থাইকেন৷ হাহা।
– হ্যাঁ ভাবী, ওর কাছ থেকে আমরা সবাই রোমান্টিক ব্যাপারটা শিখেছি। এতই শিখেছি যে আমাদের একেকজনের দুই-তিনটা গার্লফ্রেন্ড এখন৷ হাহা। (রাব্বি)
– শালা চুপ কর। ওদের কথা বিশ্বাস করবা না জান্নাত। মিথ্যা বলছে ওরা।(আবির)
– তুই চুপ থাক। ভাবী আবির রোমান্টিক হোক আর যাই হোক ও কিন্তু অনেক ভালো। আমাদের এতগুলো গার্লফ্রেন্ড না থাকলেও আমাদের সবার একজন করে মনের মানুষ আছে। যেটা আবির নিজে ঠিক করে দিয়েছে। ওর পরামর্শ অনুযায়ী চলি বলেই আমাদের সবার সম্পর্কটা এখনো টিকে আছে। খুব শিগগিরই হয়তো খুব ধুমধাম করে আমরা বিয়ে করবো। আবির পাশে না থাকলে আমাদের পরামর্শ না দিলে হয়তো এই টানাপোড়ার যুগে আমরা অনেক ভুল করতাম। দিন শেষে মন ভেঙে বসে থাকতাম। কিন্তু আবিরের জন্য আমরা সবাই ভালো আছি। শুধু তাই না আমরা কিন্তু বিজনেস পার্টনারও। ওর জন্য আমরা সবাই অনেক ভালো আছি। তাই যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব কিন্তু আপনার। ওকে দেখে রাখবেন, ওর খেয়াল রাখবেন। এতদিন আমরা, হাসান আঙ্কেল এগুলো করতাম। আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব আপনার। ওর যন্ত্রণাগুলোও আপনার। ও আস…

আবির জামিলকে থামিয়ে গলা উঁচু করে বলে উঠে,

– এই অনেক বলেছিস থাম তো। ও এত কিছু কেন দেখতে যাবে। আমার খেয়াল আমিই রাখতে পারি। কথা না বলে সবাই পেট ভরে খা।
– খাচ্ছিত। তুই ভাবীকে খাওয়া আগে। আমরাও একটু শিখি। হাহা। (হৃদয়)

জান্নাত এখন কিন্তু লজ্জা পাচ্ছে না। কারণ ওর মনের মধ্যে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হলো, যন্ত্রণা! আবিরের আবার কিসের যন্ত্রণা? তারমানে আবিরের বন্ধুরাও জানে আবির কিছু একটা নিয়ে কষ্টে আছে। কিন্তু সেটা কি? কি এমন যন্ত্রণা আবিরের মাঝে লুকিয়ে আছে যেটা ওকে এতটা রহস্যময় করে তুলছে। জান্নাতকে যেভাবে হোক সবটা জানতেই হবে৷ আবিরের পরিবার এবং ওর কষ্টগুলো সম্পর্কে জানতে হবে৷ এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই আবিরের কানে কানে কি যেন বলছে। জান্নাত দূর থেকে তাকিয়ে সব দেখছে আর ভাবছে, কানে কানে আবার কি বলছে? কোন প্ল্যান করলো নাকি আবার? কারণ আবিরের মতোই আবিরের বন্ধুরা। বলা তো যায় না আবার কি না কি করে। জান্নাত একা দাঁড়িয়ে থাকায় হাসান আঙ্কেল ওর কাছে সে দাঁড়ায়। আর বলে,

– মা তোমার সাথে তো আমার ভালো মতো কথাই হলো না। তা তুমি খুশি তো?
~ আঙ্কেল ওনাকে পেয়ে যে খুশি না হবে তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই।
– একদম ঠিক বলেছো। আবির ছেলেটা অনেক ভালো। আমার নিজের হাতেই ও বড়ো হয়েছে। আমার চেয়ে ওকে আর কেউ ভালো চিনে না।

জান্নাত এই একটা সুযোগ পেয়েছে। তাই দেরি না করে জিজ্ঞেস করে,

~ আঙ্কেল একটা প্রশ্ন করি?
– অবশ্যই মা করো করো।
~ ওনার পরিবারের কাউকে দেখছি না যে? তারা কোথায়?
– তোমাকে আবির কিছু বলেনি?
~ না আঙ্কেল। সকালে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু ওনার মুখখানা মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেল। আপনি কিছু জানেন?
– সবই জানি মা৷ কিন্তু আবির যেহেতু তোমাকে বলেনি তাই আমিও বলতে পারছি না৷ নিশ্চয়ই কোন একটা কারণে ও তোমাকে বলে নি। অপেক্ষা করো ও নিজ থেকেই সব বলবে।
~ কিন্তু আঙ্কেল, প্লিজ একটু কিছু বলেন। আমার ভালো লাগছে না ওনাকে এভাবে ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে দেখে।
– শোনো, স্বামীর মনের কথাগুলো স্ত্রী যদি বের করতে পারে তাহলে তাদের সম্পর্ক কখনো ভাঙে না। তুমিও সে চেষ্টা করো মা। সহজলভ্য জিনিস কখনো সারাজীবন থাকে না। একটু তো অপেক্ষা আর কষ্ট করতেই হবে। তাহলে না সারাজীবন পায়ে পা মিলিয়ে দুজন হাঁটতে পারবে। বুঝেছো?

জান্নাত হাসান আঙ্কেলের কথার গভীরতা বুঝে। ও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। হাসান আঙ্কেল হাসি দিয়ে বলেন,

– আস্তে আস্তে সব জানবে৷ সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরো।
~ ঠিক আছে আঙ্কেল।

জান্নাত বুঝতে পারে এ যাত্রা শুধু ওর একার। কারণ এ পথ আবিরের মনের দিকে গিয়েছে। তাই শুধু ওকেই হাঁটতে হবে এই পথে আবিরের মন পর্যন্ত যেতে হলে। জান্নাতের ভাবনায় বিরতি টেনে আবির ওকে ডাক দেয়। জান্নাত আবিরের কাছে গেলে ওর বন্ধরা বলে,

– ভাবী আজ তাহলে আমরা যাই। আবার সময় করে একদিন আসবো। আর ভালো কথা, আবির বড়ো করে পার্টি দিবি কবে? নাকি এভাবেই থাকবে?
– দেখি আমি পরে ভেবে দেখবো। আপাতত কাউকে কিছু জানাস না৷ সময় হলে সব হবে। ওর ভাইটা আগে সুস্থ হোক৷
– বাহ! আদর্শ দুলাভাইয়ের পরিচয় দিলি। এরজন্যই তুই আমাদের সবার প্রিয়। ভাবী দেখছেন কি আচ্ছা পোলা। খেয়াল রাইখেন কিন্তু। (হাসি দিয়ে বলল)
~ জি অবশ্যই।

আবির ওর বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বেশ হাসিখুশি মনে বাসায় ঢুকে। ও দেখে জান্নাত একা বসে আছে। বাকিরা যে যার রুমে চলে গিয়েছে। আবির জান্নাতের কাছে এসে নিচে বসে ওর হাত দুটো ধরে বলে,

– কি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলে?

জান্নাত খুব লজ্জা পায়৷ আবিরের স্পর্শে ওর শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। নিজেকে সামলে মাথা নিচু করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ জি।
– ইসস! কি লজ্জা আমার লজ্জাবতীটার। লজ্জায় লাল টুকটুকে গোলাপ হয়ে যাচ্ছে।

জান্নাত মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে। আবির ওর হাতদুটো নিয়ে খেলতে খেলতে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

– আজ একটা বিশেষ রাত মনে আছে তো?

জান্নাত অবাক হয়। নিজেকে প্রশ্ন করে, আজ আবার কিসের বিশেষ রাত? আবির জান্নাতের মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝে ফেলে যে ওর মনে নেই। আবির উঠে দাঁড়িয়ে খপ করে জান্নাতকে কোলে তুলে নেয়৷ জান্নাত অবাকের সাথে লজ্জা পায়। আবির ওর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

– বোকাটা আজ আমাদের বাসর রাত ভুলে গিয়েছো?

জান্নাতের চোখগুলো দেখার মতো হয়। আবির ওকে দেখে হেসে দেয়। উপরে ওদের রুমে যেতে যেতে বলে, আজ ভাবছি ফোনটা একদম বন্ধ করে লুকিয়ে তারপর বেডে যাবো৷ ভালো হবে না? কেউ ম্যাসেজ দিয়ে আর ডিস্টার্ব করবে না। হাহা।

জান্নাত অসহায় ভাবে মুখ করে মাথা নাড়িয়ে না না করতে থাকে। আবির হাসতে হাসতে বলে,

– আজ আর কোন না চলবে না। আজ শুধু দুষ্টামি চলবে। হাহা৷

জান্নাত যে কি পরিমাণ লজ্জা পাচ্ছে তা বলার বাইরে। আবির ওকে নিয়ে রুমে ঢুকে নামিয়ে দেয়৷ জান্নাত দৌড়ে একদিকে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির আস্তে আস্তে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে জান্নাতের দিকে ঘুরে তাকায়। আর মিটমিট করে হাসতে থাকে। জান্নাত লজ্জায় আর ভয়ে আবিরের কাছ থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবির অট্টো হাসি দিয়ে বলে,

– ইতিহাসে আজ প্রথম বাসর রাতে জামাই তার স্ত্রীর সাথে হাডুডু খেলবে৷ জান্নাত, আজ তোমায় ছুঁতে পারলে কিন্তু তুমি আমার।

বলেই আবিরের হাসি। জান্নাতও হেসে দেয়৷ ও খুব মজা পায়। আবির ওকে হাডুডুর মতো করে ধরার চেষ্টা করে আর জান্নাত দৌড়ে পালায়। ওরা দুজনই খুব মজা পাচ্ছে। আবির ইচ্ছা করেই জান্নাতের সাথে মজা করছে। নাহলে এক সেকেন্ড লাগে না জান্নাতকে ধরতে৷ ওরা এভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে একসময় আবির জান্নাতকে ধরে ফেলে। ওকে জানালার পাশের দেয়ালটায় চেপে ধরে৷ দুজনই হাপিয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি জান্নাত। ও আবিরকে এত কাছে পেয়ে খুব লজ্জা পাচ্ছে। আর আবির জানালা দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোতে জান্নাতকে দেখছে। রুমে অল্প আলোর বাতি জ্বলায় জ্যোৎস্নার আলোটা বেশ লাগছে। সে আলোতে জান্নাতের মুখখানা অসম্ভব নেশাকাতর আর মায়াবী হয়ে উঠেছে। আজ জান্নাতের কিন্তু কোন অস্বস্তি কিংবা সংকোচ হচ্ছে না৷ কারণ আজ ওর স্বামী ওকে স্পর্শ করছে। আবির জান্নাতের দিকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে ছিল। ও মুখ নিচু করে থাকায় আবির ওর মুখটা তুলে ওর দিকে করে। জান্নাত চোখ বন্ধ করে আছে। আবির জান্নাতের নরম মিষ্টি ঠোঁটটার দিকে একবার তাকিয়ে ওর চোখ দুটোতে আলতো করে পরশ বুলিয়ে দেয়। স্বামীর স্পর্শ পেয়ে জান্নাত অজানা শিহরণে একটু কেঁপে উঠে। ও আস্তে আস্তে করে চোখ মেলে আবিরের দিকে তাকায়। দেখে আবির জ্বলজ্বল নয়নে ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আবির বলে উঠে,

– কোন এক নিশিরাতে তুমি ছিলে একদম অপরিচিতা,
আজ তোমায় বিয়ে করে বানিয়ে ফেললাম চিরচেনা।
তোমার এই জ্যোৎস্নাসিক্ত মুখখানা আর মিষ্টি ঠোঁট
আমায় প্রতিনিয়ত করছে পাগল যত যাই হোক।
সারাটা জীবন তোমার সঙ্গ চাই, জানি না পাবো কিনা
কারণ তুমিহীনা এই আমি কিছুই না৷

জান্নাত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আবির শুধু হাসছে৷ হাসতে হাসতে বলে,

– কেমন লেগেছে? মনের কথাগুলো কবিতার ভাষায় বলে দিলাম। অবশ্য জানি না এটা কবিতা হয়েছে কিনা। তবুও তোমার জন্য একটু চেষ্টা করা মাত্র। খুশি হয়েছো?

জান্নাত কিচ্ছু না বলে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। আবিরও তার ব্যতিক্রমে গেল না। দুজন দুজনকে অনুভব করছে। জান্নাত আস্তে করে বলে,

~ কাউকে মুহূর্তেই খুশি করতে পারা কিন্তু সবাই পারে না। তবে আপনি সেটা খুব ভালো পারেন। আপনি প্রতিনিয়ত আমাকে খুশি করেই যাচ্ছেন। শুধু খুশি না অনেক অবাক করেন আপনি আমাকে। বলেন তো আর কত কিছু লুকিয়ে রেখেছেন নিজের মধ্যে?
– সময় হলে সবই জানবে৷ এখন শুধু তুমি নামক এই মানুষটাকে নিয়ে থাকতে চাই। কে জানে কাল নাও পেতে পারি তাকে।
~ আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না৷ আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি আপনার পাশে থাকবো। শুধু আপনার হয়ে।
– তুমি তো ছাড়বেনা সেটা আমি জানি। কিন্তু যে তোমাকে ধরেছে সে যদি মাঝ পথে হারিয়ে যায়। তার কথা বললাম।

আবিরের কথাটা জান্নাতের কাছে কেমন অদ্ভুত আর রহস্যময় লাগে। আবির ঠিক কি বুঝাতে চাইলো? জান্নাত প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে আবিরের দিকে তাকায়। আবির মুচকি হাসছে সেই আগের মতোই। জান্নাত কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে নিলে আবির ওর নরম ঠোঁটটায় আঙুল রেখে ওকে থামিয়ে দেয়। জান্নাত কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবির আবার ওকে কোলে তুলে নেয়৷ জান্নাত বুঝতে পারছে না আবির কি করতে যাচ্ছে। ও বলে উঠে,

~ কই যাচ্ছেন আমাকে নিয়ে?
– আমার অনেক দিনের একটা ইচ্ছা পূরণ করতে।

জান্নাত ভাবছে, কি এমন ইচ্ছা আবিরের? ওর একটু ভয় ভয় করছে মনে মনে। আবির ওকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে…

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here