তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৬

0
6029

তুমি নামক যন্ত্রণা,পর্বঃ ০৬
লেখকঃ আবির খান

আবির জান্নাতকে কোলে তুলে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে চলে আসে। জান্নাত বুঝতে পারছে না এই রতে আবির ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। ও ভয়ে ভয়ে আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আবির জান্নাতকে নিয়ে নিচে এসে মেইন গেইটের সামনে ওকে নামিয়ে দেয়৷ তারপর দরজা খুলে ওর হাতটা ধরে হাঁটতে শুরু করে। জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আবিরের বাসার সামনে বিশাল বড়ো যে বাগানটা আছে ও জান্নাতকে নিয়ে সেখানটায় যায়। জান্নাত চুপচাপ আবিরকে ফলো করছে। বাগানের ভিতর দুজন হেঁটে যাচ্ছে। নিশি রাত। স্তব্ধ চারদিক। আশেপাশে কোথাও কেউ নেই। মাথার উপর সুন্দর চাঁদটা। আর মিষ্টি ঠান্ডা একটা বাতাস। এ যেন স্বর্গীয় জায়গা। আবির জান্নাতের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। জান্নাত আড় চোখে তাকিয়ে দেখে আবির খুব হাসিখুশি। ওরা কিছু দূর হেঁটে বাগানের ঠিক মাঝ বরাবর আসতেই জান্নাত থমকে যায়। খোলা আকাশের নিচে একটা সাদা দোলনা! জান্নাতের চোখে এটা আগে পড়ে নি। ও দেখে খুব আশ্চর্য হয়। আবির হাসি দিয়ে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ওর কাঁধে হাত দুটো রেখে বলে,

– আমার ইচ্ছা ছিল, কোন এক জ্যোৎস্না মুখর রাতে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কোলে মাথা রেখে শুয়ে দোল খাবো। তাই এই দোলনাটা বানিয়েছিলাম আমি। আজ আমার সেই ইচ্ছাটা তুমি পূরণ করবে জান্নাত।

আবিরের আবেগ মিশ্রিত কথাগুলো শুনে জান্নাতের হৃদয়ে অজানা এক অনুভূতি অনুভব হয়। ওর কথা গুলো যেন ওর হৃদয়কে স্পর্শ করে গেল। জান্নাত হাসিমুখে বলে,

~ আমি ধন্য হবো যদি আপনার এই মূল্যবান ইচ্ছাটা আমি পূরণ করতে পারি।

আবির জান্নাতের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে ওকে নিয়ে দোলনায় বসে। দোলনাটার ঠিক সম্মুখেই পূর্ণিমার বিশাল বড়ো চাঁদটা। তাই জ্যোৎস্নার আলোর নেই কোন কমতি। আবির জান্নাতের দিকে ফিরে বসে। জ্যোৎস্নার আলোতে একটা মেয়েকে যে কতটা সুন্দর লাগে তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। সে যেমনই হোক না কেন, কালো, শ্যামলা কিংবা ফরসা, জ্যোৎস্নার আলোতে তাকে রূপ নগরের রূপসী লাগবেই। আর যদি সে ভালবাসার মানুষটা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। তার চেয়ে সুন্দরী পুরো পৃথিবীতে আর কেউকে লাগবে না৷ আবিরের কাছেও ঠিক তাই লাগছে৷ জান্নাতের চেয়ে মায়াবী আর নেশাকাতর কেউ না৷ ও শুধু মন ভরে মুগ্ধ নয়নে জান্নাত বিলাস করছে। সে সাথে জান্নাতের লজ্জাসিক্ত মুখখানা ওকে আরও আলাদা করে দিচ্ছে সবার থেকে। আবিরের মনে হচ্ছে, জান্নাতকে দেখেই কয়েক জনম কাটিয়ে দিতে পারবে ও৷ জান্নাত মিটমিট করে হেসে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আমার খুব লজ্জা লাগছে৷ এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ।
– আমার চোখ আর মন যে আজ আমার কথা শুনছে না। তারা শুধু তোমাকে দেখতে চায়, তোমাকে অনুভব করতে চায়৷ তোমার স্পর্শে হারিয়ে যেতে চায়।
~ কেউ না করে নি কিন্তু।(খুব লজ্জা পেয়ে)

আবির জান্নাতের কোলে মাথা দিয়ে শুতে শুতে বলে,

– তাহলে অপেক্ষা কিসের আমার বউয়ের কোলটা দখল করে ফেলি।

জান্নাত হাসি দিয়ে আবিরের মাথায় হাত রাখে। ওর সিল্কি কালো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আবির জান্নাতের মুক্তার মতো চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাতও আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,

~ এই মানুষটা কত অদ্ভুত! কোথাকার এক সামান্য মেয়েকে নিশিকন্যা হওয়া থেকে বাচিঁয়ে তার ভাইকেও বাচিঁয়ে আজ একদম নিজের করে নিল৷ কেন উনি এমনটা করলো? কেন?

আবির জান্নাতকে বলে উঠে,

– তুমি হয়তো এখন ভাবছো কেন হঠাৎ করে তোমাকে আমি বিয়ে করলাম? সত্যি বলতে আমি তোমাকে হারাতে চাই না৷ আর আমার প্রতিটি স্পর্শের মাঝে তোমার জন্য সীমাহীন ভালবাসা লুকিয়ে আছে৷ তবে সে স্পর্শগুলো বিয়ে আগে অপবিত্র ছিল। তাই বিয়ে করে আমার প্রতিটি স্পর্শে যেন পবিত্রতা মিশে থাকে তাই দ্রুত তোমাকে বিয়ে করে ফেললাম।
~ আপনি চাইলে তো শহরের সবচেয়ে ধনী বাবার মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু আমাকেই কেন করলেন?
– জান্নাত, যারা সোনার চামুচে খেয়ে পরে বড়ো হয়, তাদের কাছে ভালবাসা, অনুভূতি কিংবা অনুভব এগুলো সব মূল্যহীন। তারা এসবের কিছুই বুঝে না। তোমার কাছে এই দোলনাটা যেমন একমুঠো আনন্দের কারণ হয়েছে তাদের কাছে কিন্তু এটা নিতান্তই হাস্যকর হতো। তারা বলতো থাইল্যান্ডের অমুক জায়গার সি বিচে এরকম অনেক দোলনা আছে৷ সেখানে হলে অনেক মজা হতো। তারা আমার অনুভূতিটা কখনো বুঝতো না। কিন্তু তুমি সেটা বুঝো। শুধু তাই না তুমি আমার সব কিছুই বুঝো। এটা আমি অনুভব করি। জানো ভালবাসা একটা অন্যরকম অনুভূতি। যেটা সত্যিকারের মানুষের কাছ থেকেই অনুভব করা যায়৷ আমি করেছি। তাই আর দেরি না করে আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি। দেখো আমি আজ কত হ্যাপি।

জান্নাতের চোখ দিয়ে অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আবির উঠে ওর আঙুল দিয়ে জান্নাতের চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে বলে,

– জানো তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো যন্ত্রণা।

জান্নাত অবাক হয়ে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ কিভাবে? কেন?
– কারণ আমার এখন সর্বদা ভয় হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলার। সবচেয়ে আপন এবং কাছের ভালবাসার মানুষটাকে আমি হারাতে চাই না৷ এক মুহূর্তের জন্যও না।

জান্নাত আর পারে না। আজ আবিরকে ও অনেক খুশি করতে চায়৷ আবিরের ঠোঁটটাকে জান্নাত নিজের করে নেয়৷ এটা কোন আবেগ না, এটা জান্নাতের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। আবিরও মনের সুখে জান্নাতকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে ওর মাঝে হারিয়ে যায়। জান্নাত যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। আবিরকে আজ ও ছাড়বেই না৷ আবির শুধু শুধু হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আবির কি জানে না জান্নাতের খুব কষ্ট হয় এ কথা শুনলে। তাই আজ ইচ্ছা মতো আবিরকে আদর করছে জান্নাত৷ জান্নাতের অবস্থা দেখে আবির আদরের মাঝেও হাসছে। জান্নাত একসময় বুঝে আবির হাসছে তাই ওকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রুকুচকে আবিরের দিকে তাকায়। আবির হাসতে হাসতে বলে,

– ইসসস! আমার বউটা তো আমার চেয়েও বেশি রোমান্টিক। হাহা।

বলেই আবির হেসে দেয়। জান্নাতও ভীষণ লজ্জা পেয়ে মিটমিট করে হাসে। আবির ওকে টান দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এবার বলে,

~ আরেকবার হারিয়ে যাওয়ার কথা বললে আপনার খবর আছে। হুহ।
– আচ্ছা আচ্ছা বলবো না। রাগ করে না৷
~ হুম। মনে থাকে যেন। আপনি শুধু আমার। আর বাকিটা সময় আমার হয়ে আমার পাশেই থাকবেন।
– আমিও তা চাই। কিন্তু কেউ যে চিরদিন থাকে না। এটাই ত বাস্তবতা।
~ আবার…
– হাহা। আচ্ছা চলো রুমে যাই। নাহলে তোমার ঠান্ডা লাগবে৷
~ চলেন।

আবির জান্নাতের কানে কানে বলে,

– আমার ইচ্ছাটা তো পূরণ হলো। এবার তোমার ইচ্ছাটা কি পূরণ করবো?
~ আমার আবার কিসের ইচ্ছা?
– রুমে চলো তারপর বুঝাচ্ছি।

আবির হাসে৷ জান্নাত বুঝেও না বুঝার ভান করে লজ্জা পেয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে। আবির ওকে নিয়ে আবার ওদের রুমে এসে পড়ে। দরজা দিয়ে জান্নাতকে খপ করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত অজানা অনুভূতিতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবির ওর কাঁধে পরম স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে বলে,

– ভালবাসি।

জান্নাত সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায়৷ আবিরের দিকে দ্রুত ফিরে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলে,

~ আবার বলেন।
– ভালবাসি।
~ আবার…
– ভালবাসিইইইই….(জান্নাতের গাল দুটো ধরে কপালে কপাল লাগিয়ে)

জান্নাত আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ সত্যি এত ভালবাসেন আমাকে?
– তোমাকে ঠিক ততটা ভালবাসি যতটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
~ আমিও আপনাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না বলেন?

আবির হেসে জান্নাতের এক গালে হাত রেখে ওর কান্নাসিক্ত চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে। জান্নাতের কাছে কেন জানি আবিরের এই হাসিটার রহস্যময় মনে হয়। ও চাচ্ছিল আবিরকে আবার প্রশ্নটা করবে৷ কিন্তু ও আবিরের স্পর্শের জন্য কিছু বলতে পারে না। জান্নাত সব ভুলে মুচকি হেসে চোখ দুটো আবার বন্ধ করে আবিরের উষ্ণ হাতের স্পর্শ অনুভব করছে। হঠাৎই আবিরের চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। জান্নাত তা দেখে না৷ আবির দ্রুত সেটা মুছে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জান্নাতের মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটটাকে নিজের করে নেয়। কারণ জান্নাতও তাই চাচ্ছিল। সেদিন রাতটা ওরা এভাবেই ভালবাসাময় সময় পাড় করে কাটিয়ে দেয়। আবির জান্নাতকে স্পর্শ করলেও পুরোপুরি ভাবে আপন করে নেয় নি৷ ও চায় জান্নাত আরেকটু সময় নিক। জান্নাতও এতে খুশি হয়েছে৷ আমাদের সমাজে অনেক ছেলেই আছে যারা মেয়েদের মন কিংবা ইচ্ছা বুঝে না৷ নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য মেয়েটার মানে স্ত্রীর ইচ্ছা কিংবা মনকে কোন পাত্তাই দেয় না৷ ফলে স্ত্রীটার মনে ক্ষোভ জমে যায় স্বামীর উপর। যার জন্য সুদূরে তাদের সম্পর্ক কিংবা বন্ধন ছুটে যায়। আবির সেটা চায় না। ও চায় জান্নাত যখন ওকে নিজ থেকে সম্মতি দিবে ও সেদিনই ওকে আপন করে নিবে৷ একজন সত্যিকারের পুরুষের দায়িত্ব এটাই। তার স্ত্রীর মনকে বুঝা এবং ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া। আবির সেটাই করেছে। সেদিন রাতটা ওদের দুষ্টামি আর গল্পে কেটে যায়।

পরদিন সকালে,

জান্নাতের কাছে আজকের দিনটা খুব স্পেশাল এবং অন্যরকম। কারণ আজ থেকে ও এই বাড়ির বউ। তাই খুব সকাল সকাল ওর ঘুমটা ভাঙলে আবিরকে কতক্ষণ মন ভরে দেখে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে পড়ে। আবির বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। জান্নাত উঠে ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে চলে যায়। আজ থেকে নতুন এক সংসার করবে ও৷ জান্নাত কিচেনে আসলে দেখে দুইটা মেয়ে কাজ করছে। ওকে দেখে তারা সালাম দেয়। জান্নাত সালামের উত্তর দিয়ে বলে,

~ তোমরাই কি রান্না বান্না করো সবসময়?
~ জি ভাবী।
~ ও। শোনো আজ থেকে আমি রান্না করবো। তোমরা আমাকে সাহায্য করবে শুধু। কারণ আমি তো জানি না কোনটা কোথায়।
~ ছিঃ ভাবী একদম না। ভাইয়া যদি জানে আমরা আপনাকে রাম্না করতে দিয়েছি আমাদের বাসা থেকে বের করে দিবে৷ আপনি ভাইয়াকে সময় দিন, আমরা আমাদের কাজ করি।
~ একদমই না। বাড়ির বউ হয়ে বসে বসে পা তুলে খাবো সেই ধরনের মেয়ে আমি না। তোমরা তো ছোট তাই জানো না, শোনো তাহলে, সব স্বামীই বিয়ের পর তার স্ত্রীর হাতের রান্না খেতে চায়। এতে মহব্বত বাড়ে, ভালবাসা বাড়ে।
~ আল্লাহ! ভাবী আপনি তো সত্যিই অনেক কিছু জানেন। আচ্ছা করেন রান্না। আমরা দুই বোন আপনাকে সাহায্য করবো।
~ থ্যাঙ্কিউ। তার আগে বলো তোমাদের নাম কি?
~ আমি মিনু আর ও রিনু৷
~ বাহ! খুব সুন্দর আর সহজ নাম। তা তোমাদের রান্না শিখিয়েছে কে?
~ আমাদের মা।
~ ওহ! সে কই এখন?
~ বাসায় আছে ভাবী। মাঝে মাঝে এসে সেও রান্না করে। আগে সেই রান্না করতো এখনো একমাস যাবত আমরা দুইবোন করি। মা একটু অসুস্থ ত তাই।
~ ওও। পড়াশোনা করো না তাহলে?
~ না না ভাবী করি করি। আবির ভাইয়া আমাদের দুজনরে সব বই কিনে দিয়েছে। একটা স্যারও রেখে দিছে। রাতে আমার বাসায় এসে পড়ায়। আমি ইংরেজিও কথাও বলতে পারি শুনবেন?
~ কি সত্যি? বলো দেখি।
~ I’m minu. I read in class four. Nice to meet you.
~ ভাবী ভাবী আমিও বলবো।
~ অবশ্যই বলো।
~ I’m rinu. I read in class five. I love cooking. Nice to meet you.
~ মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। অনেক ভালো।
~ সব সম্ভব হয়েছে আবির ভাইয়ের জন্য। তিনিই আমাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিছেন। ভাইয়া অনেক অনেক ভালো। আমাদের সবার খেয়াল রাখেন নিজের পরিবারের মতো।
~ হুম। তোমাদের ভাইয়া সত্যিই অনেক ভালো।

জান্নাত আবিরকে যত জানছে ততই অবাক আর মুগ্ধ হচ্ছে। আবিরের মতো সুন্দর ব্যক্তিত্বের ধনী মানুষগুলো হলে এই দেশটা কতই না সুন্দর হতো। জান্নাত হাসি দিয়ে বলে,

~ এখন থেকে আমি ফ্রী থাকলে আমিও তোমাদের পড়াশোনা করাবো। কি খুশি তো?
~ সত্যি ভাবী? অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
~ আচ্ছা এবার বলো কোনটা কোথায়। আজ তোমাদের সবার জন্য আমি নাস্তা বানাবো।

জান্নাত মিনু আর রিনুকে নিয়ে নাস্তা বানাতে লেগে যায়৷ এদিকে আবিরের আস্তে আস্তে ঘুম ভাঙে। চোখ না মেলেই জান্নাতকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত দিয়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু একি! জান্নাতকে খুঁজে পায় না আবির৷ ও সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে বিছানা থেকে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও জান্নাত নেই। পুরো রুম ফাঁকা। আবির ভয় পেয়ে যায়। জান্নাত গেল কই? ও বেড ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে ফাঁকা। এবার আবিরের মাথা নষ্ট হয়। ও দ্রুত নিচে চলে আসে। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখে জান্নাত কিচেন থেকে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে রাখছে। আবির জান্নাতকে দেখে ওর জানে জান আসে। জান্নাত টেবিলে খাবার রেখে দেখে আবির ওর কাছেই দ্রুত আসছে। জান্নাত একটা হাসি দিয়ে আবিরের দিকে তাকাতেই আবির এসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত পুরো অবাক হয়ে যায়। আবির অস্থির কণ্ঠে বলে,

– তুমি আমাকে না বলে নিচে এসেছো কেন? জানো তোমাকে পাশে না দেখে আমি কি ভয় পেয়েছি? উফ! আরেকটু হলে জানটাই বের হয়ে যেত আমার।

জান্নাতও আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ সংসারটা হাতে তুলে নিলাম। তাই সংসারের প্রথম দায়িত্ব রান্না বান্না সেটা করতেই আপনাকে রেখে নিচে এসেছি। আজ আপনাদের সবার জন্য আমি নাস্তা বানিয়েছি।

আবির মুহূর্তেই জান্নাতকে ছেড়ে অবাক হয়ে বলে,

– কিহ! তুমি নাস্তা বানিয়েছো মানে? মিনু রিনু কই? এই মিনু রিনু.৷

আবিরের ডাক শুনে ওরা দুজন দৌড়ে আসে। জান্নাত আবিরকে থামিয়ে বলে,

~ এই এই চুপ। আগে আমার কথা শুনেন। ওরা আমাকে রান্না করতে দিতেই চাচ্ছিল না। আমিই জোর করে করেছি। এখন থেকে শুধু বউয়ের হাতে রান্না খাবেন ঠিক আছে? আর কারো হাতে খেলে আমি রাগ করবো।

আবির হেসে দেয়। খুশি হয়ে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– আচ্ছা ঠিক আছে। এখন থেকে শুধু তোমার হাতের রান্নাই খাবো। প্রমিজ।
~ এই এই কি করছেন? মিনু রিনু আছে ছাড়েন।

আবির দ্রুত জান্নাতকে ছেড়ে ওদের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জায় বলে,

– আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তোমরা নাস্তা রেডি করো।
~ আচ্ছা আচ্ছা।

আবির দৌড়ে পালায় তাড়াতাড়ি। রুমে গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তার টেবিলে বসে। জান্নাত সবাইকে একসাথে বসিয়ে নাস্তা বেরে দেয়৷ মানে আবির, হাসান আঙ্কেল, মিনু রিনু আর আবিরের লোকরা। আবির সবার আগে মুখে দেয়। জান্নাত খুব চিন্তায় আছে। যদি মজা না হয় আবির খুব কষ্ট পাবে৷ আবির এক লোকমা খেয়ে দ্বিতীয় লোকমা খায়। তারপর কিছুক্ষণ চুপটি মেরে বসে ঠাস করে উঠে উপরে চলে যায়। জান্নাত সহ সবাই হা করে আছে। সবাই ভাবছে রান্না ভালো হয় নি। তাই তারাও খেয়ে দেখে। কিন্তু সবাই বলছে খুব মজা হয়েছে। তাহলে আবির চলে গেল কেন? জান্নাতের প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। ও পারে নি আবিরকে খুশি করতে। জান্নাত ঠিক যখনই কান্না করে দিবে আবির নিচে চলে আসে। এসে সোজা জান্নাতের কাছে গিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

– হাত পাতো।

জান্নাত অবাক হয়ে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ এখন কি হাতে মারবেন? এত পঁচা হইছে আমার রান্না?
– তুমি হাত পাতবে?

জান্নাত হাত পাতলে আবির সাথে সাথে ওর হাতে একটা ১০০০ টাকার বান্ডিল দিয়ে বলে,

– আজ আমার বাবা-মা থাকলে হয়তো খুশি হয়ে তোমাকে এটা দিত। তারা যেহেতু নেই তাই আমিই দিলাম। এটা তোমার এ বাসায় প্রথম রান্নার পুরষ্কার। আর কে বলল রান্না পঁচা হইছে। আমি তো খেয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কতক্ষণের জন্য।

জান্নাত হাসতে হাসতে কেঁদে দিয়ে আবিরের বুকে মুখ লুকায় লজ্জায়। আবির সহ সবাই হেসে দেয় ওদের পাগলামি দেখে। জান্নাত চোখ মুছে টাকার বান্ডিলটা নিয়ে সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়। আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অবশ্য কেউ নিতেই চেয়েছিল না। আবির ইশারা করায় সবাই অনেক খুশি হয়ে নেয়। সবাইকে টাকা দিয়ে জান্নাত বলে,

~ সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করলে আল্লাহ অনেক খুশি হন৷ আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সবাই অনেক অনেক বেশি খুশি হয়ে ওদের জন্য দোয়া করে৷ জান্নাত মন খুলে হাসে সবাইকে দেখে। আর আবির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে জান্নাতের দিকে। ওর মনে মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল। আজ জান্নাত সেটার উত্তরও দিয়ে দিল। আবির খুব খুশি হয় জান্নাতের উপর। আর মনে মনে বলে,

– জান্নাত খুব তাড়াতাড়ি একটা গিফট পাবে তুমি। অনেক বড়ো একটা গিফট। একটু অপেক্ষা করো।

এরপর ওদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই হাসিমুখে যে যার কাজে চলে যায়। জান্নাতও কাজ শেষ করে আবিরের রুমে যায়। রুমে ঢুকে দেখে আবির বারান্দায় কার সাথে যেন কথা বলছে। জান্নাত আবিরের কাছে যেতে নিয়েও থমকে যায়। কারণ আবির ফোনে বলছে,

– না দোস্ত এখনো বলি নি। ও জানলে খুব কষ্ট পাবে৷ কিন্তু আমি ওকে কষ্টে রেখে যাবো না। আমি আরেকটা সিদ্ধান্ত নিছি দোস্ত। খুব বড়ো একটা সিদ্ধান্ত। তোকে পরে আমি জানাবো নে৷ জান্নাত শুনে ফেললে সমস্যা হবে৷ রাখি ভালো থাকিস৷

জান্নাত চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে খুব ভয়ে ভাবছে,

~ আবির ওর কাছে থেকে কি এমন লুকাচ্ছে যা ও জানলে ও অনেক কষ্ট পাবে? আর কি এমন সিদ্ধান্তই বা নিয়েছে আবির?

জান্নাতের খুব ভয় হচ্ছে। হঠাৎই আবির বারান্দা থেকে এসে দেখে জান্নাত অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আবির ঘাবড়ে গিয়ে বলে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here