ডেভিলস গার্ল,৩য় পর্ব

0
2747

ডেভিলস গার্ল,৩য় পর্ব
Tasmima Yeasmin

বাস চলছে মধুপুরের উদ্দেশ্যে। হাসিব খেয়াল করলো জামাল গম্ভীর মুখে বসে আছে কোন কথা বলছেনা। হাসিব নিজে থেকেই জামালকে জিজ্ঞেস করলো কি হলো জামাল। এরকম চুপচাপ কেন তুমি?
এমনিতেই। জামালের নির্লিপ্ত উত্তর। আচ্ছা তুমি কি জানো আমরা কোথায় যাচ্ছি? হাসিব আবারো জিজ্ঞেস করে।
-নীলা আপার বাড়িতে।
হাসিব আবার বলে নীলার সাথে পরিচয়টা খুব সাধারনভাবে হলেও মেয়েটা অদ্ভুত ছিলো।
-তাহলে তাকে বিয়ে করলেন কেন?
সে এক লম্বা কাহিনী। আমি নীলাদের গ্রামে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানেই ভালো লেগে যায় নীলাকে। তারপর এক বছর রিলেশনের পর আমরা বিয়ে করি। নীলাদের পরিবারটা অন্যরকম ছিলো। ওর পরিবারের সবাই কালোজাদু করতো তাই অনেকটা একঘরে ছিলো। নীলা অবশ্য কালোজাদু শিখে থাকলেও কখনো চর্চা করতো না। নীলাকে বিয়ে করে ওর পরিবারের এসব থেকে বের করে আনলাম। আর ঐ গ্রামেই থাকতে লাগলাম। আমার বাসায় কেউ জানতোনা বিয়ের কথা এবং এখনো জানেনা। আর দশটা সংসারের মতোই আমাদের সংসারও ভালোই চলছিলো। একদিন একটা কাজে শহরে আসতে হলো দুইদিনের জন্য। ফিরে দেখি বাড়ির সামনে অনেক ভীড়। ভেতরে ঢুকে দেখি নীলাকে মাটিতে শোয়ানো। পাশে তার বাবা মা বসে কাঁদছে। আমি মূহুর্তেই সেন্সলেস হয়ে গেলাম। দুদিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। জানলাম নীলার সৎকার হয়ে গেছে। ও হ্যা নীলা হিন্দু ছিলো। সন্তানের জন্য নীলার মনে তীব্র বাসনা থাকলেও আমাদের কোন সন্তান হচ্ছিলো না। তার জন্য নীলা আত্মহত্যা করলো। তারপর আমি সেই অভিশপ্ত গ্রাম থেকে চলে আসি। আর সাথে নিয়ে আসি নীলার কিছু স্মৃতি। আর নীলার হলুদ ঠোটের মায়াবী হাসি। হাসিব এক নিঃশ্বাসে সব বলে গেলো। এরপর জানালার দিকে তাকালো। ওর এখন ভীষন দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে নীলাকে। জামাল হাসিবের অবস্থা বুঝতে পেরে একবোতল পানি এগিয়ে দেয় হাসিবের দিকে।
.
.
.
ডক্টর হাসিব আসলেই কাজের আবিদ দেখেছো আমাদের রুহি কেমন সুস্থ হয়ে উঠেছে। রিমি আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে।
হু সাদেক ভাই ঠিকই বলেছিলো। তাছাড়া এত বড় ডাক্তার তো আর এমনি এমনি হননি। আবিদ উত্তর দেয়।
দরজার কাছ থেকে বাবা মায়ের কথাগুলো শুনছিলো রুহি। এবার সাবধানে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। যাক বাবা, বাবা মা আর আমাকে সন্দেহ করবে না। আর একুশ দিন পর তার সাথে দেখা হবে। বিড়বিড় করে রুহি। রুহি ওর ওয়ারড্রবের নিচের ড্রয়ার থেকে কাপড়চোপড়ের নিচ থেকে একটা পুটলি বের করে। ফল কাটার ছুরি আর লাইটার আগেই রুমে এনে রেখেছে। এবার নিজ রুমের মাঝবড়াবড় একটা ফ্লোরে একটা সার্কেল আঁকে। এবার একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে লাইট বন্ধ করে দেয়। সার্কেলের চারপাশে চারটা মোম জ্বেলে নেয়। পুটলিটা খুলে এবার চারটা হাড় একটা মাথার খুলি আর একটা নীল কাপড়ের টুকরো বের করে। হাড় চারটা চারদিকে রেখে মাঝখানে খুলিটা রাখে। এবার ফল কাটার ছুরিটা দিয়ে নিজের হাতটা যখনি কাটতে যাবে বাইরে টুকটুক করে শব্দ হয়। বাবা মা না রুহি বুঝে নিয়েছে। কারন ওকে সাজেস্ট করা ট্রিপটিন বাবা মাকে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছে। তারা নিশ্চয়ই এখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন। রুহি নিজের হাত কেটে কয়েকফোঁটা রক্ত রুমালের উপর ফেলে এবং একটা মোমবাতি দিয়ে আগুন জ্বেলে দেয়। রুহি পুটলি থেকে বইটা আর বের করে না কারন মন্ত্রগুলো ওর মুখস্থ হয়ে গেছে। রুহি বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে থাকে। আমি জানি তুমি এখানেই আছো। দেখা দাও দেখা দাও আমাকে। রুহি কাতর কন্ঠে বলতে থাকে। হঠাৎ রুহির নাকে একটা পোড়া ঘ্রান আসে। আগুনের ধোয়া থেকে একটা অস্পষ্ট অবয়ব বের হয়ে আসে। রুহি খুশি হয়ে বলে তুমি এসেছো। তোমার কাছে আমার অনেক কিছু জানবার আছে।
.
.
.
হাসিব আর জামাল রাত দশটা নাগাদ মধুপুর পৌঁছে যায়। এরপর আরো দেড় ঘন্টা লাগে নীলাদের বাড়ি আসতে। যদিও হাসিব অনেক বছর পরে এ গ্রামে এসেছে কিন্তু রাস্তাঘাট ওর মুখস্ত। চাদেঁর আলোয় চারিপাশ দেখা যাচ্ছে। হাসিব লক্ষ্য করলো ভীতু জামালটাও এই ভুতুড়ে রাস্তায় কোনো ভয় পাচ্ছে না। হাসিবের এখনো বিশ্বাস হতে চায় না একটা বাচ্চা মেয়ের কথার উপর ভিত্তি করে এতদূর চলে এসেছে। জীবনটা আসলেই অনেক অদ্ভুত। কখন কি ঘটবে কেউ বলতে পারে না।
হাসিব জামালকে নিয়ে লোহার গেট পেরিয়ে নীলাদের বাড়িতে ঢুকে। চারপাশে ভীষন জঙ্গল আর গাড় অন্ধকার। দূর থেকে পেচার করুন সুর শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মৃত্যুপুরী হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেদিকে তাকালে যে কারোরই বুক কেঁপে উঠবে। হাসিব এবাড়িটায় খুব কমই এসেছে। দরজার সামনে এসে থমকে যায়। দরজা ভিতর থেকে আটকানো। হাসিব যখনই দরজায় নক করতে যাবে ঠিক তখনই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। হাতে হ্যারিকেন। সাদা সাদা চুল দাড়ির এক বৃদ্ধ লোক। হাসিব চিনতে পারলো লোকটা নীলার বাবা। নীলার বাবা বলে উঠলেন আমি জানতাম তুমি আসবে। সবকিছু জানার জন্য হলেও তোমাকে আসতেই হবে। কিন্তু সবকথা সকালে হবে এখন খেয়ে বিশ্রাম করো। নীলার বাবা এটুকু বলে অন্যরুমে চলে গেলো। এবার এলো নীলার মা। ভালোমন্দ দুইটা কথা বলে খাবার দিয়ে গেলো। সবাই কিরকম অদ্ভুত আচরণ করছে। হাসিব আর জামাল খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। যেহেতু অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে বলে দুজনই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম ভাঙার পরে হাসিব দেখে একটা বহু পুরানো খাটে শুয়ে আছে। চারদিকে ময়লা। দেয়ালে মাকড়সার বাসা। রুমে একটা বিশ্রী গন্ধ একদম বমি আসার মত অবস্থা। ভাঙা একটা জানালা থেকে আবছা আবছা আলো এসেছে। পাশে জামাল নেই। হাসিব শিউরে উঠে। স্বপ্ন নয়তো। নিজেকে চিমটা কেটে দেখে স্বপ্ন নয়। হাসিব চট করে উঠে সবগুলো রুম দেখে নিলো। কই গেলো জামাল আর নীলার বাবা মা। হাসিব একদৌড়ে ঘর থেকে বাহিরে আসে। জামালের নাম্বার ডায়াল করে কল দেয়। জামাল স্বাভাবিক ভাবেই বলে সে ঢাকাতে হস্পিটালে আছে। আসার পথে ছিন্তাইকারীরা চাকু মেরে দিয়েছে। পাক্কা একদিন পর জ্ঞান ফিরেছে। জানতে চায় হাসিব এখন কোথায়? ও কি মধুপুর গিয়েছে?
হাসিবের কান দিয়ে আর কোন কথা ঢোকে না। এই একটা দিন তার সাথে কে ছিলো। নীলার বাবা মা ওবা কোথায় গেল। সবথেকে বড় কথা কাল রাতেও এঘর বাসযোগ্য ছিলো। এখন দেখে মনে হচ্ছে বহুদিন এখানে কেউ থাকেনি। ওকি ঘুমের মাঝেই কোথাও চলে এলো। বাইরের কড়া রোদ তো তা জানান দিচ্ছে না। সবই কি তাহলে দুঃস্বপ্ন। হাসিব নীলাদের বাড়িটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here