চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ৪ (অন্তিম)

1
7591

চন্দ্রাকাহিনী,পর্ব ৪ (অন্তিম)
Tasmima Yeasmin

পাতালপুরীরর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে চন্দ্রা হাতের আংটিটায় ঈশারা করে। দিঘির নিচে হয়ে যায় এক রাস্তা। রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল একটা দরজা আর দরজার সামনে একটা বোয়াল মাছ। চন্দ্রা ভেবেছিল মাছটা ওর ক্ষতি করতে চাইবে। কিন্তু না মাছটা সরে গিয়ে ওকে জায়গা করে দিল। চন্দ্র দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেল। ভিতরে একটা পুরানো লোহার সিন্দুক। সিন্দুকে হাত দিতেই সিন্দুকটা খুলে গেল। ভিতরে মনিটা হাতে নিতেই চন্দ্রর সারা শরীর থেকে একটা নীল আভা বের হল। মনিটা বাম হাত ছোয়াতেই নিজ থেকে সেটা আংটির নীল পাথরের সাথে মিশে গেল। চন্দ্রা দিঘীর পাড়ে উঠে এলো। এবার সময় নাগপুরিতে যাওয়ার।
ওদিকে চার্লস সেই ভ্যাম্পায়ারকে হত্যা করে সেই বটগাছের নিচে বসে আছে কারন ও ভিতরে ঢুকতে পারেনি।
চন্দ্রা এসে নাগপুরীর সামনে দাড়িয়েছে। ক্রোধে ওর দুচোখ থেকে আগুন ঝড়ছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক ইচ্ছাধারী নাগ যেটা ওর মায়ের রূপ ধারন করেছিল।
-এসো নাগরাজকন্যা চন্দ্রা নাগপুরীতে তোমাকে স্বাগতম।
-হ্যা আর এসেছি তোর ধংস নিয়ে
-ধংস? তুমি হবে আমার নাগরানি বলে ইচ্ছাধারি নাগ যেই চন্দ্রাকে ছুতে গেল চন্দ্রা ধোঁয়াশা হয়ে গেল।
চন্দ্রাকে দেখতে না পেয়ে নাগ এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু হাসির শব্দ শুনতে পেল। চন্দ্রা হাত বাড়াতেই তার হাতে একটা তলোয়ার চলে এলো আর সেটা দিয়ে ইচ্ছাধারী নাগ কে দুটুকরা করে ফেললো। ভিতরে ঢুকে দেখলো তান্ত্রিক যজ্ঞ করতে বসেছে আর দুজন বীণ বাজাচ্ছে।
নাগকন্যা চন্দ্রাকে ধরা এত সহজ।
চন্দ্রার কন্ঠ শুনে তান্ত্রিক চোখ খুলে বলে,
– তুই তাহলে এসেছিস?
-হ্যা। এবার তোকে বুঝিয়ে দিবো চন্দ্রা কি জিনিস।
বলেই হাসতে হাসতে চন্দ্রা চোখের ইশারায় তান্ত্রিক এর সাথের দুই সাপুড়েকে মেরে ফেলে। তান্ত্রিক কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়,
-মনি, তুই নাগমনি কোথায় পেলি?
-তুই কি ভেবেছিস মনি ছাড়াই আমি এখানে আসবো। এবার তোকে মেরে আমার বাবা মা হত্যার প্রতিশোধ নেব। দেখ তুই নাগিনের ছোবল কত বিষাক্ত। চন্দ্রা তরবারি মুখে ছুইয়ে সমস্ত বিষ ঢেলে দিয়ে তান্ত্রিকের বুক বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। আজ ওর বাবা মা মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছে। চন্দ্রা নাগপুরীর চারিধারে তাকিয়ে দেখতে পায় অসংখ্য স্বর্ণের মোহর, মনি মুক্তা পড়ে আছে। এগুলোর জন্যই ও বাবা মাকে হারিয়েছে। যদি এসবের বিনিময়ে হলেও ওর বাবা মাকে ফিরে পেত।
চন্দ্রা জানে তা সম্ভব নয়। দু ফোটা চোখের জল ফেলে ও নাগপুরী ত্যাগ করলো। নাগপুরী দিয়ে বের হতেই দেখলো দূরে একটা গাছের নিচে কে যেন গুটিসুটি মেরে বসে আছে। চন্দ্রা বুঝতে পারলো ওটা কে। একদৌড়ে কাছে গেল চন্দ্রা।
-চার্লস তুমি এখানে?
-চন্দ্রা তুমি ফিরে এসেছো? সব ঠিকমত করতে পেরেছো তো।
-হ্যা কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?
-আমি তোমার আর ফাদারের সব কথা শুনেছি চন্দ্রা। তুমি নাগকন্যা
– হ্যা। আর আমি প্রতিশোধ নিয়েছি আমার বাবা মা হত্যার।
-তুমি নিশ্চই জান আমি ভ্যাম্পায়ার? এখন নিশ্চয়ই আর আমাকে ভালোবাসবে না।
-আমি তোমাকে ভালোবেসেছি চার্লস। তোমার পরিচয়কে নয়।
-সত্যি চন্দ্রারানি তুমি আমার থাকবে তো?
-হ্যা গো হ্যা.।
চন্দ্রার দুচোখ টলমল করছে। চাঁদের আলোয় চন্দ্রাকে পরীদের মত লাগছে। চার্লস আবার নতুনকরে চন্দ্রার প্রেমে পড়ে।
-চন্দ্রারানী
-হু বলো
-এখনো একটা কাজ বাকি আছে?
-কি কাজ?
-তোমার বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল।
-কি বলছো এটা চার্লস? তুমি কি জানো….
-হ্যা আমি সব জানি। আমি যে কয়টা দিন বেচে থাকবো তোমার সাথেই থাকতে চাই চন্দ্রা।
চন্দ্রা চুপ করে থেকে ভাবতে থাকে কি করবে।
-আচ্ছা চার্লস চল আশ্রমে গিয়ে ফাদারের সাথে দেখা করে আসি
-ঠিকাছে চন্দ্রারানী চল।
আশ্রমে এসে চন্দ্রা ফাদারের সাথে দেখা করে নিজের কুটিরে চলে যায়। চার্লস ঘরের বাইরে থেকে চন্দ্রাকে ডাকতে থাকে। কারন ভিতরে যাবার শক্তি চার্লস এর নেই।
-চন্দ্রা চলে এস আমাদের ঘরে ফিরে যাই।
-তুমি যাও চার্লস আমি যাবোনা।
-এর মানে কি?
-আমার সন্তান কে আমি মেরে ফেলতে পারবোনা।
-কিন্তু চন্দ্রা এ সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে তুমি মারা যাবে।
-আমি আমার সন্তানের মাঝেই বেচে থাকবো। তুমি চলে যাও।
চার্লস অনেক চেষ্টা করে চন্দ্রাকে ফিরিয়ে নিতে কিন্তু চন্দ্রা চার্লসের সাথে যায়নি।
বাধ্য হয়ে চার্লস একাই ফিরে যায়। মাঝে মাঝে চার্লস এসে চন্দ্রাকে দেখে যায় কিন্তু তা দরজার বাইরে থেকেই।
ভ্যাম্পায়াররা মাঝে মাঝে আসে চন্দ্রাকে আক্রমণ করতে কিন্তু চন্দ্রার কুটিরেই তারা কেউ প্রবেশ করতে পারেনা কারন কুটিরের দরজায় একটা ক্রুশ ঝুলানো। ভ্যাম্পায়াররা আসলে চার্লস নিজেকে লুকিয়ে রাখে গহিন অরন্যে। এর কিছুদিন পর জন্ম হয় তোর আর সাথে সাথেই তোর মা মারা যায়। তোর বাবা তোর মা মারা যাওয়ার পরে বহুদুর চলে যায়।
এতক্ষন ফাদারের কাছ থেকে নিজের জন্মের ইতিহাস শুনছিল নাগভ্যাম্পায়ার কিরন। আজ ওর আঠারো বছোর পূরন হয়েছে। মা চন্দ্রার মতই কিরন ও ফাদারের কাছে বড় হয়েছে। ডানপাশের যে ছোট্ট কুটিরে কিরনের প্রবেশ নিষেধ ছিল সেখানে প্রবেশ করার অনুমতি পায় কিরন। প্রবেশ করে দেখতে পায় কাচের কফিনে এক অনিন্দ্যসুন্দরি উনিশ কি বিশ বছরের কন্যা ঘুমিয়ে আছে।
-বিষের প্রভাবে তোর মায়ের শরীর পচেনি।
-আমি বাবাকে কিভাবে খুঁজে পাবো ফাদার।
-তোর ঘ্রাণশক্তি দিয়ে।
-আচ্ছা ফাদার আমি আসছি।
কিরন চিন্তা করে আগে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য ধংস করতে হবে। কিরন ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে পৌছে যায় সোজা কিং চার্লিয়াম এর সামনে।
-কেমন আছো দাদু?
-তুই?
-হ্যা আমি। এবার তোমাদের ধংস নিশ্চিত বলে কিরন একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে নিজের ভয়ংকর চেহারা ধারন করে। বিষাক্ত ছোবল দিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। কিরনকে যেমারতে যায় সে নিজেই বিষে মারা পড়ে। কিছু সময় এর মধ্যেই ভ্যাম্পায়ার রাজ্য মৃত্যুপুরীর রূপ ধারনন করে। কিরন হয় নতুন রাজা আর যে কজন ভ্যাম্পায়ার বেচে থাকে তারা কিরনকে রাজা মেনে নেয় সেইসাথে কখনো মানুষের রক্ত খাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে। কিরন তার বাবাকে খুজে বের করে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে নিয়ে আসে। চার্লস এর মধ্যে আগের সেই জৌলুস নেই। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কিরনের মাঝেই যেন চার্লস খুঁজে পায় চন্দ্রাকে। কিরিনের আর চন্দ্রার চোখে অদ্ভুত মিল। দুজনের চোখের মনিই গাড় নীল। চার্লস তার সন্তানকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়। চন্দ্রার কথা মনে পড়ে “আমার সন্তানের মাঝেই আমি বেচে থাকবো”
.
চন্দ্রা নিজের জীবন ত্যাগ করে বাচিয়েছে দুইটা প্রান। ভালোবাসলে বুঝি মৃত্যুকেও হাসি মুখে আলিঙ্গন করা যায়। আর সেই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো কিরন।

সমাপ্ত

(সবগুলো পর্ব পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here