পদ্মাবতী,পর্ব-৩

0
3020

পদ্মাবতী,পর্ব-৩
নাহার

মাহিবের পুরো পরিবার এসেছে আজ। বিয়ের সম্পূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। নিলাকে বধূ বেশে সাজানো হয়েছে। নিলার চাচা, জেঠা সবাই আছেন। বেশ খানিকক্ষণ পরে কাজি সাহেব এলেন এবং বিবাহ সম্পন্ন হলো। পদ্ম নিলার পাশেই ছিলো। সেও কিছুটা সেজেছে।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর খাওয়া -দাওয়া শেষ করলো সবাই। নিলা আজকেও পদ্মকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে। আর কিছুক্ষণ পরপর চোখ মুছে ফেলছে। পদ্মেরও মন খারাপ। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না।

বিদায়ের সময় নিলা পদ্মকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলো। পদ্মও কেঁদেছে। যেমনই হোক নিজের বোন। মনিরাও কেঁদেছে। যদিও মাহিবদের বাড়ি নিলাদের বাড়ির পাশেই। কিন্তু বিয়ের আগে যেভাবে নিজের ঘরে থেকেছে সেভাবে তো বিয়ের পর আর থাকা যায়না।

রাত সাড়ে এগারোটায় মাহিব রুমে এলো। নিলা সালাম দিলো। মাহিব মুচকি হেসে নিলার সামনে বসে সালামের জবাব দিয়ে নিলার কপালে হাত রেখে দোয়া পড়লো। দুজনে নামাজ পড়ে নেয়। ছাদে এসে বেশ কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে। দোলনায় বসে নিলা মাহিবের কাধে মাথা রাখে। মাহিব বললো,
— “আজ কেমন লাগছে তোমার? আমাকে বিয়ে করে কোনো আফসোস আছে মনে?”

নিলা মাথা তুলে মাহিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহিব মুচকি হেসে চোখ টিপ দেয়। নিলা একটু নড়েচড়ে বসে ধীর কণ্ঠে বললো,
— “আফসোস হবে কেনো? আপনি তো নিজেকে যথেষ্ট বদলে ফেলেছেন আগের থেকে। তাই আফসোস নেই। বরং ভালোই লাগছে।”

নিলার কাধে থুতনি রাখলো মাহিব। নিলা সিউরে উঠে। মুখ ঘুড়িয়ে মাহিবের দিকে তাকায়। দুজন চোখাচোখি হয়ে যায়। নিলা চেয়েও চোখ সরিয়ে নিতে পারে না। এই মানুষটার চোখে এত মায়া নিলা জানতোই না। প্রথমদিনে এতোটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে যে এখন মাহিবকে ছাড়া নিজেকে কল্পনাই করতে পারছে না। নিলার জীবনের প্রথম পুরুষ মাহিব। তাই হয়ত এতোটা ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেছে। আর তাছাড়া বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে দুজন। ভালোবাসা তো আল্লাহই সৃষ্টি করে দেন। হঠাৎই নিলার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করলো। মাথা নিচু করে নেয়। মাহিবের দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলার ঘাড়ে পরায় বুকের ভেতর ঢেউ তুলছে। নিলা সরে আসতে চাইলে মাহিব খুব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে নিলাকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
— “সেই তিন বছর আগ থেকে আপনাকে চেয়ে এসেছি। কত যে অপমান করেছেন আপনি। কতশত বার যে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর আপনাকে চুপিসারে নজরে রেখেছি। চলাফেরা খেয়াল করেছি। তারপর নিজেকে বদলে নিয়েছি। আর খোদার কাছে কতশত বার যে আপনাকে চেয়েছি সেটা আমার খোদাই জানে। এবং তিনি আমাকে ফিরিয়ে দেন নি।”

বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে নিলার থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুললো। বললো,
— “এই মায়াবী মুখটা ভুলতে কত চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। মায়াবতী আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি আছে?”

নিলা কিছু না বলেই মাহিবের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে৷ মাহিব মুচকি হাসে। আবারো নিলার মুখটা তুলে ধরে। মাহিবও মুখ নামিয়ে আনে। উষ্ণ পরশে নিলা খামছে ধরে মাহিবের পাঞ্জাবি। চাঁদের সম্পূর্ণ আলো এসে দুজনের উপর পরেছে। মাহিবের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসেছে নিলা। চাঁদ দেখছে দুজন মন ভরে। দুজন বললে ভুল হবে একজন। শুধু নিলাই দেখছে। আর মাহিব নিলার মুখপানে তাকিয়ে আছে। বেশখানিক্ষণ পর দুজনে রুমে আসে। নিলা খাটে বসে কাথার ভেতরে পা ঢুকিয়ে শোয়ার আগেই মাহিব নিলার খোপা খুলে দেয়। নিলা মুচকি হেসে শুয়ে পরে। মাহিব নিলাকে কাছে টেনে এনে বললো,
— “কাছে আসুন ভালোবাসা আদান প্রদান হোক।”

নিলা মুচকি হাসে আবার। নিজের সব ভালোবাসা মাহিবকে দিয়ে দেয়।

——————–
সকালে ঘুম থেকে উঠে পদ্ম তার বোনকে ডাকলো।
— “আপু আমার নাস্তা দিয়ে যা না।”

আবার চুপ হয়ে যায়। বুকের ভেতর মোচড় দেয়। ভুলেই গেছিলো তার আপু নেই এখানে। চলে গেছে শ্বশুরবাড়ি। এমন সময় পদ্মের ফোন এলো। হাতে নিয়ে দেখলো সৌরভ কল করেছে। বেশ বিরক্ত হলো পদ্ম। কয়েকদিন ধরেই জ্বালিয়ে মারছে এই ছেলে। রুমডেট এর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু পদ্মের কেনো যেনো এসব ভালো লাগছে না। আগে নিজেই বলেছে রুমডেটের কথা সৌরভকে। বেশ এক্সাইটেড ছিলো পদ্ম। সৌরভকে সবটা দিয়েই ভালোবাসবে। তাইতো সেদিন সৌরভের সাথে হোটেলরুমে চলে গেছিলো। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে হয়েছে। সেদিন মন খারাপ হলেও আজ ভালো লাগছে পদ্মের। ভালোই হয়েছে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। পদ্মের ভাবনায় ছেদ পরলো ফোনের রিংটোন শুনে। বিরক্তি এক সাইডে রেখে ফোন রিসিভ করলো পদ্ম। অপাশ থেকে সৌরভের বিশ্রী ভাষা শুনা গেলো। পদ্ম বিষম খেলো। প্রথমে ভাবলো অন্য কাউকে বলছে। কিন্তু সৌরভ যখন বললো,
— “কিরে কথা বলছিস না কেনো? তোকে লাস্ট টাইম বলছি আজ আমার সাথে তন্ময়ের ফ্ল্যাটে যাবি। নইলে আমি এমন কিছু করবো যে, তুই মুখ দেখাতে পারবি না।”

পদ্ম কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
— “কি করবে তুমি? আর এভাবে তুই তুকারি আর এমন স্ল্যাং ল্যাঙুয়েজ ইউজ করছো কেনো?”

— “করলে তখন দেখবি। এটা লাস্ট টাইম বলছি কিন্তু আমি।”

— “যা ইচ্ছে করো। আমি তোমার এসবে নেই।”

পদ্ম ফোন কেটে দিলো। নিলা চলে যাওয়ার পর নিজেকে খুব অসহায় লাগে পদ্মের। যখন বিয়ে ঠিক হয়েছিলো কত খুশি ছিলো পদ্ম। তার বোনের প্যানপ্যানানি শুনতে হবে না। নিজের মতো চলতে পারবে। আর এখন খুব একা একা লাগে। পদ্ম উঠে রান্নাঘরে গেলো। মনিরা ফুপি স্কুলে চলে গেছেন। পদ্ম একাই আছে বাসায়। ফ্রিজে পাউরুটি আর ডিম আছে। চুলায় আগুন ধরিয়ে ফ্রাই প্যানে তেল ছেড়ে ডিম ভেঙে দিলো। ডিম ভাজতে গিয়ে তেলের ছিটকায় হাত পুড়ে গেছে পদ্মের। তাও চুপচাপ খেয়ে নিলো। পুরো ঘর নিজেই ঝাড়ু দিয়ে মুছে ফেললো। নিজের রুম গুছিয়ে রাখলো। নিলার রুমে ঢুকে থমকে দাঁড়ায়। কতশত স্মৃতি আছে এই রুমটায়। রাতে ভয় পেলে নিজের রুম থেকে দৌড়ে এসে নিলার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরতো। নিলা টেনে পদ্মকে বুকে নিয়ে ঘুমাতো। আর সেই বোন এখন অন্যের বাড়ির বউ হয়ে চলে গেছে। পদ্মের হঠাৎই খুব কান্না এলো। নিলার বিছানায় বসে ঢুকরে কেঁদে উঠে।

বিকেলের দিকে পদ্মের ফোনটা বেজে উঠে। বেশ খানিকক্ষণ বেজে চুপ হয়ে যায়। আবারো বেজে উঠলে পদ্ম উঠে মোবাইলটা হাতে নেয়। আননোন নাম্বার। রিসিভ করবে না ভেবেই করে ফেলে। অপাশ থেকে অচেনা কণ্ঠে একজন লোক বললো,
— ” কি গো সুন্দরী কি করছো এখন? অন্য কাউকে সময় দিচ্ছো বুঝি? আজ রাতে আমাকে সময় দিতে পারবে? এক রাতের জন্য কত নাও?”

পদ্ম বিষম খেলো। কট করে ফোন কেটে দিলো। কে এই লোক? আর এসব বাজে কথাই বা বলছে কেনো? আবারো ফোন এলো। এবার আরেকটা আননোন নাম্বার। পদ্ম রিসিভ করতেই অপাশ থেকে বললো,
— “যা সাইজ তোমার আমার এখনই নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। ফুলঠুসি রেট কত তোমার?”

পদ্ম ফোনটা কেটে বিছানায় ছুড়ে মারলো। কারা এরা কিছুই বুঝতে পারছে না। এসব কথাই বা কেনো বলছে তারা? পদ্ম মেঝেতে বসে কেঁদে দেয়। আবারো ফোন বেজে উঠে। পদ্ম ঠাঁয় বসে রইলো মেঝেতে। বজ্রপাতের মতো বেল পরলে পদ্মের ঘোর কাটে। উঠে এসে দরজা খুলে দেখলো মনিরা ফুপি এসেছে। মনিরা ফুপি নিজের রুমে ঢুকার আগে বললো,
— “এটা তোর থেকে আশা করিনি পদ্ম।”

পদ্ম বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আজ কি হলো সবার? নাকি সে নিজেই পাগল হয়ে গেছে? কোনোরকম উত্তর দিলো,
— “কি হয়েছে ফুপি? কি করেছি আমি?”

মনিরা তেঁতে উঠলেন। ঝাঁঝিয়ে বললেন,
— “কি করিস নি তুই? সব মান সম্মান ডুবিয়ে দিলি। এখনও যদি না বুঝে থাকিস তাহলে গিয়ে মোবাইল চেক কর। নিউজফিড চেক কর।”

মনিরা চলে গেলেন। পদ্ম রুমে এসে মোবাইল হাতে নিতেই হোয়াটসঅ্যাপ থেকে একটা মেসেজ এলো। মেসেজ ওপেন করে দেখলো একটা ভিডিও। পদ্ম ভয় পেলো। সেই নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে, “এক রাতের জন্য কত নাও সুন্দরী? একটা রাত আমাকে দাও। অনেক সুখ দিবো।” অপর একটা নাম্বার থেকে মেসেজ এলো, “ইশ! কি ফিগার তোমার। আজ রাতে খালি আছো নাকি বুকিং?” পদ্মের বন্ধুবান্ধুবিদের গ্রুপ মেসেজে ঢুকে দেখলো সেখানেও একই বিষয় নিয়ে কথা। একজন বললো, “পদ্ম তুই পর্ণস্টার হয়ে গেছিস।” অন্যএকজন বললো, “সানি লিওন থেকেও হট।” পদ্ম দেরি না করে ভিডিও ওপেন করলো। মুহুর্তেই শীতল বাতাস বয়ে গেলো পুরো দেহে। পদ্ম জমে গেছে। চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু নোনাপানি পরছে। এইজন্য সবাই তাকে এভাবে খোঁচা মেরে কথা বলছিলো? ভিডিওটা সৌরভ এবং পদ্মের গভীর চুম্বনের। যেখানে পদ্ম অর্ধনগ্ন অবস্থায় আছে। সৌরভের চেহারা ঝাপসা কিন্তু পদ্মকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনকি পদ্মের দেহের প্রতিটা অঙ্গ স্পষ্ট। তাছাড়া নুড পিকও ভাইরাল হয়েছে। ভয়ে ভয়ে ফেসবুকে লগিন করলো পদ্ম। মেসেঞ্জার ভর্তি হয়ে গেছে মেসেজে। নিউজফিড জুড়ে শুধু পদ্মের চুম্বন এবং নুড পিকে ভরে গেছে। তাড়াতাড়ি করে সৌরভকে ফোন দিয়ে বললো,
— “এসব কেনো করেছো? কি ক্ষতি করেছি আমি? আর সেদিন হোটেলে সব তুমি ভিডিও করেছো? কখন?”

সৌরভ হেসে বললো,
— “আমার বন্ধুদের দেখাতে। তোর নুড পিক দেখেই আমাদের মনে কামনা জেগে উঠে। ভিডিও দেখলে তো…। ওসব বাদ। তুই কি এখন আসবি ফ্ল্যাটে? না এসে তো উপায় নেই। দেখ আমার বন্ধুরা খুব অপেক্ষা করছে। একটু ছোয়ার আশায়। তুই….।”

পদ্ম মোবাইল আছাড় মারলো। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। খুন করতে ইচ্ছে করছে নিজেকে। এতোটা বিশ্বাস করেছে সৌরভকে সে কিনা..। শুধু সৌরভের জন্য নিজের বোনকে অপমান করেছে। শুধু বন্ধুবান্ধবদের জন্য নিজের বোনকে হেয়ালি করেছে। আর আজ তারাই হাসি ঠাট্টা করছে। নিজের থেকে বেশি চেয়েছে, বেশি বিশ্বাস করেছিলো সৌরভকে। আর সেটার প্রতিদান এভাবে পেলো। প্রতিটা জানালা বেধে দিয়ে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিলো। রুম অন্ধকার করে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে পদ্ম। আজ তার বোনের বলা একটা কথা বারবার মনে পরছে। নিলা বলেছিলো, “বাজারে বিক্রি করা খোলা পাউরুটি দেখেছিস? রিকশাওয়ালা হতে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী সবাই দেখে। সবাই একবার করে উলটে পালটে দেখে যায়। কেউ চেপে দেখে, ঘেটে দেখে, গন্ধ শুকে দেখে। যার ভালোলাগে সে নিয়ে যায়। যার ভালো লাগে না সে উলটে পালটে দেখে রেখে চলে যায়। যে নেয়ার সেও দেখে, যে নিবে না সেও দেখে।” আজ পদ্মের নিজেকে খোলা পাউরুটি মনে হচ্ছে। হ্যাঁ তার বোন সত্যিই বলেছে। নিজের প্রতি ঘৃণা এতোটা বাড়ছে…।

মাহিব বাসায় আসলে নিলা সালাম দিলো। তাওয়াল এগিয়ে দিলো। এক গ্লাস পানি দিলো। রান্নাঘরে যাওয়ার আগে মাহিব নিলার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে এলো। জড়িয়ে ধরে বললো,
— “কাল তুমি পদ্মের সাথে একবার দেখা করে এসো। একা একা কি করছে একটু দেখে এসো।”

নিলা কিছু বললো না। শুধু মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। মাহিব চিন্তিত ভাবে নিলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

——————–
এইসব ঘটনার দুটোদিন পার হয়ে গেলো। পদ্ম একবারের জন্যেও রুম থেকে বের হয়নি। মনিরা ফুপি প্রথমে রেগে থাকলেও পরে আর রাগ দেখাননি। পদ্মকে কয়েকবার ডেকেছে খাওয়ার জন্য কিন্তু কোনো সাড়া নেই। নিলা এসে ফুপিকে সালাম দিয়ে বোরকা খুলে বসলো। জিজ্ঞেস করলো,
— “ফুপি পদ্ম কোথায়? আমি এসেছি আর ও রুমে বসে আছে কেনো?”

— “তুই ওর রুমে যা দেখে আয়। তাহলে বুঝবি।”

নিলা ভয়ে পেলো। তার বোনটার কি হয়েছে? বুকটা দুরুদুরু করছে। পা যেনো চলছেই না। কোনোরকমে হেটে গেলো পদ্মের রুমে। ভেতরে ঢুকেই একটা গন্ধ নাকে আসলো। রুম বন্ধ করে রাখায় ভ্যাপসা গন্ধ হয়ে আছে। নিলা তাড়াতাড়ি সব পর্দা সরিয়ে জানালা সব খুলে দেয়। খাটে বসে পদ্মকে ডাকলো। পদ্ম উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে ছিলো। নিলার ডাকে পদ্ম উঠে বসে বোনের দিকে তাকালো। নিলা ভড়কে গেলো। পদ্মের মুখের দিকে তাকিয়ে অজানায় ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে। পদ্মের চেহারা মলিন। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। কেমন হয়ে গেছে মেয়েটা। পদ্মকে সবসময় একটা সদ্য ভেজা পদ্ম ফুলের ন্যায় লাগতো। আর এখন মুড়িয়ে যাওয়া পদ্মের ন্যায় লাগছে। নিলা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— “পদ্ম কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? পদ্ম?”

পদ্ম কোনো কথা না বলেই নিলার বুকে ঝাপিয়ে পরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। নিলা ভয়ে আরো জমে গেছে। পদ্মকে আগলে ধরে বললো,
— “কি হয়েছে বোন? বলনা আমায়। কেউ কিছু বলেছে?”

পদ্ম মোবাইল বের করে ভিডিও ওপেন করে নিলাকে দিলো। নিলা ভিডিওর অল্পকিছু দেখেই এক চিৎকার করে উঠলো “পদ্ম” বলে। পদ্ম মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে। নিলা খাট থেকে ধপাস করে মেঝেতে পরে যায়। পদ্ম দিশাহারা হয়ে জোরে জোরে ফুপিকে ডাকে। নিলাকে বুকের সাথে চেপে ধরে।

মাহিব বাজার নিয়ে সবেমাত্র নিলাদের বাড়িতে ঢুকেছে। মনিরা ফুপিকে দৌড়ে ভেতরে যেতে দেখে মাহিব ভয় পেলো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here