এক টুকরো মেঘ,Part : 2

0
1623

এক টুকরো মেঘ,Part : 2
Write : Sabbir Ahmed

-আবার আমার উপর মামারা রাগ দেখাবে না তো? (শুভ)
-আর নাহহ কি যে বলো (মেয়েটি)
,,
মেয়েটির সাথে সাথে শুভ উপরের ঘর গুলোতে গিয়ে একে একে তিন মামা মামীর সাথে পরিচয় হয়ে নিলো। সাথপ জানালো তার নিজের কথা। তার জন্ম হওয়ার পর যে বাবা-মা কে দেখে নি সেসব কথাও বলল। আলী চাচার পরিচয় ও তুলে ধরলো।
,,
সবার সাথে পরিচিত হবার পর এবার পরিচয় হলো এক ছেলের সাথে।
-হায় আমি নয়ন
-আমি শুভ
-আমি তোমার মেজ মামার বড় ছেলে। আর আমি তোমার বড়
-তার মানে ভাইয়া
-হ্যাঁ। চলো একটু বাইরে ঘুরে আসি
-চলেন
,,
শুভকে নিয়ে বাইরে এসেই নানান প্রশ্ন করা শুরু করলো।
-তা হঠাৎ এখানে আসলে কেনো? (নয়ন)
-আলী চাচা বলল তাই (শুভ)
-এতদিন বলেনি কেনো?
-বলেছে আমি আসতে চাইনি
-কেনো?
-বাবা-মা নেই, এখানে আসলে আপনারা চিনবেন কি না
-সব কিছু জেনে নিচ্ছি কিছু মনে করো না। হঠাৎ করে একজন এসে বললেই তো আমরা সবকিছু মেনে নিতে পারি না
-না আপনাদের এমন করাটা স্বাভাবিক
-হঠাৎ নানু বাড়ির কথা মনে পড়লো তোমার
-হুমমম
-বাড়িতে তোমার ছোট মামার মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলতেছে ঠিক এমন সময় তুমি এলে। এখন তো অনেক আত্মীয় স্বজনরা আসবে। ফারিহা বুঝতে পারছে না তোমাকে নিয়ে কি করবে
-ফারিহা কে?
-যে তোমাকে সবার রুমে রুমে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো
-ওহহ আচ্ছা তাকে কি আপনারা খুব ভয় করেন
-হ্যাঁ সে আমার বড় চাচা মানে তোমার বড় মামার মতো হয়েছে। অনেক বুদ্ধি আর রাগী আমাদের সংসার এর দায়িত্ব তো উনার উপরেই
-উনার বিবাহ হয়নি?
-পাত্র খোঁজা হচ্ছে
-ওহহ
-উনি কিন্তু কলেজের শিক্ষিকা, আর খুব ভালো মানুষ ও
-সেই জন্য সবাই এতো মান্য করেন তাই না?
-হুমম তার বয়স হয়েছে বেশি না আটাশ এর মতো, অনেক ভালো ভালো বিয়ে রিজেক্ট করে দিয়েছে
-কেনো?
-উনার নাকি পছন্দ হয়না
-ওহহ আচ্ছা তাহলে আমার ব্যাপারে কথা বলি, আমি কি চলে যাবো??
-সেটা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবে। চলো এখন বাসায় যাওয়া যাক
-এই কথা গুলো শুনাতে আপনি আমাকে বাইরে নিয়ে এসেছিলেন তাই না?
-আমি না ফারিহা বলেছিলো
-ওহহহহ
,,
শুভ আর নয়ন বাড়িতে ফিরে আসে। আলাদা একটা রুমে বাড়ির কয়েকজন মিলে একটা রুমে আলোচনায় বসে।
-আপনাদের বেশ চিন্তিত লাগছে, আমি আসলে ভুল সময়ে এসে পরেছি। সমস্যা নেই আমি এখনই চলে যাচ্ছি। (শুভ)
-আরে নাহহ তোমাকে নিয়ে কি করবো সেটা ভাবছি (মামাদের মধ্যে একজন বলল)
-আসলে সত্যি কথা হলো আপনারা এখনো বিশ্বাস করতে পারেননি আমি আপনাদের বাড়ির মেয়ের ছেলে কি না। যদি মেনেই নিতে এত সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাতেন না এত প্রশ্ন করতেন না। আচ্ছা এটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে হবে না আপনাদের এই ব্যাগ উঠালাম এখন যাই
-কোথাও যাবে না ব্যাগ রাখো (ফারিহা)
,,
একটা মামা এসে শুভকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই লাগলো। শুভর কথা বেশ ভালো ভাবেই গেঁথেছে তাদের মনে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত এলো যেকোনো আত্মীয় এলে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে শুভকে।
,,
শুভ এত মানুষ পেয়ে খুব খুশি সব মামা মামীকে আলাদা ভাবে সময় দিচ্ছে তাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। মেজ মামা তো শুভকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে বের হলো একমাত্র ভাগনে কে পেয়ে সে কি খুশি।
হঠাৎ গ্রামের এক মুরুব্বির সাথে দেখা..
-চাচা এটা আমার ভাগনে (মামা)
-আতিয়ার ছেলে? (মুরুব্বি)
-হ্যা
-আতিয়া আসছে
-ও তো মারা গেছে ছেলেটা ছোট থাকতেই
-ওর বাবা আসছে
-সে ও মারা গেছে
-এ যে তোমার ভাগনে কিভাবে বুঝলে?? চিটার ও তো হতে পারে (কথাটা বলে মুরুব্বি টা চলে গেলো)
,,
মামার মন একদম ছোট হয়ে গেলো। শুভ বলল..
-মামা মন খারাপ কইরেন না লোকে এমনটা বলা স্বাভাবিক (শুভ)
-তবুও তাদের কিভাবে যে বোঝাই
-লাগবে না বোঝাতে। মামা ঐ যে একটা কথা আছে না, মামা ভাগনে যেখানে
-আপদ নাই সেখানে
,,
দুজন হাসতে হাসতে রাস্তায় হাঁটতে লাগলো। সন্ধ্যায় বাড়িতে আসলো শুভ। উঠানের মধ্যে চেয়ার পেতে বসে আছে। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলায় মেতে উঠে সে। তারপর আবার চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকে।
মাঝেমাঝে ফারিহা এদিক ওদিক চলেফেরা করলে শুভ আড় চোখে তাকিয়ে ফারিহাকে দেখে। দুই একবার চোখ ও পড়ে যায় দুজনের।
,,
রাতে খাওয়ার পর নয়ন ভাই শুভর রুম দেখিয়ে দেয়।
-আপনি আমার সাথেই থাকুন (শুভ)
-নাহহ আমার বাচ্চাদের সাথে থাকতে হবে (নয়ন)
-ওহহ আপনি বিবাহিত
-হুমম
-ভাবিকে তো দেখলাম না
-দেখিয়েছে অবশ্যই হয়তো মনে নেই
-এক বাড়িতে যদি এতজন লোক থাকে তারউপর মেহমান চিনতে তো আমার মাথাই ঘুরে যাচ্ছে
-হ্যা এমনটা হয়েই থাকে। তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো। ধীরে ধীরে সবকিছু চিনে ফেলবে
-হুমমম
,,
শুভ শুয়ে পড়লো তার রুমে। পরদিন সকাল বেলা। শুভ ঘুম থেকে উঠে বাথরুম খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে তার প্রচুর হিসুর বেগ পেয়েছে দাঁতের উপর দাঁত রেখে কোনোরকম আটকে রেখেছে।
,,
রুমে থেকে বেড়িয়ে একবার উত্তর দিকের কোণায় যাচ্ছে আরেকবার দক্ষিণ দিকের কোণায়। হঠাৎ উত্তর দিকের রুমের একটা দরজা খোলার আওয়াজ পেলো। শুভ নিজের রুমে ঢুকবে সাথে সাথে পেছন থেকে ডাক।
-এই ছেলে এই (মেয়েলী কণ্ঠ)
,,
শুভ পেছনে তাকিয়ে দেখে ফারিহা..
-কি সমস্যা দৌড়াদৌড়ি করতেছো কেনো? (ফারিহা)
-না কোনো সমস্যা না (শুভ)
-এত সকালে উঠছো কেনো?
-না এমনি
-যাও ঘুমাও
-শুনুন না
-হ্যাঁ বলো
-আমার হিসুর বেগ পেয়েছে বাথরুম খুঁজে পাচ্ছি না
-তোমার রুমে বাথরুম নেই??
-না
-কোন রুম দিয়েছে তোমাকে?
-ঐ কর্নার এর টা
-ওহহ, আচ্ছা আমার রুমের টা ব্যবহার করো
-না ঠিক আছে আমি বাইরে গিয়ে..
-বাইরে গিয়ে মানে?
-ঠিক আছে ধন্যবাদ (শুভ ফারিহার রুমে ঢুকলো)
,,
ফারিহা মিটিমিটি হাসছে। শুভ তার কাজ শেষ করে বের হলো।
-ধন্যবাদ (শুভ)
-এত ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আর আমরা দুঃখিত তোমার এত কষ্ট পাওয়ার জন্য(ফারিহা)
-আপনার রুমে এত বই কেনো?
-আমার বই পড়তে ভালো লাগে
-ওহহ
-তুমি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছো?
-দশম শ্রেনী
-হুমমম যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও
,,
শুভ নিজের রুমে এসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
-যাক আপুটা কিছু বলেনি। উনার সম্পর্কে জানার পর উনার সামনে যেতেই তো ভয় করছে। তার এমন চটাস চটাস কথা বলার জন্যই হয়তো তাকে সবাই ভয় পায়। আল্লাহ তার সামনে যেন আর কোনো সমস্যা নিয়ে না পড়ি
(শুভ কথা বলতে বলতে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো।)
,,
ঘন্টা দুয়েক ঘুমানোর পর বাড়ির কাজের লোকের ডাকে শুভর ঘুম ভাঙে।
-আপনে এখনো উঠেন নাই?
-কেনো সবাই উঠেছে নাকি?
-সবার খাওয়া শেষ
-এ্যাহহ বলেন কি?
-আপনার খাওয়া টেবিলে দিয়ে গেলাম। আপা মণি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিচে যেতে বলেছে
-জ্বি, আপনি খেয়েছেন?
-হ্যা আমি খাইছি
(শুভ খাওয়ার কথা জিজ্ঞাস করায় লোকটি খুব খুশি হলো। আর নিচে গিয়ে একটু তার গুণগান ও গাইলো)
,,
শুভ খাওয়া শেষে নিচে আসলো।
বাড়িতে একদিন পর গাঁয়ে হলুদ। এখন থেকেই রমরমা হয়ে উঠেছে বাড়িটা। শুভ এদিকে ওদিক তাকিয়ে সবার কাজ দেখছিলো। ফারিহার ডাক পাওয়ায় তার দিকে তাকালো।
-এদিকে এসে বসো(ফারিহা)
শুভ কাছে এসে তার ঠিক পাশের চেয়ারে বসলো৷ আর বলল..
-ধন্যবাদ (শুভ)
-এটা বলা কি তোমার বদ অভ্যাস? (ফারিহা)
-না ভালো কিছু হলে এটা বলি
-শোনো এখন থেকে এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না। বাড়ির ব্যস্ত সময়ে আসছো তুমি। তোমাকেও ব্যস্ত থাকতে হবে। কিছু কাজ দিবো করতে পারবে?
-জ্বি পারবো, কি কাজ বলেন
-তোমার কাজ বাড়ির বাচ্চাদের সামলানো। ওরা কখন কি চায় না চায় সব কিছুর খেয়াল রাখতে হবে তোমাকে
-হ্যাঁ পারবো তবে কষ্ট হবে
-সব কাজেই কষ্ট
-এটা একটু বেশি কষ্ট হবে
-সে দেখা যাবে। একটা বাচ্চা কান্না করলে তোমার একবেলার খাবার বন্ধ

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here