এক টুকরো মেঘ,Part : 3

0
1390

এক টুকরো মেঘ,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed

-সব কাজেই কষ্ট (ফারিহা)
-এটা একটু বেশি কষ্ট হবে (শুভ)
-সে দেখা যাবে। একটা বাচ্চা কান্না করলে তোমার একবেলার খাবার বন্ধ
-ঠিক আছে
-পারবে তো? (একটু হাসো)
-হ্যাঁ চেষ্টা করবো
-হুমম
,,
শুরু হলো বাচ্চাদের দেখাশোনা করা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই কাটলো। দুপুরের পর বাচ্চাদের থেকে একটু রেহাই পায়।
তবে তার একটা সমস্যা হয়েছে। সবাই যার যার মতো খেয়ে উঠেছে সে মিস করেছে। আর এখন লজ্জায় খুদার কথা কাউকে বলতেও পারছে না৷ এদিকে পেট ও যে মানছে না। খুদায় চৌচির অবস্থা তার।
,,
যে মেয়েটার বিয়ে তার নাম নিশু। সে বাইরে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিলো। শুভ আগেই পরিচয় হয়েছে তার সাথে। বোনটি তার থেকে ছোট। শুভ গিয়ে নাম ধরে ডাকলো…
-নিশু(শুভ)
-জ্বি ভাইয়া বলেন (নিশু)
-কি করছো??
-এইতো একটু ফোন দেখছিলাম
-ওহহহ
-আজকের আবহাওয়ার খবর টা দেখো তো
-কেনো ভাইয়া?
-না এমনিহ। খাইছো তুমি?
-হ্যা খেয়েছি, আপনি খেয়েছেন? (শুভ সুযোগ পেয়ে গেলো)
-আমার তো খাওয়া হয়নি ঐ একটু ব্যস্ত ছিলাম
-কি বলেন! বেলা তো অনেক হয়েছে।
(হঠাৎ সেখানে ফারিহার প্রবেশ। তার মনোযোগ ফোনের দিকেই ছিলো)
,,
নিশু ফারিহা কে ডাকলো।
-আপু (নিশু)
-হ্যাঁ কি হয়েছে বল (ফারিহা)
-ভাইয়া এখনো খায় নি (কথা শুনে ফারিহা নিশুর দিকে তাকালো)
-কি ব্যাপার শুভ তুমি এখনো খাও নি (ফারিহা)
-এই একটু মিস হয়েছে
-মানে! সময়ের খাওয়া সময়ে খাবা। তোমার ঘরে খাবার পাঠানো হয়েছে তো যাও খেয়ে নাও
-আমি রুম থেকেই আসলাম, কেউ তো খাবার নিয়ে যায়নি
-কিহহ! আমি তো লোক পাঠিয়েছি।
-যাকে পাঠিয়েছি হয়তো তার মনে নেই
-দাঁড়াও দেখছি (ফারিহা একটু গরম হলো)
-দেখেন তার হয়তো মনে নেই। কিছু বইলেন না
-তুমি চুপ করো (ফারিহা ধমক দিলো)
,,
তারপর খোঁজ নিয়ে জানা গেলো। যাকে দিয়ে খাবার পাঠানোর কথা সে তার বাড়িতে চলে গেছে কি যেন দরকারে। ফারিহা সব শুনে আবার শুভর কাছে আসলো..
-তোমার কপাল যে কেনো এমন, সকালে বাথরুম, খাওয়ার প্রবলেম আবার এখনো সেই একই অবস্থা (ফারিহা)
-আসলে হঠাৎ করেই পরিবারে নতুন কেউ আসলে যা হয় আর কি তাই হয়েছে। সমস্যা নেই (শুভ)
-তোমার সমস্যা নেই আমার আছে
-তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি (নিশু চলে গেলো)
-এই শোনো, তুমি এখন থেকে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার খাবে আর সেটা সবার আগে
-কেনো?
-আমি বলেছি তাই
-ওখানে তো কেমন জায়গা
-আমাদের রান্নাঘর পরিষ্কার, খাবার খাওয়ার জায়গা আছে ওখানে গিয়ে খাবে। ঠিক আছে?
-হুমমম
-তো বাচ্চাদের কেমন সামলালে??
-ভালোই ওরা বেশি দুষ্টামি করেনি।
-বাহহ ভালোই তো
-হ্যাঁ ওদের সাথে খেলে ভালোই লেগেছে
-যাক বিকেলের দিকে তুমি ফ্রি শুধু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখবো। বেশি না মাত্র দুদিন। এ দুদিন ওদের বাবা মা একটু বেশি ব্যস্ত থাকবে
-হুমমম, আচ্ছা নিশুর যে বিয়ে হচ্ছে বরের বাড়ি কতদূর?
-এখান থেকে দু-গ্রাম পরে। তবে শহরেও তাদের বাড়ি আছে
-ওহহহ
,,
ফারিহা তার মনোযোগ ফোনের দিকে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে গেলো। বিকেল যত গড়াচ্ছে আত্মীয় আসার সংখ্যা ততই বাড়ছে। মানুষ যত বাড়তে থাকে শুভর একাকিত্ব ততই বাড়তে থাকে। মনে মনে বলে “কেন যে এসময় আসতে গেলাম। দুই একদিন পর আসলেই ভালো হতো”
,,
রাতে শুভ আরেকটা সমস্যায় পড়ে যায়। তার রুম কারা যেন দখল করেছে। রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ভেতরে বেশ কয়েকজন, হয়তো কোনো একটা পরিবার এসে উঠেছে।
,,
শুভর কপাল টাই খারাপ, এদিকে কাউকে যে বলবে নতুন মানুষ অনেক লজ্জা পায়। শুভ চুপচাপ বাড়ির মধ্যে থেকে বের হলো। বাইরের বাইরের দিকটায় বড় একটা বারান্দা আছে। আর সেখানে দুইটা বেঞ্চ বসানো আছে।
,,
শুভ সেখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে সামনের বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাঝে মধ্যে দুইএকজন এসে কথা বলল। অনেক সময় বসে থেকে আবার নিজের রুমে গেলো আর সেখানে ঠিক আগের অবস্থা। দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়েছে। শুভ বুঝলো তার বাইরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। একের পর এক ছোট ছোট সমস্যা তার পিছুই ছাড়ছে না।
,,
সেই বেঞ্চে বসে মায়ের কথা ভাবতে লাগলো। আজ এখানে সে অচেনা, দুইএকজন তাকে বিশ্বাস করে আবার দুইএকজন অবিশ্বাস ও করে, মা থাকলে তো আর এমন হতো না। এসব কথা ভেবে একা একা কষ্ট পায়।
কিছুসময় পর মুচকি হেঁসে দিয়ে অন্য ভাবনায় চলে যায়।
,,
তখন মধ্যরাত বেঞ্চে বসে ঘুমাচ্ছে শুভ। হঠাৎ কারও উপস্থিতিতে শুভর ঘুম ভাঙে। চোখ তুলে দেখে তিনটা মামা সহ ফারিহা দাঁড়িয়ে আছে। শুভ তাদের দেখে উঠে দাঁড়ায় আর আমতা আমতা শুরু করে।
-এখানে কেনো তুমি? (ফারিহা)
-আসলে আমার রুমে.. (শুভ)
-হ্যাঁ তোমাকে তো রুম দেওয়া হয়েছে এখানে কেনো?
-রুমে কি ভালো লাগছে না তোমার? (মেজ মামা)
-মামা আসলে আমার রুমে কিছু লোক উঠেছে
-তো উঠেছে তাদের বলোনি এটা তোমার রুম (ফারিহা গরম হয়ে)
-তাদের সাথে ছোট বাচ্চা আছে আর বাচ্চা টা কান্না করছিলো তাই কিছু বলিনি
-তো আমাদের জানাও নি কেনো?
-এমনিতে আপনারা অনেক ব্যস্ত, চাপের মধ্যে আছেন। আর আমি এর মধ্যে যদি এই সামান্য কিছু নিয়ে কথা বলি সেটা কেমন দেখায়। আর সমস্যা নেই আমি ভালোই আছি আর আমি এখানে ঘুমাচ্ছিলাম
-রাতে মনে হয় খাওয়া টাও হয়নি তাই না?
-না হয়েছে, আপনার কথামতো রান্না ঘরে গিয়েই খেয়ে আসছি
-চাচা এখন আপনারা আপনাদের ভাগনে কে কি বলবেন বলেন
-এখন তো একটা রুম ও ফাঁকা নেই
-আচ্ছা আপনারা গিয়ে শুয়ে পড়েন আমি ওর ব্যবস্থা করছি (ফারিহা তার চাচাদের বাড়ির ভেতর পাঠিয়ে দিলো)
,,
শুভ ভয়ে ফারিহার দিকে তাকাচ্ছে না। ফারিহা প্রথমে কথা শুরু করলো..
-খুব বড় মনের মানুষ হয়ে গেছো তাই না? নিজের রুম ছেড়ে দিয়ে অন্যজনকে থাকতে দাও (ফারিহা)
-আসলে উনারা গেস্ট, উনারা তো সবসময় এই বাড়িতে আসবে না। এখন এসে যদি সমস্যায় পড়ে সেটা কেমন দেখায় বলেন (শুভ)
-হুমম তা ভালোই বলেছেন। তবে এখানে তো আপনার কষ্ট হচ্ছে
-না আমার বাইরে থাকার অভ্যাস আছে
,,
ফারিহা শুভকে বেঞ্চে বসতে বলল আর নিজেও বেঞ্চটাতে বসলো।
-তা অভ্যাস হলো কি করে? (ফারিহা)
-আমি তো মনে হয় বলিনি আপনাদের, আমি একটা গাড়ির গ্যারেজে কাজ করি। কাজ করে যেদিন খুব খারাপ লাগতো সেদিন আর চাচার বাসায় যেতাম না। গ্যারেজের পাশে একটা ভালো জায়গা আছে সেখানে রাত কাটিয়ে
দিতাম। তাছাড়া অনেক সময় রাতেও কাজ করেছি বুঝলেন
-হুমমম তা লেখাপড়া কেনো বাদ দিয়েছো। লেখাপড়া করলেই পাড়তে।
-হ্যা আমারও ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু চাচার যে ছেলেমেয়ে ছিলো তাদের লেখাপড়া করাতেই সে সংসার চালাতে হিমশিম খেতো। আমি দেখলাম যে পরের ঘরে এভাবে তে আর থাকা যায় না। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে একদম কাজে মন দেই
-হুমমম তো এখানে কি থাকতে পারবে?
-হুমম বেশ পারবো
-তো থাকো আমি যাই
-হুমম ঠিক আছে
-কিছু মনে করো না, তুমি বললে আমি একটা ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এখন সবাই ঘুমাচ্ছে
-আপনি শুধু শুধুই টেনশন নিচ্ছেন, আমি কিছু মনে করিনি৷
-তবুও আমার খারাপ লাগছে
-অনেক রাত হয়েছে আপনি গিয়ে ঘুমান
-তা তো ঘুমাবোই৷ আচ্ছা ফুপির কথা মনে পরে তোমার?
-মায়ের সাথে তো কোনো স্মৃতি নেই। তবে ইচ্ছে হয় আর মনে মনে ছবি আঁকি আর ভাবি মায়ের সাথে স্মৃতি গুলো হয়তো এমন হতো
-আচ্ছা বাদ দাও, কোনো সমস্যা হলে আমার রুমে গিয়ে ডেকো ঠিক আছে?
-আচ্ছা ঠিক আছে
-মুখ দিয়ে তো ঠিক আছে বললেই, মনে তো হয়না সমস্যা হলে আমাকে ডাকতে যাবে
-…(শুভ ফারিহার কথা শুনে মিষ্টি হাসলো)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here