এক টুকরো মেঘ,Part : 4

0
1287

এক টুকরো মেঘ,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed

-মুখ দিয়ে তো “ঠিক আছে” বললেই, মনে তো হয়না সমস্যা হলে আমাকে ডাকতে যাবে (ফারিহা)
-…(শুভ ফারিহার কথা শুনে মিষ্টি হাসলো)
-আচ্ছা তো থাকো এখানে
-হুমমম
,,
ফারিহা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুভ ঘুমিয়ে যায়। পরদিন সকাল বেলা..
“ঐ ব্যাটা ঐ এখানে কি উঠ”
শুভ চোখ খুলে দেখে একটা মেয়ে তার পাশে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটা দেখতে এতই সুন্দরী ছিলো যে শুভ ঘুম ঘুম চোখ নিয়েও কিছুসময় তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকায় মেয়েটি আরও রেগে যায়। রাগে শুভর দিকে একবার লাঠিও উঠায় তবে আঘাত করেনি।
-এই তুই কোন এলাকার পাগল? এখানে কি?(মেয়েটি)
-না ভুল বুঝছেন আমি পাগল না আমি এই বাড়িতে আসছি (শুভ)
-আবার মিথ্যে বলিস দিবো একটা মাইর যা এখান থেকে
-শোনেন শোনেন ফারিহা আপু এখানে থাকতে দিয়েছে
,,
এবার মেয়েটা একটু ঠান্ডা হলো।
-ওহহ তা আপনাকে বাইরে থাকতে দিয়েছে কেনো? (মেয়েটি)
-ভেতরে জায়গা নেই (শুভ)
-অবশ্যই আছে, আর সেটা আমার জন্য
-ওহহ
-তো আপনাকে আগে কখনো দেখি নি, আপনি বাড়ির কাজের লোক নাকি?
-না এটা আমার নানুর বাড়ি
-কিহহ!!
-হুমমম
-ওয়েট ওয়েট আমি আপুকে নিয়ে আসতেছি
,,
মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে ফারিহাকে ডেকে আনলো। ফারিহা তখনও ঘুম থেকো উঠেনি। এ মেয়েটি আবার এমন মানুষ যখন যা মনে চায় তাই করে। বড় ছোট কিছুই দেখে না সে। ফারিহাও জানে মেয়েটা কেমন।
,,
ফারিহা আর সেই মেয়েটি এখন শুভর সামনে। ফারিহা সবকিছু মেয়েটিকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর মেয়েটি হা করে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।
-সরি সরি সরি ভাইয়া বুঝতে পারিনি আমি ইরা, আপনার ছোট মামার ছোট মেয়ে। ঢাকাতে লেখাপড়া করি, আমার আসার কথা গতকাল বাস ফেইল মেরে ট্রেনে করে চলে আসছি তাই লেট হয়েছে
-ওহহহ
-তোর সাথে যেন কার কার আসার কথা (ফারিহা)
-আপু ওরা আসছে তো
-কোথায়?
-আমার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি
-হুমম সকাল সকাল এসে আমার ঘুম টা অকারণে ভাঙালি
-যাও আবার ঘুমাও
-আর ঘুম হবে না
-তাহলে জেগে থাকো
-তোর সাথে কথার পারা যাবে না
-তুমি হুদাই কম্পিটিশন লাগাতে আসো
-হুহহ থাক তুই
-হুহহ যাও তুমি
ফারিহা চলে গেলো….
-তা ভাইয়া কি অবস্থা আপনার বউ বাচ্চা কই??(ইরা)
-আমি বিয়ে করিনি (শুভ)
-ওহহ আচ্ছা। আচ্ছা এতদিন আসলেন না কেনো?
-এমনি মন চায়নি
-হঠাৎ মন চাইলো কেনো?
-মানে আমি নিজেও জানি না
-শোনেন আমার মতো মেয়ের কাছে মিথ্যা বলতে পারবেন না
-তাই?
-হ্যাঁ আপনি এখানে কি জন্য আসছেন আমি এখনই বলে দিতে পারবো
-তো বলেন
-জমির জন্য, ভুল বললাম কি? (পরের কথাটা ফিসফিস করে বলল)
-…(শুভ তো হতবাক)
-কি হলো শকড নাকি!
-আরে নাহহ নানু বাড়ি দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে আসছি
-এটা আপনার মিথ্যে কথা মনে কি চলছে সেটা আমি জানি। আমি প্রথম দেখেই সব বলে দিতে পারি
-হ্যাঁ সেই জন্য তো আমাকে প্রথম দেখে পাগল বলেছিলেন (শুভ কথাটা বলে বাড়ির মধ্যে গেলো)
তারপর ইরা সেই বেঞ্চে বসে হতাশ হয়ে বলল..
-ছেলেটার কাছে হেরে গেলাম। আল্লাহ এ দিন কেনো দেখতে হলো।
,,
বেঞ্চ থেকে উঠেই ঝড় শুরু করে দিলো। এর সাথে দেখা ওর সাথে দেখা। একে চিমটি মারা, মাথায় টোকা দেওয়া চেঁচামেচি তো আছেই। সকাল সকাল পুরো বাড়িটা লণ্ডভণ্ড করে ছাড়লো। যে ঘুমিয়েছিল সে ঘুমের মধ্যে টের পেয়েছে বাড়িতে কালবৈশাখীর উপস্থিতি!
,,
এদিকে শুভ ফ্রেশ হওয়ার জন্য ফারিহার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে।
বাইরে থেকে একবার ডাকতেই ফারিহা দরজা খুলল..
-কি হয়েছে? (ফারিহা)
-সকাল হয়েছে হাত মুখ তো ধুতে হবে সে জায়গা কই? (শুভ)
-ওহহ নো তোমার তো সেই জায়গা নেই। ঠিক আছে আমার টা ব্যবহার করো
-সেই জন্যই তো আসা আর পাশের রুম থেকে আমার ব্যাগ টা উদ্ধার করে নিয়ে এসে আপনার রুমে একটু রাখেন
-হুমম যাও যাও রাখছি
-…(শুভ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো)
,,
ফারিহা পাশের রুমে থেকে শুভর ব্যাগ নিয়ে এসে নিজের রুমে রাখলো। কিছুসময় পর ফারিহার রুমে ইরার প্রবেশ। ইরার রুমের ওয়াশরুম ব্যবহার করছে তার বান্ধবী গুলো আর তাই সে তার আপুরটাতে এসেছে।
,,
রুমে এসে দেখে আপু নেই। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ। ইরা বুঝতে পারলে আপু ভেতরে আছে। দরজায় দুবার টোকা দিয়ে বলল..
-এই আপু তাড়াতাড়ি করো আমি গোসল করে নিবো (ইরা)
-…(ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসছে না কারণ ভেতরে তার আপু নেই,আছে শুভ)
,,
শুভ ভেতরে ঝটপট হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে বাইরে এলো। বাইরে এসে দেখে ইরা গোসল করার জন্য রেডি। নিজের অসাবধানতায় শরীরের পোশাক এলোমেলো ছিলো।
-হ্যাঁ আপু তো…(ইরা দেখলো এটা আপু না। ঝটপট নিজের দিকে তাকালো ওড়না টা ঠিকঠাক করে নিলো।)
,,
দুজনেই বেশ লজ্জা পেয়েছে। শুভ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইরা বলল..
-আ আ আপুর রুমে আপনি কেনো? (ইরা)
-আমি এখানেই ফ্রেশ হই(ফারিহা)
-কেনো আর জায়গা নেই?
-থাকলে তো এখানে আসতাম না
-ঘোড়ার ডিম এখন বাইরে যান
-হুমমম
-এই শোনেন
-হ্যাঁ বলেন
-আমার সাথে যে আপনার এভাবে দেখা হয়েছে আপুকে বলবেন না। যদি আমাকে আপু কিছু বলে তো বলব আমি রুমে এসে কাউকে পাইনি। আর আপনিও বলবেনরুমে কাউকে দেখেননি ওকে?
-ঠিক আছে
-আর গোসল টা সেড়ে নেই আপনার খবর আছে (বিড়বিড় করে বলল)
-আমি কি করলাম?
-আরেহহ সব কথার কেনো উত্তর দিতে হবে, এটা আমার মনের কথা
-তো মুখ দিয়ে বলেন কেনো?
-আপনও যাবেন? নাকি মাইর শুরু করবো
-যাচ্ছি যাচ্ছি
,,
শুভ বাইরে আসতেই দেখলো ফারিহা প্লেটে খিচুড়ি নিয়ে আসছে। কাছে এসে প্লেট টা শুভর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল..
-আমার রুমে বসে খাও আর টেবিলে পানিও আছে (ফারিহা)
-আমি রান্নাঘরে যাই (শুভ)
-ওখানে অনেক লোকজন তুমি রুমে বসে খাও
-ঠিক আছে
,,
শুভ তো জানে রুমে কে আছে। ইরা ওয়াশরুম তবুও ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলো শুভ। প্রথমে জগ খুঁজতে লাগলো টেবিলের উপর চোখ যেতেই জগটা চোখে পড়লো। টেবিলের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো আর খাওয়া শুরু করলো।
,,
এদিকে ইরা গোসল করা শেষে শরীর মুছবে কিন্তু তোয়ালে বা পড়নের পোশাক কোনোটাই আনা হয়নি। সবগুলো বিছানার উপর রেখে আসছে।
-আরেহহ খোদা ওর সাথে ঝগড়া করতে করতে জামা আর তোয়ালে আনতেই ভুলে গিয়েছি। এখন এই ভেজা অবস্থায় আবার বাইরে যেতে হবে।
,,
ইরা দরজা খুলতেই দেখতে পায় শুভ টেবিলে বসে খাচ্ছে।
-আরে শয়তানটা এখনো যায়নি! ও এখানে বসে খাচ্ছে নিশ্চয়ই আমাকে দেখার জন্য। খাবার খাওয়ার এত জায়গা থাকতে ও এখানে বসে খাবে কেনো? কি করি এখন (ইরা)
,,
ইরা দরজা টা খুলে শুধু মাথা বের করে শুভকে ডাকলো।
-ওই (ইরা)
-…(শুভ পেছনে তাকিয়ে দেখে ইরা দরজা দিয়ে মাথা বের করে ডাকছে)
-আপনার খাওয়ার আর জায়গা নেই তাই না?
-আপু বলল..
-রাখেন তে আপনার আপু৷ বিছানার উপর আমার জামা আর তোয়ালে টা আছে দিয়ে যান
-ঠিক আছে
-কাছে আসার আগে চোখ বন্ধ করবেন তাকিয়ে থাকা যাবে না
-হুমমম
,,
শুভ চোখ বন্ধ করে নিয়ে ইরার হাতে জামা আর তোয়ালে টা দিলো। ইরা তোয়ালে টা হাতে নিয়ে বলল..
-সবকিছুই আপুর উপর দিয়ে চালিয়ে দিলে হয় না৷ আমি সব বুঝি। প্রথমে আমাকে দেখেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিলেন এখন আবার গোসল করা শেষে আমি দেখতে কেমন সেটা দেখতে এখানে বসে খাবার খাওয়া হচ্ছে তাই না?
-না আপনি ভুল বুঝতেছেন
-ভুল না সঠিক, একটু পরে টের পাবেন। করলার জুস খাওয়ালেই পেট থেকে সত্যি কথা বের হবে…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here