এক টুকরো মেঘ,Part : 9
Write : Sabbir Ahmed
এসব ভাবতে ভাবতে শুভকে আর দেখতে পায়না ফারিহা। চোখের পানি মুছে তার ছোট্ট পুকুরটার দিকে তাকালো আর কি যেন ভেবে মুচকি হাসলো।
,,
শুভ ফিরলো তার চিরচেনা জায়গায়। বাসায় ফিরেই চাচার সাথে দেখা। হাসি মুখে সালাম দিয়ে কথা শুরু করলো। চাচার আর বাসার খোঁজ নেওয়ার পর নিজের নানু বাড়ির গল্প শোনালো।
,,
-বাহহ ভালোই হলো তোর(চাচা)
-হ্যা সবই আপনার জন্য (শুভ)
-বাদ দে, শোন ঐ গ্যারেজে দেখা কর। তোর মালিক আসছিলো আমার কাছে
-ঠিক আছে
,,
শুভ গ্যারেজে দেখা করে বাসায় আসলো। ওখানে বলে আসলো আগামীকাল থেকে সে নিয়মিত কাজ করবে। শুভ বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকলো। রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিস গুলো ঠিক করে নিলো।
,,
হাতের দু একটা কাজ করতে না করতেই বাইরে গুড়ুম গুড়ুম মেঘের ডাক৷
-আহা বৃষ্টি হবে মনে হয়৷ কই ভাবলাম একটু জামা কাপড় ভিজাবো সেটা আর হলো না..
,,
শুভ রুমের কাজ করতে করতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। শুভর রুমের টিনের চালে একটা ফুটো আছে সেখানে একটা বালতি রেখে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। আপাতত তার কাজ শেষ। তার এই রুম টা দোতালায় তবে দোতালার ছাদ টা টিনের তাও আবার কয়েকটা ফুটো আছে তার মধ্যে একটা শুভর রুমে।
,,
শুভ শুয়ে ভাবনার জগতে এখন! নানু বাড়ির সবার কথা মনে করছে। সবার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বিশেষ করে ফারিহার কথা। ফারিহার সেই চুম্বন এর কথা মনে পড়তেই শুভ চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো।
,,
বিছানায় শুয়ে শুভর আরও কিছু সময় কাটলো। হঠাৎ তার কান কিছু একটা শুনতে পেলো, মস্তিষ্ক সেখানেই আটকে গেলো। পানি টিপ টিপ করে পড়ার শব্দ। কোথায় যেন শব্দ টা শুনেছে সে। হঠাৎ তার মনে হলো ফারিহার সেই ছোট্ট পুকুরে এইরকম পানি পড়ার শব্দ শুনেছিলো সেটা মনের ভেতর একদম গেঁথে গেছে। কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে তার৷
,,
এদিকে ফারিহার দিন আবার ব্যস্ততায় ভরে উঠে। কলেজ আর বাড়ি সামলাতে তার সময় কেটে যায় তবে তার শুভকে সে ভোলেনি। সে অপেক্ষা করছে এক সপ্তাহ পর এসে শুভ ঠিকই দেখা করে যাবে তার সাথে। বুকে এই আশা টা বেঁধে নিয়েই সময় পার করছে সে৷
,,
সময় যেতে যেতে এক সপ্তাহ পার হলো। শুভ তার চাচা কে না জানিয়ে ফারিহার সাথে দেখা করতে গেলো। সেদিন ছিলো সপ্তাহের শেষ দিন। শুভ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজে নিয়ে গিয়ে একটু পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে বের হয়। ফারিহাকে দেওয়ার জন্য কিছু চুরি আর চকলেট সাথে নেয়।
,,
ঐদিকে ফারিহা বেশ ভয়েই আছে, সে ভাবছে শুভ আসবে কি না? এমন ভাবনাতে তার প্রতিটা মূহুর্ত পার হচ্ছে।
,,
শুভ চলে আসে ফারিহার কলেজে, কলেজ মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ছুটির জন্য। শুভ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বার বার চুল ঠিক করে, শার্টের হাতা গোছায়, মুখের ঘাম মুছতে থাকে। ফারিহার সামনে যেন একটু স্মার্ট ভাবেই দাঁড়ানো যায় সেই চেষ্টা করে। শুভর এমন হাব ভাব দেখে বোঝা যায় “ভালবাসা স্মার্ট হতে শেখায়”
,,
কলেজে ছুটি হওয়ার পর ফারিহা ক্লাস রুম থেকে বাইরে আসে। সে বাইরে এসে আশে পাশে তাকাতে থাকে, কারণ আজ শুভ আসার কথা।
আর হঠাৎ-ই ফারিহার সামনে সেই বোকাসোকা ছেলেটি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়৷
,,
ফারিহার চোখে চোখ রেখে বলে…
-কেমন আছেন?? (শুভ)
,,
ফারিহা কিছু বলল না তখন। শুভর হাত ধরে নিয়ে দূরে একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ায়। গাছটা একটা বড় পুকুরের পাড়ে। ফারিহা এবার শুভর হাত ছেড়ে দেয়। তারপর ফারিহা শুভর গাল ধরে মাথাটা একটু নিচে নামিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে….
-তোমার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?? (ফারিহা)
-না সমস্যা হয়নি, তবে অনেক গরম পড়েছে আজ (শুভ)
-এখানে একটু বাতাস আছে
-হুমমম কেমন আছেন?
-ভালো, তুমি ভালো আছো??
-হুমমম ভালো (শুভ লাজুক ভাব নিয়ে কথা বলছিলো কারণ একটু আগে ফারিহা তার কপালে চুমু খেয়েছে)
,,
শুভ তার হাতের ব্যাগ টা ফারিহার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল..
-ব্যাগে কিছু চুড়ি আর চকলেট আছে আপনার জন্য এনেছি (শুভ)
-তুমি কিভাবে জানলে এগুলো আমার প্রিয় (ফারিহা)
-আপনর রুমে এ দুটো জিনিস বেশি ছিলো
-হুমমম
-একটা কথা বলি আপনাকে?
-হ্যাঁ বলো
-আমি আপনার জন্য কাজ করতে পারছি না, কাজে শুধু ভুল হচ্ছে। এখন শুধু আপনার কথা মনে পড়ে
-এহহহ এটা তোমার দোষ তুমি মনে করো কেনো?
-আপনি ভালবাসেন তাই তো মনে পরে
,,
ফারিহা এক গাল হেসে নিলো।
-আচ্ছা তাহলে আপনি বাড়ি যান, আমি চলে যাই (শুভ)
-সে কি? কোথায় যাবে তুমি? (ফারিহা)
-আমাকে ফিরতে হবে তো
-আরে নাহহ আমার বাড়িতে চলো
-উহুমমম যাওয়া যাবে না
-কেনো?
-উনারা কেউ আমাকে ভালো ভাবে দেখবে না তাই
-আমার দিকে তাকাও একটু
-….(শুভ ফারিহার চোখের দিকে তাকালো)
-সব কিছু আমি সামলে নিবো
-না শোনেন আপনি তো বলেছিলেন শুধু এসে দেখা করে যেতে, বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেননি
-তাহলে যাবে না?
-না
-আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না।
-আপনি রাগ করলেন না তো?
-আরে নাহ রাগ করিনি
-দেখে তো তাই মনে হচ্ছে
-না পাগল রাগ করিনি
-তাহলে হঠাৎ করে আপনার মন খারাপ হয়ে গেলো কেনো?
-তুমি যে একটু পরে চলে যাবে
-ওহহ এই জন্য মন খারাপ?
-হুমমম
-আপনি তাহলে আমার সাথে চলেন (শুভ একটু মজা করার জন্য বলল)
-তোমার সাথে কোথায় যাবো?
-কেনো? আমার বাসায় আমি যেখানে থাকি
-তুমি সাথে নিবা আমাকে?
-হ্যাঁ নিবো না কেনো? আমার ওখানে গেলে আপনার ভালোই লাগবে। বৃষ্টি নামলে বৃষ্টি দেখার জন্য বাইরে যেতে হবে না৷ আমার রুমের টিনের চাল ফুটো সেখান দিয়ে টিপ টিপ করে পানি পরে
-হা হা হা হা হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না
-হাসলেন কেনো?
-তোমার বর্ননা শুনে, এতো কিছু বলতে হবে না তো। আমি তোমার সাথে গেলে এমনি যাবো
-আমি আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, সত্যি আপনি অনেক ভালো। আপনি আমার সাথে থাকলে অনেক ভালো হবে…
-…(ফারিহা শুভর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
-সত্যি আপনি অনেক ভালো (শুভ আবার বলল)
-আমি ভালবাসি তোমাকে তাই আমি ভালো?
-না না ভালোবাসার জন্য বলিনি, আপনি এমনিতেই অনেক ভালো। আর আমাকে ভালবাসেন তাই একটু বেশি বলেছি
-পাগল, চলো বাড়ি যাই
-আমি তো মানা করলাম
-আমার যে কিছু পাওনা রয়ে গেছে, এসব তো এখানে দিতে পারবে না। তাই বাড়িতেই যেতে হবে
-কি পাওনা?
-ঐ ঐ সেদিন রুমে তোমার মুখে যে কি যেন দিয়ে ভরিয়ে দিলাম মনে নেই?
-ওহহ হ্যাঁ মনে পড়েছে
-আজ ও আসার পরে দিলাম তাই না?
-হুমম এভাবে এখানে না দিলেও পারতেন
-তুমি আমার সামনে এসে ঐ যে একটা হাসি দিয়েছো তাতেই আমি শেষ। আমি খুশি হয়েই ওটা দিয়েছি
-হুমমম, আচ্ছা ওগুলো দেওয়ার জন্য কি বাড়িতে যেতেই হবে?
-কথা দিয়েছো৷ কথা রাখবে কি না তোমার ব্যাপার আমি কিছু বলব না।
-আচ্ছা আমি কথা না রাখলে কি হবে?
-আমার মন খারাপ হবে
-তাহলে চলেন বাড়িতে যাই
,,
দুজন বাড়িতে আসতেই, বাড়ির সবার মধ্যে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় উঠে। ফারিহা হয়তো এই সমালোচনার-ই অপেক্ষা করছিলো। ফারিহা সব বুঝতে পেরে শুভ কে তার রুমে রেখে আসে। তারপর বাড়ির মধ্যে পারিবারিক আলোচনায় বসে যায়৷ ফারিহার সেই আলোচনায় বলে…
-শুভকে আমি নিয়ে আসছি, তোমরা তাকে কিভাবে দেখো বা দেখবে সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না৷ শুভ এই বাড়ির মেয়ের ছেলে কি না সেটাও প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই। আমি কিছু লুকাবো না সরাসরি বলছি আমি ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছি, তোমরা যদি পারো আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করো (ফারিহা)
বাড়ি ভর্তি সবাই চুপ, হঠাৎ ফারিহার ছোট চাচা বলে উঠলো..
-এরকম হলে তো সবাই খারাপ বলবে
-আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেখানে বাইরের লোকে কি বলবে এমনটা বিবেচনায় আনিনি। (ফারিহা)
-তোমার বিয়ে আমরা যার তার সাথে দিতে পারিনা, আর ছেলেটাকে আমরা কেউ পছন্দ করিনা, তোমার মা ও তো করেনা
-যদি আমি সবার অবাধ্য হই
-ছেলেটাকে নিয়ে বাইরে থাকতে হবে (ফারিহার মা)
-তুমি অনেক বুদ্ধিমতী আর চৌকস একটা মেয়ে আমরা আশা করে এমন কাজ তোমার দ্বারা হবে না
-আমিও তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না..
-তাহলে আমাদের কিছু করার নেই
-আমারও কিছু করার নেই…
চলবে