এক টুকরো মেঘ,Part : 10

0
3617

এক টুকরো মেঘ,Part : 10
Write : Sabbir Ahmed

-আমিও তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না (ফারিহা)
-তাহলে আমাদের কিছু করার নেই(চাচা)
-আমারও কিছু করার নেই
,,
তারপর সবাই চুপ! শুভ ফারিহার রুম থেকে বাইরে চলে আসে৷ আড়াল থেকে সবার কথা শুনে সামনে আসলো।
-অপরাধ মনে না নিলে আমি কিছু কথা বলতে পারি?? (শুভ)
-…(শুভর কথায় কেউ সাড়া দিলো না)
-তুমি বাইরে আসছো কেনো? (ফারিহা)
-আমার জন্য আপনাদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে
-তোমাকে কে বলল? সমস্যা আমি সৃষ্টি করেছি সমাধান আমি-ই করবো, তুমি রুমে যাও
,,
ফারিহার কড়া কথার সামনে শুভ আর কথা বাড়লো না সোজা রুমে চলে গেলো। ফারিহাও উঠে শুভর পিছু পিছু রুমে গেলো।
-আপনি সবার সাথে এমন করে কথা বলছেন, উনারা তো রাগ করছে (শুভ)
-তুমি বুঝবে না বড়রা একটু এমনি হয় (ফারিহা)
-আমাদের একসাথে থাকাটা মনে হয় হবে না
-যত যাই হোক আমি তোমাকে ছাড়ছি না। আমার ফুপির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য হলেও তোমাকে রাখবো
-আমি একটা কথা বলি?
-বলো
-আপনি তো আমাকে ভালবাসেন তাই না?
-হুমম
-তাহলে চলুন আপনি আমার সাথে থাকবেন
-চলো
-এখনি?
-হ্যাঁ তুমি এখন বললে এখনি।
-আমি তো মজা করলাম
-পরীক্ষা করলা তাই না?
-না একটু দেখলাম আপনি কি বলেন
-বাদ দাও এগুলো এখন চলো প্রেম করবো
-কিভাবে
-ঐ যে ছোট্ট পুকুর টা আছে না?
-হুমমম
-ঐ টার দেয়ালে বসে, দুজন হাতে হাত রেখে গল্প করবো
-আমার তো ভয় করছে, মামারা যদি কিছু বলে
-তুমি যে কি না! চলো তো ছাদে যাবো
,,
ফারিহা শুভ কে নিয়ে ছাদে আসলো।
-তুমি এই পাশে দাঁড়াও আমি ছাদটা ঝাড়ু দিয়ে নেই (ফারিহা)
-আমি আপানকে সাহায্য করি? (শুভ)
-নাহহ তুমি বসে থাকো আমি করছি
,,
ফারিহা ঝাড়ু দিতে দিতে বলল..
-দেখছো মেঘ ডাকছে, মনে হয় বৃষ্টি হবে (ফারিহা)
-আমারও তাই মনে হয় (শুভ)
-তোমার কাছে আমার এক টুকরো মেঘ আছে
-আমার কাছে মেঘ!
-হ্যাঁ তুমি যতটুকু আমাকে ভালোবাসো ঐ টুকই আমার মেঘ
-তাহলে আমার একই, আপনি যতটুকু আমাকে ভালবাসেন ঠিক ততটুকুই আমার এক টুকরো মেঘ
-এহহহ আমার টা শুনে শুনে বলে
-আমি যে আপনারই সেই জন্য
-বাব্বাহ তুমি তো দেখছি কথা শিখে গেছো
-আমি কথা বলতে পারি, কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে ভেবে চিন্তে বলি
-কেনো?
-আপনাকে দেখে ভয় করে
-হুহহ কপাল আমার, এত ভালবাসার পরেও আমাকে ভয় করে
-আমি যেই ভয়টা পাই সেটা আলাদা
-আলাদা কেমন বলতে হবে
-উহুমমমম
,,
ফারিহা উঠে ঝাড়ু দেওয়া বন্ধ করে মাজায় হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
-এই কেমন ভয় সেটা বলতে হবে না হলে যেই পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়েছি এই পজিশনে মাইর হবে (ফারিহা)
-বলছি বলছি। এই মনে করেন আমি ভুল করার পর যদি আমার সাথে আর কথা না বলেন, আমাকে যদি আর না ভালবাসেন এইগুলো নিয়ে ভয় হয়
-আচ্ছা গাধা বলো তো, আমি যদি তোমাকে আর ভাল না বাসি তুমি কি করবে?
-আমি একটা বড় বাড়ি বানাবো এরকম ছাদওয়ালা বাড়ি। তারপর সেই ছাদে আপনার মতো করে ছোট্ট একটা পুকুর বানাবো। সেই পুকুরের পাশে বসে আপনার কথা ভাবতে থাকবো
-ওরে বাবা রে এত কিছু করবে
-হুমম আমি তো আপনাকে অনেক ভালবাসি। আর সেদিন এর পর থেকে তো শুধু ওগুলো নিতে মন চায়
-ওগুলো কি?
-…(শুভ ফেঁসে গেছে। সে সেদিনের চুমুর কথা মনে করেই কথাটা বলেছে। ফারিহার কথার আর উত্তর দিতে পারছে না)
-এই বলো
-এটা বললে আপনি আমাকে জবাই দিবেন
-তুমি যে কেন এত ভীতু
,,
শুভ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো ফারিহা যে তাকে চুমু দিয়েছিল সেই কথা।
শুভর এমন ইশারায় ফারিহা হাসতে হাসতে শেষ!
-সত্যি তুমি আমাকে বিয়ের পরেই হাসাতে হাসাতেই মেরে ফেলবে (ফারিহা)
-আমি কি হাসির কথা বলেছি? (শুভ)
-তো এই কথা মুখে বললেই হয় এত ভয় করার কি আছে?
-কিছু না আপনি কাজ করেন৷
-হুমমম
,,
ফারিহার ছাদ পরিষ্কার করা শেষ হতে না হতেই ঝড়ো বাতাস শুরু হলো।
-বাইরে অনেক ধূলো ভেতরো চলো (ফারিহা)
-নাহহ একটু বাইরেই থাকি ভালো লাগছে (শুভ)
-ভিজবে নাকি?
-না বৃষ্টি শুরু হলে যাবো
-ওহহহ
,,
ফারিহা ঝাড়ু পাশে রেখে পুকুরের পানিতে হাত ধুঁয়ে নিলো।
-জানেন আমার রুম হয়তো বৃষ্টির পানিতে ভরে যাবে (শুভ)
-কেনো? (ফারিহা)
-আমি তো চাচাকে কিছু বলে আসিনি, আর রুমের চাবি আমি সাথে নিয়ে আসছি
-বাহহ রুমে গিয়ে সাঁতার কাটবে
-তাই?
-হুমমম চলো তুমি গোসল করবে
-না আমি আজ গোসল করবো না
-এহহ কি বলে! চলো চলো
-তাহলে বৃষ্টিতে ভিজি?
-জ্বি না ঠান্ডা লেগে যাবে
-আপনি বড়দের মতো শাসন কেনো করেন
-কারণ আমি তোমার বড় তাই
-ওহহ তাহলে ঠিক আছে
,,
শুভ রুমে এসে নিজের গোসল টা সেরে নিলো। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। শুভর গোসলের সময়টা ফারিহা তার রুম পরিপাটি করতে ব্যস্ত ছিলো।
,,
শুভ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফারিহার কাজ করা দেখে সে ও একটু হেল্প করে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসতে থাকে রুমের মধ্যে অন্ধকার বাড়তে থাকে। ফারিহা শুভকে নিয়ে তার জানালার পাশে বসে যায়। দু’জন দুজনের হাতে হাত রেখে গল্প করা শুরু করে।
-তোমার হাত খসখসে কেনো? (ফারিহা)
-আমি যে যন্ত্র গুলো দিয়ে কাজ করি সেগুলো লোহার তাই শক্ত হয়ে গেছে (শুভ)
-আমাকে তো এত শক্ত হাত দিয়ে আদর করতে পারবে না
-তাহলে?
-কাজ পরিবর্তন করতে হবে
-আমি তো আর কোনো কাজ পারি না
-কাজ পারো আর না পারো চেঞ্জ করতেই হবে
-ঠিক আছে
-চাপ নিয়ো না, আমি আছি তো (ফারিহা মুচকি হাসলো)
-হুমম, আজ তো আমাকে যেতে দিলেন না, চাচা তো টেনশন করবে, আবার এ বাড়ির কেউ আমাকে ভালো চোখে দেখছে না। চলে গেলে এই দুই সমস্যা থেকে বেঁচে যেতাম
-তুমি তোমার সমস্যা বাঁচাতে ব্যস্ত আর আমার ভালবাসার দিকে খেয়াল রাখবে না তাই না?(ফারিহা তার হাত সড়িয়ে নিলো)
-না নাহ আমি এমনটা…
-বলতে হবে না বুঝি আমি
-কোথাও যাবো না আমি, আপনি মন খারাপ কইরেন না
-….(ফারিহা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি ফেলছে)
-এই যে এদিকে তাকান
-…………………
-আমি যাবো না, আপনি যতদিন বলবেন ততদিন থাকবো। আমি সব সহ্য করতে পারি, আপনার মন খারাপ আমি সহ্য করতে পারি না
-….(ফারিহা তাও কিছু বলছি না)
,,
শুভ সাহস করে তার হাতটা ফারিহার কাঁধে রাখলো। হাত রাখতেই ফারিহা সড়িয়ে দিলো। শুভ বুঝলো বেশ অভিমান করেছে সে। নিজের চেয়ার টা সড়িয়ে ফারিহা যে দিকে তাকিয়ে আছে সেইদিকটাতে
গিয়ে হাঁটু গেরে বসলো।
-এই যে দেখেন আমি এখন আপনি না তুমি করে বলছি। তুমি রাগ করে থাকলে আমার অনেক খারাপ লাগে। তোমাকে তো বলেছি তাও তুমি বুঝো না৷ আমার জীবনে আমি অনেক মন খারাপ করে থেকেছি, কেউ আমার রাগ ভাঙাতে আসেনি তখন কষ্ট লেগেছে অনেক। আমি খুব করে চাইতাম কেউ এসে আমার মন ভালো করে দিক, পরে নিজের ভাগ্যের দিকে তাকালাম আর চোখ বন্ধ করে ভাবলাম এমনটা সম্ভব না। কিন্তু পরে তোমাকে যখন দেখলাম আমার মনে হলো আমার মন খারাপ হলে তুমি অনেক কিছু বলে আমার মন ভালো করে দিবো। এখন সেই তুমি যদি মন খারাপ করে বসে থাকো তাহলে আমার কেমন লাগে বলো?
,,
ফারিহা চোখের পানি মুখে ভ্রুঁ কুঁচকে শুভর দিকে তাকালো..
-ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?(শুভ)
-তুমি মনে মনে এই প্ল্যান করেছো, আমি তোমার শুধু মন ভালো করে দিবো তাই না? আর তুমি ঘন ঘন মন খারাপ করবে (ফারিহা)
-উহুমমম ঘন ঘন না হঠাৎ
-আমি যে অন্য কিছু চাই
-কি সেটা?
-তোমার মন খারাপ হলে তুমি প্রথমে আমার কাছে এসে মন খারাপ এর কারণ টা বলবে, যদি অকারণে মন খারাপ হয় তাহলে তোমাকে নিয়ে শুয়ে পড়বো। তুমি আমার বুকের মধ্যে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকবে। আর বাচ্চাদের মতো মন খারাপ এর কারণ গুলো বলবে। আমি আমার প্রত্যেকটা স্পর্শে তোমার মন ভালো করে দিবো। আমি চাই না আমি থাকতে তোমার অকারণে মন খারাপ হোক
-আর যখন কারণে মন খারাপ হবে?
-পাগল! যখন কোনো কারণে মন খারাপ হবে তখন দু’জন মিলে চেষ্টা করবো ঠিক করার জন্য, সমস্যা খুঁজে সমাধান বের করবো
-আর ঐ যে বললেন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকা ওমন থাকতে দিবেন?
-কেনো??
-আমার খুব ভালো লাগবে। আপনার মন খারাপ থাকলে আপনিও আমার কাছে অমন করে থাকবেন। আপনার মন খারাপ তো আমি দেখতেই পারি না আমার চোখে পানি চলে আসে
,,
ফারিহা শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…
-আমার মনের কথা গুলো সব গড়গড় করে বলে দিলে (ফারিহা)
-আমি যা বলেছি সব আপনার মনের কথা ছিলো? (শুভ)
-হুমম সেগুলো আমার ইচ্ছে আর স্বপ্ন, আর আমি যেমনটা চাই, তুমি ঠিক তেমনি
-আর আমি যা কখনো আশা করেনি তাই পেয়েছি
-এহহহ
-সত্যি আমি আপনার মতো এত মিশুক কাউকে পাবো ভাবিনি
-ভালবাসার মানুষ গুলো এমনই হয় পাগল
-ওহহহ
-এখন আমার ওগুলো দাও
-কোন গুলো?
-এই মনে নেই? আমার কপালে দু-গালে আর নাকে
-এখন??
-হুমম
-এগুলোর কথা শুনলেই আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করে..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here