খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২

0
5388

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
তামিম হঠাৎ করেই হালকা নড়েচড়ে উঠলো আর নীলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর ঘুমের মধ্যেই নীলার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো…

–ওহ সোনা কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ.? জান কতক্ষণ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর তোমার এখন আসার সময় হলো।। এতক্ষণ যখন এসেই পরেছ তাহলে আর এতো সহজে যেতে দিচ্ছি না তোমায়।। আমার জানপাখিটা, খুব ভালোবাসি তোকে…

হঠাৎ তামিমের এমন কথা শুনে নীলা অনেকটাই চমকে উঠলো সাথে অনেক ভয়ও পেল।। নীলা তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো তামিম চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে।। তার মানে কি তামিম ঘুমের মধ্যে থেকেই কথাগুলো বলেছে নাকি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে.?

নীলাঃ নাহ ভাইয়া তো কখনো এতো রাত জাগেন না।। তাহলে এখন নিশ্চয়ই ভাইয়া ঘুমের মধ্যেই আছেন।। আমার কাজ তো শেষ এখন আমি রুমে চলে যাই নাহলে ভাইয়া যদি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে যান আর আমাকে এইখানে দেখে ফেলেন তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।। ভাইয়া যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি উনার রুমে কেন.? তাহলে আমি কি জবাব দিব ভাইয়াকে.? নাহ এখন আমার রুমে চলে যাওয়াই ভালো।। দ্রুত কেটে পর নীলা (মনে মনে বললো কথাগুলো)।।

তারপর নীলা যেই তামিমের উপর থেকে উঠতে যাবে তখনই তার মনে হলো কে যেন তাকে ধরে রেখেছে যার কারণে সে উঠতে পারছে না।। নীলা ভালো করে খেয়াল করে দেখলো তামিমই তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যার কারণে সে উঠতে পারছে না।। নীলা পরলো এখন আরেক বিপদে।। এখন সে কীভাবে তার রুমে যাবে.? উঠতে গেলেই তো তামিম ভাইয়ার হাত সরাতে হবে।। তখন যদি তামিম ভাইয়া ঘুম থেকে উঠে পরেন তাহলে তো উনি আমাকে দেখে ফেলবেন।। এখন আমি কি করবো.?

নীলা অনেক্ষণ ধরে ভাবার পর হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।। এখন এই বুদ্ধি কাজে লাগিয়েই তাকে এইখান থেকে বের হতে হবে, এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।। নীলা আর কোনোকিছু না ভেবে তার বুদ্ধি মোতাবেক তামিমের গায়ে সুরসুরি দিতে শুরু করলো।। এতে তামিম কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো কিন্তু নীলাকে ছাড়লো না।। নীলাও হাল ছাড়লো না, সে তার মতো করে তামিমের গায়ে সুরসুরি দিয়েই যাচ্ছে।। কিন্তু তবুও তামিম নীলাকে ছাড়ছে না।। এদিকে নীলারও হাত ব্যাথা করছে তামিমের গায়ে সুরসুরি দিতে দিতে।। তারপর নীলা সুরসুরি দেওয়া বাদ দিয়ে রেগে গিয়ে তামিমের ঘাড়ের মধ্যে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল।। কামড় খেয়ে তামিম ঘুম থেকে চিৎকার মেরে উঠলো।। এর মধ্যে সে নীলাকেও ছেড়ে দিল।। ছাড়া পেয়ে নীলাও নিজের জীবন বাঁচাতে দৌড়ে তামিমের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।।

তামিম ঘুম ঘুম চোখে রুমের চারপাশে তাকাতে লাগলো।। কিন্তু রুমের মধ্যে সে কাউকেই দেখতে পেল না।। সে তারাতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে রুমের লাইট অন করলো।। এবার রুমটা আলোকিত হয়ে উঠলো।। তামিম মনে মনে বললো, রুমের মধ্যে তো কেউ নেই তাহলে আমাকে ঘুমের মধ্যে কামড় দিল কে.? রুমে ভূত টূত এলো না তো.! না না ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই, সব মনের ভুল।। কিন্তু আমাকে কামড় দিল কে.?

এদিকে তামিমের চিৎকার শুনে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেল।। সবাই যার যার রুম থেকে বেরিয়ে দ্রুত তামিমের রুমে চলে আসলো।।

তামিমের মাঃ কি হয়েছে বাবা তুই এইভাবে চিৎকার দিলি কেন কি হয়েছে তোর.? (কিছুটা অস্থির হয়ে)

তামিমের বাবাঃ ঘুমের মধ্যে কোনো বাজে সপ্ন দেখেছ নাকি.?

তামিমঃ না তেমন কিছু দেখি নি।।

ছোট চাচ্চুঃ তাহলে এতো রাতে এইভাবে চিৎকার করলে কেন.?

তামিমঃ না মানে আসলে আমি নিজেও জানি না কেন চিৎকার করলাম।।

ছোট চাচিঃ হয়তো কোনো দোষ সপ্ন দেখেছে।। আচ্ছা বাদ দাও আর আমার আব্বুটাকে ঘুমাতে দাও।। যাও আব্বু তুমি ঘুমিয়ে পর (নীলার আম্মু তামিমকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন তাই উনি তামিমকে আদর করে আব্বু ডাকেন)।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচি।।

ছোট চাচিঃ চল আমরা এখন যাই, ও ঘুমাক।।

তারপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যার যার রুমে চলে গেল।। আর তামিম রুমের লাইট অফ করে ড্রিমলাইটটা জ্বালিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তামিম ভাবতে লাগলো, কেউ এসেছিল নাকি আমার রুমে.? কেউ না আসলে আমার ঘাড়ে কামড় মারলো কে.? ঘাড়ে তো এখনো হালকা ব্যাথা করছে, নিশ্চয়ই আমার রুমে কেউ না কেউ এসেছিল, কিন্তু কে সে.? নীলু এলো না তো আবার.! নাহ নীলু তো কখনো এতো রাত জাগে না।। ১০ টা হলেই তার চোখ ঘুমে টলমল করে।। নীলু না আসলে কে আসবে তাহলে.? দুর যা হওয়ার হয়েছে এইসব আর ভেবে লাভ নেই, এখন বরং ঘুমিয়ে পরি।। তারপর তামিম আবার নিজের মতো করে ঘুমিয়ে পরলো।।

এদিকে নীলা তামিমের রুম থেকে দৌড়ে এসে তার রুমে ঢুকেই হাঁপাতে লাগলো।। আরেকটু হলেই সে তামিমের কাছে ধরা পরা যেত।। ভাগ্যিস একটুর জন্য বেঁচে গেছে।। নীলা হাঁপাতে হাঁপাতেও তার ঠোঁটের কোণায় বিশ্বজয়ী এক হাসি ফুটে উঠলো।। অনেক কষ্টের পর নীলা নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করতে পেরেছে, এতে নীলা এখন অনেক খুশি।। “ঠোঁটে চুমু খেলে যে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়” এটা সত্যিই।। নীলা যখন তামিমের ঠোঁটে কিস করেছিল তখন সে তামিমের ঠোঁটের মধ্যে এক ধরণের মিষ্টি স্বাদ পেয়েছে।। নীলার মন চাচ্ছে আবার তামিমের সেই মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে।। কিন্তু এখন আর এটা সম্ভব নয়, কারণ এখন আবার তামিমের রুমে গেলে সে নিশ্চিত ধরা পরে যাবে।। অনেক রাত হওয়াতে নীলার চোখের পাতাও ভারি হয়ে আসছে।। সে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।। ঘুম ভর্তি চোখ বন্ধ করতেই নীলা ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।।

সকালবেলা…

–তামিম তোর ঘাড়ে এটা কীসের দাগ বাবা.?

সকালবেলা ডাইনিং টেবিলে বসে তামিম সবার সাথে নাস্তা খাচ্ছিল ঠিক তখনই তামিমের আম্মু উপরোক্ত কথাটা বলেন।। তামিম তার আম্মুর কথাটা শুনে অনেকটা চমকে উঠলো।। তামিমের আম্মুর কথায় টেবিলে বসা সবাই তামিমের দিকে তাকালো।।

তামিমের মাঃ কিরে এইভাবে চমকে উঠলি কেন.? আর তোর ঘাড়ে এটা কীসের দাগ.? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ দাত দিয়ে কামড় দিয়েছে (তামিমের ঘাড় দেখতে দেখতে)।।

তামিমঃ এইসব কি বলছ আম্মু, আমার ঘাড়ে কামড়ের দাগ আসবে কোথা থেকে.?(অবাক হয়ে)

তামিমের মাঃ তুই গিয়ে ওয়াশরুমের আয়নার মধ্যে একবার নিজের ঘাড়টা দেখে আয় তাহলে বুঝতে পারবি।।

তামিম নিজের আম্মুর কথামতো চেয়ার থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে এসে দাড়ালো।। আয়নার সামনে এসে দাড়াতেই তামিম দেখলো তার ঘাড়ের মধ্যে কামড়ের দাগ।। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা দাতের কামড়।। কিন্তু তার ঘাড়ে কামড় দিল কে.? তামিম আর ওইখানে না থেকে আবার ডাইনিং টেবিলে এসে বসে পরলো।।

তামিমের মাঃ কিরে দেখেছিস.? বল এবার তোর ঘাড়ে এই কামড়ের দাগ এলো কোথা থেকে.?

তামিমঃ আসলে আম্মু ইয়ে মানে

তামিমের মাঃ মানে মানে কি, যা বলার ভালো করে বল।।

তামিমঃ আসলে গতকাল কলেজ থেকে আসার সময় রাস্তার মধ্যে একটা বাচ্চা ছেলে কোলে নিয়েছিলাম।। তখন ওই বাচ্চা ছেলেটাই আমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়েছে, এটা হয়তো সেটারই দাগ।।

তামিমের মাঃ কিন্তু দাগ দেখে তো মনে হয়না এটা কোনো বাচ্চার কামড়।। মনে হচ্ছে এটা কোনো বড় মানুষের দাতের কামড়।।

তামিমঃ হে আম্মু ঠিকই বলেছ, ওই বাচ্চাটা প্রায় ৩ বছরের ছিল।।

তামিমের মাঃ কিন্তু

ছোট চাচিঃ আহা ভাবি বাদ দাওনা এখন এইসব, আর আমার আব্বুটাকে একটু শান্তিতে খেতে দাও।। আব্বু তুমি খাও তো।। আর পরেরবার থেকে এমন কোনো বাচ্চা ছেলেকে কোলে নিবা না যার কামড়ানোর স্বভাব আছে।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচি।।

ছোট চাচির কথা শুনে তামিমের আম্মু আর কিছু বললেন না।। নীলাও এতক্ষণ ধরে ডাইনিং টেবিলে বসে ছিল আর মনে মনে ভিষণ ভয় পাচ্ছিল, এই বুঝি সে ধরা খেয়ে গেল।। কিন্তু নীলার আম্মু তামিমের আম্মুকে থামিয়ে দেওয়াতে নীলা মনে মনে এক স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লো।।

তারপর সবাই চুপচাপ যার যার মতো নাস্তা শেষ করে উঠে পরলো।। নাস্তা শেষ করে তামিম রুমে এসে বিছানায় বসে বসে ভাবতে লাগলো তাকে কামড়টা দিল কে.? হঠাৎ তামিমের মনে পরলো গতরাতে সে একটা সপ্ন দেখেছে যেখানে একটা মেয়ে তার রুমে ঢুকে তার বুকের উপর উঠে তার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছিলো।। তামিম তখন মেয়েটাকে নিজের বউ মনে করে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে আর সেও মেয়েটার ঠোঁটে চুমু খায়, আর মেয়েটাকে সে কি যেন বলেছিল যা তার মনে নেই।। তারপর হঠাৎ মেয়েটা তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে তার উপর থেকে উঠে দৌড়ে পালিয়ে যায়।।

অতঃপর তামিমের ঘুম ভেঙে যায়।। সপ্নে ঘটনাটা ভেবে তামিম বিছানার উপর তাকাতেই দেখলো বিছানার উপর একটা লম্ব চুল পরে আছে।। তামিম তারাতাড়ি সেই চুলটা নিজের হাতে নেয় আর দেখে চুলটা অনেক বড়।। চুলটা যে মহিলাদের সেটা তামিম ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।। কিন্তু তার রুমে মহিলা আসলো কোথা থেকে.? বাড়িতে তো আম্মু, চাচি, নীলু ছাড়া আর কোনো মহিলা নেই তাহলে চুলটা কার.? তামিম এবার চুলটা নিজের নাকের কাছে নিয়ে এসে চুলের ঘ্রাণ অনুভব করতে লাগলো।। একসময় সে বুঝে গেল চুলটা কার।। তার মানে নীলুই কাল রাতে আমার রুমে এসেছিল.! তামিম এবার রাগে গজগজ করে চিৎকার করে নীলাকে ডাকতে লাগলো।। তামিমের চিৎকার শুনে মিনিট পরেই নীলা তামিমের রুমে এসে হাজির হলো।।

নীলা রুমের ভিতর ঢুকতেই তামিম বিছানা থেকে উঠে সোজা নীলার কাছে চলে আসলো আর নীলার ২ হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে নীলার মুখের কাছে তার মুখ নিয়ে রাগে কটমট করে বললো…

–কাল রাতে তুই আমার রুমে কেন এসেছিলি.? আর আমার উপর বসে কি করেছিলি আমার সাথে.? আর আমার ঘাড়ে কামড় মেরে পালিয়ে গেলি কেন.?
.
.
.
.
.
Loading…….

ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।। আর হে গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক সো গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না।। গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন তবুও কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না প্লিজ।। হেপি রিডিং ?

বিঃদ্রঃ ১ম পর্বতে অনেকেই বলেছেন নীলাকে ক্লাস সেভেনে না দিয়ে ক্লাস ৯ বা ১০ এ দিলে ভালো হতো।। তো এরকম চিন্তা-ভাবনা যাদের মনেই আছে তাদেরকে বলছি, গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও গল্পের মধ্যে কারও চরিত্র এমন হওয়া উচিত নয় যার কারণে পাবলিকরা হাসাহাসি করবে।। মানে নীলাকে যদি ক্লাস সেভেনে না দিয়ে ক্লাস ৯-১০ এ দিতাম তাহলে তার মধ্যে এমন বাচ্চামি আচরণ দেওয়া যেত না।। দিলেও অনেকেই বলবে ক্লাস ৯-১০ এ পড়ুয়া এতো বড় একটা মেয়ে এমন বাচ্চাদের আচরণ করে এটা হাস্যকর, ইত্যাদি ইত্যাদি।। তাই আমি নীলাকে ক্লাস সেভেনেই দিলাম।। আর গল্পটা যেহেতু আমি লিখছি সো আমিই ভালো জানি গল্পটা কীভাবে লিখলে ভালো হবে।। তারপরও আপনাদের গল্প সম্পর্কে মতামত পেশ করার অধিকার আছে এটা আমি না করছি না।। আর আপনাদের কথায় আমি কোনো কষ্ট পাইনি বা এই কথাগুলো আপনাদের কষ্ট দেওয়ার জন্যও বলিনি।। আশা করি সবাই আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here