খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ১৩ (ভালোবাসা প্রকাশ)

0
3917

খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ১৩ (ভালোবাসা প্রকাশ)
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
–তুমি আব্বুকে বানিয়ে বানিয়ে ওইসব কথা বললে কেন.?

খাওয়া শেষ করে তামিম নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে বসে ফেসবুকিং করছিল।। ঠিক তখনই নীলা তার রুমে ঢুকে তার কাছে এসে কথাটা বললো।। নীলার গলার আওয়াজ পেয়ে তামিম মাথা তুলে নীলার দিকে তাকালো।। নীলার চোখে-মুখে প্রশ্নের চাপ স্পষ্ট ফুঠে উঠেছে।। তামিম এবার মোবাইলটা সাইডে রেখে বললো…

তামিমঃ ওইসব কথা মানে.? (না বোঝার ভান করে)

নীলাঃ এই যে আজ আমাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসার সময় তুমি নাকি রাস্তায় দেখেছ একটা মেয়েকে কিছু ছেলে মিলে টিজ করছে।। তারপর তুমি ওইখানে গিয়ে দাড়াতেই ছেলেগুলো তোমায় দেখে ওইখান থেকে পালিয়ে যায়।। এরপর তুমি মেয়েটাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে মেয়েটাকে ওর বাসায় পাঠিয়ে দাও।। এই যে এইসব কথা তুমি আব্বুকে বানিয়ে বানিয়ে বললে কেন.?

তামিমঃ বানিয়ে বললাম কোথায়, যা সত্যি সেটাই তো বললাম।।

নীলাঃ কীসের সত্যি.? তুমি আব্বুকে সব বানিয়ে বলেছ।। আমিও তো তোমার সাথেই ছিলাম, কই আমি তো দেখি নি কোনো মেয়েকে ছেলেরা মিলে টিজ করছে।।

তামিমঃ আরে তখন তো তুই ভার্সিটির ভিতরে ছিলি, তাই দেখতে পাস নি।।

নীলাঃ কিন্তু তুমি যে আব্বুর কাছে বললে আমাকে নিয়ে আসার সময় (নীলাকে থামিয়ে)

তামিমঃ ওইটা ভুল করে বলে ফেলেছি।। আসলে তোকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসার সময় দেখেছি যে একটা মেয়েকে কিছু ছেলে মিলে টিজ করছে।।

নীলাঃ ওহহ, কিন্তু আমি তো কোনোদিন দেখলাম না যে ছেলেরা মিলে মেয়েদেরকে টিজ করছে।।

তামিমঃ তুই তো কানি তাই দেখতে পাস না।।

নীলাঃ ভাইয়া

তামিমঃ এখন আর আমার মাথা না খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর যা।।

নীলাঃ হুহ্ যাচ্ছি আর সকালে তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠিও।।

তামিমঃ তোকে আর বলতে হবে না যা এবার।।

নীলাঃ হুম

তারপর নীলা তামিমের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।। নীলা যাওয়ার পর তামিম একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লো।। কোনোরকমে নীলাকে যে বোঝানো গিয়েছে এটাই অনেক।। রাত ১১ টা বেজে গেছে দেখে তামিমও আর দেড়ি না করে ঘুমিয়ে পরলো।।

সকালবেলা…

নাস্তা খাওয়া শেষ করে তামিম নীলাকে নিয়ে গাড়ি করে নীলার ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো।। তামিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই নীলা বসে আছে আর একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে (দেশে থাকতেই তামিম গাড়ি ড্রাইভ করা শিখেছিল)।। বাহিরের হাওয়া এসে গাড়ির জানালা বেধ করে নীলার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে, আর নীলা বারবার তার হাত দিয়ে চুলগুলো কানের মধ্যে গুজে দিচ্ছে।।

তামিম একবার নীলার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে আর একবার সামনের দিকে তাকাচ্ছে।। এইভাবেই বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল।। এর মধ্যে তারা নীলার ভার্সিটিতেও চলে আসলো।। ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি দাড় করাতেই নীলা গাড়ি থেকে নামতে যাবে ঠিক তখনই তামিম নীলার হাত ধরে ফেলে।।

তামিমঃ তোর ছেলে ফ্রেন্ড কয়টা.?

নীলাঃ ১টা কেন.?

তামিমঃ গতকাল যে ছেলেটাকে তোর সাথে দেখেছিলাম সেটা.?

নীলাঃ হুম

তামিমঃ আর মেয়ে ফ্রেন্ড.?

নীলাঃ আছে অনেকগুলো।।

তামিমঃ আচ্ছা শোন ১টা ছেলে ফ্রেন্ড যেহেতু বানিয়ে ফেলেছিস তাহলে ঠিক আছে কিন্তু আর কোনো ছেলেকে ফ্রেন্ড বানাবি না বুঝলি।। আর ভুলেও যেন তোকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি, কি মনে থাকবে তো.?

নীলাঃ কেন ছেলেদের সাথে কথা বললে কি.?

তামিমঃ সেটা তোর জানা লাগবে না।। তোকে যা বলেছি তাই করবি, ভুলেও কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না এমনকি দরকার পরলেও না।।

নীলাঃ তোমার সাথেও না.?

তামিমঃ আমার সাথে কেন কথা বলবি না, আমার সাথে অবশ্যই বলবি।। তবে আমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না, ঠিক আছে যা এবার (বলেই নীলার হাত ছেড়ে দিল)।।

নীলাঃ কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ক্লাসে চলে গেল।।

নীলা চলে যাওয়ার পর তামিমও সেখান থেকে আবার বাসায় চলে আসলো।। বাসায় এসে তামিম সোজা নিজের রুমে চলে গেল।।

দুপুরবেলা তামিম আবার গাড়ি নিয়ে নীলার ভার্সিটিতে চলে আসলো নীলাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।। তামিম ভার্সিটিতে এসে দেখলো ভার্সিটি এখনো ছুটি হয়নি তাই সে গাড়িতে বসেই নীলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।। কিছুক্ষণ পর নীলার ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেল।। এর কিছুক্ষণ পর নীলাও ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো আর তামিমকে গাড়ি নিয়ে আসতে দেখে গাড়িতে এসে উঠে বসলো।। তারপর তামিম নীলাকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলো।। বাসায় এসে দুজনে খাওয়া দাওয়া করে যার যার রুমে চলে গেল।।

এইভাবেই কেটে গেল কিছুদিন।। এই কয়দিন তামিম প্রতিটা সময়ই নীলার সাথে সাথে থেকেছে।। তামিম এই কয়দিনে বুঝতে পেরেছে নীলার কারও সাথে কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই।। নীলার যে একটা ছেলে ফ্রেন্ড রয়েছে ওই ছেলেটাও অনেক ভালো, নীলাকে নিজের বন্ধু ছাড়া সে অন্যকিছু ভাবে না, তামিম এটাও ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।। এবার একটা ভালো দিন দেখেই তামিম নীলাকে নিজের মনের কথা বলে দিবে ভাবছে।।

তো আজ দুপুরবেলা তামিম গাড়ি নিয়ে নীলার ভার্সিটিতে চলে আসে, নীলাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।। তামিম গাড়িতে বসে অনেক্ষণ ধরে নীলার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু নীলা এখনো আসছে না।। তামিম আর বসে না থেকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে নীলার ভার্সিটিতে উঁকিঝুঁকি করতে লাগলো, নীলা আসছে কি না দেখার জন্য।। হঠাৎ তামিম দেখলো ভার্সিটির দপ্তরি বেল দিয়ে দিচ্ছে।। বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর তামিম দেখলো নীলা তার ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসছে।। নীলার সাথে তার ২টা বান্ধবীও রয়েছে।। নীলা হেটে হেটে ভার্সিটির গেইটের কাছে আসতেই হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলে এসে নীলার হাতে একটা চিঠি দিয়ে “উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো” কথাটা বলেই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।। নীলাও কিছু বুঝতে না পেরে চিঠিটা নিজের কাছে রেখে দেয়।। দৃশ্যটা তামিমের চোখ এড়ালো না।।
তারপরও তামিম ঠান্ডা মাথায় গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো আর নীলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।।

কিছুক্ষণ পর নীলা এসে গাড়িতে উঠে বসলো।। নীলাকে দেখেই তামিম বলে উঠলো…

তামিমঃ ছেলেটা কে ছিল.?

নীলাঃ কোন ছেলে.?

তামিমঃ যেই ছেলে একটু আগে তোকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে।।

নীলাঃ জানি না কে তবে আমার সাথেই পড়ে।।

তামিমঃ চিঠিতে কি লিখেছে.?

নীলাঃ খুলে দেখিনি।।

তামিমঃ কই দেখি চিঠিটা দে তো।।

নীলাঃ কোনো কথা না বলে ব্যাগ থেকে চিঠিটা বের করে তামিমের দিকে এগিয়ে দিল।।

তামিম এবার নীলার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো।। চিঠিটা পড়েই তামিমের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।। কারণ চিঠিতে বড় বড় করে লিখা রয়েছে…

I Love U Nila…

তামিম এবার রাগের মাথায় চিঠিটা একটানে ছিড়ে ফেললো আর চিঠিটা জানালার বাহিরে ফেলে দিল।। হঠাৎ তামিমের এইভাবে রেগে যাওয়াতে নীলা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।। সে তামিমের রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে বললো…

নীলাঃ ভাইয়া কি হয়েছে তোমার.? চিঠিটা এইভাবে ছিড়ে ফেললে কেন.? কি লিখা ছিল চিঠিতে.?

নীলার কথাগুলো শুনে তামিম এবার রাগী চোখে নীলার দিকে তাকালো।। তামিমের এমন রাগী ফেস দেখে নীলা এবার আরও ভয় পেয়ে যায়।। তামিম নীলাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল।। তারপর তামিম কোনো কথা না বলে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে একটানে বাসায় চলে আসলো।। গাড়িটা বাসার সামনে এনে দাড় করাতেই নীলা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে গেল।। তামিমও গাড়িটা লক করে বাসার ভিতরে চলে এলো।।

বাসায় ঢুকেই তামিম সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।। রুমে এসে কিছুক্ষণ বিছানায় বসে রেস্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।। তারপর মাথাটা ঠান্ডা করে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে আবার রুমে চলে আসলো।। রুমে এসে তামিম ভাবতে লাগলো, না এখন সময় এসে গেছে নীলুকে নিজের মনের জমানো কথাগুলো বলে ফেলার।। আজকেই নীলু আমার মনের কথাগুলো বলে দিব আর দেড়ি করবো না।।

এইভাবে দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো।। ঘড়ির কাটায় ৬ টা বাজতেই তামিম রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নীলার রুমে চলে এলো।। নীলা তামিমকে নিজের রুমে দেখে কিছুটা ভয় পেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো…

নীলাঃ ভাইয়া তুমি.! কিছু বলবে নাকি.?

তামিমঃ হুম তোর সাথে কিছু কথা আছে একটু ছাদে আয় তো (কথাটা বলেই তামিম নীলার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে গেল)।।

নীলাও তামিমের কথামতো তার পিছু পিছু ছাদে চলে আসলো।। ছাদে এসে নীলা দেখলো তামিম ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।। নীলা তামিমের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দিল।। নীলার গলার আওয়াজ শুনে তামিম পিছনে ঘুরে নীলার দিকে তাকালো।। কিছুক্ষণ নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে তামিম নীলার কাছে এসে বললো…

তামিমঃ একটা সত্যি কথা বলবি.?

নীলাঃ কি কথা.?

তামিমঃ তুই কি কাউকে ভালোবাসিস.?

নীলাঃ তামিমের কথা শুনে নীলা কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়।। সে এখন কি বলবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।।

তামিমঃ ভয় নেই আমাকে বল কাউকে ভালোবাসিস.?

নীলাঃ মাথা নাড়িয়ে “না” সূচক জবাব দিল।।

তামিমঃ কেউ যদি তোকে ভালোবাসার কথা বলে তো কি করবি.?

নীলাঃ কিছুই না, তবে ছেলেটা ভালো হলে ভেবে দেখবো কি করা যায়।।

তামিমঃ আচ্ছা যদি সেই ছেলেটা আমি হই তাহলে.?

নীলাঃ তামিমের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।।

তামিম এবার চারপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে নীলার উলটো দিক ফিরে বলতে শুরু করলো…

তামিমঃ কি দিয়ে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিনা।। তবে তোকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে শেষ করতে পারবো না।। আসলে তোকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি।। কিন্তু এতোদিন ধরে তোকে আমার ভালোবাসার কথাটা সাহস করে বলতে পারি নি।। কারণ ৫ বছর ধরে তো আমি আমেরিকাতেই ছিলাম।। আর তখন আমরা কেউই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম না।। যদিও আমিও তখন অনেকটাই বড় ছিলাম কিন্তু তুই তখনো অনেকটাই অবুঝ ছিলি।। প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে তখন তোর সঠিক জ্ঞান ছিল না বিধায় তখন তোকে কিছু বলতে পারি নি।। কিন্তু আমি আমার মনের কথাগুলো তোকে না বলে আর থাকতে পারছি না।। তাই আজ তোকে আমার মনের কথাগুলো জানাতে চাই।। নীলু আমি তোকে খুব ভালোবাসি।। বলতে গেলে আমি তোকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।। I Love U Nilu, তুই কি হবি আমার জীবনসঙ্গিনী.? হবি কি আমার সারাজীবনের পথ চলার সাথী.?
.
.
.
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ (অবশেষে তামিম নীলাকে নিজের মনের কথাগুলো বলেই ফেললো।। এবার নীলা কি করে দেখার পালা, নীলা কি তামিমকে মেনে নিবে নাকি না কোনটা.? (ভাইয়া ও আপুরা আপনাদের কি মনে হয়) সামনে কি হবে জানতে চাইলে গল্পের সাথেই থাকুন)।।
আপনাদের সবার কথা রক্ষার্থে আজকের পর্বটা বড় করে দিলাম।। এবার আপনাদের সকলের কাছে আমার একটা রিকুয়েস্ট আশা করি রাখবেন, আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ।। আর গল্পের ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর পারলে ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন তাহলে শুধরে নিব, ধন্যবাদ ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here