খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২৭-২৮-২৯-৩০

1
6334

#খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২৭
#লেখকঃ- Tamim

,,
,,
,,
,,
–জানু তুই আমাকে এখনো চিনতে পারলি না.? আরে গাধি আমি মিতু এই দেখ (বলেই তার মুখের কাপড়টা সরিয়ে দিল)

মেয়েটাকে দেখে নীলা অবাক না হয়ে পারলো না কারণ মেয়েটা সত্যিই মিতু, তার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।। কিন্তু মিতু এইখানে কি করছে এটাই নীলা ভেবে পাচ্ছে না।।

নীলাঃ মিতু তুই.! তুই এইখানে কীভাবে এলি.?

মিতুঃ কেন পায়ে হেটে এসেছি।।

নীলাঃ আমি সেটা বলছি না, বলছি তুই এইখানে তাও আমাদের হোটেলে কীভাবে

মিতুঃ তোকে দেখতে আসলাম জানু।।

নীলাঃ আমাকে দেখতে আসছিস মানে.? তুই কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।।

মিতুঃ বিয়ে করলি অথচ আমায় দাওয়াতও দিলি না তাই তোকে একটু দেখতে আসলাম।।

নীলাঃ তাহলে তুই যে বললি তুই উনার বউ আর এই চিঠি, এইসবের মানে কি.?

মিতুঃ এই যে তুই বিয়ে করলি অথচ আমায় জানালি না তাই তোকে একটু শায়েস্তা করার জন্য এই নাটকটা করেছি হিহি।।

নীলাঃ তাহলে এই চিঠি কে লিখেছে.?

মিতুঃ চিঠির লিখাটা আরেক বার মনোযোগ দিয়ে পড় তাহলেই বুঝতে পারবি।।

মিতুর কথায় নীলা গিয়ে তামিমের থেকে চিঠিটা নিয়ে আবার মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়তে লাগলো।। ১ লাইন পড়ার পরেই নীলা মুখে হাত দিয়ে ফেললো।।

নীলাঃ আরে এটা তো তোর লিখা।।

মিতুঃ হুম আমিই তো এটা লিখেছি।।

নীলাঃ তার মানে তুই এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে নাটক করছিলি.?

মিতুঃ হুম বলেই মুখ চেপে হাসতে শুরু করলো।।

মিতুর কথা শুনে আর তার হাসি দেখে নীলা এবার ভিষণ ক্ষেপে গেল আর সোজা গিয়ে মিতু কে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করলো।।

নীলাঃ কুত্তি এইভাবে কেউ কারও সাথে নাটক করে হে.? আমি তো তোর নাটক সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম।।

মিতুঃ তুই যে বিয়ে করেছিস এটা যদি আমায় বলতি তাহলে আর আমি এমন নাটক করতাম না।। আর এইখানে কিন্তু তুইও অনেক ভুল করেছিস।।

নীলাঃ এই আমি কি ভুল করেছি হে.? আর আমি যে বিয়ে করেছি এটা তুই কীভাবে জানলি.?

মিতুঃ কয়েকদিন আগে তোকে ফোন করেছিলাম একটা দরকারে।। অনেক্ষণ রিং হওয়ার পর আন্টি তোর ফোন ধরলেন, তখন আমি আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কোথায়।। এরপর আন্টি ই আমায় এই বিষয়ে বলেন।। তারপর আন্টিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তুই আর দুলাভাই বিয়ে করে নাকি কক্সবাজারের এই হোটেলে উঠেছিস।। আর তখন আমি কক্সবাজারই ছিলাম আমার খালার বাসায়।। এরপর তোকে খুজতে খুজতে আজ এইখানে চলে আসলাম।।

নীলাঃ বুঝলাম কিন্তু আমি কি ভুল করেছি এটা বল.?

মিতুঃ এই যে ১ম তুই আমার কন্ঠ শুনেও আমায় চিনতে পারলি না।। ২য় তুই আমার লেখাগুলো পড়েও বুঝতে পারলি না যে এটা কার লিখা।। আমি তো জাস্ট দুলাভাইয়ের সাথে একটু ফান করার জন্য এই নাটকটা করেছিলাম, আর তুই সত্যিটা না জেনেই এইখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য জামাকাপড় ঘুছিয়ে ফেললি.!

নীলাঃ আসলেই, ভুল তো আমার ই আমি তোর কণ্ঠ শুনে আর লেখাগুলো পড়েও বুঝতে পারলাম না যে তুই কে।। আসলে তোর কণ্ঠ অনেকদিন যাবত শুনছিলাম না তো তাই তোকে চিনতে পারি নি।। আর চিঠির লেখাগুলো এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম যে এই লেখাগুলো কার হাতের লিখা সেটাও বুঝতে পারি নি।।

মিতুঃ তো এবার দুলাভাইয়ের রাগ ভাঙা গিয়ে দেখ আমার কিউট দুলাভাইটা মনে হয় তোর উপর রেগে আছে (নীলার কানে কানে)।।

মিতুর কথায় নীলা পিছনে ঘুরে তামিমের দিকে তাকালো।। নীলা তামিমের দিকে তাকাতেই তামিম পিছনে ফিরে একটা ব্যাগে তার জামাকাপড় ভরতে আরম্ভ করলো।। তামিমের এমন কাজে নীলা বুঝে গেল সে তার প্রতি ভিষণ পরিমাণে রেগে আছে।। নীলা তাড়াতাড়ি করে তামিমের কাছে তার পা জড়িয়ে ধরলো আর বললো…

নীলাঃ আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও, কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় অবিশ্বাস করবো না।।

তামিম নীলার কথা কোনো কর্ণপাত না করে তার কয়েকটা কাপড় একটা ব্যাগে ভরে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভান ধরলো।। তামিম রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে নীলা দৌড়ে গিয়ে তামিমের পথ আটকে দাঁড়ায় আর তামিমকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।।

নীলাঃ বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো তোমায় অবিশ্বাস করবো না।। এইবারের মতো আমায় মাফ করে দাও প্লিজ আর আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না প্লিজ নাহলে আমি

তামিমঃ এই পাগলি এইসব কি বলছ, তোমায় ছেড়ে আমি কোথায় যাব হুম.? শুন তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছিনা, গেলেও তোমায় সঙে নিয়ে যাব।। আর তুমি সঠিকটা না জেনেই আমায় অবিশ্বাস করেছ দেখে আমি একটু তোমায় কষ্ট দেওয়ার জন্য চলে যাওয়ার ভান করছিলাম।। তবে আর কখনো যদি তুমি আমায় অবিশ্বাস করেছ তো তোমায় একেবারে ছেড়ে চলে যাব।।

নীলাঃ নাহ আর কখনো আমি তোমায় অবিশ্বাস করবো না প্রমিস।।

তামিমঃ মনে থাকে যেন বলেই নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নীলার চোখের পানি মুছে দিল।।

মিতুঃ বাব্বাহ দুজনের ভালোবাসা দেখে তো মন চাচ্ছে এক্ষুণি একটা বিয়ে করে ফেলি।।

নীলাঃ তোর বিয়ে করার স্বাদ আমি মিটাচ্ছি দাড়া (বলেই মিতুর দিকে তেড়ে যেতে লাগলো)।।

মিতুঃ এখন মারলে কিন্তু একদম ভালো হবে না বলে দিলাম।।

নীলাঃ আচ্ছা যা এবারের মতো মাফ করলাম।।

মিতুঃ আইছে আমার মাফ করনে ওয়ালা ?

তামিমঃ আপনাদের কথা শেষ হলে কি আমি কিছু বলবো.?

মিতুঃ জি দুলাভাই বলেন কি বলবেন.? আর দুলাভাই একটু আগের ঘটনার জন্য I’m Really Sorry.

তামিমঃ It’s Okay, তা তুমি জানলে কি করে যে আমরা এই রুমে আছি.?

মিতুঃ হোটেলের ম্যানেজারকে তোমাদের কথা বলে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তোমরা কোন রুমে উঠেছ, তখন ম্যানেজার ই আমায় তোমাদের রুম নাম্বারটা বলে দেয় আর আমি এইখানে চলে আসি।।

তামিমঃ ওহহ আচ্ছা, তা বোরকা কি সবসময় পর নাকি আমাদের সাথে মজা করার জন্য পরে এসেছ.?

মিতুঃ না এখন সবসময়ই বোরকা পরি, বাসায়ও সবসময় হিজাব পরে থাকি আর কোথাও বের হলে বোরকা পরে বের হই।।

তামিমঃ ওহহ তার মানে এখন নিশ্চয়ই ৫ ওয়াক্ত নামাযও পড়.?

মিতুঃ হ্যাঁ আল্লাহ পড়ান।।

নীলাঃ তুমি কি এখন ওর সাথে গল্পই করবে নাকি ফ্রেশও হবে.? যাও এখন ফ্রেশ হয়ে আস, এরপর আমিও ফ্রেশ হব।।

তামিমঃ হ্যাঁ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমরা গল্প কর।।

তারপর তামিম ফ্রেশ হতে চলে গেল আর নীলা আর মিতু বিছানায় বসে গল্প করতে লাগলো।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে নীলা ওর মিতু বসে বসে গল্প করছে, সে কি গল্প নাকি অন্যকিছু এটা তামিমের বুঝে আসছে না।।

তামিমঃ আমাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে তো এখন নিজেই গল্পতে লেগে গেলেন।। যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর যত মন চায় তত গল্প করিয়েন।।

নীলাঃ মিতু তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি (বলেই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল)।।

প্রায় ৫ মিনিট পর নীলা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এর মধ্যে হোটেলের একজন স্টাফ এসে তাদেরকে নাস্তাও দিয়ে গেছে।। এরপর তামিম আর নীলা সেই নাস্তাটা ভাগ করে খেয়ে নিল।। মিতু সকালে নাস্তা করেই এসেছে তাই সে আর তাদের সাথে খায়নি।।

নাস্তা খাওয়া শেষ করে তারা ৩জন বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো।। এরপর মিতু তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।।

এদিকে তামিম আর নীলার খুজ না পেয়ে বাসার সবাই বেশ চিন্তিত।। তামিমের আব্বু অনেকবার তামিমের নাম্বারে কল দিয়েছেন কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।। তামিমের আব্বু তো মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন যদি তামিম নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যায় আর তিনি যদি একবার তামিমকে পেয়ে যান তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবেন না।। তিনিও আরও কয়েক থানার পুলিশ স্টেশনে তামিম আর নীলার মিসিং ডাইরি লিখিয়েছেন।। রাহিমা বেগমের ছেলে রাফিও কিছুক্ষণ পর পর নীলার আব্বুকে জিজ্ঞেস করে নীলাকে খুজে পাওয়া গেছে কি না।। নীলার আব্বু মন খারাপ করে ভাগিনাকে না সূচক জবাব দেন।। তামিমের আম্মু তো নামায পড়ে সবসময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করেন উনার ছেলে আর নীলা যেখানেই থাকে না তারা যেন ভালো থাকে।। নীলার আম্মুও নামায পড়ে সবসময় নীলা আর তামিমের জন্য দোয়া করেন।।

এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল ৩ দিন।। আগামীকাল রাহিমা বেগম আর উনার ছেলের আমেরিকা যাওয়ার পালা।। নীলাকে তারা এখনো খুজে পায়নি তাই তিনি আরও ১ সপ্তাহে দেশে থাকার ডেট বাড়িয়েছেন।। যদি এর মধ্যে নীলাকে পাওয়া যায় তাহলে তো ভালো আর না পেলে তখনকার বিষয় তখন ভেবে দেখবেন কি করা যায়।।

এদিকে তামিম আর নীলার হোটেলে রুম বুকিং করা ছিল ৩ দিনের।। সেই দিন পেরিয়ে আজ আরও ৩ দিন হয়ে গেছে।। সেই ৩ দিনের রুম বুকিংয়ের টাকা তার বন্ধুরাই দিয়ে দিয়েছে।। এখনকার রুম বুকিংয়ের টাকা তামিম তার কাছে থাকা টাকা থেকেই দিয়েছে।। রুম বুকিং করা হয়েছে আরও এক সপ্তাহের জন্য।। যার মধ্যে আরও ৪ দিন তারা হোটেলে থাকতে পারবে।। এক সপ্তাহের রুম বুকিংয়ের জন্য পুরো ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাদের।। আর মাত্র ২-৩ হাজার টাকা রয়েছে তামিমের কাছে।। এগুলো ফুরিয়ে যাওয়ার আগে তাকে আবার টাকা নিতে হবে তার চাচির থেকে।।

আজ সকালের ঘটনা…

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তামিম নীলাকে রেখেই বাহিরে চলে যায় একটু হাটাহাটি করার জন্য।। বাহিরে এসে হাটাহাটি করার এক পর্যায়ে হঠাৎ তামিমের চোখ পরে দেয়ালে থাকা একটা পোস্টারের দিকে।। পোস্টারটা দেখেই তামিমের চোখ কপালে উঠার উপক্রম কারণ পোস্টারে স্পষ্টভাবে তার এবং নীলার ছবি দেওয়া আর ছবির নিচে লিখাঃ ছবির ২ জনের মধ্যে যেকোনো একজনকে যদি কেউ খুজে পান তাহলে —- এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন।। ছবির মানুষকে খুজে দেওয়া লোককে ১০ হাজার টাকা পুরুষ্কার দেওয়া হবে।।

তামিম চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কি না, ঠিক তখনই সে দেখলো ২ জন পুলিশ তার দিকেই এগিয়ে আসছে।। পুলিশকে দেখেই তামিম উলটো দিকে ফিরে হাটা শুরু করে ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা পুলিশ তাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বলে।। তারপর…
.
.
.
.
.
Loading…….

তামিম কি তাহলে এখন পুলিশের কাছে ধরা পরে যাবে.? আপনাদের কি মনে হয় ?
বিঃদ্রঃ (গল্পতে একটু সেড সিন ঢুকালেই আপনারা এই সেই বলা শুরু করে দেন কেন বুঝিনা।। গতকাল বেশি লিখার সময় মিলেনি নাহলে গতকালের পর্বতেই সব ভেজাল দূর করে দিতাম।। সবাইকে একটা কথা বলি শুনেন, অন্য রাইটারের থেকে আমি সবসময় আলাদা ভাবে লিখার চেষ্টা করি।। অন্যদের গল্পতে যা হয় আমার গল্পতে তা হবে না বাট একটা টুইস্ট রেখে দেই গল্পতে যাতে আপনারা বুঝতে না পারেন সামনে কি হবে।। তবে গল্পতে কোনো ডাউট রাখবো না, সব দূর করে দিব।। আরেকটা কথা, গল্পটা নেগেটিভ ভাবে না ভেবে সবসময় পজিটিভ ভাবে ভাবার চেষ্টা করবেন তাহলে গল্প পড়ে মজা পাবেন।। যাইহোক অনেক কিছু বলে ফেলেছি, যদি আমার কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তো I’m Sorry.)

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৮
,,
,,
,,
,,
তামিম চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কি না, ঠিক তখনই সে দেখলো ২ জন পুলিশ তার দিকেই এগিয়ে আসছে।। পুলিশকে দেখেই তামিম উলটো দিকে ফিরে হাটা শুরু করে ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা পুলিশ তাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বলে।। তারপর হঠাৎ ওই ২ জন পুলিশের সামনে একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায় আর ওই গাড়ি থেকে একজন পুলিশ নেমে ওই ২ জন পুলিশের সাথে কি যেন বলতে থাকে।। তামিম দৃশ্যটা দেখে দেয়ালে থাকা পোস্টারটা ছিড়ে তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে পালিয়ে আবার হোটেলে চলে আসে।। হোটেলে এসে রুমে ঢুকেই তামিম হাঁপাতে লাগলো।। তার হাঁপানি দেখে নীলা দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় আর বলে…

নীলাঃ এই কি হয়েছে তোমার.? তুমি এইভাবে হাঁপাচ্ছ কেন.? আর তুমি এতক্ষণ ধরে কোথায় ছিলে.?

তামিমঃ কিছু না বলে পকেট থেকে পোস্টারটা বের করে নীলার হাতে দিয়ে পোস্টারটা দেখতে বললো।।

নীলাঃ তামিমের থেকে পোস্টারটা নিয়ে দেখতে লাগলো।। পোস্টারে তার এবং তামিমের ছবি দেখে নীলা সাথে সাথে ধপাস করে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো আর পোস্টারটা মেঝেতে ফেলে দিল।। এই এটা কি, এতে তো আমাদের দুজনের ছবি দেওয়া।। তুমি এই পোস্টারটা পেলে কোথায়.?

তামিমঃ সকালবেলা তোমায় ঘুমে রেখে একটু বাহিরে হাটতে গেছিলাম তখনই একটা দেয়ালে থাকা এই পোস্টারটা নজরে পরে।। এরপর দেয়াল থেকে এই পোস্টারটা ছিড়ে সোজা হোটেলে চলে আসি।।

নীলাঃ এখন আমাদের কি হবে.? এই পোস্টারটা যদি এই হোটেলের কারও চোখে পরে যায় আর তারা যদি আমাদেরকে দেখে ফেলে তখন কি হবে.? আর এই পোস্টারটা কে চাপিয়েছে.? আব্বু না তো.?

তামিমঃ কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।। তবে আমাদেরকে এখন একটা কাজ করতে হবে সেটা হলো এইখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাওয়া, যেখানে এই পোস্টারের কোনো চিহ্ন ও নেই।। আর এই পোস্টারটা নিশ্চয়ই আমাদের বাসার ই কেউ চাপিয়েছে।।

নীলাঃ এইখান থেকে আমরা কোথায় যাব.? আর এই রুম তো আমরা ১ সপ্তাহের জন্য বুকিং করেছি যার মধ্যে আরও ৩ দিন রয়েই গেছে।। এতো টাকা দিয়ে রুম বুকিং করে আমরা এখন এইখান থেকে চলে গেলে কোথায় গিয়ে থাকবো.? আর আমাদের কাছে তো আর বেশি টাকাও নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে থাকবো।।

তামিমঃ সমস্যা নেই এইখানে আরও ৩ দিন থেকে আমরা অন্য কোথাও চলে যাব।। তবে এই ৩ দিনে আমরা কেউ রুম থেকে বের হব না।।

নীলাঃ ৩ দিন থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে মানে.? কোথায় যাব আমরা.? তোমার জানামতে আশেপাশে থাকার জন্য কোনো বাসা রয়েছে নাকি.?

তামিমঃ না নেই, তবে রাতেরবেলা বাহিরে গিয়ে থাকার জন্য বাসা খুজবো।। ৩ দিনের মধ্যে যদি বাসা পেয়ে যাই তাহলে তো ভালো আর যদি না পাই তাহলে তখনকার ব্যাপার তখন দেখা যাবে।।

নীলাঃ তো আমাদের থাকা-খাওয়ার জন্য যে আরও টাকা লাগবে, ওই টাকা পাবে কোথায়.?

তামিমঃ চাচি তো বললেন টাকা লাগলে যেন উনাকে বলি।। রাতে একবার চাচিকে ফোন করে বলব নে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিতে।।

নীলাঃ আচ্ছা তাহলে সেটাই করিও।।

এইভাবেই তাদের দিনটা কেটে গেল।। ওইদিন আর তামিম হোটেল থেকে কোথাও বের হলো না।। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর ঠিক একটু আগে তামিম নীলার আম্মুর নাম্বারে কল দেয়।। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর নীলার আম্মু কল রিছিভ করেন।।

নীলার আম্মুঃ হে আব্বু বল কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি.?

তামিমঃ না চাচি তেমন কিছু না আসলে (বলেই থেমে গেল)

নীলার আম্মুঃ হুম বল থামলে কেন.?

তামিমঃ আচ্ছা চাচি বাসার কেউ কি আমার আর নীলার ছবি চাপিয়ে রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার করেছে.?

নীলার আম্মুঃ না বাসার কেউ তো এমন করেনি, কেন কি হয়েছে.?

তামিমঃ আসলে (তারপর সে নীলার আম্মুকে সকালের ঘটনাটা বললো)।।

তামিমের কথাগুলো শুনে নীলার আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন…

নীলার আম্মুঃ এমন কিছু করলে তো তোমার চাচ্চু বাসায় বলতেন ই।। আমার মনে হয় পুলিশ এমনটা করেছে আর নাহয় তোমার চাচ্চু ই পুলিশকে এমনটা করতে বলেছেন।। আচ্ছা যাইহোক তোমরা কিন্তু এখন আর ভুলেও হোটেল থেকে বাহিরে যেও না।।

তামিমঃ আচ্ছা

নীলার আম্মুঃ তা আর কিছু কি বলবে.?

তামিমঃ হ্যাঁ আসলে আমাদের কাছে যা টাকা ছিল তা দিয়ে ১ সপ্তাহের জন্য রুম বুকিং করে ফেলেছি।। এখন আর আমাদের কাছে তেমন বেশি টাকা নেই।। হোটেলে আরও ৩ দিন থাকতে পারবো আমরা, এরপর আবার রুম বুকিং করতে হবে যদি হোটেলে আরও থাকতে চাই।। কিন্তু আমি চাচ্ছি এই ৩ দিন হোটেলে থাকা অবস্থায় থাকার জন্য একটা বাসা খুজে দেখবো।। যদি কেউ ভাড়া দেয় তাহলে সেখানে চলে যাব আর হোটেলে থাকবো না।। কারণ এইখানের আশেপাশে আমাদের ছবি দিয়ে পোস্টারটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।। যেকোনো সময় যে-কেউ আমাদেরকে এইখানে দেখে ফেলতে পারে, তখন তো আমরা পুলিশের কাছে ধরা পরে যাব।।

নীলার আম্মুঃ তো এখন কতো টাকা লাগবে তোমাদের বল.?

তামিমঃ এখন আপাতত ৫-৬ হাজার টাকা দিলেই হবে পরে নাহয় লাগলে আরও নিব।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা দাড়াও আমি তোমার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।।

তামিমঃ কিন্তু চাচি আপনি এতো টাকা কোথায় পাবেন.?

নীলার আম্মুঃ আরে আমার বিকাশে ৫-৬ হাজার টাকা আছে ওইখান থেকেই দিয়ে দিচ্ছি।। টাকা নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করিও না।। তোমাদের যত টাকা লাগে আমায় বলিও আমি পাঠিয়ে দিব, শুধু আমার মেয়েটাকে কোনো কষ্ট দিও না প্লিজ।।

তামিমঃ না চাচি আমি ওকে কোনো কষ্ট দিব না।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে এখন রাখি পরে কথা হবে।।

তামিমঃ আচ্ছা

তারপর নীলার আম্মু কল কেটে দিয়ে উনার বিকাশ থেকে ৫ হাজার টাকা তামিমের বিকাশে পাঠিয়ে দিলেন।। এইভাবেই কেটে গেল আরও ২ দিন।।

এই ২ দিনে পুলিশ এখনো তামিম আর নীলাকে খুজে পায়নি।। নীলার আব্বুও এখন মাঝেমধ্যে নীলার জন্য কান্না করেন এই ভেবে যে, মেয়েটা কার সাথে আছে, কোথায় আছে আর কেমন আছে।। তিনি এবার ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন উনার বোনের কথা রাখতে গিয়ে নীলার মতামতকে উনি সাপোর্ট করেন নাই বিধায় উনাকে আজ এমন দিন দেখতে হচ্ছে।। কিন্তু এখন এটা নিয়ে আপসোস করে কি লাভ যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।। রাহিমা বেগমদের হাতেও আর বেশি দিন নেই, আর মাত্র ৩ দিন তারা দেশে আছেন।। এর মধ্যে নীলাকে পাবেন বলে উনি আশা করছেন না।। তারপর উনি মনে মনে নীলাকে ফিরে পাওয়ার দোয়া করছেন।।

এদিকে তামিম আর নীলাও এই ২ দিনে হোটেল থেকে কোথাও বের হয়নি।। তারা দুজন সারাক্ষণ রুমে বসেই কাটিয়েছে এই ২ দিন।। তামিম অবশ্য রাতেরবেলা হোটেল থেকে বেরিয়েছে তাদের জন্য বাসা খোজার জন্য।। কিন্তু আশেপাশে একটা বাসাও খালি পায়নি।। যদি কালকের ভিতরে তারা কোনো বাসা না পায় তাহলে আরও কয়েকদিন তাদেরকে হোটেলেই থাকতে হবে।।

রাতেরবেলা…

রাতের খাবার খেয়ে তামিম আর নীলা বিছানার মধ্যে শুয়ে আছে এমন সময় হঠাৎ তামিমের ফোনটা বেজে উঠলো।। তামিম ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নীলার আম্মু ফোন করেছেন।। তামিম কিছু না ভেবেই কলটা রিছিভ করলো।।

তামিমঃ হ্যাঁ চাচি বলেন.?

নীলার আম্মুঃ কোথাও বাসা খুজে পেয়েছ কি.?

তামিমঃ না চাচি এখনো তো পাইনি।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা না পেলে সমস্যা নেই, বাসা না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা বরং হোটেলেই থাক আর টাকার চিন্তা করিও না, টাকার দরকার হলে আমায় বলিও আমি আরও টাকা পাঠিয়ে দিব।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচি।।

নীলার আম্মুঃ তা রাতের খাবার খেয়েছ.?

তামিমঃ হ্যাঁ, আপনারা.?

নীলার আম্মুঃ তোমার আব্বু আর তোমার চাচ্চু এখনো বাসায় ফিরেন নি তাই আমরা কেউ এখনো খাইনি।।

তামিমঃ ওহহ

নীলার আম্মুঃ তা বাবা নীলা কি করছে.?

তামিমঃ এইতো আমার পাশে বসে আছে।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা ওর কাছে একটু ফোনটা দাও তো কিছু কথা বলবো।।

তামিমঃ আচ্ছা দিচ্ছি, নীলু এই নাও চাচি তোমার সাথে কথা বলবেন (নীলার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে)।।

তারপর নীলা তামিমের থেকে ফোনটা নিয়ে তার আম্মুর সাথে কথা বলতে লাগলো।। বেশ কিছুদিন কথা বলে নীলার আম্মু কল কেটে দিলেন।। কল কেটে দিয়ে নীলার আম্মু পিছনে ফিরে তাকাতেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।। কারণ উনার সামনে এখন নীলার আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন।। নীলার আব্বুর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের চাপ দেখা যাচ্ছে, তাহলে কি উনি নীলার আম্মুর ফোনে কথা বলাটা শুনে ফেলেছেন.!
.
.
.
.
.
Loading…….

নেক্সট পর্বতে একটা বড় ধরণের ধামাকা হতে চলেছে সবাই প্রস্তুত থাকেন ধাকামা পর্বের জন্য।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৯
,,
,,
,,
,,
–আমার মেয়ে কোথায় আছে.?

নীলার আব্বুর এমন রাগি কন্ঠে কথাটা শুনে নীলার আম্মুর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নীলার আব্বু তার সব কথা শুনে ফেলেছেন।। এখন উনি নীলার আব্বুকে কি জবাব দিবেন নিজেই বুঝতে পারছেন না।।

নীলার আব্বুঃ চুপ করে আছ কেন বল আমার মেয়ে কোথায়.? (কিছুটা ধমকের শুরে)

নীলার আব্বুর ধমক শুনে নীলার আম্মু কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন তারপরও তিনি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।।

এদিকে নীলার আম্মুকে চুপ করে থাকতে দেখে নীলার আব্বুর মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে গেল।। তারপরও তিনি নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে নীলার আম্মুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উনার হাত দুইটা নিজের কাছে নিয়ে আসলেন আর বললেন…

নীলার আব্বুঃ প্লিজ বল আমার মেয়ে কোথায়.? আমি আর আমার মেয়েটাকে না দেখে থাকতে পারছি না।। প্লিজ বল আমার নীলা কোথায়.? (বলতে বলতে উনার চোখে প্রায় পানি চলে এসেছে)

নীলার আম্মুঃ আরে তুমি কাদছ কেন.?

নীলার আব্বুঃ আমার মেয়ে কোথায় আছে বলে দাও।। নীলা যেখানেই থাকুক না কেন আমি ওকে বাসায় নিয়ে আসবো।। আর নীলা যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে আমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিব।।

নীলার আম্মুঃ সত্যি বলছ তুমি.! নীলা কাউকে ভালোবেসে থাকলে তুমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিবে.? কথা দাও আমায়।।

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ আমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিব, কথা দিচ্ছি।।

নীলার আম্মুঃ নীলা একজনকে ভালোবাসে আর সে হলো আমাদের তামিম।। তামিমও নীলাকে অনেক ভালোবাসে।। তারা দুজন বাসা থেকে পালিয়ে বিয়েও করে ফেলেছে আর তাদেরকে পালাতে আমিই হেল্প করেছি।। এখন তারা কক্সবাজারের —– এই হোটেলে আছে।।

নীলার আব্বুঃ নীলা তামিমকে ভালোবাসে অথচ আমি এর কিছুই জানি না.! তামিমকে তো নীলার জন্য আমারও পছন্দ কিন্তু আপার কথা রাখতে গিয়ে আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি নি।। যাইহোক আমি আজকেই ওদের দুজনকে বাসায় নিয়ে আসবো আর ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিব।।

নীলার আম্মুঃ ভাইজান কি তামিম আর নীলার সম্পর্কটা মেনে নিবে.?

নীলার আব্বুঃ ওইসব নিয়ে তুমি চিন্তা করিও না আমি ভাইজান কে বুঝিয়ে বলবো দেখবে উনি ঠিকই তাদেরকে মেনে নিবেন।।

নীলার আম্মুঃ আর বড় আপাকে কি বলবে.?

নীলার আব্বুঃ আগে তামিম আর নীলাকে বাসায় নিয়ে আসি তারপর দেখা যাবে আপাকে কি বলবো।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে তুমি বরং কাল সকালে ওদেরকে আনতে যেও।। এখন আমি গিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি।।

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা যাও।।

তারপর নীলার আম্মু খুশি মনে নিচে চলে আসলেন।। নিচে এসে উনি আর তামিমের আম্মু মিলে সবার জন্য রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন।। নীলার আম্মুর চেহারায় খুশি খুশি ভাব দেখে তামিমের আম্মু একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আজ তুমি এতো খুশি কেন।। তখন নীলার আম্মু জবাব দিলেন, সকাল হোক তারপর জানতে পারবেন।। এরপর সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার মতো ঘুমিয়ে পরলো।।

পরেরদিন সকালবেলা নীলার আব্বু ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করেই উনার গাড়ি নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেন।। নীলার আব্বু এর আগেও উনার বন্ধুদের সাথে কয়েকবার গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছেন তাই কক্সবাজারের রাস্তা চিনতে উনার কোনো অসুবিধা হবে না।। ৪ ঘন্টা পর নীলার আব্বু গিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছালেন।। তারপর তিনি সোজা ওই হোটেলে চলে গেলেন যেখানে তামিম আর নীলা রয়েছে।। হোটেলে ঢুকে তিনি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন যে তামিম আর নীলা কোন রুমে উঠেছে।।

এরপর তিনি সোজা তাদের রুমের কাছে চলে আসলেন।। রুমের কাছে এসে নীলার আব্বু বাহির থেকে প্রথমে দরজার কলিং বেল বাজালেন।। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নীলা এসে রুমের দরজা খুলে দিল।। দরজার সামনে নীলা তার আব্বুকে দেখে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই নীলা তার আব্বুর বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো আর কেদে দিল।।

নীলার আব্বুঃ আরে আরে আমার আম্মুটা কান্না করছে কেন.? কেউ কি আমার আম্মুটাকে কিছু বলেছে.?

নীলাঃ নিশ্চুপ (শুধু কেঁদেই যাচ্ছে)।।

নীলার আব্বুঃ কি হলো আম্মু বল কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে.? ওহ বুঝেছি, তামিম তোমায় বকা দিয়েছে তাইনা.? দাড়াও আমি এক্ষুণি (উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই নীলা উনাকে ছেড়ে দিল)।।

নীলা তার আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে রুমে ঢুকে চুপচাপ এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।। নীলার আব্বুও রুমে ঢুকে নীলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন আর তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নীলার থুতনিতে ধরে তার মুখটা হালকা উপরে উঠিয়ে বললেন…

নীলার আব্বুঃ আব্বুর উপর রেগে আছ তাইনা.? আব্বুর সাথে কি আর কথা বলবে না.?

নীলাঃ তুমি খুব পঁচা, তোমার সাথে কোনো কথা নাই (ছোট বাচ্চাদের মতো করে বললো)।।

নীলার আব্বুঃ ওহহ বুঝেছি আমার আম্মুটা তাহলে আমার উপর রেগে আছে।। আচ্ছা কি করলে আমার আম্মুটার রাগ ভাঙবে শুনি.?

নীলাঃ নিশ্চুপ

নীলার আব্বুঃ আমি এইখানে কীভাবে এলাম কেন এলাম জানতে চাইবে না.?

নীলাঃ কেন এসেছ এইখানে.? (অভিমানী কণ্ঠে)

নীলার আব্বুঃ এসেছি আমার আম্মুটাকে এইখান থেকে নিয়ে যেতে।।

নীলাঃ আমি কোথাও যাব না, আমি এইখানেই থাকবো।। চলে যাও তুমি এইখান থেকে (আরও অভিমান নিয়ে বললো)।।

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ চলে যাব তো তবে তোমাদেরকে সাথে নিয়ে যাব।।

নীলাঃ আমাদেরকে মানে.! (অবাক হয়ে)

নীলার আব্বুঃ আমার আম্মুটাকে আর আমার আম্মুটা এতদিন যার সাথে এইখানে থেকেছে তাকেও এইখান থেকে নিয়ে যাব।।

নীলাঃ মানে তা

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ তামিমকে আর তোমাকে এইখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি এইখানে এসেছি।। আর তোমরা যে এইখানে আছ এটা তোমার আম্মু ই আমাকে বলেছেন।। আর তোমরা যে বিয়ে করে ফেলেছ এটাও তোমার আম্মু আমাকে বলেছেন।। তাই আমি এখন চাচ্ছি তোমাদেরকে বাসায় নিয়ে যেতে আর বাসায় নিয়ে ধুমধাম করে তোমাদের দুজনের বিয়ে দিব।।

নীলাঃ সত্যি আব্বু.! তার মানে তুমি

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ আমি তোমাদেরকে মেনে নিয়েছি।।

নীলাঃ লাভ ইউ আব্বু তুমি অনেক ভালো (বলেই তার আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো)।।

নীলার আব্বুঃ আমায় মাফ করে দাও আম্মু, তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি রাফির সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম যার ফলস্বরূপ

নীলাঃ আব্বু এখন এইসব কথা বাদ দাও তো।।

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা তা তামিম কোথায় ওকে তো কোথাও দেখছি না।।

নীলাঃ উনি একটু ওয়াশরুমে গেছেন তুমি বিছানায় এসে বস।।

তারপর নীলার আব্বু বিছানায় গিয়ে বসে রইলেন আর তামিমের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো আর বিছানার মধ্যে নীলার আব্বুকে বসা অবস্থায় দেখে একটা বড় ধরণের শক খেল।। তামিম এটাই ভাবছে যে চাচ্চু এইখানে কীভাবে এলেন.?

তামিমঃ চাচ্চু তুমি এইখানে.!

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ বাবা তোরা দুজনকে বাসায় নিয়ে যেতে আসলাম।।

তামিমঃ বাসায় নিয়ে যেতে আসছ মানে.? তুমি কীভাবে জানলে যে আমরা এইখানে আছি.?

নীলার আব্বুঃ তোর চাচি ই আমাকে বলেছেন যে তোরা এইখানে আছিস।। আর তোরা যে বিয়ে করেছিস এটাও বলেছে আমায় তোর চাচি।। বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ তুই আমাকে মাফ করে দে, আমি জানতাম না যে নীলা তোকে ভালোবাসে, যদি জানতাম তাহলে আমি তোর সাথেই নীলার বিয়ে দিতাম।। কিন্তু তোর ফুপির কথা রাখতে গিয়ে আমি নীলারও কোনো মতামত শুনতে চাইনি।। প্লিজ বাবা তুই আমাকে মাফ করে দে (বসা থেকে উঠে তামিমের হাত ধরে)।।

তামিমঃ ছিঃ ছিঃ চাচ্চু তুমি এটা কি করছ, আমি তোমাকে মাফ করবো মানে.? উলটা তুমি আমায় মাফ করবে কারণ আমি তোমাদের কারও কথা চিন্তা না করেই সেদিন নীলাকে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসি।। আমার জন্য তোমাদেরকে না জানি কত মানুষের কাছে সেদিন ছোট হতে হয়েছে।।

নীলার আব্বুঃ না বাবা এইখানে তোর কোনো দোষ নেই, সব দোষ আমার, আমারই ভুল হয়েছে তোর ফুপির কথা শুনে।। তোরা আমাকে মাফ করে প্লিজ আর আমার সাথে এখন বাসায় চল।।

তামিমঃ চাচ্চু এইসব এখন বাদ দাও।। আর বাসায় গেলে আব্বু

নীলার আব্বুঃ তোর আব্বুকে আমি ম্যানেজ করে নিব শুধু তোরা দুজন বাসায় চল।।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে চল, নীলু আমাদের

নীলাঃ আমাদের সব জামাকাপড় ব্যাগে ভরে ফেলেছি চল এবার যাওয়া যাক।।

তামিমঃ হাহা, হ্যাঁ চাচ্চু তাহলে চল এবার যাওয়া যাক।।

তারপর তারা ৩জন হোটেলের ম্যানেজারেরকে সবকিছু বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে নীলার আব্বুর গাড়িতে উঠে বসে।। এরপর নীলার আব্বু গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে তারা একেবারে সন্ধ্যার সময় তাদের বাসায় এসে পৌঁছে।। গাড়ি বাসার সামনে থামানোর পর নীলা গাড়ি থেকে নেমে বাসার দরজার কলিং বেলে চাপ দিল।। কিছুক্ষণ পর নীলার আম্মু এসে বাসার দরজা খুলে দিলেন।। নীলা তার আম্মুকে দরজার সামনে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।।

নীলাঃ আম্মু কেমন আছ তুমি.?

নীলার আম্মুঃ ভালো মা, তোদের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো.?

নীলাঃ না আম্মু কোনো অসুবিধা হয়নি।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা সবাই ভিতরে আস।।

তারপর সবাই বাসার ভিতরে গিয়ে ঢুকলো।। তামিম আর নীলাকে বাসায় দেখে তামিমের আম্মু উনার রুম থেকে দৌড়ে এসে তামিমকে জড়িয়ে ধরলেন আর কেঁদে ফেললেন।।

তামিমের আম্মুঃ বাবা কোথায় ছিলি তুই এতোদিন.?

তামিমঃ আম্মু কান্না কর না প্লিজ, তোমাদেরকে সব বলবো তুমি এখন শান্ত হও।। আর আব্বু কোথায়.?

তামিমের আম্মুঃ তোর আব্বু তো অফিসে।।

তামিমঃ ওহহ

তামিম আর নীলার গলার আওয়াজ শুনে তাদের ফুপি আর উনার ছেলেও এতক্ষণে তাদের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।। রাহিমা বেগমও তামিম আর নীলাকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করছেন তারা এতোদিন কোথায় ছিল কিন্তু তারা দুজনেই বলছে এইসব কথা পরে বলবে।। তারপর সারা বাসায় তামিম আর নীলাকে নিয়ে হৈচৈ পরে গেল, তামিম আর নীলাকে খুজে পাওয়ার আনন্দে।।

কিছুক্ষণ পর তামিমের আব্বুও বাসায় চলে আসলেন আর তামিম আর নীলাকে বাসায় দেখে বেশ চমকে উঠলেন।। তারপরও তিনি নিজেকে শান্ত রেখে কারও সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।। এরপর তিনি নিজের অফিসের কাপড় পালটে অন্য কাপড় পরে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলেন।। উনার পিছনে পিছনে বাসার সবাই ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঢুকলো।। সবাই এখন চুপচাপ কারও মুখে কোনো কথা নেই।। নিরবতা ভেঙে তামিমের আব্বু বললেন…

তামিমের আব্বুঃ এরা এতোদিন কোথায় ছিল আর এখন এরা বাসায় কীভাবে এলো.?

নীলার আব্বুঃ ভাইজান এরা এতোদিন কক্সবাজার ছিল, আজকে আমিই ওদেরকে সেখান থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি।।

তামিমের আব্বুঃ কেন এনেছিস এদের বাসায়.? (কিছুটা রাগী শুরে)

নীলার আব্বুঃ আসলে ভাইজান এরা যেদিন বাসা থেকে পালিয়ে যায় সেদিনই এরা একটা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে।। এদের জন্য তো আমারও কষ্ট হয় তাই আমি এদের বিয়েটা আবার দেওয়ার জন্য এদেরকে বাসায় নিয়ে এসেছি।। তামিমকে নীলার জন্য আমারও পছন্দ কিন্তু আপার কথা রাখতে গিয়ে আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি নি।। এখন যদি আপনি রাজি থাকেন তাহলে আমি আবার এরা দুজনের বিয়ে দিতে চাই।।

নীলার আব্বুর কথাগুলো শুনে তামিমের আব্বু কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ এমন একটা কথা বললেন যা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল।। তামিম আর নীলা শুধু অসহায়ের মতো তাদের ফুপির দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে না জানি এখন ফুপি কি বলে।।
.
.
.
.
.
Loading…….

“Attention Guys”
গল্পটা আগামী পর্বতে শেষ করে দিব, তবে গল্পটা কাল পাবেন না, আগামীকাল ৭টার পর পাবেন।। কারণ শেষ পর্বটা একটু গুছিয়ে লিখার জন্য ১ দিন সময় নিচ্ছি।। আর এই গল্পটা শেষ হলে কি এর #সিজন_২ আনবো.? সবাই মতামত দিয়ে যাবেন কিন্তু।। যদি আপনারা বলেন তাহলে এই গল্পটার #সিজন_২ আনবো, আর না বললে আনবো না, সবই আপনাদের ইচ্ছা।।

~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৩০ (শেষ পর্ব)
,,
,,
,,
,,
–আপা যদি তামিম আর নীলার বিয়েতে মত দেন তাহলে আমি রাজি।। কারণ আপা তো চাচ্ছিলেন রাফির সাথে নীলার বিয়ে দিতে।। কিন্তু তামিম আর নীলা যেহেতু বিয়ে করে ফেলেছে তাহলে আপা ই ভালো জানেন উনি কি করবেন।।

তামিমের আব্বুর এমন কথা শুনে তামিম আর নীলা অসহায়ের মতো তাদের ফুপির দিকে তাকালো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো না জানি এখন ফুপি কি বলে।। তামিমের আব্বুর কথা শুনে রাহিমা বেগম বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ কিছু বলতে যাবেন তখনই উনার ছেলে রাফি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে…

রাফিঃ Wait Mom আগে আমি কিছু বলতে চাই, যদি তুমি Permission দাও।।

ফুপিঃ আচ্ছা দিলাম Permission বল এবার কি বলবি.?

রাফিঃ I Don’t Know তুমি এখন কি বলবে But আমি কিছু কথা বলে ফেলি।। তুমি যদি চাও নীলার সাথে আমার বিয়ে দিতে তাহলে আমি নীলাকে বিয়ে করতে পারবো না।। কারণ সে এখন অন্য একজনের Wife, আর আমি অন্য একজনের Wife কে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।। যদিও আমি এখনো শিওর না যে তাদের বিয়ে হয়েছে কি, তারপরও আমি নীলাকে বিয়ে করবো না।। কারণ তামিম আর নীলা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।। আমার মনে হয়না এখন আমার সাথে নীলার বিয়ে দিলে নীলা জীবনে সুখী হবে বা আমি হতে পারবো।। তামিমের সাথে নীলার পরিচয় ছোটবেলা থেকেই।। ছোটবেলা থেকেই তারা দুজন একে অপরের সাথে থেকে এসেছে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা দুজন দুজনের ব্যাপারে খুব ভালো করেই জানে।। আমার সাথে তো নীলার পরিচয় মাত্র কয়েকদিনের।। এই কয়দিনে না আমি নীলার ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছি আর না নীলা আমার ব্যাপারে কিছু জেনেছে।। আর Main কথা হলো এই বিয়েতে নীলা মত নেই কারণ সে আমাকে বিয়ে করতে চায়না।। আর আমিও নীলাকে নিয়ে আগে কখনো এইসব ভাবি নি But তুমি যখন বললে যে নীলাকে তুমি আমার বউ বানাতে চাও তখন থেকে আমি নীলাকে হালকা ভাবতে শুরু করি।। But তামিম হয়তো নীলাকে নিয়ে সেই ছোটবেলা থেকেই ভেবে এসেছি So আমি চাইনা আমার জন্য ২ জন মানুষের জীবন নষ্ট হোক।। So আমি নীলাকে বিয়ে করতে পারবো না (একদমে কথাগুলো বলে রাফি থামলো)।।

রাফির কথাগুলো শুনে তার আম্মু রাহিমা বেগম সাথে সাথেই বলে উঠলেন…

ফুপিঃ হ্যাঁ আমিও এটাই বলতে চাচ্ছিলাম যে নীলার যেহেতু এই বিয়েতে মত নেই সেহেতু তোর সাথে নীলার বিয়ে দিব না।। কারণ এতে তোরা কেউ-ই জীবনে সুখী হতে পারবি না।। আর নীলা যেহেতু তামিমকে ভালোবাসে তাহলে তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে দেওয়া হোক।। এতে তারা দুজনেই জীবনে সুখী থাকবে।।

রাফিঃ Yes Mom তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে দেওয়া হোক।।

রাহিমা বেগম আর তার ছেলের কথাগুলো শুনে তো তামিম আর নীলা বেজায় খুশি।। এবার তামিমের আব্বু কি বলেন এটাই শোনার পালা।।

তামিমের আব্বুঃ তা আপা তুমিও চাচ্ছ যে তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে হোক তাইতো.?

ফুপিঃ হ্যাঁ আমিও এটাই চাচ্ছি।।

তামিমের আব্বুঃ কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে যা নীলা মামনিকে মানতে হবে, তাহলেই আমি তাদের বিয়েতে মত দিব।।

নীলাঃ কি শর্ত চাচ্চু.?

তামিমের আব্বুঃ এখন থেকে আমাকে আর চাচ্চু বলে ডাকা যাবে না, আব্বু বলে ডাকতে হবে।।

নীলাঃ আমি রাজি চাচ্চু, সরি আব্বু (লজ্জায় মাথা নিচু করে)।।

তামিমের আব্বুঃ তামিমের আম্মু বউমা কি পছন্দ হয়েছে তোমার.?

তামিমের আম্মুঃ হবে না কেন অনেক পছন্দ হয়েছে, এমন লক্ষি মেয়েই তো আমার ছেলের জন্য খুজতেছিলাম (নীলার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে)।।

নীলাঃ আর খোজার দরকার কি পেয়েই তো গেছ, এবার তোমার ছেলের বউ বানিয়ে আমাকে গ্রহণ করে নাও (মজা করে)।।

নীলার কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে দিল।।

তামিমের আম্মুঃ ওরে শয়তান মেয়ে (নীলার কান ধরে)।।

নীলাঃ আহ্ চাচি লাগছে তো।।

তামিমের আম্মুঃ চাচি কি হে.? এখন থেকে আম্মু বলে ডাকবি আমায় নাহলে কিন্তু এইভাবে কান মলে দিব।।

নীলাঃ আচ্ছা আম্মু আর চাচি বলে ডাকবো না এবার তো কান ছাড়।।

তামিমের আম্মুঃ হুম ছাড়লাম লক্ষি মেয়ে আমার (নীলাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে)।।

নীলাঃ আমার ভালো আম্মুটা (তামিমের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে)।।

নীলার আম্মুঃ বাহ্ শ্বাশুড়ি পেয়ে এখন মাকে ভুলে গেলি.!

নীলাঃ না আম্মু তোমাকে কীভাবে ভুলি আমি.? (বলেই তার আম্মুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো)

ফুপিঃ আচ্ছা তাহলে এবার এদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা যাক।।

নীলার আব্বুঃ আগামী শুক্রবারে বিয়ের তারিখ ফেললে কেমন হয় ভাইজান.?

তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ ভালোই হয়।।

ফুপিঃ তাহলে আগামী শুক্রবারেই তামিম আর নীলার বিয়ে এটাই ফাইনাল।। এবার খাবারের আয়োজন কর অনেক খিদে পেয়েছে।।

অবশেষে আগামী শুক্রবারে তামিম আর নীলার বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।। এটা শুনে তামিম আর নীলার মনে তো লাড্ডু ফুটছে।। তারা দুজনেই আজ বেশ খুশি কারণ তাদের সম্পর্কটা আজ তাদের পরিবার নিয়েছে।। আজকের দিনটা হয়তো তাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন।। ওইদিনের মতো সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে গেল।। কিন্তু তামিম নিজের রুমে না গিয়ে সোজা নীলার রুমে চলে এলো।।

তামিম নীলার রুমে এসে দেখলো নীলা তার ব্যাগ থেকে তার কাপড়গুলো বের করে গুছিয়ে রাখছে।। তামিম আস্তে আস্তে নীলার কাছে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।। তামিমের এমন কাজে নীলা প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই সে বুঝে গেল যে এটা তামিম।।

নীলাঃ এই কি করছ কেউ দেখে ফেলবে তো, দেখি ছাড় আমার কাজ আছে।।

তামিমঃ উঁহু কাজ পরে এখন একটু আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করে নেই।।

নীলাঃ যা রোমান্স করার বিয়ের পর করিয়েন এখন ছাড়েন।।

তামিমঃ বিয়ে তো আমরা একবার করেছি ই আর ওই বিয়ের তো অনেক দেড়ি আছে।। এতদিন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না আমি।।

নীলাঃ না পারলেও করতে হবে কারণ আমি যে তোমাকে কথাটা বলেছিলাম

তামিমঃ ওইটার ডেট ওভার হয়ে গেছে।। কারণ তুমি বলেছিলে তোমাকে আমি ততদিন পর্যন্ত ছুঁতে পারবো না যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে।। এখন তো আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে & আমাদেরকে আবার বিয়েও করাতে চাচ্ছে।। সো জানপাখি এখন আর আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না।।

নীলাঃ আচ্ছা মানলাম আমার ওই কথার ডেট ওভার, কিন্তু এখন তুমি কিছু করতে পারবে না।। যা করার বিয়ের পর করিও এবার রুম থেকে যাও।।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি কিছুই করবো না।। এখন আমায় একটা কথা বল তো, আমাদের পরিবার যে আমাদের সম্পর্কটা এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলেন এতে তুমি কতটুকু খুশি হয়েছ.?

নীলাঃ অনেক খুশি হয়েছি যা বলে বুঝাতে পারবো না।। কিন্তু আমার একটা কথা মাথায় ঢুকছে না, চাচ্চু আমাদেরকে এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে মেনে নিলেন.?

তামিমঃ সেইটা তো আমারও মাথায় ঢুকছে না।। যাইহোক আমি এই বিষয়ে কিছু ভাবতেও চাইনা।। শেষ মেশ আব্বু যে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছেন এতেই অনেক।।

নীলাঃ হুম, এবার রুম থেকে যান আমি কাপড় গোছাব।।

তামিমঃ আমি হেল্প করি.?

নীলাঃ থাক লাগবে না।।

তামিমঃ ওকে তাহলে কাপড় গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরিও কেমন বাই (বলেই নীলার গালে একটা চুমু খেয়ে তামিম সেখান থেকে বেরিয়ে তার রুমে চলে আসে)।।

নীলাঃ পাগল একটা।।

আপনাদের মনেও হয়তো এখন প্রশ্ন জাগছে যে তামিমের আব্বু এতো তাড়াতাড়ি তাদের সম্পর্কটা কীভাবে মেনে নিলেন.? তাহলে বুঝিয়ে বলি শুনেন…

গতকাল যখন নীলার আম্মু-আব্বু একে অপরের সাথে তামিম আর নীলার বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন তখন তামিমের আম্মু নীলার আম্মুকে ডাকতে ওদের রুমের কাছে এসেছিলেন।। কিন্তু ভিতরে উনি উনার ছেলে আর নীলার বিষয় নিয়ে কথা বলা শুনতে পেয়ে দরজার কাছে কান পেতে দাঁড়িয়ে পরেন আর তাদের কথা শুনতে লাগলেন।। নীলার আম্মু-আব্বুর মধ্যকার কথাগুলো শুনে তামিমের আম্মু দ্রুত উনার রুমে আসেন আর তামিমের আব্বুকে সবকিছু বলেন।।

তামিমের আম্মুঃ তাহলে তোমার জন্য আজ তাদের এই অবস্থা, তুমি যদি তাদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাড়াতে না তাহলে আজ আমাদেরকে এই দিনের সম্মুখীন হতে হতো না।। তুমি একজন বাবা হয়ে কীভাবে নিজের ছেলের সাথে এমন করতে পারলে.?

তামিমের আব্বুঃ বিশ্বাস কর তামিমের আম্মু আমার জন্য যে তারা এতো কষ্ট পাবে তা আমি আগে বুঝতে পারিনি।। আসলে আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা ছিল যে নিজেদের মধ্যে যদি এইসব সম্পর্ক হয় তাহলে হয়তো আমরা দুই ভাই আলাদা হয়ে যাব।। বাবা তো মরার আগে বলে গেছিলেন আমরা দুই ভাই যেন সবসময় একসাথে থাকি।। কিন্তু এইসব সম্পর্কের কারণে যদি কখনো আমরা ভাই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া মারামারি অথবা বিচ্ছেদ হয় তখন তো আমরা বাবার শেষ ইচ্ছাটা আর টিকিয়ে রাখতে পারবো না।।

তামিমের আম্মুঃ তুমি কি পাগল.? এইসব সম্পর্কের কারণে কি নিজেদের মধ্যে কখনো ঝগড়া, মারামারি হতে দেখেছ.?

তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ আমার এক বন্ধুর সাথে এমনটা হয়েছে।। সেও তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেছিল।। বিয়ের পর তারা সবাই সুখেই ছিল কিন্তু হঠাৎ তার বাপ চাচার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মারামারি লেগে যায়।। তার চাচা ভাবে সম্পত্তির জন্য সে তার মেয়েকে বিয়ে করেছে আর তার বাবা ভাবে সম্পত্তির জন্য তার চাচা তার মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিয়েছে।। তাই আমিও ওর বিষয়টা চিন্তা করে নিজেদের মধ্যে এইসব সম্পর্কে

তামিমের আম্মুঃ একজনের সাথে এমনটা হয়েছে বলে যে সবার সাথেই এমনটা হবে এটা তো নয়।। দেখ নীলার আম্মু-আব্বু তামিমকে কতো ভালোবাসে।। তামিম আর নীলাকে পালাতে তার চাচি হেল্প করেছেন এমনকি তাদের খরচের জন্য যত টাকা লাগছে সব টাকা উনিই দিচ্ছেন।। তোমার কি মনে হয়না যে নীলার আম্মু তামিমকে ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে দেখেই তামিমের কাছে নীলাকে তুলে দিয়েছে.? আর আমরাও তো নীলাকে কতো ভালোবাসি একদম নিজের মেয়ের মতো ভাবি নীলাকে।। নীলার মতো ভালো একটা মেয়ে কি আর তুমি কোথাও খুজে পাবে.?

তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ কথাগুলো তুমি ঠিকই বলেছ, একজনের সাথে এমনটা হয়েছে বলে যে সবার সাথেই এমনটা হবে এটা তো নয়।। আসলে তখন আমার মাথায় এতো কিছু ছিল না নাহলে আমি তাদের সাথে এমনটা করতাম না।। আচ্ছা এখন আমার কি করা উচিত তুমিই বল.?

তামিমের আম্মুঃ নীলার আব্বু বলেছে কাল কক্সবাজার গিয়ে তাদেরকে বাসায় নিয়ে আসবে।। তুমি তাদের সম্পর্কটা মেনে নিও আর তাদের দুজনের আবার বিয়ে দেওয়ার কথা বলিও।।

তামিমের আব্বুঃ আচ্ছা তাহলে সেটাই হবে কিন্তু তুমি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলিও না।।

তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা

এই হলো তামিম আর নীলার সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার ঘটনা, এবার গল্পতে আসি।।

এদিকে তামিম তার রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে একে একে তার সবকটা বন্ধুকে কল করে আজকের ঘটনাটা জানালো আর শেষে এটাও বললো যে আগামী শুক্রবার তার আর নীলার বিয়ে তারা সবাই যেন বিয়ের দিন উপস্থিত থাকে।। কথা বলা শেষে ওইদিনের মতো তামিম ঘুমিয়ে পরে।।

এইভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন।। এরই মধ্যে তামিম আর নীলার বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসলো।।

আজ শুক্রবার মানে তামিম আর নীলার বিয়ের দিন।। বাসার একমাত্র ছেলে আর একমাত্র মেয়ের বিয়ের উপলক্ষে পুরো বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।। ইতিমধ্যে তামিম আর নীলার নানু বাড়ি থেকে তাদের খালা, খালু, খালাতো ভাই-বোন আর মামা-মামী আর মামাতো ভাই-বোনেরাও তাদের বাসায় এসেছে।। বাসাটা এখন বেশ জমজমাট হয়ে পরেছে।। পুরো বাসায় ছোট বাচ্চাদের হৈচৈও পরে গেছে।। আজ যেন সবার মনে একটা আনন্দের বন্যা বইছে।।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় খাওয়া দাওয়ার আয়োজন পরে গেল।। খাওয়া দাওয়া শেষে শুরু হলো বিয়ের কাজ।। বাসার ড্রয়িংরুমের বড় সোফার এক সাইডে তামিম আর অন্য সাইডে নীলা বসে আছে।। নীলা আজ একটা গাঢ় লাল শাড়ি পরেছে আর তামিম পরেছে একটা নীল কালারের পাঞ্জাবী।। তাদের দুজনের সামনে একজন কাজি বিয়ের দলিল নিয়ে বসে আছেন।। কাজি লোকটা এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।। প্রথমে কাজি তামিমকে কবুল বলতে বললো এরপর নীলাকে।। তামিমের কবুল বলা শেষে নীলাও কবুল বললো।। তারপর কাজি তাদের দুজনকে সেই দলিলের দুই জায়গায় সাইন করতে বললেন।। তারা দুজনেই কাজির কথামতো সেই জায়গায় সাইন করে দিল।। ব্যস এর মধ্যে তাদের বিয়েটাও সম্পন্ন হয়ে গেল।। এরপর সারা বাসায় মিষ্টি বাটা হলো আর নীলার কয়েকটা কাজিন নীলাকে নিয়ে উপরে চলে গেল।। তামিমের বন্ধুরাও তামিমকে নিয়ে তাদের বাসার ছাদে চলে আসলো।।

শুভঃ মামা বিয়ে তো করলি কিন্তু আমাদের ট্রিট কোথায়.?

তামিমঃ এতো খাবার খেয়েও তোদের পেট ভরেনি যে এখন এসে ট্রিট চাচ্ছিস.!

শুভঃ পেট তো ভরেছেই, কিন্তু বিয়ের উপলক্ষে আমাদেরকে একটা আলাদাভাবে ট্রিট দিবি না সেইটাই বলছি।।

তামিমঃ আচ্ছা যা একদিন সময় করে দিব নে।।

শুভঃ মনে থাকে যেন।।

তারপর তামিম আর তার বন্ধুরা মিলে গল্প করতে লাগলো।। গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে আসলে সেদিকে কারও খেয়ালই নেই।। হঠাৎ ছাদে তামিমের আম্মু এসে তামিমকে ডাক দেন।।

তামিমের আম্মুঃ তুই এইখানে কি করছিস.? রুমে যা নীলা তো সেই কখন থেকে রুমে একা একা বসে আছে।।

তামিমঃ হ্যাঁ আম্মু তুমি যাও আমি যাচ্ছি।।

তামিমের আম্মুঃ তাড়াতাড়ি যা (বলেই উনি ছাদ থেকে নেমে গেলেন)।।

তামিমঃ আচ্ছা মামারা তাহলে আমি এখন যাই আর তোরা কিন্তু রাতের খাবার খেয়ে যাস।।

রনিঃ আরে মামা যাওয়ার জন্য এতো পাগল হচ্ছিস কেন তোর বউকে কি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে নাকি.?

তামিমঃ হ্যাঁ যদি কেউ নিয়ে যায় তাহলে আমি আজ রোমান্স করবো কার সাথে.? (মজা করে)

রনিঃ শালা হারামি

তামিমঃ তোর তো কোনো বোন নাই আর আমারও বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে আমি তোর শালা হলাম কি করে.?

রনিঃ আরে ব্যাটা ওইটা তো একটা কথার কথা, তুই যা এখন আর Best Of Luck.

তামিমঃ আচ্ছা গেলাম তাহলে।।

তারপর তামিম ছাদ থেকে সোজা নিজের রুমের দরজার কাছে চলে আসলো।। সেই প্রথম দিনের মতো রুমে ঢুকতে তামিমের যেমন নার্ভাস ফিল হচ্ছিলো আজও তেমন হচ্ছে।। তারপরও তামিম বুকে সাহস নিয়ে রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো।। ভিতরে ঢুকে তামিম নীলার দিকে তাকাতেই দেখলো নীলা বিছানার উপর শুয়ে আছে।। এরপর সে রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালো।।

তামিমঃ নীলু এই নীলু এই কি হয়েছে তোমার.?

নীলাঃ নিশ্চুপ (কোনো নড়াচড়া নেই)।।

তামিমঃ এই নীলু কি হয়েছে তোমার কথা বলছ না কেন.? এই নীলু প্লিজ কথা বল.? (নীলাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে)

নীলাঃ উফ কে রে ধাক্কাচ্ছে আমায়.? (তাকিয়ে দেখে তামিম) ওহ তুমি কি হয়েছে এইভাবে ধাক্কাচ্ছ কেন শান্তিতে ঘুমাতেও দিবে না নাকি.?

নীলার এমন কথা শুনে তামিম যেন ভেবাচেকা খেয়ে যায়।। আজ তাদের বাসর রাত আর নীলা এইসব কি বলছে তামিমের যেন কিছুই বুঝে আসছে না।।

নীলাঃ কি হলো চুপ করে আছ কেন কিছু বললে তো বলবে।।

তামিমঃ আজ আমাদের বাসর রাত আর তুমি এই রাতে এইভাবে ঘুমাচ্ছ.!

নীলাঃ তো কি আমি নাচবো.?

তামিমঃ নাচবে কেন.?

নীলাঃ তাহলে কি করবো বল.?

তামিমঃ ওই যে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী যা করে (লজ্জার ভান ধরে)।।

নীলাঃ সরি জানু আমি এখন এইসবে জড়াব না।।

তামিমঃ কিন্তু কেন.?

নীলাঃ এবার শুয়া থেকে উঠে বসলো আর তামিমকে টেনে তার পাশে বসিয়ে তার এক হাত জড়িয়ে ধরলো আর বললো, দেখ আমি সবেমাত্র ভার্সিটিতে উঠেছি, আমার আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে।। কিন্তু আমরা যদি এখনই এইসবে জড়াই তাহলে আমার ইচ্ছাটা শেষ হয়ে যাবে।। কারণ আমরা যদি এখনই বেবি নিয়ে নেই তাহলে আমি বেবি সামলাবো নাকি আমার পড়াশোনা।। আর এখন থেকে তোমাকেও সবসময় অফিসেই দিন কাটাতে হবে।। তাহলে বেবিকে আমারই সামলাতে হবে আর এর জন্য আমার পড়াশোনাও বন্ধ করে দিতে হবে।। এখন তুমিই বল তুমি চাউ যে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দেই.? বল তুমি কি চাও.?

তামিমঃ নীলার কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, তোমার কথাগুলো আমি বুঝতে পেরেছি।। আর আমিও চাই তুমি আরও পড়াশোনা কর।। কারণ আমরা তো আর আলাদা থাকবো না যে তোমাকে সংসারের কাজ করতে হবে।। তাহলে কেন তুমি শুধু শুধু নিজের পড়াশোনা বন্ধ করবে।। আর বেবি নাহয় আমরা আরও পরেই নিব যখন তুমি চাও।। আমি কিন্তু কখনো তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবো না এই তোমায় কথা দিলাম (নীলার হাত জড়িয়ে ধরে)।।

নীলাঃ কথাগুলো মন থেকে বলছ তো নাকি আমার কথা

তামিমঃ না কথাগুলো আমি মন থেকেই বলছি।।

নীলাঃ সাথে সাথে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো, সত্যি তুমি অনেক ভালো।। তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমার জীবন সার্থক।।

তামিমঃ তুমিও অনেক ভালো (নীলাকে জড়িয়ে ধরে)।।

নীলাঃ তো মিস্টার আজ কি ঘুমাবেন না নাকি সারারাত গল্প করবেন কোনটা.?

তামিমঃ উমম আমরা তো একে অন্যের ব্যাপারে মোটামুটি সবকিছু জানিই তাহলে কোন বিষয়ে গল্প করবো.? এর চেয়ে ভালো ঘুমিয়েই পরি।।

নীলাঃ ওকে বাট একটা কথা।।

তামিমঃ কি বল.?

নীলাঃ এখন থেকে বিছানায় বালিশ থাকবে একটা আর সেই বালিশে তুমি ঘুমাবে।।

তামিমঃ আর তুমি.?

নীলাঃ তোমার এই বুকে।।

তামিমঃ শুধু বুকের মধ্যে ঘুমালে হবে না, জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে হবে হুম।।

নীলাঃ ওকে জানু।।

তামিমঃ তাহলে এবার ঘুমানো যাক নাকি.?

নীলাঃ হুম

তারপর তামিম বিছানায় থাকা বালিশের মধ্যে শুয়ে পরলো আর নীলা তামিমের বুকের মধ্যে মাথা রেখে তামিমকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।। তামিমও নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।।

৫ বছর পর…

মিমঃ আব্বু আব্বু আম্মু তোমাকে দাকে (ডাকে)।।

তামিমঃ তাই নাকি মামনি, তা তোমার আম্মু আমায় কেন ডাকে.? (মিমকে কুলে নিয়ে)

মিমঃ আমি দানি(জানি) না কেন দাকে(ডাকে), তুমি গিয়ে তুনে(শুনে) আত(আস)।।

তামিমঃ আচ্ছা মামনি চল তোমার আম্মুর কাছে।।

তারপর মিমকে নিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে এলো (মিম হচ্ছে তামিম আর নীলার মেয়ে, বয়স এখনো ২ বছর হয়নি তারপরও অনেক পাকনা পাকনা কথা।। সারা বাসার নয়নের মনি হচ্ছে মিম)।। রান্নাঘরে এসে তামিম দেখলো নীলা রান্না করছে (এখন নীলাই সবসময় বাসার সবার জন্য রান্না করে)।।

তামিমঃ কি হয়েছে নীলু তুমি নাকি আমায় ডাকছ.?

নীলাঃ হুম কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ.?

তামিমঃ রুমেই তো ছিলাম।। তা কেন ডাকছ বল.?

নীলাঃ কেন ডাকছি জান না.? প্রতিদিন কি এক কথা মনে করিয়ে দিতে হবে.? (রাগী চোখে)

তামিমঃ ওহহ সরি সরি দাড়াও আমি মিমকে আম্মুর কাছে রেখে আবার আসছি।।

তারপর তামিম তার আম্মুর ঘরে গিয়ে মিমকে তার আম্মুর কাছে রেখে আবার রান্নাঘরে চলে আসলো আর নীলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।।

তামিমঃ সরি জানপাখি ভুলে গেছিলাম আর এমন হবে না।।

নীলাঃ এটা তো প্রতিদিনই বল, আচ্ছা যাও আজ শেষবারের মতো মাফ করলাম।। এরপর যদি আর কোনোদিন ভুলেছ তো

তামিমঃ না কলিজা আর কখনো ভুলবো না।।

নীলাঃ মনে থাকে যেন দেখি এবার ভালো করে ধর আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।।

আসলে নীলা রান্নার কাজে ঢোকার আগে তামিমকে বলেছিল সে যেন রান্না করার সময় তামিম তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকে নাহলে তার নাকি রান্না করতে ভালো লাগে না।। যদিও রান্না করার জন্য তার আম্মু আর তামিমের আম্মু আছেন তারপরও নীলা তাদেরকে রান্না করতে দেয়না।।

মিমঃ আব্বু তুমি আজ আমায় তুমু(চুমু) দিলে না কেন.? দাও(যাও) তোমাল সাথে আলি(আড়ি), (হঠাৎ মিম রান্নাঘরে এসে কথাটা বললো)

মিমকে রান্নাঘরে দেখে তামিম নীলাকে ছেড়ে দিল আর মিমের কাছে গিয়ে তাকে নিজের কুলে নিয়ে তার দুই গালে ২টা চুমু খেল।।

তামিমঃ এবার হয়েছে তো মামনি.?

মিমঃ হুম আমাল ভালো আব্বু (বলেই তামিমের গালে একটা চুমু দিল)।।

নীলাঃ শুধু কি মেয়েকেই চুমু দিবে, মেয়ের আম্মুকে চুমু দিবে না.?

তামিমঃ ওহহ হে ভুলেই গেছিলাম (বলেই তামিম নীলার কাছে গিয়ে নীলার গালে একটা চুমু খেল)।।

নীলাঃ মামনি আম্মুকে চুমু দিবে না.?

মিমঃ দিব বলেই নীলার গালে একটা চুমু দিল।।

নীলাও মিমের গালে একটা চুমু খেয়ে বললো…

নীলাঃ এবার ধর নাহলে কিন্তু আমি কাজ করবো না (তামিমকে বললো)।।

তারপর তামিম মিমকে কুল থেকে নামিয়ে দিয়ে আবার নীলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।। এইভাবেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে তাদের দিন কাটতে লাগলো।। বেঁচে থাকুক এইরকম হাজারো পবিত্র ভালোবাসা ?
.
.
.
.
.
The End…….

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা ছিলেন তাদেরকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এতোদিন ধরে গল্পের সাথে থাকার জন্য।। গল্পের মধ্যে সকল প্রকার ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর পুরো গল্পটা সবার কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন প্লিজ।। গল্পটা চলাকালীন অনেক কেই অনেক কিছু বলেছি, তার জন্য সবাই আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ।। অনেকেই বলেছেন গল্পটা আরও বড় করতে, কিন্তু গল্পটা বড় করার আর কোনো টপিক মাথায় আসছিল তাই গল্পটা শেষ করে দিলাম।। এই গল্পটা আজ ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে লিখছি।। এই পুরো গল্পটায় আপনাদের এতো এতো ভালোবাসা & সাপোর্ট পেয়েছি যা বলে বোঝাতে পারবো না।। এই গল্পটার সাথে আপনাদেরও খুব মিস করবো।। তবে আপনাদের জন্য এই গল্পটার #সিজন_২ নিয়ে আবারও আপনাদের মাঝে হাজির হব ইনশাআল্লাহ।। ততদিনে সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ ?

বিঃদ্রঃ “Attention Guys”
#সিজন_২ পাবেন ঈদের পর, কারণ রমজান মাসের জন্য #সিজন_২ এখন আর দিচ্ছি না।। আর হে অনেকেই বলেছেন হেপি এন্ডিং দিয়ে নতুন করে #সিজন_২ আনতে আবার অনেকে বলেছেন সেড এন্ডিং দিয়ে এইটার উপরে আবার #সিজন_২ আনতে।। পুরো গল্পটা আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম কীভাবে লিখবো।। তাই গল্পটার নামের সাথে মিল রেখেই এন্ডিং দিয়েছি।। এখন #সিজন_২ নতুনভাবেও আনতে পারি বা এই গল্পটার কিছু অংশ নিয়েও আনতে পারি।। তবে এখন শিওর হয়ে বলতে পারবো না #সিজন_২ কীভাবে আনবো।। তবে #সিজন_২ আনবো ইনশাআল্লাহ ?

1 COMMENT

  1. অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর গল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য???,,আমি কালকে রাতে আপনার গল্প টা দেখেছি, রাতে অর্ধেক গল্প টা পড়েছি এখন বাকি টা পড়লাম খুব ভালো লাগলো একটানা পড়ে।আরো গল্প দেওয়ার জন্য অনেক ?????শুভেচ্ছা রইলো,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here