আপনিতে ব্যস্ত,Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
-…(ইরা দাঁত বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে)
আমি ভাবছি “কি চালাক মেয়েরে বাবা!”
,,
অচেনা মেয়ে দেখে দুই বোন ও হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুই বোনের মধ্যে বড়জন এবার সপ্তম শ্রেণীতে আরেকজন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মা ইরাকে বসতে দিলো। তারপর ওর কাছ থেকে সব কথা শুনলো আর বলল..
-শুভ(মা)
-হ্যা মা বলো (আমি)
-ও কি সত্যি বলতেছে?
-হ্যা মা সব সত্যি
-তোদের মধ্যে আগে থেকে পরিচয় ছিলো কি?
-নাহহ
-একটু বাইরে আয়
,,
আমি আর মা বাইরে আসলাম..
মা আমাকে ফিস ফিস করে বলল..
-মেহমান তো আনছোস, খাইতে দিতে হইবো না? (মা)
-হ্যা ঘরে কিছু নেই? (আমি)
-তোর জন্য খাবার ভাত রাখছি
-কি দিয়ে রান্না করছিলা?
-মুরগী
-আচ্ছা উনাকে খেতে দাও
-আর তুই??
-আমি সন্ধ্যায় খেয়েছি,
-…(মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
-ওমন করে তাকায়া আছো কেন? যাও উনাকে খেতে দাও। খেয়েছি তো আমি, বাজারে বসে সন্ধ্যায় তো খেলাম তখন খুদা নেই
,,
মা ঘরে চলে গেলো। আমি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বললাম আসলে প্রচণ্ড খুদা লাগছে। কিছু করার নেই এত রান্না করাও একটা সমস্যা। উনি খাওয়ার সময়টুকু আমি আমার নিজের রুম তা ঝেড়ে নিলাম। মা আর মেয়েটা এখানে থাকবে, আর বোন দুইটাকে মা’র ঘরেই রাখতে হবে।
,,
কিন্তু যা ভাবলাম হলো তার উল্টো, মেয়েটা মানে ইরা সে বলল…
-আমার এখনি ফিরতে হবে (ইরা)
মেয়েটার চোখ লাল হয়ে গেছে, কান্না করবে এমন অবস্থা। আমি বললাম..
-কেনো? কি হয়েছে? (আমি)
-মা অসুস্থ মা’কে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। বাবা ফোন করেছিলো
,,
মা আমার দিকে তাকালো। মা তাকিয়েছে কারণ এত রাতে এরকম একটা গ্রাম্য পরিবেশ থেকে শহরে ফিরে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
-এই যে আপনি কি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন? (ইরা কান্না করে)
-শুভ তুই যা ওর সাথে(মা)
-এত রাতে?
-একটা ব্যবস্থা হবেই তুই রেডি হয়ে নে এখনি
-আচ্ছা
,,
ঝটপট প্যান্ট শার্ট পড়ে নিলাম। মা ইরার সাথে কথা বলতেছে..
-এভাবে হঠাৎ করে এলে, আবার চলেও যাচ্ছো, আবার আসবে কিন্তু(মা)
-হুমমম আসবো, আমার আম্মুর জন্য দোয়া কইরেন আন্টি(ইরা)
-হ্যা অবশ্যই করবো
-আমি রেডি চলুন যাওয়া যাক, মা গেলাম
-সাবধানে যাস
,,
রাত টা কেমন যেন স্বপ্নের মতো কাটতেছে। চিনি না জানি না একটা মেয়ে তার পিছু ছুটতেছি যেখানে আমার এখন নিদ্রায় যাওয়ার কথা।
ইরা কে খেয়াল করলাম চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার। তাকে দেখে যা বুঝলাম মেয়েটা খুব আবেগী।
-গাড়ি পাওয়া যাবে না? (ইরা)
-আগে বাজারে যাই, ওখানে গাড়ি পেলে শহরে আর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে আপনাদের শহরে
-এত রাতে পাওয়া যাবে তো?
-জানি না
,,
মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে লাভ নেই। কি যে হবে আমি নিজেও জানি না৷ হাঁটতে হাঁটতে বাজারে আসলাম কিন্তু কোনো গাড়ি নেই।
-দেখেন কোনো দোকান ও খোলা নেই রাস্তায় একটা গাড়িও নেই। (আমি)
-হুমম অপেক্ষা করি(ইরা)
-আপনি কান্না কইরেন না সব ঠিক হয়ে যাবে
,,
রাতে আর গাড়ি পাওয়া গেলো না। সেই গাড়ি পেলাম ভোরের দিকে। সেটাতে করে আমাদের শহর গেলাম। আর সেখান থেকে গাড়িতে উঠে তার শহরের উদ্দেশ্য রওনা।
,,
এখন সকাল হয়েছে মেয়েটার নেচারাল ফেস টা দেখতে পাচ্ছি তবে সেটা হাসি মাখা না খুবই মলিন একটা মুখ। হয়তো হাসলে দারুণ লাগে তাকে মন খারাপের কারণে হয়ত দেখতে এমন লাগছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খাই নি। সে তো রাতেই চুপ হয়ে গেছে আর কথা বলার নাম নেই। এমনিতে অপরিচিত নিজে থেকে জিজ্ঞেস করে খাওয়ার কথা বলব সে সাহস টুকুও হচ্ছে না।
,,
খালি পেট নিয়েই চলছি। সকাল এগারো টায় বাস থেকে নামলাম। এরপর থেকে তার পিছু চলা। শহরটা তার, এতক্ষণ আমার শহরে সে আমার পিছু ছুটেছে এখন তার শহরে তার পিছু আমি ছুটছি৷ সে হয়তো হসপিটালের দিকেই যাচ্ছে। কয়েকবার অটো চেঞ্জ করলাম, উনিও কয়েকবার ফোনে কথা বলে কি কি যেন জেনে নিলেন। নতুন শহরে আসছি, আমি সব এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম।
,,
কিছুক্ষণ পর একটা ক্লিনিকে পৌঁছে গেলাম উনি ভেতরে ঢুকলো পেছন পেছন আমিও ঢুকলাম। একটা রুমের সামনে গিয়ে একজন বয়স্ক মানুষকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। বয়স্ক মানুষটা হয়তো তার বাবা আশে পাশে আরও কয়েকজন ছিলো তারা আত্মীয় স্বজন হবে হয়তো।
,,
ইরা তার মা কে দেখতে রুমের ভেতরল ঢুকলো। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক হয়ে গেলো উনার আসার নাম নেই। ভাবছি যে চলে যাবো, আবার না বলে যাওয়া ঠিক ও হবে না।
,,
কিছুক্ষণের পরিচয় তাতে কত কিছু বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে৷ এদিকে আমার পেটের মধ্যে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটা আসলে বিদায় নিয়ে চলে যাবো এমনটাই ভাবছি।
,,
উনি আসলেন প্রায় দুই ঘন্টা পর।
-সরি দেড়ি হয়ে গেলো। আচ্ছা বাইরে চলুন(ইরা)
-না আপনি থাকেন আমি তাহলে এখন আসি (আমি)
-আসি মানে??
-বাড়ি যেতে হবে, কাজ আছে অনেক। মা আবার টেনশন করবে, আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালই লাগলো, আপনি আবার সময় পেলে আমাদের বাড়িতে যাবেন কিন্তু
-আমি কি আপনাকে বিদায় জানিয়েছি? যে এসব কথা বলছেন
-বিদায় না জানালেও যেতে হবে, সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরলে ভালো হবে রাত করা যাবে না অনেক দূরের পথ
-সকালে দুজনের কেউ কিছু খাই নি চলেন খাবো
,,
আমি যা যা বললাম একটা কথাও উনি কানে তুললেন না। উল্টো আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন। আমি কতবার মানা করলাম আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না৷
,,
রেস্টুরেন্টে বসে উনি কিছু খাবার ওর্ডার করলেন। কিছু নাম চেনা কিছু অচেনা। অচেনা খাবার গুলোর সাথে দেখা হবে এখন। একদিকে এসব ভেবে ভালো লাগছে অন্যদিকে বাড়িতে যাওয়ার কথা মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে।
,,
খাবার আসলো, উনি চামচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলেন। আমি চেষ্টা করছিলাম চামচে খাবার উঠাতে কিন্তি বার বার ব্যার্থ হচ্ছিলাম। উনি আমার এ বিষয় টা খেয়াল করে বললেন…
-হাত দিয়ে খান সমস্যা নেই (ইরা)
-খাওয়া যাবে? (আমি)
উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন..
-খাওয়া যাবে না কেনো?(ইরা)
-কেউ কিছু বলবে না তো? (আমি)
-হাহ রেস্টুরেন্টে কখনো খান নি?
-হোটেলে খাওয়া হয়েছে কিন্তু এত বড় রেস্টুরেন্টে হয়নি
-ওহহ সমস্যা নেই আপনি হাত দিয়ে খান
-হুমমম (আমি হাত দিয়েই খাওয়া শুরু করলাম)
-আম্মুর অবস্থা আগের থেকে অনেকটা ভালো
-আলহামদুলিল্লাহ, আচ্ছা ওটা আপনার বাবা ছিলো?
-কোনটা?
-ঐ যে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন
-হ্যা ওটা বাবা
-ওহহ
-আর কিছু নিবেন
-না আর কিছু লাগবে না
-এটুকুতে তো হওয়ার কথা না সকাল থেকে তো কিছু খান নি
-বেশি খুদা লাগলে খাওয়া যায় না
-হুমম তা ঠিক
,,
খাওয়া শেষ করলাম। বিলটা উনিই দিলেন আমি দেওয়ার চেষ্টাও করলাম না। শুধু শুধু অভিনয় করে লাভ নেই কারণ আমার পকেটে গাড়ি ভাড়া ছাড়া কিছু নেই। রেস্টুরেন্টের বাইরে আসলাম। এবার আমার বিদায়ের পালা..
-আচ্ছা শোনেন আসি এখন (আমি)
-কোথায় যাবেন? (ইরা)
-বাড়িতে
-যদি বলি যেতে দিবো না
-না যেতে হবে, আমি ছাড়া ওরা থাকতে পারবে না
-কেনো?
-গরিব মানুষ, দিন কাজ করে দিন খাওয়া হয়। গতকাল কাজ করিনি আজ ও না আজ থাকলে কাল ও কাজ করা হবে না।
-হুমম জানি আন্টির কাছ থেকে সব শুনেছি আমি
-ওহহ
-আপনি একটা গাধা
-কেনো কি করলাম?
-আপনাকে এমনি এমনি নিয়ে আসা হয়নি। আপনাকে তো শহর থেকেই বিদায় দিতে পারতাম এতদূর কি এমনি এমনি নিয়ে আসছি নাকি?
-বুঝিনি
-আগে আমার বাসায় চলেন
-না না কি বলেন, আপনার বাসায় যাওয়া যাবে না
-কেনো?
-না আমি বাড়ি যাবো
-আজব! এত বড় হয়ে বাচ্চাদের মতো করেন কেনো? বাবাকে আপনার কথা বলেছি। আপনাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছেন
-না বাড়ি যাবো আমি
-মেজাজ গরম করিয়েন না আমি কিন্তু অনেক রাগি, কথা যদি না শোনেন এখানেই মাইর শুরু করবো
চলবে