আপনিতে ব্যস্ত,Part : 4

0
2237

আপনিতে ব্যস্ত,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed

-আমি খাবো না (ইরা)
-ওদিকে আন্টি কিন্তু কষ্ট পাবে (আমি)
-আচ্ছা তাহলে খাবো
,,
চাচাকে দিয়ে খাবার আনিয়ে ইরাকে একটা প্লেটে খাবার দিয়ে আমি আর চাচা দুজন দাঁড়িয়ে আছি৷ ইরা খাওয়া শুরু করলো আমি আর হাশেম চাচা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম৷
-আপনি তাহলে চলে যান (ইরা)
-না না চলে যাবো কেনো? থাকি কিছুদিন (আমি)
-আপনাকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছি, আপনি চলে যান আমি সব সামলাতে পারবো আর চাচা তো আছেই
-আমার ভালই লাগছে কিছুদিন থাকি
-আচ্ছা
,,
সে সময় পর থেকে আমি প্রায় সময় চাচার কাছে থাকতাম। উনি আমাকে কাজ দিতে চাইতেন না আমি জোর করেই উনার কাজে সাহায্য করতাম। ইরা ডাকলে তার কাছে যেতাম এরকম করে দুদিন পার হলো।
,,
ইরা দুদিন রুম থেকে বের হয়নি। কিন্তু আজ বের হয়েছে। তাকে অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে। সেইদিন সন্ধ্যায় আমাকে এসে বলল..
-বাবা আসতে এখনো চার পাঁচদিন, আমি আপনার সাথে আপনার বাড়ি যেতে চাই (ইরা)
-আপনি তো কিছু সমস্যা দেখালেন (আমি)
-…(ইরা চুপ)
,,
আমি ভাবলাম আবার রাগ করলে সমস্যা যেতে চাইছে নিয়ে যাই। পরদিন সকাল বেলা ইরাকে নিয়ে বের হলাম নিজ বাড়ির উদ্দেশ্য। ইরার মুখে শেষ হাসি যে কখন দেখেছি মনে নেই।
,,
এইদিকে আমার একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি না চাইতেও চোখ তার দিকে যায়, তাকে দেখে আর মনের মধ্যে নানান প্রশ্নের উৎপত্তি হয়৷
আমি ইরার দিকে যে আর আড় চোখে তাকাই সেও কয়েকবার দেখতে পেয়েছে।
আমি চুরি করে দেখতে গিয়ে ধরাও পড়েছি। যাইহোক দুপুরের পর নিজ বাড়ি আসলাম। আসার পথে ইরার থেকে টাকা নিয়ে বোন দুটোর জন্য কিছু নিয়ে আসি। ওরা জানে তাদের ভাই বাইরে গেলে নিশ্চয়ই কিছু নিয়ে আসবে।
,,
আমি আর ইরা বাড়িতে আসতেই মা তো ইরাকে দেখে কান্নাই করে দিলো। এদিকে ইরার অবস্থা আরও খারাপ সেও কান্না করছে। কান্না দেখতে পাশের বাড়ি থেকে আমার চাচি ছুটে আসেন।
,,
উনি আমাকে দেখে নানান প্রশ্ন করেন আমিও উত্তর দিলাম কই ছিলাম? কি হয়েছিলো এইগুলো। কান্নার পর্ব শেষে এখন আমার কাজের ব্যস্ততার পালা। মেহমান আসছে বাজার করতে হবে। চাচির কাছে থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে বাজারে গেলাম কিছু মাছ কিনলাম সাথে তরিতরকারি।
,,
সেদিন সন্ধ্যা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইরার সাথে আর কোনো কথাই হয়নি। আমিও বাড়িতে ছিলাম না, কাজের জন্য গ্রামের একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে দেখি ইরা ঘুমিয়ে গেছে।
,,
মা আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে..
-তুই তো ছিলি না কিছু টাকা তো ধার করে এনেছি (মা)
-সমস্যা নেই কাল তো কাজে যাচ্ছি (আমি)
-মেয়েটাকি এইরকম খাবার খেতে পারবে
-আমি তো সেটাই ভাবি, কিন্তু কি করবো? উপায় তো নেই এটাই দিতে হবে
-একটু তরকারি নে
-না না আমি আর কিছু নিবো না
,,
রাতে খেয়ে উঠে নিজের ঘুমানোর জায়গাটা ঠিক করলাম। সেটা আবার চাচার বাড়িতে। রাতটা কাটিয়ে পরদিন ভোরে আমি চলে যাই কাজে।
যাওয়ার সময় মা’কে বলে যাই ইরাকে দেখে রাখতে। মা আমাকে অভয় দিয়ে বলল, কোনো চিন্তা করতে হবে না আমার, তাকে দেখেই রাখবে।
,,
আমি কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরলাম, সন্ধ্যায় ফিরে সেই আগে অবস্থা ছোট বোন দুটো হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু না কিছু তো দিতেই হবে, আমিও মিস দেই না কিছু এনে দেই নয়তো দশ/বিশ টাকা হাত দেই।
,,
ওদের দুজনকে কিছু টাকা হাতে দিলাম। ওদের দেওয়া শেষ হওয়ার পর নতুন একটা হাত কেউ আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি পুরো হাতটা দেখতে দেখতে মুখটাও দেখেফেলি। ইরা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
,,
আমার হাত আপনা আপনি পকেটে চলে গেলো৷ দশ টাকা বের করে তার হাতে দিলাম। এরপর আসলো মা! তাকে বাকি টাকা দিয়ে বললাম খেতে দাও।
,,
আজ “মা” আমাকে খেতে দিচ্ছে না,ইরা আমার প্লেটে ভাত দিচ্ছে আর তরকারি। কিছু বলতে যাবো কিন্তু তার ভাব দেখে সেটার সাহস ও পাচ্ছিলাম না৷
,,
মনে মনে ধরে নিলাম মা কাজে ব্যস্ত তাই উনি কাজ করে দিচ্ছেন। বোন দুটো নেই কই যে গেছে তার ও হদিস পাচ্ছি না৷
,,
আমি হাত ধুতেই কিছু একটা জ্বালার মতো অনুভব করলাম। ওহ হ্যা মনে পড়েছে আমার তো হাত কেটে গেছে মনেই তো ছিলো না। হাত দিয়ে ভাত খেতে পারবো না। হাতে কিছু বাঁধয় হয়নি। কারণ কাটার পরিমাণ কম ছিলো।
,,
-খাচ্ছেন না কেনো? (ইরা)
-আসলে আমার একটা সমস্যা হয়ে গেছে (আমি)
-কি সমস্যা?
-মা কে ডাকেন মা’কে বলতে হবে
-উনি কাজ করতেছেন আমাকে বলেন
-একটু হাত কেটে গেছে
-কই দেখি দেখি
,,
উনি আমার হাত টা টেনে নিলো। ইরার যা হাত তুলোর মতো সেইদিক থেকে আমার টা পাথরের কাছাকাছি মানে সেই লেভেল এর শক্ত।
“আচ্ছা আমি খাওয়াই দিচ্ছি” ইরা কথাটা বলে আমার কাছে এসে বসলো। প্লেট টাও হাতে নিলো। হা করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমার কোনো কাজ ছিলো না৷ লজ্জায় মানাও করতে পারছি না।
,,
শেষমেশ উনার হাতের প্রথম খাবার মুখে নিলাম। উনি বলতে লাগলেন..
-হাত কেটে গেছে এসে বলবেন এভাবে আড়াল করে রাখেন কেনো? (ইরা)
-আসলে মনেই ছিলো না (আমি)
-কেমন মন হ্যা? যে মনে থাকে না
-ভুলো মন
-কথা তো ঠিকি পটর পটর করে বলতে পারেন
-হুমমম
,,
কথা বলতে বলতে মা এসে হাজির। আর উনে এসে আমাকে খাওয়ানো যে দৃশ্য দেখলো তাতে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। উনিও একবার দেখেই বাইরে চলে গেলেন৷ এদিকে ইরা আমাক খাওয়াই দিতে দিতে বলল..
-বাবা কল করেছিলো আমি যে এখানে আসছি তাকে বলেছি আর উনি বলেছেন উনি না আসা পর্যন্ত এখানে থাকতে (ইরা)
-এতদিন এখানে থাকবেন?(আমি)
-ওহহ বুজেছি আপনাদের হয়তো কষ্ট হবে, সরি আমি বুঝে উঠতে পারিনি
-আরে আমি এ কথা কখন বললাম
-বলতে হবে না বুঝেছি
-আরে না আপনি যতদিন ইচ্ছে থাকবো
-সত্যি তো?
-সত্যি
-পাক্কা?
-পাক্কা
-হুমম আপনি কাজে না গেলে আরও ভালো হতো
-কেনো?
-সারাদিন বসে কথা বলতাম
,,
খাওয়া ততক্ষণে শেষ, আমি একটু হেসে বললাম…
-কথা তো বলতেছি এখন। আর হ্যা এখন যেটা করলেন দ্বিতীয় বার একটা করার চেষ্টা করবেন না খারাপ দেখায় (আমি)
-কোনটা? (ইরা)
-এইযে খাওয়াই দিলেন
-এটা খারাপ দেখায় তাই না?
-হ্যা, আপনি কোথায় আর আমি কোথায়, আপনি আমাকে খাওয়াই দিচ্ছেন এটা মানায়
-হুমম ধন্যবাদ (ইরা বাইরে চলে গেলো)
,,
আরেকটা সমস্যা লেগে গেলো।
জীবনটা এই “সমস্যা” নামক সমস্যায় জর্জড়িত। ইরা বের হওয়ার সাথে সাথে মা রুমে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
-তুমি হাসো কেন? (আমি)
-এমনি(মা)
-…(আমি তো জানি কি জন্য হাসতেছে)
-পেট ভরছে তোর
-হ ভরছে
,,
বাইরে আসলাম, দেখি উঠানে ইরা নেই, নিশ্চয়ই আমার রুমে আছে। আমার রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক করে ঢুকলাম।
,,
ইরা বিছানার একপাশে গিয়ে একটা বই নিয়ে বসে আছে। আমি রুমে প্রবেশ করায় আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার বই পড়ায় মন দিলো। আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম..
-এই রুমে আপনি কেনো? (ইরা)
-এটা আমার রুম (আমি)
-এটা আমার, আন্টি আমাকে লিখে দিয়েছে
-তাই?
-হ্যা, আমি চাই না অন্য এলাকার মানুষ আমার এলাকায় না আসে
-সরি
-লাগবে না সরি
-আচ্ছা আপনি যতবার খাওয়াই দিবেন আমি খাবো।
-…(ইরা আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো)
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-এক প্লেট ভাত নিয়ে আসেন খাইয়ে দিবো
-এই না না আমার পেট ফেটে যাবে
-ফাটুক আমার কি, আমি তো খাওয়াবো আমাকে রাগাইছেন আপনি
-সরি ও বলেছি
-ঠিক আছে ঠিক আছে পরের বার এমনটা যেন না হয়
-আচ্ছা ঘুমান তাহলে আমি যাই
-কোথায় যান?
-ঘুমাতে হবে, সকালে উঠে কাজে যেতে হবে
-তাহলে আমাকে কে সময় দিবে? এখানে আসার পর থেকে তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না
-কি বলেন এগুলা?
-তো কি বলব? আমি আপনার জন্যই তো আসছি আমাকে সময় দিবেন না?
-সময় দিতে হবে তাই না? হুমম দিবো
-বিছানায় বসেন
-…(আমি তার সামনা সামনি বসলাম)
-আপনার হাত দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দেন
-কেনো?
-দিতে বলেছি তাই
,,
আমি দু-হাত তার দিলে বাড়িয়ে দিলাম। সে আমার হাত দুটো তার হাত দিয়ে বুলিয়ে দেখলো। এপিঠ ওপিঠ করে বলল..
-হাত এত শক্ত কেনো? জায়গায় জায়গায় এমন শক্ত হয়ে গেছে কেনো? অনেক কষ্টের কাজ করেন আপনি? (ইরা)
-ওই একটু আধটু করতে হয় (আমি)
-বাদ দেওয়া যায় না?
-বাদ দিলে খাবো কি?
-অন্য কাজ করবেন
-ভালো কাজ পাওয়া সহজ নয়
-আমি কাল চলে যাবো
-কেনো?
-না এরকম কষ্ট করে টাকা আনবেন আর আমি বসে বসে খাবো এটা আমার সইবে না
-কাজ করতে গেলে কম বেশি সবাইকে কষ্ট করতে হয়
-তাই বলে এরকম না। আমি এই হাত আমার গালে ছোঁয়াবো কি করে
-সমস্যা নেই তো অমনি ছোঁয়া.. এই এই কি বললেন আপনি!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here