আপনিতে ব্যস্ত,Part : 5

0
2927

আপনিতে ব্যস্ত,Part : 5
Write : Sabbir Ahmed

-তাই বলে এরকম না। আমি এই হাত আমার গালে ছোঁয়াবো কি করে?(ইরা)
-সমস্যা নেই তো, অমনি ছোঁয়া.. এই এই কি বললেন আপনি!(আমি)
-ঠিকই তো বলেছি কাজ থেকে এসে এই হাতে যদি আমার গাল ধরেন তো আমার খারাপ লাগবে, আমার তুলতুলে টাইপের হাত লাগবে
-আ আমি কেনো?
-পরে বলব, আপনার সাথে অনেক কথা আছে চলেন বাইরে গিয়ে বলি
,,
ইরা আমার সাথে বাইরে আসলো। তার পায়ে পা মিলিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটছি।
-আমাকে এখানে সারাজীবনের জন্য থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিন (ইরা)
-শহরে ছেড়ে এখানে থাকার ইচ্ছে হলো যে (আমি)
-শহর বলে কথা না, আমি শহরে কার কাছে কোথায় থাকবো? ওত বড় বাড়িতে যদি মানুষ না থাকে তো আমি একা কি করবো সেখানে?
-ওহহ আচ্ছা আমি একটা বুদ্ধি দেই
-হুমম বলেন
-আপনি বিয়ে করে নিন, তাহলে একটা নতুন পরিবার পাবেন
-হুমম সেটার পরামর্শর জন্যই আপনাকে ডেকেছি
-হুমম
-তো আপনি কি রাজি?
-আমি কেনো?
-আপনাকে আমার পছন্দ
-বয়স আর ফ্যামিলি স্টাটাস মিলবে না আকাশ পাথাল তফাত
-আমার তো ফ্যামিলি নেই সমস্যা হওয়ার কথা না
-নেই তবুও আছে
-তার মানে আপনি রাজি না
-কখনোই না
-আমার দিকে যদি আড় চোখে তাকান আপনার চোখ আমি উপরে ফেলবো
-আপনি জানলেন কিভাবে আমি আপনার দিকে তাকাই?
-একটা ছেলে একটা মেয়েকে দেখবে, সেটা মেয়ে বুঝতে পারবে না! তাই কি হয়?
-সরি
-সরি বলার কিছু নেই, আমাকে দেখবেন না তাই হবে(একটু অভিমানী সুরে)
-দেখেন আমি..
-আমাকে বুঝ দিতে আসবেন না
,,
একজায়গায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দুজনে আবার হাঁটা শুরু করলাম। ইরা যে এত কিছু ভেবেছে আমি বুঝতেই পারিনি।
-আপনি মনে মনে এত কিছু কেনো ভেবেছেন? (আমি)
-আপনি তো বলতে পারবেন না। আপনার কষ্ট লাঘব করার জন্য আগেই বলে দিলাম
-ওহহহ
-তাতে কোনো লাভ হলো না, আপনি তো রাজি না
-আমি আসলে ঐ ভাবে
-কিভাবে?
-পুরো কথাটা আগে বলতে দিন
-জ্বি বলেন
-আমার পরিবার টা পুরো আমার উপর নির্ভরশীল। এত স্বল্প আয়ে..
-সংসার চালাতে পারবেন না তাই তো?
-হুমম
-সংসারে আশি ভাগ খরচ আমি দিবো বিশ ভাগ আপনি দিবেন
-আপনি টাকা পাবেন কই?
-লেখাপড়া করছি জব তো পেয়েই যাবো
-আমি বুঝতে পেরেছি আপনার আগ্রহ টা কোথায়। আপনার একটা পরিবার দরকার
-হুমমম বুঝেছেন
-বাবাকে বললেই তো হয়, ভালো দেখে একটা পরিবারে আপনাকে বিয়ে দিবে
-নিজেকে নায়ক মনে করেন?
-একদমই না। অনেক রাত হয়েছে ঝগড়াও অনেক হয়েছে বাড়ি চলেন
-বিষয়টি ক্লিয়ার করলেন না?
-এটা অসম্ভব
-ঠিক আছে
,,
ইরা যা চাইছে সেটা তার জেদ থেকে, পরিবারের মানুষের সঙ্গ না পেয়ে এমনটা করছে সে। বাড়িতে এসে আমি শুয়ে পড়লাম।
,,
মাঝরাতে মা এসে ডাকা শুরু করলো। আমি উঠে বাইরে আসলাম। চাচাতো ভাই আমার সাথেই বাইরে আসলো।
-কি হয়েছে? (আমি)
-তুই একটু বাড়ি আয় (মা)
-কিছু হয়েছে?
-না তেমন কিছু না আয় একটু
,,
চাচাতো ভাইকে শুইতে বললাম।
আমি বাড়ি এসে দেখি আমার রুমটা খোলা। রুমের ভেতরে যেতেই দেখি ইরা বিছানায় বসে কান্না করছে। বোন দুটো ইরার কান্না দেখছে সাথে মা ও। ইরার হয়তো তার মায়ের কথা মনে পড়েছে।
,,
আমি বললাম..
-আপনাকে না বলেছি মায়ের জন্য এভাবে কান্না করতে নেই, উনি কষ্ট পাবেন
-সেটা না (কান্না করে)
-তাহলে কি?
-বাবা বিদেশে একটা বিয়ে করেছে। ভাইয়া ফোন করে জানালো
-কিহহ!
-হুমমম
,,
ইরা বুঝতে পারলো তার জীবন থেকে পর পর দুটো জিনিস হারিয়ে গেলো।
মা আর বোনকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দিলাম। আমি ইরার কাছে গিয়ে বললাম..
-কাল কি বাসায় যাবেন? (আমি)
-হুমম আপনি বুঝলেন কি করে?(ইরা)
-একটু আধটু বুঝতে পারি। যাই হোক বাসায় গিয়ে কি করবেন?
-জানি না
-আচ্ছা এই যে আমার এখানে আছেন আপনার ভয় করে না?
-ভয় করবে কি জন্য? আপনারা আমার অনেক আপন হয়ে গেছেন
-আবেগি কথা বাদ দেন তাহলে কাল সকালে যাচ্ছেন তাই না?
-হুমম এবার কিন্তু আমি যাবো
-আপনাকে নিয়ে গিয়ে কি করবো
-হুমম আর কান্না কইরেন না, আপনার বাবা ওদিকে খুশির কাজ করেছে আর আপনি বসে কান্না করতেছেন
-টিটকারি মারেন তাই না?
-কই না তো আমি ভালো কথা বললাম
-হয়েছে হয়েছে
-নতুন মা পেয়েছেন
-আপনি কিন্তু আমাকে রাগাচ্ছেন
-আমি তো খুশির খবর দিচ্ছি
-আমাকে পঁচিয়ে খুব ভালো লাগছে তাই না?
-আমি আপনার মন ভালো করার চেষ্টা করছি। এই যে দেখেন আংকেল বিয়ে করলো সে ভালই আছে নতুন বউ নিয়ে আর আপনি বসে বসে কান্না করতেছেন। আমি শুধু শুধু সময় নষ্ট
-তো কি করতে হবে আমাকে?
-সামনে এগিয়ে যেতে হবে বাবা আর পরিবার ছাড়া
-আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?
-আমি নিজেই তো সামনে এগোতে পারি না
-তাহলে বললেন যে,,,
-কাউকে মোটিভেট করা সহজ আর আমি তাই করলাম
-বাহহ দারুণ
-চলুন আবার বাইরে যাই
-এই মাঝ রাতে
-আরে মন খারাপ হতে দেওয়া যাবে না৷ মন ভালো করার জন্য যা করা দরকার সেটাই করবো
,,
ইরাকে নিয়ে বাইরে আসলাম, যদিও সে আসতে নারাজ ছিলো। মন খারাপ থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তখনকার মতো সে আর আমি হাঁটছি। ইরা কিছু বলছেও না। আমার মনে হয়না সে কিছু বলবে, শুরুটা আমিই করলাম..
-বরই খাবেন? (আমি)
-এত রাতে কই পাবেন? (ইরা)
-অনেক গাছ আছে চলেন আজ দুজনে মিলে চুরি করবো
-এই না না চুরি করা যাবে না। আমার না কিছুই ভালো লাগছে না
-কেনো?
-আপনি আমার সাথে যাবেন প্লিজ
-কোথায়?
-আমার বাড়িতে
-আবার!
-আপনি গেলে ভালো লাগবে, আমার যেদিন থেকে সমস্যা সেই দিন থেকে তো আপনি সাথেই, এখন যদি না থাকেন টেনশনে মরেই যাবো
-তখন না বললেন আমার যেতে হবে না
-আমি তো নিয়ে যেতাম না কিন্তু..
-আচ্ছা এটা নিয়ে এখন ভাবতে হবে না। সকাল হোক দেখি কি করা যায়।
-না এখন বলেন, আপনি যাবেন তো?
-আচ্ছা যাবো
,,
কথাটা বলার সাথে সাথে ইরা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কোনো মেয়ের প্রথম স্পর্শ তাও এমন ভাবে, ভয় আর ভালোলাগা দুটো একসাথে কাজ করছে। আমি তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম..
-ক ক কি করেন এগুলা (আমি)
-একটু জড়িয়ে ধরলে কি হয়?(ইরা)
-আমি তো অন্যজন
-এহহহ কাল থেকে আমার সাথে থাকবে, আবার বলে অন্যজন
-বন্ধু হিসেবে থাকছি বুঝলেন, আপনার ভালো সময় আসলে আমি আপনা আপনি কেটে পরবো
-জ্বি না আমার খারাপ ভালো দুই সময়ে থাকতে হবে।
সোজা কথা আমাতে ব্যস্ত থাকতে হবে
-ওটা তো আপনার বর থাকবে
-সেটা আপনি
-বেশি বুঝিস তুই হ্যা?
-রেগে যাচ্ছেন কেনো?
-রাগবো না তো কি করবো? এক কথা এত বার বলা লাগে কেনো? আমি কিছু চাই না আমি তোকে চাই, বর হিসেবে না পাইলেও বন্ধু হিসেবে নিজের কাছেই রাখবো।
-……(আমি চুপ)
-সরি আপনি আমার বড় তবুও তুই করে বলে ফেললাম। বলতাম না সবকিছুতে না না করেন তাই তো বকা শুনলেন
-ঠিক আছে
-ভয় পেয়েছেন নাকি?
-না ভয় পাইনি
-এইরকম জোর করছি আমাকে মনে মনে খারাপ ভাবছেন তাই না?
-আরেহ না এরকম কিছু ভাবিনি আমি তো আপনাকে চিনি
-তাহলে আজ কিন্তু আপনি আমার সাথে থাকবেন
-মানে?
-আমার কাছে থাকবেন আমার একা থাকতে ভালো লাগবে না
-কি সমস্যায় যে ফেলে দেন আপনি, বোন তো আছেই পারলে মা ও থাকবে
-উহুমম আপনাকে লাগবে, আমি সবসময় আপনাকে আমাতে ব্যস্ত রাখবো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here