ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব: ০৭,০৮,০৯,১০
লেখিকা: তামান্না(আল রাইয়ান)
পর্ব_০৭
—-“এই শুন। এখানে অফিসারের টিম এসে পড়ছে আমার যা মনে হচ্ছে।
লিডারের কথায় তার সাথী বলে।
—-“কেন বস? কার উপর সন্দেহ হচ্ছে বলেন এখনই মেরে ফেলি।
—-“হুসস আস্তে বল তাকে সবার সামনে না চাপা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে হবে। তবে আমি এখন ট্রান্সমিটে যা দেখলাম। অফিসারস এদের মাঝেই লুকিয়ে আছে। বের করতে গেলে আগে সবাইকে খোঁড়ক করে ফেলতে হবে।
—-“স্যার যদি তারা আমাদের ধরে ফেলে তাহলে কি হবে? আমরা কি বাঁচবো আর আমাদের এই নিউক্লিয় কাজের কি হবে?
—-“না আমরা মরলে ওই মেয়েকে দেখতেছিস!….লিডার তার সাথীকে নাজিয়ার দিকে ইশারা করে দেখায়।
‘জ্বী স্যার। তবে এই মেয়েকে দিয়ে আমাদের কি কাজ?’
‘এই মেয়ের শরীরে বোম ফিট করে দেবো।’
‘ বোম ফিট করলে এতে আমাদের কি লাভ?’
‘লাভ আমাদেরই। মরলে এখানেই সবার সাথে মরব বিদেশী ক্লাইন্টদের হাতে কুওার মতো মরার চেয়ে এখানে সবাইকে নিয়ে মরি।’
‘কিন্তু কোনো ভাবে পালানো যাবে না?’
‘যাবে একটা উপায় আছে এই মেয়ের শরীরে বোম ফিট করে এর রিমোট আমার হাতে থাকবে অফিসারদের দেখিয়ে তাদেরকে আটঁকাতে পারব।’
লিডারের কথায় সাথী নিজের মাথা নাড়ল। লিডার অজ্ঞানরত নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দিল।
সে তার সাথীদের সবার দিকে নজর দিতে বলেন।
লিডার নাজিয়ার কাছে এসে তাকে রুমের মধ্যে বন্ধ করে তার গায়ের উপর বোম ফিট করে লাগিয়ে দে।
নাজিয়া তখনও অজ্ঞানরত ছিল।
—-“চাইছিলাম তোর শরীর ভোগ করব কিন্তু না তোরে ভোগ করে মেরে ফেলার চেয়ে তোকে সুযোগে লাগিয়ে বাঁচাটা অনেক বেটার হবে।
লিডার নাজিয়ার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে হেসে রুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলা রেখে সবার সামনে আছে।
তাদের লিডার জানালার দিকে এসে ফোন বের করে কল দিল বিদেশী ক্লাইন্টের সদস্যদের।
চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে এক হাতে ড্রিংক আরেক হাতে সিগারেট নিয়ে চুমুক দিয়ে ধুঁয়া ফুঁ দিচ্ছে।
কল আসতেই সে ড্রিংকের গ্লাস রেখে ফোনের কল রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিয়ে হ্যালো বলে।
—-“স্যার অাপনার কথা মতো বোমের কাম শেষ কিন্তু আমাদের মাল?
—-“ইন ইউর ব্যাংক ক্যাশ।
—-“ওহ থ্যাংকস বস। স্যা…….আমার নিউক্লিউ বোমা আমার কাছে কবে পৌঁছাবে?
লিডার ফোন কানে ধরে পিছে পরখ করে শুকনো ঢোক গিলে বলে—-“স্যার একটু সমস্যায় পড়েছি।
—-“শুনার মতো টাইম আমার নেই। কামের কাম হলেই তুই আর তোর সাথীরা বাঁচবি না হলে নরক দেখার জন্যে রেডি হয়ে থাকিস।
বলেই তাদের বস কল কেটে দিল।
—-“স্যার স্যার হ্যালো……টুট টুট টুট কল কেটে দেওয়ায় লিডার রাগে ফিলারে ঘুষি দেই।
তার সাথী এসে বলে।
—-” কি হলো বস?
—-“বস আমার কথা না শুনেই মৃত্যুদন্ড শুনাই দিসে। শুন আমাদের যেভাবেই হোক বোম বসের কাছে পৌঁছাইতেই হবে।
—-“কিন্তু স্যার আপনি তো বোম ওই মেয়েটার গায়ে ফিট করলেন।
—-“না রে বোকা। আমার ব্যাগে বোমা তিনটা আছে একটা পুরো শহর ভয়াংক মৃত্যুদন্ডে ফেলতে পারবে, সেকেন্ডটা সাধারণ পাবলিক প্লেস নষ্ট করবে আহত করবে লাস্ট যেটা আছে সেটা শুধু মানুষের শরীর ছিঁটেফোটা করে দেওয়ার জন্যে ব্যবহৃত বোমা নাম কি জানিস?
সেটার নাম হচ্ছে বোম অফ হিউম্যান ইফেক্ট।
ওই মেয়ের গায়ে হিউম্যান বোম ফিট করেছি। এর রিমোট আমার কাছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে যেভাবেই হোক বোম দুইটা ক্লাইন্ট বসের কাছে পৌঁছানো।
—-“এটেনশন প্লিজ আপনারা নিরহ মানুষদের ছেঁড়ে দেন। তারা আপনার কোনো ক্ষতি তো করে নি। প্লিজ তাদেরকে যেতে দেন আমরা আপনাদের কিছু করব না।
বাহির থেকে অফিসার মাইক নিয়ে বলতে থাকে। লিডার শুনে চোখ ঘুরিয়ে তার সাথী কে বলে।
—-“খামাখা এই বুইড়া বেডা গলা ফাটাচ্ছে।….হই হই শুনছি জোরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে।
অফিসার বুঝছে টেরেস্টস উনার কথায় কোনো পাওা দিচ্ছে না। শুধু শুনে নিজের মন মতো বলে দিচ্ছে।
রিপোর্টারস ক্যামেরার মধ্যে রিপোর্টিং করছে।
আরভী খান মাফুজ নায়ামান চৌধুরী একসাথে টিভির সামনে বসে আছে।
মিসেস রাসনা ড্রাইনিং রুমে বসে টিভির দিকে কান্না বিজরিত নয়নে তাকিয়ে নিজের মেয়ে, নাহিল আর বাকিদের জন্যে দোয়া করছে।
—-“এনি হাউ আমি নাজিয়ার কিছু হতে দেবো না। কোনো আঁচ তাকে পেতে দেবো না। আমার নাজুপাখির সাথে কেউ কিছু করলে তার কেয়ামত করে দেবো।
নাহিল চোখ রক্তিম লাল করে গার্নের ট্রেগার শক্ত করে চেপে জোরে নিশ্বাস ফেলে পিছে গার্ডস এর দিকে তাকিয়ে বলে।
—-“লেটস দ্যা মিশন স্টাট।
নাহিল নিজের গার্নের ট্রেগার চেপে মলের কারেন্ট সুইচের তারে সুট করল। সুট করতেই তারের মধ্যে আগুন লেগে যায়। পুরো মলের লাইটস অফ হয়ে যায়।
নিহা মিহু একে অপরকে চেপে ধরে অন্ধকারে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।
—-“এই এই কেউ লাইটের কি হয়ছে দেখ।
লিডারের কথায় তার এক সাথি সুইচের ধারে আসলে নাহিল তার পিছে এসে দাঁড়ায়। তার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে নিজের ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল এক করে টেরেস্ট এর ঘাড়ে চেপে ঘাড় মটকান দিল।
এতেই সেই সাথী মারা যায়। সে মরতে গার্ডস কে ইশারা করে ভেতরে যেতে। তারা গার্ন নিয়ে সুট করা স্টার্ট করে দে।
—-“এই অফিসারস এসে পড়ছে। কাউকে ছাড়বি না মেরে ফেল সবাইকে।
লিডার কথায় ফাইয়ারিং স্টার্ট করে দে তার সাথি। এরই মাঝে নাহিলও এসে দুইজন টেরেস্ট এর হাতের গার্ন শক্ত করে চেপে ধরে। ওই দুই টেরেস্ট সুট করতে থাকে কিন্তু বুলেট সব নাহিলের পিছে একটা টেডি বেয়ারের গায়ে গিয়ে লাগে। নাহিল তার হাত দিয়ে দুইজনের হাতের গোড়ায় জোরে বারি দে। টেরেস্ট দুই আঘাত পেয়ে হাত চেপে ধরে গার্ন নিচে ফেলে দিলেই নাহিল স্ট্যান্ড করে লাথি দিল দুইজনের বুক বরাবর।
দুইজনের মাথা ছিটকে দেওয়ালে গিয়ে লেগে মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে যায়।
আরেকজন টেরেস্ট নাহিলের ঘাড়ে গুলি ট্রেগ করল।
সে লিডারসহ বাকিদের বলে।
—“এই সব অফিসারস গার্ন ফেলে দে নইতো তোদের বসকে সুট করে দেবো।
লিডার কেও এক অফিসার গুলি দিয়ে ধরলেও নাহিলকে বাঁচাতে ছেড়ে দে।
সে ছাড়লেই লিডার সেই অফিসারকে জোরে চড় মারে।
নাহিলের রাগে দাঁত কটমট করে নিজের বাহুডোরা শক্ত করে পিছের জনের নাক এ বারি দে। নাকে ব্যথা পেতেই নাহিল তার পকেট থেকে গার্ন বের করে তাকে সুট করে দিল। লিডারসহ বাকি সবাই হা করে তাকায়।
—-“দ্যা মিশন ইজ এনকাউন্টার….সুটটটট। নাহিল হংকার দিয়ে এক এক টেরেস্ট এর বুক কপাল গলা বরবার সুট করে।
সব টেরেস্ট মারা গেলে তাদের লিডার হকচকিয়ে উঠে।সে পালাবার রাস্তা খুঁজতে থাকে।
নাহিল টেরেস্ট লিডারের দিকে তাকিয়ে তার সাথী অফিসারকে বলে চড় লাগা। সেই অফিসার তার কথা শুনে চোখ গোল করে তাকায়।
—-“শুনিস নি কি বলছি? চড় লাগা। নাহিলের কড়া গলায় অফিসার ও খুশি হয়ে টেরেস্ট লিডারের মুখ বরাবর জোরে চড় লাগায়।
—-“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুইজনই সমান অপরাধী। অফিসারের দিকে তাকিয়ে টেরেস্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে। অফিসার স্যালুট দিয়ে দূরে যেতেই নাহিল লিডার এর মুখ বরাবর এসে দাঁড়ায়।
কি বেশি সাহস তোর কলিজায় তাই না? এজন্যই এই পুরো দুনিয়া মৃত্যুর কবলে ঢেলে দিতে বোমা বানিয়েছিস।
হুমম বললল? হংকার দিল। টেরেস্টটা ভয়ে হাত-পা কাঁপাইতে থাকে। অফিসারস সবাইকে নিরাপদভাবে বাহিরে নিয়ে যাও। আমি দেখতেছি একে……বলতেই নিহা মিহু এসে নাহিলকে জড়িয়ে ধরে।
—-“ভাইয়া ভালো হয়েছে আপনি চলে এসেছেন। নাজিয়া নাজুকে প্লিজ বাঁচান।
নাজিয়ার কথা বলতেই নাহিল তাদের বাহুডোড়া থেকে সরিয়ে মুখ শক্ত করে বলে। নাজুপাখি আমার নাজুপাখি কই? হতদন্ড হয়ে বলে।
ভাইয়া এই সন্ত্রাসী নাজুকে ওই রুমে বেঁধে রেখেছে। নিহার বলার পর মিহুও বলে। শুধু বেঁধে না ভাইয়া এই বদমাইশ নাজুর গালে চড় দিয়ে তার কপালও ফেটে দিয়েছে। সে এখন অজ্ঞান হয়ে আছে।
মিহুর কথায় রাগে নাহিলের হাত কাঁপতে শুরু করে দে।
রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠে।
লিডার জোরে অট্টহাসি দিয়ে উঠে।
নাহিলসহ বাকিরা তার দিকে তাকায়।
—-“মেয়েটাকে বাঁচাতে চাইলে আমাকে যেতে দে না হলে মেয়েটার শরীর ছন্নছন্ন হয়ে যাবে।
নাহিল খেয়াল করল লিডারের হাতে রিমোট কন্ট্রোলার। রিমোট দেখে বুঝে গেল নাজিয়ার শরীরে বোম ঠিট করা হয়েছে। যদি একবার রিমোট হাতে পাই
বোম ডিফিউজ করতে পারব।
ভেবেই নাহিল টেরেস্টারের চারপাশ পরখ করে নিল। সে মাথায় বুদ্ধি আটিঁয়ে নিল। টেরেস্টার যে পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশেই অফিসার দাঁড়িয়ে ছিল নাহিল তাকে চোখ দিয়ে ইশারা বোতলের পানি ফ্লোরে ফেলতে।
অফিসার নাহিলের ইশারা বুঝতে পেরে পানি টেরেস্ট লিডারের পায়ের নিচ বরাবর ঢেলে দিল।
—-“কেউ আমার কাছে আসবে না নাহলে আমি বাটন চাপ দেবো।
সে পিছাতে শুরু করে নাহিল বাঁকা হেসে তার সামনে আগাতে থাকে।
—-“দে চাপ দে একসাথে মরব। নিহা মিহু ভড়কে যায়। তারা কিছু বলতে চেয়েও পারল না নাহিল তাদের কোনো কথা বলতে নিষেধ করে দিল।
—-“দে চাপ দে তুই। লিডার পিছিয়ে যেতে যেতেই তার পা পানির উপর পড়তেই পিছলে পড়তে লাগে তার হাত থেকে রিমোট টা হিচকে ফ্লোরে পড়তে গেলে নাহিল ধরে ফেলে।
নাহিল সহ সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নাহিল তাড়াতাড়ি ডিফিউজ করে নাজিয়ার কাছে এসে দেখে তার কপাল থেকে রক্ত টপটপ করে পড়ছে। নাহিলের চোখ থেকে নোনা জল বের হতে চেয়েও সে নিজেকে সংযোগ করে নিল। নাজিয়ার কপালে লেগে থাকা রক্তে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিল।
কপালের লেগে থাকা ব্লাডগুলো চুষে নে।
রুমাল বের করে পানির বোতল থেকে কিছু পানি রুমালে ঢেলে নাজিয়ার কপালের রক্তগুলো মুছে তার গায়ের উপর থেকে বোমের কেছটা খুলে নিল। নাজিয়ার গালে কয়বার হাত দিয়ে নেড়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু হুঁশ না আসতে দেখে নাহিলের ভেতরটা ধুক করে উঠল। সে তখনই পাজকোলা করে নাজিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
অফিসারস এর দিকে
তাকিয়ে বলে নিহা মিহুকে সাবধানে পাঠিয়ে দিতে। গার্ডের দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে
বলে লিডারকে অজ্ঞান করে গোডাউনে নিয়ে যাহ। হিসাবের খাতা খুলে কাম তামাম করা হবে। বাঁকা হেসে
নাহিল গাড়িতে বসল। রওনা দিল হসপিটালে।
—-“ডেমম…রাগে জোরে ফুলবেস ভেঙ্গে……
…..চলবে…..
(কেমন লাগল আজকের এ্যাকশন পার্ট?। জানি তেমন একটা পার্ট ক্রিয়েট করতে পারিনি বাট সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ভুলএুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন।হেপি রিডিং)
পর্ব_০৮
নিজেকে বেডের মধ্যে হাতে স্যালাইনের নল এড করা দেখে মনে করার চেষ্টা করছি কি হয়েছিল আমার সাথে?
আশেপাশে তাকিয়ে দেখি পুরো রুমটা হাসপাতালের ওয়ার্ড রুম।
উঠে বসার চেষ্টা করতেই কে যেনো ভেতরে এসে আমার হাত ধরে উঠিয়ে বালিশের সাথে হেলান দিতে সাহায্য করে।
আমি মুচকি হেসে মুখ উপরে তুলে তাকাতেই চোখজোড়ায় জল চলে আসে।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলি উঠি।
—-“আ….আপনি আমি আ…আসলে……হুসসসস
আমার ঠোঁটের উপর নিজের আঙুল বসিয়ে চুপ করিয়ে দিল নাহিল ভাইয়া।
উনার সংস্পর্শে আমার গা শিউরে উঠে।
উনি নিজের আঙুল আমার ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে নরম সরল কন্ঠে বলে।
—-“তোর সাথে কি করেছে টেরেস্ট লিডার?
উনার কন্ঠে বেশ বুঝতে পারলাম উনি নিশ্চিত টেরেস্ট বেডাকে উস্টাবে। এখন আমি কি বলব নাকি আমার গালেও চড় বসাবে।
যেই আমার মনের বলা কথা সেই না শুনা কথা নাহিল ভাই বলে দে।
—-“বলবি নাকি চড় লাগাতে হবে?
আমি চুপ করে অন্যদিকে তাকালাম। আমার এই অবস্থায় উনি আমাকে চড় লাগাবে বলছে একদম নাক ফুলিয়ে কথা না বলার ভান ধরলাম।
কিন্তু উনি তো উনিই যেভাবেই হোক কথা বের করেই ছাড়ে।
—-“দেখ তোর জন্যে সবকিছু করতেছি বলে ভাবিস না। আমি কোনো হিরো টিরো হতে যাবো না। বুঝছিস?
তোর জন্যে আমি টেরেস্টদের ধুলাই দিবো ভেবে থাকলে বলে দেই। এই আবুলা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে দে হাহ।
ভাব দেখিয়ে আমি টুল টেনে নাজিয়ার পাশে বসলাম।
তার চেহারা দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে সে আমার থেকে প্রশংসনীয় কথার জন্যে নায়কের মতো কাজ করবো এসব কথা শুনতে চাচ্ছে।
নাহিল ভেবে মনে মনে মুচকি হাসছে।
—-“নাজুপাখি আমি তোর হিরো হয় না হয় আমি তোর একমাএ ভিলেন দিওয়ানা। যে কিনা ভালোবাসার জন্যে যাকেই হোক মৃত্যুর কবলে ঢুকাতে পারি।
হিরো হয়ে ভালো দেখানোর চেয়ে ভিলেন হয়ে খারাপ দেখায়। এতেই তুই আমার ভালোবাসার অর্থ বুঝবি।
ব্যস আর একবছর তারপর তুই আমার হবি।
একবার লন্ডনে যায়। মিশন হাইডেন ম্যানকে খুঁজে তার অস্তিত্বসহ মিটিয়ে দেবো।
তুই যে খানেই লুকিয়ে থাক না কেন হাইডেনম্যান ! তোকে খুঁজা আমার ডান হাতের খেলা।
বাঁকা হেসে সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে নিল।
নাজিয়া কিছু বলছে না দেখে রাগ উঠতে লাগল।
নাহিল ভাইয়া এতো শান্ত করে বসে থাকবে এটা তো কোনো জম্মেও সত্য বলে মনে হচ্ছে না!
আমি উনার দিকে মুখ করতেই উনি আমার গাল চেপে ধরে।
এমনেই মাথায় ব্যথা এর উপর এভাবে জোরে গাল চেপে ধরায় ব্যথায় কান্না পাচ্ছে।
আমি এবার চুপ না থেকে বলেই দিলাম।
—-“বলছি বলছি আমার গাল ছাড়েন খুব ব্যথা করছে প্লিজজ……
আমার কথায় উনি কিছুটা মনে হয় হুঁশে আসলেন। দেখেই লাগছিল ব্রাউন কালারের চোখের মণি লাল বর্ণে রুপান্তর হয়েছিল।
যেমনটা কেমিস্ট্রির মতে এসিড ক্ষার নির্ণয় হয় ঠিক তেমন উনার রাগের রুপ বদলায়।
আমাকে আবার মনের মধ্যে ফিসফিস করতে দেখে ধমক দিলেন নাহিল ভাইয়া। উনার ধমকিতে কলিজা কেঁপে উঠল।
—-“আ….আসলে সে সে আমায় এ….এখানে। হাত দিয়ে কোমরের এখানে দেখালাম।
উনি কি জানি কি বুঝলো আবারও বলেন।
—-“আর কোথায় কোথায় তোকে টার্চ করছে? গম্ভীর কণ্ঠে। চোখজোড়া নিচের দিকে করে বললেন।
আমি কাঁপা গলায় বলি। ব্যসস এ…খানেই বাকি আর কিছু জানিনা আমার মাথায় গার্ন দিয়ে এ্যার্টাক করল।
—-“ভালো হয়ছে। তুই রেস্ট নে তোকে দেখতে আসবে সবাই আর যা হয়ছে কাউকে বলার দরকার নাই। তুই তো রঙলি ঢঙলি মেয়ে সারাক্ষণ রঙ দেখায় ঘুরিস। তোর কাজ তো এটাই।
ভালো কাজ কখনো করিস নি উহ।
শান্ত কণ্ঠে এভাবে অপমান করল উনি। উনার কথায় বুকফাটা কান্না আসতে চাচ্ছে। আমিও রাগে বিরবির করতে থেকে উনার চৌদ্দগৌষ্ঠি উজার করতে থাকি।
_____
—-“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা নিউক্লীয় বোমা যেভাবেই হোক নিয়ে আসব আপনি চিন্তামুক্ত থাকেন।
—-“ডেম শিট প্লেন একের পর এক ফ্লপ হচ্ছে আর তোরা হাতের উপর হাত দিয়ে বসে আছস।
এই শহর উড়ানোর ডিল করেছি আমি…..শুনতেছিস তোরা ডিল করেছি। সেখানে বোমা তো অফিসারদের হাতে লাগছে।
এবার কিসের প্লেন করব?
রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে স্মোক করতে থাকে হাইডেন ম্যান।
হ্যাঁ যে বোমার কাজ করতে বলেছে সেই হচ্ছে হাইডেন ম্যান।
যে কিনা লন্ডনে থাকে এই খবর নাহিল তার স্পেশাল টিমের মাধ্যমে জানতে পারে। নাহিল এখন তাকেই খুঁজতে বিভিন্ন স্পেশাল টিম গড়ে তোলে যার মাধ্যমে সেও বিভিন্ন কোর্স ট্রেনিং নিতে থাকে।
হাইডেন ম্যান তার সাহায্যকারী সদস্য ইরশাদকে কথা শুনিয়েও যেনো তার রাগ কমে নি।
—-“নিড দ্যা মিশন সাকসেসফুল,,,, মিশন অফ এ্যার্টাক দ্যা হোল সিটি।
ইট উইল বি ডান বেরি সুন হাহাহাহহা।
হাইডেন ম্যানের কথায় ইরশাদ নিজের মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
—-“স্যার আমার কাছে একটা প্লেন আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন?
—-“বলো!
—“স্যার অফিসারদের মধ্যে আমি একজনকে চিনি। সে এই কাজটা খুব সাবধানে সর্তকভাবে করতে পারবে।
হাইডেন ম্যান কথাটা শুনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে।
—-“কে? যে আমাদের জন্যে প্রযোজ্য !
—-“স্যার তার নাম জানা নেই। কিন্তু তার সাথে পরিচয় আছে আজ থেকে তিনবছর ধরে।
—“ওয়াট দ্যা হেল? পরিচয় থাকলেই কি সে আমাদের জন্যে উপযুক্ত?
না তার আইডেন্টি ফাই লাগবে। যেভাবেই হোক মোরগকে ধরে আন। কাজে যেনো লাগে। ডিম যদি না পাড়ে তাহলে তো গার্নের সুটই ওর জন্যে অনেক।
সো ফাস্ট আইডেন্টিফাই দ্যাট পার্সন এন্ড কনফার্ম মি।
হাইডেন ম্যান ইরশাদের সাথে কথা বলেই সেখান থেকে স্মোকের ধুঁয়া ছড়াতে ছড়াতে বেরিয়ে যায়।
________
নাহিল টেরেস্টটার চুল ধরে সালফিউরিক এসিড পাতিলের সামনে মুখ বরাবর রাখল।
—-“ইনট্রুডিউস ইউরসেল্ফ প্লিজ।
শান্ত ভাবে নাহিল কথাটা বলেই তার চুল ছেড়ে নাড়তে থাকে।
টেরেস্ট চোখ দিয়ে আগাগোড়া রুম বুলিয়ে নে। পুরো রুমের মধ্যে কোথায় কি আছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু সে যেখানে বসে আছে সে আর নাহিলকেই দেখা যাচ্ছে। পুরো অন্ধকার রুমে তার উপর লাইট জ্বালানো হলো।
নাহিল দেখল ছেলেটা চুপ করে দেখছে।
সেও বাঁকা হেসে ছেলেটার চোখের আড়ালে নিজের হাতে গ্লাভস পড়ে নিল।
—-“তুই বলবি নাকি আমি নিজেই কথা বের করব!
ছেলের চোখের আড়ালে লাল রঙের মরিচের গোড়া হাতের মধ্যে মেখে নেয়।
দেখ আমি টাইমের প্রতি খুবই সেন্সিটিভ। এজ এ পানচুয়াল বয় । সো একমিনিট বলতে না বলতেই সব কথা বলে দে না হলে আজ তোর জীবন শেষ।
—-“বলছি বলছি। আ….আমার নাম ইয়াস। আমি লন্ডন থেকে সাথীদের নিয়ে এখানে আসছি বোমা ট্রান্সফার করতে। কিন্তু কে কবে কখন কি করতে বলছে এ ব্যাপারে কিছু জানি না।
—-“এতো কিছু বলছিস তোর পরিচয়ের বাকি অর্ধেক কে দেবে?
নাহিলের কথায় ঘাবড়ে যায় ছেলেটা। সে শুধু টেরেস্ট নয় লন্ডনে লুকিয়ে যেসব মেয়েদের হরণ করা হয়েছে রেপ করা হয়েছে সে সব কাজে বরাবরই জড়িত থেকে কাজ করেছে ইয়াস।
সে ভেবে এক ঢোক গিলে বলে।
—-“না এটাই আমার পরিচয় আর নেই।
আহহহহহহ ভাই এই আপনি কি দিলেন আমার চোখে আহহহ আহহ ভাই আমাকে বাঁচান।
খুব জ্বলতেছে ভাই প্লিজ পানি দেন।
নাহিল গ্লাভস ফেলে টেবিলের উপর পা তুলে বসে।
—-“কি রে খুব জ্বলে নাকি?
ইয়াস কোনো কথাই বলছে না চিৎকার করে জ্বলার অনূভুতি বুঝাচ্ছে। কিন্তু নাহিল তার কষ্টে নিজের সুখ দেখতে পাচ্ছে।
—“চোখের অবস্থা কেমন লাগতেছে মিস্টার ইয়াস?
নাহিল ছেলেটার হাত চোখ থেকে সরিয়ে হাত মোচড় দে।
ছেলেটার আর্তনাদ পুরো রুমে গুজতে থাকে। বাহিরে গার্ডস গার্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছে। কিন্তু তাদের হাত কাঁপছে নাহিলের হংকার শুনে।
—-“ভাই কি লাগে ছেলেটা বাঁচবে? এক গার্ড তার পাশেরজনকে বলে।
পাশের জন শুনে বলে।
—“না রে ভাই এর মরা নিশ্চিত।
—“কেন ভাই?
—“শুনছি এই ছেলে ম্যামের কোমরে হাত রাখছে। নাহিল বস তার সিকিউরিটি হেল্পারকে বলছিল।
তখন আমিও ছিলাম।
—“খাইছেরে ভাই পোলাডা মরবে রে ভাই মরবে।
গার্ডস চুপ হয়ে যায় যদি হঠাৎ নাহিল তাদের কথা শুনে ফেলে তখন তো তাদেরও গাল জিহ্বা যাবে। এই ভয়ে চুপ মেরে যায়।
—“আমার কলিজার শরীরে হাত দেওয়ার সাহস কই পাইছস? দাঁতে দাঁত চেপে এসিডের পাতিল দুই হাতে নিয়ে ধরে।
—-“ভা….ভাই আ…আমি জানতাম না।
—-“তুই জান ইয়া না জান এ দিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই যে হাত চোখ দিয়ে তুই বাজে নজরে তাকিয়েছিস আমার কলিজায়। সে সব থেকে বড় কথা তুই জীবিত থাকবি না গুড বায়।
বলেই সে পাতিলটা ইয়াসের উপর ঢেলে দে।
এসিডের মারাত্নক প্রবাহে ইয়াসের শরীর জ্বলে চামড়া গলে চেয়ার বেয়ে বেয়ে ফ্লোরে পড়তে শুরু করে। তার শরীরের মাংস হাড্ডি সব দেখা যেতে লাগে।
নাহিল…….
………চলবে……
পর্ব_০৯
নাহিল কেবিনে বসে নিজের মাইন্ড ক্লিয়ার করার চেষ্টা
করছে।
ফাস্টে হুমকি,,সেকেন্ডে বোম থার্ড ডিল। কোনো কানেকশন তো আছেই এর মাঝে।
সবসময় তারের প্যাঁচ এক জায়গায় গিয়ে খুলে। তেমনই হয়তো আমার কোথাও ভুল হচ্ছে!
দরজায় কারো নক করার সাউন্ডে টনক নড়ে।
আমি ভ্রুকুঞ্চিত করে দেখি কাজল একটা ফাইল নিয়ে এসেছে সই করাতে।
—-“হুম কাম।
—-“স্যার প্লিজ সাইন দিস ফাইল।
কাজল প্রপোর্টির ফ্যাক্টর সেটিংস এর কাগজ এনেছে।
আমি হাতে নিয়ে পুরো পেপার ভালোভাবে পড়ে নেই।
—-“প্রপোর্টির মেইন ফাংশন সেটআপ করতে আমি একজন এক্টিভ ম্যানকে ডেকেছি। সে আসলে তাকে আমি আপনার কেবিনে পাঠিয়ে দেবো। আপনি ফর্মালিটিস বুঝিয়ে দেবেন। ওকে?
কাজল মাথা নাড়িয়ে ফাইলটা নাহিল থেকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
নাহিল তার গার্ডকে কল করে বলে।
—-“ইয়াস এর বাউডেটা পাইছিস?
—“স্যার বাউডেটা সব নরমাল। মানে আপনাকে রুমে যা বলেছে তাই এর বেশি কোনো ইনফর্মেশন নেই।
—“শুন লন্ডনে খুঁজ পাঠা। যা বের হবে সব আমাকে জানাবি। টাইম টু টাইম সব বাউডেটা চাই।
—“ওকে স্যার। কল কেটে দিয়ে নাহিল উঠে নামাজের জন্যে বেরিয়ে যায়। তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হলো।
____
আমি আব্বুর দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছি। আম্মু নামাজ পড়ছেন। আব্বু নিউজপেপার হাতে নিয়ে দেখছেন।
আমাকে কিছুক্ষণ আগেই ডিসচার্জ দেওয়া হলো। সবাই আমাকে ধরে এখন সামনে বসিয়ে বন্দিখানার মতো মূতি বানিয়ে রেখেছে।
আম্মু নামাজ শেষে এক পরখ আমাকে দেখে উঠে কিচেনে নাস্তার আয়োজন করতে যায়।
আব্বু নিউজপেপার দেখছে আমিও বুদ্ধি আউলাই ধীরে ধীরে উঠে চুপিচুপি পা বাড়িয়ে রুমের দিকে যেতে নিলেই আব্বু ডাক দে।
আব্বুর ডাকে গা তড় করে কেঁপে উঠে যদি এখনই বকা দে।
আমি চোখের দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে নরম কণ্ঠে সরু গলায় হুমম বলি।
—“তোকে না বলেছিলাম নাহিলের সাথে যেতে! শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
আমিও বেশ বুঝতে পারছি আব্বু এখন নাহিল ভাইয়ার সুনাম করবে।
এই নাহিল গলির মালের জন্যে সারাক্ষণ গার্ড নইতো বকা থাপ্পড় কপালে লেখাই থাকে।
নিজের মনের কথা যদি এখন মুখ ফুটিয়ে বলি তাহলে আব্বুর চড় খেতে দেরি নেই।
নাহিল ভাই যখন থেকে লাইফে এসেছে তখন থেকে আব্বু আমার চেয়ে নাহিল ভাইয়ার সাইড নে। যতসব আজাইরা উগান্ডার নাহিল্লা মাল উহ।
—-“কি হলো বলছিস না কেন? কিছু জিগ্গেস করেছি।
আব্বুর ধমকে ধ্যান ফিরে কাপড় চেপে ধরে ভয়ে মাথা নিচু করে আবারো রিপিট করলাম হুমম।
—-“কাল থেকে নাহিল যা বলবে তাই হবে যদি তুই তার বিরুদ্ধ যাস তখন নাহিল যা করবে এটার জন্যে আমি দায়ি না।
আব্বুর কথায় অসহায় ভাবে তাকালাম। তবে আব্বু মুখ ফিরিয়ে নেন। আমি দেখে শুনে সত্যিই অবাক হচ্ছি! বাসার মধ্যে কেনোই বা নাহিল ভাইয়াকে এতো গুরুত্ব দেওয়া হয়। কই? কখনো তো নায়েম ভাইয়াকে দে নি। যে কিনা আমার কাজিন। যার সাথে আমার কথা বলা উচিত যার সাথে আমার থাকা উচিত তার থেকেই আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
এবার আমিও আর চুপ থাকলাম না। অসুস্থ তাও আমি স্বাধীনতা চাই এই নাহিল নামক বিষপান থেকে।
আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে বলি।
—-“আব্বু সব বুঝলাম কিন্তু কেনোই বা আপনি বার বার নাহিলের সাথে আমাকে জড়ান? সে আমার কি হয়? তার সাথে না আমার রক্তের সম্পর্কে না বন্ধুত্বের। তাহলে কিসের দায়ে আপনি তাকে আমার সাথে মিলিয়ে দেন। আমরা এখনো নাবালেক আমাদের না বিয়ে হয়েছে না এংগেইজড! সে আমার স্বামীও লাগে না আর না লাগে সম্পর্কের ভাইয়া।
আপনারা আমার ভালো চান আমি জানি। কিন্তু আমারও তো কিছু ফ্রিডম আছে এভাবে কাউকে কারো সাথে সম্পর্ক ছাড়া জড়িত করা তো ঠিক না আব্বু।
তাও তোমরা।
একপ্রকার কান্না চলে আসছে বলতে বলতে তাই দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।
বালিশে মুখ গুঁজে নাহিল ভাইয়ার অত্যাচার থাপ্পড় বসানো সব মাথায় টনক নড়াছে।
আমাকে ভালোও বাসে না তাও গাইড করবে এমনভাবে যেনো উনিই আমার সবকিছু আমার পরম স্বোয়ামী কুনাইতে আছে।
____
আরভী খান নিজের চশমা খুলে মুছতে থাকেন। তখন মিসেস রাসনা এসে উনার সামনে চায়ের ট্রে রাখল।
উনি নিয়ে কাপে এক চুমুক বসালেন।
—-“নাজুকে বলে দেওয়া উচিত!
মিসেস রাসনার কথায় হকচক খেয়ে আরভী খান চোখ পাঁকিয়ে তাকায়।
—“কি হলো এভাবে কেনো তাকিয়েছো যা সত্য তা বললে হয়তো কিছুটা আশ্বাস পাবে। এখন তাকে না জানিয়ে আমরাই ভুল করতেছি। প্রতিটা বিয়ের মধ্যেই বাবা-মার কর্তব্য সন্তানকে তার ছোটবেলার কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা থাকলে তা না চুপিয়ে বলে দেওয়া। তাহলে আমরা কেনো বিপরীত করছি?
আরভী খান সরু গলায় বলেন।
—-“আমি কি চাই না বলতে? আমিও তো চাই নাজুকে তার অতীত সম্পর্কে বলে দেই।
কেনোই বা নাহিল তার আশেপাশে থাকে তার উপর জুলুম করে।
কিন্তু ওয়াদার হাতে আমি বাধ্য। চেয়েও হাজার কষ্ট পেতে দেখেও আমি নিশ্চুপ থাকব। কারণ আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ যদি খারাপের মাধ্যমে ভালো হয় তাহলে সেটাই হোক।
নাহিলের মিশন এর ব্যাপার ভুলে গেছো? তার মিশন শেষ না হ।ওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।
—-“কিন্তু…..মিসেস রাসনার ভাবনার অবাককর দৃষ্টি বুঝতে পেরে আমি মুচকি হেসে বলি।
—“কিন্তু শব্দটা মুখে এনো না। এটা সবচেয়ে বড় খারাপ জিনিস। এই কিন্তু দিয়ে মানুষের কত কিছু প্রশ্নের অর্থ বুঝানো হয় জানো? একটা ঘটনা বলি।
জাহেলি যুগে যখন নারীদের উপর অত্যাচার করা হতো। নির্মম ভাবে তাদের শরীর কবলে খাওয়া হতো। তখন মেয়েদের মুখ থেকে অস্ফুট সুরে বের হতো -কিন্তু কেনো আমার সাথে এমন করছেন!
এই কথাটা ঐ সময় মহানবী(সাঃ) এর জম্মের আগে নারীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হতো।
তাও কারো সাধ্য ছিল না দমানোর। মহানবী (সাঃ) আসার পরই জাহেলি যুগ ধর্মের যুগে পরিণত হতে থাকে। নারীরা রক্ষা পাই তাদের ইজ্জত হানি মানসম্মান নষ্ট হওয়া থেকে। সুপ্রতিষ্ঠিত হতে থাকে নগরী এই পুরো পৃথিবী।
স্বামীর মুখে এতো সুন্দর ঘটনা শুনে মিসেস রাসনা উনার হাত ধরে বলেন।
—“আপনি আসলেই নাজুর প্রতি খুব সেন্সিটিভ আর কেয়ারিং। আগে শুধু জানতাম বাবাদের লক্ষি হয় মেয়েরা। আজ তার প্রমাণও পেলাম।
উনি মুচকি হাসলেন রাসনার কথায়।
নরম অস্বাভাবিক সুরে তিনি বলেন।
—-“কবে নাজু বুঝবে এই কথা? নাহিলই যে তার সবকিছু।
—-“বুঝবে সময় আসবে যখন নাজু নিজের অন্তর দিয়ে ভালোবাসবে নাহিলকে।
আরভী খান নিজের মাথা নেড়ে দাঁড়িয়ে যান।
—“শুনো আমি আজ একটু অফিসে যাবো। অনেকদিন যাওয়া হয় নি। কলিগ স্টাফস কি কাজ করছে শুধু আউটসোর্সিং করেই একটু আধটু জেনেছি। এখন যায় পরে আসব।
মিসেস রাসনাও সম্মতি দিলে উনি কথা শেষ করে বেরিয়ে যান।
______
—-“হ্যালো আমি ইরশাদ বলছি দোস্ত!
ইরশাদের নাম শুনে অফিসার মেনেক বাঁকা হেসে বলে।
—“এতোদিন পর মনে পড়লো কি করে?
ইরশাদ কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিল। তার আর মেনেকের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও স্বার্থ তাদের মাঝে আগে।
—-“ওহ নাকি নিউক্লিয় বোমার কথা জানতে কল করেছিস।
মেনেক নিজের কেবিনে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে বলে।
—“হুম সেই ব্যাপারই।
গম্ভীর কণ্ঠে ইরশাদ বলে।
—-“ওহ তবে ডিসকাউন্ট? হাই তুলে বলে।
ইরশাদ মেনেকের ধারণা বুঝতে পারল। সে যে ক্যাশ নেওয়ার জন্যে উতলাছে সেটা ছাড়া কাজ করবে না।
—“কত লাগবে?
—“এই না হলো আমার দোস্ত। কথা বুঝে যাওয়া কেউ তোর থেকে শিখুক।
—“ফালতু কথা বলার টাইম নাই। যা বলছি তার উওর দে।
—-“তোর কি লাগে বোম তোর কাছে ট্রান্সফার করা এতো সহজ? এই বোমার উপর স্পেশার্ল সিকিউরিটি গার্ড বসানোর হয়ছে। শুধু তা না এই সিকিউরিটি কে লিড করছে হাইডেন কমিটির স্পেশাল টিম লিডার মিস্টার নাহিল ইয়াদিস চৌধুরী। তার হাত থেকে সহজে বোমা হাতানো কোনো বাচ্চার খেলা না।
কাজ হবে তবে টাইম লাগবে।
—-“নে টাইম নো প্রব্লেম। তবে কাজ হওয়া চাই।
—“কম চেয়ে কম এক লাখ টাকা চাই আমার ব্যাংক একাউন্টে।
—-“আগে কাজ তারপর ক্যাশ।
—-“ওকে তোর বস কে বলে দিস কাম হয়ে যাবে।
ইরশাদ ভ্রু নাচিয়ে অবাকসুরে বলে।
—“কে বলছে বসের কথা?
মেনেক হু হা করে হেসে বলে।
—-“কুকুর কি আর চোর কে না দেখে ঘেউ ঘেউ করে?
তেমনে তুই ও তোর বসের কথা ছাড়া তো ঘেউ ঘেউ করবি না।
ইরশাদের রাগ উঠতে কপালে ঘাম জমে যায়।
—“মন তো চাচ্ছে তোকে শেষই করে দেই। কিন্তু লাভের জন্যে আগে তোর থেকে কাজ হাসিল করব এরপর না হয় তোর ব্যবস্থা নেবো।
মনের মধ্যে বলেই সে বাঁকা হেসে কল রেখে দে কথা না বাড়িয়ে।
মেনেকও নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
—-“কোর্ড নং…….
……..চলবে……
পর্ব_১০
রাতে জোনাকির উজ্জ্বল হলুদ রশ্নি জানালার পাশেই ঘুরঘুর করে উড়ছে। চাঁদ এতো উপরে হওয়ার শর্তেও লাগছে যেনো চাঁদ খুব সন্নিকটে এসে আমার মনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। বেলকনির দরজা খুলার সাথে সাথেই ধুমকা শীতল হাওয়া এসে শরীরকে তড়তড় করে কাঁপিয়ে দিল। বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসে গায়ে কাঁথা মুড়ে দিলাম।
নিজেকে নিজেই কোঁচতে লাগলাম।
—-“হুদাই চোখের পানি ফেলাইয়া লাভ কি হলো? যার কারণে ফেলাইলাম সেই তো উধাও হইয়া ফুর্তি করতেছে।
আচ্ছা আমি নাহিল ভাইয়ার কথাই বা কেন ভাবতেছি? ভাবার তো অনেক বিষয়ই আছে তাহলে!
ধুর ধুর গাধী অন্য কিছু নিয়ে ভাব।
শীতল আবহাওয়ার অনূভুতি বোঝার জন্যে নিজের মাথা থেকে এতোদিনের নাহিল ভাইয়ার করা কান্ডগুলো ঝেড়ে ফেললাম। মাথা হেলিয়ে দিলাম। একদীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
অপরদিকে বেডের উপর ফোন একের উপর এক বেজেই যাচ্ছে। কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় আমার কান অব্দি পৌঁছাইলো না।
আমি বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে থেকে রুমে এসে বেড থেকে ফোনটা নিলাম চার্জ দিতে। ফোনে চার্জ ছিল না মাথা থেকে ব্যাপারটা ভুলেই গেছিলাম।
যতই হোক লাইফের বেস্ট বর হচ্ছে ফোন।
জামাই থাকুক বা না থাকুক একটা না একটা ফোন নামক যন্ত্র নিজের কাছে থাকেই।
আমি ফোনের স্ক্রিনে কিস দিয়ে চার্জে লাগিয়ে চলে যেতে লাগলেই স্ক্রিনের উপর টেন মিস কলস ঠেলাঠেলি করতে করতে ভেসে উঠে। ব্রাইটনেসটাও আপনাআপনি ফুল হয়ে গেল।
ভয়ে তো ভূত দেখার মতো লেগেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে সোয়াইব করে দেখি নাহিল ভাইয়ার টেন মিস কল।
দেখে আমি মুখটা স্বাভাবিক রাখছি কিন্তু ভেতরে আমার আত্না উড়উড় উড়ান দেওয়ার উপক্রম ধরছে। সামনে প্রকাশ করছি না।
কারণ সামনে আয়না নিজেকে দেখে ভয় লাগবে ভেবে সাহস জুটিয়ে কল দিলাম।
তবে আমি কেন ভয় পাবো? যতই হোক নাহিল ভাইয়া বলে কথা ভয় নামক কাঁপুনি চলেই আছে।
সাহস করে নিজেকে গুটিয়ে কল দিলাম।
অপরপাশে রিং হচ্ছে কিন্তু কলের রেসপন্স নাই মেজাজ চইড়ায় যাইতাছে নাহিল ভাইয়ার কারণে। ফোন দিলে রেসপন্স না দিলে রাগটা ইচ্ছামতো যদি ঝাড়তে পারতাম। শালা গলির মাল কুইনাইকার। তোরে কি সাধেই গলির মাল বলি হুমম? তোরে গলির মাল বলি এজনই যে তুই সারাক্ষণ চিপায় চিপায় থাকস।
এতো কি চিপায় থাকস হ্যাঁ?
আমাকে তো জীবনে চিপায় নিয়ে যাস নাই নিজেই চিপা গলির মাল হয়ে থাকিস। তোরে যদি একবার সামনে পাইছি নাআআআ….ফোনটা রেখে পিছে ঘুরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলাম।
—-“হুম নেক্সট কি কি করবি বল? সামনে পাইলে ডট ডট……বলে আমি এক পা এক পা করে নাজিয়ার দিকে আগাতে লাগি।
—-“আল্লাহ ভূতের কথা বলছি আজরাইল কেন পাঠাইলা! গলায় শুকনো ঢোক গিলে নাহিল ভাইয়ার আগানো দেখে উল্টা পা পিছাতে লাগি। উনি ক্রমশ এগিয়ে আসছেন। চোখমুখে বুঝা যাচ্ছে আমার সব কথা উনি শুনে রেগে বোম হয়েছেন। এখন অবশ্যই এমন কিছু করবে যা আমার ধারণার বাহিরে। কিন্তু আমি চাই না উনি এমন কিছু করুক।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলি।
—-“আ….আব ভা…ভাইয়া আমি তো কি..কিছু বলি নি।
কখন যে কথা বলার চেষ্টা করতে করতে এতোই পিছিয়ে গেছি বুঝতেই পারলাম না।
একদম দেওয়ালে ঠেসে গেলাম।
কিছু না ভেবেই উনার সাইড হয়ে সরে আসতে গেলেই উনি নিজের বাহুডোরা দিয়ে আগলে নে।
—“কি কিছু করবি না? ঘোর লাগা দৃষ্টিতে উনি বললেন।
—“আ..মি কবে কিছু করব বলছি!
—-“হুসসসস। আমার মুখের খুব কাছে এসে তিনি চুপ থাকতে বলেন।
উনার প্রতিটা নিশ্বাস যেনো আমার মুখের উপর গরম আভার সৃষ্টি করছে। বুকের ভেতর ঝড় বইতে শুরু করে। কিন্তু ঝড়টা কেনো এমনভাবে ঝুম ঝুম করে পড়ছে জানি না। তবে এক আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে। অনূভুতিময় শিহরণ বয়তে শুরু করে।
নাজিয়ার ডাগরপূর্ণ মায়াবি চোখজোড়ায় নিজেকে দেখতে পেয়ে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে ছিলাম। কিন্তু ব্রেনের কোনো এক কোণে মিশন নিয়ে প্লেনিং টেনশন সব আউরে ছিল।
আমি সরে আসতে নিলে দেখি নাজিয়া চোখ বন্ধ করে কাঁপছে। হাত দিয়ে কাপড় চেপে ধরে আছে। সবচেয়ে বেশি টানছে নাজিয়ার গোলাপি রঙের ঠোঁটজোড়া।
এই ঠোঁটে কাঁপুনি দেখে মনে হচ্ছে কোনো চলমান মেঘের দল আমাদের মাঝে এসে ঘিরে ধরেছে।
—“ভাইয়া কি আছে নাকি নেই ! নিশ্বাসের গরম ভাব তো পাচ্ছি না। আমি চোখ বন্ধ রেখে ভাবছিলাম হঠাৎ ভাবনার মাঝে অনুভব করলাম নাহিল ভাইয়া আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়েছেন।
আমি চোখ খুলে দেখি হ্যাঁ সত্যিই তো উনি এভাবে হেলিয়ে দিল কেন? এরই মাঝে উনি আমার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে। যাতে আমার ভয় চিন্তা সংকোচবোধ দূর হয়।
উনার স্পর্শে কেঁপে উঠলেও তেমন একটা ভয় লাগছে না যেমনটা তখন লেগেছিল উনার কাছে আসাতে।
নাহিল ভাইয়া গুনগুন করে আমার ঘাড়ে কি যেনো বলতে লাগেন। আমি কান পেতে শুনার চেষ্টা করি।
—-“বুঝে যেও আমার হৃদয়ের পএে লেখা;
একরাশ প্রেমের আহবান।
বুঝে যেও প্রিয় তোমার নিশ্বাসে আছে;
আমার একমুঠো পরিমাণ জীবনের আশ্বাস
তোমার গোলাপী রঙের ঠোঁটে
ইচ্ছে করে নিজেকে
হারিয়ে ফেলি। হারিয়ে যেতে মন চাই তোমার মাঝে।
বুঝে যেও প্রিয় হয়তো সময়টা নাও আসতে পারে আবার।
নাহিল ভাইয়া কি বললেন কি বুঝালেন আগাগোড়া কিছুই মাথায় ঢুকলো না। তবে এটুকু বুঝলাম উনি কোনো ছন্দ বলেছেন। ছন্দই হবে কিন্তু এর অর্থ কি?
আমি অস্ফুট সুরে বলি—-“ভাইয়া….উনি হুমম বললেন। আপনি এখন কি বলেছেন? আর কেনোই বা বললেন?
নাজিয়ার কথায় নিজেকে পৃথিবীর এক মাএ অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে।
এই মেয়ে বলে ভার্সিটি লেভেলের স্টুডেন্ট! এটুকু বুঝা কি কোনো ব্যাপার? মাথার মধ্যে কি কথাগুলো ঢুকে নি আল্লাহ কোনো আজব প্রাণীর ভালোবাসায় যে আমি পাগল হয়ছি।
আমি ভাবতেছি সাথে মুখ তুলে নাজিয়ার ফেসের দিকে তাকায়। দেখেই বুঝলাম সে কিছুই বুঝে নাই উল্টা মুখের হাবভাব বুঝাচ্ছে সে মনের মধ্যে প্রশ্নের গাঁটি বেঁধে রাখছে।
আমি এবার তাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম শার্টের কলার ঠিক করে হাতের হাতা ফোল্ড করে সোফায় গিয়ে বসি।
নাজিয়া হাবার মতো হা করে আমার কান্ড দেখছে। এতে বেশ মজাই পাচ্ছি।
—-“এ কি হলো? এই বেডা এতোক্ষণ মুখ লুকিয়ে এখন বুক ফুলিয়ে ভাব লইতাছে । আমার প্রশ্নের উওরই দিল না।
আমি কোমরে হাত রেখে উনার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
—“কি এভাবে দাঁড়িয়ে কেন আছিস? যাহ আমার জন্যে গরম কফি আন।
নাহিল ভাইয়ার মুখে কফি খাওয়ার কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাতের একটা বাজছে।
আমি রেগে বলি—-“ওই মিস্টার নাহিল চৌধুরী এটা আমার রুম নিজের রুমে গিয়ে সার্ভেন্ট ভাইয়াদের বলেন কফি আনতে আমি ঘুমাবো। রাতে একটা বাজছে আপনার মতো লেইটলতিফ না ওকে?
উনি হয়তো আমার কথায় কান দিলেন না ষাড়ের মতো সোফায় গা ঠেসে বসে আছেন। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পাবজি খেলা শুরু করে দে।
—“ওরে আল্লাহহহ দুনিয়াতে আপনার আর কামই আছে কই? সব কাম তো আমারে দিয়া করান। নিজে তো এক পাতিল পরিমাণ ভাতও রান্না করতে পারেন কিনা সন্দেহ!
নাহিল ভাইয়া তাও স্বাভাবিক ভাবে বসে আছেন। বুঝছি গলির মাল এভাবে যাবে না কফি এনেই দিতে হবে।
রাগে ফুসতে ফুসতে কিছু না বলেই কিচেনের দিকে গেলাম। নাহিল ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে নাজিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলেন।
—“বড় হওয়া এখনো যথেষ্ট বাকি আমার নাজুপাখির। বুঝ আছে তবে আমার হৃদয়ের বুঝটা এখনো বুঝার বয়স হয় নি। তাই তো তোকে চোখে চোখে রাখি। এতো ফোন দিলাম একটুও ধরলি না আর যখন কল দিলি তখন আমাকেই সামনে পাইলি। তোর কল না ধরাতে যেমন তোর রাগ উঠলো ঠিক তেমন রাগ আমারও উঠেছিল তাই তো তোর উপর রাগ ঝাড়তে এসে নিজেই হারিয়ে গেলাম তোর মায়াবী প্রেমের আভাসে। তোকে কল দেওয়ার কারণ একটাই তোর রক্ষা করাটা আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তোকে ধমক চড় মারা এসব শুধু আমার খারাপ রুপ।
তবে এটাই আমার ভালোবাসা।
তোকে যে কত ভালোবাসি তা না দেখিয়ে শুধু আড়ালে ভালোবাসতে থাকি। হোক সেটা অজানা অনূভুতি কিন্তু অনূভুতিটা যেদিন বুঝবি সেদিন আমায় কাছে নাও পেতে পারিস।
নাহিল বিরবির করে কথাগুলো বলছে এতে তার হাতের উপর নরম তুলতুলে স্বচ্ছ জল পড়ল তার চোখ দিয়ে।
সে স্বাভাবিক ভাবে নিজেকে সামলে জলটা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল।
পরক্ষণে নিজের হাত মুঠো করে নিশ্বাসের গতি বাড়িয়ে বলতে লাগে—-“সর্বশেষ পরিণতি আমিও দেখব মিস্টার হাইডেনম্যান। তোর কারণেই আমি আলাদা নিজের জীবন থেকে। By Allah, i will get you within reach very soon.
—“আপনার কফি ! আমি পিছে ফিরে নাজিয়াকে দেখে স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগি।
কফিটা নিয়ে ভাব দেখিয়ে চলে যায়।
—-“কি বদ অপকার লোক ! এতো কষ্ট করে কফি বানিয়ে আনলাম অথচ একটা থ্যাংকস ও বলল না। উহ না বলুক আমিও শোধ নিবো একদিন।
বলেই ভেংচি মেরে দরজা জানালা বন্ধ করে লাইট অফ করে বেডে গা হেলিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুইতেই চোখে ঘুম এসে ভর করে। পাড়ি দেই ঘুমের দেশে।
আরভী খান ড্রয়িং রুমে জগে পানি ভর্তি করছিলেন।
ভর্তি হয়ে গেলে গ্লাসে ঢেলে পানি খেয়ে জগ গ্লাস নিয়ে রুমে যাওয়ার পথে নাহিল নাজিয়াকে একসাথে দেখে খুশি হোন তৃপ্তির হাসি দিয়ে মনে মনে বলেন।
—-“আল্লাহ আমার সন্তানদের জীবন সম্পূর্ণ করিয়েন। নাহিল আর নাজিয়ার বন্ধনটা যেনো কোনো ভাবেও ভেঙ্গে না যায়।
আল্লাহর নাম স্মরণ করে তিনি রুমে চলে যান।
______
ভোরবেলায় উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম। আজ ভার্সিটির মধ্যে ফাংশন। সেই খুশির ঠেলায় যে ড্রেসটা কিনলাম সেটা বেডের উপর রেখে ফ্রেশ হতে গেলাম।
সুর বাঁশিয়ে আয়নার সামনে এসে নিজের ভেজা চুল তোয়াল দিয়ে মুছে নিলাম। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাছে তখন নজর গেলো বেডের উপর। হেয়ার ড্রায়ার রেখে বেডের কাছে এসে দেখি যে গাউন রেখেছি তার জায়গায় ডার্ক ব্লু কালারের জরজেট শাড়ি। আমি নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারছি না। এতো সুন্দর শাড়ি জাস্ট ওয়াও বলার মতো। আমি অপেক্ষা না করে আয়নার সামনে এসে নিজের গায়ের সাথে কালারটা মেস করে কিনা দেখতে লাগি।
মাথায় আসল আমার গাউন কই গেছে শাড়িটা চেয়ারের উপর রেখে আশপাশ দেখতে লাগি। আয়নার কোণায় এক কাগজে চোখ আঁটকে গেল।
আমি কাগজটা কৌতূহলদ্দীপ ভাবে নিয়ে পড়তে শুরু করি।
—-“ডেয়ার মাথামুটি দেমাগ বলতে তো তোর নেই।
তাই আজ একটা উওম কাজ করিস। গাউনের জায়গায় আমার দেওয়া শাড়িটা পড়িস।
আর না পড়লে তখন দেখবি আমি কি করি!
আমি কাগজটা হাতে মুচড়ে ছুঁড়ে মারি ড্রেসিং টেবিলের উপর।
—-” ভাবছিলাম ভালো কিছু লিখবে যাতে আজকের দিন আনন্দজনক হয় কিন্তু এই গলির মাল কখনো শুধরায় না। যখন দেখি শুধু থ্রেট দে। আর কি বলছে আমার মধ্যে দেমাগ নেই তাই না?
একবার দেমাগ দেখানো শুরু করলে তুই যাবি নিচে আমি উঠব উপরে হাহ।
আমিও কোন আবুলের কথায় কান দিচ্ছি। আমি গাউনই পড়বো। আমি গাউনটা কাবার্ডে রাখছে ভেবে কাবার্ড খুলে দেখি পুরো কাবার্ড শাড়িতে ভর্তি আমার জিন্স শার্ট টপস স্কার্ফ গাউন যা ছিল সব উধাও।
পুরো কাবার্ড চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি তখনই কাবার্ডের দরজায় আরেকটা কাগজ পেলাম।
সেখানে লেখা;
কি তোর ড্রেস খুঁজছিস পাবি না! সব গেছে ড্রেনে। হাহাহাহা।
কাগজে তার অট্টহাসি দেখে মাথায় চরম লেভেলের রাগ উঠে গেল। আমিও জিদ ধরলাম। আজ দেখাই দেবো উনার যেমন জেদ আছে আমারও তেমন জেদ আছে।
আম্মুর রুমে গিয়ে উঁকি মারলাম দেখলাম আম্মু নেই ওয়াশরুম থেকে পানির সাউন্ড আসছে তার মানে আম্মু ওয়াশরুমে।
না থেমে আম্মুর রুম থেকে নিজের ভরা ব্যাগ রুমে নিয়ে আসলাম। ব্যাগটা খুলে দেখি গাউন সাথে বিভিন্ন ধরনের টপস স্কাফ রাখা।
বাঁকা হেসে বলি—-“আপনি যদি দুই কদম আগে চলেন তাহলে আমি চার কদম আগে চলি। জানতাম এমন কোনো দিন আসবে যেদিন আপনি আমার সব প্রিয় জিনিস উধাও করে দেবেন কিন্তু আমিও কম কিসে? আগে থেকে ব্যাগ ভর্তি করে লুকায় রাখছি।
মনের মধ্যে বিজয় উল্লাসের মতো হাসি হেসে ব্যাগ থেকে নেভি ব্লু কালারের গাউন নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে গেলাম। এতোক্ষণ গোসল করে পরাছিলাম শেলওয়ার কামিজ।
নাজিয়ার কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।
আমি লেপটপ অফ করে ডান হাত দিয়ে কপাল কুঁচলাতে লাগি।
—-“বাহ মাই নাজুপাখি তো দেখি খুব ফাস্ট! আইম ইম্প্রেস। বাট বেব তুমি কদমফুলে চলো আর আমি যমুনা নদীর মতো বয়ে যায়। ফাংশনে তোমার নরম পাজোড়া ফেলবা বাকিটা ইতিহাস আমি গড়বো।
শয়তানি হেসে দাঁড়িয়ে গেলাম।
টেবিলের উপর থেকে কোর্ড নংটা আরেকবার আওতায় নিলাম। ফাংশনে কোর্ডটার খুব প্রয়োজন পড়বে। কোর্ড নং দেখে গায়ে ব্লেজার দিয়ে চুল স্পাইক করে বডি স্প্রে মেখে নিলাম।
—-“স্যা…..স্য….স্যারর ইমিডেটলি……হাঁফাতে হাঁফাতে।
……..চলবে……