ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব-১১,১২,১৩,১৪,১৫
লেখিকা: তামান্না(আল রাইয়ান)
পর্ব_১১
—“আরে হট ফিগারের নাজু বেবি তোমাকে তো ভারি মজাদার ডল লাগছে।
বাজে নজর দিয়ে কমপ্লিমেন্ট দেওয়ায় নাজিয়ার রাগ উঠে যায়। সে পিছে ফিরে দেখে রেসাল তার দুই বন্ধুর সাথে গাড়ির উপর বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এরই মাঝে রেসাল যখন দেখলো নাজিয়া আসছে তখনই মুখের খারাপ বুলি ফুটিয়ে দে।
নাজিয়া কিছু করতে চাইলে তার হাত ধরে থামিয়ে দে নিহা।
সে আমায় টেনে তার মাঝের থেকে টেনে নিয়ে যাই। আমি আড়চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে রেসালের দিকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে দেখে ভেতরে চলে যায়।
আমাদের ম্যাম জাহানারা সবাইকে লিড করতেছেন।
যেহেতু আমি আর নিহা ডান্স কম্পিটিশনে পার্টিসিপ্টে করলাম তাই আমরাও ম্যামের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।
—“দোস্ত তোর কি লাগে? আমাদের পার্টনার কাদের কে দিবে?
তার কথা আমিও ভাবতে লাগলাম। আজ পর্যন্ত কাউরে গায়ে ঘেষতে দি নাই অথচ নাহিল ভাইয়া কতবার গায়ে ঘেষাঘেষি করল তখন অস্বস্তি লাগে নি। বাট এখন যে কে হবে না জানি কার গা ঘেষতে হবে !
মনের ভাবনার ছেদ দিয়ে জাহানারা ম্যাম আমাদের ক্লাসমেট কে লাইনে দাঁড়াতে বলে।
নিহার সাথে বাকি সবাই মিলে লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের ফাংশন শুরু হতে আর বিশ-এিশ মিনিট টাইম ছিল। ম্যাম সব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের দেখতে গরজিয়াস লাগছে তাদেরকে আলাদা টিম পার্টনার হিসেবে সিপারেট করলেন।
আমাকেও স্পেশাল ড্রেসআপের জন্যে আলাদা করা হয় নিহাকে একটুর জন্যে নেওয়া হয় নি। তার ওয়ার্কি স্টাইল ম্যামের থেকে পছন্দ হয় নি বোধ হয় তাই উনি নিহাকে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সের টিমমেট করার জন্যে আলাদা করলেন। একে একে আমার সাথে তিনজন স্পেশাল ড্রেসআপের জন্যে টিমমেট করলেন বাকিদের ব্যাকগ্রাউন্ড কাপল হিসেবে টিমমেট করেন।
ম্যামের কথায় অবাকও হলাম আমাকে স্পেশাল হিসেবে সিলেক্ট করলো অথচ আমি খুব একটা সুন্দরভাবে রেডি হয়নি।
ডার্ক ব্লু গাউনের সাথে মেসিং অর্নামেন্টস ফেসে হাবিজাবি কিছু দেই নি হালকা সাজ দিলাম। কাজল লাগিয়েছি ঠোঁটে লাইট পিংক লিপবাম,,চুলগুলো সাইড করে স্ট্রেজ করে নিয়েছিলাম চুলের মাঝের একটা সিলভার স্টনের ক্লিপ লাগিয়েছি।
—“সো গার্লস তোমাদের টিম নির্ধারণ করা শেষ এবার তোমাদের ডান্স পার্টনার কে হবে?
আমার মাথায় প্রেশার পড়া শুরু করলো। না জানে ম্যাম কাকে আমার পার্টনার দেন।
কেনো জানি এখন নার্ভাস ফিল হচ্ছে। এতোক্ষণ রঙঢং মারলেও সিরিয়াস মোমেন্টে এসে যদি নার্ভাস হয় তাহলে কাম ছাড়ছে। কিভাবে কি ডান্স করব? ভয়ে তো ডান্সের স্টেপও ভুলে গেলাম।
—-“মিস নাজিয়া। ম্যামের ডাকে উনার দিকে সরু নয়নে তাকায়। উনি পেপারের মধ্যে নেমপ্লেট চেক করতে লাগলেন।
হুম মিস নাজিয়া ইউর ডান্স পার্টনার ইজ…….ঘোরভাবে নামটা উনি দেখছেন এতে আমার ভেতরে ভয়ে কাঁপুনি শুরু হচ্ছে। ইয়াপ ইউর পার্টনার ইজ নাহিল ইয়াদিস চৌধুরী।
—“ওয়াটটটট??? একপ্রকার চিৎকার দিলাম।
ম্যাম অভাক হয়ে তাকালেন শুধু তিনি না ক্লাসের স্টুডেন্ট ও তাকালো। হাবার মতো কাম করে বসছি উফফ! মনেই বলে মুখ ফুটে সরু গলায় সরি বললাম।
ম্যাম ওকে বলেই নাহিল ভাইয়াকে ডাক দেন।
আমার তো উনার নাম শুনেই বুঝতে পারছি। আজ আমার কের নেই ডান্স স্টেজে কি কি করবে তা স্বপ্নে দেখেই ফেলতে পারতেছি।
আমি আড়াল করে এক চোখ দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখি নাহিল ভাইয়াকে যা লাগছে না উফফ এতোই হ্যান্ডসাম কুল কেন উনি?
ব্লেক ব্লেজার গায়ে হাতের হাতা কিছুটা উপর করা সামনের চুলগুলো চোখের পাপড়িতে এসে নাড়াচাড়া করছে চাপদাড়ি গুলি যেনো উনার ফেসে একদম হুর ছেলের মতো লাগছে সবচেয়ে বড় কথা উনি হাসলে গালে টোল পড়ে এই দিকটা তো কখনো খেয়াল করিনি আমিও কেমন ! আজ পর্যন্ত নাহিল ভাইয়ার এতোটা কাছে থেকেও টোলটা লক্ষ করতে পারলাম না।
উনাকে মুগ্ধ নয়নে উপলব্ধি করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার ধারণা ছিল না উনিও যে আমার দিকে তাকাছেন। আমার সিক্স সেন্স আমায় সর্তকবাণীও দিচ্ছিল। তাও নিজের ভ্রম ভেবে পাওা দিলাম না। এখন তো দেখি ব্যাপারটা সত্যিই।
আমি মুখ ঘুরিয়ে দুই হাত দিয়ে নিজের পার্স চেপে ধরে মুচড়াতে থাকি।
—“Welcome Sir. We are grateful that you attended our event. জাহানারা ম্যাম হাত এগিয়ে ভাব নিতে থাকে। আমার তো অবস্থা ভেতরে আগুন ধরছে।
—“ম্যাম এতো কেন উতলাচ্ছে উনি হ্যান্ডসিপ না করলেও কি হাত এভাবেই রাখবে। উফ কেমন ! ম্যাম হয়ে নিজের স্টুডেন্টের উপর কুনজর। মন তো চাচ্ছে…….এ্যাহ আমার মন কেন চাবে? আমার কি জ্বলে নাকি? হুদাই চিল যা ইচ্ছা করুক গে। আই ডোন্ট কেয়ার। মনের মধ্যে আগুন নিভানোর মতো কথা ভেবে চুপ থাকলাম কিন্তু বেহায়া চোখ আর মন শুধুই ম্যামকে গিলে খাওয়ার ইচ্ছা জাগছে সাথে উস্টাইয়া উগান্ডা পাঠাতে বুক ধরফর করছে।
—“হ্যালো মিস নাজিয়া……কণ্ঠটা চিরচেনা নাহিল ভাইয়ার লাগছে। আমি চোখ বন্ধ করে আবার খুলে উনার দিকে ফিরে তাকায়। ম্যামকেও দেখে নিলাম। উনাকে মনমরা লাগছে তার মানে নাহিল ভাইয়া উনাকেই উল্টা ভাব দেখাইছে। তবে কে?
তুড়ি বাজিয়ে নাজিয়ার ধ্যান ভাঙ্গিয়ে দিলাম। জানি সে মনের মধ্যে আমাকে হাজার গালি দিয়ে ভরাচ্ছে জ্বেলাসটা বরাবরই হচ্ছে। এর অর্থ যে সে নিজেই বুঝতেছে না এর চেয়ে র্দুভাগ্য আর কি হবে আমার?
নিজের মনে হতাশ হলাম। বাচ্চা মেয়ে কি করব?
ভেবেই মুচকি হাসলাম।
নাহিল ভাইয়ার মনে লাড্ডু ফুটছে মনে হচ্ছে ওয়েট তোর মনের লাড্ডুর উপর মরিচীকা ধরাচ্ছি। আমি জোরে জাহানারা ম্যামকে ডাক দিলাম।
উনি সবাইকে নিয়ে মেইন ফাংশন হল রুমের দিকে যাওয়ার জন্যে বের হচ্ছিলেন আমার ডাকে সবাই আমার দিকে তাকায়।
—“হ্যা বলো নাজিয়া।
—“ম্যাম বলছিলাম কি নাহিল স্যারের সাথে আপনাকে মানাবে! কারণ আপনাদের ড্রেসআপ দেখেন খুব মেসিং হচ্ছে। আমার ড্রেসআপ আর উনার ড্রেসআপ নোট মেসিং। ডান্স হবে যখন কুল ফিলিং আসাটা খুব দরকার তাই না ম্যাম?
নাজিয়ার কথা শুনে চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়। কিন্তু শয়তান মেয়েটা আমার দিকে তাকায় নি। বুঝাবো বেব স্টেজে তো চলো বুঝাবো।
ম্যামও আমার কথায় নাহিল ভাইয়াকে পরখ করে নিল। উনাকে দেখে লজ্জামাখা ফেস করে মনের মধ্যে না জানি কি বললেন।
—“স্যার নাজিয়া ঠিক বলছে আপনি কি আমার!
ম্যামের কথায় নিজেকে সংযোগ রাখার চেষ্টা করছি। খুব খুব রাগ হচ্ছে। উনার পার্টনার শুধু ডান্সের জন্যই তো বললাম লাইফ পার্টনার তো আর বলিনি। এভাবে প্রপোজাল দিচ্ছে যেনো আজ বিয়েমন্ডপে বসবে লুচ্চি মাইয়া কুনাইকার।
নাজিয়ার কথায় ম্যাম হাত তো বাড়ালো আমিও পরক্ষণে স্বাভাবিক সেন্স করে বলি।
—-“ওয়াই নোট আপনার সাথে ডান্স করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। আজ আমরা মেসিং কালার করে ড্রেসআপ করেছি। আমার তো লাগছে আমার লাইফ পার্টনারও আপনি হবেন। যদি হোন তাহলে তো….আড়চোখে নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলি।
আমার বাসায় লক্ষি গৃহিনী চলে আসবে। ওওওও হাউ কিউট স্যার আপনি ! জাহানারা ডান গালে হাত রেখে মুচকি লজ্জার ফেস করে বলে।
উনাদের কান্ড দেখে রাগ চড়াই যাচ্ছে।
—-“এতোই ভালো লাগলে বিয়ের দাওয়াতও দিয়েন বলেই নাহিল ভাইয়াকে ভেংচি মেরে সাইড হয়ে চলে যাই।
করব না কোনো ধরনের ডান্স মান্স কি পাইছে আমি একটু বললাম কি উনারও রিয়েক্ট করা লাগছে! এটা কোনো ধরনের অমান্যতা। কাছে আসবে আমার আর বিয়ে করবে ম্যামকে যাহ মর তুই শালা গলির মাল এক নাম্বারের। বির বিরিয়ে নাহিল ভাইয়ার গৌষ্ঠি উজার করতে করতে হল রুমে এসে বসে পড়লাম।
পাঁচমিনিট পর হল রুমের লাইট অফ করে দিল। অন্ধকারের মধ্যে শুধু স্টেজে লাইটস অন করা হলো। মাথার উপর ফ্যান চালু করা হলো লো লেভেলে। জানালাও হালকা খুলা এতে ঠান্ডা বাতাস খুব একটা ভেতরে না আসলেও পরিবেশটা ঠান্ডার অনূভুতি দিচ্ছে।
আমি পিছের এক বেঞ্চে বসি। কারণ ইচ্ছে করছে না নাহিল ভাইয়া আর ম্যামের ডান্স দেখতে। শালি আজাইরা মন তুই বলছিস কেন এখন তো নিজেরই রাগ লাগতেছে।
আমি নিজেকেই কুঁচতে থাকি।
স্টেজে একের পর এক কম্পিটিশন চলতে শুরু করে।
—-“ওকে নাউ দ্যা নেক্সট কম্পিটিশন ইজ ডান্সিং। সো গাইস লেটস ইন্জয় দ্যা ডে ইয়োওওওও।
হোস্টের কথায় স্টুডেন্টস চিৎকার দিয়ে হৈ হুল্লায় মেতে উঠে। আমি নিরব হয়ে বসে থাকি। নিহাও ডান্স কম্পিটিশনে থাকায় গল্প করার মতো কাউকে পাচ্ছি না। মিহুও নেক্সট কম্পিটিশন সাইনটিফিক রিসার্চমেন্ট গবেষণায় বক্তব্যের জন্যে প্রেকটিস করছে। মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
স্টেজে কে কে আসছে কিছুই দেখছি না ফোন বের করে গাঁটাগাঁটি করতে থাকি।
এফবিতে লগইন করতেই দেখি লাইভ ভিডিও দিচ্ছে তারই এক ক্লাস্টমেট। আশ্চর্যজনক ব্যাপার ডান্সের জায়গায় দেখি নাহিল ভাইয়া মাইক আর হাতে গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
ফোন থেকে মুখ সরিয়ে স্টেজের দিকে তাকায়। এটা তো সত্যিই নাহিল ভাইয়া গিটার নিয়ে…..
নাজিয়াকে ড্যাবড্যাব তাকাতে দেখে নাহিল টেডি স্মাইল দিয়ে গাইতে শুরু করে।
?Na janey kab se
Ummedei kuch baki hai
Mujhe phir bhi teri yaad kyun ati hai
na janey kab se
Dour jitna tu mujhe pass teri mein
ab to aadat si hai muj ko aisay jinay
may zindagi se koi shikwa bhi nahi
hai?
নাহিল ভাইয়া গানের প্রতিটা জায়গায় আমাকে মিন করে শুনাচ্ছেন। যেনো গানটা আমার জন্যেই গাওয়া।
শুনতে বেশ ভালোই লাগতেছে।
উনার কণ্ঠে নিজের ভালোলাগা আহবান পাচ্ছি। সত্যি কি উনার জন্যে আমার প্রতি ভালো লাগা কাজ করে নাকি ভালোবাসা?
ভেবে ভেবে উনার গানের সুর শুনতে থাকি।
নাহিল প্রতিটা গানের লাইনে আড়চোখে নাজিয়াকে দেখছে।
Ab to zinda hon mein iss Niloy asman may.
Chahat aisi hai yeh teri mujh ko satae
Yaadein gehri hain itni dil doub jae
aur ankhon may yeh ghum num ban jae?
Ab toh aadat si hai
mujhko aisay jinay may
..
নাহিল ভাইয়া গিটার টা রেখে কানে ব্লুথ সেট করা দেখা যাচ্ছে। তিনি স্টেজ থেকে নেমে সোজা আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিল।
—“Do u wanna dance with me?
কিলার লুক দিয়ে টেডি স্মাইল দিলেন।
আমিও সাডেনলি হাত ধরলাম। মনের গভীরে শান্তি অনুভব হচ্ছিল।
নাহিল ভাইয়ার সাথে স্টেজে গিয়েই সং প্লেয়ার বয় গার্ন চালিয়ে দে।
ডান্স স্টেপ স্টার্ট করা হলো।
?aaaa hooo….sun sathiya
নাহিল ভাইয়ার কাঁধ ধরে একহাত এগিয়ে উনার হাত মিলিত করে উনার চোখের দিকে তাকায়।
mahiya barsa de ishqa ki syahiyaan
Rang jaaun,rang rang jaaun ri haari main
নাহিল নাজিয়ার পিঠ নিজের বুক বরাবর ঠেকে দুইহাত নাজিয়ার হাতের সাথে এক করে কোমর চেপে ধরে।
নাহিল ভাইয়ার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পড়ে।আর আমি সেই গরম নিশ্বাসের মধ্যে নিজেকে জড়াতে থাকি।
Tujhpe main jair jair jair jaun
Hoon piya bas teri mein
ho chhu le toh khari mein
(Toh khari mein……?)
আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল নাহিল ভাইয়া। দুই পা এক স্টেপ করে একবার উনি আমার এক হাত ধরে দূরে ঠেলে সেম পজিশনে আবার জোরে কাছে টেনে নিলেন। আমি উনার বুকের সাথে লেগে পড়ি। শান্তির প্রিয় জায়গা লাগছে।
Ho……sun sathiya
mahiyabarsa de ishqa ki
syahiyaan…..
নাহিল নাজিয়ার কোমর ধরে কোলে নিয়ে ধরে এতে নাজিয়া তার কাঁধে শক্ত করে চেপে দুই হাত খুলে দিল।
দশর্কগণ ডান্স পারর্ফোমেন্স দেখে খুব খুশি হয়ে করতালি দিয়ে উঠে।
আমি হাত এবার নাহিল ভাইয়ার কাঁধে রাখলাম উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়েই নিচে নামান।
জাহানার ম্যামের কথায় দুইজনের ঘোর কাটে।
আমরা স্টেজ থেকে সরে আসলাম। আমাদের যাওয়ার পর এক এক কাপলদের পারর্ফোমেন্স দেখলাম।
সবাই যার যার আসন গ্রহণ করল। আমি পিছের সিটে যেতে নিলে নাহিল ভাইয়া হাত ধরে উনার পাশের সিটে বসায়। আমাদের এভাবে কাছে বসতে দেখে অনেক মেয়ে জ্বলে পুড়তে থাকে।
তাদের এক্সপ্রেশন দেখে ইচ্ছা করছে তাদের পিক তুলে পোস্ট করি। ক্যাপশনে লেখা থাকতো “ওভার কনফিডেন্স রাখা বারণ!”?
কেনো না এই মেয়েরা নাহিলের সাথে বসার জন্যে পাগলামি করতো। কিন্তু আফসোস তাদের ভাবনায় পানি পড়ল।
মুচকি হেসে ম্যামের দিকে তাকায়। দুইমিনিট পরই বিশেষ অতিথি রেজাল্ট ঘোষণা করবেন।
দেখা গেলো বিশেষ অতিথি স্টেজে এসে একের পর এক কম্পিটিশনের রেজাল্ট ঘোষণা করার পর ডান্স কম্পিটিশনের রেজাল্ট ঘোষণা করলেন।
আমি আর নাহিল ভাইয়া একসাথে ফাস্ট পজিশনে আসলাম।
সবাই আবারো করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে থাকে।
আমাদের স্টেজে ডাকলে নাহিল ভাইয়া আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগে। তখন আবারো মিউজিক এ Sun sathiya mahiya গানটা প্লে হয়।
নিহা মিহু নাহিলের বন্ধু সিয়াম মিলে বেস্ট পার্টি দিলাম। নাহিল ভাইয়া এখন অদ্ভূত বিহেভ করছেন। স্টেজ থেকে নামার পর পরই ইগনোর করতে লাগলেন।
আমিও সেম করতে থাকি কিন্তু মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন এসে ভিড় জমায় কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে অভিমান
জম্মাছে কেনোই বা মনের হচ্ছে জানি না তবে বেশ কষ্ট হচ্ছে উনার ইগনোরনেস।
ফ্রেন্ডস মিলে কথা বলছি আচমকা উনি উঠে তাড়াতাড়ি হেঁটে বেরিয়ে যান। আমি কয়েকবার আটঁকায়। তাও আমার কথার উওর না দিয়ে ধমকিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন।
_____
নাহিল গাড়ির গ্লাস দিয়ে পিছের দিকে দৃষ্টি দিল। নাজিয়াকে কষ্ট পেতে দেখে তারই কষ্ট হচ্ছে। সে গাড়ি চালায় মনোযোগ দিয়েই ফিসফিসিয়ে বলে।
—-“আইম সরি নাজুপাখি আমার মিশনের স্টেপ আজ শুরু হবে। যেতে হবে তোমায় ফেলে হয়তো আবারো দেখা হবে না হয় তোমার স্মৃতি আজীবন আমার কাছে থাকবে। যদি আর না ফেরা হয় পরপারে অপেক্ষায় থাকবো। আমার কথা জানার পর আমার ভালোবাসা তোমায় শক্ত রাখবে, চলতে শিখাবে ইন-শা-আল্লাহ।
আল্লাহ হাফেজ।
………চলবে……..
পর্ব_১২
মিহু নাজিয়াকে বাহিরে কান্নারত অবস্থায় দেখে তেড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।
কেউ আসার সাউন্ড পেয়ে নিজের চোখের পানি লুকিয়ে ফেলি। স্কার্ফের উপরের ছোওটা অংশ দিয়ে চোখ মুছে পিছে ঘুরে তাকায়।
মিহু জিগ্গেস করে।
—“কি রে তুই কাঁদছিলি কেন?
সন্দেহের ভঙ্গিতে।
কেনো কাঁদছিলাম নিজেও জানি না কিন্তু নাহিল ভাইয়ার করা কাজে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে মিহু আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে বলে।
—“নাহিল ভাইয়া ছিল মনে হয়! তিনি কই? তোর সাথে ছিল না!
—“না কিছুক্ষণ আগে কল আসায় চলে গেছে।
আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।
মিহু অন্যকিছু জিগ্গেস করার আগেই আমি ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
—“কিছু তো হয়েছে দুইজনের মাঝে। নইতো নাজু কেন মন খারাপ করছে। আমার মন যতটুকু জানান দিচ্ছে নাজু নাহিল ভাইয়াকে ভালোবাসে। তাহলে বলে না কেন?
আহহহ চিমটি মারছিস কেন হারামী?
নিহা হুট করে এসে মিহুকে চমকিয়ে তার বাহুডোরায় চিমটি কাটে।
—“কি রে এখানে দাঁড়িয়ে কি জামাইয়ের বদনামি করতেছিস?
—-“তোর কি লাগে?
মিহু সরু নয়নে তাকিয়ে বলে।
—“আমার লাগে তুই এখানে দাঁড়িয়ে….মিহুর চারপাশ একবার ঘুরে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে বলে।
হিসু তো করবি না এমনেই কোনো ভুড়িওয়ালা পোলার উপর ক্রাশ খাওয়ার জন্যে খুঁজতেছিস!
নিহার কথার শুনে মিহু তাকে চড় মারার জন্যে তাড়াতে শুরু করে। নিহাও দৌড় লাগায়।
নিজেকে আয়নায় দেখে যাচ্ছি নাহিল ভাইয়ার জন্যে কান্না করায় চোখের নিচের আইব্লেক করা কালো রঙ মুছে কালচে দেখাচ্ছে, ঠোঁটের লিপবাম শুকিয়ে গেছে,চোখজোড়া ফুলা ফুলা দেখাচ্ছে।
আমি বেসিনে পানির টেপ চালু করে মুখ ধুয়ে নি। রুমাল দিয়ে মুখ মুছে নিজেকে বিবশ করে নিলাম।
—-“আপনি যেমন আমিও তেমন। আপনি বার বার আমাকে নিজ থেকে দূরে ঠেলে দেন। এবার আমিই আপনাকে দূরে ঠেলে দেবো। হবো না কখনো আপনার! তবে কেনোই বা অাপনার চোখে নিজের প্রতিচ্ছবিতে ভালোবাসা দেখতে পাই?
কেনোই বা ফিল হয় যে আপনি আমার সাথে কোনো এক অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। যে বন্ধনের টান সেই ছোটবেলা থেকে অনুভব হয়ে আসছে।
আমাদের মাঝে কি সত্যিই কোনো বন্ধন আছে নাকি এটি শুধু প্রকৃতির কোনো খেলা?
মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন এসে ভীড় জম্মাছে যেগুলোর উওর আমার কাছে নেই একমাএ নাহিল ভাইয়া ছাড়া।
একদীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ডোর ওপেন করেই সামনে তাকিয়ে দেখি।
______
—-“মিস কাজল আমার টিকেট,পেপারস সব ব্যাগে ঢুকিয়েছো?
কাজল সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগ টেবিলে রেখে বলে।
—“জ্বী স্যার মাএই করেছি।
—“হুম ওকে নাউ ইউ ক্যান গো।
নাহিল যেতে বলায় কাজল বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। নাহিল থেমে আড়চোখে কাজলকে যেতে দেখে নিজের ড্রয়ার থেকে রিমোট নিয়ে ডোর অটোমেটিক লকআপ করে দে এতে রুমটা সাউন্ডপ্রুভ হওয়ায় সুবিধা হলো।
নাহিল কিছুক্ষণ আগেই অফিসে এসে সব গুছাতে থাকে। নাজিয়ার সাথে ফাংশনে বেশিক্ষণ থাকতে পারল না। পার্টি মুমেন্টেই তার ফোনে জরুরি কল চলে আসে। লন্ডন থেকেই তার এক সহযোগী টিমমেন্ট যে কিনা হাইডেনম্যানকে খুঁজার টিমে আছে সেই লোক কল দিয়ে জানায়।
—-“Sir something went wrong here. You have to come to London on an urgent basis.
—-“Ok তবে শুন জিনিসটা পেয়েছিস?
—“ইয়াহ পাইছি বস তুমি এবার চলে আছো। বাকিটা তোমার আসার পরই কাজ সম্পন্ন হবে।
নাহিল লেপটপ অন করে একটা ফাইল খুলে। ফাইলের মধ্যে ওপেন হতে কোর্ড নং সো হলো। টাইপ করল কোর্ডটা। ‘M68438918’
এই কোর্ডটা ছিল সেই ফাইলের পাসওয়ার্ড।
সেটা লিখে ইন্টার করল।
দেখা গেলো ফাইলটা খুলতে দশমিনিট লাগবে। এতে সেও ফোন বের করে তার গোডাউনে চেক দেওয়া গার্ডকে কল দিল।
—-“ইয়েস স্যার।
—“হুম শুন এখন যা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনে রাখ আর মাথায় ঢুকা। কোনো ভাবেও যাতে ভুল না হয়।
—“ওকে স্যার।
—“নামাজের পর নাস্তা শেষ করেই ঠিক ০৭:৩০মিনিটে হলিক্রস রোড থেকে ++++++++
—“ওকে স্যার বুঝছি আপনার কাজ হয়ে যাবে।
—“হুম আর শুন মিসটেক যাতে না হয়।
—“নিশ্চিত থাকেন স্যার।
নাহিল ফোন কেটে লেপটপের দিকে তাকাতেই দেখে ফাইল খুলে গেছে। সে বাঁকা হেসে ডুকমেন্টারি প্রসেসকে কয়েকটা রের্কড হিসেবে বানিয়ে ছবি এডিট করে ফেলে।
ডুকমেন্টারি প্রসেস সেভ অপশনে ক্লিক করে নিজের পেনড্রাইভ এ সেন্ড করে নিল।
কেবিনের দরজায় নক পড়ায় নাহিল তড়িঘড়ি লেপটপ অফ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ডোর ওপেন করে।
মিস কাজল কে দেখে বিষম খেলো কিন্তু নিজের রুপে স্বাভাবিক বিহেভ করল।
কাজল এসে নাহিলের টেবিলে একটা ট্যাবলেট সাথে দুইটা জেলি মিক্স ব্রেড পানির গ্লাস ট্রের মধ্যে করে এনেছে।
সে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নাহিল এর দিকে তাকায়।
নাহিল ভাবার ভান করে বলে।
—“আপনি কি কিছু খুঁজছেন মিস কাজল?
কাজল শুনে ঘাবড়ে যায় সে আমতা আমতা করে বলে।
—“নো….নো স্যার আমি তো আপনাকে মেডিসিন দিতে এসেছি ব্যস। মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করে।
কাজলের হকচকিয়ে যাওয়াটা বেশ ভাবাচ্ছে নাহিলকে। সেও কাজলের উওরে ভ্যাবলেশনহীন ভাবে বলে।
—“হুম ওকে দেন আমি খেয়ে বেরিয়ে যাবো। আর শুনো একটা কাজ করতে পারবে?
কাজল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে —“জ্বী স্যার অবশ্যই।
নাহিল ট্রের মধ্যে থেকে একটু ব্রেড খেয়ে পেইনকিলার ট্যাবলেট খেয়ে নিল। হাত মুছে ওভারড্রপ থেকে একটা লেটার এনভেলপের মধ্যে ঢুকিয়ে এর উপর নাম লিখে কাজলের দিকে এনভেলপটা বাড়িয়ে দে।
কাজল এনভেলপটা নিয়ে দেখে এর উপর “নাজিয়া মাই নাজুপাখি” লেখা এরই নিচে বাসার এড্রেস লিখে দিলৌ।
কাজল ছলছল নয়নে নাহিলের দিকে তাকায়। কিন্তু নাহিল নিজের কাঁধে ব্যাগ ঠিকভাবে লাগিয়ে পড়তে পড়তে বলে।
—“লেটারটা আমার নাজুপাখির বাসায় পৌঁছে দিও।
কাজল শুনে লজ্জা না পেয়ে জট করে প্রশ্ন করল।
—“নাজিয়া কি…..ওয়েট নাজিয়া না ম্যাম বলবা তাকে ! আমি যেমন তোমাদের বস নাজিয়াও তোমাদের বস এজ সি ইজ মাই ওয়াইফ।
কথাটা নাহিল কাজলকে মাঝ কথায় থামিয়ে বলে।
কাজলের থেকে কথাগুলো কাটার মতো বিঁধল। সে মাথা নিচু করে বলে।
—“ওকে স্যার নাজিয়া ম্যামের বাসায় লেটারটা কি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেবো নাকি নিজ হাতে দিতে হবে?
—“Of course you will give the letter to my nazupakhi in your own hand.
—“হুমম। বলেই সে বেরিয়ে যায়। নাহিল তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
সে পকেট থেকে সেম এনভেলপের মতো আরেকটা এনভেলপ বের করল। সে মুখের সামনে ধরে বলে।
—“সব কথা হয়তো প্রকাশিত হয় না কিছু কথা গোপন থেকে যায়। তবে খুব শীগ্রই তোদের সবার গেম ওভার করতে আসবে এই নাহিল ইয়াদিস চৌধুরী। Very soon all of you die in my own hand.
এনভেলপটা পকেটে রেখে কেবিন লক করে বেরিয়ে যায়।
গাড়ির কাছে আসতেই ড্রাইভার দরজা খুলে দে। সে ড্রাইভারের হাতে আড়াল করে এনভেলপটা দিল। সে নিজের মাথা নাড়িয়ে কেউ না দেখে মতো এনভেলপটা কুরিয়ার বক্সে ঢুকিয়ে দিল।
নাহিল দেখে প্রশান্তির নিশ্বাস নিল।
ড্রাইভার বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
_____
—-“সরি আসলে আমার মন কোন দিকে ছিল বুঝতে পারি নি সরি……বলে আমি চলে যেতে লাগলেই মানুষটা আমার হাত ধরে থামায়। হাত ধরায় রাগটা চড়ে উঠতে গেলে দেখি বেস্টু নিহা আমার সামনে।
নিহা এসে আমার হাত ছাড়িয়ে বলে।
—-“দোস্ত কিছু মনে করিস না ইনি আমার কোম্পানির বস। লন্ডন থেকে এসেছে স্পেশালি তোর জন্যে।
ভ্রু কুঁচকে নিহার দিকে তাকিয়ে বলি।
—-“আমার জন্যে?
—“ইয়াপ আপনার জন্যে। নোইয়ামুল হাত এগিয়ে দিয়ে বলে।
আমার এই মুহূর্তে রাগটা মাথায় উঠে আছে। এক তো রেসালের বাজে কমপ্লিমেন্টের কারণে সেকেন্ড নাহিল ভাইয়ার করা কাজে এর্ট লাস্ট নতুন পোলাটার হাত ধরায়। আল্লাহ না জানে কোন পাগলদের মাঝখানে আমায় ফেলে রাখছেন।
আমাকে কিছু বলতে না দেখে নিহা নাড়া দে। ধ্যান ফিরলে আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে নোইয়ামুলের সেই স্বাভাবিক ভাবে হাত রাখা অবস্থায় দেখে মায়া হলো। তাও আমি হাত এগিয়ে দিয়েই চট করে সরিয়ে মাথার চুলে নাড়াতে থাকি।
ছেলেটা হাত মুঠো করে সরিয়ে নে।
মাথায় চুল ঠিক করতে করতে বলি।
—“করোনার টাইমে হাত মিলানো বারণ।
ভেটকিয়ে নিহার ডান হাতের বাহু ধরে তার সামনে থেকে সরে চলে যায়।
নোইয়ামুল তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
—-“Nothing else.But i will………রহস্যময় হাসি দিয়ে সে নিজের রাস্তায় চলে যায়।
—-“ঐ তুই এরাগেড়া মাইনষের লগে কেন কথা কস হ্যা?
নিহা নাজিয়ার কথায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে।
—“আরে উনি আমার বস।
—“বালের বস যেভাবে বলতেছিস তোর জামাই মনে হয়। বস শুধু অফিসে বাহিরে কিসের বস কিসের কি? তুই হয়তো বস মানিস কিন্তু যেভাবে মিশতে চাচ্ছে তার হাবভাব দেখে ঠিক লাগছে না।
—“তোর আবালের মন এমনই বলবে আরকি।
—“এই এই একদম আমার মনকে গালি দিবি না হু।
—“আচ্ছা মা বাদ দে এবার বাসায় যায়।
নাজিয়া নিহা মিলে বাসার জন্যে রওনা দিল।
প্লেনের মধ্যে নাহিল নিজের সিটে বসে বেল্ট লাগিয়ে নিল। এখনো প্লেন চালু করতে একঘন্টা টাইম আছে।
বাকি পেসেঞ্জারা নিজ নিজ মতো ম্যাগাজিন দেখছে কথা বলছে কেউ ঘুমাচ্ছে।
আমি সিটে মাথা লাগিয়ে হেলান দিলাম।
চোখ বন্ধ করলাম। চোখের অন্ধকার জায়গায় নাজিয়ার হাস্যউজ্জ্বল মায়াবী চোখজোড়া সেই চোখের মণিতে নিজের ছবি,তার গোলাপি রঙের কাঁপান্তর ঠোঁট, রেশমি কালো ঘন চুলের সেই সুবাস নাকের মধ্যে এখনো ঘ্রাণ হিসেবে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
মনের মধ্যে নাজিয়ার প্রতিবিম্ব ফুটে উঠলেও স্পর্শ করতে পারছে না।
—-“জানো নাজুপাখি জীবনটা বড্ড কঠিন । তুমি যা চাইবে সেটা সরাসরি নাও পেতে পারে। সময়……শুধু সময়ই বলতে পারে যে তোমার সামনের পথ কেমন হবে?
কেমন হবে সেই পথটা!
ভয়ংকর যেখানে থাকবে একরাশ মৃত্যুর বেদনা দুঃখে ভরা জাল নাকি সহজতর পরিবেশ যেখানে থাকবে একরাশ খুশির বাহার সুখেভরা পথ।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে সময় লাগবে। কিন্তু বিশ্বাস রেখো নাজুপাখি তোমার #ভিলেন_অফ_দিওয়ানাপান
এতো জলদি শেষ হবার নয়।
…….চলবে……
পর্ব_১৩ (কষ্টের রাত)
।
।
নাজিয়া জানালার ধারে গ্রীল ঠেসে দাঁড়িয়ে বাহিরের জোৎস্না রাতের অনুভূতি নিচ্ছি। পুরো থমথমে হয়ে যাওয়া রাতটা যেনো চাঁদের আলোয় ভরে গেছে। গাছের ডালে দাঁড়িয়ে লক্ষি পেঁচা ঝিম ঝিমিয়ে ঘুমাচ্ছে। শহরের প্রতিটা বাসার লোকজন লাইট বন্ধ করে দিয়ে নিঝুম পরিবেশ করে ফেলেছে।
তাও এই প্রকৃতির মাঝে আমি উনাকে দেখতে পাচ্ছি। উনার প্রতিচ্ছবি যেনো আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে।
গায়ে কাঁথা জড়িয়ে রেখে হাতে থাকা ফোনের কাছে তাকায়। একটা মাএ কল কবে আসবে সে আশায় যেনো আমার রাতটা যাচ্ছে।
আমার প্রায় চোখ লেগে যাওয়ার মতো হচ্ছে। কবে যে ঘুমে তলিয়ে যায় জানি না তবে মনে হচ্ছে হয়তো এখনই ঘুমিয়ে পড়ব চোখ জ্বালাতন করছে পানি পড়ছে অজান্তে। ফোনটা অন করে দেখি কোনো কল বা মেসেজ আসল না।
—“আচ্ছা নাহিল ভাইয়া কি রেগে আছেন? আমি
কি কোনো ভুল করেছি। কেনোই বা উনি আমাকে ইগনোর করলেন। উনি কি জানেন না উনার নাজুপাখি ইগনোরনেস সহ্য করতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আপনার ইগনোরনেস সহ্য হয় না। একদমিই না।
আপনি যতই মারেন বকেন আমার ভালো লাগে। হ্যাঁ প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন যে আপনার সেই মাইর বকা ধমকি শুনতে মন চাই। কই আপনি নাহিল ভাইয়া?
বিরবির করেও লাভ নেই ফোন আসছে না। আমিও জানালার পাশ থেকে উঠে অফ করে বেডে গা হেলিয়ে দিলাম। শুতেই চোখ বন্ধ হয়ে যায়। সারাদিন ফাংশন নিহার সাথে ঘুরাঘুরি করে বাসায় আসতে আসতে এশার পার হয়ে যায়। তবুও নামাজ ওয়াক্ত মতো পড়ে ফেলেছিলাম বলে সমস্যা হয় নি। এতো ধকল গেছে যে রাত শেষে বেডে শুয়া মাএই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
____
—-“হ্যালো জেন্টালম্যান। মে আই সিট হেয়ার? একটা বয়স্ক মহিলা লাঠি ভর করে দাঁড়িয়ে থেকে নাহিলকে জিগ্গেস করল।
প্লেন ছাড়লো দিনের পাঁচটায় আর এখন বাজে রাতের দশটা। আরো দুই ঘন্টা লাগবে লন্ডনে পৌঁছাতে। আমিও খেয়াল করলাম পাশের সিট লাগে। আমি সশ্রদ্ধে উনাকে বসার সুযোগ করে দিলাম। নিজে উঠে উনাকে ধরে বসিয়ে আমিও বসে গেলাম।
মহিলাটা বাহিরের দৃশ্য দেখে দেখে ঝিমুছে আমিও ঘুমাতাম তবে চোখ বন্ধ করলেই নাজিয়ার কথা মনে পড়ে।
নাজিয়ার পিক বের করলাম মানিব্যাগ থেকে।
তার ছবিতে চুমু দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলাম ঘুমের জগৎ এ। মহিলাটা ছবির মেয়েটাকে বোধ হয় দেখে ফেলল।
তিনি পিকটা দেখার অনুরোধ করলেন আমি দেখায়।
মহিলা নাহিলের হাত থেকে পিকটা নিয়ে দেখে বলে।
—“ওয়াও সো কিউট দ্যাট প্রিটি গার্ল।
আমি মুচকি হেসে বলি।
—“হুম থ্যাংকস।
—‘ওয়াটস হার নেইম?
—“নাজিয়াতুল জান্নাত আরভী।
—“ওয়াও বিগনেম আই লাভ ইট। ডু ইউ লাভ দ্যাট গার্ল?
—-“ইয়াহ ভেরি মাস।
—-“সি এজ ইউর ওয়াইফ অর নট?
—“মাই এভরিথিংক।
মহিলাটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের মনকে ভানাতে রাখি।
ফোকার্স করতে থাকি মিশনে। মিশন ইম্পসিবলকে পসিবল করার দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
প্লেন আকাশে উড়া অবস্থায় ইলেকট্রনিক ব্যবহার করা নিষেধ। না হলে লন্ডনে সহযোগীকে কল করে প্লেনিং এর ব্যাপারে জানাতাম।
আমি কিছুটা সময় নিরিবিলি হয়ে নাজিয়ার স্মৃতি আঁকড়ে রেখে তাকে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
লন্ডনে পৌঁছে ইমেগ্রেশন পাড় হয়ে
বাহিরে এসে দেখি দুইটা কালো BMW ব্যান্ডের কার অপেক্ষা করছে। আমি ব্যাগ নিয়ে এলেই এক গার্ড এসে হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়িতে রাখে। আমি সব গার্ডদের ইশারা করে চলে যেতে বলি। তারা চলে গেলে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এক থেকে তিন কাউন্ট করতে থাকি। তিন বলতে না বলতেই তার সামনে সেম BMW ব্যান্ড রেড কার এসে দাঁড়িয়ে যায়। সেখান থেকেই তার সহযোগী বের হয়ে নাহিলের সাথে হাত মিলায়। তারা কুশলবিনয় করতে করতে গাড়ি উঠে রওনা দে তাদের # মিশন_অফ_হাইডেনম্যান এর ডিটেলস জানতে।
—-“ওয়েলকাম স্যার ওয়েলকাম…..সব অফিস স্টাফস এসে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আমাকে দেখতেই ফুলের বুকি দিয়ে স্বাগতম জানায়। আমি সবার থেকে বুকি কালেক্ট করে নিজ নিজ ভাবে কাছে মনোযোগ দিতে বলি। এমনেই এমন স্বাগতম করলো।
আমি আমার সহযোগিকে নিয়ে ডার্ক হাইড রুমে চলে আসি। ভেতরে ঢুকে রুমটা লক করে লাইটস অন করলাম। রুমটার স্পেশালিটি হচ্ছে সবার বাসায় যেমন ডিপ লাইট লাল আর সাদা লাইট বেরি ব্যবহৃত হয় সেখানে ডার্ক হাইড রুমে ব্লু ব্লেক মিক্স করে লাইট ইউজ করা হয়। যাতে চোখের যতিশক্তি ঠিক থাকে। সবগুলো যেনো স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। বড় এক রুম বলতে হবে। সেখানে সেল্ফস আছে, বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামে ভরপুর। আমি আমার চেয়ারে বসার জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে গেলে। সেখানে থেকে স্কেনার মেশিন বের হয়ে আমার চোখ,নাক,জিহ্বা আর হাত লাল রঙের বাতি মেশিন আমার দিয়ে বের হয়ে আমার পার্টস গুলিতে পড়ছে। Scan শেষে আপনাআপনি এক প্রসেস ওর মাধ্যমে করোনা মুক্ত সেফটি ডান বলে।
সেই মেশিনটা সহযোগিকেও স্কেন করে নিজের জায়গায় ফিরে যায়। আমি পকেট থেকে পেনড্রাইভ বের করে কম্পিউটারে চালু করি।
পেনড্র্রাইভের কাজ আপনাআপনি হতে থাকে। আমি আর আমার সহযোগি একসাথে চেয়ার টেনে বসি।
একসেকেন্ড পরই ফাইলের মধ্যে সেট করা ছবিসহ ডিটেলস স্লাইড সো হতে শুরু করে।
সব রেকর্ডস দেখে তার টিম পার্টনার সেহেল বলে।
—-“স্যার আপনার কি মনে হয়? এটা কি সেই হবে নাকি অন্য কেউ?
নাহিল দুই হাত বুকের উপর গুঁজে ভাবান্তর হয়ে বলে।
—“যদি মাছকে পানি থেকে দূরে রাখা হয় তাহলে সে ছটপট করে মারা যায় আবার যদি সে তার পাশেই পানি পেয়ে যায় তাহলে তার ফুলকারন্ধ্রের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে পানির মধ্যে নেমে পড়ে। মানে বুঝেছিস?
—“না এটুকু বুঝলাম যে মাছ পানি ছাড়া বাঁচে না। আর একটু পানির উপরে মাছ উঠে পড়লে পানির অভাবে মারা যায়।
তার কথায় নাহিল বাঁকা হেসে বলে।
—-“আমাদের মিশনটাও ঠিক এরকমই। মাছ হচ্ছে হাইডেনম্যানের জীবিত প্রজা আর পানি হচ্ছে হাইডেনম্যান যে কিনা তার প্রজাদের জীবন কেড়েও নিচ্ছে আবার উপহারও দিচ্ছে।
—“তার মানে আমাদের থেকে প্রজাদের আটকাতে হবে।
আমি চটজলদি হ্যা বলি। সেহেল বুঝতে পারল সেও মুচকি হেসে নাহিলের দিকে তাকায়।
নাহিল পেনড্রাইভটা অফ করে দিয়ে সব ফাংশন অফ করে দিয়ে বলল।
—“আমার শিকারিকে আনা হয়ছে?
সেহেল এক হাত বুকে রেখে আরেক হাত খুলে দিয়ে বলে।
—-“আপনার শরীরের শক্তি বিকাশ ঘটাতে শিকারিকে বহুত আগেই এনে রাখা হয়েছে।
নাহিল নিজের শার্টের কলার থেকে নিচ থেকে দুইটা বোতাম খুলে হাতের হাতা ফোল্ড করে উপরে তুলে নিতে নিতে তার শিকারির রুমের কাছে যেতে লাগে।
_____
—-“নাজু নাজু কই তুই দরজা খুল তাড়াতাড়ি উঠ কান্ড হয়ছে ইয়ারররর কই তুই?
কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে
দরজার মধ্যে জোরে জোরে বারি দিতে থাকে নিহা।
এদিকে আমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছি। আমার ঘুমের টনক নড়ে ফোনের রিংটোনে। কল আসছে বুঝতে পেরেই চট করে ফোন ওপেন করে দেখি নিহা মিসকলের উপর মিস কল মেরেই যাচ্ছে।
আমি টাইম দেখে শোকাহত হলাম মাএ দিনের নয়টা বাজবে। আজ শনিবার দেখে হলিডে পালন করব ভাবছি কিন্তু না এই নিহার বাচ্চির সারাক্ষণ আমার মাথা খাওয়া ছাড়া আরো কোনো কামই নাই।
আমি ফোন বন্ধ করে কানে বালিশ চেপে ধরলাম। নিহা কল আর উচ্চস্বরে ডাকতেই আছে। আমি বাধ্য হয়ে কাঁথা সরিয়ে দরজার করাঘাতে উঠতেই হলো। বিরক্তিকর ফেস করে তাকায় নিহার দিকে।
কিন্তু দেখেই আমার ঘুম উধাও হয়ে যায় চোখের সামনে নিহার হাতের রক্ত টগবগ করে ফ্লোরে পড়ছে। তার চোখমুখের নাজেহাল অবস্থা হলো। পুরো মুখ ফুলে চোখজোড়া সরু হয়ে আছে। তার কাপড়ের অর্ধেক অংশ ছিঁড়েও আছে। নিহার এরকম পরিণতি দেখে মনে কু ডাকতে লাগে। খারাপ খারাপ ভাবনা মাথায় আসতে থাকে। কোনো আমি আমার বান্ধপী কে হারিয়ে ফেলব না তো এই ভেবে বুকের ভেতরে নাহিলের যাওয়ার কষ্টের সাথে নিহারও কোনো সেই অবস্থা হলে।
আমি নিহাকে ধরে রুমে নিয়ে দরজা লক করে দিলাম। সোফায় বসিয়ে তার হাতের ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দেই। নিহা তখনও কান্না করে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলি।
—” কি হয়েছিল তোর সাথে? কে করেছে তোর এমন অবস্থা তুই শুধু নামটা বল বাকিটা আমি দেখছি।
নিহা কান্না থামিয়ে চোখ থেকে পানি ফেলিয়ে ফেলিয়ে হিচকি টানছে। সে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমার গা ঠেসে বসে।
—-“ওয়েট আগে পানি খা তারপর বল।
আমি পানির গ্লাস তাকে এগিয়ে দিলে সে খেয়ে এক দীঘাশ্বাস নিল।
—-“দেখ চুপ থাকবি না। আমি আছি আর শুধু এটা ভাবিস না আমরা একা। মিহু সিয়াম আর তোর নাহিল ভাইয়াও আছে। তুই শুধু মুখ খুলে বল।
নিহা বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট মার্কা ফেস করে বলে।
—“আমি যখন রাতে তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাস্তার মধ্যে থেকে যেতে থাকে তখন আমার সামনে এই সময়ে এক ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড় করায়। আমি নিজের গাড়ি ঘুরাতে গেলে। সেই গাড়ি আবারো থামিয়ে দিল। আমি ছাড়ানোর জোর ব্যবস্থা করি কিন্তু লাভ হলো না। যে মানুষটা আমায় ধরেছে সে কিনা তার কাছে আমার শক্তি কিছুই না। আমি চাইলেও পারতাম না।আমার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় সে আমার আঁচল ছিঁড়ে………বাকিটুকু বলতে না বলতেই কান্নায় নাজিয়াকে ধরে ফেলে।
আমি তার কান্ন থামিয়ে বলি।
—“নাম কি নাম বলছে?
—“জানি না আমি কিন্তু তার গাড়িতে একটা ব্লেক কালারের চিহ্ন ছিল। সেটা দেখলে বুঝা যায় সে কোনো এক গুন্ডা যে কিনা এমন কাজ করেছে। নিজের পশুত্ব প্রমাণ দিয়েছে। এখন আমি আর কাউকে এই মুখ দেখাতে পারব না রে দোস্ত। আমার ইজ্জত শেষ করে দিসে। আমি আঝ থেকে কলঙ্কিনী নামে পরিচিত হবো।
নিহার বেহাল অবস্থা যে করেছে তার অবস্থা আমি নরক বানিয়ে দেবো যে করেই হোক। মাথায় রাগ চড়ে বসে।
—-“শুন মানুষটার কোনো কিছু তো তোর কাছে পরিচিত মনে হয়ছে বা চেনা লাগছে।
নিহা কোনো মতে ভেবে বলে।
—“একটু মনে আছে তার গাড়িতে এইচ ওয়ার্ড লেখা ছিল।
—-“এইচ দিয়ে কি বুঝা যায়?
আর কিছু দেখেছিস?
নিহা ভেবে বলে।
—-“এইচ ব্লেক চিহ্ন এর মাঝে গোলচক্রের মতো ড্রয়িং করা ছিল। সেখানে একটা ছন্দ মনে হয় লেখা ছিল।
ঠিক মনে আসছে না রে ইয়ার।
আমি তাকে পেইনকিলার ট্যাবলেটটা খাওয়ে দিয়ে বলি।
—“শুন মনে পড়বে এখন মাথা ব্যথা কমে গিয়ে বলতে পারবি।
নিহা চেষ্টা করেও ভাবতে পারল না। সে হতাশাময় ফেস করে নাজিয়ার দিকে তাকায়। নাজিয়া তার অবস্থা বুঝতে পেরে কথা বাড়ালো না। তাকে নিজের বেডে শুয়ে দিল। নিজে ফ্রেশ হয়ে দরজা বন্ধ করে ড্রয়িং রুমে গিয়ে নাস্তা করে নিল।
সে চোখ তুলে আব্বু আম্মুর রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা লক। আমি এদিক ওদিক তাকাতেই মনে পড়ে যায়। এশারের দিকে আসার পর আব্বু বলেছিল উনারা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে পাঁচদিনের জন্যে বাসাটা আমাকে দেখতে বলল। আমিও শান্তি পেলাম নিহার দেখভাল করতে পারব ভেবে।
বেশ দশ পনেরো মিনিট পর দরজায় বেল বাজল। আমি ভ্রু কুঁচকে টাইম দেখে নি। এগারোটার সময় চলছে।
—-“এ সময় কে আসতে পারে?
আমি দরজার কাছে এসে মিরর পুল দিয়ে দেখি একজন কুরিয়ার বয় দাঁড়িয়ে আছে। আমি দরজা খুলে বলি।
—-“জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন?
—-“জ্বী ম্যাম আপনার জন্যে কুরিয়ার এসেছে। বার্তা বাহক একটি এনভেলপ পাঠিয়েছেন আপনার নাম আর এড্রেসে। এটা নেন আর এখানে সই করে দেন।
আমি এনভেলপটা হাতে নিয়ে ফাইলে সই করে দেই। কুরিয়ার বয় চলে গেলে দরজা লক করে দিয়ে সোফায় বসি।
এনভেলপটা খুলব তার আগেই ফোনে কল আসল। এনভেলপটা ড্রয়ারে রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখি আম্মুর কল।
কল উঠাতেই আম্মু বাসায় সাবধান ভাবে ঠিকভাবে থাকার কথাবার্তা বলতে লাগলেন আমিও বললাম উনাদের যেনো নিজেরা খেয়াল রাখে।
ফোন কাটার পর মাথায় আসল নাহিল ভাইয়াকে বলে দেখলে কেমন হয়?
উনি সমাধান দিতে পারবে সিউর। নিহা ন্যায় পাবে। তার সাথে হওয়া অন্যায়কে আমি ছাড় দেবো না। যেই এই ষড়যন্ত্র করেছে তার মৃত্যু নিজ হাতে দেবো।
যে আমার বেস্টুর উপর আঘাত দিছে তার শেষ না দেখা পর্যন্ত শান্তিতে বসব না। I will do for my friendship.
যে করেই হোক এর আগে এইচ দিয়ে কিসের নাম বুঝানো হয়েছে তা জানতে হবে।
নিহার সাথে জায়গাটার মধ্যে খুঁজতে যেতে। যেখানে রেপ করা হলো সেখানে কোনো না কোনো ক্লু তো ছেড়েই দিবে কালপ্রিট। যদি কোনো রহস্য টহস্য বের হয়।
এসব ভেবে বিরবির করে আমি নিজের মতো টাইম পাড় করতে থাকি। নিহার ঘুম শেষ হবার অপেক্ষায়।
কিন্তু সবগুলির মাঝে নাজিয়া কি জানবে আসল কালপ্রিট কি হবে? সে তো এটাও জানে না তার আশপাশে বিপদের জাল বিছানোর হচ্ছে………
.চলবে…..?
পর্ব_১৪
—“খবর কি ট্রান্সমিট প্রজেক্ট অফ বোম কবে পৌঁছাবে ইরশাদ?
হাইডেনম্যান চেয়ারে বসে রাগান্বিত সুরে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে উড়িয়ে বলে।
ইরশাদ ঠিক অপজিটে ড্রিংকক্যাফের মধ্যে গ্লাসে ওয়াইন ঢালছে।
হাইডেনম্যানের কথা শুনে। সে তার কাছে এসে তার দিকে গ্লাস এগিয়ে দিল। হাইডেনম্যান গ্লাস হাতে নিয়ে ড্রিংক করতে লাগে।
ইরশাদও সোফায় বসে গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বলে।
—-“স্যার কড়া গার্ডেও আমার দোস্ত ট্রান্সমিটের কথা জানিয়েছে।
—“কি জানতে পারলি আমাকে জানাস নাই কেন?
—“সিউর ছিলাম না তাই।
—-“বল কি জানতে পারছিস? কেমন আছে আমার ট্রান্সমিট বেবি।
—“স্যার ট্রান্সমিট খুব তাড়াতাড়ি লন্ডনে ট্রান্সফার করা হবে।
কথাটা শুনেই হাইডেনম্যান ভ্রুকুঞ্চিত করে জট করে দাঁড়িয়ে যায়।
সে ইরশাদের মাথায় গার্ন ট্রেগ করে বলে।
—-“কি বলছিস? আমার ট্রান্সমিট লন্ডনে ট্রান্সফার করা হবে? আরে গাধা এটা এখানে ব্লাস্ট করার জন্যে সেটা লন্ডনে নিয়ে গেলে তো আমার সব প্লেনে পানি পড়ে যাবে। যেভাবেই হোক সেটা এখান থেকেই চুরি করতে হবে। যেভাবে পারস কর চুরি কর,ডাকাতি কর,রেপ কর,জালে ফাঁসা না হলে মেরে ফেলতে হলে মেরে ফেল। তাও ট্রান্সমিট যেন লন্ডনে না যায়।
ইরশাদ সব বুঝলেও লন্ডনে না নিয়ে যাওয়ার কথায় কিছুটা অবাক হলো। সে অবাক হয়ে বলে।
—“স্যার লন্ডনে গেলে কি সমস্যা? সেখানে আমাদের ওয়াল্ড ডার্কফিড কোম্পানি আছে যা বাংলাদেশে ব্লেক কোম্পানি আর লন্ডনে ডার্ক ফ্যাক্টরি নামে জানা। আমাদের কাজ তো আরো সহজ হবে।
হাইডেনম্যান জোরে দেওয়ালে ঘুষি দে। এতে ইরশাদ কেঁপে উঠে চুপ হয়ে যায়। হাইডেনম্যান চেয়ারের হান্ডেল জোরে চেপে রাগী চোখে ইরশাদের দিকে তাকায়।
অস্ফুট সুরে বলে।
—“লন্ডনে আমাদের কাজ আছে কোম্পানি আছে বিশাল বাংলো ফ্লাট আছে সব কি ব্লাস্ট হওয়ার জন্যে বানাইছি? না না ভোগবিলাসিতার জন্যে বানাইছি। যাতে ভোগ করতে পারি। ইচ্ছা তো করে পুরো লন্ডনবাসীদের নিজের প্রজা বানিয়ে ফেলি। তা তো স্বপ্নই থেকে গেলো।
But Bangladesh will be destroyed very soon.
ইরশাদ নিজের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।
সে উল্টা পা পিছে ঘুরে চলে যেতে লাগলে হাইডেম্যান তাকে থামিয়ে দে।
—-“নাহিল চৌধুরীর কি খবর? আজকাল কোথায় আছে সে? তার খবর কি?
ইরশাদেরও মনে এসে গেলো। সে হাইডেনম্যানের দিকে তাকিয়ে বলে।
—“নাহিল চৌধুরী লন্ডনে গেছে। নিজের কোনো এক ইম্পোটেন্ট কাজের জন্যে।
হাইডেনম্যান খুশিভরা নয়নে উল্লাস করে বলে।
—-“এবার হবে গেমের মতো গেম। আমার ট্রান্সমিট আমার কাছে চলে আসবে, টাকা ব্যাংকে। কোটিপতি হতে বেশিদিন নেই। দিন দুনিয়া সব আমার হাতের মুঠোয় চলবে। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।
হাহাহা শয়তানের মতো হাসতে থাকে।
ইরশাদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পনেরো মিনিট পর হাইডেনম্যান গায়ে হুডি পরে বেরিয়ে যায়।
ইরশাদ নিজের রুমে এসে তার বন্ধু মেনেককে কল করল।
সে ফোন উঠালে বলে।
—“কি রে কবে সব কাজ হয়ে যাবে?
—-“টাইম লাগবে।
সামনে টিভির মধ্যে পাবজি খেলতে থেকে বলে।
—“আর কত টাইম লাগবে? এতো দিন তো পাইছিস?
—“আরে বাল টাইম তো লাগবেই। কারণ ট্রান্সমিট পাঠানো এতো সহজ নাকি?
—“দেখ আমি জানি তুই গেম খেলতেছিস। সো গেম অফ কর কাজ কর না হলে তোর ক্যাশ কম হবে।
—-“ওয়েট। কালকে কাজ হয়ে যাবে। আমার ক্যাশ যাতে সব পাই ঠিক টাইমে। না পেলে তোর কের নাই।
মেনেক এর কথায় বাঁকা হেসে ইরশাদ।
ইরশাদ হুম বলে কল কেটে দিল। মেনেক গেম রেখে নিজের টেবিলে বসে কম্পিউটার চালু করে।
—“এই হলো নাহিল স্যারের আইডি। কিন্তু পাসওয়ার্ড পাবো কিভাবে? চেঞ্জ করে ফেলি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট এ চেঞ্জ করি। তাহলে নাহিল স্যারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আমার কাছে আছে সেটা দিলেই হবে। (এক্টিভেইট করে ইন্টার এ চাপ দিল)
—“ইয়াহ কাম হ গেয়া। আপ পেসা আনা বাকি হে।
মেনেক নিজের ওভারড্রপ থেকে একটা প্লাস্টিকের পেকেট বের করে। পেকেটা টেবিলের উপর রেখে সেখান থেকে টিস্যু বের করে। টিস্যুর মধ্যে সাইট্রিক এসিডের স্প্রে ছিঁটিয়ে নিল। তারপর স্ক্রিনের উপর বসিয়ে দে। স্ক্রিনের উপর বসাতেই ট্রান্সমিটের ডোর ওপেন হয়ে যায়। তার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। সে ভেতরে ঢুকে আগে চেক করে নিল কোনো ইলেকট্রিক শক আছে কিনা। কারণ নাহিল প্রতিটা সিকিউরিটি গার্ড কড়া করে এতে হতে পারে ডোরের ভেতরেও কোনো ইলেকট্রিক আছে।
মেনেক খেয়াল করল সব ঠিকিই আছে। সে ট্রান্সমিটের কাছে এসে ট্রান্সমিট উঠিয়ে নিয়ে নকল সাইজের ট্রান্সমিট আসলটার জায়গায় বসিয়ে দে। আসলটা নিয়ে বাহিরে রেখে ডোর অফ করে দেখে। বাহির থেকে নকল ট্রান্সমিট ঠিক আসল ট্রান্সমিটের মতোই লাগছে
মেনেক শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
______
—-“স্যার প্লিজ আমায় ছেড়ে দেন আমি কিছুই করিনি যা করেছি শুধু রাগের বশে করেছি।
রেসাল মুখের মধ্যেই বলল। হাত জোড় করতে পারছে না।
কিন্তু নাহিলের হিংস্র রুপে তার করা কাজের ক্ষমা সে দিচ্ছে না।
—” মিনতি করছিস এবার আরো মাইর খা। বলেই নাহিল তার চোখমুখ ফেটে যাওয়ার মতো ঘুষি মারতে থাকে।
রেসাল বেচারা দেওয়ালে সাথে লেগে আছে। সে একবিন্দুও নড়তে পারছে না। শুধু কাতড়াচ্ছে। তাকে দেওয়ালের মধ্যে দড়ি বেঁধে আঁটকে দিয়ে ছিল।
সেহেল বাহিরের সিটে বসে আড়চোখে টাইম দেখছে। মাঝে মাঝে ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে পড়ছে আবার কফির মধ্যে চুমুক দিচ্ছি।
—“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে আহা। মারতেছে স্যার আনন্দ পাচ্ছি আমি ওয়াট এ ফানি মুমেন্ট। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে সেহেল।
এক স্টাফ পানি খেয়ে খেয়ে যাচ্ছিল কিন্তু বক্সিং রুম থেকে শব্দ আসায় ভেতরে যেতে গেলে সেহেল তাকে থামিয়ে দে।
—“ভাই রে ভাই ভেতরে ঢুকিস না বাঘ মানুষকে খাচ্ছে তুই গেলে তোরেও খেয়ে দিবে।
সেহেল লোকটাকে তার পাশে বসিয়ে কাঁধের থেকে ময়লা ঝেড়ে দেওয়ার মতো নেড়ে নেড়ে ন্যাকামি দেখাতে থাকে।
লোকটা অবাকসূচক ভঙ্গিতে সেহেলের দিকে তাকায়। অবশ্যই লোকটা সেহেলকে চিনে কারণ সেহেল হলো ম্যানেজমেন্টার আর নাহিল হলো বস।
সেহেল দেখল লোকটা তার দিকে অদ্ভুত জিগ্যেস স্বরুপ তাকিয়ে আছে।
সে টেডি স্মাইল দিয়ে বলে।
—-” বাঘ মানুষ কেন বলছি বুঝছিস?
লোকটা ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। সেহেল হতাশ হয় কিন্তু পরক্ষণেই তার মাথায় বুদ্ধি আসল যতক্ষণ না নাহিল স্যার রুম থেকে বের হয় ততক্ষণ এই লোকটার সাথেই গল্প করব।
—“তাহলে শুনেন আমি বলি। সেহেল বলেই নিজের কলার ঠিক করে বলতে শুরু করে।
—“নাহিল স্যার ম্যামের জন্যে চিঠি পাঠিয়ে চলে আসেন এরপোর্টে কিন্তু সেখানে উনি একা ছিলেন না সাথে ছিল এই বদমাইশ রেসাল। রেসাল কিভাবে আসলো জানেন?
লোকটা পুনরায় না জানায়। আমি বলি….(.সেহেল) হয়ছে কি রেসাল ম্যাম কে খুব ডিস্টার্ব করতো লাইক টিজ করতো। বাজে কমপ্লিমেন্ট করতো। তাও শুধু ম্যামকে না অনেক মেয়েকেই এভাবে টিজ করতো রেগিং দিতো। পুরো ডিটেলস খুঁজে কি পেলাম জানিস? সে এক মেয়েকে রেপও করেছিল। কিন্তু বাপ কোটিপতি তো তাই পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছেলেকে উধার করে ফেলায়। তাকে অফিসের টাইমে কিডনাপ করতে বলে নাহিল স্যার। উনার কথা মতো বেডাকে উঠিয়ে আনা হয়ছে। হলিক্রস রোডে চায়ের দোকান ছিল সেখানে রেসালকে বসে চা খেতে দেখে গার্ডস। তখনই কাজ ফিনিশ।
এবার বল কিছু বুঝছিস?
সেহেল লোকটার মুখের দিকে তাকায়। লোকটা চোখ বড় করে ব্যবলাকান্য়ের মতো তাকিয়ে আছে যেনো কিছুই বুঝতে পারে নি। সেহেল এর সেকেন্ডবার জিগ্গেস করলে লোকটা বলে।
—-“What’s language you talk right now?
সেহেল ভ্রু কুঞ্চিত হালকা মুখ হা করে থাকায়। তার এখন মাথায় বারি মারতে মন চাচ্ছে। সে এতোক্ষণ বাংলায় বলছে অথচ লোকটা হচ্ছে আমেরিকান।
—“বাল বোকা বেকিংসোডা তোরে আমি কত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছি আর তুই হালা আমেরিকানই হতে পারলি। Are you American?
(সেহেল লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে)
লোকটা ইয়েস বলে জবাব দিল সেহেল দাঁড়িয়ে যায় লোকটাও তার সাথে দাঁড়িয়ে যায়। সেহেল চোখ ঘুরিয়ে গলা ঝেড়ে বলে।
—-“You may go.I will talk you later.
লোকটাও হাবার মতো চলে গেল। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সেহেল বিরবির করে বলে।
—“বাল বোকা বেকিং সোডা । শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট আচ্ছা স্যারের কাম কি শেষ? চিল্লানি শুনছি না যে। সেহেল দরজা খুলে ভেতরে উঁকি মারে। দেখল নাহিলের হাত থেকে রক্ত বেয়ে বেয়ে ফ্লোরে পড়ছে। সে তড়িঘড়ি ফাস্ট এইট এনে নাহিলকে বসতে বলে। নাহিল রেসালকে আধমরা করে ফেলে রাখছে। রেসালের গায়ের অর্ধেক চামড়া ছিঁড়ে গেছে। ফ্লোর তো রক্তান্ন হয়ে গেছে।
সেহেল রক্ত মুছতে মুছতে বলে।
—“স্যার একটা কথা জিগ্গেস করি?
—“হুম বল। গম্ভীর কণ্ঠে বলে। মনের মধ্যে নাজুপাখির কথা ভাবতে থাকে।
—“রেসাল ম্যামের সাথে কি করেছিল?
না মানে কি এমন বলেছিল।
—“যাই বলছে খুব খারাপ বলছে শুধু আমার নাজুপাখি না বাকি মেয়েদেরও সেমভাবে ইভটিজিং করছে রেসাল। ওর পরিণতি খারাপ হবে। ওরে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট দে। এতোক্ষণ তো আমার মাসুকাকে খারাপ নজরে দেখার জন্যে মারছি এবার সত্য কথা না বললে ডাইরেক্ট এনকাউন্টার। তার পরিবারে কে কে আছে?
সেহেল নাহিল এর গায়ের সব রক্ত মুছে দে। একটা শার্ট আর পেন্ট দিয়ে ওয়াশ হতে বলল। কারণ তার পরিদান করা জামাটার মধ্যে রেসালকে মারার ফলে তার রক্ত লেগে গেছে জামার মধ্যে। নাহিল গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে আসে নিজের কেবিনে। সেহেল রেসালের বডিটা গার্ডকে বলে মেডিক্যাল এ নিতে পাঠায়।
কেবিনে আসলে সেহেল বলে।
—“স্যার রেসালের এক মা আছেন আর কেউ নাই। কথাটা শুনে খারাপ অনুভব হলো নাহিলের। কিন্তু রেসালের করা কাজটা ভালো মানের ছেলেদের কাজ না। কিন্তু তার মায়ের কথা ভেবে রেসালকে বন্দি রেখে ঢ্রিঢমেন্ট করাতে বলে। সেহেল জট করে বলে কাজ ডান। নাহিল বলে।
—“এতো জলদি?
—“স্যার আমি তো জানতাম আপনি পরে ট্রিটমেন্টের কথাটা বলবেন তাই আগেই কাজটা রেডি রাখছিলাম। এখন ট্রিটমেন্ট চলতেছে রেসালের।
নাহিল মুচকি হেসে গুড বলল। সেহেলকে উদ্দেশ্য করে বলে—“এগুলো রেসালের মাকে পাঠিয়ে দে সাথে একটা চিঠি লিখে দিস।
সেহেল বেরিয়ে যায় কাজটা করতে।
নাহিল দুই হাত একএিত করে থুতনির নিচ বরারব রেখে ভাবে।
—“এবার রেসাল আমাকে ভয় পাবে আমার কাম আরো সহজ হয়ে গেলো এই হাইডেনম্যানকে খুঁজা এখন কোনো ব্যাপার না।
______
—“এখন তোর শরীর কেমন লাগছে ?
নাজিয়া নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
নিহার চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব চলে এসেছে। পেইনকিলার খেলেও শরীর ঠিক হবে কিন্তু তার মানসিক অবস্থা ঠিক হতে সময় লাগবে। আমি আস্তে আস্তে নিহাকে ধরে উঠিয়ে বসালাম।
—“আমাকে এক গ্লাস পানি দে।
নিহা ভাঙ্গা কাতর গলায় বলে।
আমি মাথা নেড়ে গ্লাসের উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে গ্লাসটা নিয়ে নিহাকে খাওয়ায় দেই।
—“সুইসাইড করলে কেমন হয়?
আনমনে নিহা কথাটা বলে মাথা নিচের দিকে করে রাখে। আমি গ্লাস রেখে হঠাৎ থমকে যায়। আমার বান্ধবীর মুখে কথাটা শুনে যে পরিমাণ রাগটা মাথায় চড়ে বসলো তার চেয়ে দ্বিগুন ভয়ে হৃদস্পন্দন উঠানামা করছে।
ঠাসসসস নিহার গালে চড় বসিয়ে দিলাম। সে গালে হাত দিয়ে সেভাবেই মাথা নিচু করে ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগে। আমি তাকে জড়িয়ে বুকে নিলাম। পারছি না নিজের বান্ধবীর এই কষ্টটা সহ্য করতে।
যেই বান্ধবী আমায় হাসাতে সারাদিন কল নইতো আড্ডায় মেতে উঠতো তার মুখে এমন কথা শুনে আমারই ইচ্ছা করছে মরে যেতে।
আমি নিহার চোখের পানি মুছে তার দুই গাল ধরে নিজের মুখ বরাবর করে বলি।
—“আমার দিকে দেখ আমার চোখের দিকে। সুইসাইড নামক জঘন্যতম পাপের কথা যেন দ্বিতীয় বার তোর মুখে না আসে। যদি আনিস তাহলে নিজ হাতেই তোকে মেরে জেলে যাবো।
তুই আমার বেস্টু বুঝছিস !
বেস্টু তোর কিছু হলে আমার কি হবে কখনো ভেবেছিস? তোর সাথে যেই বা করছে এই অন্যায় কাজটা ওয়াদা দিলাম তাকে তোর সামনে এনে গিরগিটিয়ে মারব যাতে জীবনে আর কোনো মেয়ের সাথে যেনো অসভ্যতামি না করে।
নিহা হয়তো আমার কথা শুনে কিছুটা আশ্বাস ভরসা পেলো সে আমায় জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে।
—“আমি জানি ইনশাআল্লাহ তুই আমার সাথ ছাড়বি না আমার অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবি।
আমি তার হাত ধরে মাথা নাড়লাম। সে মুচকি হাসল তার হাসি দেখে বুকের মাঝে প্রশান্তি অনুভব করলাম।
—“নিহা তুমি কই নিহা দরজা খুলো নাজিয়া….কোনো এক ছেলের রাগান্বিত কণ্ঠ শুনে…..
………..চলবে……..
পর্ব_১৫(রহস্যভেদ_০১)
।
সিয়াম আর মিহু কে দেখে আমরা দুইজনই থমকে যায়। আমি নিহার সাথে তাদেরকে বসতে বললাম।
সিয়াম তো উওেজিত হয়ে পড়ে। বার বার জিগ্গেস করেই যাচ্ছে।
—“নাজু প্লিজ বল নিহার সাথে কে করেছে কোনো ক্লু কি পেয়েছিস?
আমি নিজের মাথা ডানে বামে নেড়ে না জানায়। নিহা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলাতে লাগল। আমি আড়চোখে তাকে দেখে সিয়ামকে শান্ত কণ্ঠে বলি।
—“দেখ দোস্ত আমাদের আগে ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় ক্লু খুঁজতে হবে না হলে কালপ্রিট কে জানতে পারব না?
আমি নিহার থেকে জায়গাটার লোকেশন নিয়ে সিয়ামের সাথে বেরিয়ে পড়ি। মিহুকে নিহার সাথে থাকতে বললাম। যাতে নিহার কোনো প্রয়োজন হলে সে বিনা দ্বিধায় সাহায্য করতে পারে মত।
সিয়ামের গাড়িতে উঠার আগে একবার বাসার চারপাশ তাকিয়ে নিলাম। হঠাৎ মনে হচ্ছে কেউ আমাকে দেখছে। আমার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
কারো হাতের স্পর্শে ধ্যান ফিরল। সিয়াম আমার সামনে এসে বলে।
—“কি যাবি না? আমি এদিক ওদিক তাকাতাকি করতে থাকি। সিয়াম হয়তো ভাবলো আমি নিহার কথা চিন্তা করছি। সে শান্ত্বনা স্বরুপ আমাকে বলে।
—“চিন্তা করিস না মিহু নিহার সাথে আছে। কিছু হবে না।আর জায়গাটার মধ্যে যেয়ে আছি। সব ঘটনার মূল পেয়ে যাবো।
মাথা নেড়ে তার গাড়িতে বসে পড়লাম।
____
—“What? How is this possible?
ট্রান্সমিট চুরি হয়ে গেলো আর তোরা কি ঘুমের ঘোরে গার্ড দিছিস?
নাহিলের কথায় সিকিউরিটি গার্ডস মাথা নিচু করে নে।
নাহিল কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের সাথে কথা বলছে।
দুইহাত বুকের উপর রেখে পায়চারি করছে মাঝমধ্যে কপাল চুলকানি দেই। ভেতরে ভেতরে তার রাগ চওড়ায় গেছে কিন্তু এখন রাগের বশে নয় ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে না হলে অন্য কিছু ঘটে যেতে পারে ভেবে সে বলে।
—“গায়েস শুনো যা বলব ঠিক সেটাই করবে। Game is already started. Check the CCTV footage and confirmed who is the rubber?
নাহিলের কথায় গার্ড গিয়ে সিকিউরিটি ক্যামেরা চেক করে কিন্ত সেখানে দেখল ক্যামেরা চুরি হওয়ার মুহুর্তে অফ ছিল। এই কথা নাহিলকে জানালে। সে হু হা করে হাসতে থাকে। কমিশনারসহ বড় বড় অফিসারস নাহিলের হাসির কারণ বুঝছে না।
তারা অবাক হয়ে থাকিয়ে আছে নাহিলের দিকে।
—“গায়েস কোথায় সার্চ করেছো?
—“স্যার ফোটেজ চেক দিছি।
—“ওহ তার মানে ঐ যে দেওয়ালে লেগে থাকা ক্যামেরা সেগুলো চেক দিলা! যাক তোমারাও বোকা বনে গেলে।চোরও ডাবল বোকা বনেছে।
—“মানে? কমিশনার অবাক নয়নে বলে।
—“মানেটা আমি আসলেই বলব।
কমিশনার আসাদ রুম থেকে বের হয়ে কেবিনে প্রবেশ করলেন। ফোন বের করে নাহিলকে কল দিল।
নাহিল গার্ডের সাথে কথা শেষ করে কমিশনারের কল পেয়ে মুচকি হেসে হ্যালো বলে।
—“নাহিল তুমি আসবে তাহলে মিশনের কি হবে?
অস্ফুট সুরে চিন্তিত মনোভাবে বললেন।
—“স্যার মিশনের জন্যেই আসব।
—“তোমার কথায় এমন কেনো লাগছে মিশন
এখন এখানেই সম্পন্ন করবে!
—“ইয়েস স্যার দেশে আসাটা এখন খুব জরুরি। তবে এখন না দুইদিন পর আসা হবে। এর আগে আমি চাই সে একটু বুঝুক। শেষ কথাটা নাহিল নিচু গলায় বলে।
কিন্তু আসাদ কথাটা কিছুটা শুনতে পান। তিনি বলেন…
—“বুঝলাম না।
নাহিল হকচকিয়ে বলে।
—-“No no, Sir nothing।
—“হুম কিন্তু মিশন প্লেঞ্জ কেনো করছো?
নাহিল বাঁকা হেসে কমিশনারকে —“+++++
এবার বুঝছেন স্যার?
—“Im proud to take you in our Special Detective Team. Well done and i want it will well done.
নাহিল উওরে মুচকি হেসে দিয়ে কল কেটে দিল।
সে তার টিমমেট সেহেলকে ডাক দিল। সেহেল আসলে তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তার টার্গেট মিশন এজামস হাউস।
এজামস হলো ডার্ক কোম্পানির মালিক। তার কোম্পানি চলছে অনেকদিন ধরে। আজ পর্যন্ত উনাকে কেউ দেখে নি।
কিন্তু গতকালই উনার বাসায় যাওয়ার জন্যে এপ্লিকেশন করেছিল। আর সেটা ভাগ্যবশত একসেপ্ট করা হলো। তবে অবাককর বিষয় হলো বিনা কিছু বলে কোনো এক দেশে ঘুরতে গেছেন আপাত লন্ডনে নেই। সেহেল আর নাহিল ছন্দবেশি হয়ে এজামের বাসায় আসল।
এজামের বাসার মেইড দরজা খুলে পরিচয় চাইলো।
সেহেল আর নাহিল বানিয়ে পুষিয়ে নিজেদের পরিচয় দে এজামের পূর্বপরিচিত বন্ধু হিসেবে। মেইড কথাটা এজামকে কল করে বলতে চাইলে নাহিল উল্টা উনাকে নকল এজামের ভয়েস মেইল শুনায়। যেই মেইলে বলা হয়ছে।
—“They are my friends. So mini you will treat warmly.
মিনি হলো মেইড মেয়েটার নাম। এজামের ভয়েস মেইল শুনে মিনি তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দিল। উনাদের বসতে বলে মিনি খাবারের আয়োজন করতে কিচেনে যায়। এই সুযোগে নাহিল সেহেলকে ব্লুটুথ অন করতে বলে যাতে সে মিনির কাজের ইনফোর্রমেশন দেই। নাহিল দৌড়ে উপরে গিয়ে দেখল চারটা রুম সামনে। সে ভাবতে থাকে কোন রুমটা এজামের হবে।
—“What the…..থাক বলব না পাঠকগণ নারাশ হবে। তার চেয়ে ভালো কাজে ফোকাস করি। এই এজামের বাল কি?
চারটা রুম দিয়ে কি করে! এখন কোন রুমটা হবে। কোমরে হাত দিয়ে রুম চারটা পরখ করতে থাকে। এরই পাশে সেহেলের কাছ থেকে মিনির কথা শুনতে থাকে।নাহিল হতাশ হয়ে পা উল্টাতে গেলেই তার চোখে পড়ল বিশেষ এক ক্লু। সে দরজাগুলোর সামনে গিয়ে দেখলো। চারটা রুমের মধ্যে আলাদা আলাদা কোর্ডনাম্বার দেওয়া। এই কোর্ড নাম্বার তো কোথায় জানি পড়ছিলাম।
নাহিল ভাবতে থাকে। তখন তার খেয়ালে আসল ।ম্যাগাজিন এ পড়েছিলাম…..ইয়েস রাইট ম্যাগাজিনে এজাম নিজের কোর্ড নাম্বারের কথা বলেছিলাম।
সে তড়িঘড়ি ফোন বের করে এজামস ম্যাগাজিন সার্চ দিলো গুগলে।
এজামে ম্যাগাজিন চেক দে। সাথে সাথে কোর্ড নাম্বারটা পেয়ে যায়। এই কোর্ডটা দেখার জন্যে সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তার মানে আমার সন্দেহ ঠিকই প্রমাণ হলো। এবার গেম ওভার করার টাইম। সে কোর্ডটা চার রুমের দরজার সাথে মিলিয়ে দেখে।শেষ দরজার সাথে কোর্ড নাম্বার মিলতেই সে দরজায় কোর্ডটা লিখে। সাথে সাথে ডোর ওপেন হয়ে গেলো।
রুমটা ভেতরে বেশ সুন্দর ভাবেই গোছানো আছে। নাহিল তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি দিয়ে বিরবির করে বলে।
—“হাহ আলিসান বাড়ি রুমের সৌন্দর্য সবকিছুই ত চোরের বহন করা। সে সময় নষ্ট না করে কাবার্ড ড্রেসিং টেবিল ড্রয়ার খুঁজতে থাকে।
উফ কিছুই তো পাচ্ছি না। কোনো গোপন কিছু তো থাকার কথা। তার নজর কাড়ল কাবার্ডের নিচে তালাবদ্ধ এক ড্রয়ারে। সে নিচে ঝুঁকে তালাটা দেখে নিজের পকেট থেকে ক্লিপ বের করে। সেটা দেখে টেডি স্মাইল দিয়ে বলে।
—“মাঝে মাঝে নাজুপাখির জিনিসও আমার কাজের কাজ করে দে। তালাটা খুলি। চোরামি তো একটু আধটু আমিও জানি। অব…..শ.(তালায় ক্লিপ ঢুকিয়ে নেড়ে নেড়ে খোলার চেষ্টা করে)..অবশ্যই খুলবে…..খুলে গেছে। সে দেখল বিভিন্ন ফাইলস রাখা। সে সব ফাইলস দেখতে লাগে। আর সেহেল জানায় মিনির কাজ শেষ তাড়াতাড়ি যেনো আমি চলে আছি। আমিও তাড়াতাড়ি এজামের পরিচয় ফাইলটা আসলেই কি সত্যি কিনা খুঁজতে থাকি। তখন রেড কালার ফাইলটা হাতে নিয়ে শিরোনাম দেখল পরিচয়পত্র। সে ফাইল খুলে দেখে এজামের পরিচয়পত্র ফোনের মধ্যে ক্যামেরাবদ্ধ করে নিল। রুমের সবকিছু ঠিকঠাক করে ডোর লক করে উপর থেকে উঁকি দিয়ে দেখে সেহেল ইশারা করে নিচে আসতে বলে। মিনি চায়ের ট্রে নিয়ে আসছে আমি শিড়ির পাশে থাকা ফিলার ধরে নিচে নেমে দৌড়ে এসে সেহেলের পাশে বসলাম। মিনি আমাকে হাঁফাতে দেখে সন্দিহান ভঙ্গিতে বলে।
—“Anything wrong Sir?
—“No mam.Im fine just feeling crazy. সেহেলের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে শয়তানি হাসি দিল। মিনির দেওয়া ভোজনে কিছু ভোজ করল তারা।
এরপর বের হয়ে অফিসে চলে আসে।
_____
—“সিয়াম জায়গাটা সত্যি অদ্ভুত জঙ্গলি টাইপ।
সে আমার কথায় হুমম বলল। সেও আশপাশে কোনো গাড়ি আছে কিনা খুঁজতে থাকে। ”
দোস্ত আমার লাগছে না এখানে কোনো ক্লু পাবো?”
সিয়াম বলে হতাশাময় ফেস করে আমার দিকে তাকায়। আমি তার কাঁধে হাত রেখে বলি।
—“নিহাকে ভালোবাসিস?
সিয়াম শকড খাওয়ার মতো হা করে তাকায়। আমি তার ফেসের রিয়েকশন দেখে হাসতে থাকি।
সে কিছুটা লজ্জার মত ফেস করে মাথার চুল চুলকাতে থাকে।
—“আসলে আমি…….সিয়ামকে মাঝ কথায় থামিয়ে বলি।
—“জানি সব নিহাও তোকে খুব ভালোবাসে কিন্তু তুই ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে দিবি ভেবে বলতো না। তবে এখন তোর থেকেই নিহাকে পুনরায় আমাদের নিহায় নিয়ে আনতে হবে। কারণ তার সাথে জঘন্যতম কাজ হওয়ায় সে তোকে দূরে ঠেলে দিতে পারে তাই তুই ওর সাথে সাথে থাকবি।
সিয়াম ভয়ার্ত ফেস করে বলে।
—” না না নিহা আমাকে দূরে ঠেলতে পারে না। আমি ওকে ভালোবাসি। তো কি হয়ছে তার রেপ হয়ছে আমি বিয়ে করব তার জীবন আমি শুধরিয়ে ঠিক করে দেবো কিন্তু কলঙ্ক শব্দটা তার নামের সাথে লাগতে দেবো না।
সিয়ামের কথায় খুশি হলাম। আমিও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
রাস্তা অনেক পাড় হওয়ার পর দুইজন হাঁফিয়ে পড়ি। গাছের পাশে বসে পানি খেতে লাগি। সিয়াম পানি খেয়ে পাশে একটা কুড়েঘর দেখতে পাই। সেটা দেখেই আমাকে নিয়ে সেখানে যায়।
কুড়েঘরে আসতেই আমাদের চোখ কপালে উঠার মতো হলো। কুড়েঘরের ভেতরে একটা ব্যান গাড়ি ঢুকিয়ে রাখা হয়ছে। আমি সিয়ামকে বাহিরে পাহারা দিতে বলে ব্যান গাড়িটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকি। নিহার কথামতো কোনো গোল চক্রের মতো চিহ্নে ‘H’ ওয়ার্ড আছে কিনা?
ব্যানগাড়িটা কালার হয়ছে যার কারণে কোনো লগো দেখা যাচ্ছে না। আমি হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। হাতে কালারটা লাগল দেখে নিশ্চিত হলাম কালারটা এক দুইঘন্টার আগের লাগানো তাই এখনো শুকায়নি। এই সুবাদে আমিও কালপ্রিটের চালাকির উপর পানি ঢেলে দিলাম। মানে ব্যান গাড়ির উপর পানি ঢেলে দিলাম। পানি পরতেই কালারগুলো আপনাআপনি মুছে গলিয়ে নিচে পড়তে থাকে।
এরই মাঝে আয়নার এক পাশে লগো দেখা যায়। আমি গ্লাভস পড়ে মুছে দেখি
—“এই ব্যানেগাড়ির মধ্যে নিহাকে রেপ করা হয়ছে।
আমি গাড়ির ডোর ওপেন করে দেখি নিহার গলার স্কার্ফ পরা চোখে একটুর জন্যে জল চলে আসল। তাও নিজেকে সংযত রেখে গাড়ির আনাছে কানাছে সব চেকিং দিতে থাকি।
ভাগ্যের কি মহৎ চমৎকার হাতে নাতে পেয়ে গেলাম এনভেলপ।
এনভেলটা খুলে দেখি একটা চিঠি সাথে ভয়েস রের্কডার মেশিন।
আগে চিঠিটা খুললাম। সেখানের লেখাটা দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছালাম। নাহিল ভাইয়া বড় বড় অক্ষরে আমাকে ভালোবাসি লিখলো। কিন্তু এটা তো মুখেও বলতে পারতো। ভেবে পাওা না দিয়ে রেকর্ডার অন করি।
—“দেখেন মিস্টার নোইয়ামুল আপনার কথামতো এতোদিন অফিসে চাকরি করেছি। নাহিল স্যার বুঝতেও পারে নি। যে আমি কাজল সরলতার পিছে বেইমানি করতেছি। আপনি এই লেটারের মেয়েকে শেষ করে দেন। বাকিটা আমি দেখে নিবো।এই মেয়েটা সব অধঃপতনের মূল। এই থাকতে আমি নাহিলকে পাবো না। যেভাবেই হোক শেষ করে দেন আর ছবি আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আবার এটা জিগ্গেস করিয়েন না ছবি কোথায় পেলাম! ছবি আমি নাহিল স্যারের ফোনের ওপেন স্ক্রিনে দেখছি। So no more agreement. Done the work and inform me first..
আমার মাথায় সব কথা শুনে গোলাটে লাগছে।
—“ভাইয়া আমাকে এতো পছন্দ করে তা হলে কেনোই বা আমাকে দূরে ঠেলে দিতো।আমি সিয়ামকে ডেকে সব বললাম। সিয়াম বুঝতে পেরে বলে।
—“তার মানে নিহা যে রাতে রেপ হলো ওর জায়গায় তুই রেপ হওয়ার কথা ছিল। শীটটট! অনেক বড় চক্রান্ত মনে হচ্ছে রে।
আমি কর্ণপাত না করে ভাবান্তর হয়ে পড়ি।
সকাল থেকে সব কথা মনে করতে করতেই মনে পড়ল সেম এনভেলপ বাসায় একটা আসছিল।
সিয়ামকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোজা বাসার জন্যে রওনা দিলাম।
মিহু দরজা খুললে আমি ভেতরে এসেই এনভেলপটা ড্রয়ার থেকে বের করে খুললাম। একটা ফাইল আর চিঠি পেলাম। এনভেলপ টেবিলের উপর রেখে হাতে ফাইল নিয়ে খুলে……..
…….চলবে….