ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_১৬_১৭_১৮_১৯

0
2616

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_১৬_১৭_১৮_১৯
লেখিকা_তামান্না
পর্ব_১৬

ফাইলটা দেখে আমি থমকে গেলাম। এই আমি কি দেখছি? এটা কি সত্যি নাকি অন্যকিছু? মনে হচ্ছে যেনো কোনো স্বপ্ন এটা বাস্তব নাও হতে পারে। সিয়াম কৌতূহলী জিগ্গেস করে।

—“নাজু কি এটা? কিছু বলছিস না যে?
আমি রিটার্ন জিগ্গেস করলাম।
—“নাহিল ভাইয়া কি বিবাহিত!
আমার কথা শুনে সিয়াম অবাক হয়ে তাকায়। হয়তো ভাবছে আমি কিভাবে জানলাম।

—“নাজু জানলো কিভাবে?
সিয়াম কোনো ভাবে কথাটা ঘুরানোর চেষ্টা করতেই আমি তার হাতে ফাইলটা ধরিয়ে বললাম। বাহানা খোঁজার কোনো দরকার নেই। এই ফাইল সব প্রশ্নের উওর দেখো।
আমার কথায় সিয়াম ফাইলটা নিয়ে দেখে চোখজোড়া গোল করে ফেলে।

—“এই সার্টিফিকেট কি সত্যি নাকি আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে?
সিয়াম কোনো প্রকার আমতার ভঙ্গি নিক্ষেপ না করে সরাসরি সিরিয়াস মুড নিয়ে নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।

—-“দেখ নাজু নাহিলকে খারাপ ভাবিস না সে তো তোর ভালোর জন্যেই কাজটা করেছে। এই ব্যাপারটা আমি আগেই জানতাম নাহিল নিজেই বলছে। তুইও তো নাহিলকে পছন্দ করিস তাতে সার্টিফিকেট দেখে তোর তো খুশিতে নেচে উঠা উচিত।

মিহু আর নিহা আমাদের কথা বুঝছেই না। নিহার জ্বর এসেছে তাই গলা কিছুটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে গিয়েছে। সে ধীর গলায় বলে।
—“নাজু কি লিখা আছে ফাইলটায়?

আমি নিহার দিকে অসহায় ফেস করে তাকিয়ে বলি।
—-“দোস্ত তোর দোস্তের বিয়ের সার্টিফিকেট।
—“ওও আচ্ছা…….Wait what????
মিহু সহ নিহা চোখ বড় করে চিল্লিয়ে উঠে।
সিয়াম ফাইলটা তাদের দেখায়।
ওরাও অবাক হয়ে গেলো কবে নাহিল নাজিয়াকে বিয়ে করেছে দেখে।

মিহু তো খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলে।
—“আমাদের নাজু তাহলে নাহিলের বউ আগে থেকেই হয়ে আছে। বউ থাকতে শালিকাদের কি আর জামাইয়ের উপর কুনজর দিতে দিবে।
দুষ্টুমিপূর্ণ ভাব নিয়ে।

কিন্তু আমি এসব কথা নিয়ে না ভেবে চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। যাওয়ার আগে সিয়াম মিহুকে নিহার খেয়াল রাখতে বললাম। রুমে এসেই মাফুজ আঙ্কেলকে কল দিলাম। উনি বিজি ছিলেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি যোহরের সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে খুঁজাখুঁজি করতে করতে শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অযু করে নিলাম।

পনেরো মিনিট পর নামাজ পড়ে জানালার দিকে তাকায়। তীব্র দুপুরের আলোর রশ্নি বাসার মধ্যে প্রবেশ করছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। মুচকি হেসে জায়নামাজ উঠিয়ে ভাঁজ করে ঠিকভাবে কাবার্ড এ রেখে বেঁধে দিতে গিয়ে নাহিল ভাইয়ার একটা ছবি পেলাম।
ছবিটা নিয়ে বেডে বসলাম।
খুব অভিমান জম্মাছে উনার প্রতি। এতো বড় কথা লুকিয়ে উনি কই উধাও হয়ে গেলো? ভেবে ছবির মধ্যে নাহিল ভাইয়ার হাসিটা দেখছি। এই ছবি তুলা হয়েছে। তখন যখন উনি নিজেই আমার সাথে অভিমান করেছিলেন। কত কাঠ পুড়িয়ে উনার অভিমান যে ভেঙ্গে ছিলাম। প্রায় দশ বছর আগের ছবি তখন সবেমাএ উনি টেন পাস করে ইন্টার ফাস্ট ইয়ার এ উঠলেন আর আমি ছিলাম পুচকি একটা মেয়ে। কিন্তু সত্যিতে পুচকি নয় জাস্ট নাহিল ভাইয়ার নজরে ছিলাম পুচকি মেয়ে। সবচেয়ে অসহ্যকর লাগতো কথাটা শুনতে। তাও নাহিল ভাইয়াকে বুঝান যেতো না। সেভেন উঠেছিলাম। একসাথে ছেলে মেয়ে পড়তাম। তাতে কি আমার দোষ ছিল? ছেলে একটা সে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইছে আমি হাত বাড়াতে না বাড়াতেই এসেই বেধারাম পিঠাই বেচারা পোলাটাকে। এরপর থেকে আমার সাথেই কথা বলেন নি। উনার কথা না বলাটা ছিল কষ্টের। রাত দিন যতোই ঝগড়া করতাম না কেনো দিনশেষে ঠিকিই আমার কাছে এসে চুমু নিতো।

পুরোনো কথা ভেবে আমি মুচকি হেসে ফোন বের করে কল দিলাম নাহিল ভাইয়াকে।
কয়েক মিনিট রিং দিয়ে ফোন রেখে ভাবি।
নাহিল ভাইয়া বাসায় আছে কি? থাকলে এতোদিন দেখাও করল না। ফাংশনের পর থেকে উনাকে দেখলাম না। কই আছেন কেমন আছেন কিভাবে আছেন কিছুই জানি না। বড্ড মনে পড়ছে উনার কথা।

রুম থেকে বের হয়ে দেখি মিসেস সাহিবা খাবার পরিবেশন করছেন সিয়াম মিহু নিহাদের। আমার জন্যে ও আগেই বেড়ে রাখলেন। আমি এসে একসাথে খেতে বসি।
আমাকে আনমনে খেতে দেখে সিয়াম বলে।
—“ভাবি কি নাহিলের ধ্যানে মগ্ন?
ভাবি ডাকটা শুনে অদ্ভুত অনুভূত হলো। সত্যি আমি নাহিলের বউ? চট করে প্রশ্ন করে ফেলি। সিয়াম সহ বাকি দুইজন হু হা করে হেসে উঠে।
আমি মুখ বাকিঁয়ে বলি।
—“তোরা সব কয়টা বেয়াদবের হাড্ডি আমার বিয়ে হয়ছে একটাও জানাইলি না।
মিহু হাহা করে হেসে বলে।
—“যেখানে বউই বিয়ে সম্পর্কে জানতো না সেখানে শালিকা শালা কি বাল থেকে জানাবে?
তার কথা শুনে ভেংচি মারলাম।

—“নাহিল বাবা তোকে বলতে মানা করেছিল নাজু মা।
কারো কণ্ঠ শুনে আমরা পিছে ঘুরে তাকায়। মাফুজ আঙ্কেলকে দেখে চোখজোড়া সচল হয়ে উঠে। উনাকেও খাবার গ্রহণ করার জন্যে বসতে দিলাম। নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিলাম।
উনাকে কৌতুকপ্রদ হয়ে জিগ্গেস করি।
—-“আঙ্কেল আসলেই কি নাহিল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল?
উনি মুচকি একটা হাসি দেন।
—“মা তোমাদের বিয়ে কবে হয়েছে জানো? তোমার সপ্তমী জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের দিন।
আমি খুব আগ্রহদীপ্ত হয়ে উনার পাশে বসলাম শুনতে খুবই ইচ্ছে করছে কি কি হয়ছিল ঐ দিন।
—“ঐদিন তুমি রেডি হচ্ছিলে। তোমাকে হুর পরীর মতো সাজিয়ে আমাদের মাঝে আনা হয়। ঠিক সেদিন অনুষ্ঠানে দুইজন বখাটে ছেলে ঢুকে পড়ে। কিভাবে ঢুকে তা তো জানা নেই। তবে তাদের সাথে নাহিলের শএুতা ছিল। তারা তোমাকে কিডনাপ করতে এসেছিল। কিন্তু ভালো হলো যে নাহিল ঐসময় তোমার চারপাশে রক্ষাকবচ হয়ে থাকতো। তোমার ফেসে বিরক্তির চাপ সে দেখেও অদেখা করতো। কারণ সেই ফেসের মায়ায় যদি ঐ মুহুর্ত জোড়ায় তাহলে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা থাকবে। হঠাৎ অনুষ্ঠানের লাইটস অফ হয়ে যায়। তোমাকে নাহিল ধরে রেখেছিল। যাতে হারিয়ে না যাও। তবে তুমি ঠিকিই হারিয়ে গেলে। পানি খেতে গিয়ে তোমায় সেই বখাটে দুইজনের মধ্যে একজন ঘুমের ওষুধ মিশানো জুস খেয়ে দিল। তারা তোমায় নিয়ে বেরিয়ে যেতে গেলেই……আঙ্কেল হালকা থেমে পানি খেয়ে নিল। নাহিল তাদেরকে আঘাত করে। শুধু আঘাত করে নি সে তাদের মৃত্যু দেখিয়ে দিতো কিন্তু দেখায় নি তোমার বাবার জন্যে। তোমার জম্মদিনটা স্পেশাল করতে চেয়েছিল তাই সে সবচেয়ে বড় চমক দেই তোমার সাথে বিয়ে করে।
আমি ফ্যালফ্যাল চোখে আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলি।
—“সব বুঝলাম কিন্তু গন্ডালের লেজ বিয়ে কিভাবে করছে?
আমার কথাটা শুনে সম্ভবত আঙ্কেলের গলায় পানি আঁটকে গেলো। উনি কাঁশতে শুরু করলেন। আমি উনার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলাম। উনি স্বাভাবিক হলে আমি মাথা নিচু করে ফেলি।
—“নাজু মা তুমি তো দেখি আমার ছেলেটার নামকরণ করেছো।
হেসে কথাটা বললেন।
আমি টেডি স্মাইল দিয়ে বলি।
—“আরে আঙ্কেল আরো নাম আছে। তবে আপনি বলুন না কিভাবে বিয়ে হয়ছে।
—“কিভাবে আর তোমাকে রুমে বন্ধ করছে আমাদেরকে রুমের বাহিরে ফেলছে। তোমার হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে সার্টিফিকেট এ বসায় দিল। ব্যস শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেলো।
উনার রিলেক্সমেন্ট দেখে আমি অবাক।
সিয়াম মিহু নিহা হাসিতে মেতে উঠে। আমি সেইভাবে ঠাই বসে ছিলাম।
—“কিন্তু আঙ্কেল নাহিল ভাইয়া কোথায়? উনাকে দেখছি না যে অনেকদিন হলো। উনি কি আসবেন না?

আমার কথা শুনে আঙ্কেল চিন্তিত বোধ করল।
—“মা নাহিল হয়তো আসতে পারে আবার নাও আসতে পারে।
—“মানে?
ভয় চেপে আসল।

—“সে এক জরুরি ভিওিতে মিশনে আছে। পুলিশ কোমান্ডার সবার সাথে মিলে সে বর্তমানে লন্ডনে আছে।
—“লন্ডন? কথাটা শুনে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তাই আমাকে না বলে উনি চলে গেলেন আর আসবেন কিনা সেও গ্যারান্টি দিলেন না। যাক উনার লাইফ উনিই ভালো বুঝবে।
আমি উঠে চলে গেলাম। রেডি হয়ে সিয়ামকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রেপিস্টকে খুঁজতে। প্রথমেই নাহিলের পিএ মানে কাজলের বাসায় গিয়ে নক করলাম। কাজল দেখে বলে তোমরা কে?
তাকে দেখি রেকর্ডিং এর কথা মনে পড়ে যায়। রাগি লুক করে কঠোর গলায় বলি।
—“তোর বাপ দেখাইতে আইছি।
এই বলে তার ঘাড় ধাঁকা দিয়ে বাসায় ঢুকলাম। সিয়াম দরজা ভেতর থেকে লক করে দিল। আমি কাজলের চুলের মুঠি ধরে বলি।
—” আমাকে নাহিল ভাইয়ার থেকে দূরে করবি তাই না?
কাজল কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল সে বুঝে উঠতে পারছে না নাজিয়া যদি তার সামনে হয়। তাহলে লোকটা কাকে কি করল?
ভেবেই কাজল ন্যাকা সাজার চেষ্টা করতে লাগে।
—“দেখো নাজিয়া তুমি যা ভাবতেছো তেমন কিছু না। আমি তো……ঠাসসসসস গালে বসিয়ে দিলাম এক চড়।
ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেল কাজল।

এবার পকেট থেকে পিস্তল বের করে তার কপাল বরাবর রেখে বলি।
—“বল নইতো মর।
—-“ব….বলছি আস….আসলে কাজটা আমার না ছিল সেটা একটা প্লেন।
—“মানে শুরু থেকে বল।

—“হ্যা হ্যা বলছি। লন্ডনের বিজনেসম্যান এজাম বাংলাদেশের পুরো শহর নষ্ট করতে একটা নিউক্লিয় বোমা বানান সেটা এই দেশে আনে কিছু লোকের সাহায্যে। কিন্তু তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। এরপর থেকে পুলিশের মধ্যে একজন কমান্ডার ছিল তাদের সাথী। মেনেক নাম তার। সে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে নিউক্লিয় বোমা চুরি করে এজামের হাতে উঠিয়ে দে। তবে দুভাগ্য তারই যে সে নিজ হাতে বোমা পাঠাতে গিয়েছিল। সে বোমা দিতেই এজামের সাথী মেনেককে প্রাণে মেরে দে। ব্যস এটুকুই জানি।
—“নোপ আরেকটা কথা আছে যেটা বলিস নি। সব বলছিস নামটাও বল।
কাজল আমতা আমতা করতে থাকে। সে মুখ খুলতে যেতেই তার পিঠে কেউ গুলি চালায়। আমি জানালার তাকাতেই লোকটা পালাতে শুরু করে।
সিয়ামের হাতে পিস্তলটা দিয়ে যেতে বললাম। সে গেলে কাজলের মাথা কোলে রেখে নামটা বলার জন্যে বলি।
কাজল মৃত্যুর গভীরে যেতে লাগে। আমি কোনো ভাবে ডাক্তার কল দিলাম। সে মুখ নেড়ে বলে।
—-“নো….নো…ইয়ামু…বলেই সে নেতিয়ে পড়ে। ডাক্তার চলে আসলে আমি মাথা নেড়ে না জানায়। উনি বডিটাকে নিতে বলল তার নার্সদের।
সিয়াম এসে হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে বলে।
—-“পাই নাই রে কি বলছে?
—“নোইয়ামুল।
সব গুলো নোইয়ামুল করছে। তাকে তো ছাড়ছি না তার আগে নাহিলের সাথে কথা বলতে হবে।
কাজলের কথা শুনে বোমার ব্যাপারটা মাথায় ডুকছে না। ঐ দিন মার্কেটের মধ্যে হাইজ্যাক হলো। তারাই এজামের পার্টনার।

____

—“শুন এজামই নোইয়ামুল বর্তমানে দেশে আছে। যেভাবেই হোক বোম ব্লাস্ট হওয়া থেকে তাকে স্টপ করতেই হবে।
—“স্যার আপনি এজামকেই নোইয়ামুল বলছেন কেনো বুঝলাম না? আর হাইডেনম্যানই বা কে?
নাহিল বাঁকা হেসে বলে।
—“সব চালের গুটি ছিল এজাম ওরপে নোইয়ামুলের।
সে নিজেই বোমা ট্রান্সমিট বানায়। নিজেই নিজের লোকদের দিয়ে পাঠায়। মাঝখানে রেসালকে নিজের হাতিয়ার বানায় যাতে সে আমার দুর্বলতা কি জানতে পারুক। ঠিক রেসাল ধরে ফেলল আমার দুর্বলতা নাজিয়া। সে এই কাজটাকেই সুযোগ লাগায় রেসাল কথাটা এজামকে জানায় সে দেশে আছে ট্রান্সমিট নিতে এতে তার পরিচয় হয়ে উঠে কোম্পানি অফ এজাম গ্রুপ। সে নিজের কোম্পানির বলে নোইয়ামুল সেজে দেশে আছে তারই অফিসে জব করে নিহা। আর বাকি রইলো হাইডেনম্যান কে সে হলো এজামই এই এজামই নোইয়ামুল। এর প্রমাণ দেখ তার ছবিসহ পরিচয়ের ফাইল। এখানে সে দেশে যাওয়ার প্লেনিং তার হাইডেনম্যান হয়ে সব কাজ নিখুঁতভাবে পরিচালনা করছে। সবই সে দাবা গুটির মতো ব্যবহার করে। কিন্তু এখন আর কোনো গেম না ডাইরেক্ট এ্যাকশন হবে।

ভিলেনি লুক করে ডেভিল স্মাইল দিয়ে সে সেহেল এর দিকে তাকায়……. চিয়াস ব্রো সেহেল বলে ড্রিংক এর গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল।

একাধারে কল করেই যাচ্ছি তবুও নাহিল ভাইয়া ফোন বন্ধ আসছে। মাথা মেজাজ পুরো বিগড়ে গেছে এই নোইয়ামুলের ব্যাপারটা যদি না বলি তাহলে এ্যাটার্ক হতে বেশি সময় লাগবে না।

—-“বাহ্ বাহ্…..চেনাময় কণ্ঠে আমি পিছে…..

চলবে….?

(আশা করি আজকের পার্টে রহস্যটা খুলে গেছে এবার রিয়েকশন দেখার বাকি কে কাকে সবচেয়ে বেশি শকিং নিউজ দে?। হেপ্পি রিডিং)

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান
লেখিকা: তামান্না
পর্ব_১৭

—“তুই এখানে কিভাবে?
আমার রুমে বিনা পারমিশনে ঢুকা নিষেধ জানিস না!
নিহা এসে আমার হাত ধরল। আমি বুঝতে পারলাম সে রেগে আছে। আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে।
—“তুই জেনেও কিছু করছিস না? নোইয়ামুল এসব করল তুই চুপচাপ আছিস বাহ্ এটাই তোর ফ্রেন্ডশিপ।
আমি নিহার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
—“দোস্ত দেখ এখন আগে পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে আমি সব জেনেও চুপ আছি রিজন আছে বলে।
—“হয়ছে তোর আর রিজন দেখানো লাগবে না। তুই এসব নিজের স্বার্থের জন্যেই তো করছিস তাই না? আমি তো তোকে কলিজার বেস্টু মেনে ছিলাম। তুই তো তাও রক্ষা করতে পারলি না।

—“দোস্ত শুন তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি তোর জন্যে সব করব। নিহার কথায় চোখে পানি চলে আসছিল। তার বাহুডোরা ধরে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
কিন্তু যতবারই চেষ্টা করছি ততবারই সে এর বিপরীত ক্রিয়া দেখাচ্ছে।
শুন তোর কি কোনো সমস্যা হচ্ছে লাইক বেশি ভাবতেছিস? এতো স্ট্রেজ নিস না আমি সব ঠিক করে দেবো। প্লিজ তুই উল্টা পাল্টা ভাবিস না।

—“হুমম খুব ভালোই বুঝতেছি তোর ফ্রেন্ডশিপটা কেমন! তোর চেয়ে ভালো তো আমি কোনো শএুর সাথে বন্ধুত্ব করি। তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখাও শ্রেয় হবে বলে মনে হয় না।

নিহার কথায় কেনো জানি চরম রাগ উঠে যায়। তার বাহুডোরা ছেড়ে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিলাম। তোর সাহস কি করে হলো আমার বন্ধুত্বের উপর এমন কটু কথা বলার? তুই বন্ধুত্বের মানে বুঝিস? তোর সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশ্রুতি নিতে কত কাঠ পুড়াচ্ছি তুই জানিস? তুই সব কথা না জেনেই এভাবে বলতে পারলি! দরকার নেই তোকে আর বুঝানোর তুই আমার ফ্রেন্ডশিপে বিশ্বাস রাখতে পারলি না তো আমারও কিছু করার নেই। প্লিজ চলে যাহ আসিস না আর।
যাহহহ…..নিহাও মুখ ঘুরিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। আমি বসে পড়লাম। কোথার থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।

রুমের দরজা বন্ধ করে নিহা বসে পড়লো ফ্লোরে। কান্না যেনো তার চোখজোড়া দিয়ে থামছেই না। সে চাই নি এমনটা করতে কিন্তু বাধ্য হয়ে তার কাজটা করতে হলো।
—“আমাকে মাফ করিস দোস্ত আমাদের বন্ধুত্বের উপর সন্দেহ করলাম। আমি জানি তুই এসব কেনো করতেছিস কিন্তু আমার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না রে।
আজ যদি এই কাজটা না করতাম তাহলে কাল আমার বোনের লাশ সামনে পেতাম।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় সে চোখ মুছে কানে ধরতেই অপরপাশ থেকে বিশ্রি হাসির সাউন্ড ভেসে আছে। নিহার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার হাসি হবে?

—“আমি আপনার কাজ করেছি এবার আমার ছোট বোনটাকে ছেড়ে দেন সে এসবের মধ্যে নেই।
—“বেবি ছাড়বো তো এমনেই তোমার বোন ছোট সেই মজা নাই যেই মজা তোমার সাথে করে পেয়েছি।
—“লজ্জা করে না আপনার কিভাবে পারেন এতো খারাপ কাজ করতে বাসায় কি মা-বোন…..নিহার কথা কেড়ে নিয়ে নোইয়ামুল রকিং চেয়ারে দোলতে দোলতে
বলে।

—“বেব যার পরিবার বলতে কেউ নেই তার এসব দিয়ে কিছু আসেও না যায়ও না। আমার জগৎ হলো অন্ধকারময়। এখানে যে আসে সে অন্ধ হয়ে যায়। হোক সেটা নেশা না হয় আসক্তি। তুমি চাইলে আমার অন্ধকার রাজ্যের রাণী হতে পারো ফ্রি অফার বেব। তোমার বোনকে শালিকা বানিয়ে নিবো।
ঘৃণায় নিহার গা জ্বলছে যাচ্ছে। সে কড়া গলায় বলে

—“আপনার মতো জানোয়ারের বউ হওয়ার কোনো শখ নেই আমার। আমি এমন মানুষকে বিয়ে করব যে কিনা আমার মানসম্মান এর দিকে খেয়াল রাখে।
—-“হাহাহাহা কি বললে বেব হাসাইলা তোমার মানসম্মান কি আছে? হুমমম তোমার যা ছিল সব দেখে খেয়ে করে ছেড়ে দিলাম। তুমি তো আমার মুক্ত পাখি। উড়ে বেড়াও কিন্তু অবশেষে খাঁচায় এসেই বন্দি হবা না হলে কোনো শিকারির বুলেটে মারা যাবা। বাই দ্যা ওয়ে আমার সাথে নিচু গলায় কথা বলবা না হলে তোমার বোনকে মেরে নদীতে ফেলা হবে আর তোমার নগ্ন শরীরের ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হবে। ওকে বেব নিচু গলা কেমন!

নিহা ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকে। সে মিনতি করে নোইয়ামুলকে বুঝাতে চাইলেই সে বলে।
—“যা বলেছি ঠিক ভাবেই করো যাতে আমার কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না হলে তো বললামই। আমার লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়া পাবে না। আজ এমনেই তোমার বাসায় আসতেছি। আই মিন নাজিয়ার বাসায়। তুমি তো ক্লিয়ার করে দিলে আমিই সেই কালপ্রিট এবার তুমিই আমাকে বাঁচাবে। বাই বাই বেব।

নিহা হ্যালো হ্যালো করে নোইয়ামুলকে ডাকে কিন্তু অপরপাশ থেকে কল কেটে দে।
আমি আনমনে বাহিরের দিকে চেয়ে আছি। বড্ড কষ্ট লাগছে আগের দিনগুলি কিভাবে কেটে ছিল আর এখনের দিনগুলি কেমন কাটছে! সব মিলিয়ে বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। হ্যাঁ আলাদা হয়ে পড়ছে কেউ কারো আপন হতে পারছে না। কেন পারছে না ঠিক সিউর না।
এরই মাঝে ইচ্ছা করছে নাহিল ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে সব দুশ্চিন্তা দূর করি।
আসলেই আমি বোকা যাকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়ে ছিলাম এখন সেই এতোটা কাছের প্রমাণ হলো। যে এখন তাকে ছাড়া থাকতেও পারছি না। জীবনটার মানে কি এমনই? ত্যাগ না করে কি কিছু পাওয়া যায় না!
ত্যাগ করাটাই কি আসল!
শহরটাও খুব ব্যস্ততায় মগ্ন। ফোন হাতে নিয়ে ভাবলাম নাহিল ভাইয়া আমার কল কি ইচ্ছা করে উঠায় না নাকি সত্যি বিজি থাকে। আজকেই প্রমাণ হবে বাচ্চু তোমাকে তো আমি দেখতেছি। গলির মাল কে চিপা গলি থেকে বের করতেছি ওয়েট!

আমি কাবার্ড খুলে আমার কেনা অন্য আরেকটি সিম নিয়ে ফোনে এড করলাম। নিউ নাম্বার দিয়ে কল দিলাম নাহিল ভাইয়াকে।
—“বাবু আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে আমার কল ধরছেন না কিন্তু নিউ নাম্বারে ঠিকিই রিং হচ্ছে। আমারে ব্লক মারছেন আপনাকে লাইফ মারা খাওয়াবো।

অপরপাশ থেকে কল ধরল নাহিল ভাইয়া।
—“হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম।
—” ওয়ালাইকুমাসালাম মিয়া ক্যান আছেন মিয়া? (গলাটা হালকা নিচু করে বললাম যাতে ভাইয়া না বুঝে)
—“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
—“আহা আই আন্নার লইগা ভালা আহি।
—“আচ্ছা কিছু বলবেন?
—“হ ভাইজান আন্নারে আই কিছু হইবার লাই ফোন গরজি যে!
—“জ্বী বলেন।
—“আই না আন্নারে বহুত ভালা বাসি। আই আন্নারে বিয়া গরজুম।

নাহিল ভাইয়া শুনে কাঁশতে শুরু করে দে। আমি উনার রিয়েকশন কেমন হচ্ছে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। তাও নিজের হাসি কে এই মুহূর্তে সংযত রেখে কথা বলতে লাগি।
—“কহ কহ কহ দেখেন আপু আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না?

—“কেন মিয়া আই ওনোরে চাই চাই অনক ভালাবাইসুম।
—” কণ্ঠটা কেন যেনো মনে হচ্ছে চেনা চেনা।
উনার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম।
—“এটা কি নাজুপাখি? ওয়েট তার কল নাম্বার ব্লক লিস্টে দিছি বলে নতুন নাম্বার দিয়ে ওওওও বুঝছি আমার নাজুপাখিটা।
মনে মনে বলে। নাজিয়াকে বলি।
ওওও আপনি তো খুব ভালো মানুষ আপনাকে বিয়ে করলে তো আমার জীবন সফল হয়ে যাবে।

—“এই বেডা বলে কি বউ রেখে আবার আরেক মেয়েকে! দাঁড়া তোর খবর লইতাছি। মনে মনে বললাম।
আরে মিয়া বিয়েত করিত পারিতেন নহে কি কোনো বউ আছে নি?

—“না না আমি পিউর আনম্যারিড সিঙ্গেল বয়।
—“গলির মালললললল তুই সিঙ্গেল আনম্যারিড তাই না কুওা?

—“আরে আপনি গালি কেন দিচ্ছেন? আমি তো প্রপোজাল একসেপ্ট করতেছি তাই না?

—“বালের গলি তোর একসেপ্টরে গুলি মারি।
একটা বউ থাকতে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করবি শরম করে না তোর হারামি।

—“কেন আমার নাজুপাখিটা জ্বলছে বুঝি?
দুষ্টুমি হেসে।
—“হ আমি…….. চুপ মেরে ভাবি আমি তো নিজের পরিচয় দিয়েই দিলাম। জিহ্বে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম।
—“আ….আপনি আমি আই কি আন্নারে…..
গলা কাঁপছে কি বলব ভেবে পাচ্ছি না।

—“I love u…..বলেই নাহিল কল কেটে দিলো। আমি শুনে ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খুশিতে লাফিয়ে উঠি।

নাহিলকে হাসতে দেখে সেহেল বলে।
—“স্যার আজকে আপনাকে অনেক খুশি লাগছে ব্যাপার কি?

—“নাহ এমনেই।
চল কাজ রেডি করে ফেলি হামলা চালাতে হবে। আন্দোলন করা লাগবে।

সেহেল নাহিলের ফাজলামি কথা শুনে হেসে দে।

—“স্যার রেসালের হুঁশ আসছে।
এক স্টাফ নাহিলের কেবিনে এসে বলল।
কথাটা শুনে নাহিল বাঁকা হেসে সেহেলের দিকে তাকায়। সে তাকে নিয়ে রেসালের রুমের দিকে যায়।

ডক্টর তখনও ট্রিটমেন্ট করছিলেন। নাহিলকে দেখে পেসেন্ট এর রিপোর্ট উনার হাতে দিল।
সে রিপোর্টটা দেখে স্মিত হেসে বলে।
—“ছেলের এন্ট্রিবডি খুবই সতেজ বলতে হবে।
বিগ ফেন হয়ে গেলাম তোর। যাক সেহেল কি বলিস আল্লাহ বাঁচাইছে মায়ের দোয়া কবুল হয়ছে।
শেষ কথাটা গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

রেসাল শুনে ভয়ার্ত মুখ করে তাকায় নাহিলের দিকে। যতোই খারাপ হোক মা তো মা-ই। মায়ের কিছু হলে সন্তানের কেমন অনুভব হয় সেটা নাহিল ভালোই জানে। বাবার হাতে বড় হলো কিন্তু মায়ের ভালোবাসা পাই নি বলে অন্য মায়ের সন্তানের ক্ষতি হোক তা সে চাই না।

রেসাল কাঁপা গলায় বলে।
—“দে….দেখেন… আ….আমার আম্মুকে ছেড়ে দেন।
—“দেখ তুই খারাপ না কিন্তু তুই খারাপের পথে চলে গিয়েছিস এখন তোর হাতে ছেড়ে দিলাম। তুই যদি ভালো হইস তাহলে আমার সমস্যা নাই তুই তোর মায়ের সাথেই থাকবি। আর যদি…… বাকিটা তুই বুঝিসই। কিন্তু খারাপ কিছু না জাস্ট তুই দূরে হয়ে যাবি। ভেবেচিন্তে উওর দিস। See you later..

সে রুম থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরিতে চলে আসে। সেখানে কাজের কাজ করছিল ঐ সময় সেহেল একটা ফাইল এগিয়ে দে তার দিকে। সে ফাইলটা হাতে নিয়ে পড়তে গিয়ে শিরোনাম দেখে চমকে উঠে।

চলবে……

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান
লেখিকা: তামান্না
পর্ব_১৮

নিহার পরিবর্তনটা বেশ ভাবাচ্ছে কেনো সে এমন বিহেভ করছে বুঝতে পারছি না। তার হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে যাওয়াটা আমার মনকে কষ্ট দিতেই যথেষ্ট। ঠিকমতো খেতে ডাকলে খাই না, সোজা কথা জিগ্গেস করলে বাঁকা কথা বলে মেজাজ গরম করে দেই।
দিন দিন তার চেঞ্জিং আমাকেই কষ্টে ফেলতেছে।

—“আজ যেভাবেই হোক তাকে জিগ্গেস করবোই কি হয়ছে?
রুম থেকে বেরিয়ে নিহার রুমের সামনে এসে জোরে জোরে দুইবার নিশ্বাস ফেলে নক করলাম। এক দুই মিনিট পর দরজা খুলল নিহা। আমি ভেতরে আসতে চাইলে আমাকেই তাড়িয়ে দিল রেগে।

—“যাক গে রাগ কি শুধু সেই দেখাতে পারে আমিও পারি।

টিং টিং……দরজায় বেল বাজায়। আমি এসে দরজা খুলে সামনের থাকা লোকটাকে দেখলাম।
সিয়াম নাস্তা করে বের হচ্ছিল রুম থেকে দরজার বাহিরের লোকটিকে দেখে রেগে তেড়ে আছে। আমি দূর থেকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলাম।
রেগে যেনো আমার চোখ থেকে পানি বের হবে।
—“শুয়োরের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয়? আমার বাসার মধ্যে আসার!

—“এক্সকিউজ মি ম্যাম নিশ্চয় এটা আপনার বাসা কিন্তু এখানে আমার ফিউচার বউ থাকে।
তার কথায় সিয়াম আর আমি অবাক হয়ে যায়।
—“What are you saying?
—“ওও মনে হয় নিহা বলেনি সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে। আমি আর সে বিয়ে করব।
—“Hey look don’t cross your limit bastard.
—-“নাজিয়াআ…..নিহা কড়া ডাকে পিছে ঘুরে তাকায়। সে দৌড়ে এসে নোইয়ামুলকে জড়িয়ে ধরে।
তার আর নোইয়ামুলের জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা আমার হৃদয়ে কেউ আগুন ঢেলে দিচ্ছে এমন লাগতেছে।
সিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখটা কালো হয়ে গেছে চোখজোড়ায় পানি দেখা যাচ্ছে।

আমি নিহার বাহুডোরা ধরে জোরে ধাক্কা দিয়ে নোইয়ামুলকে তার থেকে দূরে ঠেলে দিলাম।
—“তোর দেমাগ বেশি বাড়ছে তাই না?
কার জালে পড়তেছিস কিছু কি জানিস তুই। এই মানুষটা যে কত বড় গেম খেলতেছে কিছুই কি জানিস?

—“ব্যসস ব্যস মিস নাজিয়া তোর কান্ড এই কয়েকদিন বেশ সহ্য করেছি এখন আর না। তুই আমার লাইফের বিষ বুঝলেন বিষষ এর বেশি কিছুই না। তুই বেস্টু না তুই হলি সর্বনাশ তোর লাইফে যে আসবে সে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বালের ডিসগাস্টিং ফ্রেন্ডশিপ ছিল বুঝলি প্লিজজজ ( হাত জোর করে) আমাকে আমার ইচ্ছামতো চলতে দে। দরদ দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই।
কথাগুলো আমার কানে যাচ্ছে ঠিকিই কিন্তু আমি নড়তে পারছি না নিহার কড়া ভাষায় আমার ফ্রেন্ডশিপের উপর এতো খারাপ মনোভাব।
সত্যি আর পারলাম না চোখের জল আঁটকাতে পড়েই গেলো আপনা আপনি।
—“বাহ্ আজকে আমার ফ্রেন্ডশিপ তোর কাছে ডিসগাস্টিং লাগছে? তাও এই দুই নাম্বারী মালের জন্যে।
তোকে রেপ করছে জেনেও তুই এর পিছেই পড়লি!
কি আমাদের সিয়াম এই…..সিয়ামের কাছে এসে তার হাত ধরে বলি।
এ যে তোকে ভালোবাসে তোর রেপ হওয়ার শর্তেও বিয়ে করতে চাচ্ছে তা কি তোর চোখে পড়ে না?

—“না না পড়ে না বুঝলি যা ইচ্ছা কর মরতে ইচ্ছা করলেও মরতে পারিস নোইয়াম চলো এখান থেকে এরা তোমায় দোষী স্বরুপ করবে কখনো আমাদের বুঝবে না।
নিহা নোইয়ামুলের হাত ধরে বেরিয়ে যেতে লাগে। নোইয়ামুল আমার দিকে তাকিয়ে কেনো জানি শয়তানি হাসি দিল। তার এই হাসির পিছনে যে কি কারণ আছে তা শুধু সময়ই বলতে পারবে।

____

—“স্যার এবার? নিউজটা কিন্তু ভালো ঠেকছে না।
সেহেল বলে নাহিলের দিকে তাকায়। সে নাহিলের জ্বলন্ত চোখজোড়া দেখে এক ঢোক গিলল।
রাগে যেনো নাহিলের হাত শক্ত হয়ে আছে।

—“Book the ticket 1st…
নাহিল কপাল কুঁচলাতে কুঁচলাতে বলে।

সেহেল শুনে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে।
—“আপনি কি আজকেই?
—“হ্যা……কাজটা কিন্তু এজাম ভালো করল না। তার কারণে আমার কলিজার চোখের পানি ঝড়ছে আমি তার চোখের থেকে রক্ত ঝড়াবো। ফাস্টলি কাজ চাই এনি হাউ।

বলেই নাহিল ব্লেজার হাতে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সেহেল মনে মনে বলে।
—“কেউ ভালোবাসলে সেই ভালোবাসার জন্যে যে কত কিছু করতে পারে তা নাহিল স্যারকে না দেখলে জানতাম না।

সে ফোন বের করে ম্যানেজারকে কল দে।
—“Yes, Sir ! how can i help you?
—“Book the ticket to visit Bangladesh quickly.Rather sir will do himself rudely you know that.

ম্যানেজার ভয়ে ইয়েস বলে কল রেখে চট জলদি নিজের টিকেট কাউন্টারে যোগাযোগ করে।

নাহিল বাসায় এসে নিজের শার্টের কলার ঢিলা করে উপরের দুই বোতাম খুলে। ফ্যান লো মিডিয়ামে চালু করে সোফায় বসে গা হেলিয়ে দিল।
—“কলিজা রাত হোক তারপর দেখো চমক কি জিনিস।
আর বাকি রইল এজামের বোম ব্লাস্ট সেটা কোনো ব্যাপার না।

নাহিল ফোন বের করে নাজিয়াকে কল দিচ্ছে। রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না। এহেন কান্ডে তার রাগ হচ্ছে। সে মেসেজ করে কিন্তু তাও নাজিয়া সিন করছে না। করবেই বা কেমনে? নাজিয়া ওয়াশরুমে ঝর্ণার নিচে বসে অজরে চোখের জল ফেলাচ্ছে।

—-“রাগটা কি আমি শুধু শুধু করছি? সে তো কাজেও থাকতে পারে যাই হোক রাত তো আছেই আমার কলিজার কাছে চলে আসব।
সময় যে কিভাবে অতিবাহিত হয়ে যায় বুঝাই যায় না তাই না কলিজা? তোমার থেকে দূরে থাকব বলছি আজ পাঁচদিন হয়ে গেল। কিন্তু দেখো ভাগ্য ঠিকই তোমার দিকে টেনে নিয়ে আসতেছে। এতো আর কিছুক্ষণ রাতেই তোমার পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। আলাদা করার মতো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পারবে না।

নাহিল ভেবে ফোনের মধ্যে নাজিয়ার হাসির এক চিলিক ছবি তুলে ছিল সেই ছবির প্রেমে আজ পর্যন্ত মগ্ন একটুও কমেনি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা।
আচ্ছা তুমি তো আমার বউ হও তাহলে কিসের কি?
মুচকি হেসে বেলকনিতে গিয়ে বসল।

ঠান্ডার মাঝে গরমের উষ্ণ বাতাসও মিশে আছে। নাহিল শহরটাকে দেখছে বাংলাদেশের মতো লন্ডনে তেমন মানুষের কোলাহল নেই জায়গাটা নিরব নিরব। মাঝমধ্যে দুই একজন কে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
কয়েকজন ছেলে চায়ের টলিতে বসে চা খাচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে মনে পড়তে লাগে সেই পুরোনো স্মৃতি যখন নাহিল বাসা থেকে বেরিয়ে কলেজের জন্যে রওনা দিবে তখনই নাজিয়া বাচ্চাদের মতোন ফেস করে আবদার করে এইরকম চায়ের টলিতে বসে চা খাওয়ার জন্যে কতই না অভিমান করেছিল।
শেষে আর না পেরে অসহ্য হয়েও চুপ করে চা খেতে নিয়ে বসায়।
সেদিন চা খেয়ে নাজিয়ার মুখে অসম্ভব সুন্দর হাসি ফুটে উঠেছিল। আমার লাইফে বেস্ট পার্টনার আল্লাহ মিলিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

তখন মৃদু সুরের সাউন্ড ভেসে আসছে। বুঝলাম আসরের আযানের ওয়াক্ত হচ্ছে। লন্ডনে সব ধর্মের মানুষ হওয়ায় সুযোগ সুবিধাও সেই মোতাবেক দেওয়া হয়েছে। মসজিদে ইমাম সাহেবের কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েহচ্ছি তাই দেরি না করে মসজিদে চলে গেলাম।

____

মনের কষ্ট ঝর্ণার পানির সাথে মিশে যাচ্ছে । শীতের পর গরম একটু একটু পরছে তাও গায়ে শীত লাগছে। সাওয়ার শেষে শেলওআর কামিজ পড়ে কাঁথা মোড়ে শুয়ে পড়ি।
প্রচন্ড শীতে হয়তো কাঁপছি কিন্তু উঠতে মন চাচ্ছে না যেভাবে আছি সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ি। কখন যে রাত হয়ে জানি না।

নাহিল নিজের সিটে বসে অাছে। অপেক্ষার প্রহর গুণছে কখন সে নাজিয়ার কাছে পৌঁছাবে।

—-“হাসির আড়ালে তুমি রহিবে
কাঁদবে না তুমি প্রিয়।
আমি থাকব তোমারই মাঝে।

…….চলবে….

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান
লেখিকা: তামান্না
পর্ব_১৯

হাত-পা গরম হয়ে জ্বলে উঠেছে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল। তাও নিজেকে ট্রিট করার জন্য কাউকে ডাকছি না। মিট মিট করে চোখ খুললাম। পানির তৃষ্ণা জেগেছে। উঠে বসে যে হেলান দেবো সেই শক্তিও নেই।
শুয়ে পড়লাম কিন্তু পানি খেতে মন চাচ্ছে।
বাঁ হাতটা এলিয়ে পাশে থাকা মগের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছি। চোখে ঝাপসা দেখতেছি জ্বর এলে যে চোখের মণিতে উজ্জ্বল রশ্নি সবুজ বর্ণের দেখায়।
ঠিক তেমনই আমার চোখেও সবুজ বর্ণ দেখা যাচ্ছে লাইটে ।

বেডের শেষ মাথায় এসে ভর না দেওয়ায় পড়ে যেতে লাগি। তখন মুখ থেকে চিৎকার বেরোনোর আগেই কে যেনো আমার হাত ধরে কোমর চেপে ধরল।
আমার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল। ঘুমিয়ে পড়েছি।

—“না….নাজুপাখি এই তোমার কি হলো?
নাজু….নাজিয়াকে তুলে বেডে ঠিকভাবে শুয়ে দিলাম। হাত চেপে ধরায় অনুভব হয়ে গেলো নাজিয়ার শরীর গরম হয়ে আছে। কপালে হাত রেখে দেখি হ্যাঁ জ্বর এসেছে।
ড্রয়ারে ফাস্ট এইট বক্স আছে কিনা দেখলাম। পেয়ে গেলাম সেখান থেকে ফাস্ট এইট বক্স বের করলাম। থার্মোমিটার নিয়ে নাজিয়ার শরীরের তাপ মেপে নিলাম। ৯৯° ডিগ্রী ফারেনহাইটের মধ্যে ১০৩°ডিগ্রী ফারেনহাইট।
নাজুর এভাবে জ্বর আসার কারণ কি? দেখব পরে আগে কাজ করতে হবে। জলপট্টি নিয়ে আসলাম, ওষুধ হালকা খাবার ও আনলাম। সিয়াম বলে ছিল নাজিয়া কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। নাজুপাখির মাথাটা উঠিয়ে বেডের হ্যান্ডেলে বালিশ রেখে তার গা হেলিয়ে দিলাম।
নাও একটু হা করো নাজুপাখি কিছুই খাও নি।
আমার কথাবোধ হয় তার কান অব্দি যাচ্ছে না। ভাতের টুকরো করে লোকমা বানিয়ে নাজুপাখিকে খাওয়ায় দিলাম। পানি দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম। মাথায় হাত রেখে দেখি এখনো জ্বর আছে। চটজলদি জলপট্টি দিতে লাগি। ঠিকভাবে নাজিয়াকে শুয়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। ক্লান্ত লাগছে কিন্তু আমার কলিজার সুস্থতার সামনে ক্লান্তও কিছু না। কাবার্ড থেকে একটা ওয়াইট কালারের টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে শার্টটা খুলে টি-শার্ট পড়ে নিলা।
রুমে এসে দেখি নাজিয়া ঘুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। দেখতে কতোই না মায়াবী লাগছে।
এই মায়াবী মুখখানি দেখেই তো কতো স্বপ্ন সাজিয়েছি।
মুচকি হেসে সোফায় বসলাম।

—“আমি আসার আগে কি কি হয়ছে একটু দেখি নইতো কলিজার হঠাৎ জ্বর আসবে তা কিন্তু সহজ নয়।
বিরবির করে বলছি নইতো কলিজা জেগে যেতে পারে।
লেপটপ অন করে সিসি ক্যামেরা অন করলাম। গত দুদিনের সব রেকর্ড দেখলাম। যা যা হলো নিহা নাজিয়া নোইয়ামুল এর মাঝে সব দেখে ক্লিয়ার হলাম গুটি আবারো কোনো না কোনো ভাবে নোইয়ামুলই চালাচ্ছে কিন্তু কি হবে সেটা?
নিজের থুতনীতে হাত রেখে ভাবতেছি। হঠাৎ নাজিয়ার দিকে চোখ পড়ল সে আস্তে আস্তে কি যেনো বলছে। আমি কৌতূহলী লেপটপ অফ করে তার পাশে গিয়ে শুইয়ে পড়লাম। কানটা নাজিয়ার মুখের কাছে নিয়ে শুনার চেষ্টা করছি।
কিন্তু বুঝছি না কি যে বলছে।
—-“আপনি জানেন আপনাকে কত ভালোবাসি?
কথাটা নাজিয়ার মুখে শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। মেয়েটা ঘুমের ঘোরেও ভালোবাসি বলতেছে।
তার ঠোঁটের আগ পর্যন্ত গিয়ে বলি।
—-“তোমার চেয়েও অতিরিক্ত ভালোবাসি কলিজার নাজুপাখি।
কথাটা ধীরেই বলেছিলাম। কিন্তু না জানি কেমনে এতো জোরে হয়ে গেলো যে নাজিয়া জেগে আমার মুখে দিকে তাকায়।
আমি তো হতদন্ত হয়ে কিছুটা দূরে হয়ে যায়।
—“ঐ ভিলেন হারামী সারাক্ষণ তো গলির চিপায় থাকিস। এখন না হয় আমার সাথে থাক। একটু তো আদর কর।

ব্যবলাকান্তের মতো হয়ে নাজিয়ার কথাটা শুনলাম।
—-“দেখো কলিজা তোমার এখন রেস্টের দরকার। ঘুমাও আমিও ঘুমিয়ে পড়বো।

—-“না যতক্ষণ বউকে আদর করবি না ততক্ষণ ঘুমাবি না। আফটার অল তোরই তো বউ।
কথাটা শুনে নাহিল চুল নাড়তে থাকে। নাজিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে নাহিলকে।
—“উফফফ আমার নাহিল ভাইটা এতোই কেন জোস হ্যান্ডসাম?

নাহিলের রাগ উঠে যায়। দুই গাল ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো নাহিল ভাইয়া। আচমকা কিস করতে থাকায় বিষম খেয়ে গেলাম। কিন্তু কিস টা ভালোবাসার না অভিমানের লাগছে।
নাহিল নাজিয়ার ঠোঁটের উপরের অংশে জোরে কামড় বসিয়ে দে। নাজিয়া উহহহ করায় নাহিল ছাড়ল।

—“আবার ভাইয়া ডাকলে ডাইরেক্ট বাসর করব। ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল।
নাহিল ভাইয়ার রাগ দেখে বেশ মজাই পেলাম। আমিও মনে মনে বললাম।

—-“ভালোই তো এবার তো আপনাকে চেঁতানোর ধান্দা পাইছি।
আচ্ছা ভাইয়া…..উনি চোখ সরু করে কড়া গলায় বলেন।

—“বর বল বলদী মেয়ে।
আমি ভেংচি মেরে অন্যদিকে ফিরে গেলাম। আমাকে বলদ বলল কেন। উহ কথা বলব না।
উনি বোধ হয় আমার মনের আর মুখের কথাটা বুঝতে পারলেন।

—“তুই আমার কলিজা রে তোর কিছু হোক তা আমি চাই না। আমি চাই শুধু তোকে ভালোবাসতে।
নাহিল
ভাইয়া আমায় টেনে ঘাড়ে মুখ গুঁজে নিজের নিশ্বাসের গরম ভাব দিতে থাকে।
উনার গরম আভা আমার শরীরের প্রতি উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। প্রতিটা উষ্ণতা গভীরতর হচ্ছে উনার ঠোঁট ছুঁয়ে দেওয়ায়।
উনি একান্ত ভাবে নিজের ভালোবাসার মাতালে যেনো আমায় বেঁধে নিচ্ছেন।
নিজের শরীরে যেনো বিদ্যুৎ চমকানোর মতো শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

নাহিল নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে থাকে। নাজিয়ার চুলের, শরীরের ঘ্রাণটা তার মধ্যে নেশায় ভরে দিচ্ছে। নেশাময় করে দিচ্ছে।
উনি শক্ত করে নিজের হাতজোড়া দিয়ে আমার হাতজোড়া আঁকড়ে ধরেন।
নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলেন।
এলোথেরাপি চুমু দিতে লাগলেন আমার মুখপানে।

আমার কপালে চুমু দিয়ে ঠোঁটজোড়া আবদ্ধ করে নিল। প্রায় পাঁচসেকেন্ড পর ছেড়ে হাঁফাতে থাকি দুইজনে। কিন্তু থামল কেন?”
আমি আমতা আমতা করে বলি—” কি হলো আপনি থেমে গেলেন যে?

উনি চোখ খুলে আমার চোখের দিকে তাকায়।
—“আমি চাই আগে তুমি সুস্থ হও, অসুস্থতায় মিলন হওয়াটা মোটেও ভালো না। কুরআনে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী; এক স্বামী কখন তার স্ত্রীর সাথে মিলন করতে পারবে পারবেন না সব বলে দেওয়া হয়েছে। অসুস্থতায় মিলন হলে পরবর্তী প্রজম্মে আমাদের সন্তান দের সমস্যা হতে পারে। তাই ভালোবাসার দিনরাত আরো বাকি আছে। অসুস্থতা কেটে যাক তারপর দেখো তোমাকে ছাড়ি কিনা। একদম ঘুমাতে দেবো না।
দুষ্টুমি ফেস করে হাসলেন।

উনার বলা কথাগুলি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। আসলে সত্যিই তো আমার তো এখনো জ্বর ছাড়েনি। আর আমিই কিনা এক নাম্বারের গাধী।
এখন তো লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব না।
নাহিল আমার উপর থেকে উঠে পাশে শুয়ে আমাকে হেচকা টান দেন। তাল সামলাতে না পেরে সোজা উনার বুকের উপর মাথা রাখি। উনি আমায় আগলে নিলেন। আমিও পুরো রাত উনার বুকে শান্তির ঘুম দিলাম।

_____

—“প্লিজ আর কিছু করিয়েন না একবার তো করেছেন।
নিহা হাতজোর করছে। বেডের এক কোণায় ঘুটি মেরে বসে আছে। নোইয়ামুল ড্রিংক করে করে নিহার দিকে বিশ্রী হাসি দিয়ে শার্টের বোতাম এক এক করে খুলে আগাতে থাকে।

—“ইয়া আল্লাহ বাঁচান এই জানোয়ারটা থেকে না হলে যে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তায় থাকবে না।
আমি এপাশে ঘুরে ক্লোরোফর্ম এর ছোট স্প্রে রাখা। চোখটা খুশিতে ভরে যায়। শাড়ির আঁচল দিয়ে স্প্রেটা হাতে নিয়ে আড়াল করলাম।

শার্টটা ফ্লোরে ফেলে বেডে এসে নিহার পা ধরে জোরে টান দে। আমার দিকে এতোটায় হিংস্র নজরে তাকিয়ে আছে যেনো আজ রাত আমাকে কবলে খাবে।

—“আহহ আরেকবার তোর শরীর স্পর্শ করব। আবার সেই স্বাদ মিটাবো।

যখনই নোইয়ামুল নিহার বুকের উপর থেকে আঁচল টান দিবে তখনই স্প্রেটা তার মুখের উপর মারল।
—-“আহহহ কুওি মেয়ে তোর সাহস তো কম না আমার চোখের উপর আহহ….
নিহা জোরে ধাক্কা মারে নোইয়ামুলকে। সে কন্ট্রোল হারিয়ে মুখ থুবড়ে বেড থেকে পড়ে যায়।
এরই সুযোগ নিয়ে নিহা উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে যাবে।
তখন মনে পড়ল তার নগ্ন ছবি নোইয়ামুলের মোবাইলে আছে।
সে এসে নোইয়ামুলের ফোনটা নিল সাথে লেপটপটাও নিয়ে তার ছোটবোনকে বেঁধে রাখা রুমটার মধ্যে যায়।
পলিথিনের মধ্যে ফোন লেপটপ নিয়ে বোনটার হাত পা খুলে পালিয়ে গেলাম জানোয়ার এর বাসা থেকে।
নিজের বাসায় এসে প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে অরিফার হাত ধরে অন্য বাড়িতে চলে গেলাম।

অন্য বাড়িতে রুম বুক করে সেখানে সব সেট করি।
অরিফা মানে নিহার ছোট বোন।
নিহা তাকে সোফায় বসতে বলে। কিচেনে এসে হালকা কিছু খাবার বানায়। খেয়ে নোইয়ামুলের ফোন বের করে।

ফোন ওপেন করে লক পার্স আসল। দ্বিধায় পড়ে গেলো কি হতে পারে পার্সওয়ার্ড।
—“এখন কিভাবে নাজিয়াকে জানাবো? যে আমি এসব কেনো করেছি। নোইয়াম প্রতিদিন মুখে যে বাক্যটা উচ্চারিত করে সেটা টাইপ করি হয়তো এটাই কারেক্ট হবে।
নাজিয়া তো বলেছিল। ওর কথামতো টেস্ট করে দেখি।
ওএমজি সত্যি তো নাজিয়ার বলা কথাটা ঠিকই।

ফোন ওপেন করতেই লোকেশন ট্রেস হবে ভাবিনি।
আমি নগ্ন ছবিগুলি ডিলেট করে দিলাম। নাজিয়াকে কল করলাম বেশ কিছুক্ষণ আন্স না আসায় হতাশ হয়ে মেসেজ দিলাম। ফোন অফ করে দিসি।
অরিফা নিহার কাছে এসে বলে।
—“আপু আমরা এখানে থাকব?

—“হ্যা আপু এখানেই থাকব। পরে তোমার নাজিয়া আপুর বাসায় যাবো।
নাজিয়ার বাসায় যাবার কথা শুনে অরিফার খুশি আর দেখে কে। সে ছোট থেকেই নাজিয়াকে খুব পছন্দ করে।

সকাল হয়ে দুপুর হবে অথচ আমার চোখ খুলল মাএ। আমি নিজের কপালে চাপ্পড় মেরে নাহিলের মুখের দিকে তাকায়। ওরে আমার নিষ্পাপিত বর।
উনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ফুটন্ত এক ফুলের মতো মনে হয়। উফফফ উনার চাপদাড়িগুলি যে কতই লজ্জায় ফেলে। কাটার মত মুখের উপর গুতা দে।
আচ্ছা উনার হাসিতে টোল পড়ে। এই টোলে চুমু দিলে কেমন হয়?
আমি আস্তে করে উনার টোল পড়া জায়গায় চুমু দিলাম। তবে জানতাম না উনি জাগনা ছিলেন চুমু দিতেই উনি আবারো ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করালেন।
পরম আবেশে নিলাম উনার ভালোবাসার উষ্ণতা।

কিছুক্ষণ পরে উনি আমায় ছেড়ে ঠোঁট মুছলেন। উনাকে ওয়েট করতে বলে ফ্রেশ হতে গেলাম।
নাহিলের ফোন বেজে উঠে। সে কল ধরে হ্যালো বলল। অপরপাশ থেকে……

—-“স্যার যত দ্রুত সম্ভব ট্রান্সমিটকে স্টপ করাতে হবে না হয় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
সেহেল নিজের কম্পিউটারে কাজ করে করে কানের মধ্যে ব্লুথ লাগিয়ে বলে।

—“হুম আগে একটা কাজ কর তোরে কোর্ড নাম্বার দিচ্ছি সেটা টাইপ করে ট্রান্সমিট লোকেশন ট্রাস কর।
We will find him soon.
গম্ভীর ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

—“678389 এটা ট্রান্সমিটের কোর্ড নাম্বার। Type it 1st.

নাহিলের কথামতো সেহেল টাইপ করল। সাথে সাথে ট্রান্সমিট সচল হয়ে যায়।

—“স্যার ডান।
—“গুড জব এবার লোকেশন ট্রেস কর। আমি স্পেশাল টিম মেম্বারদের নিয়ে রেডি হবো হামলার জন্যে।
বাঁকা হাসল।

—“শুনেনন…..নাজিয়ার সাউন্ড শুনতে পেয়ে কল কেটে দিলাম।
—“হ্যা বলো।
নাজিয়া আয়নার সামনে এসে চুল মুছচে আর বলছে—“কি গো স্বোয়ামী! এভাবে কি দেখছো?

—“কি আর বউকে দেখে স্বোয়ামির কন্ট্রোল হচ্ছে না বললেই চলে। থাক বাদ দাও দিনের বেলায় কাজ রাতের বেলায় রোমান্স।

নাহিল হেসে ওয়াশরুমে গেলো।
আমি এপাশ ওপাশ দেখে বলি—“ফোনটা কই রাখছি বাল।
ওও চার্জে রাখছি ধুর।
ফোনটা হাতে নিয়ে নোইয়ামুলের মেসেজ দেখে কিছুটা চমকে গেলাম। সে আবার কোন মতলবে মেসেজ করল।

ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আসল।
—“দোস্ত হেল্প মি..সবকিছু জাল…..জাল মাইন্ডের জাল।
আমি কল দিতে লাগলাম। কিন্তু রেসপন্স আসছে না।
নাহিল বের হয়ে নাজিয়াকে চিন্তিত হয়ে থাকতে দেখে বলে।

—” নাজুপাখি তোমাকে চিন্তায় কেন দেখাচ্ছে?
ফোনটা উনাকে দেখালাম উনার বুঝতে বাকি রইল না যে নিহা কোনো বিপদে।
—“কলিজা তুমি রিলেক্স থাকো আমি সব দেখতেছি কিছু হবে না নিহার। সিয়ামম সিয়ামম…..
সিয়ামের সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। মিহুর সাথে আমি হতাশময় চেহারা করে সোফায় বসলাম।

—-“দোস্ত তুই টেনশন নিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
—“হুমম।

টিংটং…..দরজায় বেল বাজল। আমি আর মিহুর মাঝে সন্দেহ জাগল। মাএই তো নাহিল সিয়াম বের হলো এখন আবার কে আসল?
মিহু দরজার হুল থেকে দেখে পিজ্জা বয় দাঁড়িয়ে আছে।
—“নাজু তুই কি পিজ্জা অর্ডার করেছিলি?
আমি মিহুর কথায় চমকে গেলাম। হুট করে বলি।
—“ধুর পিজ্জা তো আমি বানাতে পারি বাহির থেকে অর্ডার করব কেন?

—“ওও ভাই কে পিজ্জা অর্ডার করেছিল?
—“জ্বী ম্যাম সিয়াম স্যার অর্ডার করেছিল।
মিহু তক্ষণাৎ সিয়ামকে কল দিল। সে কল উঠালে পিজ্জাবয়ের কথাটা বলে।
—“হ্যা মিহু ভাবিকে কিছু বানাতে না দেওয়ার জন্যেই অর্ডার করেছিলাম। তোমরা খেয়ে নাও আমি আর নাহিল অফিসের এসে খেয়ে নিবো।
এই বলে কল কেটে দিল নাজিয়াকেও কথাগুলো শুনলো।

দরজা খুলে পিজ্জার বক্সটা নিয়ে নিলো। পিজ্জাবয় আমাকে দেখে মিহুকে পরখ করে নিল। মিহু কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে দরজা লক করে দিল।
পিজ্জাবয় রহস্যময় হাসি দিয়ে দিয়ে নিজের বাইকে বসল।
নাজিয়ার বাসার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে আগের মতো রহস্যময় হাসি রেখে বলে।

—“Both of you finish very soon.

……..চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here