ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২০_২১
লেখিকা_তামান্না
পর্ব_২০
—“মিহু আমার না এখন খেতে মন চাচ্ছে না তুই-ই খা। আমার জন্যে রেখে দিস। আমি পরে এসে খেয়ে নিবো।
বলে চলে যাচ্ছিলাম রুমের দিকে।
ঠিক তখনই পুরো বাসার লাইটস অফ হয়ে যায়।
মিহু আর আমি একে অপরকেও ঠিক ভাবে অন্ধকারে দেখতে পারছি না কারণ বাসার জানালাগুলোতে পর্দা লাগানো। পর্দাগুলি সরানো হয় নি। আজ বাসায় সার্ভেন্টস নেই। সবাইকে আসতে বারণ করেছিলাম।
তবে হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ার কারণটা কি?
জানালা খুলে পিজ্জাবয় বাসার ভেতরে চলে আসে। সে বাইকে উঠেছিল চলে যাওয়ার জন্যে কিন্তু বাইক স্টার্ট করতে গিয়ে তার ফোনে কল আসল।
—-“হ্যালো মরছে ওরা?
—-“না স্যার এখন মাএ পিজ্জা সার্ভ করলাম।
—-“যাই কর তুই আমি কিছু জানি না তারা মরে যেনো যায়। আমার রাস্তায় কোনো ধরনের কীট আমি চাই না। ওরা মরলে তোর জীবন, ওরা বাঁচলে তোর মরণ। মনে রাখিস?
—-“জ্….জী নোইয়ামুল স্যার আমি তাদের বাঁচতে দেবো না। তারা পিজ্জা খেয়ে যদি মারা না যায় তাহলে নিজ হাতে খুন করব। আমি এখানেই আছি নজর রাখতেছি স্যার।
নোইয়ামুল শুনে ডেভিল স্মাইল দিয়ে রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে বলে।
—-“গুড জব। খেলা চালা শেষে কি নিউজ আছে জানাইস!
কল কেটে দিল নোইয়ামুল।
সে ফোন হাতের মধ্যে ঘুরাতে ঘুরাতে ভাবে।
—-“পোষা কুকুরদের কখনো ছাড় দিতে নেই। হয় ধমকাও না হয় জীবন্ত কবর দাও। আমার কথার ইশারায় নাচা লোকগুলোকেই আমার বেশ পছন্দ। ইরশাদ….. ইরশাদ তুই আমার সহ পার্টনার কিন্তু কি করি যতদিন ঠিকভাবে উঠবস করবি ততদিন তোর নামে জয় জয় কার গান গাইবো। যেদিন উঠবস করতে অবাধ্য হবি সেদিন তোর দেমাগে বুলেট চালিয়ে শেষ করে দেবো হাহাহা।
তাহলে তো বুঝতেই পারছেন ইরশাদ পিজ্জাবয় বেশে মিহু আর নাজিয়াকে মারতে গেল নোইয়ামুলের কথায়।
মিহু আর নাজিয়াকে আড়াল করে দেখতে থাকে পিজ্জাবয়। লাইটস অফ করে সে ধারালো ছুড়ি নিল।
কারেন্ট চলে যাওয়ায় দুইজনেরই ভয় লাগছে। আমার পাশেই ড্রয়ার টেবিল ছিল। সেটা খুলে টর্চ লাইট বের করলাম। মিহুকে সাথে নিয়ে সুইচ বক্স রুমের দিকে আসলাম।
—“মিহু টর্চ লাইটটা ধর আর এখানে লাইট মার আমি দেখছি কি সমস্যা হলো?
মিহু আমার কথামতো লাইট মারলো। আমি সুইচবক্স খুলে সব তার তারের জুটি ঠিক আছে কিনা দেখছি। তখন বাসার মেইন তারটা দেখি কাটা। আমি মিহুর থেকে টর্চ লাইটটা নিয়ে নিচে ফ্লোরে চেক দিয়ে দেখি কাঁচি আর কাটা তারের একটা অংশ। মিহুর দিকে তাকিয়ে বলি।
—“Someone is already enter here. Be careful. Anyone who enters my house does not know whose house he is entering.
আমার কথা শুনে মিহু মাথা নাড়ে। ঐ সময় কিচেন থেকে কিছু একটা পড়ার সাউন্ড ভেসে আসল। বুঝেই গেলাম কিচেনের মধ্যে কেউ তো এসেছে ।
আমাদের ধারণা অনুযায়ী ভেতরে আসা লোকটা চোর হবে না হয় কোনো মার্ডারার। সে যে কে হবে জানি না কিন্তু শেষে অবশ্যই চোরের ফেস দেখেই ছাড়ব।
কথাটা ভেবে মিহু কে বললাম নাহিল ভাইয়াকে কল করে কথাটা জানাতে।
—-“বিবাহিত বরকে এখনো ভাইয়া ডাকিস?
মিহু দুষ্টুমি হেসে বলে।
—-“শালি খবরদার আমার উনির দিকে নজর দিবি না। যা করতে বলছি তা কর।
মিহু কল করল নাহিল ভাইয়াকে।
—“What????
তোমরা ঠিক আছে তো নাকি সে কিছু করেছে?
উওেজিত হয়ে বলল।
—“ভাইয়া আমরা এখনোও ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি চলে আসেন। এখানে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে।
—“ওকে তোমরা যেখানে আছো সেখানেই সেফলি থাকো। আমরা চলে আসতেছি।
সিয়ামের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম। ফোন কেটে দিলাম।
—“কি নাহিল কি হয়েছে?
—“বাসায় কেউ একজন ঢুকে পড়ছে। যেভাবেই হোক আমাদের দ্রুত বাসায় পৌঁছাতে হবে।
সিয়াম কে নিয়ে রওনা দিল নাহিল।
______
—“আপু তোমার ফোনে বার বার কে যেনো কল করছে।
অরিফার কথায় নিহা ভয় পেয়ে যায়। ফোনটা নিয়ে অরিফাকে টিভি দেখতে বললাম।
কল কানে দিয়ে হ্যালো বললাম।
—“হ্যালো বেবি ভুলে গেলা নাকি?
নোইয়ামুলের কণ্ঠ শুনে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দে।
—“কে….কে আপনি?
—“আরে কেউ নিজের জানকে ভুলে যায়?
অবশ্যই ভুলে না। তুমিও তো ভুলবে না বেবি । তোমার শরীরকে খাইছি মনে আছে তো তোমার থেকে এই কয়েকদিন ভালোবাসা নিয়ে খেলা হয়ছে তবে এখন হবে আসল খেলা বলে কল কেটে দিল নোইয়ামুল।
নিহা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে।
—–“কি হবে? কেনোই বা হবে? আমার জন্যে কি আল্লাহ আর কোনো রাস্তা খুলে দেবেন না। জানোয়ারটা কি শেষে আমাকে মেরে মাটি চাপা দিবে।
হয়তো এখনকার সময়েও তো মেয়েদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলে দিচ্ছে তাতে আমাকেও কোনোভাবে যোগ করবে কি এ নোইয়ামুল?
এসব কথা চার-পাঁচবার ভাবতেছি তখন নাজিয়ার কথা মনে আসল। তড়িঘড়ি ফোন নিয়ে কল দিলাম।
বাসায় কলে সাউন্ড পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি কলের সাউন্ড ছোট করে ফোন অফ করে দিলাম। নিহা দেখলো নাজিয়া কল উঠাচ্ছে না। হয়তো আগের অভিমান জম্মে আছে বলে।
—-“দেখ নাজু আজ কল উঠালে অনেক কিছু হয়তো বলে সর্তকবাণী চালাতে পারতাম।
নাজিয়াকে মেসেজ করলাম। মেসেজে আমার করা কাজের বর্ণনা সংক্ষিপ্ত লিখে মেসেজটা পাঠিয়ে দিলাম।
—-“আপু এখন ফোনটা নি কার্টুন দেখব। আমি অরিফার বাচ্চামো ফেস দেখে কষ্টের মাঝেও হেসে দিলাম।
তার হাত টেনে ফোনটা হাতে দিয়ে বলি।
—-“নাও দেখো আর ভাত দিলে ডাকব।
অরিফা মাথা নেড়ে ফোনটা নিয়ে সোফায় বসল। নিহা অরিফার ফেসের দিকে তাকিয়ে নিজেদের আশ্রয়ের তাওফিক চাইলো আল্লাহর কাছ থেকে।
অরিফার হাস্যময় ফেসটা দেখেই তো বেঁচে আছি। কতোই না কষ্ট পেলাম তাও সর্বশেষে পরিণতি কেমন হয় জানোয়ারটার শুধু তার অপেক্ষা থাকল।
____
কিচেন থেকে চোর বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসল। আমরাও তার চোখের আড়ালে কিচেনে চলে আসি।
মিহুর সাথে লুকিয়ে তো আছি কিন্তু যে আসল তাকে নিজ হাতে ধরতেও মন চাচ্ছে। আমি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধ কেন যাবো। ভেবেই বাঁকা হাসলাম।
মিহু আমাকে মুখের উপরে হাসতে দেখে বলে।
—-“সিরিয়াস মুমেন্টও হাসি পাচ্ছে তোর?
অবাক হয়ে জিগ্গেস করল মিহু।
—-“দোস্ত চল চোরের লগে কাবাডি খেলি।
শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম।
—-“ওয়েট কি রে বললি তোর মাথায় কি চলছে? পিজ্জাটাও খেতে পারলাম না। খুব কষ্ট লা……বাকি কথা শেষ করার আগেই আমি বিস্কুটের একটু অংশ মিহর মুখে পুড়িয়ে দিলাম।
—-“প্রচুর খিদা লাগছে বললেই পারিস খুব মজার চকলেট বিস্কুট খা এবার। আমি আমার কাজ করি।
মিহু চাবাতে চাবাতে বলে।
—-“কাজ কি? তোর কি চোরের সাথে কাবাডি খেলার সত্যিকার কোনো প্লেন আছে নাকি?
—-“Yaap Just wait and watch.
বলে আমি ময়দার বক্স হাতে নিয়ে দরজার উপরে আটঁকে দিলাম। ফ্লোরের মধ্যে সরিষার তেল ঢেলে দিলাম।
কিচেনের জানালা দিয়ে আড়চোখে দেখতে থাকি। সোফার সাইডে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে ধারালো কাঁচি।
—-“শালা শুয়োরের বাচ্চা ছিহ্ তোর মতো শুয়োরের কারণেই নাউজুবিল্লাহমার্কা গালি মুখে আছে।
দেখ এবার তোর লগে কি গেম খেলি।
জানালার পর্দা সরিয়ে গ্রীলের মাঝখান দিয়ে হাত বের করে ফুলের বেস ফেলে দিলাম।
চোরটা বোধ হয় ফুলের বেস এর দিকে তাকালো।
আমি হাত সরিয়ে মিহুকে চুপ থাকতে বললাম।
চোর ঠিক ফুলের বেস পর্যন্ত আসল। আমি মিহুর হাত ধরে দরজার বিপরীত সাইডে দাঁড়িয়ে গেলাম।
চোরে দরজা ধীরে ধীরে খুলে ভেতরে আসতেছে। তার মুভ অন দেখে লাগতেছে কোনো ভূতের ফিল্ম করতেছে এখনই ভূতুড়ে রিয়েকশন দিবে শালা বদমাইশ।
চোখ ঘুরিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলাম।
দরজা পুরোপুরি খুলে ভেতরে পা দিতেই ময়দার বক্স তার মাথার উপর এসে ডাসস করে পড়ল।
লোকটা ভয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে। মিহুর হাত ধরে দরজার বাহিরে নিয়ে গেলাম। মিহুকে দাঁড়াতে বললাম।
চোরের উপর ময়দা পড়ে পুরো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আমিও সুযোগ বুঝে তার দিকে হালকা ঝুকে কোমর দুলিয়ে তার পিঠ বরাবর দিলাম এক থাপ্রাড়ানি। বেডা কিছুটা ধাক্কা খেয়ে তেলের উপর পা রাখে।
ব্যসসস সেখানেও ধপাস করে নিচে বসে পড়ল। মিহু আর আমি মুখ টিপে হাসতে থাকি।
—-“আহহ তোরা বেশি করেছিস আমার সাথে এবার মরার জন্যে প্রস্তুতি নে। সে ময়দার বক্সটা মাথা থেকে সরিয়ে সামনে তাকাল। কিন্তু কাউকে না দেখে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগে।
সে ময়দার বক্স সরানোর আগেই মিহুকে টেনে ড্রয়িং রুমের টেবিলের পাশে এসে লুকায়।
আড়চোখে সে আসতেছে কিনা পরখ করতে থাকি। মিহুকে বললাম নেক্সট কাবাডি খেলি কি বলিস??
—-“ইয়ওওওওও চল। কিন্তু এখন খেলাটা আমি দিমু।
—-“আচ্ছা দে।
মিহু উঠে ড্রয়িং রুমে রাখা পিঁপড়ার বক্সটা হাতে নিয়ে এসে বসল আমার পাশে। বক্সটা আব্বু কিনেছিলেন বাসার মধ্যে পিঁপড়ার বক্স রাখলে নাকি মৌচাকের শুভেচ্ছা আছে। না জানি কোন পরদাদা এই কথাটা উনাকে শুনিয়ে ছিলেন।
বাট এখন কাজে আসবে ঠিকই।
ভেবেই আমার মনে লাড্ডু ফুটল।
মিহু গিয়ে সোফার মাঝ বরাবর বক্সটা রাখে। জুস ফেলল ফ্লোরের মধ্যে। চোরে সেদিকে এসেই জুসের উপর পা দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। সে উঠতে যাবে তখনই দেখল একজাঁক লাল পিঁপড়া তার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এগুলো কোনো স্বাভাবিক কালো পিঁপড়ে নয় এগুলো ছিল লাল রঙের বিষমিশ্রিত পিঁপড়ে।
আমার তো ভেবেই আনন্দ লাগছে। কি কি সিন ক্রিয়েক্ট হচ্ছে।
চোরের…….
…চলবে…?
ভিলেন অফ দিওয়ানাপান
লেখিকা_তামান্না
পর্ব_২১
—-“আরে এ…এগুলো তো স্বাভাবিক পিঁপড়ে লাগছে না ও মাআআআআআ।
চোর চিল্লানি দিচ্ছে। আমি আর মিহু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছি। মিহুকে বললাম;
—-“চল চল ওই সাইডে।
চোর হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে।
—-“আহহহ শেষ অনেক করেছিস তোরা।
টেবিলের উপর পানির মগ ছিল। মগ নিয়ে ইরশাদ নিজের উপর ঢেলে নিলো। পানি ঢেলে দেওয়ায় পিঁপড়ে দলের ছড়াছড়ি হয়ে যায়। তারা একসাথে বক্সের মধ্যে ঢোকে পড়ে। আমি আর মিহু ভয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।
ইরশাদ নিজের পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার দিক বরাবর ট্রেগ করল।
—-“হাহাহা তোরা এবার কি করবি? সব প্লেন ফ্লপ হাহ এখন দেখ।
ইরশাদের দিকে আশেপাশে কোনো কিছু আছে কিনা ভালোভাবে দেখতে লাগি। সেখানে এই বেডার ফেটফাটানি কেই বা শুনে। তখনই ভালো একটা জিনিস নজরে আসল।
চোরের ঠিক পিছেই রাখা ছিল খেলনার পুতুলের ঝুলি। এর মধ্যে পুতুলের হাতে ছিল খেলনার গার্ন। কিন্তু এই গার্নের মাঝেই আমি বাচ্চামি করে বুলেট ঢুকিয়ে ছিলাম।
এবার আসবে আসল খেলার খেলা। দাঁত কেলিয়ে হাসতে শুরু করি। মিহু হা করে তাকায় আমার দিকে।
ইরশাদ ও নাজিয়ার হাসির কারণ বুঝছে না।
—-“এ মেয়েটা হাসতেছে কেন? অবশ্যই কোনো কিছু চলতেছে এর মাথায়।
মিহু আমাকে চিমটি মারল।
—-“আউচচচচ কি রে ছেমড়ি? আস্তে দিবি তো।
—-“বুইন সিরিয়াস মুমেন্টেও তোর হাসি পাচ্ছে লাইক সিরিয়াসলি?
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে মিহু বলে। তবুও ঠোঁটের মাঝে অসহনীয় হাসির রেখা টেনে।
—-“আবি পিকচার বাকি হে মেরে ইয়ার। ঝুকবি….
আস্তে করে বলি।
—-“এ্যাহ।
হাবলার মতো তাকিয়ে মিহু বলে।
মিহুর বুঝার অপেক্ষা করলাম না। সোজা তার মাথা চেপে নিচের দিকে ঝুকিয়ে পাশে থাকা লাঠিটা হাতে নিয়ে চোরের মুখ বরাবর ছুঁড়ে মারি।
চোরটা হিরো স্টাইলে সাইড হয়ে যায়।
আমাদের দিকে তাকিয়ে হাহাহা করে হাসি দিল। তার কিছুক্ষণ পরই পুতুলের উপর লাঠিটা পড়ায় গার্ন প্রসারিত হয়ে বুলেট এসেই চোরের ঠিক নিচের পিছ বরাবর যেয়ে লাগে।
—-“উহ আহ আহহহহহহ।
চোরটা চিল্লিয়ে উঠলে আমি মিহুর দিকে তাকিয়ে লেডি কিলার টাইপ লুক দিলাম।
—-“কেমন হলো ট্রেথ?
—-“Just mind blowing boss..
—-“হাহ আমার বাসায় চোরামি করতে আইছে এবার ভোগ কর শাস্তি।
—-“নাজিয়াআআ…..বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখি নাহিল সিয়াম একসাথে চলে এসেছে। উনাকে দেখেই ঠোঁটে অটোমেটিক ভালো লাগার মতো হাসি চলে আসল।
দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। উনিও আমায় শক্ত করে চেপে ধরলেন।
আমার বাহুডোরায় আগলে নিয়ে গালে হাত রেখে বলেন।
—-“নাজু তুই…তুই ঠিক আছিস তো কিছু হয় নি তো তোর।
আমি মাথা নেড়ে না জানায়।
—” কোন হারামজাদা সাহস করল আমার কলিজায় আঘাত করার। কে আসছিল হ্যাঁ?
সিয়াম জোরে ডাক দিয়ে বলে।
—-“ভাই দেখ চোর পালাচ্ছে।
নাহিল গার্ন বের সুট করে দে।
বুলেটটা তার পিঠ বরাবর গিয়ে লাগে। এতে সে লুটিয়ে পড়ে ছটপট করতে করতে মারা যায়।
নাহিল আমাকে আর মিহুকে বসতে বলে পুলিশ কন্সটেবলকে কল করে বাসায় আসতে বলে।
দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে তারা চলে আসল।
—-“নাজু লাইটস অফ কেনো?
—-“অফ না আসলে চোর এ কারেন্ট এর তার কেটে দিছে।
—-“ভাবি চোরের কাজই তো এগুলোই। আপনারা নিশ্চিত থাকেন আমরা ব্যবস্থা করতেছি।
কন্সটেবল ইলেকট্রিসিয়ান কে ডাক দে।
—-“ইয়েস স্যার।
কন্সটেবল ইলেকট্রিসিয়ান কে নিয়ে যায় সুইচ বক্সের রুমে। সেখানে গিয়ে তার ঠিকঠাক ভাবে তারের জড়া লাগিয়ে নতুনভাবে সেট করল।
কারেন্ট চলে আসায় সবাই হাঁফ ছাড়ল এতোক্ষণ অন্ধকারে কেউ কাকে দেখছিল না।
লাইট চলে আসায় মিহু সিয়াম আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি ভাবি কি রে এরা তাকায় কেন আছে এমন ভাবে আর হাসছেই বা কেনো?
পরে মুখ পাশে ঘুরিয়ে দেখি নাহিল ভাইয়া আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে নাক দিয়ে ঘষা দিচ্ছে।
পুরো বরফ বনে গেলাম। একচুল পরিমাণ নড়তে লজ্জা লাগছে।
ওরেএএএ বাবা কখন থেকে উনি মুখ গুঁজে আছে? ছি কি লজ্জা !
—-“শু….শুনেন……হুমম। আ….আপনি সরেন।
কেন? বলে ভ্রু কুঁচকে মুখে তুলে আমার দিকে তাকায়।
—-“ইয়ে….না মানে লাইট অন হয়ে গেল।
—-“তো এতে আমি কেন সরব?
—-“আহেম আহেম ভাই আমরা আছি তো।
সিয়াম গালে হাত রেখে কাশার ভান করে বলে।
—” তো তোদেরকে আমাদের সামনে কে থাকতে বলছে যাহ্ পাশে তো আরো রুম আছে। আমাকে আমার রোমান্স কনটিনিউট করতে দে।
আসো বেব……আমি চোখ গোল করে বললাম। বলেন কি মিয়া? লজ্জা শরমের মাথা খেলেন নাকি?
—-“কেন ওরা তো গেছে । চলো আমরাও চিপায় যাই কি বলো? চোখ মেরে নাহিল ভাইয়া কথাটি বললেন।
আমি অবাক হয়ে শুধু উনার মুখখানি দেখছি।
—-“ছিহ্ চিপা গলির মাল। সরেন সরেন….বলে আমি উঠে চলে যেতে লাগলেই আমার হাত ধরে ফেলেন উনি।
আমি পিছে ঘুরে দেখে উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব করে আছে।
—“কোলে এসে বসো নইতো টান দিয়ে বসাবো।
উনার কথা শুনে আমি মাথা ডানে বামে নেড়ে নিজের হাত সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু বেহায়া চিপার মাল দিল টান আমারে।
গিয়ে জট করে উনার গলা জড়িয়ে জোরে জোরে আল্লাহহহহহহ আরে আপনি এমন কেন করছেন দেখেন আশেপাশে কত মানুষ আর আপনি সবার সামনে বেইজ্জত করতেছেন।
—-“ওরে লজ্জাবতী রে। সবাই জানে ইউ আর মাই ড্রাগলি লাভলি ওয়াইফ।
—-“তাও ছাড়েন গিয়ে আপনার কাজ দেখেন।
উনি রেগে চট করে আমারে উঠিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে যান। একটু চেঁচানি দিয়ে বলেন।
—-“যাহ আনরোমান্টিক বউ।
উনার ফেসের এক্সপ্রেশন দেখে বেশ মজাই পেলাম।
নাহিল সিয়ামকে নিয়ে লাশটার কাছে গেল।
—“কন্সটেবল লাশটাকে আমার মুখের দিকে ফেরাও।
কন্সটেবল তাকে ফিরিয়ে নাহিলের দিকে করলে দুইজনই আশ্চর্য হয়ে যায়।
লাশটার টি-শার্ট হলো পিজ্জা কোম্পানির।
—-“ভাইইই পিজ্জার মধ্যে অবশ্যই কিছু আছে।
—-“চল চল…
মিহু ড্রাইনিং রুমে এসে পানি খাচ্ছিল। তখন পিজ্জার বক্সের দিকে চোখ পড়ল সে পানি খেয়ে এসে পিজ্জাটা হাতে নিল।
—-“ইয়ামি তখন তো চোরের কারণে খেতেই পারলাম না। এখন নাও খাই……
মিহু পিজ্জার এক টুকরো হাতে নিয়ে মুখে পুড়তে নিলেই সিয়াম এসে মিহুর হাত ঝাকানি দিয়ে পিজ্জাটা ফেলে দে।
বক্সসহ তার হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়।
নাহিল নাজিয়াও এসে দাঁড়িয়ে যা দেখলো তার জন্যে মুটেও প্রস্তুত ছিল না। পিজ্জার টুকরোগুলো থেকে কেঁচো বের হচ্ছে।
—-“আহহহহ. নাজিয়া ভয়ে চিৎকার দিয়ে নাহিলকে জড়িয়ে ধরে। মিহু হঠাৎ হুঁশ হারিয়ে ফেলে। সে দৃশ্যটা মনে নিতে পারছিল না তাই হুঁশ হারিয়ে পড়তে নিলে সিয়াম তাকে ধরে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে যায়।
নাহিল ডক্টরকে ডেকে মিহুর ট্রিটমেন্ট করায়।
—-“নাজিয়া পানি খাও।
নাহিল পানি এগিয়ে দিলো। নাজিয়া পানিটা নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে টেবিলে রাখে।
নাহিল হয়তো আমার ভয়ার্ত চিন্তাভাবনা বুঝতে পারছেন। উনি মজার চলে আমার কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরেন।
আমার মুখের কাছে তাকিয়ে বলেন।
—-“জানো একটা সুযোগ পাইছি বউয়ের সাথে সময় কাটানোর।
ভ্রু কুঁচকে বলি।
—-“কিভাবে?
—-“তোমার আব্বু আম্মু গ্রামে গেছে। তুমি বাসায় একা আমিও একা। দুই একলা মানুষ মিলে যা করে তা করতে পারব।
—-“কি অসভ্য ভাবা যায়?
—-“তোমার প্রেমে অসভ্য হতেও রাজি।
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উনি বললেন।
আমি লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নি। মন তো চাচ্ছে উনার কাছ থেকে উঠে লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যায়।
নাহিল দুষ্টুমির ফেস করে বলে।
—-“Be careful beb rather i will lose my control.
—-“যাহ শান্তি ভাবে বসতেও দিবে না। যান তো অযু করে নেন একসাথে আসরের নামাজ আদায় করব।
উনি আমার কথায় মুচকি হেসে কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলেন। আমিও টুকিটাকি কাজ করে ফেলি। উনি বের হলে ফ্রেশ হবো।
_______
—-“এই প্লেনও ফ্লপ করে দিলো। নাহিল কি কম ছিল যে এখন এর বউ ও মাঝ খানে নাক ঢুকাচ্ছে।
বউ ও কোনো ক্ষেএে কম না বুঝাই যাচ্ছে। সাহস তো দেখো মেয়েটার আমার লোকের সাথে গেম খেলছে।
বাহ্ ভাবছিলাম নাহিল এর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ব্লেকমেইল করব। কিন্তু না এখন এর চেয়েও বড় ধামাকা প্লেন বানাতে হবে।
ভেবে ভেবে রকিং চেয়ার থেকে উঠে হাতে সিগারেট নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ফুঁ দিতে থাকে।
—-“হুম বিশাল রাত হবে। পূর্ণিমার রাতে ধামাকা করব এই শহরে। হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
I know Nahil you will arranged the biggest party of that moonnight. ব্যস পূর্ণিমার রাত তোমাদের শেষ রাত হবে বোমমমমমমম হাহাহা।
নোইয়ামুল পাহাড়ি জায়গায় দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শয়তানি হাসি দিতে থাকে।
………চলবে…….