ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২৩ (Moonlight)

0
2656

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২৩ (Moonlight)
লেখিকা: তামান্না

—“গায়েস সবকিছু রেডি তো?
মিহু সব সাভেন্টসকে একসাথে করে জিগ্গেস করল।
সব সাভেন্ট একসাথে জি আপু বলে সম্মতন দিল।
এক সাভেন্ট মিহুকে দেখে বলে।
-“আপু আজ তোমায় খুব সুন্দর লাগছে!
-“ধন্যবাদ আপু খারাপ দেখেও সুন্দর বলার জন্যে।
মিহু দুষ্টুমি করে কথাটা বলে।

কিন্তু সাভেন্ট আপু যে সিরিয়াসলি নিল।
–“না না আপু সত্যি বলছি। আল্লাহ প্রমিস!
—“ওও..ওকে ধন্যবাদ।

—“কি চলছে তোদের মাঝে?
আমি এসেই মিহুর কাঁধে হাত রাখলাম। সাভেন্ট ভাইয়া আর আপুরা তো চোখ বড় করে তাকায়। এমন কি মিহুও হা করে তাকাল। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি।
—“হু এতোই খারাপ লাগছে যে হা করে তাকিয়ে আছো সবাই?

—-“দোস্তওওওও মিহু ডেকেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি এমনেই এতো ভারি গাউন পড়লাম। তার উপর মিহুর এভাবে আচমকা জড়িয়ে ধরায় হেলে দুলে যাচ্ছি। হেঙ্গলা হলে যা হয়।
—“দোস্ত আস্তে পড়ে যামু তো।
মিহু ছেড়ে মুচকি হেসে সরি বলে। আমিও তাকে এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

—“আজ চাঁদ কোন দিকে যে উঠবে? আমাদের মিহু জি তো শাড়িতে বউ এর ফর্মে লাগছে। কি চলে হ্যাঁ?
মিহু লজ্জার ফেস করে আমতার বনীতে বলে।

—“আরে দূর কিছুই না এমনেই মুনলাইট নাইট তাই একটু শাড়ি পড়েছি গর জিয়াস দেখে।

—“হুম হুম সব বুঝি কাকে মারার প্লেন চলছে থাক পরে তো ঠিকই জানবো।
এই বলে আমি আব্বাজানের কাছে চলে আসি। উনি কিছু খান নি উনার জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতে লেগে পড়ি।

—“নাজু তোরে এখন কিভাবে বলি? আমি যে সিয়াম কে ভালোবাসি। কিন্তু নিহাও তো তাকে ভালোবাসে। আমি কেনো ওদের মাঝে কাটা হতে যাবো। তবে আজ সুন্দর চাঁদময় রাতটিতে যেনো আল্লাহর চমৎকার হোক।
মিহু আড়ালেই সিয়ামকে আগে থেকে ভালোবাসতো। তার বাসায় অনেক প্রপোজালও এসেছিল কিন্তু শুধু আড়াল করা ভালোবাসায় যেনো ছিল তার প্রিয়। সে প্রথমেই নিহার থেকে জানতে পারে যে নিহাও সিয়ামকে ভালোবাসে। যখন নিহার ধর্ষণ করা হয় তখন সিয়ামের উওেজিত হওয়া কেয়ারনেস সবই যেনো ভালোবাসার দিক দাবি করতে থাকে নিহার জন্যে। তখন মিহু নিজেকে দূরে ঠেলে।
সে চাই না নিজের বন্ধুত্বের মাঝের সম্পর্কটা নষ্ট হোক তাই সে খুশি মনে মেনে নে।
আজ সিয়ামের জন্যে রেডি হয়েছে অন্তত এটুকু আশা সে যেনো আমার সাথে কিছুটা সময় স্পেন্ড করুক। হোক সেটা বন্ধুত্বের; ভালোবাসা না হলেও সে আমার সাথে সময় কাটাবে তার চেয়ে বেশি আর কি দরকার?

মিহু ভাবছে তখন সে তার ভাবনার ঘোরে পিপাসিত হওয়ায় ওয়েটার থেকে জুস নিতে একজন ওয়েটারকে ডাকে। তার আগেই অন্য ওয়েটার মিহুর পাশ ঘেষে যেতে দেখে ফেলে সে।

—“এক্সকিউজ মি ভাইয়া! আমার জুস লাগবে।
ওয়েটার দাঁড়িয়ে চুপ হয়ে যায়।
ওয়েটার মিহুর কথায় বুঝে যায় যে সে তাকে চিনে নি।
সে চোখজোড়া সরু করে আশেপাশে দেখে নে। এক হাত দিয়ে মাস্কটা ভালোভাবে মুখে পেঁচিয়ে নে।

পিছে ঘুরে মিহুর দিকে এগিয়ে এসে বলে।
—“Yes mam. Which one you want to drink?
মিহু ফোন টিপতে টিপতে কোক এর স্ফট ড্রিংক টা নে।

—“Thanks mam.
এই বলে ওয়েটার চলে যেতে নিলে মিহু আবারো ডাক দে।
—“ভাইয়া আপনার কণ্ঠ চেনা চেনা লাগছে! আপনার সাথে কি আগে কথা হয়েছিল?
একটু এদিকে দেখবেন মাস্কটা খুলেন?

ওয়েটারের হাত কাঁপতে শুরু করে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে আগাতে গেলে মিহু ড্রিংকটা রেখে কড়া গলায় দাঁড়াতে বলে।
—“দেখি পিছে ঘুরেন তো!
মিহু ওয়েটারের ঘাড়ে হাত দিতে গেলেই নাজিয়া ডাক দে।

—“মিহুওওও আরে ঐ দিকে কি করিস? এদিকে আয় দেখ চাঁদ মেঘের আড়াল থেকে বের হবে।
নাজিয়ার কথায় মিহু এক্সসাইটেড হয়ে ড্রিংক এর গ্লাস ওয়েটারের হাতের ট্রের উপর রেখে সেদিকে চলে যায়।

ওয়েটার নিজের রুমাল বের করে কপাল মুছে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মিহু আর নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে সেখান থেকে কেটে পড়ে।

____

—-“আঙ্কেল একটু তাড়াতাড়ি করেন। হিল হাউজে পৌঁছানোটা খুবই জরুরি।
নিহা মাথায় উড়না টেনে একদম গরিব ঘরের মেয়ের মতো সেজে নিজেকে ছন্দবেশী গরিব মেয়ে বানিয়ে নে।

—“লাগছে সে আগে থেকেই চলে গেছে না হলে তাকে বাসায় কেন পাইনি? ইনর্ফমেশন পেয়ে তো গেছিলাম। তার সব সাথীই পরলোকগমন করছে। তাহলে এখন গমন করার বারি নোইয়ামুলের।

সিএনজি আঙ্কেল নোইয়ামুলের বাসার এখানে প্রথমেই নিয়ে গিয়েছিল। নিহা জানালা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে নোইয়ামুলের পুরো বাসা চেকিং দে।
তার পুরো বাসায় চেক দিয়েও নোইয়ামুলকে পাওয়া গেল না। কারণ সে সব গাঁটিবোস্কা রেখে শুধু ট্রান্সমিট নিয়ে গেলো।
বাসার থেকে বের হতে গেলেই নিহা হিল হাউজের কার্ড পাই। সেই কার্ডের এক্সট্রা কার্ড টেবিলের কোণায় পড়ে ছিল। নিহাও কার্ডটা নিয়ে নে। হিল হাউজে প্রবেশ করতে কার্ডটায় দেখবে।
নিহা ভাবছে তখন সিএনজি আঙ্কেল বলে।

—-“কিতা হইলো মা তোয়ার? ওরে ক্যান যাইতে চান।
—“কিছু না আঙ্কেল আমার বান্ধবীদের সাথে শেষ দেখা করতে যাবো।

—“ক্যান মা বাদে আর দেহা নো গরিবা?
(কেনো পরে কি আর দেখা করবে না-মিনিং)

—“হয়তো না আঙ্কেল আজ শেষবার দেখা করব।
—“ওও আচ্ছা মা তোয়ার তরফ যেন আল্লাহ পূরণ করুগ।

নিহা মুচকি হেসে আমিন বলল।
কিন্তু নিহার মনে কি চলছে সেটা তো শুধু সেই জানে।

______

—-“স্যার এখানে কোনো ক্লু নেই। এখন কি করবেন?
সেহেলের কথায় নাহিল ব্লুটুথ অফ করে নিজের হাতের মধ্যে প্রেস লোকেশন ঘড়ি পড়ে নে। কানে আবার ব্লুটুথ অন করে সেহেলকে বলে।

—“শুন আমি হিল হাউজের পার্টিতে যাচ্ছি। তোরা লোকেশন ট্রেস কর। এজাম নিজের বাড়িতে নেই সব জিনিসপএ ফেলে শুধু ট্রান্সমিট নিয়ে গেছে। তার মানে সে নিজেও মরার প্লেন করছে সাথে অন্যদেরকেও।
আমাদের যেভাবেই হোক মানুষদের আহত মৃত্যুর কবল থেকে বাঁচাতে হবে। ট্রান্সমিট কোনোভাবেও ব্লাস্ট হতে দেওয়া যাবে না। গট দ্যাট?

সেহেল হ্যাঁ বলে কল রেখে দে। নাহিল সিয়াম এর সাথে গাড়িতে বসে আলাপ করছে। গাড়ি নিজ জায়গায় ঠিকমতে চলে আসল।
হিল হাউজের সামনে রিপোর্টস এসে জনমানবের মধ্যে সেলিব্রেটি বিখ্যাত বিজনেসম্যান উমেনদের স্বাগতম এর সাথে কমিউনিকেশন করার জন্যে ঠেলাঠেলি করছে।
যখনই নাহিল এর গাড়ি আসল।
সবাই একদিকে নজর দিয়ে রাখল।

এক রিপোর্টার তখন রিপোর্টিং করা শুরু করে।
—“সবাই প্রস্তুত তো আমাদের বড় বিজনেসম্যান যার সুনাম অহরহ শুনতে পান তাদের মধ্যে একজন হলেন মিস্টার নাহিল ইয়াদিস চৌধুরী।

ড্রাইভার এসে দরজা খুলে দিল।
নাহিল কে দেখে তো অনেক মেয়ে চিল্লিয়ে উঠে।
—“আই লাব ইউ নাহিল……মেয়েদের এমন কথায় আমার মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে তাও কিছু করতে পারছি না। মিহু আমায় নাড়া দিয়ে বলে।

—“জ্বেলাসি কন্ট্রোল কর দোস্ত।
নাজিয়া চুপ করে দেখতে থাকে ঢংগিদের কান্ড।
নাহিলকেও যে আজ কতই না হ্যান্ডসাম লাগছে। ব্লেক জিন্স, সাদা শার্ট এর উপর লাইট পিংক ব্লেজার, স্পাইক করা চুল মুখের মধ্যে হাসির রেখাটায় টোল পড়ছে, কিলার লুকটায় ফিদা হয়ে গেলাম। এক হাত পকেটের মধ্যে গুঁজে আরেক হাত খোলা রেখে সামনে রিপোর্টস আর মেয়েদের ভীড় ঘেষে আমাদের কাছে আসল।

আমার মুখ ফুলানি দেখে গাল টেনে বলেন।
—“আমার বউকে পরীর চেয়েও সুন্দর লাগছে খুব।
আমি শুনে মুচকি হেসে দিলাম।

সিয়াম মিহুর পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায়। মিহুকে কিছু বলতে না দেখে সিয়াম নিজেই বলে।

—“তোমাকে কিউট লাগছে মিহু।
মিহু তো এরকম কিছুই ভাবছিল যেনো সিয়াম নিজ থেকে কথা বলে। তার ভাবনার মাঝেই সিয়াম কথাটা বলে।
মিহুর রেসপন্স না পেয়ে সিয়াম বলে।
—“আচ্ছা সরি ভুলে বলেছি।

—“আরে না না ঠিকই আছে।
সিয়াম শুনে হাহা করে হেসে দিল। মিহুও নিজের কথা বুঝতে পেরে লজ্জা পাই তাও সিয়ামের মুখে স্মাইল দেখে তার হৃদয়ে শান্তির বন্যা বয়ে গেল। সেও হেসে সিয়ামকে বলে।
—“তোকেও আজ কম হ্যান্ডসাম লাগছে না বস!
—“ও তাই হাহাহা।
দুইজন মিলে কথা বলতে লাগে।

সবাই মিলে রাতের বারোটার অপেক্ষা করছি। চাঁদ পরিপূর্ণ ভাবে ঠিক বারোটার দিকে দেখা যাবে। যেমন বলা ঠিক তেমনই হলো বারোটা বাজতে আর দুইমিনিট।
পুরো আকাশের মধ্যে থেকে মেঘ সরে গেল। আকাশের তারা গুলো জিকিমিকি হয়ে চলাচল করছে। চাঁদের আলোর জিলিক পুরো পৃথিবীর মধ্যে আলো ছড়াতে লাগে।
আমি নাহিলের ঘাড়ে হাত রেখে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। উনিও আমায় আগলে নিল।

মাস্ক পরা ওয়েটার সে বাহিরের থেকে উঁকি দিয়ে দেখল সবাই চাঁদের জোৎস্না রাত উপভোগের মাঝে মেতে আছে।
—“সুযোগ হাতে আসল ট্রান্সমিটটা কারো ব্যাগে রেখে বেরিয়ে যেতে পারলেই হলো।
নোইয়ামুল ভেবেই ট্রান্সমিট রাখার জন্যে বড় ব্যাগের সন্ধান করে তখন তার নজরে আসল। ডাস্টবিনের কালো পলিথিন। সে ট্রান্সমিটটা নিয়ে ডাস্টবিনে রেখে দিল।
রিমোট টা পকেট থেকে বের করে দরজার দিকে আগাতেই সিকিউরিটি গার্ডসকে দেখে।

—-“অন্য কোনো জায়গা থেকে পালাতে হবে। বোম এক্টিভেইট করলে আমিও মারা যেতে পারি। না তা কেন হবে এত টাকা কি শুধু শুধু ওয়েস্ট যাবে;
না তা কখনো হতে দেবো না।
নোইয়ামুল হাত মুঠো করে উওেজিত হয়ে অন্য কোনো জায়গা খুঁজতে যেতে লাগে তখনই তার কাঁধে কেউ একজন হাত রাখে।
নোইয়ামুল দাঁড়িয়ে যায় সে নিজের পকেটে রাখা পিস্তলে চেপে ধরে বের করে পিছে……

চলবে……?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here