নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০২
লেখিকা:সুরভী আক্তার
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে অন্য একটা জামার সাথে হিজাবটা বেঁধে নিলাম।ব্যাগ টা কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগলাম।সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত তাই কেউ আমাকে খেয়াল করল না। বিশেষ করে সৈকত।সে আমাকে দেখেও ইগনোর করল। মনে হলো যেন এখনি কেঁদে ফেলব তবুও নিরবে বাড়ি থেকে বের হলাম। চাচার সাথে কে জানি ছিল আমি চিনলাম না।চাচা জিজ্ঞাসা করল আমি কোথায় যাচ্ছি?
আমি বললাম আমার কাল পরিক্ষা আমার যেতে হবে।আমি শুধু আপুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
চাচা আবার পড়াশোনা নিয়ে বেশ সিরিয়াস তাই বললো ভালোভাবে পড়তে।
বাসায় এসে কলিং বেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে অবাক হলো কারণ আমি বলেছিলাম থাকব কিন্তু চলে এলাম। আম্মুকেও পরিক্ষার কথা বলে ম্যানেজ করলাম আর বললাম মাথা ব্যথা করছে তাই আমি ঘুমোতে চাই। আম্মুও কিছু বলল না।
ঐদিকে,
চাচী আপুকে আমার কথা জিজ্ঞেস করছে যে,আমি কোথায়?
আসার পরই আপু রান্নাঘরে ছিল তারপর গোসল করতে চলে গেছিল তাই সে বলল সে আমার খবর জানে না।
চাচী আপুকে বললেন, তিনি নাকি আমাকে সাকির ভাইয়ার রুমে ফ্রেশ হতে বলেছিলেন তারপর কি সে রুমেই আছে?
চাচীর কথা শুনে আপু ঢোক গিলল কারণ সেই সৈকতকে সাকির ভাইয়ার রুমে পাঠিয়েছিল ফ্রেশ হতে।
আমাকে খোঁজার নাম করে আপু চাচীর কাছ থেকে সরে এলো।
সে সর্বপ্রথম সৈকতের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল”তুমি কি লাবণ্যকে দেখেছ?”
“লাবণ্য কে ভাবি?”
“আমার বোন, তোমার গাড়ির পাশে মেবি তুমি ওর সাথে কথা বলছিলে সেই মেয়েটা!”
“সেই চরিত্রহীন মেয়েটা তোমার বোন হয়?”তাচ্ছিল্যের সাথে বলল সৈকত
মানহা চমকে বললো”এভাবে কেন বলছ সৈকত?”
কারণ….
এর আগেই মানহার আম্মু লাবণ্য কে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছে। তিনি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে লাবণ্যর নাম ধরে ডাকছেন।তার চিল্লাচিল্লিতে সবাই ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়।
চাচা জিজ্ঞাসা করেন এভাবে চেচানোর কারন কি?
চাচী বলেন”লাবণ্যকে সাকিরের রুমে ফ্রেশ হতে বলেছিলাম কিন্তু তারপর কোথায় চলে গেল?”
চাচা নিজেকে শান্ত করে বললেন”তাই বলো!আমি তো ভাবলাম কি না কি! লাবণ্যতো বাসায় চলে গেছে!আমার সাথে দেখা হয়েছিল বলছিল তার নাকি পরিক্ষা আছে সে শুধু মানহার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।”
সৈকতের এবার নিজেকে গালি দিতে মন চাচ্ছে,সে সত্যটা না জেনেই মেয়েটাকে এত কথা শুনালো।”ভাবি যেমন আমাকে সাকিরের রুমে ফ্রেশ হতে বলেছিলো তেমনি ভাবির আম্মু ঐ মেয়েটাকে বলছিলো।Oh shit! আর আমি না জেনেই তাকে চরিত্রহীন বলেছি।I think ও কষ্ট পেয়ে চলে গেছে কোন পরিক্ষা ছিল না।এ বিষয়ে আমার ভাবির সাথে আলোচনা করা উচিৎ”মনে মনে ভেবে রাখল সৈকত।
সবাই খেয়েদেয়ে যে যার রুমে চলে গেল।মানহার মনটা ভালো নেই। এতদিন পর মেয়েটা এসেছিল কিন্তু ঠিক মত সময়ই কাটাতে পারলো না।
অনেক ভেবে চিন্তে সৈকত মানহার ঘরের সামনে এসে নক করল। সৈকতের ভাই সাগর এসে দরজা খুলে দিল।আর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল”কি চাই?”
“ভাবিকে”
“কেন?”
“তুই বুঝবিনা ভাই ডাকনা!”
“তোর বড় হই,বুঝবনা মানে?”
“আবে সালা ১ বছরের বড় হয়ে এত ভাব নেস কেন?”
“কি হয়েছে?”জিজ্ঞেস করল মানহা
“ভাবি!একটা হেল্প চাই প্লিজ! বাইরে আসো”
“কি এমন হেল্প যা তোর ভাইকে বলা যায় না”
“আহা শুনিই না!”বলল মানহা
সাগর ভেংচি কেটে ঘরে চলে গেল।
সৈকত মানহাকে নিয়ে ছাদে এসে ঘরে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বললো। বলার সময় ওর অবশ্য একটু লজ্জা লাগছিল কারন ব্যাপারটা মেয়েলি।
সব শুনে মানহা হতাশ হয়ে বলল”তো,এখন তুমি কি চাচ্ছ?”
“ক্ষমা!ক্ষমা চাই”
“মনে হয় না পাবে কারণ একজন ভালো মেয়ের চরিত্রই সব আর তুমি সেখানেই আঘাত করেছ”
“তবুও!আমি তো জানি আমি কেমন আচরণ করেছি। যতক্ষণ আমি তার কাছে ক্ষমা না চাচ্ছি আমি নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে থেকে যাব।প্লিজ! একবার দেখা করায় দাও”
“ওদের বাসায় গেলে তো তোমাদের আলাদা কথা বলিয়ে দিতে পারব না,তাই কাল পর্যন্ত তোমার ওয়েট করতে হবে।সে এমনিতে বাসা থেকে বের হয় না।তাই কাল যখন সে ভার্সিটির জন্য বের হবে তখন কথা বলিয়ে দেব but ততক্ষন পর্যন্ত wait করতে হবে”
এই বলেই মানহা নিচে নেমে আসলো।
চলবে….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)