নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৩

0
4944

নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৩
লেখিকা:সুরভী আক্তার

ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম বিকাল হয়ে গেছে। কেন ঘুমিয়েছিলাম ভাবতেই আবার সৈকতের কথাটা মনে পড়ে গেল।
মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে। ওখান থেকে গোসল করে বেরিয়েছিলাম আর এখানে এসেই শুয়ে পড়েছি।ভেজা চুলে শুয়ে পড়ার জন্য মাথা ব্যথা করছে আর চুলও ভেজা আছে এখনো।
দরজা লাগিয়ে শুয়েছিলাম। কিন্তু আমার ওড়না কই?
ঘুমালে যে ওড়না কোথায় হারিয়ে যায়!সব খুঁজে খুঁজে দেখছি একদম বিছানার শেষ প্রান্তে কম্বলের নিচে ঢুকে আছে।আমি গরমের সময়ও হালকা পাতলা একটা কম্বল রাখি। মাঝেমাঝে বৃষ্টি হলে টুপ করে গায়ে দিয়ে দেই।ওড়নাটা গায়ে দিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম।
সেখানে হেয়ার ড্রায়ার আছে।এট ফার্স্ট চুল শুকাব। আমাকে দেখে আম্মু উঠে নাস্তা বানাতে চলে গেল। যেহেতু বিকাল হয়ে গেছে একটু পর আম্মু এমনিতেও বানাতো।
নাস্তা খেয়ে মাথা ব্যথার ওষুধ খেলাম।আর শুয়া যাবে না শুইলেই মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।ঘরে এসে জানালার কাঁচ টা সরালাম,একটু প্রকৃতি দেখি। হঠাৎ একটা সুন্দর পাখি একটু দূরের ডালে বসল।আমি আবার সবকিছুর ফটো তুলতে ভালবাসি।এইটাও মিস করব না!
ফোনটা হাতে নিতেই দেখি মানহা আপুর অনেক কল। আমি চলে এসেছি শুনে কষ্ট পেয়েছে হয়ত!কিংবা সৈকত সব বলে দিয়েছে হয়ত।

একবার কি কল করব? করেই দেখি।
যা অপমানিত হওয়ার তাতো হয়েইছি কিন্তু আপু আমাকে বেশি কিছু বলতে পারবে না তা আমি জানি।

দুইবার রিং হওয়ার পর একটা ছেলে ওপাশ থেকে হ্যালো বললো,তো আমি ভাবলাম সেটা দুলাভাই। তাই আমি বললাম”দুলাভাই বলছেন?আমি লাবণ্য।আপু ফোন দিয়েছিল আমায় একটু দেওয়া যাবে?”

ওপাশ থেকে সৈকতের কন্ঠ স্বর আসতেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম।সে আমাকে কি জানি বলছিল”আমি সৈকত! আপনার সাথে…”
তারপর আমি কেটে দিয়েছি। আবার যদি অপমান করত!নাহ ফোনই করব না আর।
ফোনটা অফ করে পড়তে বসলাম। রাত আটটায় উঠে ডিনার করে শুয়ে গেলাম।না না ঘুমাবো না, আমি তাড়াতাড়ি শুধু শুই ঘুমাই না।

একটু পর কে জানি দরজায় টোকা দিল।আমি উঠে দরজা খুলে দেখলাম আব্বু।আমি দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে আব্বুকে ভিতরে আসতে বললাম।আমি বললাম”কোন দরকার আছে আব্বু?না মানে এই সময়?”

আব্বু বললেন”ফোন কোথায় তোমার?”

আমি টেবিলের দিকে একবার তাকিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম”ওইতো আব্বু টেবিলের উপর, কেন?”

আব্বু বললেন”ফোন বন্ধ থাকে কেন?মানহা তোমায় ফোন দিয়ে পায়নি বলে আমায় ফোন দিয়েছিল। বিকালে কি করছিলে?সবসময় তোমার ফোন অফ থাকবে নাহয় সাইলেন্ট কেন?..

“হয়েছে আব্বু!আমি বিকেলে ঘুমাচ্ছিলাম।আর পড়তে বসেছিলাম বলে ফোন অফ করে রেখেছিলাম। এখন তুমি যাও আমি ফোন দিচ্ছি।”

আব্বু আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার বিড়বিড় করে আমাকে বকতে বকতে চলে গেল।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম।

এবার আমি শুধু দোয়া করছি যেন আপুই ধরে। এবার তিনবার রিং হওয়ার পর আপু ধরল।

“এত দেরী কেন?কি করছিলা?”

“ঐ,,ইয়ে মানে..”

আমি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম”রোমান্স?”

আপু “ধুর” বলল আর আমি হো হো করে হেসে দিলাম।
তারপর আমি কথা ঘুরানোর জন্য বললাম কেন ফোন করছিলে

“তোর কোন পরিক্ষা নেই তাই না?”

এই কথা শুনেই বুঝলাম সৈকত আপুকে সব সত্যি বলে দিয়েছে। কেন করল‌‌ সে এমন? আমাদের দুজনের মাঝেই রাখতে পারতো কথাগুলো।এখন সত্যিটা যেহেতু আপু জেনেই গিয়েছে সেহেতু নতুন করে মিথ্যা বললে আবার মিথ্যাবাদীও হয়ে যাব।তাই বললাম-

“হ্যাঁ!”

“সৈকত তোকে ভুল বুঝলো তবুও নিরবে সহ্য করলি?”

“জবাব দেওয়ার মত পরিস্থিতিতে ছিলাম না।সে আমাকে কিছু বলারই সুযোগ দেয়নি।”

“দোষটা যেহেতু কারোরই না তাহলে চলে গেলি কেন?”

“তার দিকে তাকানোর সাহস ছিল না।”

“সে তোর কাছে ক্ষমা চায় তাই আমি ওকে তোর সাথে কাল দেখা করিয়ে দিব।”

“না না আমি তার দিকে তাকাতেও পারবো না!তুমি বরং ওকে বলে দিয়ো আমি ক্ষমা করেছি।”

“না পারার কি আছে? সে তোর সাথে কথা বলতে চায়।বাদ দে! বিকালে কি করছিলি?”

*ঘুমাচ্ছিলাম”

“আবার কল দিয়েছিলি শুনলাম”

“হুম, কিন্তু তোমার ফোন ঐ সৈকতের কাছে কি করছিল?”

“সৈকত নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনেক লজ্জিত ছিল।আমার মাথা খেয়ে ফেলতেছিল।তাই তো তোকে কলও করেছিলাম কিন্তু তুই ফোন তুলিস নি।আর টেনশনে ওর মাথা ব্যথা হয়ে গেছিল তাই চা বানাতে গেছিলাম। কিন্তু ফোন তো আর রান্নাঘরে নিয়ে যাব না তাই সে ধরেছিল।”

এরপর কিছু টুকিটাকি কথা বলে আমি ফোন রাখলাম।
আপু একদম পাকা কথার মেয়ে। সে যখন বলেছে দেখা করাবে মানে করাবেই। কলঙ্ক সরলো কিন্তু টেনশন উঠলো।
মানুষতো নিজের হাসবেন্ডের সামনেও কাপড় ছাড়া আসতে লজ্জা পায় আর আমি?
সে তো আমার আদৌ কেউ ছিল না, কোন মুখে দাড়াব?

চলবে…

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here