নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:১০

0
4856

নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:১০
লেখিকা:সুরভী আক্তার

কয়েকদিন আগে যখন আমরা ভার্সিটির জন্য বের হচ্ছিলাম তখন কোথায় থেকে জেন চাচা এসে হাজির হয়। শাশুড়ি মা উনার জন্য নাস্তা নিতে কিচেনে যান আর চাচা সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলেন”ভালই তো বৌকে পড়াচ্ছো আর কাজ করছে একলা আমার মেয়েটা তা সত্য টা কি বলে দিতে‌ হবে?”

“চাইলে বলতেই পারেন।এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে আর আপনি ওর চাচা হওয়ার আগে আমি ওর স্বামী। ওর সব দায়িত্ব এখন আমার, আপনার না।আর ও আমার স্ত্রী, ওকে আমি কি করব কি করব না সেটা আমাদেরই বুঝতে দিন।আর কাজের কথা বলতে গেলে আমাদের বাসায় জমিলা খালা আর উনার স্বামিকে যা বলা হয় তাই করে।তাই মানহা ভাবির সমস্যা হওয়ার কথা নয়”
এই বলে সৈকত আমার হাতটা ধরে নিয়ে চলে এল বাইরে।আমি শুধু আমাদের হাতের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।আলাদাই ভালোলাগা ছিল সেই আবদ্ধ হাতের মুঠোয় তার স্পর্শে।

সবসময় সৈকতই আমাকে ভার্সিটি দেওয়া নেওয়া করেছে।কখনো উনি না আসতে পারলে আমি একাই চলে আসতাম। উনার কখনো কখনো লেট হতো বলেই আমাকে প্রতিদিন ভার্সিটি রেখে আসার সময় জিজ্ঞেস করতেন আমার কাছে টাকা আছে কিনা।যদি না থাকতো তাহলে একেবারেই ৫০০-৬০০ দিয়ে দিত। কখনো যদি কাজে লাগে।আর উনিও যদি কোনদিন জিজ্ঞেস করতে ভুলে যান? তাই।

আজও ঠিক তেমনই হলো।আমার পরিক্ষার পর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই সৈকত জানালো তার আজ আসার টাইম হবে না।তো আমি যেন চলে আসি।আমি ভাবলাম এ আর এমন কি? কিন্তু আবার ভাবলাম আজ যেহেতু উনি আসছেন না তাই আমি আমার বহুদিনের ইচ্ছা পুরন করব। আমার ইচ্ছা ছিল আমার স্বামি যেই হোক সে যেন ভালো হয় আর আমাকে ভালোবাসতে জানে।তার মধ্যে তো সৈকত ভালো আছেই।ভাগ্যে থাকলে তার ভালোবাসাও পাব।আমি আমার লাইফের প্রথম কোন ছেলেকে গিফট দিতে যাচ্ছি। সারপ্রাইজ গিফট কিন্তু ছেলেদের পছন্দ অপছন্দ আমার ঠিকমত জানা নেই। যেহেতু কখনো কিনি নাই।তাই একটা ক্লাসমেট কে নিয়ে মার্কেট‌ যাচ্ছি।ও আমার প্রচুর হেল্প করেছে।স্টাডি থেকে শুরু করে।আর আমাকে বোনের থেকে কম চোখে দেখেনি কখনো।ওর কোন ভাইবোন নেই তাই আমাকেই বোনের চোখে দেখে প্লাস কখনো আমরা তুই তুকারি ছাড়া কথাই বলি নাই।সে যাই হোক। পাশের একটা মার্কেট থেকে আমি সৈকতের জন্য একটা পাঞ্জাবি নিলাম। আমার অনেক পছন্দের একটা জিনিস আই মিন সব ছেলেদের পাঞ্জাবিতে জোস লাগে!
ঘড়িও নিতে চাইছিলাম কিন্তু সেরকম একটা পছন্দই হলো না! আবার ভাবলাম ঘড়ি ছাড়া মানায় নাকি?তাই অন্য একটা দোকানে গেলাম।মার্কেটে সব দোকান পাশাপাশি তাই সেরকম কোন অসুবিধা হলো না।
ব্ল্যাক কালার ঘড়ি।রাতের বেলা লাইটের আলো পড়লে ঝলমল করবে। নীল পাঞ্জাবির সাথেও মানাবে।যদিও কালো রং প্রত্যেক রঙের সাথে মানানসই এমনকি তার বিপরীত রং সাদার সাথেও!

বাসায় ফিরে আসতে আসতে লেট হলো খানিকটা।মা জিজ্ঞেস করলেন দেরি করলাম কেন আমি বললাম আপনার ছেলের জন্য উপহার নিতে গেছিলাম

মা হাসলেন।আমি বললাম এটা কালকে দিব উনাকে তাই খাবার টেবিলেও যেন কিছু না বলে উনাকে।
সৈকতের আসতে লেট হচ্ছে।আজ কি মিটিং বেশিই লম্বা?
সৈকত বলেছিলেন পরিক্ষা শেষ হলেই আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন।আর কাল আমার লাস্ট এক্সাম।তাই গিফট আইটেম গুলোও কালকেই দিব।
আমি সৈকতেকে ফোন দিলাম বাট ধরল না। দুই তিনবার কল দেওয়ার পর ফোনটাই অফ করে দিল।আমি অবাক হলাম।আমি কি কিছু ভুল করেছি? সব চিন্তা কে মাথা থেকে সরিয়ে পড়তে বসলাম। সৈকত আসল তার একঘন্টা পরে। আমাকে পড়তে দেখে কিছু বলল না কিন্তু তার মন মেজাজ যে বিগড়ে আছে তা বুঝতে আমার প্রবলেম হলো না।তাই কিছু বললাম না।ডিনারের সময় ডিনার করে সৈকতই আগে রুমে ফিরল আর শাশুড়ি মা আমার থেকে জানলেন কি কি কিনলাম তাই ওগুলো বলতে গিয়ে একটু দেরি হলো।এখন গিয়ে শুয়ে পড়ব কারণ আরেকটু পড়া আছে যা সকালে করতে হবে এবং সকালেই আমি খানিক পড়া করি কারণ রাত্রে সব একসাথে পড়তে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি।

রুমে গিয়ে দেখলাম সৈকত চোখ বন্ধ করে বুকে হাত ভাজ করে শুয়ে আছে।আমি জানি সে এখনো ঘুমায়নি।আমি লাইট টা অফ করে তার পাশে শুইতেই সে বামদিকে ফিরে গেল।আজব তো!কি হয়েছে এমন?এত রাগ,মান অভিমান কেন?আমি কি করসি?

আমি তার ওপর হাত দিতেই সে আমার হাতটা সরিয়ে ফেলল।আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম”কি এমন হয়েছে? বললেন নিতে আসতে পারবেন না, ফাইন! ফোন ধরলেন না আমার সাথে ঠিকমত কথা বললেন না এমনকি তাকালেনও না আবার এখন আমাকে ইগনোর করতেসেন? প্রবলেম টা কি?”

“আমি তোমাকে নিতে যাইনি বলেই আরেকটা ছেলের সাথে তুমি রিক্সায় ঘুরছো রাইট?”শান্ত কন্ঠে এসব বলেই আমার দিকে ঘুরল সৈকত।আমি বুঝলাম না।ও কি আরফির (আমার ক্লাসমেট)কথা বলছে? কিন্তু সে তো আমাকে নিতে যায়নি নাকি গিয়েছিল?

“কি হলো বলো”বলল সৈকত

“আসলে সে আমার ভাইয়ের মত।তার কি জানি মেয়েদের জিনিস লাগত তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গেছিল চয়েস করে দিতে”
নিজের প্রয়োজনটাকেই আরফির নামে চালিয়ে দিলাম আর গিফট এর কথাটা লুকিয়ে গেলাম কারণ আমি কাল ওকে সারপ্রাইজ দিবো মানে কালকেই দিব।

“ওহ রিয়েলি? দেন ছেলেদের জিনিস কিনছিলা কেন?”হালকা জোরে বলল সৈকত

আমি হালকা ভয়ে বললাম”আপনি ছিলেন ওখানে?”

“কেন প্রবলেম করেছি?”

আমি কিছু বলতে গেলেই সৈকত হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে”এনাফ! অনেক শুনেছি এন্ড আর কোন কৈফিয়ত চাচ্ছি না আমি তোমার থেকে।যদি আর কিছু বলো দেন তোমার পড়াশোনা অফ করতে আমার একটু টাইমও লাগবে না”বলেই সৈকত আবার আমার পাশ ফিরে শুয়ে গেল। আমার মন খারাপ হলো। শেষে কিনা ভুল বুঝলো? আমাদের সম্পর্কটাই শুরু এই ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে। সৈকত কি আমাকে কখনো বুঝবে?ওকি কখনো আমাকে বিশ্বাস করবে?

চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here