নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:১১
লেখিকা:সুরভী আক্তার
সকালে,
সৈকত ঘুম থেকে উঠে দেখল অনেক লেট হয়ে গেছে আর পাশে লাবণ্য নেই।ও কি একা চলে গেছে?মাথা ঘামালো না সৈকত।
ফ্রেশ হয়ে তার জিনিস গুলো বের করতে গেলেই একটা চিরকুট পেলো সে। কৌতূহল বশত হাতে উঠিয়ে দেখল একটা কাগজ দুই ভাঁজ করা আছে আর উপরে লিখা আছে”প্লিজ পড়বেন”
সৈকত বুঝলো এটা লাবণ্যর কাজ।কাল ঠিক মত তার কথা শুনিনি আমি তাই ও লিখেছে।কি লিখবে? কৈফিয়ত?পড়েই দেখি নতুন কি কাহিনী।
“সৈকত,”
“আমি জানি আপনি রাগ করে রাতের সকল কথা বলেছেন কিন্তু একটাবার আমার কথা শুনে দেখতেন। আমাকে বোঝার চেষ্টা করতেন বিশ্বাস করতেন!
আমাদের বাসায় যখন রিফা আপু আপনার সাথে ওমন করেছিল আমিও তো আপনাকে ট্রাস্ট করেছিলাম।সেটা ছিল বিয়ের দ্বিতীয় দিন কিন্তু দেখুন, বিয়ের এক আধ মাস পরও আমার প্রতি আপনার বিশ্বাস টুকু আমি অর্জন করতে পারলাম না।আফসোস! আপনার নিকট আমি সেই চরিত্রহীনই থেকে গেলাম।
সে যাই হোক, কালকে আপনি বলেছিলেন না আমি ছেলেদের জিনিস কিনেছি কিন্তু আপনাকে মিথ্যা বললাম।সেটা ঠিক। কিন্তু কিনেছি আপনার জন্যই আর মিথ্যা বলেছিলাম যাতে আপনাকে আজ সারপ্রাইজ দিতে পারি। কিন্তু আপনি ভাববেন আজই কেন?আজ কি বিশেষ কিছু?
তাহলে বলব বিশেষ কিছুই না।আজ আমার লাস্ট এক্সাম আর আপনি বলেছিলেন আমাকে আজ বাসায় ঘুরাতে নিয়ে যাবেন তাই জন্য কেনা।
আর যে ছেলের কথা আপনি বলেছিলেন সে সত্যিই আমার ভাইয়ের মত। আমাকে নিজের বোনের মতই ভাবে।ওর চোখে আমি কখনো কামনা দেখিনি আমার জন্য। শুধু আমার জন্য নয় অন্য মেয়েদের জন্যও।আমি ছেলেদের জিনিস কখনো তেমন কিনিনি।কিনবই বা কিভাবে আমার তো কোন ভাই নেই নাহলে আম্মু যখনই তার জন্য কিনত আমি দেখতাম।
আপনি কাল আমাকে নিতে আসেন নি বলে আমি বাসায় না গিয়ে কিনেছিলাম সেসব।যা কিনেছি তা আপনার জন্যই। বিশ্বাস না হলে মাকে বলে দেখুন।তিনি আমার দেরি করে আসার কারণ জানেন।যদি আপনার রাগ কমে থাকে তাহলে আলমারির মধ্যে যে গোলাপি ব্যাগ আছে সেটা চেক কইরেন।
আপনার যদি আমার ওপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস থাকত তাহলে আমার পিছন পিছন মার্কেট এসেও আমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আবার ফিরে যেতেন না। আমাকে সেখানেই জিজ্ঞেস করতেন।
আর সেখানে সিনক্রিয়েট না করতে চাইলে বাসায় এসেও কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা যেত।
আজ যদি এসব না বলতাম তাহলে হয়তো ডিভোর্স নিতেও টাইম নিতেন না তাইনা?
কারণ আপনিতো আমায় বিশ্বাসই করেন না।বিশ্বাস করতে শিখুন সৈকত। বিশ্বাস সকল সম্পর্কের মূল।
অবশেষে এটাই বলব এখন আমার মনে হয় আপনি জেদের বশেই হয়ত বিয়ে করেছেন আমায়।”
সৈকত অনুতপ্ত হলো। লাবণ্য তার ব্যাপারে এরকম ধারণা রাখে?
অবশ্য রাখবেনাই বা কেন?আমি তো কখনো তাকে বিশ্বাসই করলাম না!সম্পর্ক টার মূল তো সেই অবিশ্বাস!কাল মিটিং ক্যানসেল হওয়ার পরও যদি একটা বার ওকে ফোন করে নিতাম!
ওকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না। কিন্তু আমি এটা কবে ভুলে গেলাম যে, রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্তে সবসময় পস্তাতে হয়।কাল কি রুড ব্যবহারই না করলাম তার সাথে।সে যদি আজ বুঝিয়ে না বলত?
আমি তার চেয়ে বড় হয়েও এত immature হই কেমনে?
ওহ মেয়েরা তো আবার দ্রুত mature হয়।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ডাইনিংয়ে আসল সৈকত। সৈকতের মা সৈকতকে বকতে বকতে ওকে নাস্তা দিল। কারণ সে দেরি করে ফেলেছে আর তার কারণে লাবণ্য একা একা গেছে।
সৈকত এখনো নিজের doubt clear করতে পারছে না (কি অসভ্য ছেলে ভাবা যায়? এতকিছুর পরও নিজের বৌকে বিশ্বাস করে না!শালা অসভ্য ?)
“মা?কাল লাবণ্য কখন ফিরেছিল?”
“ভার্সিটি ছুটি হওয়ার ঘন্টাখানেক বাদে”আনমনে জবাব দিলেন তিনি
“ও আমার জন্য গিফট নিয়ে আসছিল?”
এবার সৈকতের মায়ের হুস আসলে তিনি বলে উঠেন”হ্যাঁরে?কি এনেছিল?বলল তোর জন্য কিসব এনেছে তোকে সারপ্রাইজ দিবে আজ।
তা দেখেছিস?কি দিয়েছে?”
“হুম! নীল পাঞ্জাবির সাথে কালো ঘড়ি”গম্ভির কন্ঠে উত্তর দেয় সৈকত
“বাহ চয়েস আছে তো!নীল পরলে তো তোকে খুব সুন্দর লাগে। কিন্তু আজ মেয়েটার শেষ পরিক্ষা আর তুই আজ দেরি করে উঠলি?বাদ দে।ওকে বাসায় থেকে ঘুরিয়ে আনিস আর মেয়েটার প্রতি বিশ্বাস রাখিস।আমরা যা সহজেই পেয়ে যাই তার মূল্য বুঝতে পারিনা।”
পরিক্ষা শেষে বাসায় চলে আসে লাবণ্য।সে জানে সৈকত কেমন।ঘাড়ত্যরা ছেলে একটা!
প্রথমদিনই তো বলেছিলাম, বিয়ে না করলে করিসনা কিন্তু না!ব্যাটা বলে কি? “আপনার কথা শুনলে আজ এমনটা হত না লাবণ্য! আমার জন্য আপনার জীবনটা এমন হয়ে গেল তাই আমি আপনাকে বিয়ে করব বাট I need time!”
এ্যহ! আসছে আমার টাইম!
কে মানা করেছিল আমার কথা শুনতে?আর তুই কি মেয়ে যে তোর টাইম লাগবে?সালা অসভ্য আমাকে একটুও বিশ্বাস করে না,হুহ?
এসব গালিগালাজ করতে করতে বাসায় পৌঁছে যায় লাবণ্য।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েই দেখে সৈকত একদম তার দেওয়া জামা কাপড় পরে রেডি। লাবণ্য টাস্কি খায় কিন্তু গলেনা।এত তাড়াতাড়ি গললে চলবে না।কম রুড ব্যবহার করে নি সে আমার সাথে।
আলমারির কাছে এসে জামা কাপড় পছন্দ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে সে।আজ সৈকত তাকে নিয়ে যাক আর না যাক সে যাবেই।
এইদিকে লাবণ্যর ইগনোরেন্স সৈকতের ইগোতে লাগে।
বাট ইগনোর করাটাও স্বাভাবিক আমার ফায়ার হওয়া চলবে না নাহলে এখন টেম্পুরারি বাপের বাড়ি যাওয়ার জায়গায় সে সারাজীবনের জন্য চলে যাবে তখন আমি বৌ হারা হয়ে যাব আর এই অল্প বয়সেই বৌ হারা হলে আমার কোন প্রেস্টিজ থাকবে?
সবাই বলবে আমি বৌকে ৬ মাসও ঠিকমত রাখতে পারলাম না।
সৈকতের ভাবনার মাঝে লাবণ্য রেডি ও হয়ে গেছে।ব্যাগ আগে থেকেই গোছানো ছিল। লাবণ্যর হিজাব পিনগুলো নিচে পড়ে যাওয়ায় সৈকতের ভাবনার অবসান ঘটে।
লাবণ্য সব পিন উঠিয়ে তার হিজাব ঠিক করে বেঁধে নেয়।
তারপর ব্যাগে হাত দিতে গেলেই সেটা সৈকত নিয়ে নেয়।
তবুও লাবণ্য কিছু বলে না। সৈকত তখন বলে”চলো বউ”
লাবণ্য তবুও কোন উত্তর দেয় না। আগে হেঁটে চলে যায়। সৈকত উদাসীন মনে হেঁটে যায়। গাড়িতেও কোন কথা বলেনি দুজন। বলতে গেলে লাবণ্য বলে নি সৈকত কিছু জিজ্ঞেস করলেও না।
আবার এখানে কোন সিনেমার সিনের মত লাবণ্য সিট বেল্ট বাঁধতে পারেনি আর সৈকত বেঁধে দিয়েছে এমনও না। কারণ সিট বেল্ট বাঁধা তেমনও কঠিন কাজ না।
বাড়ি পৌঁছে লাবণ্য শুধু বলেছে ব্যাগটা ভিতরে আনুন।
সৈকতও ভালো ছেলের মত লাবণ্যর ব্যাগটা নিয়ে আসে।ভালো হয়েছে ঝগড়া হওয়ার আগেই ব্যাগ গোছানো হয়েছিল নয়তো লাবণ্য সৈকতের একটা কাপড়ও নিতো না।
ঘরে যেয়েও বেচারার কোন শান্তি নেই। লাবণ্যর আম্মু ওদের নাস্তা দিতে চাইলে লাবণ্য নাকি বলেছে আমাদের ক্ষিদে নেই আর সৈকতকে দিতে চাইলেও সেম কথায় বলেছে।
দুপুরের খাবার লাবণ্যর আগেই শেষ হয়ে গেছে। মানে ও সবার আগে খেয়ে উঠেছে।ও খাওয়ায় একটু ফাস্ট।
চলবে…