নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:১২

0
4277

নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:১২
লেখিকা:সুরভী আক্তার

রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ে সে। একটুখানি দেখা হয়নি আবার সৈকত চলে আসছে।
সৈকত আসতেই লাবণ্য ফোনটা রেখে দেয়। ফোন দেখে একটু হাসলেও সামনের জন কিযে মনে করে!

তাছাড়াও সৈকত সেই যে এসেছে তখন থেকেই লাবণ্য যেখানেই থাকুন সেও যদি সেখানে থাকে তাহলে শুধু সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে।ব্যাপারটা আজব লাগবে না কারো কাছে?

ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসছেনা।নিরবতা ভেঙ্গে লাবণ্যই বলে”সমস্যা কি?সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন?অস্বস্তি হচ্ছে আমার ভাল্লাগছে না!”

সৈকত বিছানায় এসে চিত হয়ে শুয়ে বলে”ফাইনালি!কথা তো বলসো”

“ঢং”

বলেই অন্যদিকে ঘুরে যায় লাবণ্য। সৈকত দেখে দরজা লক আছে কিনা।তারপর লাবণ্যর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে যায়।

লাবণ্য চমকে উঠে। কয়েক সেকেন্ড নিরবতার পর ছাড়ানোর চেষ্টা করলে সে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। লাবণ্য মুচকি হেসে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

______________
ঘুম থেকে উঠে ঘটে আরেক বিপত্তি। সৈকত ওকে এমনভাবে ধরে আছে যেন সে বালিশ।
তবুও তাকে ছাড়িয়ে উঠে সে।উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সৈকত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। লাবণ্য এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসে বলে”কি হয়েছে?”

“ঘুমিয়ে ছিলাম তাই!”

তারপর লাবণ্যর উপর নজর যেতেই ও থেমে যায়। লাবণ্য ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল।তার নজর অনুসরণ করে সে নিজের বুকের দিকে তাকাতেই ও উল্টো ঘুরে যায়। সৈকতও হুসে আসে তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বলে”এট্রেক্ট করতে চাইছ?”

লাবণ্য উঠতে নিলেই ও ওর হাত চেপে আবার বসিয়ে দেয় তারপর ওপর হাত তার সামনে এনে বলে”এটা খুজছো?”

লাবণ্য তাকিয়ে দেখে তার ওড়না। লাবণ্য নিতে গেলেই সে হাতটা সরিয়ে নেয়।

এটা নিতে গেলে আমার শর্ত মানতে হবে

কেমন শর্ত?

I wanna kiss you!

লাবণ্য যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সৈকত জীবনেও এমন আবেগী কথা বলে নি।

দরকার নেই!রা,, রাখুন আপনার কাছেই আমার লাগবে না!

তোমার না লাগলেও আমার লাগবে! নাহলে হাত ছাড়বো না

লাবণ্য এক ঝলক সৈকতের দিকে তাকায়।তার দৃষ্টি নেশাতুর। লাবণ্য এক হাত সৈকতের চোখের ওপর নিয়ে যায় আর আরেক হাত ওর গালে রেখে ধীরে ধীরে তার ঠোঁটজোড়া এগিয়ে দেয়।

লাবণ্য উঠতে গেলে আবারো হাতে টান অনুভব করে।
তখনই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়।এতে লাবণ্য স্বস্তি পেলেও সৈকতের মন খারাপ হয়ে যায়।
লাবণ্যর ও ভাল লাগছিল মূহূর্তটা কিন্তু সে নার্ভাস!

ও নিজের ওড়না সৈকতের থেকে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। মাগরিবের নামাজ শেষ করে সবাই নানান কথা বার্তা বলে। এভাবেই কেটে যায় অনেকটা সময় তারপর এশা হয়ে যায়।গল্পে গল্পে কখন যে সময় কেটে যায় কেও টেরও পায় না।
রাতে লাবণ্য খায় না। কারণ ও নাকি আসার পর থেকেই অনেক খেয়েছে।এখন খেলে নাকি গ্যাসট্রিক প্রবলেম হবে।
সৈকত খাওয়া দাওয়া করে এসে দরজা লক করে দেয়। লাবণ্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। দরজা রকের শব্দে চোখ খুলে। তারপর সৈকতকে বলে”দরজা লক করলেন কেন?”

“স্বামী স্ত্রীর প্রাইভেসির জন্য”বলেই লাইট অফ করে দেয়। বাইরের থেকে হালকা আলোতে এখনো দুজন দুজনকে এখনো দেখতে পারছে। হোক তা অস্পষ্ট!

একথা শুনে লাবণ্যর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।তাহলে বিকালের কথা ভুলে নি?

“তখন তো খুব দাত কেলাচ্ছিলা, এখন কি করবা?”

লাবণ্য শুয়ে ছিল ওকে দেখে উঠতে নিলেই সৈকত ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর ওপর উঠে যায় আর তার ঠোঁট জোড়াস্পর্শ করে।
ধীরে ধীরে নেমে আসে তার গলায়

________
সকালে দেরিতে ঘুম ভেঙ্গেছে আমার। সৈকত পাশে ছিল না।ও সকালেই চলে গেছে অফিসে কিংবা কিছুক্ষণ আগে।
আমি সাধারণত সকালেই উঠি।আজ দেরি হয়ে গেল।
সৈকত আসবে সেই সন্ধ্যায় বা আসবে না।পরে আমাকে নিতে আসবে।জানা নেই।
উঠে গোসল করে চুল শুকিয়ে নিলাম।দেরি করে ঘুম থেকে উঠার জন্য এখন মাথা ব্যথা করছে।ভেজা চুলে থাকলে সেটা আমার জন্য ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।

আম্মুর কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম সৈকত কখন গেছে তখন আম্মু বলল বেশীক্ষণ নাকি হয় নি।
ইস! আরেকটা আগে উঠতে হতো তাহলেই দেখা হতো। আম্মু আরো জানালো আজকে নাকি আমার বাঁদর কাজিন গুলো আসবে।ঢং! ওদের জন্য আমার প্রেম তেজপাতা হয়ে যাবে।ক্ষণেক্ষণে আমার রুমের পাশ দিয়ে পায়চারি করবে আর আমার প্রেমের মূহূর্তে চলে এসে বলবে”ওহ সরি সরি”আদেক্ষিতা!

এক ঘন্টা পরেই সবাই চলে আসল। আমি তখন টিভি অন করে বসে ছিলাম।
এসেই সবাই জোঁকেরমতো আকড়ে ধরল আমায়।আমি বললাম”আরে যা তো তোদের এই গায়ের গন্ধে মরে যাব তো আমি!”

তখন সবাই ফোঁস ফোঁস করতে করতে চলে গেল। যেহেতু দুপুর হয়ে গেছে তাই সবাই গোসল শেষ করে সোফায় বসলাম। আম্মু তখন সবাইকে নাস্তা দিল।
নাস্তা দিয়ে আম্মু চলে যেতেই ওরা আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করল।ওরা যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল।

প্রথমেই শুরু করল”সৈকত ভাইয়া কেমন? তোর সাথে কি করেছে?হেনতেন যা বলার মত না।আমি তখন বললাম”ছিঃ ছিঃ তোদের লজ্জা নেই? নিজের বিয়ে হবে তখন দেখে নিস”

ওরা তাও ছাড়ল না জেদ ধরে বসল। তখন আমি জোরে আম্মু বলে ডাক দিলাম। সাথে সাথেই ওরা চুপ হয়ে গেল।শত হোক বড় মানুষের সামনে কি এগুলো বলা যায়?

আমি আম্মুকে বললাম”দেখ তো আম্মু!মাথা ব্যথা করছে বলছি তাও ছাড়ছে না ওরা আমায়”

আম্মু সাথে সাথেই বিশ্বাস করে ফেলল। কারণ আমার অল্প গোলমালেই এরকম হয়।আর ওরা তখন থেকে এসেছে তখন থেকেই ক্যাচর ক্যাচর করছে।

আম্মু আমাকে ঘরে যেতে বলল আর ওদেরও নিষেধ করল যাতে আমায় বিরক্ত না করে।
যেতে যেতে একবার পিছন ফিরে দেখলাম ওরা কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা হয়তো ভাবেনি আমি এরকম করে ওদের ফাঁসিয়ে দিব।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here