সাত রং,Part : 3

0
1607

সাত রং,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed

-এই বাসটা রাজশাহীর, এটাতেই যাবো (জাহিদের কোনো কথাতেই কান দিলো না সপ্তর্ষী)
,,
সপ্তর্ষী বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। হেল্পার এর সাথে কিছু কথা বলে বাসে উঠলো। জাহিদ আর সপ্তর্ষী কে দেখতে পেলো না। একসময় বাস ছেড়ে দিলো, জাহিদ ও সেখান থেকে চলে আসলো।
,,
সারাটাদিন জাহিদ এর মন খারাপে কাটলো। রাতে সে সপ্তর্ষী কে কল করলো, যাতে তার রাগ টা ভাঙানো যায় আর নিজের মুড টা ঠিক হয়ে যায়।
,,
কিন্তু না সপ্তর্ষী কে কল করে আরেক মন খারাপ এর সমুদ্রে পড়ে গেলো। দুবার কল দিতেই নাম্বার টা ব্ল্যাকলিস্টে রেখেছে। জাহিদ তখন শুয়ে শুয়ে তার ভালবাসার মানে খুঁজতে থাকে।
,,
তার মনের মধ্যে পর পর কয়েকটা প্রশ্ন হাজির হয়। সেগুলো এক একটা সন্দেহের প্রতিক বলেও মনে হয় জাহিদের কাছে। জাহিদ ভাবে “সে কি তাহলে এমনি এমনি আমার সাথে কথা বলেছে?? এটা কি টাইম পাস ছিলো? আমি তো টাইম পাস করিনি। ও তাহলে এমন করছে কেনো?? ”
,,
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় জাহিদ। এরপর থেকে কিছুদিন তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হলো না। জাহিদ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারলো না। কারন ওপাশ থেকে যত যোগাযোগ এর মাধ্যম ছিলো সব বন্ধ করে দিয়েছে সপ্তর্ষী।
,,
কিছুদিন যাওয়ার পর, হঠাৎ একটা মেয়ে আইডি থেকে জাহিদকে ম্যাসেজ করে। জাহিদ তখন রাতের খাবার খাচ্ছিলো..
-হায়!!!! (মেয়ে আইডি থেকে)
-…(সিন বাট নো রিপ্লাই)
-হ্যালো
-কিছু বলবেন??
-হ্যাঁ বলার জন্যই তো ম্যাসেজ করেছি
-বলুন
-আপনি সপ্তর্ষীর বি এফ?
-আগে বলুন আপনি কে??
-আমি ইশিতা ওর বান্ধবী
-ওহহ,,তা এগুলো কোন ধরনের প্রশ্ন? বি এফ কি না? জেনেই হয়তো জিজ্ঞাস করছেন তাই না??
-হ্যাঁ কথায় কথায় একটু শিওর হয়ে নিলাম
-হুমমম
-শোনেন আপনার সপ্তর্ষী তো এখন অন্য কারও সাথে ঘোরাঘুরি করে
-ভালো
-শুধু ভালো? আপনি কিছু করবেন না??
-আমি আর কি করব? সে নিজেই আমাকে পছন্দ করে না
-মানে আপনাদের সম্পর্ক শেষ??
-ও শেষ করেছে, আমি করিনি
-ওহহ আচ্ছা
-আর কিছু?
-না
-ঠিক আছে ভালো থাকবেন
-আপনিও
,,
এরপর বছর তিন পার হয়ে যায়। ভার্চুয়াল ভালোবাসা টা সেইখানে পড়ে থাকে। তিন বছর পার হওয়ার পর জাহিদের সবকিছু তে পরিবর্তন আসে। জাহিদ ময়মনসিংহের একটা কোম্পানির শাখায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছে। সে এখনো বিয়ে করেনি, দিনকাল মোটামুটি ভালই চলছে তার।
,,
তবে সমস্যা হলো নিজের ভালবাসা কে সে মনে মনে খুঁজে। জাহিদ এর মনে হয় একদিন না একদিন তার দেখা হয়েই যাবে। আবার পরক্ষণেই ভাবে তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে হয়তো। এখন মনে হয় বাচ্চা কাচ্চা সামলাতেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে তার।
,,
তো এক ছুটির দিনে,,,,,
বিকেল বেলা একটু ফ্রেশ হয়ে জাহিদ বাইরে ঘুরতে বের হচ্ছে। রেডি হয়ে বাইরে এসে একটা রিকশা নিলো জাহিদ। বাসা থেকে একটু দূরে একটা সুন্দর মনোরম পরিবেশ। বিকেলের এই সময়টায় অনেকেই এসে অবসর সময়টা টা কাটান।
,,
জাহিদ রিকশা করে সেই জায়গা টায় পৌঁছে যায়। রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ টা পকেটে নেই। হুট করেই মনে পড়ে যে মানিব্যাগ টা বিছানার উপরেই রেখে এসেছে।
-মামা ভাড়াটা (রিকশাওয়ালা)
-আসলে মামা..(জাহিদ)
-পকেটে হাত দিছেন টাকা বাইর করেন
-আসলে মামা আমি মানিব্যাগ টা ফেলে এসেছি
-আমার ভাড়া দেন আমি জাইগা
,,
দুজনের মাঝে কথা হচ্ছিলো হঠাৎ করেই দুজনের মধ্যে কেউ একজন এসে বলল..
-কত? ভাড়া কত? (একটা মেয়ে)
-ম্যাম বিশ টাকা(রিকশাওয়ালা)
-হুমম এই নাও
,,
রিকশাওয়ালা টাকাটা নিয়ে চলে গেলো। এবার জাহিদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মেয়েটাকে ধন্যবাদ জানাতে তার দিকে তাকিয়ে বলল…
-ধন্যবাদ আপনাকে, আমি আসলে আমার মানিব্যাগ টা ফেলে এসেছি (জাহিদ)
-না ঠিক আছে। আপনি যখন রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে যখন আটকে গেলেন তখনই আমি খেয়াল করছিলাম
-…(জাহিদ মেয়েটির কথা শুনছে না শুধু তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
-আপনি এভাবে কি দেখেন
-আপনি কি সপ্তর্ষী?
-হ্যাঁ। আপনি আমার নাম জানলেন কি করে!!
,,
জাহিদ এবার এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। সেকি তার থেকে নিজেকে লুকাবে নাকি পরিচয় দিবে? মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন ঘুরাঘুরি করছিলো।
-এই বলেন আপনি আমার নাম জানলেন কি করে??(সপ্তর্ষী)
-আপনার সাথে এইভাবে দেখা হবে ভাবিনি। (জাহিদ)
-কিহহ! কি যা তা বলেন,
-আপনি যে আমার সেই সপ্তর্ষী
-আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে
-না, আমি জাহিদ
-কোন জাহিদ?
-আপনার জীবনে এতগুলো জাহিদ এসেছে যে ভুলেই গেছেন আমি কোন জাহিদ? ফেস টাও ভুলে গেছেন?
-…(সপ্তর্ষী জাহিদ এর দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছে)
-কষ্ট করে মনে করতে হবে না, আমি বলছি, আমার বাসা সিরাজগঞ্জ, আমি সেই জাহিদ
-ওহহহ হ্যাঁ আপনিইইই!!! কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ
-তো কি অবস্থা আপনার এখানে কি করছেন??
-আমি এখানে একটা কোম্পানি তে জব করছি
-ওয়াও। তা আপনি আমার ফেস মনে রেখেছেন অসাধারণ ব্যাপার তো
-এটা সাধারণ, তবে ভালবাসা টা অসাধারণ ছিলো
-এমম তা এখানে কি ঘুরতে আসছেন?? (সপ্তর্ষী জাহিদ এর কথা এড়িয়ে যাচ্ছে)
-হুমমম
-ওহহ… (সপ্তর্ষী এলোমেলো হয়ে গেছে। আর কোনো কথাই বলতে পারছে না)
-আপনি এখানে কি করতে আসছেন??
-আমি মা কে নিয়ে ঘুরতে আসছি
-তা আপনার উনি কই?
-উনি মানে? কাকে বুঝাচ্ছেন?
-আপনার বি এফ বা বর
-আমার কারও সাথে সম্পর্ক নেই বা বিয়েও হয়নি
-আচ্ছা আমরা বসে কথা বলি
-আন্টি কোথায়??
-উনি ভেতরে হাঁটছেন
-ওহহহ
,,
দুজন একটা গাছের নিচে থাকা সিঁড়ি তে বসলো, দুজনের মাঝে অনেকটা দুরত্ব বজায় রেখে। প্রথমে সপ্তর্ষী কথা বলা শুরু করলো..
-সরি সেইদিন এর ছেলেমানুষির জন্য (সপ্তর্ষী)
-কোনদিন? (জাহিদ)
-যেদিন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আমি চলে গিয়েছিলাম
-আমি ওসব ভুলে গিয়েছি মনের মধ্যে ওসব কিছু নেই
-জানেন হঠাৎ করে আপনার সাথে দেখা হয়ে কেমন যেন হয়ে গেছি আমি। আর আপনার চেহারায় অনেকটা চেঞ্জ এসেছে
-হুমমমম আপনারও অনেকটা এসেছে, আমিও চিনতে দেড়ি করেছি
-আচ্ছা আন্টি কেমন আছে?
-হুমম ভালই আছে
-কিছু খাবেন?
-না কিছু খাবো না বাসা থেকে খেয়েই আসছি
-ওহহহ। আচ্ছা আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম
-বলেন
-ঐ ঘটনার অনেকদিন পর আমি আমার ভুলটা বুঝতে পারি। আপনার নাম্বারে কল করতে গিয়েও সাহস পাই নি তবে ব্ল্যাকলিস্ট থেকে নাম্বার টা সড়িয়ে ফেলেছিলাম আর আপনার ফোন এর অপেক্ষায় থাকতাম। আমি জানি আপনি এখন আমাকে বলবেন যে কেনো ফোন দিলাম না। আসলে লজ্জায় আর দেওয়া হয়নি। ফোন দিয়েই বা কি বলতাম বলেন
-থাক বাদ দেন পুরোনো সেসব কথা। তো এখন কি করছেন?
-এইতো এইবছরে অনার্স টা শেষ হলো
-হুমম এখন তাহলে আপনার বিয়ে তাই তো?
-হ্যাঁ বিয়ে চাকরি দুটোই পেয়ে যাচ্ছি
-মানে! একটু বুঝিয়ে বলুন
-আমার মায়ের বান্ধবীর ছেলে তার সাথে বিয়ে ঠিক হইছে আর কিছুদিন আগেই আমার একটা চাকরি হয়েছে সামনের মাস থেকে জয়েন করবো
-ওহহ এটা বড় একটা সুসংবাদ অভিনন্দন আপনাকে..
-হুমম ধন্যবাদ৷ তা আপনি বিয়ে করেননি,
জাহিদ একটু হাসলো আর বলল…
-রেইনবো নামে একটা ভালোবাসার মোহ থেকে আমি বের হতে পারিনি, তাই বিয়ের কথা মাথায়ও আসেনি..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here