ডিভোর্স পেপার,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
-উহুমমম হবে না (অভ্র)
-তুমি এমন করতেছো কেনো?আমাকে বোঝো না কেনো?(রিনি)
-বুঝি দেখেই তো এখনো দাঁড়িয়ে আছি তোমার সামনে..
-কেন যেন মনে হচ্ছে দূরে সড়ে যাচ্ছো
-আমার কিছু করার নেই, মন না চাইতেও যেতে হবে
-থাকো না আজীবন
-নাহহহ
-কেনো??
-জানি না ছাড়ো আমাকে..(রিনি দৌঁড়ে চলে গেলো)
,,
অভ্রর বুক হু হু করে রিনির জন্য। রিনি কে অনেক বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। রিনি বুঝতে চায় না৷ অভ্র মনে করে রিনি চাইলেই তার কাছে থাকতে পারে।
,,
পরদিন সকাল বেলা। অভ্র ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিনি কয়েকটা ম্যাসেজ করেছে। অভ্র ফোনের লক খুলে ম্যাসেজ গুলো পড়তে থাকে…
(আমি চলে যাচ্ছি, তুমি ঘুমিয়েছিলে তাই ডাকি নি। এটাকে না বলেই চলে যাওয়া বলে। তুমি রাগবে তাই ম্যাসেজ করলাম। অভ্র শোনো আমাদের সম্পর্ক টা বন্ধুত্ব পর্যন্তই থাক।)
,,
(আমি কি বলব ভেবেই পাচ্ছি না। মানুষ এরকমই কাছ থেকে কেউ দূরে চলে যাওয়ার অবস্থায় মানে সেইসময় টায় মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না যাকে বলে বাকরুদ্ধ আমারও ঠিক তেমন অবস্থা৷)
,,
(আংকেল এর কথার বাইরে যেয়ো না৷ তুমি সুস্মিতা কে মেনে নাও। আমি প্রিডিকশন করছি ও তোমার খুব লক্ষ্মী একটা সঙ্গী হবে। আমি যতটুকু বুঝেছি ও খুব ভালো মেয়ে। বন্ধু হিসেবে আমার একটা পরামর্শ দেওয়ার দরকার ছিলো দিলাম।
আর হ্যা দেড়ি করো না ওকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিয়ে আসবে। ওকে বলে দিয়েছি তোমার কাছাকাছি থাকতে।)
,,
(তুমি আসলে দেখা হবে, ভালো থাকো বন্ধু)
,,
ম্যাসেজ গুলো পড়া শেষ করতে না করতেই সুস্মিতা এসে হাজির…
-ভাইয়া কখন উঠছেন??(সুস্মিতা)
-এইতো (অভ্র)
-আপনি গোসল করবেন কি?
-হ্যা
-পুকুরপাড়ে গোসল করবেন?নাকি টিউবওয়েলে?
-বাথরুম নেই?
-না
-পুকুরপাড়ে কি বেশি লোকজন আছে??
-না তেমন কেউ থাকে না, আর পুকুরটা তো আমাদের সীমানার মধ্যে তাই কেউ আসেও না
-হুমমম তাহলে ওখানেই দিতে হবে
-কিছু লাগবে কি??
-লাগলে আমি ডেকে নিবো
,,
সুস্মিতা চলে গেলো। অভ্র আবার মোবাইল এর স্ক্রিনে মনোযোগ দিলো। ম্যাসেজ গুলো পুনরায় পড়া শুরু করলো। তারপর দিলো রিনি কে কল। রিনির ফোন বন্ধ থাকায় কল ঢুকলো না। অভ্র দ্বিতীয় বার ট্রাই করলো না।
,,
রুম থেকে বের হয়ে সুস্মিতা কে খুঁজছে। অভ্রর এদিক ওদিক তাকানো দেখে তার চাচি আম্মা এগিয়ে এসে বলল..
-কাউকে খুঁজছো??
-সুস্মিতা
-ওহহ ও তো ঘরেই আছে এই সুস্মি সুস্মি
,,
সুস্মিতা মায়ের কন্ঠ পেয়ে ঘর থেকে বের হলো।
-অভ্র তোকে খুঁজতেছে (কথাটা বলে সুস্মিতার মা চলে গেলো)
,,
সুস্মিতা অভ্রর কাছে এসে আমতা আমতা করে বলল
-ভাইয়া বলেন
-আমি গোসল করবো তুমি দাঁড়িয়ে থাকো
-হুমমম (সুস্মিতা মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো)
,,
তারপর সুস্মিতা অভ্রকে নিয়ে পুকুর পাড়ে। অভ্র গোসল এর প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও পুকুরে নামছে না। সময় বেশি নেওয়ায় সুস্মিতা বলল..
-ভাইয়া শীত লাগতেছে??
-নাহহ
-তাহলে পুকুরে নামছেন না কেনো??
-আসলে আমি..(অভ্র কি বলতে থেমে গেলো)
-কি আপনি কি?? কিছু লাগবে??
-আমি সাঁতার জানি না ভয় করছে
,,
সুস্মিতা তার হাসি আটকিয়ে বলল..
-ওহহ এই কথা।
সুস্মিতা একটা মাটির টুকরো হাতে নিয়ে পুকুরে ছুঁড়ে আর অভ্রকে বলে..
-ঢিল টা যেখানে পড়েছে সেই পর্যন্ত আপনার সেভ জোন মানে এই পর্যন্ত পানি কম তারপর পানি অনেক বেশি। তো এখন গোসল করেন
-আরেকটা সমস্যা আছে
-কি সমস্যা??
-তুমি অন্যদিকে ঘুরে থাকো
-হাহহ ঠিক আছে আপনি গোসল করেন
,,
সুস্মিতা অন্যদিকে ঘুরলো তারপর অভ্র গোসল শেষ করলো। পাড়ে উঠে এসে অভ্র তার শরীর মুছতেছে সেই সময় সুস্মিতার এক বান্ধবী সুস্মিতা সুস্মিতা বলে পুকুর পাড়ে এসে পড়ে।
,,
আর এসেই দেখে দুজনকে..
-তুই একটা ছেলের গোসল দেখতেছিস!!
-আরে এটা অভ্র ভাইয়া
-ওহহ মানে তোর হবু.
-এই অন্যদিকে ঘুর
-কেনো
-তুই আমার বরের শরীর দেখবি কেনো
-কিরে সুস্মিতা তোর হঠাৎ করে কি হলো বুঝলাম না
-কি করলাম?
-দুলাভাই রে দেখবো না?
-আরে উনি একটু বেশি লাজুক আমাকে বলেছে যে আমি যেন অন্যদিকে ঘুরে থাকি
-বাব্বাহহ
-তুই যা এখন পরে তোর সাথে দেখা করবো
-আচ্ছা কেয়ার কর
-আরে চুন্নি এটা কেয়ার
-বুঝি বুঝি
-তুই যাবি????
,,
মেয়েটা চলে গেলো। দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাদের কথা গুলো শুনতে পায়নি অভ্র। প্যান্ট আর টি শার্ট পড়ে উপরে উঠে আসে।
-পানি তো অনেক ঠান্ডা(অভ্র)
-হ্যা সকাল তো তার উপর এখন ভালই শীত শীত করে তাই পানি একটু বেশি ঠান্ডা (সুস্মিতা)
-ভেজা কাপড় গুলো??
-এগুলো আমি ধুয়ে শুকিয়ে দিচ্ছি আপনি বাড়ির ভেতরে যান
-হুমমমম
,,
অভ্র তার রুমে চলে আসলো। এসে জানালা গুলো খুলে দেওয়ার সাথে সকালের মিষ্টি রোদ বিছানার উপর এসে পড়লো আর পুরো ঘর আলোকিত হলো।
,,
এদিকে সুস্মিতা কাপড় শুকিয়ে দৌঁড়ে আসছে অভ্রর রুমের দিকে। রুমে এসেই
-সরি সরি সরি (সুস্মিতা)
অভ্র পেছন ফিরে দেখে সুস্মিতা হাঁপাচ্ছে।
-কি হয়েছে?? (অভ্র)
-বিছানা উঠাতে ভুলে গেছি। আপনি একটু বাইরে যান আমি বিছানা টা ঠিক করে দেই
-এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না
-মা এমন দেখলে আমাকে মাইর দিবে
-মাইরে দিবে! তাও তোমাকে!!
-হুমমমম
-ওকে এই উঠে দাঁড়ালাম তুমি ঠিক করো
-ধুলো আপনার গায়ে লাগবে আপনি বাইরে যান
-হুহহ যাচ্ছি
,,
অভ্র বাইরে আসতেই দেখে তার বাবা তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
-রুমে চল কথা আছে.. (অভ্রর মা)
-ভেতরে সুস্মিতা (অভ্র)
-কি করছে?
-বিছানা উঠাচ্ছে
-তো তুই দাঁড়িয়ে কি করিস যা ওকে সাহায্য কর
-তোরে দিয়া কিচ্ছু হবে না এমন হলে তো বউ থাকবে না বাপজান
,,
অভ্র লজ্জা পেয়ে আবার ভেতরে যায়
অভ্রকে দেখে সুস্মিতা বলল…
-আপনি আবার আসছেন কেনো? আপনাকে না বললাম বাইরে দাঁড়ান(সুস্মিতা)
-বালিশ দুটো আমার হাতে দাও তুমি বিছানার চাদর উঠাও (অভ্র)
-…(সুস্মিতা তো পুরাই হা হয়ে গেছে অভ্রর কথা শুনে)
,,
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে দুটো বালিশ অভ্রর হাতে দিলো তারপর বিছানায় চাদর বিছিয়ে দিলো। কাজ শেষ হতে না হতেই রুমে ঢুকলো অভ্রর বাবা মা।
-বাহহ দুজন বেশ ভালই কাজ করছে.. (অভ্রর মা)
-…(সুস্মিতা লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো)
-কিরে কেমন লাগলো??(অভ্রর মা)
-কেমন আবার লাগবে বালিশ ধরে ছিলাম ও বিছানা ঠিক করলো
-হুমমম তুই শুধু ধরেই ছিলি কিছুই বুঝিস নাই। শোন রিনি হঠাৎ চলে গেলো কেনো…
-…(অভ্র চুপ)
-আমাকে বলল কি যেন জরুরি কাজ পড়েছে
-আমাকে তাই বলেছে
-যাক বাদ দে। আমরা এখানে আরও বেশ কয়েকদিন থাকবো আর বিয়ের কাজ টা শেষ করে সুস্মিতা কে নিয়েই ফিরবো তুই কি বলিস??
-বাবা আর তুমি তো আছো তোমরা যা বলবে তাই
-তোর কিছু বলার নেই??
-আমি আর কি বলব??
-তোর মন খারাপ??
-আরে নাহহ ঠিক আছে
-হুমমম তাহলে অনুমতি দিলে আমরা আয়োজন শুরু করে দিবো
-সুস্মিতার কাছ থেকে কিছু শুনেছো?? ও রাজি কি না?
-জ্বি সব শোনা হয়েছে
-ওহহহহ
-তো আয় এখন খাবি
-তোমরা যাও আমি আসছি
,,
অভ্র রুমেই থাকলো। আর কিছুসময় যেতেই কেউ একজন বলে উঠলো
-দুলাভাই….
চলবে