ডিভোর্স পেপার,Part : 4

0
2425

ডিভোর্স পেপার,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed

অভ্র রুমেই থাকলো। আরও কিছু সময় যেতেই কেউ একজন বলে উঠলো..
-দুলাভাই..
অভ্র আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। হয়তো কেউ ফান করে বলছে এমনটা ভেবে অভ্র রুম থেকে বাইরে চলে আসে। সকালের খাবার টা শেষ করে একা একা পুকুরপাড়ে বসে থাকে অভ্র। যে কেউ অভ্রকে দেখলে ভাববে তার মন খুব খারাপ। অভ্র বার বার রিনির নাম্বারে ট্রাই করছে কিন্তু রিনির ফোন বন্ধ।
,,
-ভাইয়া (সুস্মিতা এসে হাজির)
-কিছু বলবা? (অভ্র)
-হুমমম
-বলো
-এখানে বসো
-বসো
,,
সুস্মিতা অভ্রর সামনা সামনি বসে বলল
-আপনি তো জানেন আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বার্তা চলছে(সুস্মিতা)
-হুমমম (অভ্র)
-আপনার কি কোনো পছন্দের মানুষ আছে??
-না
-কিছু মনে করবেন না এটা জেনে নিলাম
-তোমার আছে?
-না নেই
-আচ্ছি তুমি বসে থাকো আমি উঠছি..
,,
অভ্রর হঠাৎ উঠে যাওয়ায় সুস্মিতার মনে খটকা লাগে। আবার পরক্ষণেই অন্যকিছু ভাবতে থাকে। এদিকে অভ্র রুমে এসে বার বার রিনির ফোনে কল দিতে থাকে।
,,
দুইদিন পর….
অভ্র আজ সুস্মিতা কে বিয়ে করে নিয়ে বাসায় ফিরছে। অভ্রর পাশে সুস্মিতা বসে আছে। অভ্র হঠাৎ বলে উঠলো…
-তুই কি চুপ চাপ বসে থাকবি?? (অভ্র)
-…(অভ্রর মুখে তুই শব্দটা শুনে সুস্মিত অবাক হলো)
-সরি সরি তুমি চুপ চাপ বসেই থাকবে??
-আপনিও তো কিছু বলছেন না
-আচ্ছা চুপ চাপ থাকি হ্যা
-হুমমম
,,
অভ্র যে রিনিকে মনে করে কথাটা বলেছে সেটা বুঝতে পারলো। অভ্রর মাথা থেকে রিনি যাচ্ছেই না। এইতো কদিন আগে আসার সময় তো রিনি কে পাশে বসিয়ে নিয়ে আসছে।
,,
বাসায় আসার পর…
-মা ওকে নিয়ে ভেতরে যাও আমি আসছি (অভ্র)
-তুই এই সন্ধ্যা বেলা কই যাবি?? (মা)
-বাইরে একটু কাজ আছে
-না না এখন আর বাইরে যাওয়া যাবে না
,,
অভ্র মনে মনে ঠিক করেছিলো রিনির সাথে দেখা করবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। অভ্রর বাবা লোকদিয়ে আগেই বাসাটা সাজিয়ে রাখছিলো সাথে অভ্রর বাসর ঘর ও৷ অভ্র এসবের কিছুই জানতো না।
,,
অভ্রর মা সুস্মিতা কে অভ্রর রুমে রেখে আসে। এদিকে বাবা ছেলে কি নিয়ে নিচে আলোচনা শুরু করেছে। মা এসে বলল…
-তো কালকে গ্রাম থেকে লোকজন আসবে, কি কি করা যায়?? (মা)
-এসব নিয়ে কোনো টেনশন তোমাকে করতে হবে না আমি বাবুর্চি ঠিক করেছি৷ (বাবা)
-অভ্র তুই রুমে যা এখন
-ঠিক আছে
,,
অভ্র রুমে আসলো। সুস্মিতা তখন আয়নায় তার ফেস দেখছিলো। অভ্রর ভেতরে আসা দেখে মাথায় কাপড় দিলো৷
-বেলকনিতে আসো কথা বলি (অভ্র)
-আমি!!(সুস্মিতা)
-এখানে আর কে আছে?
-হুমম আসছি
,,
দুজন অভ্রর রুমের সামনে বেলকনিতে গিয়ে বসে।
-তোমার কাছে পরিবেশ টা নতুন তাই না?? (অভ্র)
-হুমমম (সুস্মিতা)
-প্রথম প্রথম খারাপ লাগতে পারে। আর কোনো সমস্যা হলে লজ্জা পেয়ে বসে থাকবে না মুখ ফুটে বলতে হবে
-ঠিক আছে বলব
-আরেকটা কথা
-জ্বি বলেন
-আমি তোমাকে এখনই যথেষ্ট সময় দিতে পারবো না। পারবো না বলতে আমি তোমাকে চিনবো জানবো তারপর সবকিছু। আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝেছো??
-হ্যা বুঝেছি
-হুমমম।
,,
দুজন কিছুসময় চুপ থাকার পর…
-আমি কি আপনার পাশে বসতে পারি??(সুস্মিতা)
-পাশেই তো (অভ্র)
-আরেকটু কাছে
-না। মানে এখন নামাজ পড়তে হবে চলো ভেতরে যাই
,,
অভ্র সুস্মিতা কে দূরে দূরে রাখছে। এটা রাখার কথা মনে মনে তো রিনি ঘুরে।
পরদিন সকালের নাস্তা শেষ করেই রিনির বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয় অভ্র। বাসায় প্রথমে ঢুকতেই দেখা হয় রিনির মায়ের সাথে..
-আন্টি কেমন আছেন??(অভ্র)
-অভ্র তুমি! এত সকালে! (রিনির মা)
-রিনির সাথে দেখা করতে আসছি
-ও তো ঘুমাচ্ছে
-ওহহ
-আমি ডেকে দেই??
-না আমি যাচ্ছি
-আচ্ছা যাও শয়তানি টাকে উঠাও প্রতিদিন অফিসে যেতে লেট হয় ওর
,,
অভ্র রিনির রুমে আসলো। রিনি ঘুমাচ্ছে। রিনির ঘুমন্ত মুখটা দেখেই অভ্রর বুক বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। অভ্র ধীর পায়ে রিনির দিকে এগিয়ে যায় হাঁটু গেড়ে বিছানায় পাশে বসে। তারপর নিজের হাত দিয়ে রিনির মুখ বোলাতে থাকে। রিনির মুখের উপর থাকা চুল গুলো সড়িয়ে দেয়। আর ঠিক থাকতে পারে না অভ্র তার ঠোঁট এগিয়ে নেয় রিনির কপালে চুম্বন করে।
,,
রিনির ঘুম ভেঙে যায় চুখ খুলেই সে অভ্র কে দেখতে পায়।
-তুই!!! কখন আসলি? (রিনি)
অভ্র রিনির ঠোঁটে তার আঙুল রেখে ইশারায় চুপ থাকতে বলে। কিন্তু রিনি চুপ থাকে না। সে আবার বলে..
-ওই পাগলা কখন আসছিস??
-একটু আগে
-এসেই এটা কি করলি
-এখনও কিছুই করি নি করবো
-এই কি করবি তুই?
-কি পরে শুয়ে আছিস?
-টি-শার্ট
-ভালোই হলো
,,
অভ্র রিনির গায়ের উপর থেকে কম্বল সড়িয়ে দেখলো সত্যি টি-শার্ট পরে ঘুমিয়েছে। অভ্র খুব দ্রুত রিনির টি-শার্ট এর ভেতর ঢুকে গেলো। রিনি ছাড়াতে চেষ্টা করেছিলো কিন্তু অভ্রর শক্তির সাথে সে পেরে উঠে নি।
-এটা কি করলি??(রিনি)
-আমার মাথায় কিছু আসছে না তোকে না দেখে পাগল হয়ে গেছি এখন মন যা চাচ্ছে তাই করছি (অভ্র)
-তাই বলে এইভাবে! আমার তো মান সম্মান আছে তাই না?
-নেই
-সকাল সকাল এসে তুই ঘুমটাও ভাঙালি আর এখন বিপদে ফেললি
-অনেকদিন পর দেখছি তো তাই মাথা ঠিক নেই
-আর আমি তো টি-শার্ট এর নিচে কিছু…
-চুপপপপ
-এক গলা দিয়ে দুই মাথা বের হইছে এটা তো আর পড়াই যাবে না
-আমার একটা তোকে দিবো
-সুস্মিতা….(নামটা বলতেই অভ্র রিনির মুখ চেপে ধরলো)
,,
,,
অভ্র রিনির গলায় নাক ডুবিয়ে আছে আর বার বার বলছে ভালোবাসি ভালবাসি। রিনি অভ্রর কথা শুনতে পেয়ে কান্না করে দেয়। কিছুক্ষণ এমন ভাবে থাকার পর..
-ঐ বের হ আমি অফিসে যাবো (রিনি)
-না (অভ্র)
-মা এসে পড়বে
-আমি দরজা লক করে রেখে আসছি
-এভাবে কতসময় থাকবি??
-সারা জীবন
-আর বউ??
-আমি ওর কথা বলতে তোকে মানা করেছি
,,
অভ্রর মন মেজাজ রিনি ভালো ভাবেই বুঝতে পারে৷ এখন মানা করলে অভ্র শুনবে না তাই রিনি আর কিছু বলল না।
অভ্র এবার টি-শার্ট থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তবে রিনি কে ছাড়লো না দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকলো।
-দেখ অনেক লেট হয়ে যাবে তুই বসে থাক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর একসাথে নাস্তা করে তুই বাসায় যাবি আর আমি অফিসে (রিনি)
-আরেকটু থাকি না (অভ্র)
-ভালো লাগে?
-আমি তোমায় আসক্ত
-ছাড় এখন হারামী
,,
অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে রিনি ওয়াশরুমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বলল..
-চল নাস্তা করি (রিনি)
-বাসায় গিয়ে খাবো(অভ্র)
-বাহহ বাহহ এখানে এসে আমাকে বিরক্ত করা হবে আমি সব সহ্য করবো তুই যা বলবি আমি সব শুনবো আর আমি যা বলব তার বেলায় না! বাহহ বাহহ বাহহ
-আচ্ছা চল
-ভালো করে বল
-চলো
,,
দুজন নাস্তা করে বেড়িয়ে পরে।
-অফিস থেকে তো সন্ধ্যায় ফিরবি তাই না?? (অভ্র)
-হ্যা (রিনি)
-সন্ধ্যায় দেখা হবে
-কোথায়??
-মাঠে
-ওকে বায়
,,,
অভ্র বাসায় আসতেই সুস্মিতা প্রশ্ন করে বসে..
-এত সকাল সকাল আমাকে না জানিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?? (সুস্মিতা)
-আমি কোথায় যাবো সেটা কি তোমাকে জানাতে হবে??(অভ্র)
-না তবুও একটু বলে গেলে ভালো হতো
-যেটা জানানোর দরকার পরে আমি জানাবো
-আচ্ছা ঠিক আছে। খাবেন এখন চলুন
-আমি নাস্তা করে আসছি
-আমি তো আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছি
-খেয়ে নাও যাও
-আপনিও একটু খাবেন চলুন
-বললাম না খেয়ে আসছি কথা কানে যায় না?? যাও খেয়ে নাও (অভ্রর ধমকে সুস্মিতা বেশ ভয় পেয়ে যায়)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here