ডিভোর্স পেপার,7 END PART

0
3419

ডিভোর্স পেপার,7 END PART
Write : Sabbir Ahmed

-পারবো না (অভ্র উঠে চলে গেলো)
-রাতটা হোক এই শীতের হিমশীতল পানিতে আপনাকে চুবানো হবে.. (দাঁত কিড়মিড় করে কথা গুলো বলল সুস্মিতা)
,,
সন্ধ্যায় সকল কাজ শেষ করে সুস্মিতা গোসল করে উঠে। অভ্র তখনও বাইরে। সেই যে উঠে গেছে আর আসার নাম নেই। সুস্মিতা ভাবছে গ্রামটা তার চেনা তাই হয়তো ঘুরে ঘুরে দেখছে।
,,
সুস্মিতা তার নিজের ঘরে একটু সাজুগুজু করছে ঠিক তখনই অভ্র আসলো৷ সুস্মিতা দেখতে পেয়ে বলল..
-আপনার আসার সময় হলো?? (সুস্মিতা)
-একটু ঘুরে আসলাম (অভ্র)
-কোথায় গিয়েছিলেন?
-এই একটু সামনে
-আপনি বসেন আমি পিঠা নিয়ে আসছি
-আমি পিঠা খাবো না
-সোজা আঙুলে ঘী উঠবে না সেটা তো বুঝেছি আগেই..(সুস্মিতা বিড় বিড় করে বলল)
-কিছু বললেন?
-কই না তো
,,
এদিকে আগে থেকেই সুস্মিতা তার বান্ধবী কে একটা গাছের নিচে দাঁড় করিয়ে রাখছে৷ বান্ধবী টা এক বালতি পুকুরের পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সু্স্মিতার প্ল্যান হলো অভ্র তেঁড়ামী করলে বাইরে নিয়ে যাবে আর তখনই তাকে ভিজানো হবে।
-সত্যি খাবেন না??(সুস্মিতা)
-না (অভ্র)
-বাইরে চলুন
-মাত্রই তো আসলাম
-আরে চলুন চলুন ভালো লাগবে, গ্রাম এর পরিবেশ রাতে বেশ ভালো লাগে
,,
সু্স্মিতা আর অভ্র যে কথা গুলো বলছিলো সেটা তার বান্ধবী কান পেতে শুনছিলো। বাইরে যাওয়ার কথা শুনে মেয়েটি বালতি নিয়ে গাছ তলায় রেডি হয়ে থাকলো৷
,,
অভ্র আর সুস্মিতা একসাথে বাইরে আসলো। তারপর…
-আমি একটা জিনিস ফেলে আসছি ঐটা নিয়ে আসি হ্যা (সুস্মিতা)
-কি ফেলে আসছেন??(অভ্র)
-আপনি চিনবেন না ওয়েট আমি নিয়ে আসছি
-ওকে
,,
সুস্মিতা চলে গেলো। অভ্র ধীর পায়ে একটু এগোতেই সুস্মিতার বান্ধবী অভ্রর গায়ে ঢেলে দিলো পুরো এক বালতি পানি। মেয়েটি বালতি ফেলোই পালিয়ে গেছে অন্ধকারে অভ্র চেহারা টা দেখতে পায় নি। অভ্র কাঁপতে কাঁপতে সুস্মিতার রুমে চলে আসে।
,,
সুস্মিতা আসলে তার জন্যই রুমে অপেক্ষা করছিলো। সে রুমে ঢুকতেই সুস্মিতা হারানো জিনিস খোঁজার মতো ভান ধরে খুঁজতে লাগলো। সুস্মিতা কোনো রকম হাসি টা চেপে রেখে অভ্র কে দেখে না দেখার ভান ধরে আছে।
,,
অভ্র পেছন থেকে করুন সুরে বলল..
-এই যে শুনছেন (অভ্র)
সুস্মিতা অভ্রর দিকে ঘুরতেই তার অবস্থা ভাল ভাবে টের পাচ্ছিলো। সবকিছু জেনে না জানার ভান ধরে বলল..
-কোথা থেকে গোসল করে আসলেন! আমি তো আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলাম গোসল করতে বলিনি (সুস্মিতা)
-আমি গোসল করিনি (অভ্র)
-শরীরে পানি আসলো কিভাবে??
-আপনি চলে আসার পর আমি একটু সামনে এগোতেই কে যেন আমার উপর পানি ঢেলে চলে গেলো
-কে ঢেলেছে, আমার বর কে কে ভিজিয়ে দিয়েছে আপনি শুধু একবার নামটা বলুন
-আমি দেখতে পাই নি
-ওহহ। তাহলে আম গাছে যে চুন্নি টা আছে সে হয়তো দিছে
-চুন্নি মানে!! (অভ্র ভয়ে ভয়ে)
-আর বইলেন চারশ বছর হলো একটা চুন্নি আমাদের ঐ আম গাছটায় থাকে। আপনাকে একা পেয়ে হয়তো একটু মজা করেছে
-মানে আপনি ভুত এর কথা বলছেন
-হুমমমমম
-ই আল্লাহকে বেঁচে গেছি.. (অভ্র বিড় বিড় করে বলল)
-এগুলো চেঞ্জ করে নেন। ঠান্ডা লেগে যাবে
-আচ্ছা
-তো পিঠা কি খাবেন?
-হুমম নিয়ে আসুন
-বেটা বদমাশ
-আপনি কিছু বললেন?
-নাহহ কি বলব! এক্ষুনি পিঠা আনছি
,,
সুস্মিতা অভ্রর জন্য পিঠা নিয়ে আসলো। অভ্র ততক্ষণে পোশাক চেঞ্জ করে নিয়েছে।
-আপনি খান আমি এগুলো ধুয়ে দিচ্ছি (সুস্মিতা)
-একটা কথা (অভ্র)
-আমার এ রুমে থাকতে ভয় করছে
-কি জন্য
-এমনি ভয় করছে
-ভয় নেই তো কিসের ভয়
-আপনি একটু থাকুন
-এখন কেমন লাগে.. (সুস্মিতা মনে মনে বলল)
-বসে থাকেন পরে ধোয়া যাবে এগুলা
,,
মিটিমিটি হেসে সুস্মিতা অভ্রর সামনা সামনি গিয়ে বসলো।
-পিঠা কেমন হয়েছে??
-দারুন
-সেলফিশ মার্কা বর আমাকে একটু খেতেও তো বলেন না
-নিন
-বলার পর খাই না আমি। ওহ হ্যা অনেকদিন হলো মায়ের কাছে থাকি না আমি মায়ের কাছের থাকবো আপনি এখানে একা থাকবেন। আপনার একটু ভালই হলো প্রতি রাতের মতো আমার জ্বালানো আজ সহ্য করতে হবে না
-না
-কি না??
-আমি একা থাকতে পারবো না সমস্যা আছে
-আরে অনেকদিন পর আসছি খুব ইচ্ছা করছে তার কাছে থাকতে.. (সুস্মিতা বানিয়ে বানিয়ে সব বলছে)
-…(অভ্র কি যেন ভাবছে)
-আর আমাদের মাঝে তো কিছু হয়নি। আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। তো থাকতে বলতেছেন কি জন্য বুঝলাম না
-কিছু হয়নি তবুও থাকতে হবে
-উমমম ওকে। তবে শর্ত আছে
-কি শর্ত??
-মায়ের কাছে ঘুমানোর কথা, সেটা বাদ দিয়ে আপনার সাথে ঘুমাবো ডিমান্ড টা একটু বেশি। তো একসাথে ঘুমানোর পর আমাদের মধ্যে কোনো ডিস্টেন্স রাখা যাবে না
-মানে?
-আপনি দূরত্ব বজায় রেখে ঘুমাবেন সেটা চলবে না।
-…(অভ্র চুপ করে থাকলো। অভ্র বুঝতে পারছে তার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে)
-কি রাজি??
-ঠিক আছে রাজি
-মা ডাকছে রাতের খাবার খাবেন চলুন
-হুমমম
,,
বাসার সবাই মিলে একসাথে খেতে বসেছে। সুস্মিতার মা সবাইকে খাওয়াচ্ছে আর সুস্মিতা শুধু অভ্রকে খাওয়াচ্ছে। সবাই সেটা আড় চোখে দেখছে আর বলা বলি করছে। সুস্মিতার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সুস্মিতা হাসছে, তার হাসিটা অভ্র খুব ভালো খেয়াল করছে। একদম প্রকৃত হাসি একটুও ভেজাল নেই। মনে হচ্ছেনা সে কোনো অভিনয় করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের পর সে বেশ ভালোই আছে।
,,
খাওয়া শেষে সবাই আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়। এদিকে অভ্রর হয়েছে সমস্যা সে রুমে এসে বসে আছে কিন্তু সুস্মিতা আসছে না সে এখনো মায়ের সাথে গল্প করছে। অভ্র রুমের মধ্যে বসে থাকতে পারছে না কারন তার মনের মধ্যে শাঁকচুন্নির ভয় ঢুকে গেছে।
,,
কিছুসময় পর সুস্মিতা আসলো। সে আসতেই অভ্র বলল..
-এতক্ষণ কেউ গল্প করে??(অভ্র)
-দেখে মনে হচ্ছে ভয়ে মরেই যাচ্ছিলেন (সুস্মিতা)
-এরপর আর কখনো গ্রামেই আসবো না
-আপনাকে আসতেও হবে না আমরা তো কয়েকমাস পর আলাদা হয়ে যাচ্ছি
-সেটা পরের কথা আমি আসবো না তাই জানি। আর আসলেও থাকবো না
-ওকে ওকে আমি বুঝেছি ভয়ে আপনার দম আটকেছিলো আমি এসে গেছি চিন্তা নেই
,,
সুস্মিতা বিছানা ঠিক করে তার বালিশ নিয়ে একপাশে শুয়ে পড়লো। তারপর অভ্র তার বালিশ নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।
-কি কথা ছিলো হুমমম (সুস্মিতা অন্যদিকে মুখ করে আছে)
-এখনই??(অভ্র)
-এখনইইই মানে?? এখনি নয়তো আমি উঠলাম
-না শুয়ে থাকেন
-হুমমম
,,
অভ্র ধীর ধীর সুস্মিতার দিকে এগোতে লাগলো। অভ্র যখন সুস্মিতার কাছাকাছি গেয়ে থেমে গেলো তখন…
-এখনও দূরত্বটা আছে(সুস্মিতা)
অভ্র এবার পেছন থেকে সুস্মিতা কে জড়িয়ে ধরলো..
-ঐ ঐ জড়িয়ে ধরতে বলিনি কাছাকাছি থাকেন আর হাত সড়ান
-..(অভ্র হাত সড়িয়ে নিলো)
-আপনার সাহস দেখে আমি অবাক ভালোবাসেন না আবার আমার পেটে হাত দেন হুমমম
-সরি
-ঠিক আছে ঠিক আছে ঘুমান এখন
,,
দুজনই জাগনা অনেকক্ষণ হলো। অভ্রর নিশ্বাস সুস্মিতার ঘাড়ে পড়ছিলো। সুস্মিতা সহ্য করতে পারছিলো না। আবার অভ্রর উপর রেগে উঠলো..
-ঐ নিশ্বাস আমার ঘাড়ে লাগছে আমার কিন্তু ভালো লাগছে না
,,
অভ্র আর সুস্মিতার কথা শুনতে পাড়লো না এক প্রকার জড়িয়ে ধরেই ঘুমালো। সুস্মিতা লজ্জায় আর একটা কথাও বলতে পারলো না।
,,
তারপর দুদিন তারা গ্রামে থাকলো। এরপর শহরে গিয়ে সেই আগের মতো দিনগুলোর মতো চলতে থাকলো। দিনকে দিন যতই পার হচ্ছে দুজনের বন্ধুত্ব বেশ জোড়ালে হয়ে উঠছে। এখন অভ্র অভ্র অফিস থেকে আসার সময় কিছু না কিছু সুস্মিতার জন্য নিয়ে আসবেই। সপ্তাহ শেষে দুজন ঘুরতে যাওয়া কোনো কিছু নিয়ে ঝগড়া করা। কোনো সমস্যা হলে দুজনে আলোচনা করে ভালো একটা সিদ্ধান্তে পৌছানো এগুলোই চলছিলো তাদের মাঝে। তবে ভালবাসার অধিকার বা সুস্মিতা তার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে কখনো কথা বলেনি। সুস্মিতা মনে করে অভ্র ইচ্ছা করেই তাকে একদিন সবই দিয়ে দিবে।
,,
তাদের বিয়ের সাত মাস চলছে। অভ্র একদিন অফিসে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসে। অভ্রর অসময়ে ফিরে আসা দেখে সুস্মিতা বেশ অবাক হয়।
-আজ এত তাড়াতাড়ি আসলেন যে কোনো সমস্যা হয়েছে কি??(সুস্মিতা)
-হ্যা সমস্যা হয়েছিলো সাত মাস আগে আজ সমাধান হবে (অভ্র)
-মানে??
-এই যে আমার হাতে যে পেপার টা
-কি এটা?
-ডিভোর্স পেপার
-…(সুস্মিতা অনেকটাই চমকে গেলো)
-আমর সাইন করা হয়ে গেছে এখন আপনি সাইন করলেই হয়ে যাবে
-আমি তো চাইনি
-কি??
-না কিছু না
-নিন সাইন করুন
-আজ না করলে হয় না??
-আজকেই করতে হবে আর এখনি আপনাকে রেখে আসবো
-বাবা মা জানে?
-তাদের জানার কি আছে, আমি আপনি রাজি তো তারাও রাজি
-আচ্ছা পেপার টা থাক পরে সাইন করবো নি
-জ্বি না এখনি করতে হবে
-আমি তো আপনার সাথে দূরত্ব বজায় রেখেই থাকি। আমাকে রেখে দেন।
-কেনো??
-আপানকে ভালো লাগে
-ভালো লাগে কেনো?
-ভালবাসি ফেলেছি
-আমি তো অন্যকাউকে ভালবাসি
-সমস্যা নেই তো আপনি আপনার ভালবাসা কে ভালবাসবেন আর আমি আমারটাকে
-সেটা হবে না নিন সাইন করুন
-না পরে
-এখন করতে বলেছি এখন করবেন
-আমাকে ভালো লাগে না তাই না
-হুমমম
-কলম আছে
-এই যে নিন
,,
সুস্মিতা কান্না করতে করতে সাইন করলো। আর সাইন করার পর পেপার টা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলল।
-আরে এটা কি করলেন?? (অভ্র)
সুস্মিতা দৌড়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো আর কান্না করে বলল..
-আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না (সুস্মিতা)
,,
সুস্মিতা কিছুক্ষণ কান্না করার পর। অভ্র জোড় গলায় হাসতে লাগলো। অভ্রর হাসি দেখে সুস্মিতা একটু অবাক হলো কান্না থামিয়ে বলল
-হাসছেন কেনো (সুস্মিতা)
-আরে ঐটা এমনি একটা নিমন্ত্রণ পত্র ছিলো হা হা হা (অভ্র)
-আপনি আমার সাথে এমন করলেন কেনো?
-দেখছিলাম
-কি?
-কতটা ভালবাসেন
-বাসি না তো
-আমি তো দেখে ফেলেছি কতটা ভালবাসেন। নেন এবার বুকে আসুন অনেক দিন দূর থেকেছেন আর না
-যাবো না
,,
সুস্মিতা বেশ অভিমান করেছে। অভ্র অভিমান ভাঙাতে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো।
-আর এমন করবো না দূরে দূরে রাখবো না অনেক হয়েছে (অভ্র)
-….(সুস্মিতা রাগে ফুঁসছে)
-এত রাগ করে না। চলেন হানিমুনে যাবো
-আগে বলেন ভালোবাসেন
-মুখে বলতে হবে কেনো বুঝতে পারছেন না??
-আর আগের উনি?? মানে ঐ ভালবাসা??
-একটু আগে আপনি তো বললেন আপনি আপনার ভালবাসা কে ভালবাসবেন আর আমি আমারটাকে। তাহলে এত কথা বলার দরকার আছে কি??
-নাহহহ
-তো চলেন এবার হানিমুনে যাওয়া যাক
-উহুমমম
-কেনো??
-এখন রুমটাতেই মনে হচ্ছে হানিমুন করতে আসছি
-তাই??
-হ্যা
,,
সুস্মিতা এবার অভ্রর মুখের দিকে তাকালো। তারপর কি মনে করে পায়ের দুপাতার উপর ভর করলো।
সুস্মিতা তার ঠোঁটটা অভ্রর ঠোঁটের সাথে লাগালো। তেমন নাগাল না পাওয়ায় সুস্মিতা রাগ করেই বলে ফেলল..
-কেউ যদি প্রিয় জিনিস টা একটু সহজলভ্য করে দিতো আমার জন্য ভালো হতো..
অতঃপর………..????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here