ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 9
Write : Sabbir Ahmed
-ওর বাবা মা নেই, বিকেল পর্যন্ত রাখার জন্য উনাকে আমি নিয়ে আসিনি, আর তোমাকে এসব বলতে কে বলেছে?? (ইরা তার মা কে বলল)
-দেখ ইরা তোর বাবাকে তুই তো চিনিস (ইরার মা)
-বাবাও আমাকে চেনে
-বাইরের একটা ছেলে ধরে এনে এইভাবে বাসায় ঢুকানো ঠিক হয়নি লোকে খারাপ বলবে সমাজ খারাপ বলবে (ইরার মা)
-তো তোমরা সবাই আমাকে ঐসব বলেছিলে কেনো, যে ওর সাথে আমার রিলেশন আছে
-আচ্ছা আমরা সবাই তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। এখন তুই ছেলেটাকে বিদায় কর
-না ওকে আর কিভাবে বিদায় করবো, ও আমাদের এখানেই থাকবে।
-মানে?
-আমার রাগ টা কমে যাক আমি বাবার সাথে কথা বলে নিবো তুমি যাও
-তুই এখনই এসে তোর বাবার সাথে কথা বল
-যাও তুমি আমি আসতেছি
,,
ইরার মা চলে যাওয়ার পর..
-ম্যাম আমি বলি কি আপনার রাগ কমে যাওয়ার পর, আমি চলে যাবো। পরিবারের সাথে এমন করতে হয় না। সবাই যেটা বলে সেটার মধ্যে থাকাই ভালো (আমি)
-তোর থেকে ভালো বুঝি আমি (ইরা)
-জ্বি জ্বি ঠিক আছে
-তুই যে চলে যেতে চাস তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের কি হবে? এইরকম বন্ধু পাওয়া অনেক মুশকিল। এখন পেয়েছি কাছে রাখার চেষ্টা করবো। তুই এখান থেকে যাওয়ার কথা মুখেও আনবি না
-আচ্ছা
,,
,,
ম্যাম আমার সাথে কিছুসময় কথা বলে তার বাবার কাছে যায়। সেখানে তার বাবার সাথে অনেক কথা হয় আর সেগুলো আমাকে এসে ম্যাম বলা শুরু করলো..
-শোন তোর চাকরি কনফার্ম। ড্রাইভিং করতে পারিস??(ইরা)
-না (আমি)
-ওহহ। আচ্ছা বাবা কে বলে সত্যি কথাটা বলে দিয়েছি, আর রাগের মাথায় তোর সাথে অনেক কিছুই করে ফেলেছি তুই মন খারাপ করিস না। আর তুই আমার বন্ধু তোকে দূরে সড়িয়ে দিবো না কাছেই রাখছি আমার ড্রাইভার হিসেবে। আমি যেখানেই যাবো তুই ও সেখানেই। খুশি তো??
-ম্যাম এত কিছু করলেন? আমার তো এ বাসার লোকজনদের দেখলে ভয় করে
-আরে পাগল ভয় কিসের? আর তুই থাকবি তো আমার সাথে সাথে একা তো না
-হুমমম
-আর তোর থাকার জায়গাও আমার খুব কাছে
-মানে!!
-মানে পাশের রুমে। আমর রুম থেকে তোর রুমে যেতে বাইরে দিয়ে ঘুরে যেতে হবে না, দুই রুমের মাঝেই একটা দরজা আছে। দেখবি আয়
,,
ম্যাম আমাকে নতুন রুম টা দেখিয়ে দিলো। ম্যাম এর কোনো বান্ধবী আসলে এ রুমেই থাকতো। বন্ধু হিসেবে এটা আমার জন্য ফিক্সড।
,,
সেই যে এসে রুমে ঢুকেছি বের হওয়ার নাম নেই। কিভাবে বের হবো বাইরে বের হওয়ার কথা মনে হলেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। এ বাসার মানুষকে বড্ড ভয় হয়। তবে আমি জানি না তারা কেমন।
,,
বিকেল বেলা ম্যাম আমাকে নিয়ে বের হয়। ম্যাম গাড়ি চালাচ্ছে আর ধীরে ধীরে আমাকে সবকিছু শিখিযে দিচ্ছে৷ মন দিয়ে সব দেখছিলাম আর শুনছিলাম। সন্ধ্যায় আবার বাসায় ফেরা। বাসার কাজের লোকটা আমার খাবার রুমে এসেই দিয়ে যাচ্ছে তার মানে বাকিদের সাথে খেতে হবে না। বাঁচা গেলো!
,,
ম্যাম তার রুমে বসে অফিসের কাজ করছে। আর আমি আমার রুমে বসে কোনো কাজ নেই একবার রুমের এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছি কখনো আবার রুমের জানালা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি আমার তো আবার প্রকৃতি দেখার অভ্যাস।
,,
আরেকটু রাত হলো। এবার নজর গেলো নিজের ব্যাগ এর দিকে। ব্যাগ থেকে কাপড় এখনো বের করা হয়নি।
বিছানায় ব্যাগ নিয়ে গিয়ে কাপড় বের করছিলাম আর তখনই সেই সকালের কথা মনে পড়ে গেলো। ম্যাম কি টরচর টাই না করেছিলো সকাল বেলা। আর সেখানে উনার কাছে আসা পেটে হাত রাখা। এসব মন পড়তেই হাসি পেলো। একা একা হাসছিলাম। হঠাৎ রুমের ভেতরের দরজায় নক, ম্যাম ডাকছে। তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
-জ্বি ম্যাম আসুন (আমি)
-কি করতেছিস তুই?? (ইরা)
-এই যে কাপড় গুলো বের করতেছি
-তুই অনেক আলসে মানুষ তো সেই সকালে আসছি এখনো তুই কিছুই গুছিয়ে উঠতে পাড়িস নি
-মনে ছিলো না
-হুমম ভাজ কর এখন
,,
আমি আবার বিছানায় বসে কাপড় ভাজ করায় মন দিলাম। ম্যাম আমার গা ঘেষে বসলো। উনি খুব কাছে বসেছিলো তাই বললাম
-ম্যাম একটু দূরে বসেন সমস্যা হচ্ছে (আমি)
,,
কথাটা বলেই মনে হয় জীবনের সবথেকে বড় একটা ভুল করলাম। কথাটা বলার সাথে সাথে ম্যাম চোখ লাল করে ফেললেন। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল বেশ রাগ করেছে। ফর্সা মানুষ তার শরীরে রক্ত গুলো গুলো সব চোখ মুখ গালে এসে জড়ো হচ্ছিলো, দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে।
,,
উনি উঠে দাঁড়ালেন আর তার রুমে চলে গেলেন দরজা না লাগিয়ে। আমি বিছানায় বসে আছে। ভাবছি ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছি। আমার জীবনে সুখ নেই শুধু সমস্যা আর সমস্যা। কাপড় আর ব্যাগ ফেলে রেখেই পা টিপে টিপে তার রুমের দিকে এগোতে থাকলাম। উঁকি দিয়ে দেখি আমার মতোই জানালা খুলে দাঁড়িয়ে আছে, বার বার চোখ মুচছে।
,,
উনার রাগ ভাঙাতে উনার খুব কাছে গিয়েই দাঁড়াতে হবে, তাছাড়া এর বিকল্প কোনো উপায় নেই। আমি পা টিপে টিপ তার কাছে গেলাম। উনি কিছু বলছেন না হয়তো টের পেয়েছেন আমি আসছি। উনি যে চালাক মানুষ আমার রুমে প্রবেশ করা অবশ্যই টের পেয়েছেন।
,,
আমি তার পায়ে গিয়ে দাঁড়াতেই..
-আপনি আপনার রুমে যান নয়তো খারাপ কিছু হবে (ইরা)
-দুঃখিত আমি, ভুল হয়েছে (আমি)
-আমি আপনাকে আপনার রুমে যেতে বলেছি
-…(আমি আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, কিন্তু তার শরীরের সাথে স্পর্শ লাগেনি)
-রাগ উঠায়েন না আর
-আচ্ছা ইংরেজি ভাষায় বলতেছি সরি
-তোর সরির আমি…তুই যাবি এখান থেকে
-একটু তো দূরেই যেতে বলেছি তাতেই এত রাগ করতে হবে??
-আমি তে দূরের মানুষ দূরেই থাকবো তাই না?
-না কাছের মানুষ
-না না কাছের মানুষ মানুষ তো দূরে থাকে না কাছেই থাকে
-সরি আমি বুঝতে পারিনি, আমার বলাটা ঠিক হয়নি আপনার কাছে আসাটা ঠিক ছিলো
-রাত হয়েছে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় সকালে অফিস আছে
-রাগ কমেছে তো আপনার??
-কমে যাবে
,,
এত অভিমানী আমি কখনো দেখি নি। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি ভুল করছি না তো? উনি এত বন্ধুত্বের কথা বলতেছেন আমি তো তার ডাকে একটুও সাড়া দিচ্ছি না। আমার কি দূরে থাকাটা ঠিক হচ্ছে। উনি তো তার বন্ধুর জন্য অনেক কিছুই করেছে আমি তো কিছু করতে পারলাম না বা এখনো কিছু করিনি।
আমি কি তার বন্ধুত্বের ভালবাসায় সাড়া দিবো??
,,
মনের সাথে বোঝাপড়া যখন শেষ হলো তখন আমি তার ডান হাতটা আমার দুহাত এর মধ্যে রেখে বললাম..
-এই তো কাছে এসেছি। আর দূরে যাওয়ার কথা বলব না, ওমন ভুল কখনো হবে না৷ সরি (আমি)
-সত্যি তো?? (ইরা)
-হুমমম
উনার কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছিলো অভিমান টা অনেকটাই কমেছে। কেনো যে ম্যাম এমন করে!
-ম্যাম এখন যাই তাহলে?? (আমি)
-কাছে থাকতে ভালো লাগছে না? (ইরা)
-আপনি তো বললেন কাল অফিস আছে, আমাকে ঘুমাতে বললেন
-পরে ঘুমাবি
,,
ম্যাম আনমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন তার ডান হাতটা তখনই আমার দুহাত এর মধ্যে এক অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছিলো তখন। সেটা যে কি আমি ঠিক বলতে পারবো না। আমি ম্যাম এর মুখের দিকে তাকালাম দেখি মিটিমিটি হাসছে। আমি তার হাসি দেখে প্রশ্ন করেই বসলাম…
-এভাবে আনমনে বাইরে তাকিয়ে কি দেখেন?? (আমি)
-বাইরে কি দেখি?? (ইরা)
-হুমমম
-তোকে
চলবে