অদ্ভুত_সম্মোহনী♥
PART_01
#FABIYAH_MOMO?
♥
মাগরিবের আযানের সময় ছাদে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ মনে হলো কেউ আমায় পেছন থেকে মুখ গুলিয়ে দেখছে। চারদিক থেকে যখন আযানের সুর হচ্ছিলো তখন বাতাসের সাথে অদ্ভুত একটা শব্দ আসছিলো। আমি অনেকবার ছাদের চারপাশে চোখ বুলিয়েছি। কিন্তু কিচ্ছু দেখতে পাইনি। সূর্য যখন অস্ত গেল, আযানের সুর যখন কমে এলো তখন হঠাৎ বাতাসের শো শো শব্দের বেগ বেড়ে গেল। অদ্ভুত শব্দটাও তখন জোরে জোরে হচ্ছে। কেউ কি আশেপাশে আছে? চারিদিকে আবার চোখ বুলালাম! আশ্চর্য তো? বিকট শব্দটা কোথা থেকে আসছে??
ছাদে একা, তার উপর আজ বাসায় আপু ছাড়া কেউ নেই। কোনো অঘটন ঘটলে চিৎকার করে ডাকলেও লাভ নেই। আওয়াজ নিচে পৌছাবেনা। চারপাশে রাতের আধার ছেয়ে যাচ্ছে। আমি গুটিগুটি পায়ে খোলা চুলের উপর ওড়না টেনে দিগ্বিদিক তাকিয়ে বেরাচ্ছি। বোকার মতো নিজেকে প্রশ্ন করে বসি, অদৃশ্য কিছু কি আছে? বড়রা বলে, মাগরিবের পর মেয়েদের ছাদে যাওয়া নিষেধ। অশরীরী কিছু ছাদে ঘুরে।। খারাপ কিছু মেয়েদের গ্রাস করে! খুবই খারাপ কিছু! আমি শব্দ করে নিজের সাথে কথাগুলো বলতে থাকলে হঠাৎ বাতাসের ঝাপটানি শুরু হয়! মুখের উপর বাতাসের ঝাপটা এসে পড়ে! মাথা থেকে ওড়না পড়ে গলা থেকে সরে যেতে থাকে। আমি কোনোরকমে চোখ খুলার চেষ্টা করে ওড়না ঠিক করলাম। বাতাসের বেগের জন্য ঠিক করে তাকানো যাচ্ছেনা। হঠাৎ ছাদের কোণায় জ্বালানো হলুদ বাতিটাও নিভুনিভু করছে।। কি অদ্ভুত কান্ড হচ্ছে! যেকোনো মূহুর্তেই বাতি নিভে যাবে।। আমি দ্রুত ছাদের দরজার কাছে দৌড়ে যাই। ছাদের দরজা লাগিয়ে ধরপর করে নিচে নামতে থাকি।।
সিড়ি দিয়ে নামছি। বুকটা ধ্বক ধ্বক করছে। বেগতিক হারে শ্বাস উপর নিচ হচ্ছে। শরীরের পশমগুলোও কাটা দিয়ে দাড়িয়েছে! কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি! হাত দেখি বরফর মতো থরথর করে কাপছে।।জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে মুখ মুছতে গিয়ে দেখি পুরো মুখ ঘেমে ভিজে শেষ। ওড়নাটা নিয়ে হাপানো রোগীর মতো শ্বাস ছেড়ে আলতো আলতো করে পযার্য়ক্রমে মুখ, কপাল, গলা ও ঘাড় মুছছি। হঠাৎ দেখি কারেন্টটাও চলে গেল।। সব ঘুটঘুটে অন্ধকার! ধুর!অসময়ে কারেন্টটাও গেল! হায়রে কপাল! অন্ধকারে পা চালিয়ে আন্দাজের উপর ড্রয়িং রুমে যাচ্ছি। দেয়াল ছুয়ে ছুয়ে সামনে আগাতেই পায়ে সোফার সাথে হোচট খেয়ে এক চিৎকার মারলাম। ওমনেই আপু রুম থেকে চেচিয়ে বলল,
— কিরে কি হলো তোর?? ব্যথা পেলি নাকি!!
— উফফ! মরার সোফার সাথে উস্ট্রা খেয়েছি আপু! চার্জার লাইটটা আনো তো!! অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা।
–দাড়া আসতেছি!! তুই ওইদিকেই থাক!!
আপুর হুড়মুড় করে আসার শব্দ পাচ্ছি। লাইট জ্বালিয়ে আপু এদিকেই আসছে। আপু ড্রয়িংরুমে এসে দেখে আমি দেয়ালে একহাত রেখে এক পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছি। আরেক হাত দিয়ে হোচট খাওয়া পায়ে হাত বুলাচ্ছি।। লাইটটা টি-টেবিলের উপর দাড় করিয়ে আপু নিচে ঝুকে আমার পা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। পা নিয়ে এনালাইসিস করে বলে উঠলো,
— অন্ধকারে হাটতে যেয়ে পা তো কেটে ফেলছোস! রক্ত পড়তেছে। সোফার তাড়কাটার সাথে পা বিধছে তোর।
— কপাল রে! এমনেই চশমা ছাড়া চোখে দেখিনা।। তার উপর অন্ধকারে তাড়কাটা বিধে পা কাটলো!
— পকরপকর করিস না। তুই লাইটটা নে। আমি তোরে ধরতেছি। ব্যান্ডেজ না করলে ব্যথা সারবো না।।
— আচ্ছা। লাইটটা হাতে দাও।
আপু আমাকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে গেল। আমি বেডে আধশোয়া হয়ে হেলান দিতেই আপু ব্যান্ডেজ করার সরন্জামাদি এনে পাশে বসলো। বুড়ো আঙ্গুলের মাথা কেটে গেছে। আপু তুলোয় স্যাভনল জড়িয়ে রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে আপু রক্ত মাখা তুলোগুলো রুমে রাখা ডাস্টবিন ফেললো। ফেলতেই হঠাৎ মেইন দরজায় ঠক ঠক কড়া নাড়ার শব্দ হলো। আপু আমার দিকে উঝবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— বস! আমি দেখছি।
আপু ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে দরজা খুলতে চলে গেল। আমি জানালার দিকে তাকালাম। বাইরে এখনো প্রচন্ড ঝড়োবৃষ্টি হচ্ছে।। হঠাৎ ঠাসস করে কিছু ভাঙচুরের শব্দ হলো। ঘটনাস্থলে আমি চোখ খিচে কানে দুহাত দিয়ে ”আপু আপু” বলে চিল্লাচ্ছি। আপু দৌড়ে আমার কাছে এসে নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো। “কি হয়েছে, কেন চিৎকার করছি, কিসের শব্দ হলো”।। হঠাৎ দেখি আপুও চুপ। আর কোনো কথা কানে আসছেনা।। আমি ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি আপু হা করে বড় বড় চোখ করে কিছু দেখছে। কি দেখছে?? আমিও কান থেকে ধীরগতিতে হাত সরিয়ে আপুর তাকানো দৃষ্টি ধরে সেদিকে তাকালাম। বুকটা সাথে সাথে মোচড়ে এলো! আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে কাটা পায়ে আপুকে জাপটে ধরি।
বলে রাখি, আপু কখনো ভয় পায়না। খুব সাহসী আপু। রাতেরবেলা একা একা পুরো কবরস্থান পাহারা দিতে বললেও আপুর কলিজা কাপবেনা।
আপু আমাকে আগলে ধরে শান্ত হতে বলল। কিছুক্ষণ আপুকে শক্ত করে জাপটে ধরলেও পরক্ষণে ছেড়ে দেই। কেউ বাইরে থেকে জানালা বরাবর ভারী কিছু ছুড়ে মেরেছে। ভারী কিছুর আঘাতেই জানালার থাই গ্লাস ভেঙ্গে ফ্লোরে ছিটকে পড়েছে।গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গ্লাস। আমি ভয়ে এখনো ঢোকের পর ঢোক গিলে মৃদ্যূ কাপছি। আপু ঝাড়ু এনে ফ্লোরে থাকা কাচের টুকরা একসাইড করে রাখলো। থাই জানালার ভাঙা অংশটুকু দিয়ে উকি দিতেই হঠাৎ আপু জোরে ছিটকে যাওয়ার মতো কয়েক পা পিছিয়ে গেল। আপু রীতিমতো শক্ড! সে চোখের গোলক বড়ো বড়ো করে জানালার দিকে থরথর করে ঠোট কাপাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করি,
— আপপু ততুমি কাপছো কেন? ককি দেখখেছো?
আপু জানালার দিকে কাপা অবস্থায় হাত উচিয়ে দেখালো। হাত কাপছে। তার চোখের দৃষ্টিও স্থির। আমারো ভয়ে ভেতরটা চুপসে আছে। তবুও দূরূদ শরীফ পড়ে বুকে ফু দিয়ে কাটা পায়ে গোড়ালিতে ভর দিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। দেখতে গেলাম ওখানে। আপুর মতো জানালায় উকি দিতেই যা দেখলাম তাতে বিড়বিড় করে পাচঁ কালেমা জপা শুরু করেছি। লাগাতার জপছি। বাইরে জানালার ওপাশে কেউ দাড়িয়ে আছে। রাস্তার ওপাশে নষ্ট আধো জ্বলা ল্যাপপোস্টের কাছে কারোর অবয়ব স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি। ঝিম ধরানো সুনশান রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কেউ দাড়িয়ে আছে…ব্যাপারটা আজব না?? আমি আপুর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
— আপু, বাসায় কিন্তু আব্বু আম্মু নেই! বাইরের ছেলেটা যদি জেনে থাকে, আমরা এই বাড়িতে একা !! তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! আমার ভয় করছে আপু!
আপু ঢোক গিলে নড়েচড়ে উঠলো। সেও গলার স্বর কৌতুহল করে বলে উঠলো,
–জানিস গেট খুলে দেখি বাইরে কেউ নেই। অথচ দরজায় ঠক ঠক কড়া নাড়ার শব্দ তুইও পেয়েছিস!
আপুর কথায় চর্তুদিক থেকে ভয় গ্রাস করলো! কেউ দরজায় নক করেছে কিন্তু বাইরে কেউ ছিলো না। এখানে জানালা ভেঙ্গে দিয়েছে। একটা মূর্ত অবয়ব বাইরে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে আমাদের দুজনের সাথে? আমি বেডে বসে ঝপাঝপ কালেমা জপছি। মনে ভয়ের প্রচন্ড আক্রোশ বেড়েছে। হঠাৎ আপু ফ্লোরের এক কোণা থেকে কি যেনো হাতে তুলে দেখতে লাগলো। আপু সেটা নিয়ে পরোখ করতেই বলে উঠলো,
— এটা দিয়ে জানালায় মেরেছে! দেখ!
সেদিন রাতে দুবোন নির্ঘুমে কাটিয়েছি। একটা সেকেন্ডের জন্য ঘুমাইনি। আব্বু আম্মুকে নিয়ে ছোট মামীর কাছে হসপিটালে গিয়েছে। উনাদের বেবি হবে। আমরা একা আগেও অনেকবার থেকেছি। কখনো কোনো বিপদআপদ হয়নি।। এবারই প্রথম অদ্ভুতকান্ড ঘটলো! রাতে আর কিছু হয়নি। পরদিন আব্বু আম্মুকে সব বলে দিলে আব্বু বড় ভাইয়াকে দেখভালের দায়িত্ব দেন। বড়ভাইয়া শিরধার্য করে সব কথা মেনে নেন।
আমি সাইফা তাসনিম রাহা। ইন্টার থার্ড ইয়ারে পড়ছি। থুক্কু! স্বাভাবিক ভাষায় আমি এইচএসসি ক্যান্ডিডেড। আমরা তিন ভাইবোন।বড় আপু, রাইফা তানজিম রূপ এবং বড় ভাই, রাহাত রাফসান শাকিল। আমরা নারায়ণগঞ্জের আবাসিক এলাকা আফাস নগরে থাকি। নিজস্ব বিল্ডিং ডুপ্লেক্স বাড়ি।
সকালে আম্মু ও ভাইয়াকে সবটা বুঝিয়ে আব্বু অফিসে চলে যান। আপু ভার্সিটির প্র্যাক্টিক্যাল নিয়ে বিছানায় বসে ব্যস্ত। আজ ভাইয়া বাইরে যাননি। আব্বুর আদেশমতো আমাদের পাহারা দিতে সোফায় বসে টিভি দেখছেন। হঠাৎ মেইন দরজায় কলিং বেল বাজলো। আপু বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতে যান। আমি চেয়ার-টেবিলে বসে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি কে এসেছে। দরজা খুলে দিয়ে আপু রুমে ঢুকতেই বলল,
— রাহা তোর টিচার এসেছে। বইখাতা রেডি কর।
আমি পড়ার কথা শুনে মুখ কুচকে বসে আছি।একটুপর দেখি টিচার সাহেব রুমে ঢুকলেন। চেয়ার টেনে দূরত্ব বজায় রেখে পাশে বসলেন। বলে রাখা ভালো, আমার এই টিউশন টিচার ভাইয়ার খাশ বন্ধু। সেম ভার্সিটিতে ব্যাচমেট তারা। কিন্তু ততোটা ঘনিষ্ঠ খাতির নেই ভাইয়ার সাথে। নাম, সাদমান আরাফ। শর্টকাট নাম সাদ। দেখতে সুন্দর বটে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। সে সর্বদা সাদামাটা থাকে। কখনো জাকজমক পোশাকে দেখিনি তাকে। এটুকুতে যে থাকে, তাতেই তাকে সুদর্শনের চেয়ে কয়েকধাপ বেশি সুন্দর লাগে। ভাইয়া সর্বদা উনাকে খোটা দিয়ে বলে, “সাদ!! তোকে দেখতে কিন্তু হিরো হিরো লাগে! বেটা তুই ওয়েল গেটআপে থাকোস না কেন!! খালি সাদাসিধা লাল্লু বাচ্চা সেজে থাকোস! মেয়েরা এমনে পটবো বেটা ?” সাদ টিচার মশাই হালকা হেসে বলে উঠে, “পটাতে যোগ্যতা লাগে দোস্ত!গরীবের সেই যোগ্যতা নেই। রানী পালতে কাড়ি কাড়ি টাকা লাগে। আমার অতো টাকা নেই, বুঝছিস তো আমার হাল!! গরীব্স! হা হা”।। সাদ ভাইয়ার আম্মু আছেন। আব্বু নেই। বড় একটা বোন আছেন। সেই বোনের সংসার জীবন চলছে। বাকি শুধু সাদ ভাইয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতায় উনি বুয়েটে পড়ছেন। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট। উনার এইচএসসিতে বোর্ড স্ট্রেন্ড টপিকটা নিয়ে এখনো উনাদের এলাকায় গর্ব করে বলে।টিউশনি করিয়ে সাদ ভাইয়া সবটা দেখেন। খুব মজার মানুষ উনি। রসকস মিশিয়ে খুব সুন্দর পড়ার টপিক বুঝাতে পারেন। গুছিয়ে কিভাবে কথার উপস্থাপনা করা লাগে তার জন্য সাদ ভাইয়া বেস্ট!
সাদ ভাইয়া গলা ঝেড়ে বলে উঠলেন,
— রাহা কি অবস্থা? কেমিস্ট্রির জৈব যৌগ চ্যাপ্টারের বোর্ড কোয়েশ্চ্যানটা সল্ভ করেছো?
ভাইয়ার কথা শুনতেই মনে পড়লো কেমিস্ট্রির এই বিষাক্ত চাপ্টার আমি দুদিন যাবৎ ছুয়েও দেখিনি। বোর্ড কোয়েশ্চ্যান সল্ভ তো দূরে থাকুক। আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে উঠলাম,
— আসসললে ভাইয়া এটাও হোমওয়ার্ক দিয়েছেন… জানতাম না যে…
ভাইয়া গম্ভীর মুখ করে চোখ ছোট করে তাকিয়ে দেখছেন। ভাইয়া আমার পড়াচুরি বুঝে গেছেন হয়তো। জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে উনি টেস্ট পেপারটা হাতে নিলেন। কালো মার্কার দিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন দাগিয়ে বললেন,
— এইম যেন কি?? বুয়েট! বুয়েটে পড়া এতো সোজা না। কঠোর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করা লাগে। তুমি যে পড়া নিয়ে ঘাপটি দেখাচ্ছো !! পাবলিক ভার্সিটিতেও চান্স হবেনা।। সময় আছে এখনো। ভালো মানুষের মতো সুধরে যাও। ভালো হতে টাকা পয়সা লাগেনা।
নাকের ডগায় রাগ উঠিয়ে গড়গড় কথা শুনালেন সাদ ভাইয়া। আজ উনার মেজাজ হট হয়ে আছে দেখছি!! বেশি তিড়িংবিড়িং করলেই বাশঁ খাবো নিশ্চিত! ফলাফল হাতে স্টিলের স্কেল দিয়ে মশলা! সাথে এত্তোগুলি পড়া! আমি টেস্ট পেপার নিয়ে দাগানো প্রশ্ন গুলোর উত্তর বুঝে খাতায় লিখছি। কলম নিয়ে একটা প্রশ্নের “ঘ” নং লিখতেই সাদ ভাইয়া গরম গলায় বলে উঠলেন,
— পায়ে কি হয়েছে তোমার?? ব্যান্ডেজ কেনো??
আমি লিখা বাদ দিয়ে জানালার ভাঙা অংশের দিকে তাকালাম। পরক্ষণে খাতায় কলম চালিয়ে বলে উঠলাম,
— তাড়কাটা দিয়ে সোফা কেটেছে…
ভাইয়া জোরে চেচিয়ে বললো,
— কিহহ্!
আমি লিখতে গিয়ে চমকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার কথায় এমন ভাব করলো যেনো, তাড়কাটা দিয়ে কারোর পা কাটে না; চুমা লাগে। চুমা।
— সত্যি। তাড়কাটা দিয়ে পা কেটেছে। আপনি বিশ্বাস না করলে আপুকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
— তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে রাহা? কি উদ্ভট একটা জবাব দিয়েছো খেয়াল করেছো?
— কেনো…কি বলেছি??
— তুমি বলেছো, তাড়কাটা দিয়ে সোফা কেটেছে। সিরিয়াসলি ভাবো তো, আদৌ সোফা কাটছে নাকি তোমার পা?
তৎক্ষণাৎ জিহবায় কামড় দিয়ে লজ্জায় পানি পানি হচ্ছি। কি বলতে যেয়ে কি বলে ফেললাম। ছি কি লজ্জা কি লজ্জা!! এই লজ্জা কোথায় রাখি!!
পড়া শেষ হলে ভাইয়া আমাকে এত্তোগুলো পড়া দেন। কড়া আদেশ দেন সপ্তাহে এখন থেকে তিন দিন না উনি পাচঁদিন পড়াবেন। বুয়েটে উনার সেমিস্টার এক্সাম শেষ তাই ব্রেকে আছেন। আমার যেহেতু সামনে এইচএসসি। তাই ভাইয়া পড়ার প্রেশার বাড়িয়ে দিয়েছেন। পড়া শেষ হলে সাদ ভাইয়া যেই চেয়ার থেকে উঠতে দিকে তাকিয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে একটু জোরেশোরে বলে উঠলেন,
— ইশশশ গ্লাস দেখি পুরোটা ভাঙ্গেনি…পুরোটা ভাঙ্গলে চলতো…
#বিদ্র : রহস্য স্টাইলে আরো একবার! পাগলামিপূর্ন আবেশে অদ্ভুত কিছুর সমাহার?