অদ্ভুত_সম্মোহনী ♥
PART_03
#FABIYAH_MOMO?
–আচ্ছা তোমরা কি এডুকেটেড? তোমাদের পড়াশোনা কি এইগুলা শিক্ষা দেয়? শেম! কিভাবে পারো একটা মেয়েকে ‘কালো’ বলে কটুক্তি করতে! চোখে একখানা চশমা লাগিয়ে ‘কালো’ ও ‘শ্যামা’র পার্থক্য করতে এসো! যত্তসব!
রাগী গলায় একদফা কথা ছুড়ে শার্টের কলারটা ঠিক করলো সাদ। চোখের বাম ভ্রু-টা খানিকটা উচু। রাগে ফুসতে ফুসতে হোয়াইট শার্টের বামহাতাটা ফোল্ড করতেই উজ্জ্বল শ্যামলার হালকা পশমের হাতটা দেখা গেলো! রূপসহ রূপের বান্ধুবীরা চোখের পলক না ফেলে একদৃষ্টিতে সাদের সুদর্শনতার মোহ দেখছে!! চুপিসারে সবাই মুগ্ধ নয়নে তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখছে সাদকে! এই ছেলেটা এতো সুন্দর কেনো? প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য কি তার মধ্যে নিহিত? কি সুন্দর চোখ! চকচকে সাদা রঙের গোলকটার মধ্যিখানে কালো রঙের চক্ষুমনি…ইশশ, আর্কষন কেনো করছে চোখগুলো? একবার ওই চোখে চোখ পড়লে চোখ ফেরানো বড় দায়! ভীষন জটিলতায় ভুগতে হবে চোখ সরানো নিয়ে!! চোখের উপর একজোড়া ভ্রু কি অদ্ভুত ভাবে রাগী ভঙ্গিমা ধরেছে!! সাদকে দেখে সবাই উপস্থিত জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে।। কয়েকজোড়া চোখের দৃষ্টি উপেক্ষা করে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো সাদ। নিশ্বাসের সাথে যেনো সব রাগ ঝেড়ে মুছে গেলো তার। কপালের সামনে আসা পাতলা ব্রাউন চুলগুলো ডানহাতে ঠেলে দিলো পেছনে। প্রস্থান করলো রুম থেকে। উপস্থিত দর্শক হিসেবে রূপ, তানিয়া, ইশা ও রুশা, সিমা সবাই যেনো একপানে তাকেই দেখছে এখনো। সাদের যাওয়ার শেষ চিহ্ন টুকু পযর্ন্ত তৃপ্তি সহকারে দেখলো সবাই।
রূপ রুমে ছিলো না। চা নাস্তা আনতে রান্নাঘরে গিয়েছিলো! এই ফাকে সাদ রুমে ঢুকে ইচ্ছেমতো সবকটাকে কথা শুনিয়ে দেয়। রাহাকে ‘শ্যামা’ না বলে ‘কালো’ বলার জ্বালা এখনো রাগে পুড়ছে সাদের!! তবুও রাগকে বায়পাস করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো সে।।
?
ঘুম ঠেলে উঠতেই দেখি বাড়ির পরিবেশ রমরমা। সবাই নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত!! ভাইয়া হুড়োহুড়ি করে বাজার সদাই ব্যাগ থেকে নামাচ্ছে। কাজের খালাম্মা সবকিছু ঝাড়ু মোছা করছে। আমি মুখহাত ধুয়ে নাস্তার জন্য রান্নাঘরে যেয়ে দেখি আম্মু নাস্তার পসরা না সাজিয়ে বড় বড় ডেস্কি পাতিল, সসপ্যান, নতুন প্লেট গ্লাস নামিয়ে ধুচ্ছেন। আপু চপিংবোর্ডে একাধারে ছুড়ি চালিয়ে ফটাফট পেয়াজ,টমেটো, সবজি, কুচি করছে। আমি বিস্মিত চোখে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
— মা, আজকে কি মেহমান আসবে ? এতো রান্নার সাজসজ্জা নিয়ে বসেছো!!
আম্মু বড়োমাপের কড়াই চুলোয় বসিয়ে তাতে তেল ঢালতেই তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে উঠলেন,
— তোর ফুপি আসবে। তোর নাইমা আপু দেশে ফিরেছে। তাই আমার বাসায় দাওয়াত।
— আপু দেশে ফিরেছে?? কবে?? কখন??
— উফ..যা তো! কানের গোড়ায় চেচাস না! গরমের মধ্যে মুখ পুড়ছে!! তার উপর কথার ঝুলি এনেছিস!!
ইতিমধ্যে বুঝা শেষ আজ সকালের নাস্তা আমার কপালে জুটবেনা। সকাল দশটায় উঠার এটাই ফল, নাস্তা এখন পাওয়া চলবেনা!! ইহাই উত্তমমধ্যম শাস্তি!! তবে নাইমা আপু আসবে শুনে মনটা খুশিখুশি লাগছে। আপু আমেরিকায় থাকেন, লস এন্জেলেস স্টেটে। হায়ার পড়াশোনার তাগিদে দেশ ছেড়েছেন আরো চার বছর পূর্বে। এখন দেশে ফিরেছেন কেনো তাই বুঝতে পারছিনা!!
দুপুরে মেহমান আসবে শুনে নিজেকে একটু গোছগাছ করলাম। রাইফা আপু রীতিমতো চমক সাজ দিয়েছে। পুরো লালে লালিমা।। আমি কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে গলায় ওড়না দিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই দরজায় বেল পড়ে গেলো। দরজা খুলতেই দেখি একটা ছেলে কানে ফোন নিয়ে ব্যস্ততার সহিত কথা বলছে। মুখের গড়ন পাতলা। উচা-লম্বা সবদিক দিয়েই আছে। গায়ের রঙ আপুর মতো ধবধবে ফর্সা। মাথায় ঝাকড়া চুল। মুখে খোচা খোচা দাড়ি রাখা। পড়নে কালো শার্ট।। ধূসর রঙের গ্যাবার্ডিন প্যান্ট।পুরো ফরমাল গেটাপ। দেখতে মোটকথা সুন্দর। দরজা খুলতেই আমাকে দেখে ছেলেটা দ্রুত কলটা কেটে দিয়েই একটা জোরপূর্বক হাসি দিলো। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলে উঠলো,
— আচ্ছা এটা কি ৫২/৩ নং বাড়ি না??
— জ্বী। কিন্তু আপনি কে?
— আমার ইন্ট্রোডাকশন দেওয়া লাগবে?
— মানে? কি বলতে চাইছেন? এটা কি আপনার বাড়ি যে এভাবে বলছেন?
— এটা তো আমার মামার বাড়ি। তাই আমারও বাড়ি!!অবশ্যই তুই পুচকি রাহা!! কি ঠিক বলেছি না?? তুই আর পাল্টাসনি পুচকি!! আগের মতোই আছিস!!
আমি কিছুক্ষণের জন্য চিন্তার দুনিয়ায় চলে গেলাম…এই অপরিচিত ব্যক্তি আমায় পুচকি পুচকি করছে!! রাহা নামেও ডাকছে!! রাহা নাম শুধু পরিবারের কিছু সদস্য বাদে অন্যান্য মানুষরা ডাকে। তাহলে ইনি কে? নিবির ভাইয়া?
— তুমি কি নিবির ভাইয়া? নাইমা আপুর ভাই?
নিবির ভাইয়া নম্র হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
— হু পুচকি!! ঠিক চিনে গেলি দেখি!! এখন কি ভেতরে আসতে দিবি!! নাকি আরো সাওয়াল জওয়াব করবি!!
— আসো…
নিবির ভাইয়া ভেতরে ঢুকতেই ঠিক পাচঁমিনিটের মধ্যে নাইমা আপু সহ ফুপা-ফুপিও উপস্থিত।। খুব ছোট থাকতে নিবির ভাইয়াকে একবার দেখেছিলাম, বড় হওয়ার পর সেই চেহারা খুব একটা মনে ছিলো না। তবুও প্রথম দেখায় আন্দাজে ঢিল মেরে নিবির ভাইয়া বলেছি তাতেই দেখি তীর একদম সোজাসুজি লেগেছে!! শাকিল ভাইয়া, আম্মু,আব্বু সবাই ড্রয়িং রুমে হাসিঠাট্টা করছেন।দীর্ঘ চার বছর পর সবার সাথে দেখা!! ফুপা ফুপির উপস্থিতি বাড়িটা আবারো হৈচৈয়ে পূর্ণ করলো!! হঠাৎ বাড়ির নিরিবিলি পরিবেশটা কেমন পাল্টে গেলো!! আড্ডায় মত্ত হলো সবাই!! আরো ক ঘন্টা এই আড্ডা চলে কে জানে!! আমি রুমে বসে টেস্টপেপারের নৈর্ব্যক্তিক অংশ চোখ বুলিয়ে সল্ভ করছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ হলো। আমি চোখ ঘুরিয়ে দরজায় তাকাতেই দেখি নিবির ভাইয়া অনুমতির আশায় তাকিয়ে আছেন। আমি টেস্টপেপারে তর্জনী আঙ্গুল ঢুকিয়ে আধবন্ধ করে নিতেই বলে উঠলাম,
— ভেতরে আসো ভাইয়া। বাইরে দাড়িয়ে আছো কেন?
ভাইয়া ভেতরে ঢুকে আমার বিছানার এককোণে হাটু ঝুলিয়ে বসলেন। আমি টেস্টপেপারটা বন্ধ করে টেবিলের উপর রাখলাম। ভাইয়া বলে উঠলেন,
–এতো শুকিয়েছিস কেন বলতো? আগে যেই মোটাশোটা ছিলি! ইয়া ভুটকি! ফাস্ট দেখে তো তোকে চিনতেই পারিনি!! ডায়েট করেছিস নাকি?
–ডায়েট করবো কেনো? ডায়েট করে শরীরের হাড্ডিগুড্ডি বের করবো নাকি??
–আজকালকার মেয়েরা তো তাই করে। এমন পাক্কা ডায়েট দেয়! শরীরের হাড় কঙ্কাল সব বের করে ছাড়ে। খুব বাজে দেখায় বায় গড!
–বাঙালী মেয়েরা ডায়েট করেনা। তারা এমনেতেই সুন্দর।
–কচুর সুন্দর! এখন বাঙ্গালী বলে মেয়েদের কোনো আভিজাত্য নেই। যেই ফ্যাশনের যুগ এসেছে!! গা ভর্তি ট্যাটু লাগিয়ে গা বের করে শরীর দেখাচ্ছে! ফরগেট ইট।। তুই কিসে পড়ছিস?
–এইচএসসি দিবো।
— ওহ্ ভালো তো!! গ্রুপ কি?
–সাইন্স।
–বাহ্ ব্রিলিয়ান্ট! শুনে খুশি হলাম। তোর বড়টা কোথায় রে?ওকে তো দেখলাম না!!
–রূপ আপুর কথা বলছো? আপু নাইমা আপুর সাথে ছাদে সম্ভবত।
–চল যাই? যাবি?
নিবির ভাইয়া বলতে দেরি দরজায় আরেকটা বেল পড়তে দেরি হলো না। ঘড়ির দিকে তাকাতেই বুঝলাম টিচারমশাই এসে পড়েছে। আমাকে এখন পড়ার টেবিলে পড়া গুলিয়ে খেতে হবে!! আমি বিছানা থেকে পা নামিয়ে উঠে যেতেই বলে উঠলাম,
–না ভাইয়া। টিচার এসেছে। সরি…
নিবির রাহার কথা শুনে অবস্থার পরিবর্তন করলো না। বিছানায় পা উঠিয়ে কোলে একটা বালিশ নিয়ে ফোন টিপতে লাগলো। রাহা রুমে ঢুকলে দেখে নিবির এখনো রুমে বসে আছে। আর একমনে মোবাইলে কিছু একটা করছে। রাহা সেদিকে নজর না দিয়ে চেয়ার টেনে সাদের জন্য ঠিক করে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। সাদ রাহার কিছুক্ষন পর ঢুকতেই ধাক্কার মতো খেয়ে স্ট্রেট হয়ে দাড়িয়ে গেলো! রাহার রুমে অপরিচিত একটা ছেলে কেনো বিছানায় বসে আছে তাই ভেবে রাগ পাচ্ছে সাদের! ইচ্ছে করছে গলা টিপে দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে! সাদের ওভাবে তাকিয়ে থাকা নিবির আড়চোখে বুঝে ফেলে। পরক্ষনে সে মোবাইল গেমস খেলা পজ করে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
–হ্যালো!!
ধ্যান ভাঙতেই মাথা হালকা কাপিয়ে ঠোঁটে ঠেলেঠুলে হাসি দিলো সাদ। চেয়ার টেনে বসতেই বলে উঠলো,
–আসসালামু আলাইকুম।
–ওহ্…অলাইকুমসসলাম। হেই তুমি দেখছি আমার এইজের!!
–মেইবি। কিন্তু আপনাকে যে চিনলাম না…
–আমি রাহার ফুপাতো ভাই।
–ও আচ্ছা। আপনি সম্ভবত আমেরিকা থেকে এসেছেন। রাইট?
–এ্যাবসোলেটলি কারেট! কিন্তু কে বলেছে? এই পুচকিটা?
–শাকিল বলেছে। আমার ক্লাসমেট।
— ও আই সি!!বুয়েট-বুয়েট কানেকশন।। দ্যান মিস্টার নামটা কি?
–সাদমান আরাফ।
–ওহ্…আ’ম নিবির আহসান তুর্য। তুমি শাকিলের বয়সী হলে আমার থেকে ছোট। আমি শাকিলের আড়াই বছরের বড়। বায় দ্যা ওয়ে নাইস টু মিট ইউ।
–থ্যাংকস।
.
.
সন্ধ্যায় সব ভাইবোন মিলে চেয়ার একত্র সাজিয়ে গোল করে বসেছি। আমি, নাইমা আপু ও রূপ আপুর মাঝে বসেছি। আমাদের আড্ডার টপিক নাইমা আপুর বিয়েতে কে কি পড়বো!! কে কোন কাজে ফাজলামো করবো। নাইমা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। যেই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো, সেই ছেলের সাথেই বিয়ে দেওয়ার জন্য ফুপা ফুপি দেশে ফিরেছেন। ঠিক আটদিন পর বিয়ে। তাই সবার মধ্যে হুড়োহুড়ির তলব। আত্মীয় স্বজন সবাইকে আমন্ত্রণ বার্তা পাঠানো শুরু হয়েছে। বাড়ির বড়রা সবাই ব্যস্ত। আপুর কাধে শপিংয়ের কাজ পড়েছে, ভাইয়ার কাধে হল বুকিং ও অন্যান্য এ্যারেন্জম্যান্টের কাজ পড়েছে, নিবির ভাইয়া যেহেতু একটু বেশি অভিজ্ঞ তাই উনার খাতে পড়েছে টাকাপয়সার লেনদেন। আমার কপালে সবচেয়ে ছোট কাজ পড়েছে সেটা হলো ‘জুতা চুরি’। নিবির ভাইয়া বলে উঠলেন,
— গাইজ মামা কাজটা ঠিক করলো? আমার হাতেই টাকা পয়সার ভার দিয়ে দিলো!! পরে যদি উনিশ থেকে বিশ হয়?? এমনেই বিয়ে বাড়ি!!
রূপ আপু বলে উঠলো,
— বড় ভাই টেনশান কিসের? তুমি এর চেয়ে বড়ো বড়ো ডলার নিয়ে লেনদেন করছো, আর এটাতো আহামরি তোমার কাছে কিছুই না।
শাকিল ভাইয়া নিমকির পিরিচ থেকে নিমকি মুখে পুড়ে বলে উঠলেন,
— নিবির ব্রো চিল মারো! আব্বু বুঝেশুনেই সবাইকে কাজের ভার সপেছে। সো ভাই, ভয় পাইয়ো না। ওই? আমি একলা ডেকোরেশনের কাজে পারবো না। আমার সাথে কাউকে লাগবো!!
— কাকে নিতে চাস? ওই যে বড় খালামনির ছেলে বিজয় কে নিবি?
— না ভাই। শালা একটা আবুল। মাথায় তার কম। কাজ বুঝাইলে বুঝতে চায় না। বেশি বাড়াবাড়ি করে। ওকে নিবো না।
শাকিল ভাইয়ার কাজে সহযোগীতা করার জন্য সবাই একের পর এক নাম নিলেও কোনো বান্দাই ভাইয়ার মনমতো হয়না। কেননা, তারা ভাইয়ার কাজে হেল্প করতে যেয়ে উল্টো নাকি বারোটা বাজাবে!! তাই ভাইয়া নিবেন না। শেষে রূপ আপু ফট করে বলে উঠে,
— সাদমান ভাইয়া হলে কেমন হয়? উনি ভাইয়ার ক্লাসমেট আবার একগ্রুপেও পড়াশোনা করে। কি বলো ভাই??
— ভালো বুদ্ধি দিছিস রাইফু! সাদমানের সাথে আমার আন্ডারস্টেন্ডিংও ভালো!! আমার কাজে হেল্পের জন্য ও পার্ফেক্ট!
ছাদে বসে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ হলে ভাইয়া সাদ ভাইয়ার থাকার ব্যবস্থা আমাদের বাসাতেই করেন। আমাদের বাসা এখন থেকেই বিয়ের আমেজে হৈ হুল্লোড় করছে। আরো তো সাতদিনের মতো বাকি আছেই!! আত্মীয় স্বজনও নিমন্ত্রণ পেয়ে যথাযথ আসা শুরু করেছে।
বিকেলবেলা সবার ব্যস্ততার মাঝে আমার একঘেয়ে মনটা নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। ছাদে যেতেই তিন চারটা রুম পেরিয়ে সিড়ি ধরে উপরে উঠতে হয়। একটা নাইমা আপুর রুম, আরেকটা নিবির ভাইয়ার রুম, শেষেরটা সাদ ভাইয়ার রুম। আমি কানে হেডফোন গুজে হাতে ফোন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। কানের হেডফোনে হাত দিয়ে গান ঠিক করে শুনতেই নাইমা আপুর রুমের দিকে তাকালাম। দরজা লাগানো। ভেতর থেকে রূপ আপুর সাথে হাসাহাসির কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। আমি সবকয়টা রুম পেরিয়ে সিড়ির কাছে যাবো হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো আমার মুখ চেপে গলার ওড়নাটা টেনে মুখে বেধে দিলো! মূহুর্ত্তের মধ্যে আমার হাত থেকে ফোন পড়ে কান থেকে হেডফোন সরে গেলো!! আমি চোখ বড় বড় করে আছি! পেছন ঘুরে দেখবো তার আগেই কেউ পেছন থেকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো! আমি উল্টোপথে পা ফেলে ছুটাছুটি করছিলাম! কে পেছন থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে!! কে মুখে ওড়না বেধে দিলো!! কে করছে!! কে করছে!! হঠাৎ দেখি শেষের রুমটা তথা চার নাম্বার বদ্ধ থাকা রুমটায় নিয়ে এসে দরজা আটকে দিলো! রুমের ভেতরে ঝুপড়ির মতো অন্ধকার!! ফাক ফোকর দিয়ে বাইরের আলো সলাৎ করে ঢুকছে। আমি মুখ দিয়ে গোঙাচ্ছি!! মুখ ওড়না দিয়ে বাধার কারনে মুখ থেকে একটা শব্দ করে চিৎকার দিতে পারছিনা!! হঠাৎ আমার হাত জোড়াও দড়ি টাইপ কিছু দিয়ে বেধে দিলো! আমি নির্বিকার হয়ে চোখের পানি ছেড়ে কাদছিলাম! কলিজাটা ধপাধপ কাপছে!! অন্ধকারে আর কিছু বুঝবো তার আগেই আমাকে ধাক্কা মেরে কোথাও বসিয়ে দিলো! অন্ধকারে আন্দাজের উপর বুঝলাম আমাকে চেয়ারে বসানো হয়েছে। একটা মনুষ্য প্রাণী এই রুমটাতে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে!! নিশ্বাস ছাড়ার মতো শব্দ রুমটায় অদ্ভুতভাবে প্রতিফলিত হয়ে বিক্ষিপ্ত হচ্ছে।। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের জমানো রাগ স্ফুলিঙ্গ আকারে ফুস ফুস করে বের হচ্ছে।। রাগের প্রতিটা নিশ্বাস এতো ভয়ঙ্কর! যতবার শ্বাস ঝরছে ততবার ভয়ে গা ছমছম করছে। কান্নায় ফুপিয়ে কাদছি!! হঠাৎ আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,
— বারবার! বারবার! বারবার! একই ভুল! বারবার একই ভুল! তুমি…তুমি…ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষি করতে পারো না!! না না নাহ্!…পারো না!! তুমি ওর দিকে তাকাতেও পারোনা!! কেনো তাকাবে তুমি? কেনো তাকাবেএএএ!!
দাঁতে দাঁত চিবিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো সে! গলার স্বর ভয়ানকের চেয়েও ভয়ঙ্কর ! কারন, এই স্বর এই ব্যক্তিটার আসল কন্ঠস্বর না।
-চলবে?
-Fabiyah_Momo